#দহন
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০৮
” কি ব্যাপার নানুভাই চোখের পানি আড়াল করলে হবে। আমি তোমার স্পষ্ট চোখের পানি দেখলাম। তুমি কি পারতা না নীলপাখিকে এই বিয়ে থেকে আটকাইতে। ”
” না, নানুভাই! নীলপাখি আমাকে ক্ষমা করে নাই। আসলেই আমি ক্ষমার অযোগ্য কাজ করছি। কিন্তু নানুভাই আমি এতকিছু ভেবে করিনাই। ”
” হ্যা নানুভাই এইখানে শুধু তোমার দোষ নয়। তোমার মামারো দোষ আছে। তোমার মামা সবসময় হুট করেই সিদ্ধান্ত নেয়। যেমন আজকের নীলার বিয়েটা। ”
” থাক নানুভাই! নিয়তি আমার সঙ্গে নেই! অন্যের দোষ খুঁজে কি করবো। ”
এমন সময় পিছন থেকে সাফা আকাশকে ডাক দেয় বাবা, আমি চিপস খাবো। চিপস কিনে দাও।
” নানুভাই থাকো! চল সাফা মা। ”
_____
নীলা বেশ অবাক। কারণ এর আগে এইরকম শান্ত আকাশকে ও দেখে নাই। আকাশ কি তাহলে সবকিছু ভূলে মেনে নিলো, আমার এই বিয়েটা।
” ধ্রুব বললো কি ব্যাপার নীলা তোমার রুপবান জামাইকে একবারো দেখলা না। তোমার কি এই বিয়েতে মত নেই? ”
” নীলা এবার ধ্রুবর মুখ দেখে বলে। ভাই আপনি বড্ড গায়ে পড়া। আপনি বুঝেন না ক্যান। মেয়েরা ছেলেদের রুপের প্রেমে পড়েনা ব্যাক্তিত্বের প্রেমে পড়ে। রুপের প্রেমে পড়াতো ছেলেদের কাজ। ”
” ওয়াও! বউ কথা বলছে। আমাকে যদি একবার চিনে নেন। কখনো হাত ছাড়তে চাইবেন না। প্রেমেতো আপনি পড়বেন। ”
” নীলা ধ্রুবর আত্তবিশ্বাসী মুখ দেখে ফিক করে হেসে দেয়। আশেপাশে অনেক লোক আছে আমাকে হাসাবেন না। দয়া করে চুপ থাকুন এবার। ”
ধ্রুব মুখে আঙুল দেখিয়ে বলে চুপ।
আকাশ এসে এই দৃশ্য দেখে শুধু চোখের পানি ফেলে। আকাশ মনে মনে বলে বাহ নীলা বাহ। তুমি কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি পারলা আরেকজনকে মন দিতে।
বৃষ্টি আকাশের হাতে টিস্যু দেয়___
” বলেছিলাম আসার দরকার নেই। এইখানে এসে এইভাবে চোখের পানি ফেললে হবে আকাশ। ”
” চোখ যে বারণ শুনতেছে না। নীলার সাথে আজকে আমি থাকার কথা ছিলাম। কিন্তু নিয়তি আজ আমার সাথে নেই। কেউ আমাকে বুঝলো না বৃষ্টি। ”
” নিজের মনকে শক্ত করেন। খালাম্মা কেনো নীলাকে আপনার সাথে মেনে নিলোনা। একবারো সেই প্রশ্ন আপনি বা নীলা খালাম্মাকে করছেন?”
