দুঃখ_সুখের_পাখি_তুমি,পর্ব ০১,০২

#দুঃখ_সুখের_পাখি_তুমি,পর্ব ০১,০২

(ছোট গল্প)

পর্ব ১.

অফিসে গিয়ে সবার আগে তনু এককাপ লেবু চা খায়। তারপর কাজ শুরু করে। আজকে চা দিতে দেরি করছে দেখে সে নিউজপেপারটা টেনে নিল। পেপার খুললেই শুধু দুর্ঘটনা আর মৃত্যুর খবর। তাই সে খুব সহজে পেপার দেখে না। প্রথম পাতার নিউজটা দেখে কিছুক্ষন ঝিম ধরে বসে রইলো সে। নয়ন চা দিয়ে যেতেই সে পেপারটা সরিয়ে রাখলো। কিন্তু কেমন যেন একটা অস্বস্তি চেপে বসে রইলো আর তারপর শুরু হল মাথাব্যথা। কাজে কিছুতেই মন বসাতে পারলো না। সারাদিন ছটফট করে এইচআর ম্যানেজার স্যারকে বলে বিকেলেই বেরিয়ে পড়লো। রিক্সা ঠিক করতে গিয়ে মনে হল বাজার নেই বাসায়। বাজার করে বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেল তার। রিক্সা থেকে নেমে মাথা তুলে উঁচু বিল্ডিংটা দেখে নিল। পাঁচতলার থাকে সে। পুরাতন বিল্ডিং হবার কারনে কোন লিফ্ট নেই। সিঁড়ি ভেঙ্গে নামতে যদিও তেমন কষ্ট হয়না তবে উঠতে জীবন বেরিয়ে যায়। তবুও বাড়িটা ছাড়তে ইচ্ছা করে না। কতশত স্মৃতি। দারোয়ান কে দেখতে পেল না কোথাও। তাই বাজারের ব্যাগগুলো দুহাতে শক্ত করে ধরে উঠতে শুরু করল। চার তলার সিঁড়িতে এসে দাঁড়াতেই তমালকে নেমে আসতে দেখলো।

-তোর জন্য অনেক্ষন থেকে অপেক্ষা করছি তনু। এত দেরি করে এলি।

তনু ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না যে সত্যিই তমাল কিনা। কিছুক্ষনের জন্য মুর্তির মত দাড়িয়ে পড়েছিল। মা মারা যাবার পর থেকে ঔষধগুলো রেগুলার খাওয়া হয়না। তবে তমালকে নেমে এসে পাশে দাঁড়াতে দেখেই সে তরতর করে বাকি সিঁড়িগুলো উঠে দরজার তালা খুলে ভেতরে ঢুকলো। তমাল ভেতরে আসতেই সে রান্নাঘরে ঢুকে বাজারগুলো রাখলো। জোরে জোর নিশ্বাস নিল আর ছাড়লো। হাত মুখে পানি দিয়ে বসার ঘরে এসে দেখলো তমাল লম্বা হয়ে সোফায় শুয়ে পড়েছে। তনু উল্টো দিকের সোফায় বসে পড়লো।
-বসে পড়লি যে। ফ্রেশ হয়ে রান্না কর কিছু। আমার প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে।
-তুমি এখানে কেন?
-এখানে কেন মানে? তোর সাথে থাকতে এলাম।
-সেটা কি করে সম্ভব?
-সম্ভব না কেন?
-তুমি জান যে আমি একা থাকি আর তারচেয়েও বড় কথা তুমি বিবাহিত এবং তোমার একটা পরিবার আছে।
-এখন এইসব নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। তবে আমি ওদের একেবারে ছেড়ে এসেছি। বাকিটা পরে বলি। তুই খাবার ব্যাবস্থা কর।

