#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-২৯
________________
জোৎসা ভরা রাত। আকাশটা জ্বল জ্বল করছে তাঁরাদের নিয়ে। চাঁদমামাও আছে তাদেরই ভিড়ে। বাড়ির সামনের রাস্তার ধারে জ্বল জ্বল করছে রাতের আধারে দাঁড়িয়ে থাকা নির্ঘুম আলোকিত ল্যামপোস্ট। গেটের সামনে থাকা গাছের পাতারাও নড়েচড়ে উঠছে কতক্ষণ পর পর, শীতল হাওয়া বইছে চারিদিকে। এসবে মাঝেই বেলকনিতে পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে শুভ্র বর্ষা। কারো মুখেই তেমন কথা নেই। হঠাৎই নিজেদের নিশ্চুপতাদের সাইডে রেখে বলে উঠল বর্ষা,
‘ এবার বলুন তবে সবটা?’
বর্ষার কথা শুনে বেশ ভাবনাহীন ভাবেই বললো শুভ্র,
‘ হুম বলবো তো কিভাবে শুধু করবো সেটাই বুঝতে পারছি না। ঔপন্যাসিকা থেকে শুরু করবো নাকি বিয়ে।’
‘ বিয়ের দিন দিয়েই শুরু করুন।’
‘ ঠিক আছে।’
বলেই বলতে শুরু করলো শুভ্র।
ফ্লাসবেক,,
বিয়ের দিন। বর বেসেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে ছিল শুভ্র। মাথায় তখন একটা জিনিসই ঘুরছিল তাঁর এখান থেকে পালাতে হবে, আর বিয়েটা করা যাবে না। কিছুতেই সে বর্ষাকে বিয়ে করবে না। যতদ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি জমাবে সে। সাথে আগামী পাঁচ দশ বছরে দেশেও আসবে না। এইরকম নানা কিছু ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে চলছিল শুভ্র। এমন সময় আচমকাই তাঁর গাড়ির সামনে এসে পড়লো একটা মেয়ে পরনে তাঁর মিষ্টি কালার থ্রি-পিস, বাঁধা চুল, সাথে চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। মেয়েটা সামনে আসতেই জোরে ব্রেক কষলো শুভ্র। কিন্তু তারপরও মেয়েটি ঘাবড়ে গিয়ে পড়ে যায় নিচে। দোষটা শুভ্রেরই ছিল, আসলে মাথার ভিতর হাজারো ভাবনা ঘুর ঘুর করতে থাকায় একটু বেখালি হয়ে পড়েছিল সে। শুভ্র তক্ষৎনাত গাড়ি থেকে বেরিয়ে এগিয়ে যায় মেয়েটির কাছে। মেয়েটি তখন বসে ছিল রাস্তার মাঝে শুভ্রের গাড়ির সামনে। শুভ্র দৌড়ে গিয়ে উত্তেজিত কন্ঠ নিয়ে বললো মেয়েটিকে,
‘ আপনি ঠিক আছেন তো আসলে আমি বুঝতে পারি নি আপনি সামনে চলে আসবেন।’
শুভ্রের উত্তেজিত ভাব দেখে বলে উঠল হিয়া,
‘ ইট’স ওঁকে রিলাক্স এত উত্তেজিত হওয়ার মতো কিছু হয় নি।’
মেয়েটির মুখ দেখে সাথে তাঁর কথা শুনে থেমে যায় শুভ্র।’
”
রাস্তার ধারে এয়ারপোর্টের সামনেই একটা গাছের নিচে সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চে বসে আছে হিয়া। পড়ে যাওয়ার কারনে পায়ে সামান্য ব্যাথা পেয়েছে সে। মুলত তাঁর কাজিনকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ্ট করতেই এসেছিল সে। কিন্তু এয়ারপোর্টের সামনে আসতেই যে এমন এক দূর্ঘটনা ঘটে যাবে বুঝতে পারে নি হিয়া। হিয়ার ভাবনার মাঝেই তার দিকে এগিয়ে এসে পানির বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বললো শুভ্র,
‘ এটা খেয়ে নিন?”
হিয়াও শুনলো পানির বোতলটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানিটা শেষ করলো সে। তারপর বললো,
‘ থ্যাংক ইউ।’
শুভ্র হাল্কা হাসলো তারপর বললো,
‘ আমি সত্যি দুঃখিত আমার জন্য আপনার,
‘ ইট’স ওঁকে তা বর বেসে কোথায় যাচ্ছেন বউ আনতে বুঝি?’
