নীলাম্বরীর_প্রেমে,পর্ব :১৯,২০
Tuhina pakira
পর্ব :১৯
-” হ্যাঁ বল, সব প্যাকিং কমপ্লিট?”
-” হ্যাঁ আমার কমপ্লিট। ” সজল তোর হয়েছে?”
-” আমারও কমপ্লিট।”
-” তোদের হয়ে গেছে। আমার এখনও হয়নি রে। ”
-” ওই তুই না আমাদের নিয়ে যাবি, আর তোরই এখনও কিছু গোছানো হয়নি। উফফ, এই মেয়েটার যে কি হবে।”
-“আরে আমি এক্ষুনি গুছিয়ে নিচ্ছি। ফোন রাখ। আর শোন কাল সকাল ১০:২০ এর ট্রেন।”
-” আচ্ছা রাখছি। আর ওই রুহি কাল তোকে যাওয়ার সময় আমি ডেকে নেবো। ”
-” আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসিস। কাল যেনো আবার তুই বেশি ঘুমোস না।”
-” চুপ কর রুশ বিপ্লব। আমি ঠিক সময়েই তোকে ডাকতে যাবো। দেখিস তুই যেনো আবার মেকআপ করতে করতে দিন না কাবার করে ফেলিস।”
-” ওই শয়তান, আমি মেকআপ করি। কবে করেছি দিন কাবার হওয়ার মতো মেকআপ বল শয়তান?”
রুহির চিৎকারেই সজল ফোন রেখে দিয়েছে। না হলে দুজনের মধ্যে ছোটো খাটো ঝড় বয়ে যেতো।
-” আরে থাম রে। সজল ডিসকানেক্ট করে দিয়েছে।”
-” আয়ু তুই খালি কাল দেখিস ওই শয়তানকে আমি কি করি!”
-” তুই যে কী করবি তা আমি খুব ভালোই জানি। তোমাদের যত ঝগড়া আমার সামনে। অন্য সময় তো বেশ সুন্দর করে ক্যান্টিনে একে অপরকে খাইয়ে দেন। এমনকি তোর কাজ ও করে, আর ওর কাজ তুই করিস। কী ভাবিস কিছু বুঝি না।”
-” হুই, তোকে বলেছে। তুই পুরোটাই ভুল ভাবছিস আয়ু। সে তো আমি তোকে যেমন মাঝে মাঝে কিছু খাইয়ে দিই তেমনি ওকে দিয়েছি। আর শয়তান তোর কাজগুলোও তো আমরা করি। সেটাতো বললি না?”
-” সে তুই যাই বল কিছু একটা কানেকশন তো তোদের আছে।”
-” যেমন তোর পায়ের নূপুরের সঙ্গে তোর কানেকশন আছে। তাইনা?”
-” উফফ, রুহি বেশি বকিস তুই। ফোন রাখ আমাকে প্যাকিং করতে হবে।”
আয়ু তাড়াহুড়ো করে ফোন রেখে দিল। বিছানায় পা গুটিয়ে বসে পায়ে হাত দিল। হ্যাঁ, নেই নূপুর। হারিয়ে গেছে স্পর্শের আসার দিনই। স্পর্শ যখন আয়ুর থেকে নূপুর টা ফেরত চাইবে তখন, কী হবে তখন? স্পর্শকে বলবে হারিয়ে গেছে। এতো সহজে বলতে পারবে আয়ু। পারবে না। নুপুর টা তো অন্য কারোর নামাঙ্কিত, আয়ু তো কেবল নিজের কাছে ভালোবাসা দিয়ে তাকে মায়ায় রেখেছিল অন্যের গচ্ছিত ভালোবাসা। একদিন তো তা ফেরত দিতেই হতো কিন্তু তাবলে তাকে হারিয়ে ফেললো।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল আয়ু। এই বিষয়ে স্পর্শ যা বলবে ও সব সয়ে নেবে। যে মেয়ে নিজের ভালোবাসা পায় না সে কিনা অপরের ভালোবাসা গচ্ছিত রেখেছিল। কিন্তু তাও হারিয়ে ফেললো। স্পর্শের চলে যাবার পর অনেকবার চেয়েও আয়ু নূপুর টা ওর থেকে আলাদা করতে পারেনি। ইশ, ও যদি আগে নূপুর টা খুলে ফেলতো, তাহলে ওটা হারাতো না।
আয়ু গিয়ে নিজের ব্যাগে ওর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গোছাতে লাগলো। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাগটা গোছাতে হবে।
-” আয়ু দি, ওই আয়ু দি।”
দ্রুতির গলা শুনে আয়ু তাড়াতাড়ি ব্যাগটা খাটের নীচে লুকিয়ে ফেললো। দ্রুতি ততক্ষনে ঘরে ঢুকে পড়লেও কিছু দেখেনি।
-” কিছু বলবি দ্রুতি?”
