#ধূসর_শ্রাবণ💚 #লেখিকা:#তানজিল_মীম💚 #পর্ব-০৪

#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-০৪

বাসর ঘরে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে বর্ষা। মাথায় তাঁর হাজার প্রশ্ন, শুভ্র কেন ফিরে এলো। কি এমন ঘটলো তাঁর সাথে যার কারনে শুভ্র ফিরে আসলো। আর ফোনটাও বা কি করে ভাঙলো শুভ্রের। বর্ষা নিশ্চিত শুভ্রের কোনো বন্ধুরই এক্সিডেন্ট হয় নি, এটা নিছকই বানানো কথা। তাহলে কি ঘটলো শুভ্রের সাথে যার জন্য শুভ্র লন্ডন না গিয়ে ফিরে এসে তাঁকে বিয়ে করলো। মাথায় যেন এক একটা প্রশ্নের পাহাড় তৈরি হচ্ছে বর্ষার। এমন সময় দরজায় খট করে আওয়াজ আসতেই চমকে উঠলো বর্ষা। বর্ষা বুঝতে পেরেছে শুভ্র এসেছে। তবে আপাতত মাথা উচু করে শুভ্রকে দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তাঁর তাই চুপচাপ মাথা নিচু করেই বসে রইলো বর্ষা।’

অন্যদিকে,

দরজা আঁটকে চুপচাপ এগিয়ে আসতে লাগলো শুভ্র বর্ষার দিকে। প্রথমে বর্ষার দিকে যাওয়ার কথা ভাবলেও পরক্ষণেই মত পাল্টে আলমারির দিকে গেল শুভ্র। তারপর আলমারি খুলে টিশার্ট আর প্যান্ট বের করে চলে যায় সে ওয়াশরুমের দিকে। ড্রেস চেইঞ্জ করতে হবে তাঁকে এখনো বিয়ের সাজে সজ্জিত সে। শুভ্রের তাল বাহানা সবই আড়চোখে দেখেছে বর্ষা। তবে সে বুঝতে পারছে না শুভ্রের কান্ডকারখানা। তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো বর্ষা, সে বুঝলো না তাঁদের এই ধোঁয়াশা ঘেরা সম্পর্কের ইতি কেমন হবে?’

কিছুক্ষনের মধ্যেই শুভ্র ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বেরিয়ে আসলো। তারপর নিশ্চুপে এগিয়ে যেতে লাগলো সে বর্ষার কাছে। বর্ষা তখনও একহাত ঘোমটা টেনে চুপচাপ বসে আছে। শুভ্র বর্ষার পাশে বসে সংক্ষিপ্ত ওয়াডে অপরাধী স্বরে বললো,

‘ সরি।’

সঙ্গে সঙ্গে বর্ষা চোখ তুলে ঘোমটা খুলে তাকালো বর্ষা শুভ্রের দিকে। তবে কিছু বললো না হয়তো শুভ্র যা বললো সব তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেছে। বিস্ময় ভরা চোখে বর্ষাকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারো বললো শুভ্র,

‘ আমি জানি বর্ষা আমি যা করেছি তাতে হয়তো এই সরি শব্দটা খুবই ঠুংকো। আমার জন্য তোমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। অনেক মানুষ বাজে মন্তব্যের স্বীকার হয়েছো। সবকিছুর জন্য আমি খুব দুঃখিত বর্ষা।’

উওরে এবারও নিশ্চুপ হয়ে রইলো বর্ষা কিন্তু কিছু বললো না। বর্ষাকে চুপ থাকতে দেখে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো শুভ্র তারপর বললো,

‘ অনেক রাত হয়ে গেছে এখনো এত ভাড়ি সাজে বসে আছো কেন যাও ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।’

বলে পাশ ফিরে চুপচাপ বসে রইলো শুভ্র। এভাবে ২ মিনিটের নীরবতা কাটিয়ে হঠাৎই বলে উঠল বর্ষা,

‘ আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে, শুভ্র?’

