- ju#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-০২
আজ শুভ্র আর বর্ষার বিয়ে। পুরো বাড়ি জুড়েই যেন বিয়ের ধুম পড়ে গেছে। চারদিকে গান বাজনা সাথে অনেক মানুষের আলাপন। যদিও দু’সপ্তাহের মধ্যে খুব বেশি ঝাঁকঝমক করে বিয়েটা দিতে পারে নি কেউ। তারপরও সাধারণের মধ্যে অনেকটাই উচ্ছাসিত পরিবেশ হয়েছে এখন। বাড়ি ভর্তি করা লোকজনের আনাগোনা সাথে বাচ্চাদের হই হুল্লোড় সবকিছুতেই যেন এক অন্যরকম আনন্দকর মুহূর্ত।’
কিন্তু এই আনন্দকর মুহূর্তটাকে উপভোগ করতে পারছে না শুভ্র। সে তো এসবের ভিড়ে নিজেকে আঁড়াল করে বাড়ির ছাঁদে বর বেসে এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। মন মেজাজ খুবই খারাপ তাঁর। দাদুর ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে শুভ্রের। বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে যেতে খুবই ইচ্ছে করছে তাঁর আবার ভাবছে ফেমেলির সম্মানও তো আছে। কিন্তু বর্ষার নামটা মাথায় আসলেই তো রাগ আসে তাঁর। কি করে সারাজীবন কাটাবে সে বর্ষার সাথে। আকাশ পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো শুভ্র। এমন সময় শুভ্রের বন্ধু অনিক দৌড়ে এসে দাঁড়ালো শুভ্রের পাশ দিয়ে তারপর বললো,
‘ কি রে দোস্ত এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? নিচে চল তোকে ডাকছে সবাই। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই তোর আর বর্ষার বিয়ে কোথায় আনন্দ করবি তা না এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছিস। বিয়ে-টিয়ে করার ইচ্ছে নেই নাকি।’
বলেই হেঁসে ফেললো অনিক। অনিকের হাসি দেখে খুব সিরিয়াস ভাবেই বললো শুভ্র,
‘ আমার সত্যি এই বিয়ে করার ইচ্ছে নেই।’
শুভ্রের কথাটাকে খুব বেশি পাত্তা না দিয়ে হেঁসে বললো অনিক,
‘ আমার সাথে মজা নিচ্ছিস নাকি।’
অনিকের কথা শুনে বিরক্ত প্রকাশ করে গম্ভীর কণ্ঠ নিয়ে বললো শুভ্র,
‘ তোর কি আমাকে জোকার মনে হচ্ছে, অনিক।’
শুভ্রের এবারের কথা শুনে অনিক বেশ সিরিয়াসভাবেই বললো,
‘ তুই কি সত্যি এই বিয়েটা করতে চাস না, শুভ্র?’
‘ না! আমার ইচ্ছে করছে আমি এখনই এখান থেকে পালিয়ে লন্ডনে ফিরে যাই।’
শুভ্রের এবারের কথা শুনে অনিক যেন সত্যি অবাক। তাঁর মানে শুভ্র সব সিরিয়াস ভাবেই বলছে। অনিক হতাশা ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ এভাবে বলছিস কেন তোর কি বর্ষাকে পছন্দ নয়?’
‘ না। আমার বর্ষাকে ভালো লাগে না, কোনো কালেই লাগে নি। আর আমার মনে হয় না সামনের দিনগুলোতে আমার ভালো লাগবে।’
‘ এভাবে বলছিস কেন?’