-” আমি তো গল্প করতে এসেছি। দেখনা আয়ান বাড়িতে নেই। অবাড়িতে স্পর্শ দা, দিহান ও নেই। দিহানদের বাড়ি গিয়ে বসে আছে। আমি খুব বোর হচ্ছি। তাই তোর সঙ্গে গল্প করতে এলাম।”
-” আচ্ছা বল কি গল্প করবি?”
আয়ুর বলতে দেরি, দ্রুতি লাফিয়ে বিছানায় উঠে বসে একটা বালিশ পায়ের উপরে রেখে আরাম করে বসলো।
-” আয়ু দি আমার তো খুব আনন্দ হচ্ছে। তুই ভাব একবার পরশু আমরা সবাই মিলে পিকনিক করবো। দারুন মজা হবে। ”
আয়ু মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,
-” ভাগ্যিস একে কিছু বলিনি। বললে আমাকেই এই মেয়ে ফাঁসিয়ে দিতো। ”
-” কী রে কিছু বলছিস না যে। আর এই রকম নতুন জামা গুলো বের করে রেখেছিস কেনো?”
বিছানায় রাখা নতুন জামার দিকে তাকিয়ে বললো দ্রুতি। আয়ু চট করে জামা গুলো হাতে তুলে নিলো।
-” আরে জামাগুলো অগোছালো ছিল, তাই ভালো করে ভাঁজ করে রাখলাম।”
-” ও। ওই আয়ু দি চল আমার ঘরে চল। আমাকে একটা জামা বেছে দিবি। ”
-” তুই যা। আমার অনেক কাজ আছে।”
আয়ুর হাত ধরে টানতে টানতে দ্রুতি বললো,
-” প্লিজ চল, প্লিজ প্লিজ।”
-” আচ্ছা চল।”
♣
আয়ুর সামনে একে একে ছয়টা জামা বের করে রাখলো দ্রুতি।
-” দেখ কোনটা পড়বো, এই সাদা রঙেরটা কেমন হবে?”
