তোর_মনের_অরণ্যে,৪,৫

তোর_মনের_অরণ্যে,৪,৫
সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৪.
ইউনিভার্সিটির গেট দিয়ে আমন ব্ল্যাক স্পোর্টস কার নিয়ে ভিতরে ঢোকার আগেই ফুল স্প্রিডেই চোখের নিমেষে একটা ব্ল্যাক আর ওয়ান ফাইভ ভিতরে ঢুকে যায় পাশ কাটিয়ে। আমন তীক্ষ্ণ চোখে সামনে তাকিয়ে থাকে। বাইক আরোহী ও পুরো ফুল ব্ল্যাক ড্রেসআপে আছে মেয়ে না ছেলে সেটা বোঝা যাচ্ছে না । তাকে এই ভাবে পাশ কাটিয়ে ঢুকছে তাও এই ভাবে ড্রাইভ করে। আমন এর সাথে ক্যাম্পাসে থাকা সব স্টুডেন্ট গুলো ও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তাদের সবার মনে একটাই প্রশ্ন কে এই বাইক আরোহী। তারা একবার গেট এর মুখে দাঁড়িয়ে থাকা আমন স্যার এর গাড়ি দেখছে আর একবার এই মাত্র ভিতরে ঢোকা বাইক টা কে দেখছে ।কে এই আরোহী?

সু বাইক নিয়ে ইউনিভার্সিটির ভিতরে ঢুকে পার্কিং লটে গিয়ে বাইক থামিয়ে মাথায় থেকে হেলমেট খোলে সাথে সাথে ছাড়িয়ে পড়ে এক ঢাল চুল। সু হেলমেট টা কে বাইক এর উপর রেখে হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে নিয়ে বাইক পার্ক করে নেমে দাঁড়ায়। চার পাশে একবার চোখ বুলিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়। এদিকে আমন এর তো চোখ রাগ আর অবাক হয়ে গেছে সু কে অস্পষ্ট ভাবে তার মুখ দিয়েই বেরিয়ে আসে।

-“ধানী লঙ্কা। উফ এই মেয়ে এখানে কি করছে?

ক্যাম্পাসে সবাই এখন সু কে দেখে যাচ্ছে । সু গ্রাউন্ড আসতে কয়েক জন ছেলে মেয়ে এসে সু এর সামনে দাঁড়িয়ে যায়। সু একবার তার সামনে দাঁড়ানো সবাই কে দেখে নিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে যায় ওদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ।

-“এই ইউনিভার্সিটি তে নিউ নাকি বেবি ? ওদের মধ্যে রাজ বলে একজন ছেলে বলে ওঠে।

-” আরে বাহ এন্ট্রি তো দারুণ নিয়েছ তো এখন এমন চুপ হয়ে গেলে কেনো? রিনি বলে এক মেয়ে বলে ওঠে।

-“তুমি জানো তুমি গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকার সময়ে কাকে টেক্কা দিয়ে এসেছ? নিশা বলে ওঠে।

-“তা নাম কি তোমার বিউটিফুল। আমরা এই ইউনিভার্সিটি এর সিনিয়র তাই আমাদের কাছে নাম বলতে হবে। বুঝতে পেরেছ বেবি? সু এর গালের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে ওঠে রনি ।

সু তার দিকে বাড়ানো হাতটা মুহূর্তের মধ্যে তার হাতের মধ্যে বন্দি করে নেয়। সাথে সাথে রনি এর মুখ থেকে একটা মৃদু চিৎকার বেরিয়ে আসে। ওর সাথে বাকিরা রনি এর চিৎকার শুনে ওর দিকে তাকায়। রনি এর মুখটা কেমন কুকড়ে আছে ব্যাথায়। তারা রনি হাতের দিকে তাকায় দেখে সামনের মেয়েটা হাত ধরে আছে। কিন্তু দেখে তো মনে সিম্পল ভাবেই ধরে আছে আর একটা মেয়ে হাত ধরেছে তাতেই ব্যাথা পেয়ে গেলো রনি আশ্চর্য। সু হাত টা চরের দিয়ে ওদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায়। রনি শুধু হিংস্র চোখে সু এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রনি তার হাতের দিকে তাকায় দেখে কেমন লাল হয়ে উঠেছে তার হাত। সে নিজেও ভেবে পাচ্ছে না মেয়েটার হাত কী দিয়ে তৈরী। কারণ সে কোনো কিছুই দিয়ে আঘাত তো তাকে করেনি শুধু তার হাত টা কে ধরে ছিল তাতেই তার ব্যাথা কেনো লাগলো।

দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ লক্ষ করছিলো আমন ওদের। এই ছেলে মেয়ে গুলো যখন সু এর সামনে এসে দাঁড়ায় তখনই এগিয়ে আসতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার মনে পড়ে রাস্তায় মেয়েটার ব্যবহার তাই দেখতে চাইছিল কি হয়। আর মেয়ে টার ডোন্ট কেয়ার অ্যাটিটিউড দেখে সে আরো বেশি করে দেখতে চাইছিল যে এই গ্যং এর হাত থেকে এই মেয়ে কি করে নিস্তার পায়। এই ইউনিভার্সিটি তে এই গ্যং এর হাত থেকে নিস্তার পেয়েছে খুব কম জনই আছে। এদের দলের লিডার রনি মন্ত্রী বিভেস রাঠোর এর ছোটো ছেলে সাথে এই ইউনিভার্সিটি এর ট্রাস্টি প্লাস প্রফেসর রিক রাঠোর এর ভাই। ওর বাবার নামে ট্রাস্ট বোর্ড থাকলেও সেখানে রিক এর নাম রাখা হয়েছে। তাই এখানেই সেই জোর দেখায়। কেউ তার বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে পারে না। তবে ভয় সে শুধু পায় আমন কে দেখে। কয়েকবার আমন তাকে মেরে ও ছিল। এই ইউনিভার্সিটির ফিফটি পার্সেন্ট এর শেয়ার চৌধুরীদের আর বাকি ফিফটি পার্সেন্ট মল্লিক আর এই রাঠোরদের তাই আমন এর উপর কথা বলতে পারে না রনি। আর আজ কিনা সেই ছেলের হাত ব্যাথা করে দিলো ওই মেয়েটা। কিন্তু সামান্য ওই ভাবে ধরলে তো ব্যাথা হওয়ার কথা নয় তাহলে? উম কিছু তো আছে এই মেয়ের মধ্যে। আমন নিজের মনে ভেবে ওঠে।

আমন এই ইউনিভার্সিটি এর একজন প্রফেসর।এবং একজন স্যাকসেসফুল বিজনেসম্যান । সেই সাথে এই ইউনিভার্সিটি এর পুরো মহিলা মহল এর ক্রাশ শুধু তাই নয় তার এই গুড লুকিং তার এই হ্যান্ডসামনেস এর জন্য বাইরে ও মেয়েদের কাছে বিশেষ ভাবে পরিচিত। বত্রিশ বছর বয়সে ও সে স্টিল ব্যাচেলর। আজ পর্যন্ত তার নামে কোনো মেয়ে জনিত কোনো স্ক্যান্ডেল নেই। সে সবার কাছে ওয়ার্কাহলিক নামে পরিচিত।

—————

-“মে আই কামিং স্যার?

-” আরে ম্যাডাম আপনি প্লিজ ভিতরে আসুন। প্লিজ বসুন প্রিন্সিপাল সমেস আহুজা বলে ওঠেন।

-“প্লিজ স্যার আমাকে ম্যাডাম আর আপনি বলবেন না আমি আপনার থেকে অনেক ছোটো বলতে পারেন আপনার মেয়ের বয়সী। সু ভিতরে এসে চেয়ার টেনে বসে বলে ওঠে।

-” আমার থেকে ছোটো হলেও আমার থেকে প্রফেশনাল ভাবে আমার থেকে অনেক বড়। একজন দেশের রক্ষক। যাদের কারণেই আমাদের দেশের সাধারণ নাগরিক শান্তি তে ঘুমাতে পারে। প্রিন্সিপাল বলে ওঠে।

