নতুন_শহরে,4
কুরআতুল_আয়েন
ইসু কোনোমতে ভার্সিটি থেকে পালিয়ে এসেছে।ইস্পাতের মুখোমুখি আর হয় নি।বাসায় এসে গোসল করে বিছানায় থম মেরে বসে রইলো।ইস্পাতের সাথে হওয়া ঘটনা গুলো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।মাথা এমনেই গরম হয়ে আছে ইসুর।ঠান্ডা হওয়ার জন্য অত্যন্ত তেল দেওয়া উচিত।যেই ভাবা সেই কাজ,ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে মিনিট বিশেক নিয়ে তেল দিলো।মাথাটা এখন তার ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে।মাথা ঠান্ডা তো সব ঠান্ডা।ইসু বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো।উপরের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে আর বিরবির করছে,
‘লোকটা খুব খারাপ!শুধু আমার কাছে আসতে চায়।লোকটা কি বুঝে না আমার এইসব মোটেও ভালো লাগে না।বুকে থাপ্পড় দিয়ে বেশ করেছি।এক হাতে দেওয়াটা উচিত হয় নি।দু’হাতে দেওয়া উচিত ছিলো।আরেকবার কিছু করতে আসলে দু’হাত দিয়ে থাপ্পড় মেরে একদম দু’হাতের দশ আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিবো।কয়টা মেয়ের সাথে উনি ঢলাঢলি করেছে কে জানে।আমার কি তাতে!করুক গিয়ে একশো মেয়ের সাথে।আমি দেখেও দেখবো না এইসব।’
ইসু বিরবির করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে।তার জীবনের প্রায় অংশ জুড়ে ঘুমেরা রাজত্ব করে রেখেছে।সেখানে কারোর স্থান নেই।এমনকি যে কোনো অবস্থাতে ইসু ঘুমিয়ে পড়তে পারে।
ঘুমিয়ে উঠতে উঠতে বিকেল পেরিয়ে গেলো।ফ্রেশ হয়ে ছাঁদে গেলো ইসু।একে তো গরম তার উপর আরো বন্দী এক অবস্থা।এইরকম পরিবেশে ইসু মোটেও বড় হয় নি।গ্রামের খোলামেলা পরিবেশে বেড়ে উঠেছে ইসু।নদীর পাশ থেকে বয়ে আসা মৃদুল হাওয়া যা ইসুকে এক সেকেন্ডেই কাবু করে ফেলে।তার উপর মাটির সুভাস যেনো চারপাশে মো মো করে।সেসব থেকে বেড়ে উঠা ইসুর এখন শহরে দমবন্ধ হয়ে আসে।মন শুধু পাখির মতো উড়াল দিয়ে নিজের আসল ঠিকানায় চলে যেতে ইচ্ছা করে।
ছাঁদ জুড়ে পায়চারী করছে ইসু।তার কিছুই ভালো লাগছে না।সামনে ছাঁদের একপাশে টবে রাখা কালো গোলাপের গাছ টা দেখে ইসুর খুব ভালো লাগলো।কালো গোলাপ এই প্রথম দেখলো সে।অসম্ভব রকমের সুন্দর আর মোহময় লাগছে।গাছটায় তিনটি কালো গোলাপ ফুটে আছে।ইসু একটা গোলাপ ছিঁড়তে নিলেই পিছন থেকে ভেসে আসা একটা কন্ঠে থেমে যায়।পিছনে ফিরে বারো বছরের একটা ছোট ছেলেকে দেখে ইসু ছেলেটির সামনে এগিয়ে গেলো।ইসু সামনে যেতেই ছেলেটি কোমরে হাত দিয়ে বললো,
‘আমার ভাইয়ার ফুল গাছে হাত দিয়েছো কেনো তুমি??ভাইয়ার ফুল গাছে হাত দিতে গেলে মানুষ দশবার ভেবে নেয়।আর,তুমি কয়বার ভেবে হাত দিয়েছো??’