‘ তুই বুঝতে পারছিস না আমি চাই না আমাদের বিয়েটা হোক। আমার বর্ষাকে পছন্দ নয়। এই ছোট্ট বিষয়টা তোরা কেন বুঝতে পারছিস না।’
শুভ্রের কথা শুনে বিষন্নমাখা কন্ঠ নিয়ে বললো অনিক,
‘ এভাবে বলিস না দেখবি বিয়ে হয়ে গেল সব ঠিক হয়ে যাবে। আর বর্ষা খুব ভালো মেয়ে।’
‘ আমি বলিনি বর্ষা ভালো না। বর্ষা যথেষ্ট ভালো কিন্তু আমার ওকে ভালো লাগে না।’
‘ এই কথাগুলো বাড়ির সবাইকে কেন জানাস নি।’
‘ জানাতে চেয়েছিলাম তো বর্ষার সাথেও কথা হয়েছিল কিন্তু হুট করে দাদুর এই অসুস্থতাই সবকিছু পাল্টে দিল।’
উওরে শুভ্রের কাঁধে হাত দিয়ে বললো অনিক,
‘ টেনশন নিস না দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। পৃথিবীতে কত মানুষ আছে। যারা বিয়ের আগ পর্যন্ত তাঁর জীবনসঙ্গীর মুখটাও ঠিকভাবে দেখে নি। আমার মা বাবাই তো বিয়ের আগে নাকি তাঁরা একে অপরকে চিনতো না, জানতো না কিন্তু দেখ বিয়ের কতবছর হয়ে গেল তাঁরা এখনো একসাথে আছে। আসলে সবই হলো ভাগ্য আল্লাহ যার ভাগ্যে যা লিখেছে তাই হবে। তোর জন্য হয়তো বর্ষাকে বানানো হয়েছে।’
‘ কিন্তু আমি তো চাই না বর্ষাকে?’
‘ কে বলতে পারে এই বর্ষাই একদিন তোর জীবনের সবটা হয়ে যাবে। আর তুই তো ধরতে গেলে বর্ষাকে ঠিক চিনিসও না এতবছর বিদেশে ছিলি সেইভাবে তো দেখিস নি মনে হয়। বর্ষা খুব ভালো মেয়ে শুভ্র তোকে খুব ভালো রাখবে দেখিস।’
‘ এতই যখন ভালো ভালো করছিস তাহলে বিয়েটা তুই কেন করছিস না?’
শুভ্রের কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় অনিক। হাল্কা হেঁসেই বলে,
‘ তুই না থাকলে ঠিকই করতাম।’
অনিকের ঠাট্টার ছলটাকে সিরিয়াসলি নিয়ে বললো শুভ্র,
‘ আমায় একটা হেল্প করবি?’
‘ কি?’
‘ আমি আজ আর এক্ষুণি বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে যাবো আর আমার বদলে তুই বর্ষাকে বিয়ে করবি।’
শুভ্রের কথা শুনে অনিক চোখ বড় করে করে বললো,
‘ তোর কি মাথা ঠিক আছে শুভ্র?’
‘ প্লিজ দোস্ত আমায় একটু হেল্প কর না। আমি পারবো না বর্ষার সাথে থাকতে।’
‘ তুই কি পাগল হয়েছিস বাড়ি ভর্তি লোকজন। আর দাদু ভীষণ কষ্ট পাবেন শুভ্র।’
‘ এই মুহূর্তে আমি দাদুকে নিয়ে ভাবতে চাই না অনিক। তুই শুধু বল তুই এই বিয়েটা করতে রাজি।’
‘ তুই বুঝতে পারছিস না শুভ্র এটা অন্যায়।’
উওরে অনিকের হাত ধরে মিনতির স্বরে বললো শুভ্র,
‘ আমি ন্যায় অন্যায় বুঝতে চাই না অনিক তুই শুধু ওকে বিয়ে করে নে,প্লিজ।’
‘ এমনটা হয় না শুভ্র।’
‘ কেন হয় না তুই তো বললি বর্ষাকে তোর ভালো লাগে তাহলে বিয়েটা করলে প্রবলেম কোথায়?’
‘ আমি এমনটা কখন বললাম আমি শুধু বলেছি বর্ষা খুব ভালো মেয়ে।’
‘ ওই একই হলো, প্লিজ করে নে না বিয়েটা তাহলে আমি বেঁচে যাই।’
‘ কিন্তু শুভ্র?’
