তোর_মনের_অরণ্যে,৪০

তোর_মনের_অরণ্যে,৪০
সাবিয়া_সাবু_সুলতানা

-“সোহা এখনও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে মামের পরিচয় পেলেও এখনও কিছু ধোঁয়াশা থেকে গেছে। তোর কথা মত মাম যদি সেদিন মারা যায় তাহলে তুই কে আর এই সব কথা তুই কি করে জানলি? আরহান প্রশ্ন করে ওঠে।

-” হ্যাঁ এটা আমারও প্রশ্ন তুমি এত কথা জানলে কি করে সেদিনতো আরিনা মারা গিয়েছে তাহলে তুমি কে তোমাকে আরিনার মত দেখতে কেনো? সোনিয়া মল্লিক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” কারণ আরিনা জৈন এর মেয়ে তাই আমি তার মত দেখতে । সোহা বাঁকা হেসে বলে সোনিয়া কে।

-“এটা কি করে সম্ভব সোহা? তুই তো নিজেই বললি মাম এর অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেছে আর ওখানেই সব শেষ তাহলে? আরহান অস্থির গলায় বলে ওঠে।

-“হুম আমি বলেছি ওইদিন অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে সব শেষ ও হয়েছে কিন্তু এটা বলিনি সেদিন মাম ও মারা গেছে। কি মিসেস সোনিয়া আমার কথা শুনে বুঝি খুব অবাক লাগছে? সোহা তির্যক চাহনি দিয়ে বলে ওঠে।

-“মানে তুই কি বলতে চাইছিস? প্লিজ সব কিছু ক্লিয়ার করে বল। আরহান বলে ওঠে।

সোহা আরহানের দিকে তাকিয়ে দেখে তার ভাই কেমন একটা অস্থিরতার মধ্যে যাচ্ছে। চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিতে বুঝতে পারে যে সবাই প্রশ্ন নিয়েই তার দিকে তাকিয়ে আছে। সোহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে।