এতক্ষণ পর বর্ষার মুখের ভয়েস শুনে বিস্মিত ভরা চোখে শুভ্র তাকালো শুধু বর্ষার দিকে। বর্ষা তখন চুপচাপ বসে ছিল মাথা নিচু করে শুভ্রের দিকে না তাকিয়েই কথাটা বললো সে শুভ্রকে। বর্ষার কাজে শুভ্র কিছুটা হতাশা নিয়েই বললো,

‘ তুমি কি আমার দিকে না তাকিয়েই কথা বলবে বর্ষা?’

এবার বর্ষা তাকালো শুভ্রের মুখের দিকে। তারপর নিশ্চুপেই বললো,

‘ আপনি তো চলে গিয়েছিলেন তাহলে ফিরে কেন এলেন শুভ্র?’

বর্ষার কথা শুনে শুভ্র নীরবেই বলে উঠল,

‘ অনেকসময় আমরা যা চাই তাই হবে এমনটা নয়। চাওয়া না পাওয়ার মধ্যে কিছু জিনিস আছে বর্তমানে তুমি আমার জন্য সেটাই। আর আমি জানি আমরা দুজনেই পরিস্থিতির স্বীকার দাদুর মন রাখতেই আমরা এই বিয়েটা করেছি।’

‘ তাঁর মানে আপনি দাদুর জন্যই ফিরে এসেছেন শুভ্র?’

উওরে দীর্ঘ শ্বাস শ্বাস ফেলে বললো শুভ্র,

‘ তেমনটাই তবে,

‘ তবে কি শুভ্র?’

শুভ্র আরো কিছু বলবে এমন সময় শুভ্রের ফোনটা বেজে উঠল। শুভ্র একবার ফোন তো একবার বর্ষার দিকে তাকিয়ে বসা উঠে দাঁড়ালো তারপর বললো,

‘ বাকি কথা পরে হবে বর্ষা তুমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।’

এতটুকু বলে ফোনটা তুলে চলে যায় শুভ্র বেলকনিতে। আর বর্ষা নিরালায় তাকিয়ে থাকে শুভ্রের যাওয়ার পানে। এমন এক মুহূর্তেও কেউ শুভ্রকে ফোন করবে এটা সত্যি খুব বিস্মিত বিষয় হয়ে দাঁড়ালো বর্ষার জন্য।’

প্রায় আধ ঘন্টা পর, শুভ্র কথা বলা শেষ করে বেলকনি থেকে আসলো ভিতরে। ততক্ষণে বর্ষা ড্রেস পাল্টে সুন্দর একটা শাড়ি পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে নীরবে। শুভ্র একপলক তাকালো বর্ষার মুখের দিকে তারপর বললো,

‘ জানো তো আমরা অনেক সময় যা চাই তা যেমন পাই না তেমনি অনেক সময় চাওয়ার জিনিসের চেয়েও অতি মূল্যবান কিছু পাই।’

এতটুকু বলে তপ্ত নিশ্বাস ফেলে রুমের লাইট অফ করে সোফায় শুয়ে পড়লো শুভ্র। সে জানে না তাঁর আগামী দিনগুলো কেমন হবে? আধও কি সে মানিয়ে নিতে পারবে বর্ষাকে! সত্যি তো প্রত্যেকবার মেয়েদেরই কেন মানিয়ে নিবে হবে? ছেলেদের কেন নয়!’ মাঝে মাঝে ছেলেদেরও মানিয়ে নেওয়া উচিত।’

_____

গভীর রাত! ঘড়ির কাঁটায় প্রায় দুটো ছাড়িয়ে গেছে। এমন সময় আচমকা চোখ খুলে ফেললো বর্ষা। মাথার ভিতর অগোছালো কথারা ঘুরপাক খাচ্ছে খুব। শুভ্রের কান্ডকারখানা যেন বুঝা বড় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর জন্য। কি বলছে না বলছে সবই যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে বর্ষার। দূর আকাশ বেয়ে মৃদু বাতাস আসছে রুমে। তবে আপাতত প্রকৃতির দিকে খুব বেশি নজর দিলো না বর্ষা নিমিষেই চোখ দুটো বুঝিয়ে নিল সে।’

