নীলচে_তারার_আলো,পর্ব_২৯

#নীলচে_তারার_আলো,পর্ব_২৯
#নবনী_নীলা

” চল চলে যাই। দেখে ফেললে তো আমরা শেষ।”, ভয়ার্ত কন্ঠে বললো হিয়া।

দিবা আড় চোখে তাকালো। তারপর বললো,” কিসের এতো ভয়? আমি আছি না। আর দেখলে কি হয়েছে? আমরা কি এইখানে আসতে পারি না?”, বলেই হিয়াকে নিয়ে সামনের দিকে গেলো। ইমনকে খুজতে হবে। আরেকটু সামনে যেতেই সামনে পড়লো আবির ভাইয়া। দিবার বাবার বন্ধুর ছেলে, ছেলে ভালো কিন্তু অনেকদিন তাদের সাথে যোগাযোগ নেই। এতদিন পর দেখা তাও দিবা ভ্রু কুঁচকে ফেললো। দুনিয়ার সব যন্ত্রণার আজই এইখানে আসার প্রয়োজন হলো।

আবির দিবাকে দেখেই সামনে এসে দাড়ালো। হেসে উঠে বললো,” কি ব্যাপার তুমি এইখানে ?” বলেই ঘাড় কাত করে হিয়ার দিকে তাকালো। তারপর আরো বললো,” আচ্ছা ফ্রেন্ডকে সঙ্গে নিয়ে সোজা কলেজ থেকে ঘুরতে চলে এসেছো?”

দিবার চোখ তো ইভানের দিকে কিন্তু আবির ভাইয়ার বক বক কে শুনবে। দিবা সৌজন্যমুলক হাসলো তারপর বললো,” ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার ছিলো।” এতটুকু বলেই দেখলো ইভান তার ফ্রেন্ডের সাথে সেকেন্ড ফ্লোরে উঠে যাচ্ছে।

দিবা ব্যাস্ত হয়ে বললো,” ভাইয়া আপনি আমার ফ্রেন্ড হিয়ার সাথে কথা বলুন আমি এক্ষুনি আসছি।” বলেই করুন দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকালো। হিয়া বুঝতে পারলো দিবার জন্য তাকে এই লোকটার সাথে বক বক করতে হবে। হিয়া একবার চোখের পলক ফেলে আশ্বাস দিতেই দিবা কেটে পড়লো। হিয়ার চিন্তা শুধু বদমাইশ ডাক্টারটাকে নিয়ে। যদিও এইখান থেকে শুভ্রকে দেখা যাচ্ছে না।

দিবা চলে যেতেই আবির জিজ্ঞেস করলো,” কোথায় গেলো ও?”

হিয়া একটু কেশে বললো,” আমাদের একটা ফ্রেন্ড আশার কথা ছিলো। ওকেই হয়তো দেখতে পেয়ে ডাকতে গেছে।”

” আচ্ছা! তোমার নাম কি?”, প্রশ্ন করলো আবির। কতক্ষন এই লোকটার সাথে কথা বলতে হবে কে জানে? দিবারে জলদি আয়।

শুভ্র ভ্রু কুচকে ক্রিসমাস ট্রির অপরপাশে কলেজ ড্রেসে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে লক্ষ্য করছে। মেয়েটার বরাবর একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে যার কারণে চেহারা স্পষ্ট নয়। কিন্তু শুভ্রের কেনো জানি মনে হচ্ছে মেয়েটা হিয়া। অন্তিক আর রুবাইদা কথা বলছিলো। শুভ্রের অন্যমনস্কতা খেয়াল করতেই আন্তিক বললো,” কি ব্যাপার কোন দিকে তাকিয়ে আছিস?”

” নাহ্, তেমন কিছু না। আমি একটু আসি।”, বলে উঠে দাড়ালো শুভ্র। এর মাঝেই রুবাইদা বললো,” আচ্ছা যাচ্ছিস যখন দেখিস কলেজ ড্রেসে দুটো মেয়ে এখন আছে কিনা?”

শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,”কেনো?”

