ধূসর পাহাড়,পর্ব_২১
লেখিকা আমিশা নূর
পার্টির সবকিছু রেডি।আয়নের সব ফ্রেন্ডসরাও এসেছে।তবে অরণ্য এখনো বাড়ি ফিরেনি।সীয়ামা ফোন করাই জানতে পারলো সে দিবানির সাথে আসছে।কথা টা কুয়াশার কান অবধি পৌঁছাতেই পাশে দেওয়ালে ঘুষি দিলো।কিন্তু দেওয়ালে পেরাক তাকাই হাত রক্তাক্ত হয়ে গেলো।কিন্তু কুয়াশার চোখ থেকে এক ফুটা জলও পড়েনি।যেন আজ সে শক্ত!সীয়ামা দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি ড্রেসিং করিয়ে দিলো।
“কুয়াশা?”
“প্রকৃতি তুমি?”
“আমি তো নিপুর সাথে এলাম।বাট তুমি এখানে কীভাবে?”
“আয়নের হোম টিইচার আমি।”
“ওহ।কেমন আছো?”
“ভালো।তুমি?”
“আমিও।”
ওরা দুজন কথা বলছিলো তখনি অরণ্যের দিদুন এসে প্রকৃতিকে উদ্দেশ্য করে বললো,”তোমাকে তো চিনলাম না?”
“আমি নিপু’র বড় বোন।”
“নাম কী?”
“প্রকৃতি দে।”
“বাহ। খুব সুন্দর নাম!অরণ্য-প্রকৃতি।”
“জ্বী না টাম্মি।শুধু প্রকৃতি নাম।”
“হ্যা।আসো তো আমার সাথে আসো।”
দিদুন জোর করে প্রকৃতিকে নিয়ে গেলো।কুয়াশা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।দিদুন এইটা কেনো বললো?অরণ্য-প্রকৃতি?এসব ভাবতে ভাবতে সামনে এগোচ্ছিলো তখনি কারো সাথে ধাক্কা লেগে পরে যেতে চাইলাম।মাথা উঠিয়ে দেখলাম ব্লু কালারের পায়জামা পরে অরণ্য দাঁড়িয়ে আছে।তাড়াহুড়ু করে চলে আসতে চাইলে আমার ব্রেসলেট তার পায়জামা’য় আটকে রইলো।অনেক চেষ্টা করলাম ব্রেসলেট ছাড়ানোর।অরণ্যের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেদিনের মতো ঘোর লাগা চাহনিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।হঠাৎ অরণ্য আমার হাত ধরে পাশের দেওয়ালের সাথে আটকে দিলো।তারপর আস্তে করে আমার কপালে চুমু দিলো।পরম আবেশে কুয়াশা চোখ বন্ধ করে নিলো।চোখ খুলে দেখলো তার সামনে কেউ দাঁড়িয়ে নেই।পাশ ফিরে দেখলো অরণ্য দিবানিকে সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।কুয়াশা নিজের দিকে তাকালো,কপালে হাত বুলালো।তারমানে এতোক্ষণ ধরে সব কল্পনা ছিলো?কিন্তু এটা কী করে সম্ভব?কুয়াশা হেটে অধ্রীর কাছে গেলো।কুয়াশাকে দেখে অরণ্য বললো,
“ওহ দিবানি ও হলো কুয়াশা।”
“হাই কুয়াশা।”
“হাই।”
কুয়াশা অরণ্যের দিকে তাকিয়ে দেখলো অরণ্য দিবানির হাত ধরে আছে।আর তাদের কথাবার্তা দেখে মনে হচ্ছে যেনো বফ-গফ।এই বিষয়টা কুয়াশা মোটেও সহ্য হলো না।সবার সামনে অরণ্যকে বললো,
“অরণ্য একটু এদিকে আসো।তোমার সাথে কথা আছে।”
“এখানে বলো কুয়াশা।দেখছো তো..”
অরণ্য ইশারায় বুঝালো দিবানির সাথে আছে এখন।আর অপেক্ষা না করে কুয়াশা অরণ্যের হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসলো।প্রচন্ড রেগে বললো,
“প্রবলেম কী তোমার?তুমি না আমাকে ভালোবাসো?তাহলে দিবানির সাথে এতো মাখামাখি কেনো?আসলেই পৃথিবীর সব ছেলেরা এক!আমি বারং করলাম তো অন্য এক মেয়েকে প্রপোজ করবে।আর বাইরে বাইরে বললে শুধু একজনকেই লাভ করো।এট লিস্ট আমি মনে করেছিলাম তুমি ওমন না।বাট আই ওয়াজ রং।”
“তুমি তো আমাকে লাভ করো না।তাহলে তোমার কী?”
“কে বলেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি না?আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ।আর কোনো মেয়ের সাথে কথা বললে আই..আই উয়িল কিল ইউ।”
“এতোদিন বলোনি কেনো?”
কুয়াশা আর কোনো কথা না বলে অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বললো,”অরণ্য আমাদের মিল কেনোদিন হবে না।কোনোদিনও ভালো থাকতে পারবো না আমরা।আমাদের ধর্ম আলাদা অরণ্য!”
অরণ্য কুয়াশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,”আমি সব ঠিক করে দিবো মায়াময়ী!”এতোটুকুতেই যেনো কুয়াশা শান্তনা পেলো।
কয়েক মাস পর…..
“আমি এক সপ্তাহ পর চলে আসবো অরণ্য।”
“এক সপ্তাহ?ও মাই গড!তুমি যাবে না ব্যাস।”
“দেখো আমি না গেলে সামায়রা বিয়েই করবে না।কতো কষ্ট করে বাবা আর খালাকে রাজি করালাম আর এখন তুমি ওমন করছো?তুমি আমাকে ভালোই বসো না।”
কুয়াশার ইমোশনাল কথা শুনে অরণ্য গলে গেলো।শীতল দৃষ্টিতে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বললো,”ওকে।বাট আমার সাথে প্রতিদিনই কথা বলবে।”
“থ্যাএএএংক্স!”
অতিরিক্ত খুশি হয়ে কুয়াশা অরণ্যকে জড়িয়ে ধরলো।অরণ্য মৃদু হাসলো।ধূসর-পাহাড়ে দুজনে পা দুলাতে দুলাতে বাদাম খাচ্ছে।এতো দিনে তাদের সম্পর্ক আরো গাড় হয়েছে।ধূসর-পাহাড়ের সাথে অরণ্য কুয়াশাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।কুয়াশা সামায়রা’র বিয়েতে যাচ্ছে ইন্ডিয়া।গত দুদিন ধরে অরণ্যকে বুঝানোর পর আজকে রাজী হলো।কালকে কুয়াশা ইন্ডিয়া চলে যাবে।তাই আজকে সারাদিন অরণ্যের সাথে থাকবে।
“অরণ্য চলো শপিং করবো আমি।”
“আর একটু পর যায়।”
“নোওও।এখন আসবে।”
কুয়াশা জোর করে অরণ্যকে নিয়ে গেলে শপিং মলে।শপিং মলে গিয়ে কুয়াশা অরণ্যের আড়ালে একজনকে কল করলো,
“দেখো তুমি জানো ওসব সারপ্রাইজ আমি দিতে পারি না।যাস্ট সিম্পল একটা বলো।”
“ওকে।তুমি তাহলে আমাদের অফিসে আসো।”
“কেনো?”
“একটা জিনিস চুজ করে রেখেছি।তোমার যদি পছন্দ হয় তাহলে নিও।”
“ওকে।বাই।”
“কার সাথে কথা বলছো কুয়াশা?”
অরণ্যের কন্ঠ শুনে কুয়াশা চমকে গেলো।কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,”ঐ তিহি কল করেছিলো।”
“ওহ।কী বললো?”
“কালকে আমরা তিনজনই নয়টায় বের হচ্ছি।”
“ওও।অধ্রী তোমার সাথে মিট করতে চাইছে।”
“আচ্ছা শুনো,বাবা আর খালা নানুবারি যাবে আজকে।তোমরা সবাই আজকে রাতে আমাদের বাসায় আসিও।”
“তুমি সিওর?তোমার বাবা আর খালা জানতে পারলে..”
“আজ অবধি নিজের ইচ্ছে মতো কোনো কাজ করিনি।তাও উনাদের কটু কথা শুনতে হয়েছে।আর এখন তো আমি বড় হয়েছি।নিজের ইচ্ছে মতো একটা কাজ তো করি।”
“ওকে বাবা।চলো এবার ড্রেস চুজ করবে।”
“হুম।”
২৫.
“কুয়াশা?এসব ড্রয়িং তুমি করেছো?আই মিন সিরিয়াসলি?”
অধ্রীর কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো।কুয়াশার সেদিনের আর্ট’টা খুঁটিয়ে দেখছে সবাই।প্রথম দৃশ্যতে রেললাইনের ধারে প্রজাপ্রতির মতো ডানা মেলে দাড়িয়ে আছে।নিচে ছোট করে লিখা আছে,”প্রথম দেখা।”তারপরে সেন্টমার্টিনের কিছু ছবি।সব শেষে সাদা কাপড়ে ডেকে রাখা চারকোনা ছবি।ওটার দিকে তাকিয়ে সবাই প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে কুয়াশা’র দিকে তাকিয়ে রইলো।
“সাদা কাপড়ের আড়ালে কী আছে যা আছে তা নাহয় অন্য কোনো একদিন দেখো।”
“ওকে।বাট ট্রাস্ট মি কুয়াশা বেস্ট আর্ট এগুলা।”
“মাই প্লেজার।”
“কিন্তু আমি তো কিছু খাচ্ছি না স্কেচে।এইটা কী করে সম্ভব?”
কাননের কথা শুনে সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠলো।আজ রাতে সবাই কুয়াশার সাথে আড্ডা দিবে।যেহেতু কালকে কুয়াশা ইন্ডিয়া চলে যাবে।সবাই কুয়াশা’র রুমে গোল করে বসলো।বক্তব্য দেওয়ার মতো করে দাঁড়িয়ে অধ্রী বললো,”গেইম খেলবো।”
“কী গেইম?”
“যেকোনো একটি গানের প্রথম কলিটা একজন অভিনয় করে দেখাবে, বাকিদের বলতে হবে ওটা কোন গান।কোন ধরনের গান অভিনয় করবি সেটা আমরা সিলেক্ট করে দিবো। ডান?”(অধ্রী)
“আর যদি ভূল আন্সার দে তাহলে পানিশমেন্ট পেতে হবে।” (রৌদ্রময়)
“ওকে।তাহলে প্রথমে অরণ্য অভিনয় করে দেখা,হিন্দি রোমান্টিক সং।”
কিছুক্ষণ গেইম খেলার পর কুয়াশা কফি আনতে গেলো।আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রাত বারোটার দিকে অধ্রী ছাড়া বাকিরা সবাই চলে গেলো।
সকাল আট টায়, কুয়াশা অরণ্যকে কল করলো,
“অরণ্য তুমি ঘুম থেকে উঠোনি?”
“হু..”
“অরণ্য নয়টায় আমি বাসা থেকে বের হচ্ছি।আর তুমি এখনো ঘুমে?”
কুয়াশার কথা শুনে অরণ্য উঠে বসলো।মাথাটা ভিষণ ব্যাথা করছে।কিন্তু কুয়াশাকেও তো পৌঁছে দিতে হবে।বিছানা থেকে নামতে নামতে কুয়াশাকে বললো,”তুমি ওয়েট করো আমি দশ মিনিটে আসছি।”
“আচ্ছা শুনো শুনো…তোমার আসতে হবে না।তিহি আমাকে পিক করে নিবে।”
“কী বলছো তুমি?এয়ারপোর্ট অবধি তোমাকে পৌঁছে দিবো না?”
“আমি এখন তিহান আর শব্দের সাথে দেখা করবো।এগারো টাই ফ্লাইট আমার।তুমি সাড়ে দশ টাই এয়ারপোর্টে আসিও।”
“তুমি সিওর?”
“হুম।”
ফোন কেটে দিয়ে কুয়াশা স্কিনের দিকে তাকালো।অরণ্য হাসি মাখা চেহেরাটা ভাসছে।খুব ভালোবেসে ফেলেছে মানুষটাকে!এক সপ্তাহ দেখা না করে কীভাবে থাকবে?যাই হোক থাকতে তো হবেই।
(চলবে)