-” সারাদিন সাদা জামা পড়ে থাকলে এটা আর সাদা থাকবে না। তার থেকে এই নীল জামাটা দেখ।”
আয়ুর হাত থেকে নীল জামাটা নিয়ে দ্রুতি খানিকক্ষণ ওটা দেখে নিয়ে বললো,
-” এই নীল জামাটা পড়বোনা। দেখ এই জামাটা লং। লং জামা পড়ে সারাদিন আমি ছুটোছুটি করতে পারিনা তুই তো জানিস।”
-” তাহলে এই মেরুন রঙের জামাটা। এটা বেশ দেখতে। তোকে পড়লেও বেশ কিউট লাগে।”
-” না এটা পড়বো না। এটায় আমার অলরেডি অনেক ছবি তোলা আছে। এটা পড়া যাবে না। অন্যকিছু বল। ”
-” ধুর তোর যা খুশি একটা পড়, আমি নেই। আর নাহলে নতুন জামা কিনে নে। তবু আমাকে আর জিজ্ঞেস করবি না। ”
-” ওই আয়ু দি আইডিয়া টা কিন্তু জোশ। আচ্ছা কাল কলেজ থেকে ফেরার পথে তুই আর আমি কিনে নিয়ে আসবো। কাল নাহয় তোর জন্যে আমি কিছুক্ষণ দাঁড়াবো। তারপর একসঙ্গে কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরবো।”
আয়ু নিজের ঘরের দিকে পা বাড়িয়ে বললো,” কাল আমি কলেজ যাবো না। কোনো বন্ধুকে নিয়ে চলে যাস। ”
-” ঠিক আছে।”
♣
সকাল ৯:৩৭
-” মা তুমি কিন্তু কাউকে বলবে না। কাউকে মানে কাউকে না। তোমার আদরের স্পর্শকেও না।”
-” আচ্ছা যা কাউকে বলব না। আমার মেয়ে যে সেখানে যাচ্ছে এটাই অনেক। মা খুব খুশি হবে। সাবধানে যাবি। কখনও তো যাসনি একা পথ চিনে যেতে পারবি একা একা। ”
-” মা আমি একা একা যেতে পারবনা তোমাকে কে বলেছে।? কাউকে বলো না সবাই শুনলে হাসবে।”
-” আচ্ছা সাবধানে যাবি। পৌঁছে ফোন করবি।”
♣
-” তাই তাই তাই
ঘুরোঘুরি করতে যাই
ঘুরোঘুরি করতে ভারি মজা
কিল চড় নাই।”
সজলের পিঠে রুহি একটা ঘুষি মেরে ট্রেন থেকে নামলো। কিন্তু সজলের পিঠে থাকা ব্যাগে লেগে রুহিরই হাতে লেগে গেলো।
-” উফফ, ওই তোর ব্যাগে কি আছে রে? আমার হতেই লাগলো উল্টে।”
-” মারকুটে মেয়েদের হাতে লাগাই উচিত।”
আয়ু, সজল, রুহি তিনজনে হাটতে লাগলো। দুই ঘণ্টা ট্রেন সফরের পর তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছিয়েছে।
-” এই আয়ু এখন এখান থেকে কতোটা হাঁটতে হবে রে?”
-” পাঁচ মিনিট। ”
আয়ুরা কিছুটা এগিয়ে যেতেই সামনে কাউকে একটা দেখে আয়ু প্রায় লাফিয়ে তার কাছে চলে গেলো।
-” কী রে ঢেঁড়শ কেমন আছিস?”
-” আমি ভালো আছি ভিন্ডি। তুমি কেমন আছো? ”
-” এই চলছে। তো এরা তোর বন্ধু?”
-” হ্যাঁ আমার বন্ধু। এই যে এই ভিন্ডি কে দেখছিস এটা আমার দাদা, পলাশ। আর দাদা এই মেয়েটা রুহি অর্থাৎ রুশ বিপ্লব আর এটা সজল মানে চোখের কাজল।”
-” আর তুই ঢেঁড়শ। ”
সজলের কথায় একসঙ্গে রুহি আর ভিন্ডি অর্থাৎ পলাশ হেসে উঠলো।
(চলবে )
#নীলাম্বরীর_প্রেমে
Tuhina pakira
পর্ব : ২০
রাত ১০:১৭।।
স্পর্শদের বাড়ির পিছনের বাগানে গাড়িটা পার্ক করে রাস্তায় উঠে এলো স্পর্শ। ওর জন্যে আগে থেকেই দ্রুতি, দিহান, আয়ান দাঁড়িয়ে ছিল। মূলত স্পর্শই গাড়িটা পার্ক করার আগে ওদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছিল। স্পর্শ আসতেই চারজনে হাঁটা ধরলো বাড়ির দিকে। স্পর্শ বাদে সকলের হাঁটার গতি একেবারে নেই বললেই চলে।
-” আচ্ছা কাল যে আমরা পিকনিক করবো, কিছু রেডি তো করা হয়নি।”
দিহান দ্রুতির মাথায় গাট্টা মেরে উঠলো। ব্যথায় হালকা চেঁচিয়ে উঠলো দ্রুতি।
-” ওই মারলি কেনো, শয়তান?”