পরেরদিন সকালে সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলোতে ঘুম ভাঙলো বর্ষার। রুমে তখন শুভ্র ছিল না। সোফায় শুভ্রকে না দেখে কিছুটা চিন্তিত মুখ নিয়েই শোয়া থেকে উঠে বসলো বর্ষা। পরক্ষনেই ওয়াশরুম থেকে শব্দ আসায় বর্ষা বুঝলো শুভ্র হয়তো ওয়াশরুমে গেছে। কিছুক্ষন এদিক সেদিক তাকিয়ে তক্ষৎনাত বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো বর্ষা। এমন সময় দরজায় নক করলো কেউ। বর্ষাও নিজেকে হাল্কা গুছিয়ে নিয়ে এগিয়ে গেল দরজার কাছে। দরজা খুলতেই শুভ্রের ছোট বোন শ্রভ্রাকে দেখে বললো সে,

‘ গুড মর্নিং!’

শুভ্রা মুচকি হেঁসে বললো,

‘ গুড কি বেড পরে বলবো ভাবি। আগে বলো তুমি এখনো তৈরি হও নি কেন? নিচে সবাই তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।’

‘ এই তো এক্ষুনি আসছি শুভ্রা।’

‘ ঠিক আছে ভাবি তাড়াতাড়ি এসো ভাইয়া কই?’

‘ তোমার ভাইয়া ওয়াশরুমে গেছে।’

‘ ঠিক আছে ভাইয়াকে নিয়ে তাড়াতাড়ি এসো ভাবি।’

উওরে কিছু বলার আগেই শুভ্রা চলে যায়। বর্ষাও বেশি কিছু না বলে দরজা আঁটকে দেয় আবার।’

এমন সময় পিছন থেকে শুভ্র বলে উঠল,

‘ কে এসেছিল?’

আচমকাই শুভ্রের কন্ঠ কানে আসতেই হকচকিয়ে উঠল বর্ষা পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো সে,

‘ শুভ্রা! আপনায় আর আমায় তাড়াতাড়ি নিচে যেতে বলেছে?’

প্রতি উওরে শুভ্র শুধু একটা ক্ষুদ্র শব্দই ব্যবহার করে বলে,

‘ ওহ।’

শুভ্রের কথার প্রতি উওর হিসেবে বর্ষাও নিরিবিলি শব্দ বলে,

‘ হুম।’

_____

ভার্সিটির লাইব্রেরির একদম শেষ বেঞ্চের কর্নার সিটে চুপচাপ বসে আছে হিয়া। চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ তাঁর। যদিও বইয়ের পাতায় মুখ লুকিয়ে আছে সে। তারপরও বিরক্ত লাগছে কেমন যেন সবকিছুই ধূসর মিশ্রিত ধোঁয়াশা লাগছে আশপাশ। হিয়া বই ছেড়ে ডাইরিতে হাত দিলো। তারপর নিজের অজান্তেই কিছু অগোছালো শব্দকে গুছিয়ে লিখতে শুরু করলো সে। এমন সময় হাতে গোণা পাঁচ ছয়টা ছেলের সাথে কালো শার্ট, কালো জিন্স, চোখে কালো চশমা, হাতে কালো ওয়াচ পড়ে পুরো ফিল্মি স্টাইলে হিয়ার দিকে হেঁটে আসছিল নির্মল। চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ তাঁর। নির্মল ঢুকতেই লাইব্রেরি জুড়ে থাকা ছেলে মেয়েগুলো পুরো হা হয়ে তাকিয়ে রইলো তাঁর দিকে। কিন্তু তাদের দৃষ্টি বেশিক্ষণ আর রাখলো না নির্মলের দিকে। কারন নির্মল একবার বলেছিল তাঁকে দেখলে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যাবে না কারোই। নির্মলের কথা মাথায় রেখেই পরক্ষণেই সবাই চোখ নামিয়ে যে যার কাজে মনোযোগ দিলো।’

এদিকে নির্মল হাঁটতে হাঁটতে একদম এসে বললো হিয়ার মুখোমুখি চেয়ারে। হিয়ার তখনও দৃষ্টি ছিল ডাইরির পাতায়। নির্মল হিয়ার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠ নিয়ে বললো,

‘ কাল এয়ারপোর্টে তুমি কার সাথে কথা বলেছিলে, হিয়া?’

