#দহন
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_০৭
” তুমি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলছো, এই বিয়ে তুমি সত্যি করবে? ”
” হ্যা করবো, আপনি যদি চারবছর আগে আপনার মায়ের জন্য সম্পর্ক ভাঙ্গতে পারেন। তাহলে চারবছর পর সেই সম্পর্ক জোড়া লাগানোর মানে হয়না। হুম আমি ধ্রুবকেই বিয়ে করবো। ”
” বেশ ভালো কথা, আজকে তোমার বিয়ে। আমি দোয়া করি তুমি অনেক সুখী হও। ”
” জীবন কারো জন্য থেমে থাকেনা। দ্রুত শূন্যস্থান পূরণ করুন। ”
” তোমাকে আর বলতে হবেনা। আমি যে ভূল করেছি। সেই ভূলের মাশুল, আমি সারাজীবন একা কাটাবো। আমার জন্য এখন আমার সাফা আছে। ”
” সাফা তো অন্য কারো মেয়ে। তাছাড়া বৃষ্টির একটা প্রটেকশন লাইফ দরকার। ”
” তুমি নিজে বিয়ে করো বৃষ্টির জন্য না ভাবলেও চলবে। তাছাড়া জোড় করে ভালোবাসা আদায় করা যায়না। আসি নীলা ভালো থেকো। লাইফে সর্বদা ভালো থেকো। ”
আকাশ চলে যায়। নীলা চোখের পানি টিস্যু দিয়ে মুছে পিছন ফিরে তাকায়। আকাশের দিকে চেয়ে বলে আমি কি ঠিক করছি। আকাশ যে ভূল চারবছর আগে করেছে। আমিয়ো সেইম ভূল করছি নাতো। হঠাৎ করে নীলার ফোন বেজে উঠে।
” হ্যালো আম্মা ”
” এই নীলা তুই কোথায়? তোর বাবা তোকে খুঁজছে? আজকে তোর বিয়ে। অনেক কাজ বাড়িতে। তোর মামাতো, খালাতো ভাইবোন, সকল আত্মীয় স্বজন বাড়িতে ভরপুর। যেখানে আসিস দ্রুত আয়। বিউটি পার্লারে যেতে হবে আবার। ”
” হ্যা আম্মা এতো কিছু বলতে হবেনা আমি যাচ্ছি।
____________
” মা বিয়ে বাড়িতে যাবা না। বাবা তো অনেক আগেই গেছে। তুমি যাবানা? ”
” না, যাবোনা। তোকেও বিয়ে দিয়ে ওদেরকে দেখিয়ে দিবো? ”
” ধুর মা বাদ দাওতো, এই সমাজ জানে আমি বিবাহিত। সাফা আমার একমাত্র মেয়ে। তাহলে সমাজের চোখের পট্টি খোলার কি দরকার। ”
” আমরা সবাই জানি তুই এখনো সিঙ্গেল। তোকে এইভাবে দেখতে পারবো না আকাশ? ”
” বিয়ের করার ইচ্ছে আর নেই মা। অবান্তর টপিক নিয়ে আলোচনা করছি। তোমার ভাই মানে আমার মামা আমাদের সবাইকে দাওয়াত করছে। চলো কবজি ডুবিয়ে খেয়ে নিই। ”
” এতো অপমানের পর তুই ওই বাড়িতে যেতে চাচ্ছিস। ”
” অপমান কই মা। আমার এসব পাওনা ছিলো। তাই বলে বিয়ে খাবোনা। চলো মা তোমাকেও যেতে হবে। মামাবাড়িতে তো আর জীবনে যেতে পারবো না। শেষবারের মতো মামাবাড়ি খেয়ে আসি। ”
” ভালো হও আকাশ। আমি ওখানে যেতে পারবো না। আমি জানি তোর কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তুই জেনে রাখ এটা তোর শাস্তি না। একজন চিটারের মেয়ের শাস্তি হচ্ছে। ”
” মা আমি এতো কিছু শুনতে চাইনা! বৃষ্টি আর সাফা রেডি হয়েছে। এখন তুমি বলো যাবা কিনা? ”