ইসু আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছে।এই ছেলের কথার পিঠে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।ইসু কয়েকটা ঢোক গিলে বললো,
‘আমি কি জানতাম নাকি এইটা তোমার ভাইয়ার ফুল গাছ।আর একটা ফুল ছিঁড়লে কিই বা এমন হয়ে যেতো।আর দুইটা তো থাকতই তাই না।কে তোমার ভাইয়া!উনাকে বলে আমি একটা ফুল নিয়ে নিবো।’
‘তুমি আমার ভাইয়াকে চিনো না।এই বিল্ডিংয়ের বড় বড় আপুরা আমার ভাইয়ার জন্য পাগল।সবাই আমার উপর হুমড়ি খেয়ে ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করে।’
ইসু গালে হাত দিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে ছেলেটির কথা শুনলো।ইসু ভ্রু কুঁচকে বললো,
‘আমি তো চিনি না তোমার ভাইয়াকে।চিনলে তো আর তোমাকে বলতাম না কে তোমার ভাইয়া।’
‘আমার ভাইয়ার নাম ইস্পাত আহম্মেদ।ভার্সিটির শিক্ষক।’
ইসু হা করে তাকিয়ে রইলো ছেলেটির দিকে।ও যে ইস্পাতের ভাই তা ইসুর ভাবনার বাহিরেই ছিলো।এমনকি ইস্পাতের যে ভাই আছে তাও ভাবতে পারে নি।ইসু মিষ্টি একটা হাসি টেনে বললো,
‘তাহলে কি তোমার নাম লোহা।’
‘না আমার নাম ইমাম আহম্মেদ।লোহা হতে যাবে কেন?’
ইসু মাথা চুলকিয়ে জবাবে বললো,
‘তোমার এতো ভালো নাম হলো কি করে।ইস্পাতের ভাই তো লোহা হওয়ার কথা ছিলো।ইমাম হলো কি করে।’
ইমাম কোমরে হাত গুজে বললো,
‘তুমি আমার ভাইয়ার নাম নিয়ে এইসব বলছো।ভাইয়াকে আমি তোমার কথা বলে দিবো।তখন বুঝবে ভাইয়া কি করে তোমার সাথে।’
ইসু শুকনো একটা ঢোক গিলে বললো,
‘তুমি তোমার ভাইয়াকে বলো না এইসব।আমি তো শুধু তোমাদের নামের মিল খুঁজছিলাম।ইস্পাতের সাথে তো লোহা যায়।ইমাম তো মিলে না।তোমার নামটা ইমাম না রেখে লোহা রাখলে ভালো হতো।’
ইমাম আর কিছু না বলে দৌড়ে নিচে চলে গেলো।ইসু হতভম্ব হয়ে গিয়েছে।তার শুধু ভয় হচ্ছে,ইস্পাতকে বললে তার কি হাল হবে।এমনেই তো কতোকিছু করে না জানি পরে কি করবে।
—-
আজকে ইস্পাত ইসুকে নিজের পাশে বসিয়েছে।রুমু ইসুর পাশে।ইসু অনেকটা ইতস্তত বোধ করছে।ইস্পাতের পাশে বসতে তার দমবন্ধ হয়ে আসছে।তার উপর ইস্পাতের গা থেকে ভেসে আসা মিষ্টি সুভাস টায় ইসু প্রায় পাগলপারা।মনে হচ্ছে খেয়ে ফেলতে।পরমুহূর্তেই ইসু জিহবায় কামড় বসিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো,
‘ইসস্!উনি যদি একবার শুনে আমি উনাকে খেয়ে ফেলতে চাই তাহলে আমার অবস্থা মনে হয় বারোটা বাজিয়ে দিবে।না জানি আজকে কি করে আমার সাথে।তার উপর ইচ্ছা করে উনার পাশে বসিয়েছে।ইসু!চুপচাপ ভালো মেয়ের মতোন বসে থাক।কোনো তিড়িংবিড়িং করবি না।
ইস্পাত মনোযোগ দিয়ে পড়াচ্ছে আর টেবিলের নিচে নিজের পা দুটো দিয়ে ইসুর পা দুটো চেপে ধরে রেখেছে।যার জন্য,ইসু নাড়াতে গিয়েও নাড়াতে পারছে না।ইসু কটমট চোখে তাকিয়ে আছে ইস্পাতের দিকে।ইস্পাত বুঝতে পারছে,ইসু যে তার দিকে তাকিয়ে আছে।তাই রক্তগরম চোখ নিয়ে তাকালো ইসুর দিকে।এমতাবস্থায় কড়া গলায় বললো,
‘মনোযোগ কোথায় থাকে তোমার?খাতায় নাকি আমার মুখে।আমার মুখে কি ম্যাথ ভেসে উঠেছে।ফাজিল মেয়ে কোথাকার!ম্যাথ না বুঝে আমার দিকে তাকিয়ে আছো।পড়তে না চাইলে পড়বে না।এইসব একদম আমার পছন্দ না।এক্সামে ফেইল করলে তো পরে আমার কথা শুনতে হবে।আমি ঠিকমতো পড়াতে পারি নি।কিন্তু,আসল কথা তো আর কেউ বুঝবে না।ছাত্রী যে ম্যাথ না বুঝে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো সেইটা তো কারোর বোধগম্য হবে না।যত্তসব!! ‘