‘ কোনো কিন্তু নেই। এমন তো কত গল্পেই হয় বিয়ের আসর ছেড়ে বউ পালিয়ে যায় আর কনের বন্ধুর সাথে হিরোর বিয়ে হয়। আমাদের গল্পে না হয় উল্টোটা হলো বর পালিয়ে যাবে আর বরের বন্ধুর সাথে কনের বিয়ে হবে।’
শুভ্রের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো অনিক,
‘ তুই কি এতদিন বিদেশ বসে সিরিয়াল দেখতিস নাকি যে এই গল্পের থিম বলছিস।’
‘ তোর যা মনে হয়। তবে আপাতত অতশত জানি না দোস্ত আমি এখনই এই বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে যাবো আর তুই আমার হয়ে বর্ষাকে বিয়ে করে নিবি। জানি এতে হয়তো আমার ফেমেলির সবাই আমার উপর রেগে যাবে। যেটা একসময় চলেও যাবে। লাগলে আগামী ১০ বছরে দেশেই ফিরবো না। কিন্তু এই বিয়েটা হয়ে গেলে আমার বর্ষার দুজনের জীবনই নষ্ট হয়ে যাবে অনিক।’
‘ তোর কথা আমি বুঝতে পারছি শুভ্র কিন্তু তুই যেমনটা চাইছিস এটা ঠিক না।’
‘ ঠিক বেঠিক কিছু বুঝতে চাই না আমি। তুই শুধু আমায় বল আমি চলে গেলে তুই সবটা সামলে নিয়ে বর্ষাকে বিয়ে করে নিবি।’
উওরে হতাশা ভরা চোখ নিয়ে শুধু তাকিয়ে রইলো অনিক শুভ্রের মুখের দিকে। কি করবে না করবে সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তাঁর। এমনটা নয় সে বর্ষাকে পছন্দ করে না। কিন্তু বিয়ে করার কথা এমনটা সে কখনোই ভাবি নি।’
_______
কনে বেসে আয়নার সামনে বসে আছে বর্ষা। তাঁর পাশেই পার্লারের মেয়েরা তাঁকে সাজাতে ব্যস্ত যদিও প্রায় সাজগোছ শেষ তাঁর। এই দু’সপ্তাহে বাড়ির সবাইকে এই বিয়েটা না করার কথা বলতে চেয়েছিল বর্ষা কিন্তু দাদুর আবদারের কথা মনে পড়তেই আর কিছু বলতে পারে নি সে। তবে মনে মনে যতটা না খুশি খুশি লাগছে বর্ষার তাঁর থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছে এই মুহূর্তে। শুভ্রকে সে ভালোবাসে হয়তো মুখ ফুটে কখনো বলেনি বা বলার সুযোগ পায় নি। ছোট বেলা থেকেই সে জানতো তাঁর শুভ্রের বিয়ের কথা। যদিও তখন সে এই বিয়ে,স্বামী, সংসার কি কিছুই বুঝতো না তবে যবে থেকে বুঝতে পেরেছে বিয়ে স্বামী সংসার ভালোবাসা জিনিসটা আসলে কি তখন থেকেই একটু একটু করে শুভ্রের জন্য অনুভূতি জমিয়েছে সে। ভালোবাসতে শুরু করেছে এমনিতেও শুভ্রকে তাঁর ছোটবেলা থেকেই ভালো লাগতো। কিন্তু সেসব ভাবলে এখন খারাপ লাগে বর্ষার। কারন সে শুভ্রকে ভালোবাসলেও শুভ্র তাঁকে ভালোবাসে নি। আর তাঁকে হয়তো শুভ্র কখনই ভালোবাসবে না তাহলে মাঝখানে এই বিয়েটা কেন? যদিও মনে মনে খুশিও হয়েছে বর্ষা বিয়েটা হচ্ছে বলে। এমনটাও তো হতে পারে বিয়ের পর শুভ্রের মন ঘুরে যাবে আর তাঁকে খুব করে ভালোবাসবে। এমন তো কতই মানুষই থাকে যারা বিয়ের সময় বউকে ভালোবাসে না কিন্তু বিয়ের পর সময়ের সাথে সাথে সত্যিকার অর্থে খুব করে ভালোবেসে ফেলে তাঁর জীবনসঙ্গীকে। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো বর্ষা। মনটা একদমই ভালো নেই তাঁর, কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে সবকিছু। শুভ্রকে আধও তাঁকে কোনোদিন ভালোবাসবে। আবার মনে হয় শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হবে তো। কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে বর্ষার। অস্থিরতা ফিল হচ্ছে খুব। এমন সময় হতভম্ব হয়ে তাঁর রুমে ঢুকলো অনিক। কিছুটা অস্থিরতা নিয়েই বললো সে,
‘ তোমার সাথে কিছু কথা ছিল বর্ষা?’