” আমি যাবোনা! আর তোদের কোথায় যেতে দিবোনা। ”
” মা তুমি কি চাও মামা তোমাকে ক্ষেপাক। এখন আমরা যদি তার একমাত্র মেয়ের বিয়েতে না যাই তাহলে সে প্রতিদিন আমাদের নিয়ে হাস্য _ তামাশা করবে। উপহাসের মুখে যেতে না চাইলে চলো। আমাদের তো দেখাতে হবে আমরা এই বিয়েতে অনেক খুশি! ”
” হুম তাতো ভেবে দেখি নাই! আচ্ছা বের হচ্ছি দ্বারা। ”
________
নীলাকে বিউটিপার্লারে নিয়ে বধূ সাজিয়ে এনেছে সাদিয়া ও জাকিয়া সুলতানা। ছোট থেকেই নীলার কাছের দুজন কাজিন এরা। তাছাড়া একই ব্যাচমেট একজন মামাতো বোন, একজন খালাতো বোন। নীলার মন খারাপ দেখে, সাদিয়া উৎসাহ দেয়।
” আল্লাহ যা করে মঙ্গলের জন্য করে। হয়তো তোর কপালে আকাশ নয় ধ্রুবই লেখা আছে। ”
” সাদিয়া আকাশ আমাকে সত্যি ভালোবাসে রে। সেইদিন ও ফুপির জন্য এরকম করছে। আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। সবকিছুর ব্যাখা দিয়েছে। আজকে তার সাথে কথা বলে দেখলাম সে অনেক শান্ত। তার শান্ত মন আমাকে পুড়ে পুড়ে খাচ্ছে। আমি কি ঠিক করছি? ”
” বাদ দে যে মানুষ ভালোবাসার মানুষকে প্রটেট করতে পারেনা। সবার সামনে হেনস্তা করে সে আর যাই করুক ভালোবাসতে পারেনা। ”
” কিন্তু আজকে যে আমি বিয়ে করছি, বাবার মুখ দেখেই করছি। বাবার অপমানিত স্থানে মলম লাগানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস করছি। এখন বুঝতে পারছি আকাশ কেনো এরকম করেছে। যে মা আমাদের দশ মাস দশ দিন পেটে রাখে তার কথা শোনা একপ্রকার বাধ্যবোধকর্তা। সে সম্ভবত ভেবেছিলো এতোকিছু হবেনা পরে ম্যানেজ করবে। কিন্তু পরিস্থিতি হয়তো আমাদের সাথে ছিলো না। ”
” তো এখন কি করবি নীলা? যা বুঝলাম এই বিয়েতে তোর মত নেই। সবটাই ফুপার জন্য করছিস? একবার ভেবে দেখেছিস বিয়ে হলো সারাজীবনের বন্ধন। যার সাথে তুই মৃত্যু অব্দি পথ হাটবি তাকে ভেবেই বিয়ে করা উচিত। এইখানে কিন্তু ধ্রুবোর কোনো দোষ নেই। এখনো সময় আছে কি করবি ভেবে দেখ। ”
” দোটানায় পড়ছি সাদিয়া। একদিকে ভালোবাসা, আরেকদিকে বাবার সম্মান। ”
” কিন্তু তুই একবারো ভেবে দেখিছিস? তুই কিন্তু আকাশের আম্মার পছন্দমতো মেয়ে না। তুই যদি আকাশকে এখন বিয়ে করতে চাস, তাহলে আকাশকে তার মায়ের বিরুদ্ধে যেতে হবে। ভালোবাসার চেয়ে কষ্ট বেশি ওখানে? কারণ এক ছেলেকে তার মায়ের কাছ থেকে আলাদা করছিস? ”
” এটা ভেবে দেখি নাই সাদিয়া। ধন্যবাদ তোকে যেই দহনে ০৪ বছর পুড়েছি। সেই দহন আর বাড়াতে চাইনা। তুই আমার চোখ খুলে দিলি। কিন্তু আমি এখনো বুঝলাম না ফুপি কেনো আমার সাথে এরকম করলো। আমিতো ওনার পছন্দের ছিলাম তাহলে? ”