টুম্পা মনে মনে অনেক খুশি হয়েছে।তার মনের ভিতরে আনন্দধারা বয়ে যাচ্ছে।রুমুর খুব রাগ হচ্ছে ইস্পাতের উপর।আর সেই সাথে ইসুর উপরও।কিন্তু বেশি রাগ হচ্ছে ইস্পাতের উপর।এতোগুলো কথা শুনানোর কোনো মানেই হয় না।তাও আবার এইরকম কথাবার্তা।ইসু কি ফেইল করার ছাত্রী নাকি।ইসু তো সবসময় ভালো রেজাল্ট করে এসেছে।খালুর তো অনেক স্বপ্ন ইসুকে নিয়ে।এইজন্যই তো শহরে পাঠিয়েছে।
ইসুর অপমানে চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।ঠোঁট কামড়ে কান্নাটাকে দমানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু,ব্যর্থ হয়ে টুপ করে চোখের কার্ণিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।সবার অগোচরে পানি টুকু মুছে নিলো।সবার অগোচরে মুছলেও তা ঠিকই রুমুর চোখে পড়েছে।রুমুর খুব খারাপ লাগছে ইসুর জন্য।ইচ্ছা করছে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে রাখতে।
ইস্পাত বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তার মাথা খুব গরম হয়ে আছে।মনে হচ্ছে,বরফ দিলেও শান্তি পাবে না।তার রাগ হওয়ার একমাত্র কারণ হলো ইসুর জেদ।ইসু তো জেদ করেই তার পা টা সরিয়ে নিতে চেয়েছিলো।অন্য কিছু তো করে নি সে।শুধু পা টাই তো নিজের সাথে চেপে ধরে রেখেছিলো।
ইসু পুনরায় পা টা সরিয়ে আনার চেষ্টা চালালো।ইস্পাত রাগে এখন ইসুর পা জোরে চাপ দিয়ে ধরে রেখেছে।ইসু এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলো।মনে হচ্ছে তার পা’য়ের উপর কোনো পাথর পড়ে আছে।ইসুর কান্নার আওয়াজ পেয়ে রুমু আর টুম্পা দু’জনেই চমকে উঠলো।আর,ইস্পাতের রাগ যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে।মনে মনে আওড়াতে লাগলো,আমার ছোঁয়ায় তার এতো অসুবিধা!ঠিক আছে যাবো না আর আমি ওর কাছে।আজকের পর থেকে আমাকে আর তার ত্রিসীমানায় পাবে না।
—-
ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে আছে ইসু আর রুমু।ক্যান্টিনে সব সিনিয়র,জুনিয়র ছেলেদের মুখে শুধু এক কথা নতুন ম্যাডাম এসেছে।তাও আবার দেখতে অনেক সুন্দর।দেখলে মনেই হবে না উনি একজন ভার্সিটির শিক্ষক।ইসুর এইখানে থাকতে একমুহূর্তের জন্যও ভালো লাগছে না।ইচ্ছা করছে পড়াশোনা বাদ দিয়ে নিজের আসল জায়গায় চলে যেতে।আগের মতো আব্বার সাথে থাকতে মন শুধু আকুপাকু করছে।
ইস্পাত আর নতুন ম্যাডাম শিমু ক্যান্টিনে এসে বসেছে।সব স্টুডেন্ট রা তো ইস্পাত আর শিমুকে দেখে বলাবলি করছে দু’জনকে একসাথে অনেক সুন্দর লাগছে।ইসস্!তারা যদি বাস্তব জীবনেও কপোত-কপোতী হতো তাহলে বেশ মানাতো।দু’জনকে দেখতে একদম রাজযোটক লাগছে।
ইসুর কানে কথাগুলো বাজতেই নিমিষেই মুখটা কালো হয়ে গেলো।রুমু কান খাড়া করে এইগুলো শুনছে আর ক্যাবলার মতো সবার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইস্পাতের কানেও গিয়ে ঠেকেছে কথাগুলো।তার বেশ রাগ লাগছে কিন্তু,অদূরে বসা ইসুর মুখ কালো হতে দেখে ইস্পাতও চাচ্ছে স্টুডেন্ট রা যেনো আরো বেশি বেশি এইসব কথা বলে।অন্যদিকে,শিমু অনেক খুশি।এক তো প্রথম দেখায় তার ইস্পাত কে মনে ধরে গিয়েছে,তার উপর আবার স্টুডেন্ট দের এইসব কথা।
