গল্পঃ নেট_দুনিয়ার_কিং,পর্বঃ ২
লেখক: মোঃ_শাহরিয়ার_ইফতেখায়রুল_হক_সরকার
___ মুখে এসিড পড়লে যতোটা না কষ্ট হয় ততোটা
কষ্ট পাচ্ছে শাহরিয়ার।আর যন্ত্রনা বেদনা কষ্ট
সজ্য করতে পারে নি শাহরিয়ার আস্তে আস্তে
শাহরিয়ারের চোখ দুটি বন্ধ হয়ে যায়।
তবে এখানেই শেষ হয়ে যাবে কি শাহরিয়ার। না কি
আবার ঘুরে দাড়াঁবে……………..
___ শাহরিয়ারের যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে নিজেকে
হাসপাতালে দেখতে পেলো এবং তার মুখে বেশ
যন্ত্রনা অনুভব করছে সে?মুখের যাবতীয় বিভিন্ন
অঙ্গ ঠিক মতো লাড়াতে পারছে না সে?ভিষন কষ্ট
হাচ্ছে তার?অবশেষে ছটফট শুরু করে দেয়
শাহরিয়ার?যন্ত্রনায় বারবার ঘুঙ্গিয়ে উঠছে।
ডাক্তার খবর পেয়ে দ্রুত এসে শাহরিয়ার কে
ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে দেয়?
প্রায় পাঁচ ঘন্টা পর শাহরিয়ারের জ্ঞান ফিরে?
এবং সাথে সাথে একজন বৃদ্ধ লোক শাহরিয়ারের
মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে দিতে বলল
বৃদ্ধ লোকটিঃ বাবা…….কে সেই অত্যন্ত নিষ্ঠুর
প্রকৃতির অমানুষ?যে তোমার এই চেহারায় এসিড
নিক্ষেপ করেছে??
___ বৃদ্ধ লোকটির কথা শুনে শাহরিয়ার আর নিজের
চোখের জল সামলে রাখতে পারলো না হাজার
যন্ত্রনা-বেদনা,কষ্ট উপেক্ষা করে চোখের অশ্রু
জড়াতে জড়াতে বলল……..
শাহরিয়ারঃ আঙ্কেল গো…….ইন্টারনেট দুনিয়ার
কালো সমাজে লিপ্ত হয়ে আমার চাচাতো বোন তার
সাথে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি
রাজি হয়নি? বলে এক প্রকার রাগ নিজের মধ্যে
পুষে রেখে সেদিনি রাতে মিথ্যে এক অপবাদ
দিয়ে আমাকে প্রথমে সে বাড়ি ছাড়া করে?কিন্তু
তারপরেও তার শান্তি হয়নি। যার ফলে পরবর্তীতে
আমার সামনে এসে আমাকে এসিড নিক্ষেপ করে
চলে যায়।জানেন আঙ্কেল যাকে আমি সবসময়
নিজের আপন বোন মনে করতাম সেই বোনি আজ
আমার এতো বড় সর্বোনাশ করলো।আমাকে
পুরাপুর্ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিলো?
সব কষ্ট সহজে ভুলে গেলেও আপন মানুষগুলোর
দেওয়া কষ্ট গুলো ভুলে যাওয়া সম্ভব না? এতো
মানুষের মৃত্যু হয় আমার কেনো হয়না?
___শাহরিয়ারের বলা কথাগুলো শুনে বৃদ্ধ লোকটি
ও তার নিজের চোখের কোনের অশ্রুর বাধ
আটকাতে পারলো না?চোখের কোনের অশ্রু
ছেড়ে দিয়ে বৃদ্ধ লোকটি বলল……
বৃদ্ধ লোকটিঃ বাবা রে…..দুনিয়ায় মানুষ চিনে উঠা
বড়ই কঠিন? কেউ কারো নয়? বাস্তবতা বড়ই
কঠিন?পিছন থেকে সব সময় তারাই আঘাত
করে যারা সবচেয়ে কাছের বা আপনজন হয়ে
থাকে?
শাহরিয়ারঃ আচ্ছা আমি এখন কোন জায়গায়।
আর আপনি কে??