প্রতি উওরে নিজের জামাকাপড়ের দিকে তাকিয়ে বললো শুভ্র,
‘ তেমনটা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হবে না।’
শুভ্রের কথা শুনে হিয়া অবাক হয়ে বললো,
‘ হবে না মানে?’
‘ মানে এটাই আমি বিয়ের আসর ছেড়ে চলে এসেছি মাত্র।’
সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় বড় হয়ে যায় হিয়ার। সে যে প্লটের গল্প লেখে সেই প্লটেরই একজন চরিত্রকে চোখের সামনে দেখবে ভাবতেই পারি নি হিয়া। তবে হিয়ার গল্পের চরিত্রটা ছিল উল্টো মানে বিয়ের আসর ছেড়ে মেয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু এখানে তো ছেলে পালিয়ে এসেছে। হিয়া অবাক হয়ে বললো,
‘ ইন্টারেস্টিং তো।’
হুট করেই হিয়ার মুখে ইন্টারেস্টিং ওয়ার্ডটা শুনে বেশ অবাক হয়েই বললো শুভ্র,
‘ মানে।’
উওরে উত্তেজিত কন্ঠ নিয়ে বললো হিয়া,
‘ মানে আই কান্ট বিলিস দিস যে আমারই গল্পের প্লটের মতো কোনো চরিত্রের লোকের সাথে আমার দেখা হবে।’
শুভ্র অবাক হলো খুব হিয়ার থেকে খানিকটা দূরত্ব নিয়ে বসলো সে। তারপর আবারও প্রশ্ন করলো,
‘ আপনার কথার মানেটা বুঝলাম না।’
এবার হিয়া বেশ আগ্রহ নিয়ে শুভ্রের দিকে নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ হাই আমি হিয়া রহমান।’
হিয়ার কাজ আর কথা শুনে শুভ্রও হাত মিলালো হিয়ার সাথে। তারপর বললো,
‘ হ্যালো।’
শুভ্রের কথা শুনেই হিয়াও তক্ষৎনাত শুভ্রের সাথে হাত মিলিয়ে গট গট করে বলতে লাগলো,
‘ আমি একজন স্টোরি রাইটার। আমার নিজস্ব একটা ফেসবুক পেইজ আছে। যেখানে আমি গল্প লিখি প্লাস উপন্যাসও লিখি। ছোট করে বললে ঔপন্যাসিকা বলতে পারেন। দুটো পান্ডুলিপি বের করারও ইচ্ছে আছে খুব। সে যাইহোক আমার নেক্সট গল্পের থিমটা একদম আপনার চরিত্রের সাজাতে চেয়েছিলাম। যে বিয়ের আসর ছেড়ে বউ পাালিয়ে যাবে। তবে কেউ যে সত্যি সত্যি বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে আসবে এটা কল্পনার বাহিরে ছিল আমার। আচ্ছা আপনি যে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন এটা এতক্ষণে আপনার বাড়ির সবাই জেনে গেছে তাই না।’
হিয়ার কথা শুনে শুভ্রও কিছুক্ষন ভেবে বললো,
‘ হবে হয়তো।’
‘ নিশ্চয়ই বাড়ি জুড়ে হুল্লোড় নেমেছে বর পালিয়ে গেছে, বর পালিয়ে গেছে।’
এবারও মাথা নাড়িয়ে বললো শুভ্র,
‘ হুম।’
‘ আশেপাশের লোকজন নিশ্চয়ই এতক্ষণে আপনার পরিবার, সাথে আপনার হবু বউকে নিয়ে সমালোচনা জুড়ে দিয়েছে। নানা লোকে নানা কিছু বলছে, নিন্দা করছে,অপয়া বলছে আরও কত কি? তাই না।’
এবার থেমে যায় শুভ্র। মাথা নিচু করে ফেলে তক্ষৎনাত কারণ এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত জানা থাকলেও বলার সাহস নেই শুভ্রের। শুভ্রকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল হিয়া,
‘ কি হলো চুপ করে আছেন কেন?’
প্রতি উওরে হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো শুভ্র,
‘ আপনি যা বলতে চান তা ডিরেকলি বলুন?’
