দু’মুঠো_প্রেম ৩

দু’মুঠো_প্রেম ৩
#ফারজানা_আফরোজ

একটি মেয়েকে পুরো ভার্সিটির সামনে থাপ্পড় বসালো ফয়সাল। থাপ্পড়ের শব্দে অরিন ও আদিবা তাদের সাইডে তাকাতেই দুইজন ভয়ে কাঁপতে শুরু করে দিলো। মনে মনে বলতে লাগলো, যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। ফয়সালের চোখের আড়ালে দাঁড়িয়ে বুঝতে লাগলো হয়েছেটা কি? কেনোই বা থাপ্পড় বসালো মেয়েটিকে?

ফয়সাল ভয়ানক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মেয়েটির উপর। ভয় ও লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে মেয়েটি। ফয়সাল তখন কটমট করে বলল,

– আরেকবার যদি দেখি আমার আশে পাশে ঘুরেছিস সেদিন তোকে খুন করে টুকরো টুকরো করে ভার্সিটির গেইটের সামনে ঝুলিয়ে রাখবো। ওই, দুনিয়াতে কি পুরুষ মানুষের অভাব পড়ছে যে আমার পিছনেই তোকে লাগতে হবে। অসভ্য মেয়ে।

ফয়সালের কথাগুলো কানে আসলো আদিবার। ভীষণ রাগ হচ্ছে তার ফয়সালের উপর।

– সামান্য পছন্দ করে বলে সবার সামনে থাপ্পড় বসাবে? এ কেমন কথা। সুন্দর হয়েছে বলে এত ভাব নিতে হবে। এইজন্যই সুন্দর মানুষ দেখতে পারি না আমি। চামড়া সাদা কিন্তু অন্তর কালা।

আদিবার কথা শোনে অরিন বিড়বিড় করে বলল,

– শালী তুই নিজেই তো সাদা। তাহলে কি তোর মন কয়লার মত কালা?

ঠোঁট উল্টিয়ে মুখ বাঁকা করে বলল আদিবা,

– আমার কথা বলেনি। ওই অসভ্য, বেয়াদব, উগান্ডার বাসিন্দা, ভাবের ফ্যাক্টরি অর্থাৎ ফয়সালকে বলেছি। দেখছিস না সামান্য কারণে এত সুন্দর মেয়েটিকে থাপ্পড় দিলো। শালা ইতর।

– তোর এই বলগুলো যদি ফয়সাল জানতে পারে তাহলে তোকে দুই থাপ্পড়ে দুনিয়াতে থেকে টাটা বায় বায় করে দিবে। এমনিতেই উনার আব্বুকে ভুল নাম্বার দিয়েছিস। তাই বলছি কি আমাদের দেখার আগেই চল কেটে পড়ি। গতকাল রাতে তোকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখেছি।

বাজে স্বপ্নের কথা শোনে মুখ কালো করে বলল আদিবা,

– জীবনে একটা স্বপ্ন দেখেছিস আমাকে নিয়ে তাও আবার বাজে স্বপ্ন বলি এই স্বপ্ন দেখার কি খুব জরুরী ছিল?

অরিন কিছু না বলে আদিবার হাত টেনে নিয়ে গেল ক্লাসের ভিতরে। এখন যদি ফয়সাল আদিবাকে দেখে তাহলে রাগের বশে হয়তো কিছু একটা করে ফেলবে। দুইটা ক্লাস হবার পর সব স্টুডেন্ট চলে গেলো। অরিন তখন রাগী চোখে আদিবার দিকে তাকিয়ে বলল,

– আগে জানলে আজ জীবনেও আসতাম না। হুদাই আমার দশ টাকা জলে গেলো। দুইটা ক্লাস হইছে তাও আবার ইম্পর্টেন্ট না ধ্যাত।

– এই অরি আমি আসছি ওয়াশরুম থেকে।

– তুই যা। তোর আবার ভীষণ দেরি হয়। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে পা ব্যাথার কোনো ইচ্ছাই আমার নাই।

হেসে হেসে বলল অরিন। আদিবা চোখ পাকিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।

ওয়াশরুম থেকে বের হতেই একটা রুমে তার চোখ আটকে গেলো। ভার্সিটি ভর্তি হবার পর থেকেই রুমটা সে দেখে যাচ্ছে কিন্তু ভিতরে যেতে ভয় পায়। রুমটার ভিতরে বেশি আলো নেই তবে যেটুকু আছে তাতে একটি কংকাল দেখা যাচ্ছে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা। আশপাশ ভালো করে দেখে মনে মনে সাহস জুগিয়ে চলে গেলো রুমের ভিতর। কংকালের সামনে দাঁড়িয়ে একটা হাত ধরে অভিনয়ের ভঙ্গিতে বলল,

– দেখো জান, আজ তোমার জন্য দেখা করতে আমি কত কষ্ট করেছি। আজ একটা সেলফি তোলে ফেসবুকে আপলোড দিবো, ক্যাপশন দিবো, এই যে আমার ফিউচার জামাই যে আমার জন্ম অপেক্ষা করতে করতে কংকাল হয়ে গিয়েছে।

আদিবা কথাগুলো বলে যেই কংকালের হাতটা তার কাঁধে রাখতে যাবে তখনই পুরো রুমটা অন্ধকার হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ আগে থাকা আধো আধো আলো অন্ধকারে রূপ নিলো। ভয়ে ঢোক গিলল আদিবা। হঠাৎ তার সামনে লম্বা একটা ছায়া এসে দাঁড়ালো। ভয়ে ভয়ে বলল,

– ক কে বলছেন?

লোকটি কিছু বলছে না। যতগুলো দুআ দুরদ জানে সব পড়া শুরু করলো আদিবা। ভয়ে ভয়ে পিছনে যেতে লাগলো। লোকটি তার হাত চেপে ধরে একদম নিজের কাছে মিশিয়ে নিলো। লোকটির মুখ দেখা যাচ্ছে না শুধু অন্ধকার। হঠাৎ ঘাড়ে নখের আঁচড়ে চিৎকার দিতে চাইলো আদিবা কিন্তু তার মুখ চেপে ধরে রেখেছে লোকটি। আদিবা ভাবছে এই কংকাল তার সাথে এইসব করছে। হয়তো কোনো জ্বীন কংকালের ভিতর প্রবেশ করেছে। ভয়ে কান্না করতে থাকলো সে। পাঁচ মিনিটের ভিতর সব আগের মত হয়ে গেল। আবছা আলোয় রুমটা ভালো করে দেখলো আদিবা। ভালো করে কিছু বুঝা যাচ্ছে না । দৌঁড়ে দরজার কাছে আসতেই দেখলো দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে এক দৌঁড়ে ক্লাস রুমের ভিতর চলে গেলো সে। আদিবাকে এইভাবে দৌঁড়াতে দেখে ভ্রু জোড়া নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো অরিন,

– এইভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন? ভুতে তাড়া করেছে?

– প পানি পানি।

ব্যাগ থেকে বোতল বের করে আদিবার হাতে তুলে দিলো। এক নিমিষেই অর্ধেক বোতল পানি শেষ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো আদিবা। অরিন খেয়াল করলো আদিবার ঘাড়ের দিক থেকে রক্ত ঝড়ছে।

– বেবি তোর ঘাড়ে কি হয়েছে রক্ত বের হচ্ছে কেন? তুই ঠিক আছিস তো?

আদিবা ঘাড়ে হাত দিয়ে কেঁদে দিলো। হেছকি উঠিয়ে বলল,

– ওই কংকাল, ল্যাব, অন্ধকার, দরজা বন্ধ আমি খোলা , ছায়া ছায়া অন্ধকার ছায়া।

আদিবার অগোছালো কথাগুলো বুঝতে না পারলো না অরিন। আদিবাকে শান্ত করে পরে জিজ্ঞাসা করার পর সব বলল আদিবা। সবকিছু শোনে অরিনের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে উঠলো। কি ভয়ংকর মুহূর্ত। জোড়ে জোড়ে আয়াতুল কুরসী পাঠ করে আদিবার গায়ে ফু দিয়ে বলল,

– তাড়াতাড়ি চল। আগে জানলে ভুতের কলেজে কোনোদিন ভর্তি হতাম না। তুই বাসায় গিয়ে আগে গোসল করবি।