হুট করেই অনিকের ভয়েস শুনে হাল্কা চমকে উঠলো বর্ষা। তক্ষৎনাত নিজেকে সামলে নিয়ে বললো বর্ষা,
‘ জ্বী বলুন ভাইয়া।’
উওরে পার্লারের মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আমি তোমার সাথে একা কিছু কথা বলতে চাই, বর্ষা।’
অনিকের কথা কিছুটা অবাক হয়েই বললো বর্ষা,
‘ ওহ!’
এতটুকু বলে পার্লারের মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো সে,
‘ আমার সাজটা কি কমপ্লিট হয়ে গেছে আপুরা?’
উওরে তারাও বললো,
‘ হুম, আমরা বাহিরে যাচ্ছি আপনারা কথা বলুন।’
এতটুকু বলে তাঁরাও একে একে বেরিয়ে যেতে লাগলো রুম থেকে। বর্ষাও পার্লারের মেয়েগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে এগিয়ে গেল অনিকের কাছে তারপর বললো,
‘ জ্বী এখন বলুন ভাইয়া। কি বলবেন আপনি?’
বর্ষার কথা শুনে অনিক কিছুটা অস্থিরতা নিয়ে বললো,
‘ আসলে হয়েছে কি বর্ষা?’
‘ জ্বী ভাইয়া বলুন কি হয়েছে? দাদু কি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে?’
‘ না তেমন কোনো ব্যাপার নয় ব্যাপারটা হলো শুভ্র..
সঙ্গে সঙ্গে চিন্তিত কন্ঠ নিয়ে বললো বর্ষা,
‘ কি হয়েছে শুভ্রের?’
‘ আসলে শুভ্র চলে গেছে বর্ষা।’
অনিকের কথা শুনে বর্ষা অবাক হয়ে বললো,
‘ চলে গেছে মানে কোথায় গেছে?’
উওরে মাথা নিচু করে সব ঘটনার কথা খুলে বললো অনিক। শুধু তাঁকে যে বিয়েটা করতে বলেছে এটা বাদে। সব শুনে বর্ষার চোখ ছলছল করতে শুরু করলো সে ভাবে নি শুভ্র এইভাবে বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যাবে।’
অনিক আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেখানে উপস্থিত হলো বর্ষার মা। মেয়ের দিকে এগিয়ে এসে বললেন উনি,
‘ তোর কি হয়েছে ব..
এতটুকু বলেই ভিতরে অনিককে দেখে বেশ অবাক হয়ে বললো বর্ষার মা,
‘ অনিক তুমি এখানে?’
উওরে কিছুটা আমতা আমতা করে বললো অনিক,
‘ হয়েছে কি আন্টি শুভ্র বর্ষার একটা পিক তুলতে বলেছিল তাই আর কি একটা পিক তুলতে এসেছিলাম।’
অনিকের কথা কিছু বর্ষার মা হেঁসে ফেললো। তারপর বললো,
‘ ওহ কিন্তু ওকে যে নিচে ডাকছে আচ্ছা তাড়াতাড়ি ওর একটা পিক তুলে নেও তারপর আমি ওকে নিয়ে যাবো।’
উওরে অনিকও আর উপায় না পেয়ে বর্ষার একটা ছবি তুলে বললো,
‘ হয়ে গেছে আন্টি। আমি এক্ষুনি শুভ্রকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
অনিকের কথা শুনে বর্ষার মাও বলে উঠল,
‘ ঠিক আছে ঠিক আছে। চল বর্ষা।’
এতটুকু বলে বর্ষার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো বর্ষার মা। আর অনিক জাস্ট হতাশা ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলো বর্ষার মুখের দিকে। আর বর্ষাও তাকালো অনিকের মুখের দিকে। বুকের ভিতর হাহাকার শুরু হয়ে গেছে তার। এবার কি হবে বাড়ি ভর্তি লোকজন। দাদুর সম্মান, মা বাবার সম্মান কিভাবে কি সামলাবে সে। এক বুক অভিমান এসে ভর করলো বর্ষার মনে। বুক ভরা অভিযোগ নিয়ে মনে মনে বললো বর্ষা,
‘ এটা কি করলেন আপনি? এখন আমি কি করবো শুভ্র? কিভাবে সামলাবো সবটা!’
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]
#TanjiL_Mim♥️