-” প্রফেশনাল আলাদা হলেও একজন শিক্ষক এর সম্মান সব সময়ে সবার উপরেই থাকে। কারণ আমরা তাদের থেকে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েই কিন্তু আমাদের লক্ষে পৌঁছায় সে ডক্টর হোক ইঞ্জিনিয়ার হোক কিংবা যেকোন প্রফেশনই হোক না কেন। তাই প্রত্যেক শিক্ষক এর সম্মান সবার আগেই সে যতো বড় উচু মানের মানুষ হোক না কেনো। সু বলে ওঠে।

সু এর কথা শুনে প্রিন্সিপাল আবেগী হয়ে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আজকাল কেউ আর শিক্ষকদের কেও মানে না। আজকাল শিক্ষক সেটাই ম্যাটার করে না পাওয়ার স্ট্যান্ডার্ড এইসব আগেই দেখে। যদি তুমি পয়সা ওয়ালা হও তাহলে তুমি শিক্ষক হিসাবে সম্মান পাবে আর যদি পয়সা ওয়ালা না হও তাতে শিক্ষক কি সেটা দেখে না। তাছাড়া এখন কার স্টুডেন্ট গুলো একইরকম শিক্ষকদের কোনো কেয়ার করে না। এই তো তিনি একজন প্রিন্সিপাল কিন্তু এই তাকে অনেক ভাবে অপমানিত হতে হয়েছে এই ইউনিভার্সিটি এর স্টুডেন্ট রনি এর কাছ থেকে মন্ত্রীর ছেলে বলে কথা।

-“ঠিক আছে বেটা আমি আর আপনি বা ম্যাডাম বলবো না। হেসে বলে ওঠে প্রিন্সিপাল।

-” সোহা জৈন রাইট। পঁচিশ বছর বয়সে তুমি একজন দক্ষ অফিসার এতটা উন্নতি সত্যি ভাবা যায় না। এই নাও তোমার ফাইল। আমার কাছে দিল্লী থেকে ফোন এসেছিল আমাকে বলা হয়েছে। তুমি এখানে একজন প্রফেসর হিসাবে জয়েন করবে আমি সব রেডি করে রেখেছি হিউম্যান সাইকোলজি তে । স্যার আমাকে সব বলেছেন এই কেস এর ব্যাপারে। তোমার যে কোনও সাহায্য এর প্রয়োজন হলে আমি আছি।

-” থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। স্যার আরো একটা কথা ছিল এই ইউনিভার্সিটি এর সমস্ত স্টুডেন্ট আর স্যার ম্যাডাম দের ডিটেইলস লাগবে। সু ওরফে সোহা বলে ওঠে।

-” ঠিক আছে আমি তোমাকে সব ডকুমেন্ট রেডি করে রাখছি।

-“না স্যার আপনি যদি আমাকে একটু মেইল করেন দিতেন তাহলে খুব ভালো হয় বুঝতেই পারছেন ব্যাপার টা খুবই কনফিডেন্সিয়াল। প্রিন্সিপাল কে পুরোটা বলতে না দিয়ে সোহা বলে ওঠে।

-“ওকে পাঠিয়ে দেবো। তোমার কেস এর জন্য কোনো কিছু করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব। প্রিন্সিপাল হেসে বলে ওঠে।

-” ওকে স্যার আসছি তাহলে। সোহা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রুম থেকে বেরোতে সোহা এর ফোন বেজে ওঠে। সোহা ফোন রিসিভ করে কানে ধরতে ওপাশ থেকে কথা বলে ওঠে।

-” আমি তোমাকে সমস্ত ইনফরমেশন পাঠিয়ে দিয়েছি এ.আর চৌধুরীর।

-“ওকে স্যার আমি চেক করে নিচ্ছি। সোহা বলে ওঠে।

-“বেস্ট উইশেস ফর ইয়র রানিং কেস। ওই অল নো ভিক্টরি উইল বি ইউর’স। সুদীপ্ত ভৌমিক বলে ওঠে।

-” থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট। বলে সোহা ফোন কেটে দেয়।