-” তো কী করবো। তুই জানিস না আমরা কাল নয় আরও দুই দিন পর পিকনিকের জন্যে ঠিক করেছি?”
-” কোথায় আমায় তো কেউ কিছু বলেনি। স্পর্শ দা দিহান যা বলছে সত্যি না আমাকে ফেলে তোমরা পিকনিকের প্ল্যান করেছো?”
-” না রে দিহান ঠিকই বলেছে। দেখ আমরা তো পিসিমনির বাড়িতে ছিলাম, এরপর তো পিকনিকের কোনো কথাই হয়নি। গ্যাস সিলিন্ডার থেকে শুরু করে সব কিছু অর্ডার করতে হবে তো। তাই ডেট দুই দিন পরের করেছি।”
-” তোমরা আগে বলবেনা, আমি তো আয়ু দিকে কাল বললাম যে পরশু পিকনিক। উফফ তোমরাও না।”
-” ওই দিদি, আয়ু দি তো জানে। তোকে বলেনি? আমি তো কদিন আগেই বলেছি।”
-” কোথায় বললো না তো! আমার মনে হয় ভুলে গেছে। আচ্ছা আমি বরং বাড়িতে গিয়ে মনে করিয়ে দেবো।”
স্পর্শ কিছুই বললো না। চুপ করে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। রাস্তা দিয়ে এলে আয়ুদের বারান্দাটা আগে চোখে পড়ে। স্পর্শ বারান্দার দিকে তাকালো, যদি আয়ু কে দেখে। বারান্দার লাইট বন্ধ। রাস্তার ল্যাম্প পোস্টের আলোয় কিছুটা হলেও বারান্দার সব কিছু দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে কোথাও আয়ু নেই। স্পর্শ তপ্ত শ্বাস ছাড়লো। আজ দুই দিন হলো ওদের দেখা হয়নি। স্পর্শ নিজের মনেই বিরবির করলো, সাড়ে তিন বছর যাকে না দেখে থেকে গেলো দূরে, একটা কল পর্যন্ত যাকে করেনি কখনো, সেখানে দুই দিন না দেখেই মনে হচ্ছে কখন তাকে দেখবে। আচ্ছা সত্যিই কি সে কল করেনি? কথা বলার চেষ্টা করেনি? আচ্ছা তবে সে কে ছিল, যে ফোনের ওপাশের ব্যাক্তির নিশ্বাসের শব্দ প্রতিনিয়ত শোনার অপেক্ষা করে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতো? কে ছিল সে? নিজের মনেই হেসে স্পর্শ বাড়িতে ঢুকে গেলো। সদর দরজা খোলাই ছিল।
-” কী হলো ব্যাপারটা?”
-” আমিও তো তাই ভাবছি আয়ান। কতক্ষন ধরে আমি স্পর্শ দাকে ডাকলাম কিন্তু সে তো সাড়াই দিল না, কী হলো ব্যাপারটা?”
দ্রুতি তৎক্ষণাৎ পরপর কয়েকবার ঢোক গিললো। ভয়ে ভয়ে নিজের চারিদিকটা ভালো করে দেখে বললো,
-” আমার মনে হয় স্পর্শ দাকে ভূতে ধরেছে! নাহলে আমাদের কথার জবাব দিলো না কেনো?”
-” চুপ কর তুই, তুইতো নিজের ছায়া দেখলেও ভূত ভেবে পারলে হার্ট অ্যাটাক করিস।”
কথাটা বলেই দিহান মামার বাড়িতে চলে গেলো।
আয়ান কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে নিজের বাড়ির ভিতর ঢুকলো।
-” এই মেয়ের কী হবে?”