-” সেদিন ট্রাক গাড়িতে ধাক্কা দেওয়াতে কিছুটা দূরেই ছিটকে পড়ে। সাথে আরিনা মল্লিক ও গাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই ছিটকে পড়ে জঙ্গলের ভিতরে। আরিনা মল্লিক তার একদম সামনে গাড়ি ধাক্কা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে দেখে তিনি গাড়ির দরজা খুলতে চেষ্টা করছিলেন সেই জন্য ট্রাক এর সাথে গাড়ির ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়তে দরজা এক পাশে খুলে গিয়ে ভেঙে যায় সাথে আরিনা মল্লিক ও ছিটকে দূরে পড়ে থাকে। আর তারপরেই ব্ল্যাস্ট হয়ে যায়। ওই রাস্তা দিয়ে তখন ধীরাজ জৈন আসছিলেন তার বোনের সাথে দেখা করতে। তিনি দেশে ফিরেই নিজের বোনের কাছে ছুটে আসছিলেন। কিন্তু মাঝ রাস্তায় আরিনার ফোন থেকে ম্যাসেজ পেয়ে তার বিপদ এমন কিছু তাই তিনি আরও দ্রুত আসছিলেন আর বারবার ফোন ট্রাই করে যাচ্ছিলেন। ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করতেই লাস্ট লোকেশন ওই অ্যাক্সিডেন্ট স্পট দেখায়। তিনি যখন সেখানে পৌঁছান চারিদিকে ততক্ষণে পুলিশ সেই জায়গা টা কে ঘিরে দিয়ে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ ও ড্রাইভারের দেহ আর আরিনা মল্লিকের কিছু জিনিষ নিয়ে চলে গেছে। ধীরাজ জৈন লোক মুখে শুনতে পায় ওখানেই একটা কার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। ড্যাডের কাছে এটা বিশ্বাস যোগ্য ছিল না যে মামের কিছু হতে পারে। ওখানেই ড্যাড খুব ভেঙে পড়েছিলো। তবে মাম্মা ড্যাড কে সামলে চারিদিকে দেখতে দেখতে কিছু টা দূরের দিকে এগিয়ে যায়। মাম্মার চোখে পড়ে যায় জঙ্গলের মধ্যে থাকা মামের দেহ। আসলে ওখানে কেউ দেখেনি কারণ গাড়িটা ধাক্কা খেয়ে ছিটকে অন্য দিকে পড়ে যায় আর মাম তার থেকে কিছুটা দূরে আর জঙ্গলের মধ্যে ছিল তাই কারোর চোখেও পড়েনি আর না ওই দিকে খোঁজা ও হয়েছে। তাই মামের খবর কেউ জানে না। সেদিনই মাম্মা আর ড্যাড নিজেদের সামলে মামকে ইমার্জেন্সি দিল্লী চলে যান। আর মিস্টার এন্ড মিসেস মল্লিক আপনারাও নিশ্চিত হয়েছিলেন ওখানেই আরিনা মল্লিকের গয়না আর তার কিছু জিনিষ পেয়ে। এতেই আপনারা খুশি হয়েছিলেন তাই আর বেশি গভীরে যাননি আর কেস টাও নিয়ে বেশি তদন্ত হয়নি। ভেবেছিলেন আরিনা মল্লিক ওই অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে। যাইহোক ড্যাড আর মাম্মা মাম কে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেন। মামের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল আর মাথায় গভীর আঘাত পেয়েছিলো। মামের চিকিৎসা করে সেইদিন প্রাণে বাঁচিয়ে নেওয়া গেলেও মাম কোমায় চলে যায়। তবে এর মধ্যেও আরো একটা খবর ছিল যেটা হলো মাম প্রেগনেন্ট। এই খবর শুনেই দাদু আর ড্যাড খুবই চিন্তায় পড়ে যায়। দাদু মামের ওই করুন অবস্থা মেনে নিতেই পারেনি যেহেতু মাম দাদুর খুব আদরে ছিলো তাই দাদু হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। দাদুর মৃত্যুতে পুরোপুরি ভেঙে পড়ে ড্যাড একদিকে তার প্রিয় বোনের অবস্থা খারাপ আর অন্য দিকে বাবা কে হারানোর যন্ত্রণা ড্যাডকে ভিতর থেকে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। সেই সময়ে মাম্মা সব দিকে সামাল দেয়। বিদেশে থাকা কালিন ড্যাড ওখানেই মাম্মাকে বিয়ে করেছিলো তাদের একটা ছেলেও ছিল। ড্যাড মামের বেঁচে থাকা টা কে লুকিয়ে রাখে সাথে ড্যাড মামের নামে থাকা উইল চেঞ্জ করিয়ে দেয় সব কিছুই তোমাদের নামে করে দেয় যাতে তোমরা দুই ভাই সেফ থাকো। তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারেন এই সাজিদ মল্লিক ও সোনিয়া মল্লিক সেই ব্যবস্থা করে দেন । এন্ড দেখো শুধু ওই কারণেই তোমাদের কে বাঁচিয়ে রেখেছিলো আর চোখের সামনে হয়তো তোমাদের কে দেখার পর সাজিদ মল্লিকের তোমাদের উপর দয়া এসে পড়েছিলো তাই তোমাদের কে ছেলের মত করে রেখে দিয়েছে। সেই সময়ে মামের ওই অবস্থায় চিকিৎসার কথা ভেবে মাম্মা আবারো দিল্লির সব কাজ মিটিয়ে নিয়ে আবারও লন্ডন চলে যায়। সেখানেই কোমায় থাকা অবস্থায় একে একে প্রেগনেন্সি টাইম পেরোতে থাকে। মাম্মা একা হাতে সবটা সামলান। মামের ওখানেই উন্নত চিকিৎসা চলতে থাকে। ডেলিভেরি টাইমে সবাই খুব চিন্তায় পড়ে যায় কোমায় থাকা কালিন কি থেকে কি হবে এটা নিয়ে। সব শেষে সবাই সিজার করে বাচ্চা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তবে যদি মিরাকেল বলো আর উপর ওয়ালার কৃপা বলো মাম ওই ডেলিভেরির টাইমে যন্ত্রণাতে মামের সেন্স ফিরে আসে। জন্ম হয় আমার। সেইদিন ওই ছোট্ট আমিকে কোলে তুলে নিয়েছিলো মাম্মা সেইদিন থেকে আমাকে নিজের মেয়ের পরিচয়ে বড় করে তোলে। তবে আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই মাম্মা ড্যাড কখনই আমার থেকে আমার আসল পরিচয় লুকিয়ে রাখেনি সেই ছোট্ট থেকেই আমি জানতাম আমার আরো দুটো ভাই আছে। তাদের নামও জানতাম তবে তাদের চিনতাম না। ছোটো বেলা বড় হতে থাকি নিজের মায়ের প্রতি হওয়া সব অন্যায়ের শাস্তি নিজের হাতে দেওয়ার জন্য। নিজেকে সেই মতো তৈরী করি নিজের লক্ষে পৌঁছানোর জন্য আর আজকে আমি আমার লক্ষে দাঁড়িয়ে আছি । আর এই সবকিছু আমি জেনেছি আমার ড্যাডের কাছে থেকে। কারণ মামের সব সময়ে সাথী ছিল ড্যাড। বিদেশে থাকলেও তাদের মধ্যে কোনো দুরত্ব ছিলোনা একে অপরের সব কথায় তারা জানত তাই মামের সব কথায় ড্যাডের জানা হয়েছে। আর বাকিটা মিসেস সোনিয়া আপনার পাঠানো সেই ভিডিও থেকে আর কিছু তদন্ত করে। বুঝতে পারলেন না তো যদিও বোঝার কথা নয়। সেইদিন মামের ফোন ওখানেই মরে গেলেও বাকি সমস্ত ইনফরমেশন কিন্তু থেকে গেছিলো। মামের ইমেল আইডির আর অ্যাকাউন্টের প্যাসওয়ার্ড পাওয়া আমার কাছে কোনো দুর্লভ ব্যাপার নয়। আসা করি বুঝতে পেরেছেন। ফোন ভেঙে গেলেই যে তার সাথে সাথে সব কিছুই হারিয়ে যাবে এটা তো হতে পারেনা তাইনা মিসেস সোনিয়া মল্লিক ।

