নীলাম্বরীর_প্রেমে,পর্ব :২৩

নীলাম্বরীর_প্রেমে,পর্ব :২৩
Tuhina pakira

বারান্দার গ্রীলে হাত রেখে আয়ু মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওকে দেখতে আসবে। ওকে বিকেলের দিকে দ্রুতি শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দিয়ে গেছে। দ্রুতি তো খুব প্রফুল্ল নতুন জামাইবাবু পাবে বলে। আজ সারাদিন কেবল বিয়েতে কী করবে হেনা তেনা বলে আয়ুর মাথা খারাপ করে দিয়েছে। কিন্তু ও বেচারি বুঝতেও পারেনি, যার বিয়ে নিয়ে ও এত প্রফুল্ল ওর মনের অবস্থা কি রূপ।

আয়ু একবার স্পর্শের বারান্দায় দেখলো। কিন্তু অনুভূতি দুই চোখ বুঝিয়ে দিল, স্পর্শ ওখানে নেই। কালকের ফোনে কথা হবার পরে ওদের আর দেখা হয়নি। আয়ু দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের চোখের জল মুছে ফেললো।

-” কী রে বউ সেজে কী করিস এখানে? জানিস না বিয়ের আগে মেয়েদের ঘর থেকে বেরোতে নেই।”

স্পর্শের কথায় আয়ু স্পর্শের বারান্দায় তাকিয়ে দেখলো ওখানেও স্পর্শ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে। স্পর্শকে দেখে আয়ুর যেনো দেহে প্রাণ এলো। এখন কিছুটা হলেও ও জোর পাচ্ছে। স্পর্শকে কিছু বলবে তার আগেই স্পর্শ হেসে বলল,

-” বাবা, ছেলে দেখতে আসছে এতেই এতো সেজেছিস, বিয়ের সময় কী করবি?”

আয়ু অবিশ্বাস্য চোখে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে রইল।

-” তবে যাই বল, তোর সাজের মধ্যে একটা জিনিষ ইনকমপ্লিট। একটা নীল টিপ পর তোকে বেশ লাগবে। ”

আয়ু চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে স্পর্শের অভিব্যাক্তি বোঝার চেষ্টা করছে।

-” তবে যাই বল ছেলেটাকে কিন্তু হেবি দেখতে। আমার থেকেও খুব সুন্দর দেখতে। ভালো কাজ করে, একেবারে ডক্টর। তার উপর সে আবার আমার মতো বাজে না। তুই তো জানিস আমি বিনা দোষে তোকে কষ্ট দিই। তুই ওকে বিয়ে করলে ভালো থাকবি।”

আয়ু এবার রেগে গেলে। চিৎকার করে বললো,
-” দরকার নেই ভালো থাকার। দরকার নেই তাকে। আমি যদি তোমার রূপ , টাকা পয়সা দেখে ভালবাসতাম তাহলে আজ আমি তোমার জন্যে এইভাবে কষ্ট পেতাম না। তুমি কেনো এত কষ্ট দাও?”

আয়ু আর্তনাদ করে কেঁদে ফেললো। স্পর্শ পুনরায় হেসে বললো,
-” আমি আর কষ্ট দেবো না তো। আমি তোকে যাতে কষ্ট দিতে না পারি তার জন্যেই তো বলছি, ছেলেটার কথা ভাবতে পারিস। ”

স্পর্শের আবারও আবোল তাবোল কথায় আয়ু ফুসে উঠে নিজের গলায় থাকা মুক্তোর হারটা রাগে টেনে ধরলো। আয়ুর গলায় হালকা ব্যথা লাগলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই মুক্ত গুলো হারের সুতো থেকে চারিদিকে ছিটকে পড়লো। পরক্ষনে হাতের চুঁড়ি গুলো খুলে নিচে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল।

-” আমার কারোর কথা ভাবার দরকার নেই। কাউকে লাগবে না আমার, কাউকে না। শুধু তোমাকে চাই আমি। শুধু তোমাকে। ”

রেগে গিয়ে কথা গুলো বলে আয়ু ঘরে চলে গেল। পিছন থেকে স্পর্শ ওর যাবার দিকে তাকিয়ে বললো
-” সে যাইহোক, মনে করে টিপটা পড়ে নিস। নীল শাড়ির সাথে একটা টিপেই তোকে নীলাম্বরী লাগে।
আর কিছু দরকার নেই বুঝলি। ”