” মনে হলো প্রভার বোনকে দেখলাম। প্রভা কোথায় সেটা ওর বোনকে জিজ্ঞেস করতাম। এমনিতেও মহারানী আমাদের কল ধরছে না। “, এতটুকু শুনেই শুভ্রর বুঝতে বাকি রইলো না যে তার ধারণাই ঠিক।

সকালে কলেজে আসার সময় মোহনা আর হিয়ার কথাবার্তার অংশবিশেষ শুনেছে শুভ্র। শুভ্র তখন পাশেই ছিলো।

মোহন হিয়াকে জ্বালাতে বলেছিলো,” তোমার বর না তোমার একদম খেয়াল রাখে না। একটু কলেজেও দিয়ে আসে না।”

উত্তরের হিয়া মুখ কালো করে বলেছিলো,” উনাকে আমি বর আমি মানি না। সারাদিন তুমি বর বর করো কেনো?” কথাটা শুভ্র স্পষ্ট শুনেছে। হিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই হিয়া মুখ ঘুরিয়ে চলে গেছে।

মোহনা নিজে থেকেই বানিয়ে কিছু কথা শুভ্রের কানেও দিয়েছে। কিছু কথাগুলো এমন যে বউকে এভাবে ছেড়ে দিয়েছো যদি উড়ে কোথাও চলে যায়। এমনিতেও হিয়া তোর মাঝে জামাই জামাই ভাবটা খুঁজে পায় না। জামাইরা তো বউকে আগলে রাখে, যত্ন নেয় অ্যান্ড মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট এতটা ভালোবাসে। তোর মধ্যে সব আছে কিন্তু শেষেরটা নেই।

এই বানিয়ে বলা কথা গুলোর মধ্যে শুধু একটা কথা বলেছে হিয়া সেটাও মোহনাকে চুপ করাতে। সেগুলো যে সুধে আসলে শুভ্রের কানে তোলা হবে কে জানতো। কথাগুলো শুভ্র দিদির বানানো বলে ধারণা করলেও হিয়ার মুখ থেকেই সে একবার শুনেছে এমন কথা। তাই একটু হলেও খটকা আছে। অবশ্য সবই তার দিদির সঙ্গদোষে হয়েছে বলেও ধারণা ছিল তার।

হিয়া আবিরের সাথে কথা বলছিলো। হটাৎ মনে হলো শুভ্র তার দিকে আসছে। কিছুটা আন্দাজ করে হিয়া একদম ক্রিসমাস ট্রির সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে পড়লো। আবির হিয়ার হাত ধরে সরিয়ে আনলো আরেকটু হলেই ইলেকট্রিক তারের সাথে জড়িয়ে যেতো। হিয়াকে সরিয়ে আনতেই শুভ্র স্পষ্ট হিয়াকে দেখতে পেলো। শুভ্রের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি গেলো আবিরের দিকে। কে এই ছেলে? আবার হাত ধরেছে হিয়ার।

হিয়ার চুলেও গাছের ময়লা লেগেছিল। আবির সেগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে বললো,” আরেকটু হলেই তো সর্বনাশ হয়ে যেতো। আমার ছোট বোনটাও তোমার মতন। কোনদিকে তাকায় না। দিবা কোথায় গেলো বলো তো? আসার নাম নেই।”

” এসে পড়বে। আপনার কোনো জরুরি দরকার ছিলো?”, একটা ঢোক গিলে বললো হিয়া।

” হ্যা “,বাকিটা বলার আগেই শুভ্র এসে হিয়ার হাত ধরে এক টান দিয়ে হিয়াকে পিছনে এনে ছেলেটার সামনে দাড়াতেই দুজনেই চমকে গেলো। হিয়ার বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে। আবির ভীষণ অবাক হয়ে তাকালো। কিছু বলার আগেই হিয়ার দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করলো,” কে এই ছেলে? কলেজ শেষে এইখানে কি করছো তুমি?”

আবির ঘটনাটা আন্দাজ করে বললো,” আই থিঙ্ক কোনো মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হচ্ছে।”

সঙ্গে সঙ্গে শুভ্র বিস্ফোরিত কণ্ঠে বললো,” ডিড আই আস্ক ইউ? জাস্ট কিপ ইউর মাউথ শাট।”

হিয়ার ভীষন ভয় লাগছে। মোহনার কথায় এই কয়েকদিন সে শুভ্রকে অকারনেই ইগনোর করেছে। তারপর আজেবাজে যা শিখিয়েছে সব বলেছে। এরপর এই লোকের সাথে দেখে আবার কি না কি ভেবেছে। ভয়ে আত্তা কাপছে হিয়ার।