ফ্রিজ থেকে ইলিশ মাছের প্যাকেটটা নিয়ে সে রান্না ঘরে এল। একটা চুলায় খিচুড়ি আর অন্যটায় ইলিশ মাছ বসিয়ে দিল চট করে। লবন চেক করল দুবার করে। তার মাথা কাজ করছে না। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে। আবার বসার ঘরে গেলেই দেখতে পাবে কেউ নেই। সারাটা সময় রান্না ঘরে টুল পেতে বসে রইলো। রান্না শেষ করে গোসল করে বসার ঘরে এসে দেখলো তমাল ঘুমিয়ে পড়েছে। ডাকতে কেমন মায়া লাগছে। মনে হচ্ছে কতদিন পর আরাম করে ঘুমাচ্ছে। তবে তার উপস্হিতি টের পেয়েই তমাল উঠে বসলো।
-আমাকে একটা তোয়ালে আর লুঙ্গি বা ট্রাফজার দেয়া যাবে কি?
-তোয়ালে তো দিতেই পারি কিন্তু লুঙ্গি?
-দেখ তারেকের পুরোনো কিছু আছে কিনা। আমি তো কিছু আনিনি। কাল যেয়ে কিনে আনতে হবে। তবে গোসল না করে থাকতে পারছিনা। যা গরম পড়েছে। আমি বাথরুমে ঢুকলাম। তুই দরজায় নক করিস তাহলেই হবে।

তমাল তনুর বেডরুমের দিকে চলে গেল। তনু মায়ের ঘরে এল। আলমারি খুলতেই তারেকের কিছু কাপড় পেয়ে গেল। মার স্বভাব ছিল সব কিছু জমিয়ে রাখা। মা মারা যাবার পর তাই সে কিছু ফেলতে পারেনি। সব কাপড় বের করে খাটের উপর রাখলো। সবই অনেক পুরোনো। তবুও আপাতত কাজ চলবে মনে হয়। একটা টিশার্ট আর ট্রাউজার বেছে রাখলো। ঘরটা গুছানোই থাকে এমনিতেই। আজ হয়তো তাকে এখানেই থাকতে হবে। কাপড়গুলো হাতে নিয়ে নিজের ঘরে এসে বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়ালো। বাথরুমের দরজায় নক করতেই তমাল দরজা অল্প একটু খুলে হাত বাড়িয়ে কাপড়গুলো নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

খাবার টেবিলে দুজন মুখোমুখই বসলো। তনু চুপচাপই খাচ্ছিল।
-তাহলে একাই থাকবি ঠিক করেছিস?
-তো দোকা কই পাবো?
-তারেকের সাথে থাকতি?
-তারেক তো বিয়ে করে কবেই আলাদা হয়ে গেছে। আর মা ছিল এতদিন আমার কাছে। মা মারা যাবার পর এখানেই আছি। অসুবিধা হয়না তেমন। একাই ভাল লাগে। নিজের মত থাকি।
-আমি থাকলে সমস্যা হবে না তো?
-তুমি কেন থাকবে সেটা তো বললে না? ভাবীর সাথে ঝগড়া করেছো? আর তোমার জব পোস্টিং কোথায় এখন? শান্তিমিশনে না গিয়েছিলে? আসলে কবে?
-তোর ভাবীর কথা বাদ দে। জীবনটা ঝালাপালা করে দিল। আর জব ছেড়ে দিয়েছি। নতুন করে জব খুঁজবো। আমার কথার জবাব দে? আমি এসে তোকে ঝামেলায় ফেললাম না তো?
-নাহ। সেসব ঝামেলা তো হতেই থাকে। কত কিছুই তো এতদিন ধরে বলেছেই। নতুন করে যা বলবে তা না হয় শুনলাম।
-যাক ভালই হবে বল। দুজন মিলে খুব ঘুরবো, আড্ডা দিব।
-আপাতত খাওয়া শেষ করে ঘুমাও। অনেক রাত হয়ে গেছে। কাল অফিস আছে আমার।

ঘুম ভাঙ্গতেই বালিশের নীচ থেকে ফোনটা বাহির করে সময়টা দেখতেই অবাক হয়ে গেল তনু। অন্যদিন সাতটার মধ্যে ঘুম ভেঙ্গে যায়। আজ নয়টা বেজে গেছে। পাশের ঘরে উকি দিয়ে দেখলো কমাল তখনও ঘুমিয়ে। নিজে রেডি হয়ে তমালের নাস্তা টেবিলে রেখে সে এল। অফিসে যেয়ে কদিনের ছুটির জন্য আবেদন করেই বাসায় চলে আসবে। আজ তমালের পছন্দের খাবার রান্না করবে। তারপর বিকেলে দুজনে মিলে শপিংয়ে যেতে হবে। তারেকের পুরোনো কাপড়গুলোত্ কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে। আচ্ছা দুজনে মিলে কক্সবাজার বা অন্য কোথাও ঘুরতে গেলে কেমন হয়? দেখা যাক তমাল কি বলে। ওর মত করেই প্ল্যানটা ফিক্স করে ফেলতে হবে।

………………………………………………………………….