সোহার কথা শুনেই এবার সাজিদ মল্লিক নিজের মুখে হাত চেপে কেঁদে ফেলেন। নিজের রক্তদের মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন এর থেকে পাপ কাজ আর কি হতে পারে। আরহান গিয়ে কষে জড়িয়ে ধরে নিজের বোন কে। আক্রম ও তার ভাইয়ের সাথে নিজেও জড়িয়ে ধরে। তিন ভাইবোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে থাকে। আমন মুখে হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে ওদের তিনজনের দিকে সাথে অ্যাস নীহার আকাশ সানি ওরাও চোখে পানি নিয়েই তাকিয়ে আছে তাদের সোহার দিকে কতটা কষ্ট নিয়েই ছোটো থেকে সে বড় হয়েছে ।
সোহা সাজিদ মল্লিকের কান্না দেখে হেসে ফেলে সবাই অবাক হয়ে তাকায় সোহার দিকে ।

-“আরে মিস্টার মল্লিক যে আপনি কাঁদছেন কেনো? আপনার ও কি কান্না পায়। তবে আপনার জন্য তো এখনও একটা বড় চমক আছে এরপরে আপনি কি করবেন? সোহা বিদ্রুপ করে বলে ওঠে।

-” কি বলতে চাইছো তুমি কিসের চমক? ভেজা কন্ঠে বলে ওঠে সাজিদ মল্লিক।

-“মণিকা মল্লিক আপনার চোখের মণি আপনি কি তার আসল পরিচয় জানেন? মিসেস সোনিয়া মল্লিক তো আপনার নামে চালিয়ে দিয়েছে আপনিও বা জানবেন কি করে রাইট। সোহা শ্লেষ মেশানো গলায় বলে ওঠে।

-“ওর আসল পরিচয় মানে কি বলতে চাইছ মণিকা আমার মেয়ে আমার রক্ত। সাজিদ মল্লিক বলে ওঠে।

-“ওমা তাই নাকি আপনার রক্ত আপনার মেয়ে? তাহলে ওর ব্লাড গ্রুপের সাথে আপনার মিল থাকার কথা কিন্তু সেখানে আপনার সাথে কোনো মিল নেই মিল আছে মিস্টার ইমরান মেহতার সাথে এটা কি করে হয় বলুন তো? সোহা বলে ওঠে।

সোহার কথা শুনে ওখানে থাকা সবাই অবাক হয়ে তাকায় মণিকা মল্লিক বাড়ির কেউ না তার সাথে ইমরান মেহতার কি করে রক্তের সম্পর্ক থাকতে পারে এটা কেউ বুঝতে পারছেনা।

-“এটা তুমি কি বলছো এটা কি করে হতে পারে। সাজিদ মল্লিক বলে ওঠে।

-” মিসেস সোনিয়া আপনি বলবেন নাকি আমি বলবো ছাড়ুন আমি বলছি। সোহা তীক্ষ্ণ চাহনি দিয়ে সোনিয়া কে পর্যবেক্ষণ করে বলে ওঠে।