বৃদ্ধ লোকটিঃ বাবা একটু শান্ত হও আমি সব বলছি?
শাহরিয়ারঃ জি বলুন?
বৃদ্ধ লোকটিঃ আমি আমার গাড়ি করে একটা জরুরী
কাজে যাওয়ার পথে হঠাৎ রাস্তার এক পাশে
তোমাকে দেখতে পাই? তাই আর দেড়ি না করে
তোমাকে ইমের্জেন্সি ঢাকা সবচেয়ে বড় হাসপাতালে
নিয়ে আসি। এবং যথা সময়ে যদি তোমাকে না
নিয়ে আসতাম তাহলে তোমার মৃত্যু অবধারিত
ছিল?
শাহরিয়ারঃ কেনোই বা আমাকে আপনি হাসপাতালে
নিয়ে আসতে গেলেন।সেখানেই মরতে দিতেন
আমাকে? আমি আর কি নিয়েই বা বাঁচবো সবি
তো আমার শেষ?সবকিছু ধব্বংস হয়ে গেছে
আমার।আর কিছুই বাকি নেই?আমি আর বাঁচতে
চাইনা?বাঁচার কোনো উৎসই আমি খুঁজে পাচ্ছি না?
বৃদ্ধ লোকটিঃ বাবা রে……এখন ধর্য ধরা ছাড়া আর
কিছুই করার নেই?ধর্য ধরো? কারন ধর্যই হলো
সবচেয়ে বড় জিনিস আর একটা কথা কি যানো?
আমার ১৭ বছরের একটা ছেলে ছিলো?নেট
দুনিয়ার নিষিদ্ধ জগতে আসক্ত হয়ে এক নির্দোশ
মেয়ে কে ধর্ষনের অপরাধে সে এখন জেলে?
আচ্ছা থাক সেসব কথা?এখন তুমি একটু আরাম
করো? কারন ডাক্তার তোমার সাথে বেশি কথা
বলতে নিষেদ করেছেন?
___ কথা গুলো বলেই বৃদ্ধ লোকটি কেবিন থেকে
চলে যায়??
___ ছয়টা মাস শাহরিয়ার কে হাসপাতালে থাকতে
হয়েছে।এখন সে মোটামোটি সুস্থ?কিন্তু এই ছয়টা
মাসে শাহরিয়ার কে কতটা নয় কষ্ট যন্ত্রনা সজ্য
করতে হয়েছে সেটা সেই বুঝতে পারবে যার মুখে
এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে?শাহরিয়ারের প্রতিটা
দিন ছিলো বেঁচে থেকেও মরার মতো অবস্থা?
তিলে তিলে খুব কষ্ট যন্ত্রনা-বেদনা সজ্য করতে
হয়েছে শাহরিয়ার কে?
___ আজ ছয়টা মাস পর বৃদ্ধ লোকটি শাহরিয়ার কে
নিজের সাথে করে তার বাড়িতে নিয়ে আসলো।
শাহরিয়ার এখন বৃদ্ধ লোকটির বাড়িতে একটা বড়
রুমে বসে আছে?হঠাৎ তার চোখের দৃষ্টি গিয়ে
পড়ে রুমের এক পাশে থাকা আয়নার দিকে?
ইচ্ছে না করলেও আয়নার সামনে চলে যায়
শাহরিয়ার?এবং আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই
ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে যায়?বার বার হাত দিয়ে
নিজের মুখটি ছুয়ে ছুয়ে দেখছে?মুখের এক পাশটা
কি কুৎসিত হয়ে গেছে?নিজেকে দেখে নিজেই
ঠিক মতো চিনে উঠতে পারছে না শাহরিয়ার?