-” ওই আয়ান দাঁড়া রে ভাই। আমি যাবো তো। ”
♣
-” দ্রুতি তুই যে দিহানদের বাড়ি গিয়েছিস এটা আমাকে একবার ফোন করে বলা যেতো না?”
আজ কলেজের পর দিহানের সঙ্গে দ্রুতি ওদের বাড়িতে যায়। যাবার আগে অবশ্য নিজের জন্যে কেনাকাটা করতে ভোলেনি। তবে আয়ুর জন্যও একই ডিজাইনের জামা কিনেছে। শুধু ওর টা পার্পেল কালার এর আয়ুর টা অরেঞ্জ। এসবের মধ্যে বাড়িতে বলতেই ভুলে গেছে।
-” সরি মাসিমণি, আমি ভুলে গিয়েছিলাম।”
-” আর ওই রকম করিস না মা, চিন্তা হয় তো। এখনকার দিনের কী পরিস্থিতি তুই তো জানিস মা। তোদের দুটো কে নিয়ে খুব চিন্তা হয়। ”
-” আচ্ছা আর হবে না। তবে আমি কিন্তু সেলফ ডিফেন্স জানি কিছুটা। আগের বছর স্কুলে শিখিয়েছে।”
-” সে তো জানি আমি। কিন্তু মায়ের মন তো। তোরা বুঝবি না, মা হো বুঝবি।”
কথাটা বলতে দেরি আয়ান গিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরলো।
-” উফফ, মা এতক্ষণে মনে হলো আমি বাড়িতে আছি। দুই দিন তো তোমার এই ডায়লগটা কর্ণগোচর হয়নি।”
আয়ানের মা ওর কান টা ধরে বললো,
-” পাজি ছেলে, যা ফ্রেশ হয়ে আয়। ডিনারে কী খাবি?”
-” আহ্, মা লাগছে। আর তাছাড়া আমরা খেয়ে এসেছি। এবার বিছানায় পড়বো আর ঘুম। আহা, কী শান্তি।”
-” ঘুমানোর আগে মনে করে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হবেন লাটসাহেব।”
-” যথা আজ্ঞে মাতে।”
♣
ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ গায়ে ঠাণ্ডা হাওয়ার স্পর্শে ঘুম ভাঙলো স্পর্শের। এই সকালের দিকের শীতল হাওয়া প্রতিটা ব্যাক্তির হয়তো খুব মনোরম লাগে। তবে কেউ কেউ হয়তো ব্যতিক্রমী রয়েছে। কেউ কেউ এই শীতল হাওয়া শরীরে মাখানোর জন্যে সকালের শুরুতে বেরিয়ে পড়ে বাইরে, আবার অনেকে এই শীতল হাওয়ার সংস্পর্শে গায়ে চাদর দিয়ে আবারও একটা ঘুম দেয়।
পরপর কয়েকবার হাই তুলতে তুলতে স্পর্শ বারান্দায় এগিয়ে গেলো। বাতাসের হালকা পরশে উইন্ড চিমসের এক একটা মেটেল একে অপরের সংস্পর্শে রিনরিন করে বেজে চলেছে। আকাশটা সাদা হয়ে রয়েছে। পাশের পাড়ার সমরেশ কাকা একে একে তার নির্ধারিত বাড়িতে তাদের পছন্দের খবরের কাগজ ছুঁড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে।
-” কাকা উপরে।”
কারোর ডাকে সমরেশ কাকা উপরে তাকিয়ে স্পর্শকে দেখে তার বিশাল গোঁফের মধ্যে দিয়ে নিঃশব্দে হেসে খবরের কাগজটা ওর দিকে ছুঁড়ে মারলো। স্পর্শ ও সেটা ক্যাচ লুফে নিলো।
খবরের কাগজটার সামনের পাতাটা দেখে স্পর্শ পাশের টেবিলে ওটা রেখে আয়ুর বারান্দার দিকে তাকালো। কিন্তু বারান্দার দরজা এবং জানালা পুরোটাই বন্ধ। তারমানে আয়ু এখনও ঘুমোচ্ছে।