আয়ুর কিছুক্ষণ আগের কাণ্ডে স্পর্শ হেসে উঠলো।
– ” বাপরে, এই মেয়ের বরের কপাল খারাপ। ওকে ভালোবেসে কিছু গিফট করলে আনন্দে তা মাথায় তুলে রাখলেও পরবর্তী তে রেগে গেলো সেই মাথার জিনিসকেই ছুঁড়ে ফেলে দেবে।

-” আয়ু দি তাড়াতাড়ি চলো, সবাই এসে গেছে তো।”

দ্রুতির কথায় আয়ুর হুশ এলো। এতক্ষণ ও জানালা দিয়ে স্পর্শের দিকেই তাকিয়ে ছিল। স্পর্শের থেকে চোখ সরিয়ে বলল,

-” চল।”

আয়ু একবার বারান্দার দিকে তাকিয়ে নীচে চলে গেলো।

আয়ু নীচে নামতেই ওর মা ওকে বসতে বললো। কিন্তু আয়ু বসবে কী অবাক হয়ে সামনের মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে রইল।

-” মিমি, পাপা তোমরা এতো সাজুগুজু করেছো কেনো? ”

-” কেনো আবার, নিজের ছেলের জন্যে মেয়ে দেখতে এসেছি, একটু সুন্দর করে সাজবো না?”

আয়ু স্পর্শের বাবার কথায় কিছু বললো না। হাঁ করে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল।

-” কী রে এইরকম হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছিস কেনো? শাশুড়িকে কী পছন্দ হয়নি?”

আয়ু যেনো আরও অবাক হয়ে গেলো। স্পর্শের বাবা ওর হাতটা ধরে বললো,

-” তোরা দুজন যে একে অপরকে ভালোবাসিস এটা আমাদের বললে কী হতো? আমরা দুই বাবা কী বারণ করতাম।”

আয়ুর বাবা আয়ুর পাশে বসে ওর অপর হাত ধরে বললো,

-” আরে কতো ভালো বলতো, মেয়ে আমাদের চোখের সামনেই থাকবে। মেয়ের জন্যে মন খারাপ ও হবে না। ”

আয়ু ছলছল চোখে ওর বাবার দিকে তাকালো।

-” তারমানে তোমরা….”

দিহান বলল,
-” মানে মামা আর তোর বাবা তোদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। কোনো ডক্টরের সঙ্গে তোর বিয়ে দিচ্ছে না। তোর জন্যে আমার স্পর্শ দা ঠিক আছে। ”

-” ভাগ্যিস আমি কালকে তোদের কথা শুনে ছিলাম। নাহলে তো আমরা জানতেই পারতাম না। যদিও বা এই আয়ান জানে আগে থেকে। কিন্তু আমাকে বলেনি।”

দ্রুতির কথায় আয়ু ওর ভাইয়ের দিকে তাকালো, ভ্রু কুঁচকে বললো,
-” তুই কী করে জানলি? ”

-” সব কিছু তোকে জানতে হবে না। ”


আয়ুদের ড্রয়িং রুমে এখনও সকলে কিছু আলোচনা করছে। কিন্তু আয়ুর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তাই ও আস্তে আস্তে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।

স্পর্শ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। লাল রঙের পাঞ্জাবী গায়ে, হাতাটা কনুই পর্যন্ত গোটানো।
ঘরে কারোর উপস্থিতি পেয়ে নিজেই বলে উঠলো,

-” কী রে কি চলছে ওই বাড়িতে? আয়ু কে বলিস নিতো বাবা রাজি হয়ে গেছে? দিহান এখন একদম বলবিনা। আয়ু কে একটু রাগাবো বুঝলি। ”

কিন্তু দিহানকে কোনো কথার উত্তর দিতে না দেখে স্পর্শ পিছন ফিরে দেখলো, আয়ু মলিন মুখে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। স্পর্শ আয়ু কে কিছু বলবে তার আগেই আয়ু ছুটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। স্পর্শও ওর পিছনে ছুটলো।

সকলকে এড়িয়ে আয়ু নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। সবাই কী হয়েছে বুঝতে না পেরে আয়ুর যেতে গেলে দেখলো স্পর্শ ঐদিকেই যাচ্ছে।

-” এই স্পর্শ, কী হয়েছে? আয়ু এমন তাড়াহুড়ো করে গেলো কেনো?”