সাগর পাড়ে সেই বিকেল থেকে বসে আছে তনু। আকাশে মেঘ করেছে অনেক। তমাল আর সে সূর্যাস্ত দেখবে বলে বেরিয়েছিল। মেঘের কারনে কিছুই দেখা হল না। তবে বেশ ঠান্ডা বাতাস বাইরে। বসে থাকতে ভাল লাগছে অনেক। তার বাবা নিজে ঘুরতে পছন্দ করতেন না আবার তাদেরও কোথায় যেতে দিতেন না। তাই তার কখনও সমুদ্র্ দেখা হয়নি। একদিক থেকে ভালই হয়েছে। বিশাল সমুদ্রের কাছে সে তমালের সাথে আসতে পেরেছে।

অন্ধকার হয়ে গেছে অনেক। তমাল হাটু পানিতে দাড়িয়ে। বড় বড় ঢেউ এসে ধাক্কা মারছে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখন কি জোয়ার নাকি ভাটা? তনু এগিয়ে যায়। সে তো সাঁতার জানে না। তাতে কি তমাল নিশ্চই জানে। না গেলে ও যদি রাগ করে। অনেক্ষন ধরেই তো তাকে ডাকছে। সাগরের পানিতে না ভিজলে নাকি সাগরের কাছে আসাই বৃথা। তনুকে পানিতে নামতে দেখেই তমাল আরও অনেকটা এগিয়ে গেল।

পর্ব ২.