কাল রাতে স্পর্শ ফ্রেশ হয়ে এসে আধ ঘণ্টা মতো বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। এই আশায় যে আয়ু হয়তো একবার হলেও আসবে। কিন্তু যখন দেখলো ও আসছে না, স্পর্শ গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
স্পর্শের এখন আয়ু কে বিরক্ত করতে ইচ্ছে করলো না। ও খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালো। ছাদে পা রাখতে একটা মিষ্টি গন্ধ এসে স্পর্শের নাকে বাড়ি খেলো। স্পর্শের মা সারা ছাদ জুড়ে কেবল গোলাপ ফুলের এক একটা টব দিয়ে সাজিয়েছে। টব গুলোর নীচে কিছু ঝরে যাওয়া ফুলের পাপড়ি ও পড়ে রয়েছে৷ পুরো ছাদ জুড়ে এক আলাদাই প্রকৃতি বিরাজ করছে।
স্পর্শ ফুল গুলোর দিকে এগিয়ে গেলো। এক একটা গোলাপের দিকে তাকিয়ে ও যতটা না মুগ্ধ হলো তার থেকে বেশি মুগ্ধ হলো টবের নীচে পরে থাকা গোলাপের পাপড়ি দেখে। শীতল হাওয়ায় ফুলের পাপড়ি গুলো বলতে গেলে পুরো ছাদ জুড়ে এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। স্পর্শ ছাদের মেঝেতে এক হাঁটু ভাঁজ করে বসে কিছু পাপড়ি তুলে নিলো। মুগ্ধ চোখে পাপড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে ভেসে উঠলো, কারোও প্রতিচ্ছবি। স্পর্শ নিজের মনেই বিড়বিড় করে উঠলো,
-“তোমাকে ভালোবেসে কয়েকহাজার গোলাপ দেবো না। তোমাকে ভালোবাসি, গোলাপের একমুঠো পাপড়ি দিয়েই না হয় বোঝাবো।”
♣
-” সকাল সকাল গরম গরম চায়ের সাথে গরম গরম কচুরি। আহা, প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো।”
-” দাঁড়াও সজল এই তো সবে শুরু এখনও অনেক কিছু আছে।”
-” পলাশ দা আমি আর বাড়ি যাবো না। তোমাদের গ্রামেই থেকে যাবো, অন্তত এই কচুরির জন্যে। ”
-” আচ্ছা তুমি থেকো। আপাতত এগুলো শেষ করো। তারপর গরম গরম রসগোল্লা করছে ময়রা।”
-” এই সজল তুই একটু আস্তে খেতে পারছিস না। আমরা কি তোর খাবার খেয়ে নেবো?”
সজল এক হাতে কচুরি ছোটো করে ছিঁড়ে তরকারিতে মাখিয়ে মুখের অদ্ভুদ শব্দ করে মুখে পুরলো। অর্ধেক খাবার মুখে রেখেই কথা জড়িয়ে বললো,
-” তোকে বিশ্বাস নেই রুহি খেয়ে নিতেও পারিস। তাও আগে থেকে সাবধান করছি, আমার প্লেটে হাত দিবি না। নিজের টা ফিনিশ কর। ”
আয়ু গরম চা মুখে পুরে সজলের কথায় হাসলো। এখানে এসে ওরা বেশ মজা করছে। কাল সারাদিন টায়ার্ড ছিল, তাই কালকের দিনটা রেস্ট নিয়ে আজ সকাল সকাল ওরা গ্রাম দেখতে বেরিয়ে পড়েছে। এখন তারা পাকা রাস্তার মোড়ে একটা দোকানে বসে রয়েছে। শাল পাতায় কচুরি আর মাটির ভাঁড়ে চা খেতে ব্যস্ত তিন বন্ধু ও তাদের সঙ্গী পলাশ।
(চলবে )