ইসু কেন জানি এইসব কথা সহ্য করতে পারছে না।গলা ফাটিয়ে কান্না করতে ইচ্ছা করছে।এখন মনে হচ্ছে,বাতাসের গতির বেগে চারপাশ ছড়িয়ে গিয়েছে,ইস্পাত স্যার আর শিমু ম্যাডামকে একসাথে রাজযোটক লাগছে।ইসু আর না পেরে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।একপ্রকার দৌড়েই ক্যান্টিন থেকে চলে গেলো।রুমু ইসুর যাওয়ার দিকে একমনে তাকিয়ে রইলো।
ইস্পাত ইসুকে এতোক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছিলো।ইসুর দৌড়ে চলে যাওয়া দেখে ইস্পাত অনেকটাই খুশি হয়।মনে মনে বিরবির করতে লাগলো,
নিজের কাছে আসলেও তেজ দেখাবে,আর অন্য কারোর সাথে দেখলে দৌড়ে চলে যাবে।বুঝুক একটু কেমন লাগে।বেয়াদব মেয়ে একটা।ও কি বুঝতে পারে না,ওকে দেখলেই শুধু আমার আদর করতে মন চায়।আর তুইও ইস্পাত!হুট করেই ওর প্রতি দূর্বল হয়ে গেলি।ভুলে গেলি নাকি ট্রেনে তোর সাথে কি করেছিলো ও।আর,তুই কিনা সেই মেয়ের জন্য দিনদিন পাগল হয়ে যাচ্ছিস।তাও আবার অল্প দিনের দেখায়!!
ভার্সিটি থেকে বেরিয়েও ইসু পড়েছে বিপাকে।সামনে ইস্পাত আর শিমুকে একসাথে কথা বলতে দেখে রাগে শরীর শিরশির করছে।ইচ্ছে করছে শিমুর সবগুলো কোঁকড়া চুল ছিঁড়ে নুডলস বানিয়ে দোকানে বিক্রি করে দিতে।আর ইস্পাত কে যদি সামনে একবার পায় তাহলে ইসু কি যে করবে তা সে নিজেও জানে না।দাঁত কটমট করে রিকশার দিকে এগিয়ে গেলো।রিকশায় উঠে চোখ গরম করে ইস্পাত আর শিমুর দিকে তাকিয়ে রইলো।ইস্পাত ইসুকে দেখিয়ে দেখিয়ে নিজের গাড়িতে শিমুকে নিয়ে বসে পড়লো।ইসুর রিকশা টাকে ফেলে দিয়ে সাঁই সাঁই করে চলে গেলো।ইসু রিকশায় বসে থাকা অবস্থায় কেঁদে উঠলো।ইসুর কান্নার আওয়াজ পেয়ে রিকশাওয়ালা রিকশা থামিয়ে ইসুর দিকে ফিরে বললো,
‘আফা!আপনে কান্দেন কেন?কিছু হইছে নাকি?’
ইসু নাক টেনে টেনে বললো,
‘অনেক কিছু হয়েছে ভাই।কিন্তু কেন কান্না করছি তা কিছুতেই বুঝতে পারছি না।সব কিছুই আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে এমনকি এই কান্না করার কারণ টাও আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।শুধু এইটা জানি আমার খুব কান্না করতে ইচ্ছা করছে।’
‘এইডা কেমন কথা আফা!আপনে কেন কান্দাছেন এইডার কারণেই জানেন না।আমারও কেন জানি সব কিছু মাথার উপর দিয়া যাইতাছে।’
‘ভাই!আমরা হলাম এক গোয়ালের গরু!এইজন্য আপনারও সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।আপনি হুদাই চিন্তা না করে রিকশা টান দেন।আমি একটু কান্না করি।’
কথাগুলো বলেই ইসু মুখে ওড়না গুজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।অন্যদিকে,রিকশাওয়ালাও ইসুর কান্না দেখে কান্না করে দিলো।গামছা দিয়ে চোখ মুছছে আর বলছে,আমরা তো এক গোয়ালের গরু এইজন্য আমিও কান্না করতাছি।
—-