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান বাসার ছাদে হচ্ছে। তাই বাড়ির সবাই ছাদে। চারিদিকে মরিচবাতির আলো থাকলেও বাগানের দিকটা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আছে। তাকালেই ভয় ভয় করছে। তনু হলুদের স্টেজের কাছে চেয়ার টেনে বসল। বাবা যদিও মানা করেছে নাচ গান এইসব কিছু করা যাবে না তবুও মুরব্বিরা সবাই নেমে যেতেই সব কাজিনরা যখন ঠিক করল তারা অল্প সল্প মজা করবে। তনু তো বাবার ভয়েই অস্থির। জানতে পারলে জান শেষ। ছোট চাচা তেমন কিছু বলছে না। নিজের গায়ে হলুদের খাবার দাবার মনের সুখে খেয়ে যাচ্ছে। এমন পেটুকরে বাবা। সবার হইচই এর মাঝেই শুরু হয়ে গেছে। শাড়ী পরে লাফালাফি করা যাবে না। কখন যে খুলে যায় তার নাই ঠিক। তনু ভয়ে ভয়ে নীচে নেমে আসতেই বাড়ির উঠানে একটা ছায়ার মত কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। ভয়ে আয়াতুল কুরশি পড়তে শুরু করেছিল সে, কিন্তু তাকে দেখেই একজন এগিয়ে এল। তনু বুকের কাছে থুতু ছিটিয়ে দিল। তাই দেখে ছেলেটা হাসতে লাগলো।
-ভয় পেয়েছেন?
-জ্বি।
-ভয়ের কিছু নেই।
-কার কাছে এসেছেন?
-মাহবুব স্যারের কাছে।
-আপনি কে?
-আমি তমাল। স্যারের সাথে জব করি।
-চাচু তো ছাদে। সিড়ি দিয়ে উপরে চলে যান। ওখানেই আছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে। ধন্যবাদ অনেক।
তনু নিজের ঘরে চলে এল। শাড়ী পাল্টে স্কার্ট আর টপস পরল। কি করে যে মা সারা দিন শাড়ী পরে থাকে আল্লাহ জানে। ঘর থেকে বেরিয়ে বাবা মায়ের ঘরে উকি দিল। কেউ নেই। গেল কোথায় সব? দুই তলায় বড় চাচার বাসায় মনে হয়। তাহলে তো ছাদের লাফালাফি সব বুঝে ফেলবে। সে পড়িমরি করে ছুটলো ছাদে। সবাইকে নিষেধ করতে হবে।
ছাদে ততক্ষনে সবাই বিশাল লম্ফ জম্ফ শুরু করে দিয়েছে। তবে আনন্দের বিষয় বাবাকে বা বড়চাচাকে দেখা যাচ্ছে না। তনু গিয়ে সবার সাথে যোগ দিল। কিন্তু যে গরম পড়েছে। একটু পরেই সব কিছু বাদ দিয়ে চাচার পাশে বসে পড়ল। এখানেই একমাত্র আরাম করে ফ্যানের বাতাস খেতে পারবে। তমাল চাচার পাশেই বসে আছে।
-তমাল পরিচয় করিয় দেই। এ হচ্ছে আমার সবচেয়ে আদরের ভাস্তি তনু।
-আমি তমাল।
-জ্বি জানি।
-কিভাবে?
-এই মাত্র চাচা আপনার নাম বলল। আর আপনার সাথে একটু আগেই আমার নীচে দেখা হয়েছে।
-নীচে? ও মাই গড। শাড়ী পরে আপনি ছিলেন নাকি? তখন তো এমন পিচ্চি লাগেনি।
-কি বললেন? পিচ্চি?
-সরি। আসলে ওভাবে বলা ঠিক হয়নি।
মাহবুব হো হো করে হেসে উঠলো।
-তুই তো পিচ্চিইরে। পড়িস ক্লাস নাইনে।
-জ্বি না চাচু আমি ক্লাস টেনে পড়ি। সামনের বছর এসএসসি দেব।
-ওহ্ তাহলে তো আপনি অনেক বড়।
তমাল সিরিয়াস ভাবে এই কথা বলতেই মাহবুব বাড়ি কাঁপিয়ে হাসতে শুরু করলো। যারা এতক্ষন লাফালাফি করছিল তারও সেই সব রেখে আঁশে পাশে ভীড় করতে লাগলো। সবাই জানতে চায় কি হয়েছে।
তমা এসে তনুকে টেনে নিয়ে গেল।
-কি হয়েছে রে?
-কিছু না। দুজন মিলে আমাকে পিচ্চি বলে ক্ষেপাচ্ছে।
-কে রে ছেলেটা?
-চাচুর কলিগ। তবে জুনিয়র মনে হয়। স্যার বলছিল।
-দেখতে কিন্তু সেই। আমার সাথে কেমন মানাবে বলতো?
-কি যে বলো তমাপা। চেন না জান না।
-চিনে নেব। নিশ্চই চাচুর সাথে খুব ভাল সম্পর্ক কি বলিস? বাকি বন্ধু আর কলিগ যারা এসেছে তারা তো এসেছে ফ্যামিলী নিয়ে। তার মানে ইনি সিঙ্গেল।
-তোমার মাথা পুরো নষ্ট। দেখতে না দেখতেই কত কিছু ভেবে ফেললে।
-আরে দেখেই তো ভাল লেগে গেল।
-তাহলে আর কি? যাও গিয়ে মনের কথা বলে ফেল।
-ধুর পাগল। এত তাড়ার কিছু তো নাই। নিশ্চই কদিন থাকবে?
-তা আমি কি করে বলবো?
-বাদ দাও আপা। সবাই মজা করে গল্প করছে এখন। চল গিয়ে বসি।
-আচ্ছা চল।

গল্পের আসব ভাঙ্গতে বেশ রাত হয়ে গেল। সবাই যে যার মত ধুপধাপ করে নেমে যেতে শুরু করলো। তনুও যাচ্ছিল। মাহবুব তাকে ডাকলো।
-তনু তমালকে তোদের বাসায় নিয়ে যা। তারেককে বলে রেখেছি। ও তারেকের সাথে থাকবে। আর ওর কিছু লাগবে কিনা দেখিস।
-আচ্ছা চাচু।
-তমাল।
ডাক শুনে তমাল উঠে এল।
-ওর সাথে যাও।
-আমি না হয়ে রেস্ট হাফেজ চলে যেতাম। সবাই তো সেখানেই আছে।
-আরে ওরা তো সবাই ফ্যামিলী ম্যান। তুমি ওদের সাথে কি করবে। এদের সাথে মজা কর।
তমাল তনুর সাথে নেমে এল।
-আপনি এখানে একটু দাঁড়াবেন কি? আমি তাহলে গাড়ি থেকে আমার লাগেজটা নিয়ে আসতাম।
-এখনও মজা করছেন?
-না তো?
-তাহলে আপনি বলছেন কেন?
তমাল মুচকি হেসে বলে,
-আপনি বড় বলে।
তনু রেগে লাল হয়ে গেলেও কিছু বলল না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। তমাল গাড়ি যেদিকে রেখেছে সেদিকে এগিয়ে গেল।

………………………………………………………….

কবে তুমি গেয়েছিলে, আঁখির পানে চেয়েছিলে
ভুলে গিয়েছি…..
শুধু মনের মধ্যে জেগে আছে ওই নয়নের তারা….

বিয়ে বাড়ি থেকে আসার পর থেক তনুর মাথায় এই দুই লাইন ঘুরঘুর করছে। চোখ বন্ধ করলেই সে ঝকঝকে ওই চোখের দৃষ্টি এমনিতেই দেখতে পাচ্ছে। দুই একবার তার সাথে চোখাচোখি হয়েছিল তমালের। তাতেই তনুর মনে হয়েছে তার মনের মধ্যে সব ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। সে পালিয়ে এসেছিল। আর আশেপাশেই যায়নি তার। দূর থেকে লক্ষ্য করছিল অবশ্য। সবাই বর বউয়ের ঘরে আড্ডা দিচ্ছে এখন। তনু যেতে পারছে না।
-কিরে অসময়ে শুয়ে আছিস কেন?
তমার কথায় তনু বিছানায় উঠে বসে।
-গরমে ভাল লাগছিল না। সারাদিন কম ধকল তো গেলনা?
-তাই বলে এমন মজার সময়ে এখানে বসে থাকবি। উপরে চাচী আর চাচুকে নিয়ে কত মজা করছে সবাই।
-তুমি যাও তো আপা। আমি পরে আসবো।
-তাড়াতাড়ি আয়। চাচুও তোর খোঁজ করেছে।
-তুমি যাও আমি আসছি।

তমা চলে যেতেই তনু উঠলো। ভারী লেহঙ্গা পাল্টে সাদা চিকেনের চুড়িদার পরে নিল। তমালও আজ সাদা পান্জাবী পায়জামা পরেছিল। খুব সাধারণ পোশাকে যে কাউকে এত সুন্দর লাগতে পারে তা তনু কল্পনাও করতে পারেনি। ঘর থেকে বের হতেই তারেকের ঘরে মানুষের উপস্থিতি টের পেল। চোর নয় তো? নাকি তারেক নিজে? সে কি চিৎকার করবে? বাসার আর লোকজন কই। সে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা ধুম করে খুলে ফেলল। তমাল বিছানায় বসে তার লাগেজ গুছাচ্ছে। তনু ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলল।
-আপনি?
-তবে কি ভূত ভেবেছিল কালকের মত?
-না। চোর ভেবেছিলাম। আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
-আমি তো আজ চলে যাব।
-চলে যাবেন কেন?
-পনের দিনের ছুটি নিয়েছি। এখানেই তো দুই দিন চলে গেল।
-কিন্ত বৌভাতের অনুষ্টান তো এখনও বাকি?
-ওরে বাবা সে তো আরও একদিন পরে। স্যার অনেক বার বলেছিলেন বলে এসেছিলাম।
-এখন তো আমি থাকতে বলছি।
তমাল তার দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হল আবার। সে চোখ নামিয়ে নিল। লাগেজ নিয়ে সে উঠে দাঁড়ালো।
-স্যারকে বলে এসেছি। ভালই হল তোমার সাথে দেখা হয়ে। উপরে যাও সবাই অনেক মজা করছে। তোমাদের সবার সাথে পরিচিত হয়ে আমার আসলেই খুব ভাল লেগেছে।
-আপনার সাথে যোগাযোগ করবো কিভাবে?
-যোগাযোগের দরকার আছে কি? আমার মনে হয়ে নেই।
তনু বেরিয়ে এল হনহন করে। পেছনে পেছনে তমাল। বাড়ির বড়রা সবাই উঠানে বসে ছিল। তমাল তাদের কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেল। তনু উপরে না গিয়ে নিজের ঘরে এসে বসলো। এমন নিষ্ঠুর মানুষও হয় নাকি?

আগামী পর্বে সমাপ্ত……

এমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here