হঠাৎ করেই জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো
শাহরিয়ার। চিৎকার শুনে বৃদ্ধ লোকটি দ্রুত ছুটে
এসে বলতে লাগলো………
বৃদ্ধ লোকটিঃ কি…কি হয়েছে বাবা…..।
শাহরিয়ারঃ আমার সব শেষ করে দিয়েছে ও।
আমাকে ধব্বংসের শীর্সে তুলে দিয়েছে ও? আমি
এই কুৎসিত বিস্রি চেহারা নিয়ে বাঁচতে চাইনা?(কাঁদতে কাঁদতে)
___ বৃদ্ধ লোকটি শাহরিয়ার কে নানা ভাবে শান্ত
করার চেষ্টা করছে কিন্তু সব চেষ্টাই তার বিফলে
যাচ্ছে। শাহরিয়ার কিছুতেই শান্ত হচ্ছিলো না।
তারপরেও দমে যান নি বৃদ্ধ লোকটি?বহু কষ্টে
শাহরিয়ার কে শান্ত করতে সফল হন?
___ রাতে বৃদ্ধ লোকটির পরিবারের সবার সাথে
শাহরিয়ার খেতে বসেছে।বৃদ্ধ লোকটির মেয়ে
সবাই কে খাবার বেড়ে দিলেও খাবার বেড়ে দেয়নি
একমাত্র শাহরিয়ার কে?বৃদ্ধ লোকটি ধমকের শুরে
শাহরিয়ার কে খাবার বেড়ে দিতে বললে…….
জবাবে তার মেয়ে নীলা বলল…..
নীলাঃ না বাবা আমি এই কুৎসিত ভয়ঙ্কর দেখতে
লোকটাকে খাবার বেড়ে দিতে পারবো না?ওনার
কাছে যেতেই আমার ঘৃনা করে?
___ নিজের মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে বৃদ্ধ
লোকটি তার মেয়ে কে থাপ্পর মারতে চাইলে
শাহরিয়ার থামিয়ে দিয়ে বলল…..
শাহরিয়ারঃ আঙ্কেল ওনি তো ঠিক কথাই বলেছে?
আসলেই তো আমি এখন কুৎসিত দেখতে একটা
ছেলে?আমার কছে আসলে সবার তো ঘৃনা লাগাটাই
স্বাভাবিক।অতএব শাহরিয়ার নিজেই খাবার বেড়ে
নিয়ে খেতে শুরু করলো?খাওয়া-দাওয়া শেষ
করে শাহরিয়ার সেই রুমে চলে যায় যেই রুমে
শাহরিয়ারের থাকার ব্যাবস্থা করা হয়।তারপর
কিছু না ভেবেই শাহরিয়ার বিছনায় গিয়ে ঘুমিয়ে
পড়ে?পড়ের দিন শাহরিয়ার ঘুম থেকে ওঠে
তার সামনে ফারিয়ার মতো কাউকে দেখতে পেলো?
চোখ দুটো ডলতে ডলতে শাহরিয়ার ভালো করে
তাকিয়ে দেখলো এটা ফারিয়াই??
ফারিয়া কে দেখে শাহরিয়ার ভয়ে আতকে উঠে?
___ ফারিয়া শাহরিয়ারের এমন ভয়র্থ অবস্থা দেখে
অট্ট হাসি দিয়ে বলল……..
ফারিয়াঃ শাহ..……শাহ……শাহরিয়ার? কোথায়
পালাবি তুই? তোর মুখের এক পাশটা তো আমি
নষ্ট করে দিয়েছি এবার অন্য পাশটার বাকী??
___ কথাগুলো বলেই ফারিয়া শাহরিয়ারের দিকে
এগোতে থাকে আর শাহরিয়ার ভয়ে বারবার পিছিয়ে
যাচ্ছে?হঠাৎ শাহরিয়ার থেমে যায় কারন তার
প্রাধান বাধা হচ্ছে দেয়াল অর্থাৎ শাহরিয়ার
দেয়ালের সাথে ঠেকে যায় আর পিছুতে পারছে না?
ফারিয়াঃ জানিস আমার খুব মজা লাগবে যখন
এই এসিডটা তোর মুখের অন্য পাশটায় পড়বে।যখন
তুই কষ্টে চিৎকার করবি তখন আমার মনের আগুন
টা একটু হলেও নিভবে।আর তুই তখন হারে হারে
টের পাবি আমার কথা না শুনার ফল……..
___ কথাগুলো বলেই ফারিয়া নিজের হাতে থাকা
এসিড ছুড়ে মারে শাহরিয়ারের…………….😢😢😢
চলবে