শুভ্রের কথা শুনে স্বাভাবিক গলায় বললো হিয়া,
‘ এটাই বলতে চাই জীবনটা হাতে লেখা কোনো গল্প নয়। গল্পে আমরা যে জিনিসগুলো খুব ইজিলি পেয়ে যাই। বাস্তবে ততটা ইজিলি পাওয়া খুব কঠিন। একটা মেয়ের জীবনের বিয়ে জিনিসটা একটা স্বপ্নের মতো। আপনি যাকে বিয়ে করবেন না বলে চলে এসেছেন সে মেয়েটা হয়তো আপনাকে নিয়ে আকাশ পাতাল স্বপ্ন নিয়ে বসে ছিল। আপনি কেন চলে এসেছেন এটা আমি জানি না। কিন্তু আমি বলবো আপনি ভুল করছেন?’
হিয়ার কথা শুনে শুভ্র বললো,
‘ আমি জানি আমি ভুল করছি। কিন্তু বিয়েটা হয়ে গেলে যে আরো বড় ভুল হবে।’
‘ এটা আপনার আগে ভাবা উচিত ছিল তো এক গা লোকজন আর বিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসাটা কি বুদ্ধিমানের কাজ হলো।’
‘ আমি বাধ্য ছিলাম।’
শুভ্রের কথায় হাসলো হিয়া। বললো,
‘ আমরা তো বাধ্যেরই কাঙাল। আচ্ছা কোন কাজটা আমরা বাধ্য বিহীন করি বলুন তো? এই যে আমি এখানে বসে আছি এটাও কিন্তু একপ্রকার বাধ্য হয়েই কারণ আমি পায়ে চোট পেয়েছি।’
‘ তাহলে আপনি বলতে চাইছেন আমার বাধ্য হয়েই বিয়েটা করে ফেলা উচিত।’
উওরে মাথা নাড়ায় হিয়া। বলে,
‘ কমছে কাম আপনার পরিবার আর আপনার হবু বউয়ের কথা ভেবে তো করে ফেলা উচিত।’
‘ আপনি বুঝতে পারছেন না। আমার যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তাঁর সাথে আমার যায় না। তাঁকে আমার পছন্দ না। ওর ভীতু ভীতু স্বভাব, একটুতেই ইমোশনাল হয়ে যাওয়া, বোকা বোকা কাজ কর্ম ইত্যাদি ইত্যাদি কিছুই পছন্দ নয় আমার।’
এতক্ষণে যেন হিয়ার কাছে পরিষ্কার হলো শুভ্রের বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে আসার মূল কারণ। হিয়া হাসলো, উচ্চ স্বরে হাসলো। বললো,
‘ আপনি সামান্য এই বিষয়ের জন্য বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন।’
‘ আপনার কাছে এটা সামান্য মনে হচ্ছে।’
‘ তা নয়তো কি?’ শুনন আমরা যাকে ভালোবাসি তাঁর এলেমেলো চুল, অগোছালো স্বভাব, ফ্যাকাসে চেহারাতেও মায়া খুঁজে পাই। আর যাকে ভালোবাসি না তাঁর সাজানো চুল, গোছালো স্বভাব, মায়াবী চোখের মাঝেও বিরক্তিতা খুঁজে পাই। সবই হলো ভালোবাসা বুঝলেন, সবই ভালোবাসা। তা আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?’
হিয়ার কথা অনেক্ক্ষণ ভাবলো শুভ্র। কথাটা মিথ্যে নয়। সত্যি তো আজ যদি সে বর্ষাকে ভালোবাসতো তাহলে হয়তো ওঁকে নিয়ে এত অভিযোগ থাকতো না। জীবনে ভালোবাসাটাই আসল। শুভ্রকে চুপচাপ থাকতে দেখে আবারো প্রশ্ন করে বসলো হিয়া,
‘ কি হলো কথা বলছেন না কেন গার্লফ্রেন্ড আছে আপনার?’
প্রতি উওরে হিয়ার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো শুভ্র,
‘ না।’
‘ আহ বাহ্ তাহলে তো কোনো সমস্যাই দেখছি না। যাইহোক আপনার লাইফ, আপনার বিয়ে, আপনার হবু বউ, আপনার পরিবার, আমার কি?’ তবে একটা জিনিস মাথায় রাখবেন মাঝে মাঝে বাধ্য হওয়া জিনিসগুলোই জীবনের জন্য সঠিক হয়। আমার মনে হয় আপনার জন্য আপনার হবু বউই সঠিক। বাকিটা আপনার ইচ্ছে,
বলেই আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো হিয়া। এখন তাঁকে যেতে হবে। হিয়াকে দাঁড়াতে দেখে বললো শুভ্র,
‘ আমার হবু বউই যে আমার জন্য সঠিক এটা আপনি বুঝলেন কি করে?’