নির্মলের কথাটা কান পর্যন্ত আসলেও সেটার উওর দেওয়ার যেন কোনো প্রয়োজন মনে করলো না হিয়া। সে তার মতো চুপচাপ ডাইরির পাতায় কিছু লিখতে ব্যস্ত ছিল। হিয়ার এমন চুপচাপ জিনিসপত্র একদমই সহ্য হয় না নির্মলের। তারপরও বরাবরই এই মেয়েটা অসহ্যকর যন্ত্রণা দেয় তাঁকে। নির্মল নিজের রাগটাকে যথাসম্ভব কন্ট্রোল করে আবারো বলে উঠল,

‘ কি হলো তুমি কথা বলছো না কেন? কার সাথে কথা বলেছিলে তুমি।’

এবারও নিশ্চুপ হিয়া। এবার যেন নিজের সহ্যের সীমা অতিক্রম করছে হিয়া। নির্মল প্রচন্ড রাগ নিয়ে বললো,

‘ তুমি কি ভেবেছো তুমি কিছু না বললে আমি জানতে পারবো না হিয়া,আই প্রমিজ জাস্ট দু’দিনের মধ্যে ছেলেটাকে খুঁজে বের করে ওর রক্তাক্ত দেহটাকে তোমার সামনে হাজির করবো আমি।’

এবার না চাইলেও যেন চুপ থাকতে পারলো না হিয়া৷ ডাইরির পাতা থেকে কলম আর চোখ দুটো টাকেই সরিয়ে বললো সে,

‘ আপনি নিজেকে কি ভাবুন বলুন তো? প্রথমত এমনটা নয় আমি যে ছেলের সাথেই কথা বলবো সে ছেলেই আমার প্রেমিক হবে। আর দ্বিতীয়ত আপনি কি মনে করেন কোনো ছেলেকে মেরে তার নিথর দেহ আমার সামনে আসলেই আমি আপনাকে ভালোবাসি বলে ফেলবো। দেখুন এইসব চিন্তাধারা মাথা থেকে বের করুন।’

এতটুকু বলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো হিয়া। তারপর নিজের ব্যাগ ডাইরি আর কলমটাকে হাতে নিয়ে বললো,

‘ কাল যে ছেলের সাথে আমি কথা বলেছি সে আমার কেউ ছিল না। আর তার থেকেও বড় কথা সে বিবাহিত। আশা করি আপনার জন্য ওই ছেলের বায়োডাটার ইনফরমেশন হিসেবে এর চেয়ে বেশি কিছু জানার প্রয়োজন পড়বে না।’

এতটুকু বলে তক্ষৎনাত জায়গা ত্যাগ করলো হিয়া৷ আর নির্মলও নিশ্চুপে শুধু তাকিয়ে রইলো হিয়ার যাওয়ার পানে!’

#চলবে……

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। আমি জানি গাইস এইবারের গল্পটা খুবই অগোছালো লাগছে তোমাদের কাছে। তবে তোমরা চিন্তা করো না ধীরে ধীরে আমি গুছিয়ে দিবো সবটা। আর একটা কথা এই গল্পের জুটি দুটো৷ আর বাকিটা গল্পের মাধ্যমেই বুঝিয়ে দিবো। আজকের পার্টটা হয়তো খুব ছোট হয়েছে আসলে মন ভালো নেই।কেমন যেন সবকিছু এলোমেলো লাগছে।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here