” এমন অনেক প্রশ্ন আছে, তুই উত্তর খুঁজে পাবিনা। তাই বেকার এই প্রশ্ন গুলো নিয়ে মাথা ঘামাস না। এগুলা সব বড়রাই জানে। ”
” ঠিক বলেছিস! সাদিয়া আমি আবার কানাডা চলে যাচ্ছি। ধ্রুবকে আমি ঠকাতে পারবো না। আমি আকাশকে মৃত্যু পযর্ন্ত ভালোবাসবো। ধ্রুব আমার মাঝে এসে সাফার করুক আমি তা চাইনা। ”
” পাগলী একটা, সবসময় মাথা গরম সিদ্ধান্ত নিস। এই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত টা তোর ছিলো। ফুপাকে একবার না করলে ফুপা কি তোকে বিয়ে দিতে পারতো। জীবন মানুষকে একবার সুযোগ দেয়। তুই যদি বিয়ে রেখে আবার কানাডা যাস। তাহলে ফুপার অপমান দ্বিগুণ হবে। তুই কি ফুপাকে অপমান করার জন্য এই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিছিলি। এরপরে তোর এই মুখ ফুপাকে দেখাবি কি করে?”
” সাদিয়া আমি আর সইতে পারছি না যত ভাবছি, তত মরছি। ”
” ভাবিস না এতো ”
এমন সময় জাকিয়া সুলতানা এসে বলে__
” তোরা গল্প করছিস বর চলে এসেছে। এই নীলা তোর কপাল খুবই ভালো। ধ্রুব ভাইয়াও সেই হ্যান্ডস্যাম রে শ্রুভ শেরোয়ানিতে তাকে লাগছে পাকিস্তানের ক্রিকেটার বাবর আজমের মতো। ঘনকালো চাপদাড়ি, কপালের আইব্রুতে একটা তীল। মায়ার ভরা এক জোড়া চোখ। যেই চোখ দিয়ে তোকে গিলে ফেলবে নীলা। তুই ধ্রুব ভাইয়ার চোখেই ঘায়েল হবি ”
” সাদিয়া জাকিয়ার বর্ণনা শুনে উত্তেজিত হয়ে বলে কি বলছিস? তোর বর্ণনাতো একবারে আমার স্বপ্নের জামাই বাবর আজমের মতো। আমিয়ো তাকে দেখতে চাই। ”
” হ্যা হ্যা নীলাকে নিয়ে চল। ”
” তোদের দুজনের মধ্যে কেউ ওই ধ্রুবকে বিয়ে করে নে। আমাকে আর যেতে বলিস না। নতুন করে কারো জন্য আমার আর প্রেম পায়না। ”
” কি বোরিং রে নীলা তুই পাস্টের কথা বাদ দে। আজকে বিয়ে হলে ও তোর জামাই হয়ে যাবে। হবুজামাইকে নিয়ে জেলাস হ! ”
” আগেতো বিয়ে টা হোক। ”
” কি বলছিস নীলা যারজন্য গায়ে হলুদ মাখলি তাকে নিয়ে এই কথা মানায় না। চল ধ্রুব ভাই নির্ধারিত আসনে আসীন হয়েছে তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য খালু আমাকে পাঠালো। এই সাদিয়া চলতো নীলাকে নিয়ে। ”
” কেনো রে আমরা কেনো নিবো? ভাবীর কি অভাব আছে আমাদের? তাদের ডেকে নিয়ে আয়। ”
___________
নীলাকে নিয়ে ধ্রুবর পাশে বসালো। নীলা ধ্রুবর পাশে বসে গিল্টি ফিল করছিলো। ধ্রুব ব্যাপারটা আড়চোখে দেখে নীলাকে বলে__
” বিয়েই তো হবে আমাদের।প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। আজকের পর থেকে সারাজীবন এভাবে পাশে বসে থাকবো। খুব জ্বালাতন করবো আপনাকে। ”