এমন সময় আকাশ পথ বেয়ে শুভ্রের লন্ডন যাওয়ার ফ্লাইট উড়ে গেল। শুভ্র অবাক হয়ে আকাশ পথে তাকিয়ে দেখে উত্তেজিত হয়ে বললো,
‘ আমার লন্ডন যাওয়ার ফ্লাইট, আপনার জন্য আমার ফ্লাইট মিস হলো।’
এবার আরো উচ্চ স্বরে হেঁসে ফেললো হিয়া। হিয়াকে হাসতে দেখে কিছুটা রাগী কন্ঠ নিয়েই বললো শুভ্র,
‘ আপনি কথায় কথায় এত হাসেন কেন বলুন তো?’
শুভ্রের কথা শুনে হিয়া তাঁর হাসি থামিয়ে বললো,
‘ হাসাহাসির প্রশ্নের জবাবটা নয় হয় পড়ে দেই। আগে বলি আপনার জন্য আপনার হবু বউই সঠিক কেন?’
হিয়ার কথা শুনে শুভ্র অবাক হয়ে বললো,
‘ কেন?’
‘ সিম্পল, এই দেখুন আপনি তো বিয়ে ছেড়ে কোথাও যাওয়ার আইমিন লন্ডন যাওয়ার পণ করছিলেন মাঝপথে আমার সাথে দেখা হলো, আমি পায়ে চোট পেলাম। আমার জন্য আপনার দেরি হলো, আমাদের মধ্যে এত কথা হলো, আপনার ব্যক্তিগত কথাগুলো আমায় বললেন। আপনার ফ্লাইট মিস হলো। এগুলো কি একটাও হওয়ার কথা ছিল নাকি।’
হিয়ার কথা শুনে সত্যি সত্যি থমকে গেল শুভ্র। সত্যি তো, এগুলোর একটাও তো হওয়ার কথা ছিল না। আর যেখানে সে তার ব্যক্তিগত কথাগুলো বাড়ির মানুষের সামনে বলতে পারলো না। সেখানে এই মেয়ের সামনে নিরদ্বিধায় বলে দিল। শুভ্র অবাক চোখে হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ সত্যি তো এগুলো হওয়ার কথা ছিল না তো।’
হিয়া হাসলো আবার তারপর বললো,
‘ এটাই ভাগ্য। আপনার ভাগ্যে আপনার হবু বউই আছে। তাই বেশি না ভেবে বিয়েটা করে ফেলুন।কে বলতে পারে একটা সময় আপনার এই বউ আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার হয়ে দাঁড়াবে।’
বহিয়ার কথা শুনে শুভ্র শুধু তাকিয়ে রইলো হিয়ার পানে। কিছু বললো না। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তাঁর এতক্ষণ যে ভাবনাগুলো তাঁর মাথায় ছিল তা নিমিষেই কোথাও একটা হারিয়ে গেল যেন। শুভ্রকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল হিয়া,
‘ আপনার ফোন নাম্বারটা দিন তো?’
হিয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে বললো শুভ্র,
‘ কি?’
‘ আপনার ফোন নাম্বার?’
শুভ্রও কি মনে করে যেন তাঁর নাম্বারটা দিলো হিয়াকে। হিয়া গট গট করে তাঁর মোবাইলে নাম্বারটা উঠিয়ে কল করলো শুভ্রকে। রিং বাজতেই শুভ্র পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো নাম্বারটা। এরই মাঝে হিয়া আবার বলে উঠল,
‘ এটা আমার নাম্বার মাঝে মাঝে আপনার আর আপনার বউয়ের খবরাখবর জানার জন্য ফোন করবো? আর হ্যাঁ শুভকামনা রইলো আপনার নতুন জীবনের জন্য।’
‘ এর মানে আপনি শিওর আমি বিয়েটা করছি।’
‘ তা নয় তো কি? আমি ভাগ্যকে খুব বিলিভ করি। আর আপনার যা দেখছি তাতে আপনার ভাগ্যে আপনার হবু বউই আছে৷ আচ্ছা আপনার নামটা কি বলুন তো?’
‘ কেন বলুন তো?
‘ আরে নাম্বার সেইভ করতে হবে তো।’
হিয়ার কথা শুনে শুভ্র বলে উঠল,
‘ শুভ্র।’
‘ শুভ্র আচ্ছা আর আপনার বউয়ের নাম?’