– হুম।

___________________

আদুরী ক্রিকেট খেলছে। মাথায় ক্যাপ হাতে বল। তার দৃষ্টি হলো ব্যাট হাতে নিয়ে দাঁড়ানো তুহিনের উপর। এক বলেই তুহিনকে আউট করতে চায় সে। দৌঁড়ে বল ছুঁড়তে আসলেই তুহিন চিৎকার করে বলে উঠলো,

– ওই দাড়া । আমি বলছি কি আমি রেডি? যখন বলব তখন তুই বল ছুঁড়ে দিবি।

ভীষণ বিরক্ত হলো আদুরী। রাগান্বিত স্বরে বলল,

– তোর রেডির গুষ্টির তুষ্টি কিলাই। যখনি আমি তোকে সেরে বাংলা আউট করছে চাচ্ছি তখনি তুই আমার পথে কাঁটা ফেলিস। ভীতুর ডিম। হেরে যাবি বলে আমাকে বিরক্ত করছিস। খেলা পারিস না আবার খেলতে আছিস কেন? শাকচুন্নির ফিউচার জামাই।

তুহিন তখন তার এক হাত কোমড়ে রেখে অন্য হাতে ব্যাট ধরে কঠিন গলায় বলল,

– জানিস, জাতীয় খেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য কতবার অফার পেয়েছি? আমাকে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, অস্ট্রোলিয়া, শ্রীলংকা আরো কতগুলো দেশ থেকে ডাক দিচ্ছে আর বলছে, তুহিন স্যার প্লিজ আমাদের হয়ে খেলুন। আপনি আমাদের দলে থাকলে কোনো চিন্তাই নেই আমাদের।

– এহহ আসছে আমার বিখ্যাত লোক। এতই যেহেতু অফার পাচ্ছিস তো যাচ্ছিস না কেন? ঠকবাজ।

– শোন আমার অনেক মান সম্মান আছে। কেউ বললেই তো আর যেতে পারি না। সো বেশি কথা না বলে শিখ কিভাবে খেলতে হয়।

আদুরী এইবার রেগে বোম হয়ে গেলো। বল দূরে ছুঁড়ে মেরে দুইহাত কোমড়ে রেখে তুহিনের দিকে রাগী গলায় বলল,

– তুই আমাকে খেলা শিখাতে এসেছিস? জানিস আমাদের এলাকায় খেলা মানেই আদুরী। সব কিছুতেই আদুরী এক নাম্বার আর তোর মত বাজে খেলোয়াড় কিনা আমায় খেলা শিখাতে আসছে। আজ এই তোর হাতের ব্যাট দিয়েই তোর পা ভেঙ্গে বিদেশে চালান করে দিবো।

শুরু হয়ে গেলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের যুদ্ধ। পাঁচ বছরের আদুরী আট বছরের তুহিনের ঝগড়া দেখে সবাই দৌঁড়ে এসে এদের ঝগড়া থামালো। কয়েকটি থাপ্পড় পড়লো আদুরী ও তুহিনের পিঠে। থাপ্পড়গুলো ওদের মা-ই দিয়েছে।

বাসায় এসে আদুরী কান্না করছে আর তুহিনের গুষ্টির নাম উদ্ধার করছে। আদুরীকে কান্না করতে দেখে আদিবা বলল,

– কি রে বুড়ি কান্না করছিস কেন?

– আব্বুকে কতবার বলছি বিয়ে দিয়ে দাও। থাকবো না এই বাড়িতে। আম্মু আমায় এক ফোঁটাও ভালোবাসে না।

– ভালো কেন বাসবে? তোকে তো আগেই বলেছি, আব্বু আম্মু তোকে হসপিটাল থেকে কিনে এনেছে। তোর বাবা মা তোকে রেখে পালিয়ে গেছিল তখন আব্বুর ভীষণ কষ্ট হলো।

আদিবার কথা শোনে আদুরী এইবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দিলো। ছোট বোনের কান্না থামানোর জন্য তাকে নিয়ে ঘুরতে যাবার প্ল্যান করলো আদিবা।

চলবে,

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here