-” স্পর্শ সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বললো, কিছু না মা। আয়ু একটু রেগে গেছে।”

সকলে হাফ ছাড়লো। স্পর্শ যেতেই ওর বাবা আয়ুর বাবাকে বললো,

-” হ্যাঁ রে জয়, আমরা এদের বিয়ে দিয়ে ঠিক করছি তো? সারাদিন তো দুটিতে ঝগড়া করছে।”

স্পর্শের বাবা কথা বলতে না বলতেই স্পর্শের মা তাকে ঝাড়ি দিয়ে বললো,

-” তোমাকে কথা কম বলতে বলেছিনা কাল। আমি আর রাহী ( আয়ুর মা) কবে ঠিক করে রেখেছি একে অপরের বেয়ান হবো আর তুমি কাল থেকে খালি ফালতু বকে চলেছো। ”

আয়ু আর স্পর্শের মা নিজেদের স্বামীদের আরও কিছুক্ষণ বকে পাশের ঘরে চলে গেলো। অপর দিকে আয়ান, দ্রুতি, দিহান তিনজনে হাসতে হাসতে রাস্তার মোড়ে চলে গেলো।

-” জয়, এই বুড়ো বয়সে এসে বউয়ের ঝাড়ি খাচ্ছি। তুই জানিস কাল সারা সন্ধ্যে আমার সঙ্গে ভালো করে কথা বলেনি, অপর দিকে কাল তো সন্ধ্যায় আমাকে চা পর্যন্ত করে দেইনি। ”

-” আর আমার বউ তো আমাকে ডাইরেক্ট বলে দিয়েছে, আয়ুর সঙ্গে অন্য কারোর বিয়ে দিলে, আমিও যেনো মেয়ের সঙ্গে ওর শ্বশুর বাড়ি চলে যাই। এই বাড়িতে আমার আর জায়গা হবে না।”

স্পর্শ কয়েকবার দরজায় ধাক্কা দিতেই আয়ুর ঘরের দরজা খুলে গেল। আয়ু রাগের মাথায় ঠিক মত ছিটকিনি পর্যন্ত দেইনি। স্পর্শ ঘরে ঢুকে দেখলো আয়ু বিছানায় বসে রয়েছে চুপ করে। স্পর্শকে দেখে আয়ু উঠে গেলো ওর দিকে,

-” কী চাই এখানে ?”

-” কী চাই আবার কী? তোর সঙ্গে আমার বিয়ে তাই আমি আসতেই পারি।”

আয়ু স্পর্শের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
– ” না পারোনা। কে তুমি আমার? কেউ না। আর তখন বলছিলে না ছেলে নাকি তোমার থেকেও ভালো। বেশ তো, আমি ঠিক করে নিয়েছি ওই ছেলেকেই বিয়ে করবো।”

স্পর্শ আয়ুর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,

-” আমি তোর কাছে অনেকের থেকে বেশি কিছু। তাই পরবর্তীতে এই কথাটা বলবিনা। আর তোর বিয়ে হলে কেবল আমার সঙ্গেই হবে। মনে থাকবে?”

আয়ু নিজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
-” করবোনা বিয়ে, আমি তোমাকে বিয়ে করব না। কিছুতেই করবো না। ”

স্পর্শ হাত ছাড়াতো দুর হাতটা আরও শক্ত করে ধরে আয়ুর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

-” করবিনা মানে, তোর বাপ করবে। অন্য কেউ তোর দিকে চোখ তুলে তাকাক না খালি, এমন মারবো ওই চোখ দিয়ে আর দেখতে পাবে না।”

-” তবে আমার বাপকেই বিয়ে করে নিও। ”

স্পর্শ আয়ু কে বিছানায় বসিয়ে ওর পাশে বসে বললি,

-” আচ্ছা আমি তোকে বলিনি বলে রাগ হয়েছে, তাইতো।”

স্পর্শের এই কথাটার দরকার ছিল। আয়ু কে আর পায় কে, ও কেঁদে উঠলো।

-” ওই কাঁদছিস কেনো? আমাদের বাবারা বিয়ে মেনে নিয়েছে এটাই তো আনন্দের তাইনা। ”

আয়ু কাঁদতে কাঁদতে বললো, ” তুমি খুব বাজে স্পর্শ দা। আমাকে এটা আগে বললে কী হতো? জানো আমি কতো কষ্ট পেয়েছি। যদি আমি কিছু করে ফেলতাম তুমি সহ্য করতে পারতে?”