বাসায় গিয়েও ইসু কান্না করেছে।তার কান্না করার মূল কাহিনি সে নিজেও জানে না।সে শুধু ইস্পাতকে কারোর সাথে সহ্য করতে পারছে না।ইসু তো খুব করে চেয়েছিলো ইস্পাত যেনো তার থেকে দূরে দূরে থাকে কিন্তু এখন যে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে তা ইসু ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি।মন টাকে একটু ফ্রেশ করা দরকার।তাই ইসু ছাঁদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো।মাগরিবের নামাজ পরেই রুম থেকে বেরিয়ে লিফটের সামনে বাটন চেপে দাঁড়িয়ে রইলো।প্রায় কিছুক্ষণ পরেই লিফট এসে থামলো।লিফটের দরজা খুলতেই ইসু নাক,মুখ ফুলিয়ে ফেললো।ইস্পাত লিফটের দেয়ালে হেলান দিয়ে ট্রাউজারের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে।ইসু ধপাধপ্ পা’য়ে লিফটে ঢুকে পড়লো।লিফট আবারও চলতে শুরু করেছে।ইস্পাত ইসুকে দেখেও না দেখান ভান করে দাঁড়িয়ে আছে।ইসু সেইটা খেয়াল করছে আর রাগে ফুঁসছে।
ইস্পাত ইচ্ছা করে ফোনটা বের করে শিমুকে ফোন করলো।অপাশে ফোন রিসিভ হতেই ইস্পাত গলা কেশে বললো,
‘শিমু কি করছো?আজকে তোমার সাথে সময় কাটাতে পেরে খুব খুশি হয়েছি।’
ফোনের অপাশে থাকা শিমুর কাছে মনে হচ্ছে মেঘ না চাইতেই জল।লজ্জামিশ্রিত গলা টেনে বললো,
‘তেমন তো ঘুরতে পারি নি আজকে।তুমিই তো শুধু তাড়া দিয়েছিলে চলে যাওয়ার জন্য।না হলে,আরো সুন্দর সময় কাটাতে পারতাম আমরা।’
‘ঠিকাছে!নেক্সট টাইম থেকে আমরা বেশি সময় নিয়ে ঘুরবো।এমনকি আজকের যেই সময় গুলো মিস হয়েছে সেগুলোও যোগ করে নিবো।
ইসু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে,হাতদুটো মুঠো করে রেখেছে।আর,দোয়া করছে তাড়াতাড়ি যেনো লিফট থেকে বের হতে পারে সে।ইস্পাত তো মনের সুখে ইসুকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথা বলে যাচ্ছে।ইসু আর সহ্য করতে না পেরে তেড়ে গিয়ে ইস্পাতের টি-শার্টের কলার চেপে ধরলো।এমন হওয়ায় ইস্পাত ফোন কেটে দিলো।ইসু দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘নির্লজ্জ পুরুষ!কয়জনকে লাগে আপনার হ্যাঁ।আমার সাথে ঢলাঢলি করেও আপনার শান্তি হয়নি।এখন ছুটেছেন আরেকজনের কাছে।আবার ঘুরাঘুরিও হচ্ছে।বেশরম,খারাপ,বজ্জাত,পুরুষ একটা।’
ইস্পাত নিষ্পলক তাকিয়ে আছে ইসুর দিকে।তার খুব ভালো লাগছে ইসুর এরূপ রূপ দেখে।কিন্তু,ইস্পাত সেইটা বাহিরে প্রকাশ না করে,রাগ দেখিয়ে নিজের টি-শার্টের কলার থেকে ইসুর হাত টা জোরে ছাড়িয়ে দিয়ে বললো,
‘নিজের লিমিটের মধ্যে থাকো।একদম আমার কাছে আসবে না।তোমাকে দেখো আর শিমুকে দেখো।দু’জনের মধ্যে আকাশপাতাল তফাৎ।’
ইসু মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে বললো,
‘আমার সাথে যা করেছিলেন তা বুঝি আপনি লিমিটেশন রেখে করেছিলেন।এখন আমি আপনার কাছে অন্যরকম হয়ে গিয়েছি।আপনি খুব খারাপ স্যার,খুব খারাপ।’
এরিমধ্যে,লিফট থেমে গিয়েছে।ইসু লিফট থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে পড়লো।আর,ইস্পাত হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।ইসুর কান্না দেখে তার খুব কষ্ট হচ্ছে।একটু একটু করে ইসুর উপর দূর্বল হয়ে যাচ্ছে।ইসুর এক একটা কান্ডকারখানা যেনো ইস্পাতের মনে ইসুর অবস্থানের জায়গা টা আরো গভীর করে দিয়েছে।ইস্পাত ভেবে পায় না,মানুষের কান্ডকারখানা দিয়েও কি মনের গহীনে জায়গা দখল করা যায় কিনা!!তবে,ইসুকে দেখে সে সম্পূর্ণ বুঝে গিয়েছে মানুষের কান্ডকারখানা দিয়েও মনের গহীনে জায়গা দখল করা যায়।ইস্পাতের এখন মনে হচ্ছে ম্যাথের ক্লাস না নিয়ে প্রেমের ক্লাস নিলে ভালো হতো।
চলবে..