এক পলক ফোন এর দিকে তাকিয়ে নিয়ে আবারও সামনের দিকে পা বাড়ায়। গন্তব্য ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট হিউম্যান সাইকোলজির ক্লাস রুম। তার ছোটো থেকে স্বপ্ন ছিলো এন.এস.জি জয়েন করা। সেই ক্ষেত্রে সে বিশেষ করেই সে সাইকোলজি নিয়েই স্টাডি করেছে যাতে সহজে সে মানুষের মনোভাব বুঝতে পারে। যদিও এন.এস.জিতে যে কোনও ফিল্ড থেকে আসতে পারে তবে তার জন্য সব দিক থেকে দক্ষ থাকতে হবে। সোহা ছোটো থেকেই বিদেশে বড় হয়েছে যদিও তার কারণও আছে। সে ওখানে তার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেই দেশে ফিরে এন.এস.জি জয়েন করে। কারণ গ্রাজুয়েশন ছাড়া এন.এস.জি জয়েন করা যায় না। তারপরেই সে তাকে প্রশিক্ষণ এর জন্য বাইরে পাঠানো সেখানেই সে তার ট্রেনিং এর সাথে সাথে তার স্টাডি শেষ করে। দু মাস আগেই তার পি এইচ ডি লেভেল কম্পিলিট হয়েছে। তবে সোহার এই প্রফেশনের আশার ও কারন আছে তাই সে নিজেকে তৈরী করতে তার সর্বস্ব দিয়ে তার লক্ষে স্থির থেকে গেছে। পঁচিশ বছর বয়সে সে তার স্টাডি কম্পিলিট করেছে যেহেতু সে ফরেন কান্ট্রি তে বড় হয়েছে আর সাথে তাই এটা সম্ভব হয়েছে কারণ আমাদের দেশের ইউনিভার্সিটি লেভেল ফরেন কান্ট্রি এর স্কুল লেভেল এর সমান।

সোহা ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের হিউম্যান সাইকোলজির রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে একবার পাশের নাম বোর্ড টা দেখে নেয়। তারপরেই রুমে ঢোকে। সোহা কে রুমে ঢুকতে দেখে বাকিরা চুপচাপ বসে বসে হা করে তাকিয়ে থাকে। রনি রাজ রিনি নিশা রুক্ষ চোখে তাকিয়ে থাকে সোহা এর দিকে সোহা কে এই রুমে আসতে দেখে তাদের মুখে শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে। তারা মনে করছে সোহা তাদের সাথে তাদের ক্লাসে পড়ে। তাহলে বেশ জব্দ করা যাবে এটা ভেবেই নিজেরা মনে মনে খুশি হয়ে যায়।

সোহা রুমে ঢুকে মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে পকেটে হাত রেখে তীক্ষ্ণ চোখে একবার পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নেয়। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। সোহা বুঝতে পারে তাকে তারা তাদের মত স্টুডেন্ট ভাবছে। একবার সকলের দিকে তাকিয়ে নিয়ে প্রফেসর ডেস্ক এর দিকে এগিয়ে যায়। তারপরেই ডেস্কে দাঁড়িয়ে টেবিলের উপরে থাকা ডাস্টার টা জোরে টেবিলের উপর আঘাত করে। সাথে সাথে রুমে থাকা সবাই কেঁপে ওঠে। এতক্ষণ তারা অবাক হয়ে দেখেছিল সোহা কে যখন ডেস্ক এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো তখন তারা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল তারা বুঝতে পারছিল না এই মেয়ে ওখানে কি করতে যাচ্ছে। আর এখন ডাস্টার দিয়ে আঘাত করতে সব কেঁপে ওঠে।

-“হে ইউ তোমার সাহস কি করে ডেস্কে দাঁড়ানোর আর তারপরে ওটা নিয়ে আঘাত করছ কেনো নিজেকেই কি ভাবলে তুমি? রিনি চিৎকার করে বলে ওঠে।

-“গেট আউট অফ মাই ক্লাস। আই ডোন্ট লাইক বিয়ারিশ স্টুডেন্ট ইন মাই ক্লাস। সো গেট আউট। সোহা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে কঠিন শীতল কন্ঠে বলে ওঠে।

এদিকে সোহা এর কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। চোখ বড় বড় করে সোহা এরপর দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকতে। আর পুরো ক্লাস রুম জুড়ে গুঞ্জন ভরে যায়। সোহার বলা কথা গুলো নিয়ে সবাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে শুরু করে দেয়। তাঁরা সোহার বলা কথা গুলো এখনও ঠিক হজম করতে পারিনি। আর রনি রাজ নিশা রিনি সবাই সোহার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।

চলবে….. ❣️

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৫.
-“আই অ্যাম সোহা জৈন। ফ্রম টুডে আই উইল টেক ইউর হিউম্যান সাইকোলজি ক্লাস । সো নাউ ইউ অল আন্ডারস্ট্যান্ড হু আই অ্যাম ওর ডু আই হ্যাভ ইন্ট্রোডিউশ মাইসেলফ এগেইন? সোহা তীক্ষ্ণ ভাবে কঠিন গলায় বলে ওঠে।

সোহা সবার দিকে একবার তাকিয়ে নেয়। দেখে সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার কথা গুলো শুনে সব হতভম্ব হয়ে গেছে। তাই সোহা সবার দিকে তাকিয়ে আবারো বলে ওঠে।

-“দেন লেট’স স্টার্ট দ্যা ক্লাস । অ্যান্ড ইউ গেট আউট অফ দিস ক্লাস ।সোহা সবার উদ্দেশে বলে শেষে রিনি কে ক্লাস এর বাইরে বের হয়ে যেতে কঠিন ভাবে।

সোহা এর তাকানো দেখে রিনি আর কিছু বলতে পারেনা। সোহার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে ক্লাস থেকে বের করে দেয়। এর পরেই সবার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে টেবিল থেকে মার্কার তুলে নিয়ে বোর্ডে একের পর এক কাউন্ট লাইন লিখতে থাকে। লেখা শেষে একটা একটা করে বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করে। সোহা মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করাচ্ছে সাথে তার চোখ ও ঘুরে বেড়াচ্ছে পুরো ক্লাস রুম জুড়ে। পুরো ক্লাস জুড়ে সবার মাঝে পিন পতন নীরবতা গ্রাস করে আছে। পুরো রুম জুড়ে শুধু সোহার আওয়াজ ভরে আছে।

এদিকে পাশের রুমে আমন ক্লাস নিচ্ছে। পাশের রুমে থেকে কোনও হট্টোগোল এর আওয়াজ না পেয়েই ভাবতে থাকে যে ওই ভয়ঙ্কর ক্লাস এর জন্য মাঝে মাঝে ক্লাস নেওয়া দায় হয়ে যায় আর আজ সেখানে এত শান্ত কি করে থাকতে পারে। সে তার স্টুডেন্ট কিছু কাজ দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এই রুমের দিকে তাকাতেই তার চোখ কপালে উঠে যায়। এ সে কাকে দেখছে। এই মেয়ে লেকচার দিচ্ছে। তারমানে প্রফেসর ওহ মাই গড কিন্তু একে তো দেখে স্টুডেন্ট লাগে বয়স বা কত এই মেয়ের? এই মেয়ের তেজ আছে বলতে হয় নাহলে এই ডেন্জারাস ক্লাস রুম কে শান্ত বানিয়ে নিতে পারতো? আমন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সোহার পড়ানোর স্কিল দেখে অবাক হয়। সত্যি তার কাছে রহস্যময়ী মনে হচ্ছে। এক পলক দেখে নিয়েই আমন তার ক্লাসে ফিরে যায়।

প্রায় এক ঘণ্টার ক্লাস শেষ হতেই সোহা ক্লাস রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তার মধ্যে কোনো ক্লান্তি দেখা যায় না। এর আগে সে তার ট্রেনিং এর দরুণ প্রায় আট থেকে নয় ঘন্টা কমান্ড ট্রেন করতে হতো তাই এই এক ঘন্টা তার কাছে কিছুই না। এত তবু স্বাভাবিক আওয়াজে সে লেকচার দিয়েছে। আর তাদের ট্রেনিং এর সময়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কমান্ড দিতে হতো যাতে পুরো ট্রেনিং গ্রাউন্ড শুনতে পায়।

সোহা ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে রিনি রাগে ফুসতে ফুসতে ক্লাসের ভিতরে ঢোকে সেখানে রাজ রনি নিশা বসে আছে ওদের মুখেই রাগ ফুটে আছে । তাদের ভয়ে এই পুরো ইউনিভার্সিটি কাপে আর এই মেয়েটা কিনা তাদের হেনস্থা করে গেলো না এটা তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

-“এই মেয়েটা কিনা আমাদের ক্লাস নেবে অসম্ভব। এটা কখনোই হতে পারে না। নিশা রাগে বলে ওঠে।

-” ওই মেয়ের এত সাহস আমাকেই এই ভরা ক্লাস রুমের থেকে বাইরে বের করে দেয়। ওকে তো আমি কিছুতেই ছাড়বো না। রিনি বলে ওঠে।

-“ভাই কি অ্যাটিটিউড দেখেছিস? আমি তো ভেবেছি আমাদের ক্লাস এর স্টুডেন্ট হবে বেশ খেলা যাবে এটা কে নিয়ে কিন্তু এ শালী প্রফেসর বেরোয় রাজ হাত ঠুকে বলে ওঠে।

-” না কিছুতেই না একে আমি কিছুতেই এখানে টিকতে দেবো না। রনি দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।

-একদমই তাই । রনি তোরা তো এই ইউনিভার্সিটি এর ট্রাস্টি তাই চাইলেই কাউকে বের করে দিতে পারিস সাথে রিক ভাই আছে না। রিনি বলে ওঠে।

-” আমি এই মেয়েকে আর একদিন ও এখানে দেখতে চাইনা তবে তার আগে একটা ব্যবস্থা তো করব তোরা চল আমার সাথে। বলেই রনি উঠে বেরিয়ে যায়।

————-

সোহা পকেটে থেকে ফোন বের করে এ.আর.চৌধুরীর ব্যাপারে পাঠানো ইনফরমেশন গুলো দেখে নিয়েই একটা মেইল পাঠিয়ে দেয় এ.আর.চৌধুরী কে। ফোন পকেটে রেখে এবার সোহা পুরো বিল্ডিং টা একবার ঘুরে দেখে নেয় তার তীক্ষ্ণ চোখ দিয়ে ভালো করে সব স্ক্যান করে নেয় যাতে এরপরে হতে থাকা কোনো দৃশ্য যাতে তার চোখ দিয়ে না বেরিয়ে যায়। পার্কিং থেকে গাড়ি নিয়েই ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়ে যায় তার গন্তব্যে। এতক্ষণ যে কেউ তাকে নজরে রাখছিলো সেটাও সোহার চোখে এড়াইনি। এটা দেখেই তার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। সোহা ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে কিছুটা যেতেই সোহার দুই পাশে আরও দুটো বাইক চলতে থাকে। সোহা এবার ঘাড় ঘুরিয়ে দুই দিকে তাকায়। সোহা কে তাকাতে দেখেই ওরা হেসে দেয়। এর পরেই তিনটে বাইক পাশাপাশি ফুল স্প্রিডেই চলতে থাকে। এরপরেই গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে পর পর তিনটে বাইক থামে। বাইক থেকে নেমে সোহা বলে ওঠে।

-“কিরে তোদের কাজ হয়েছে?

-” একদম । আকাশ হেসে বলে ওঠে।

-“উফ মনে হচ্ছে এবারের খেলা টা দারুন জমবে। অ্যাস হাসতে হাসতে বলে ওঠে।

-” যে ভাবে প্ল্যান সাজানো হয়েছে আর প্রথম দিনেই পাখি তার পা ও জালে দিয়ে দিয়েছে শুধু এবার খেলার সময়। জমবে না মানে। সানি হাসতে হাসতে বলে ওঠে।

-” আচ্ছা তোর ওদিকে ঠিক ঠাক ছিল তো সব? নীরা বলে ওঠে।

-“অল ওকে । আচ্ছা চল কিছু প্রস্তুতি নেওয়ার আছে আজ নতুন মেহমান আসছে। সোহা বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

সাথে বাকিরা ও হেসে বাংলোর ভিতরে ঢুকে যায়।

————-

আমন গাড়িতে উঠে ফোন চেক করতে দেখে তার ফোনে একটা মেইল এসেছে। এন.এস.জি সিনিয়র অফিসার লেডি ডন এর থেকে। এটা দেখেই আমন এর মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার চোখ দুটো চকচক করে ওঠে। সে জানত এই কেসে তার সাথে লেডি ডন ও এই কেস হ্যান্ডেল করবে। হেড অফিস থেকে তার কাছে মেইল এসেছিল। আর সে অপেক্ষায় ছিল কখন এই লেডি ডন এর থেকে সে ডাক পাবে। তার অনেক দিনের স্বপ্ন এই অফিসার এর সাথে দেখা করার কিন্তু সে চাইলেই তো দেখা করতে পারেনা আর তার ডিটেইলস ও সে পাবে না। তার পোস্ট অনুযায়ী তার ডিটেইলস খুব কম জনই জানে ডিপার্টমেন্টের সবাই তাকে লেডি ডন হিসাবে চেনে। আমন নিজেও একজন সিনিয়র অফিসার কিন্তু তাদের ডিপার্টমেন্ট আলাদা আর সেই অনুযায়ী এই লেডি ডন ও তার তার থেকে বড় অফিসার।

আমন নিজেও অনেক স্টিং অপারেশন করেছে। আমন ও একজন স্পাই অফিসার। আর.এ.ডাব্লিউ এর একজন দক্ষ সিনিয়র অফিসার। তাকে ও ডিপার্টমেন্টের সবাই এ.আর.চৌধুরী হিসাবে চেনে। আজ পর্যন্ত সে অনেক কেস সামলেছে। সোহার মত তাকেও সবাই এক ডাকে চেনে আর তাই উপর মহল থেকে এবার দুই জন এক সাথে এই কেস হ্যান্ডেল করতে দিয়েছে। কিন্তু এটা তার সব থেকে বেস্ট একটা স্টিং অপারেশন হতে চলেছে। তার অপেক্ষিত সেই নারীর সাথে সে একসাথে কাজ করতে চলেছে এর থেকে বেস্ট আর কি হতে পারে তার কাছে । আমন ফোন রেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়েই ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যায়।

————-

রাত এগারোটা পঞ্চান্ন চারিদিকে শুনসান হয়ে আছে মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে একটা করে গাড়ি চোখের পলক ফেলতে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার স্ট্রিট লাইট এর আলো গুলো জ্বলছে ।ফুটপাতে কয়েকটা কুকুর ডাকছে। আমন একবার চারদিকে দিকে তাকিয়ে পরিবেশ টা দেখে নেয় তার তীক্ষ্ণ চোখে। আমন লেডি ডন এর পাঠানো অ্যাড্রেসে চলে এসেছে। কয়েক সেকেন্ড পরেই সে দেখতে পায়। সামনে মাটির নীচের দিকের একটা রাস্তা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সে তো এতক্ষণ খুব সূক্ষ্ম ভাবে পরখ করে নিয়েছে তাহলে? এটা কি তাহলে লেডি ডন এর কাছে পৌঁছানোর রাস্তা ভেবেই তার হাতের ঘড়ির দিকে তাকায় বারোটা বাজতে আর মাত্র এক মিনিট সময় আছে আর এটা দেখেই মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়েই আসতে আসতেই পা বাড়ায় সামনের দিকে। গেট এর মুখে আসতেই দরজা ওপেন হয়ে যায় এটা দেখে একটু চমকে গেলে ও নিজেকে বাইরের থেকে স্বাভাবিক রাখে ভিতরে ঢুকতেই আবারো দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তার কানে আসে মৃদু একটা রিনরিনে কন্ঠস্বর।

-“ওয়েলকাম মিস্টার চৌধুরী। ওয়েল আপনি একদম পারফেক্ট টাইমে এসেছেন। আই লাইক ইট।

আমন কন্ঠস্বর শুনেই সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আমন রুমের মাঝ বরাবর আসতেই চারিদিকের লাইট জ্বলে ওঠে। আমন একবার চোখ চেপে বন্ধ করে আবারও খুলতে দেখে একজন মেয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। আসতে আসতে মুখ পরিষ্কার হতে আমন এর চোখ দাঁড়িয়ে যায়। সাথে সামনে থাকা ব্যাক্তির ও চোখ বড় বড় হয়ে যায়। দুজন এর চোখে মুখে বিস্ময় ফুটে আছে। দুজন প্রায় একসাথে বলে ওঠে।

-“আপনি?

-” তুমি?

চলবে…..❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here