আবির কিছু বলার আগেই শুভ্র হিয়ার হাত ধরে টেনে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নিয়ে এলো। সিড়ি দিয়ে নামতেই নিচে সবগুলো গাড়ি দেখতে পেলো হিয়া। জায়গাটা আবদ্ধ করা, হয়তো গাড়ি পার্কিং এর জন্যে এই জায়গা। শুভ্রের রাগ হিয়ার জানা আছে। শুধু শুধু তাকে আরো রাগিয়ে দিয়ে লাভ নেই। হিয়া শুভ্রকে থামাতে বললো,” আমার কথা একবার শুনুন।”, বলতে বলতে শুভ্র গাড়ির সামনে এসে দাড়ালো। তারপর একটা তপ্ত নিশ্বাস ফেলে হিয়ার হাত ছেড়ে গাড়ির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে কড়া চোখে হিয়ার দিকে তাকালো। পুরো ঘটনাটা শুভ্রের কাছে পরিষ্কার।

হিয়া শুভ্রের সেই দৃষ্টিতে জমে বরফ হয়ে গেছে। হিয়া আমতা আমতা করে বলল,” দেখুন উনি দিবার পরিচিত আমি ওনাকে চিনি না। আমি দিবার সাথে এসেছিলাম পরে দিবা ওর ফ্রেন্ডের কাছে গেলো………… তাই আমি ওনার সাথে কথা বলছিলাম।” শুভ্রের মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে সে সবটাই জানে। হিয়া বোকা হয়ে তাকালো। লোকটা কোনো কথাও বলছে না। কি করে বুঝবে শুভ্রের মনে কি চলছে। হিয়া আরেকটু এগিয়ে এসে ভয়ার্ত বললো,” আপনি কি রাগ করেছেন?”

শুভ্র উত্তরে কিছু বললো না। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সে খুব রেগে আছে। শুভ্র হাত বাড়িয়ে এক হাতে হিয়ার কোমড় জড়িয়ে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। হিয়ার হৃদ কম্পন বেড়ে গেলো। শুভ্র অন্য হাত হিয়ার গালে ডুবিয়ে দিয়েই শরীরে এক শীতল শিহরণ বয়ে গেলো তার। শুভ্র এগিয়ে এসে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিয়ে গভীর ভাবে কিস করলো। হিয়া শুভ্রের হটাৎ এমন কাণ্ডে হকচকিয়ে উঠে কাধের শার্টের অংশ শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো। মুহূর্তেই দুজনের মধ্যকার সব দুরত্ব চলে গেলো।

অনেক্ষন পর শুভ্র সরে এলো কিন্তু কোমড় জড়িয়ে এখনো হিয়াকে নিজের কাছে রেখেছে। এমন একটা জায়গায় শুভ্র তাকে এইভাবে…… ভেবেই রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে হিয়ার সারা মুখে। আরেকটু হলেই দম আটকে মারা যেতো সে। অথচ শুভ্রের চোখে মুখ স্বাভাবিক। শুভ্র একদৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” হুম্, নাও অ্যাম ফিলিং বেটার। কি বলছিলে এইবার বলো।”

হিয়া মাথা নিচু করে রইলো। নাও অ্যাম ফিলিং বেটার মানে কি? এমন একটা জায়গায় এইসব করে খুব ভালো লাগছে উনার। নিলজ্জ একটা লোক, তার মুখটা বন্ধ করে বলছে এইবার বলো।

হিয়াকে চুপ কর থাকতে দেখে শুভ্র বললো,” আমার সাথে এইসব ট্রিকস খেলার বুদ্ধি তো তোমার মাথায় নেই। এইসব তো দিদির কথায় করেছো তাই না?”

হিয়া কিছু বললো না তবে একটু সস্থি পেলো যে লোকটা তাকে বুঝেছে। শুভ্র পরক্ষণেই বললো,” ডোন্ট বি হ্যাপি। দিদি বললে কি হবে? কাজগুলো তো তুমি করেছো। আমাকে ইগনোর করেছো। আজ সকালেই তো বললে যে আমাকে তুমি বর মানো না। ওকে তাহলে আজ থেকে তুমি তোমার পথে আর আমি আমার। এমনিতেও এই কয়দিনে তুমি যা করেছো তার জন্যে এতো সহজে তো তোমাকে আমি ক্ষমা করছি না।” বলেই হিয়ার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে, সরে দাঁড়ালো। ইগনোর কি জিনিস এইবার হিয়া বুঝবে।

কথাগুলো শুনে হিয়া চমকে তাকালো। ক্ষমা করছে না মানে? আবার বললো আজ থেকে আলাদা আলাদা পথে…. মানে? শুভ্রের এমন রাগের সাথে তো হিয়ার পরিচয় নেই। তাহলে কি তাকে এইবার শুভ্রের এই রাগ ভাঙাতে হবে?

[ #চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here