” নীলা মনে মনে বলে জাকির বাচ্চা খাকি। এই তোদের হিরো আলম বিয়ের আগেই কতো এক্সপেক্ট রাখছে। মনটা চাচ্ছে বেডার মাথায় এক্ষুনি একটা কষে দিই। ”
” বীরবীর করা স্বভাব আছে নাকি আপনার। বীড়বীড় না করে বলতে পারেন। আমাকে কি বিয়ের আগে কখনো ছবিতে দেখেছেন। নাকি না দেখেই আমাকে বিয়ে করতেছেন। ”
” সরি! আমি পরপুরুষের মুখ দেখিনা। ”
” আজকের পর থেকে তো পরপুরুষ থাকবো না। বাই দ্যা ওয়ে আমি কিন্তু আপনাকে দেখেছি। ভীষণ ভালো লেগেছে আপনাকে। এমন বউ সত্যি আমি ডির্জাব করি। ঘোমটা টা একবার খুলবেন। ”
” হায়! আল্লাহ কোন নির্লজ্জের সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে। ”
নীলার এই কথা শোনে ধ্রুব ঘোমটা ফেলে দিয়ে নীলাকে এক পলক দেখে।
” উফফ! ছবির চেয়ে বাস্তবে আপনি ডানাকাটা পরী নীলা। ”
” নীলা এবার চোখ খোলে। চোখ খুলেই সামনে আকাশকে দেখতে পায়। আকাশের দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। ”
” ধ্রুব বলে কাকে দেখছেন। আপনার হিরোকে না দেখে ভিলেনদের দেখলে হবে? ”
নীলা এবার বলে উঠে ___
” নিজেকে হিরো দাবি করলেই হিরো হওয়া যায়না। আমার গল্পে আপনি ভিলেন। এই কথাটা আকাশের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখেই বলে। ”
” উফফ! একবার তো দেখেন আমাকে। ভিলেন লাগবে না আমাকে হিরো লাগবে। প্রেম পাবে আপনার। ”
আকাশ নিজেকে কন্ট্রোল করে নিছে। এক্সের বিয়েতে এসে সবার সাথে স্বাভাবিকলি কুশল বিনিময় করছে। কেউ দেখে ভাববে না আকাশ ব্রোকেন।
” আমি কি ঠিক দেখছি। আকাশ এভাবে নিজেকে মানিয়ে নিলো? আমি তাহলে বিয়েটা করে কোনো ভূল করছি না। আকাশ কি সত্যিই আমাকে ভালোবেসেছে। ”
” এমন সময় ধ্রবর কাছে এসে বলে হাই ধ্রুব আমি আকাশ! নীলার কাজিন। ”
” হাই! আমি ধ্রুব। আপনার কাজিনের জামাই। ”
এই কথা শুনে আকাশ নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে। নীলা সেইদিকে ভালোই খেয়াল করে। আকাশ আবারো নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে। তোমরা দুইজন ভালো করে দাড়াও। আমার ক্যামেরা দিয়ে সুন্দর কাপল পিক তুলে দেই। বিয়ের পর এই ছবি বের করে ফ্রেম লাগিয়ে বেডরুমে রাখবেন।
ধ্রুব নীলার কাছাকাছি আসে। সুন্দর করে নীলার হাত ধরে। নীলা আড়চোখে শুধু আকাশের দিকেই তাকিয়ে আছে আকাশ এসব কি করছে? আকাশ সুন্দর করে দুইটা ছবি তুলে দিয়ে চোখের পানি টপটপ করে গাল বেয়ে পড়ে। নীলা ব্যাপারটা খেয়াল করার আগেই আকাশ সেইখান থেকে চলে যায়।
চলবে,,,,
[ বিয়েটা কার সাথে হবে, আকাশের কষ্টে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে ]