দ্বিতীয় জন 💔Season~2,পর্ব দুই
Sumana Easmin
সুসমি নিচে নেমে গিয়ে দেখলো হিমু কার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখেই সুসমির মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো। সে হনহন করে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হিমু কিছুটা মৃদু হেসে বললো-
“তাহলে যাওয়া যাক?”
হিমুর কথা শুনে মহুর্তের মধ্যে সুসমি রেগে আগুন হয়ে গেলো। সে হিমুর শার্টের কলার ধরে বললো-
“ইউ রাচকেল!! কি ভেবেছিস তুই? এমনটা করলেই আমায় আমায় পেয়ে যাবি?”
হিমু হাসতে হাসতে বললো-
“এতো রেগে যাচ্ছো কেনো? বউ বউয়ের মতো থাকো। নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু!”
লিডার টাইপের ছেলেটা হিমুকে উদ্দেশ্য করে বললো-
“বস্, কাজ কি হয়ে গেছে?”
“না!”
সুসমি হিমুর শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে কার এ গিয়ে বসলো। কারন সে বুঝতে পারলো এখানে কথা বলা মানেই বৃথা।
হিমু ওর ছেলেপুলেদের চোখের ঈশারা করলো। ওরা সাথে সাথে সুসমির বাবা মার কাছ থেকে চলে গেলো।
হিমু রিলাকসে সুসমিকে নিয়ে যেতে লাগলো। বাসার সামনে গিয়ে হিমু ওর মাকে ফোন দিয়ে বাইরে বেরুতে বললো। ওর মা একটু পরই বাইরে বেরুলেন। হিমুকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
“বাইরে আসতে বললি যে? কিছু হয়েছে?”
“হুম। দেখো তোমার জন্য কাকে নিয়ে এসেছি।”
বলেই সে সুসমিকে কার থেকে নামালো। সুসমিকে দেখে হিমুর মা প্রচন্ড রকমের একটা ধাক্কা খেলেন। উনি সুসমির কাছে এগিয়ে গিয়ে সুসমির একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললেন-
“বর্ষা…?”
সুসমি রেগে গিয়ে বললো-
“আপনারা কি শুরু করছেন এইসব? আমি কোন বর্ষা টর্ষা না। আমার নাম সুস্মিতা।”
হিমুর মা আগের চেয়েও বেশি অবাক হয়ে সুসমিকে বললো-
“আসলে তোমার চেহারা, গলার কন্ঠস্বর, উচ্চতা সব কিছু আমার বউমা বর্ষার সাথে মিলে যাচ্ছে তো। তাই বললাম।”
সুসমি উৎসুক হয়ে বললো-
“কেনো উনি কি হারিয়ে গেছেন?”
“না। প্রায় তিন মাস হতে চললো। সে আর আমাদের মাঝে নেই।”
কথা গুলো বলতে বলতেই হওনার চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো। কন্ঠস্বর আটকে যেতে লাগলো।
একটু পর নিজেকে সামলে নিয়ে উনি হিমুকে বললেন-
“এ তুই কাকে তুলে এনেছিস? অবিবাহিত একটা মেয়েকে কোন বিবেকে তুই বাসায় রাখতে এনেছিস বলতো?”
“মা তুমি ওর কথা বিশ্বাস করো নাতো। ওই ই বর্ষা।”
ওদের কথা শেষ না হতেই একদল পুলিশ হিমুর বাসা ঘেরাও করলো। হিমু যখন সুসমিকে নিয়ে রওনা দেয় তখনি সুসমির বাবা মা পুলিশকে ফোন করে সব জানায়। তারপর ওরা হিমুর নাম্বার ট্র্যাক করতে করতে এখানে চলে আসে।
পুলিশকে দেখেও হিমু নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে রইল। ওর মধ্যে কোন ভয় ভীতি দেখা গেলো না। কিন্ত ওর মায়ের ভেতর শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। উনি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই পুলিশ এসে হিমুকে পাকরাও করলো।
সুসমির কাছে ওর বাবা এসে উৎসুক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো-
“তোর কিছু হয়নিতো মা!”
সুসমি কোন উত্তর দিলো না। ওর দৃষ্টি এখন দুইটা কনস্টেবলের দিকে। যে দুইজন শক্ত করে হিমুকে ধরে আছে।
হিমু ওদের থেকে নিজেকে মুক্ত করতে করতে বললো-
“আচ্ছা আমি কি এমন করলাম যে আপনারা আমার বাসায় আসলেন, আমার গায়ে হাত দিলেন?”
দুই কনস্টেবল কোন কথা বললো না। বড় পুলিশ অফিসার হিমুর দিকে রাগান্বিত ভাবে তাকিয়ে বললেন-
“আপনি কি করেছেন করেছেন সেটা থানায় গেলেই বুঝতে পারবেন।”
হিমুর মা সুসমির বাবা মার কাছে গিয়ে হাতজোর করে বললেন-
“আমার ছেলেটা কয়েকমাস থেকে মানসিক ভাবে অসুস্থ। যে ডাক্তার ওর দেখাশুনা করে আপনারা চাইলে তার সাথে কথা বলতে পারেন। প্লিজ আপনারা ওকে ছেড়ে দিতে বলেন। আর আমার ছেলে তো আপনার মেয়ের কোন ক্ষতি করেনি।”
সুসমির বাবা মার তাতেও মন গললো না। তারা চুপ করে রইলো। উপায় না পেয়ে হিমুর মা হিমুর বাবাকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলে পুলিশ অফিসারের সাথে কথা বলতে লাগলো।
এদিকে হিমু বারবার শুধু বলতে লাগলো সুসমি ওর বউ। তাই ওকে সে তুলে এনেছে। এতো তার দোষ টা কোথায়? কিন্তু কেউ ওর কথা শুনছেনা। শুনবেই বা কোন ভিত্তিতে।
হিমু যতোই নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে দুই কনস্টেবল ততোই ওকে শক্ত করে ধরছে। এতে হিমু হাতে প্রচন্ড ব্যথা পাচ্ছে। সুসমি এতোক্ষণ শুধু হিমু আর ঐ দুই কনস্টেবলের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছিলো। এবার সে আর সহ্য করতে পারলোনা। কারন হিমু এখন প্রচন্ড ব্যথা পাচ্ছে।
তাই সে চোখের পলকে হিমুর সামনে গিয়ে হিমুর গলা থেকে একজনের হাত শক্ত করে ধরে ছাড়িয়ে নিলো! সে এতোটায় শক্ত করে কনস্টেবলের হাতটা ধরলো যে তার নিশ্বাস আটকে যেতে ধরলো। অপরজন সুসমির চোখের দিকে তাকিয়েই ভয়ে হিমুকে ছেড়ে দিলো। সুসমির চোখ তখন এতোটাই রক্ত বর্ন হয়ে গিয়েছিল যে দেখে মনে হচ্ছে মাথা নিচু করলেই চোখ দিয়ে টপটপ করে রক্ত পরবে।
হিমুও সুসমির দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলো। সে কোন কথা বললো না। সুসমি পুলিশ অফিসারের কাছে গিয়ে বললো-
“এই যে শুনুন। হিমু আমায় এখানে জোর করে তুলে আনেনি। আমি নিজেই এসেছি। আপনারা এখন আসতে পারেন!”
“তাহলে আপনার বাবা মা যে বললো?”
সুসমি ওর বাবা মার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ওনারা বললো-
“আসলে আমরা বুঝতে পারিনি…”
একটু পর পুলিশরা চলে গেলো।
সুসমি ওর বাবা মাকে নিয়ে চলে গেলো।
💔💔💔💔
প্রায় একমাস হতে চললো। হিমুকে রুমথেকে বেরুতে দেওয়া হয়নি। ওর পুরোপুরি ভাবে ট্রিটমেন্ট নেওয়া হয়েছে। এখন ও শারীরিক এবং মানসিক দুই দিক থেকেই সম্পূর্ণ সুস্থ।
আশ্চর্য বিষয় হলো এই কয়মাসে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা সে ভুলে গিয়েছে। এমনকি সুসমিকেও ভুলে গিয়েছে।
To be continue…