‘ বর্ষা।’
‘ ওহ শুভ্র বর্ষা। নাম দুটোই মিল আছে তো খুব। পারফেক্ট কাঁপল। যাইহোক আমায় এখন যেতে হবে মিস্টার হিরো। বাকি কথা ফোনে হবে ভালো থাকবেন।’
বলেই এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো হিয়া। পায়ে চোট থাকায় হাল্কা কষ্ট হচ্ছে হিয়ার। তবে সেই কষ্টকে টোটালি উপেক্ষা করে চললো সে।’
আর এদিকে শুভ্র জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো হিয়ার যাওয়ার পানে। বহুত বিপাকে ফেলে গেল মেয়েটা। এখন কি করবে শুভ্র? বাড়ি ফিরে যাবে আবার কিন্তু বাড়ি ফিরে কি বলবে সবাইকে। আর অনিক তো বোধহয় এতক্ষণে সবাইকে সবটা বলে দিয়েছে।’
এরই মাঝে শুভ্রের ভাবনার মাঝে ফোনটা আবার বেজে উঠলো শুভ্রের। হিয়াই ফোন করেছে। শুভ্র অবাক হয়েই ফোনটা তুললো।
এদিক, এয়ারপোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে বললো হিয়া,
‘ কি এতো ভাবছেন মিস্টার হিরো, আমি তো বলেছি আপনার ভাগ্যে আপনার হবু বউ বর্ষাই আছে।’
শুভ্র শুনলো হিয়ার কথা। নিজের অজান্তেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো সে। আর সত্যি এবার ভাগ্য তাঁর সহায় ছিল অনিক কিছু বলার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় শুভ্র। আর ভাবনাহীন ভাবেই বিয়েটা করে ফেলে সে বর্ষাকে। পুরো বিয়ের আসরে হিয়ার কথাগুলো মাথায় রেখেই বিয়েটা করে শুভ্র। তারপর আর কি ভাগ্যকেই মেনে নেয় শুভ্র আর সংসার করতে থাকে বর্ষার সাথে। আর প্রায় রাতে হিয়ার সাথেই কথা হতো শুভ্রের। এভাবেই করতে করতে আননোন মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল শুভ্রের। আর মোবাইলে সেইভ হলো তার নাম ‘ঔপন্যাসিকা।’
পর পর সব কথাগুলো বর্ষাকে বলে দম ছাড়লো শুভ্র। বললো,
‘ এই হলো ঔপন্যাসিকার কাহিনি।’
সব শুনে বর্ষা যেন হতভম্ব। শেষে কিনা তাদের বিয়েটা একজন ঔপন্যাসিকার জন্য হলো। বর্ষার ভাবনার মাঝেই বলে উঠল শুভ্র,
‘ আমি জানি না ঔপন্যাসিকার সাথে কি কানেকশন আছে আমার। কিন্তু ওর জন্যই আজ আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ জিনিসটা উপলব্ধি করতে পারলাম। ধন্যবাদ ঔপন্যাসিকা। মেয়েটার মাঝে আলাদা একটা যাদু আছে কথা বললেই মনটা ভালো হয়েছে যায়।”
শুভ্রের মুখে ঔপন্যাসিকার এত প্রশংসা শুনে মুখ ভাড় করে বললো বর্ষা,
‘ হুম হয়েছে হয়েছে বুঝতে পেরেছি আপনার ঔপন্যাসিকা আমার চেয়েও ভালো।’
বর্ষার কথা শুনে হাসলো শুভ্র। বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ আমি তা কখন বললাম তুমিই তো তুমি। আমার প্রিয় বোকারানি।’
‘ হুম একসময় তো অপ্রিয় ছিলাম।’
‘ তাতে কি এখন তো প্রিয় হয়েছো।’
বলেই বর্ষাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মুচকি হাসলো শুভ্র। বর্ষাও খুশি মনে জড়িয়ে ধরলো শুভ্রকে। এই প্রথম শুভ্রকে কাছ থেকে ফিল করছে বর্ষা। একরাশ ভালো লাগা এসে গ্রাস করলো তাঁকে। সাথে মন থেকে ধন্যবাদ জানালো সে, সেই ঔপন্যাসিকাকে। মনে মনেই বললো,
‘ থ্যাংক ইউ।’
_____
রাতের জোৎসা ভরা আলোতে বিছানা লেপ্টে কাঁথা জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে হিয়া। এমন সময়,,
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️