” করে আর কিবা হবে? নীলা তো অন্য কারো হয়ে যাবে আজকের পর থেকে। এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বড়ই বৃথা বৃষ্টি। আম্মু এমনিতেও এসব কিছু আমার সাথে শেয়ার করবে না। মরিচীকার পিছনে দৌড়ে লাভ কি? ”
” বুদ্ধি থাকলে সবকিছু হতো আকাশ। প্রশ্নটা যে খালাম্মাকেই করতে হবে তা কোনো কথা নয়। এই প্রশ্নের উত্তর তোমার নানুভাই ও জানে সম্ভবত। চারবছর আগে তুমি যে ভূল করেছিলে, নীলা আজকে সেই ভূলের মাশুল ডাবল ভাবে গুজে দিচ্ছে। ”
” বাদ দাও! নীলার জন্য দোয়া করি। ও খুব সুখি হোক। আমার সাথে কখনোই মনে হয়না সুখী থাকতো। দেখছো না ধ্রুবর সাথে কিভাবে হাসতেছে। সারাজীবন দূর থেকে ভালোবাসার মানুষের হাসিমুখ দেখার অনুভূতি টা একটু অন্যরকম। তার হাসিমুখ আমাকে প্রশান্তি এনে দেয়।
______
সকলের খাওয়া দাওয়া শেষ। নীলা দেখলো আকাশ ও তার ফুপি সত্যি সত্যি তার বিয়েতে কবজি ডুবিয়ে খেলো। নীলা মনে মনে ভেবে নিলো এরা আসলেই নির্লজ্জ। এক্সের বিয়েতে এসে এই প্রথম কাউকে দেখলাম হ্যাবলার মতো খেতে।
” আকাশ ও নীলাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেলো। ”
খাওয়া দাওয়া শেষে ধ্রব নীলার হাত ধরে স্টেজে উঠলো। কারণ কাজীসাহেব এখন বিয়ে পড়াবে।
” নীলা নিজেকে স্বাভাবিক করলো। এরপরে ধ্রুবকে বললো আর কখনো আমার হাত এভাবে ধরবেন না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে, গিল্টি ফিল হয়। ”
” ধ্রুব নীলার মুখ দেখে বলে এতো খারাপ লাগছে আমার স্পর্শ। কিন্তু বিয়ের পরতো এই স্পর্শ সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে নীলা। আপনি কি আদৌও আমাকে সুখী করতে পারবেন? বিয়েটা কি আপনার অমতে হচ্ছে নীলা? ”
” এই প্রশ্ন শুনে নীলা চুপ করে থাকে। আড়চোখে ধ্রুবকে দেখে মনেমনে বলে ধ্রুব কি বুঝে গেলো? ”
এমন সময় কাজী সাহেব আসে আক্কদ পড়াতে আসে ___
” আপনার রেডি আসেন আমি আক্কদ পড়াবো প্রথমে ছেলেকে কবুল বলতে হবে। ”
” দুজনেই মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।”
আকাশ সামনের চেয়ারে বসে আছে। পাশে বৃষ্টি ও রেহেনা। দিলারা খান রুমে যেয়ে কান্নাকাটি করছে তার একমাত্র মেয়ে আজ বাড়ি থেকে বিদায় নিবে বলে। দাদুভাই মন খারাপ করে ছাঁদে চলে গেছে। তার দুই নাতী নাতনীকে এক করতো পারলো না ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আমজাদ ও আশফাকুল চারদিকের পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছিলো।
” ধ্রুব তিনবার বললো কবুল! ”
এইবার কাজী সাহেব নীলাকে বললো __
” হাজিরান মজলিশে ১০,৭৫, ৫০১ টাকা দেন মোহর ধার্য্য করিয়া নগদ গহনা বাবদ ৬,০০,৫০১ টাকা বুঝিয়া পাইয়া, অবশিষ্ট টাকা বাকি রাখিয়া চট্টগ্রাম জেলার সদর থানার ফুলপুর নিবাসী আবুল সরকারের প্রথম ছেলে মোঃ- ধ্রব হোসেনের সাথে আমি উকিল নিযুক্ত হইয়া তোমার সহিত বিবাহ দিলাম | বলুন আলহামদুলিল্লাহ, কবুল | ”
” নীলা চুপ করে রয় রোবটের মতো। সামনে থাকা মানুষ টাকে বারবার দেখে। আকাশ শুধু নীলার মুখ পানে চেয়ে রয়েছে। নীলা কবুল বলছে না দেখে নীলার সব কাজিনরা নীলাকে গুতো মেরে বলছিলো কবুল বল। নীলার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো নীলার চোখের পানিতে। সামনে থাকা মানুষটার সামনে আরেকটা মানুষকে কিভাবে কবুল বলে স্বীকার করি। ”
” কাজী সাহেব আবারো বললো বলো মা কবুল। ”
ধ্রুব শুধু নীলার মুখপানে চেয়ে রইলো। ধ্রুব মনে মনে ভাবলো কোন জায়গায় বিয়ে করতে আসলাম শেষে না অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। ধ্রুব করুণমুখ করে নীলার দিকে বসে আছে।
” নীলা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। অনবরত চোখের পানি ফেলতেছিলো। সামনে বসে থাকা মানুষ টাও চোখের পানি বারবার টিস্যু দিয়ে মুছছিলো। নীলা মনে মনে বললো আকাশ তোমার নীলা অন্য কারো হওয়ার আগে আমাকে জোড় করো। তুমি এইরকম শান্ত কেনো আজকে। সারাজীবন দুঃখ বয়ে বেড়ানোর চেয়ে সাময়িক রাগ একটা সময়ের পর উচ্ছেদ হবে। কিন্তু আকাশ শান্ত।
” কাজী সাহেব এবার রেগে যেয়ে বলে মা কবুল বলো। আপনি কি ধ্রুবকে বিয়ে করতে চাইতেছেন না। ”
” ধ্রুব আর এভাবে অপমান নিতে পারতেছেনা, তাই সে উঠার প্রস্তুতি নিলো। ”
” কবুল ( কান্নাজড়িত আবেগ কন্ঠে) ”
ধ্রুব নিজ কানকে বিশ্বাস করতে পারতেছিলো না নীলা কবুল বলেছে। আকাশ শুধু নীলার দিকে চেয়ে রইছে। নীলা পরপর তিনবার কবুল বলে ফেললো।
” কাজী সাহেব বললো আজ থেকে আপনারা দুজন স্বামী স্ত্রী দুজনেই একে অপরের পরিপূরক। ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক আপনাদের বিয়ে হয়ে গেলো। আপনাদের মনে রাখতে হবে বিয়ে মানেই নতুন জীবন,নতুন সঙ্গী,নতুন সম্পর্ক তাই আপনাকে নতুন জীবনে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রবেশ করতে হবে| ”
” ধ্রুব বললো আলহামদুলিল্লাহ এবার সরকারি নিয়মে বিয়েটা হোক। এরপরে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হলো। ”
” বৃষ্টি আকাশকে ধাক্কা দিলো। আকাশ সাথে সাথে ফ্লোরে পড়ে গেলো। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। রেহেনা বেগম দৌড়ে ছেলের কাছে আসলো। নীলা ধ্রুবর পাশে ছটফট করতে লাগলো। ”
” কি হয়েছে নীলা ছটফট করছেন ক্যান। হয়তো মাথা ঘোরে পড়ে গেছে আপনার কাজিন। পানি ঢাললেই জ্ঞান ফিরবে। ”
” নীলা করুণ মুখে সামনের দিকে কি ঘটতেছিলো দেখছিলো। এই অবস্থা আকাশের শুধু ওর জন্য তবুও একবার সামনে যেতে পারলো না । ”
” আমজাদ সাহেব অ্যাম্বুুলেন্স ডাক দিয়ে আকাশকে হসপিটালে নিয়ে গেলো। ”
পরে বিয়ে বাড়ির সবাই জানতে পারলো আকাশ ঘুমের ঔষধ সেবন করছে।
ধ্রুব সরকার তার শশুড়কে বললো __
” বাবা আমাদের বাড়ির লোক আজকে চলে যাক। এই অবস্থায় নীলা কে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবেনা।
চলবে,,,,
[কি যেনো একটা সমস্যা হইছে তার জন্য
পেজে গল্প পোস্ট করা যাচ্ছে না, তাই গ্রুপে পোস্ট করতে হচ্ছে ]