স্পর্শ আয়ুর চোখের জল মুছে বললো,
-” কী সব বলছিস আয়ু। ঐরকম বলে না। তাছাড়া আমি তো বারান্দায় তোর সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে কথা হওয়ার আগেই জানতে পারলাম। তাই শুধু কিছুক্ষণ এর জন্যেই বলিনি। ভাবলাম সারপ্রাইজ দেবো।”

আয়ু চোখের জল মুছে বললো,” আমার ওই রকম সারপ্রাইজ লাগবে না, যাতে আমাকে কষ্ট পেতে হবে।”

-” আচ্ছা ঠিক আছে। ওই রকম সারপ্রাইজ দেবো না। খুশি?”

আয়ু হেসে দিল। পরবর্তীতে কিছু মনে পড়তেই বললো,

-” বাবা রা সত্যিই মেনে নিলো?”

স্পর্শ আয়ুর মাথায় গাট্টা মেরে বললো,

-” হ্যাঁ মেনে নিয়েছে। একদিকে দ্রুতি আমাদের কথা তোর বাবাকে বলেছিল, আর আমি কাল বাবাকে তোর আমার কথা বলেছিলাম। কিন্তু বাবা সেই মুহূর্তে কিছু বলেনি। সারারাত তো আমি ঘুমাতেই পারিনি। তোকে হারানোর ভয় আমাকে যেনো মেরে ফেলছিল। কিন্তু দুপুরের দিকে বাবা যখন ফোন করে ছেলের বাড়ির লোকেদের না করে দিলো, তখন যে কি খুশি হয়েছিলাম। তোকে জানতেও গিয়েছিলাম। কিন্তু তোর তো ঘরের জানালা বন্ধ ছিল। পড়ে তোকে দেখে ভাবলাম তোকে একটু রাগনোই যায়। কী বলিস?”

আয়ু প্রতিটা কথা মন দিয়ে শোনার পর শেষের কথায় স্পর্শকে মারতে লাগলো।

-” আরে কি করছিস, মারছিস কেনো?”

-” বেশ করেছি। আমাকে রাগাতে বেশ ভালো লাগে না তোমার , নাও এবার মার খাও। ”

স্পর্শ কোনো মতে আয়ু কে থামিয়ে বললো,

-” চল নীচে চল। উকিল চলে এলো বলে।”

আয়ু অবাক হয়ে বললো,

-” উকিল চলে এলো মানে, উকিল কী করবে?”

-” আজ আমাদের রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হবে ম্যাডাম।”

-” সত্যি।”

_” এতো লাফাতে হবে না। এখন শুধু রেজিস্ট্রি হবে। বাবা যদি আবার মত বদলায়, তাই এই সিদ্ধান্ত। যদিও বা তারপর তুই তোর বাড়ি আর আমাকে আবার ব্যাঙ্গালোরে চলে যেতে হবে ছয় মাসের জন্য। ওখানের জব টা আমি এখানের ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার করছি। তোর লেখা পড়াও ততদিন কমপ্লিট হয়ে যাবে। আজ থেকে দুই বছর পর ঠিক একই দিনে আমাদের সোশ্যাল ম্যারেজ হবে। ”

নীচ থেকে দ্রুতির ডাকে আয়ু স্পর্শের সঙ্গে নীচে যেতে গেলে স্পর্শ ওকে আটকে বললো,

-” দাঁড়া একমিনিট।”

স্পর্শ আয়ুর ঘরের ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে টিপের পাতাটা নিয়ে একটা নীল টিপ নিয়ে এলো। আয়ুর কপালে টিপটা পরিয়ে ওর হাত ধরে নীচের দিকে হাঁটা দিল।

-” বলেছিলাম না, নীল রঙের একটা টিপ পড়তে।”

-” আমি কি করবো, তুমি যদি আগে বলতে, আজ আমাদের বিয়ে তাহলে দেখতে কতো সাজতাম।”

স্পর্শ আয়ুর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় যত্নের সঙ্গে আগলে রাখলো,

-” তোকে নীল শাড়িতে নীলাম্বরী লাগলেই চলবে। অধিক সাজতে তোকে হবে না। এই সাজেই আমি প্রতিনিয়ত তোর প্রেমে পড়তে প্রস্তুত। ”

আয়ু লজ্জায় নিজের চোখ স্পর্শের দিক থেকে সরিয়ে এইদিক ওইদিক তাকালো।

-” আর লজ্জা পেতে হবে না, নীচে চল।”

(চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here