সোনিয়া আর ইমরান আবারো ঘামতে শুরু করেছে আর মণিকা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আজ তার বিয়ের কথা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেখানে একের পর এক কী হয়ে যাচ্ছে শেষে তার জন্ম নিয়েই টানা ছেঁড়া হচ্ছে। মণিকা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

-“মিস সোনিয়া আর ইমরান মেহতা দুইজনই আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে যুক্ত । সোনিয়া মল্লিক কোম্পানিতে জয়েন করে ম্যানেজিং ডিপার্টমেন্টের হেড হয়ে যান সাজিদ মল্লিকের সাথে নিজের রূপের জালে ফাঁসিয়ে তিনি ওই কোম্পানিতে থেকে বিভিন্ন রকম বেআইনি কাজ চালিয়ে যেতেন আড়ালে থেকে সাথে ছিলেন ইমরান মেহতা। ইমরান মেহতা আন্ডারওয়ার্ল্ডের কিছু কাজের জন্য দুবাই যান তবে সেখানে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। সোনিয়া এটা জানার পর থেকে ইমরান কে যেকোনো ভাবে বাঁচানোর পথ খুঁজে যান সেই সাথে এটাও বুঝতে পেরে যায় যে তার পেটে ইমরানের সন্তানের মা হতে চলেছেন। তখনই তিনি প্ল্যান করে আপনাকে পুরোপুরি ভাবে নিজের জালে ফাঁসিয়ে নেয় । আর সন্তান টাও আপনার বলে চালিয়ে দেয়। সেই সাথে চলতে থাকে মল্লিক কোম্পানির সাহায্যে আড়ালে থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে কাজ ও ইমরান মেহতার ছাড়িয়ে নেওয়ার কাজ। এই ভাবেই আপনার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেয়েছে আর আপনি বুঝতেও পারেননি। এর কিছু বছর পর ইমরান মেহতা নিজেকে মুক্ত করে এই দেশে ফিরে আসে তিনি সোনিয়া কে এইভাবেই সব কিছুই নিজের হাতে রেখে সাজিদ মল্লিক কে সামনে রেখে তারা নিজেদের কাজ চালিয়ে যান। কি ঠিক বলছি তো মিস্টার ইমরান মেহতা এন্ড সোনিয়া মল্লিক? সোহা বলে ওঠে।

-“ওহ হ্যাঁ আরো একটা কথা বলতেতো ভুলেই গেছি যে আপনারা এখনও একই ভাবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে যুক্ত আছে মিস্টার ইম এন্ড এস.এম হিসাবে রাইট। আর মিস্টার ইমরান আপনিতো আমাকে মেরে ফেলতে ও চেয়েছিলেন তাইনা। রাঠোরদের সাথে যে আপনারাও যুক্ত ছিলেন আর ওদের বেপাত্তা হওয়ার জন্য তোমাদের লস আর তার জন্য আমাকে খুঁজে আমাকে কিডন্যাপ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করলেন কিন্তু আফসোস আপনি আমার কিছুই করতে পারেননি। আর এটা কি করে হয়েছে বলুন তো। আপনি তো আমাকে মেরে ফেলে রেখে গেছিলেন আমার মৃত্যু নিশ্চিত করে কিন্তু কিভাবে বেঁচে গেলাম এটাই ভাবছেন তো। আমাকে বাঁচিয়েছে এইযে আমন। কারণ আমি কোথায় ছিলাম সেটা শুধু মাত্র ওই জানতো তাই আপনি আমাকে মেরে ও মারতে পারেননি আফসোস থেকে গেলো। সোহা বলে ওঠে।

সোহার কথা শুনে আমন ও মৃদু হাসে আর আভা চৌধুরী সম্রাট চৌধুরী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাথে ইমরান মেহতা সোনিয়া ও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। সাজিদ মল্লিক মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন তার জীবনের সব থেকে বড় ভুলের জন্য তিনি আজ পস্তাচ্ছে নিজের কাজের জন্য। হটাৎ করেই সাজিদ মল্লিক তার পাশে বসা সোনিয়া মল্লিকের উপর আক্রমন করে বসেন দুই হাত দিয়ে তার গলা চেপে ধরে।

-“শয়তান মেয়ে ছেলে আমি আজ তোকে মেরে ফেলব তোর জন্য শুধু তোর জন্য আমার জীবন থেকে সব কিছু হারিয়ে গেছে। অন্যের পাপ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে আমার সংসার সব কিছুই তছনছ করে দিয়েছিস তোর জন্য আমি আরিনাকে মেরে ফেলতে চেয়েছি আমার ছেলেদের কে মেরে ফেলতে চেয়েছি শুধু তোর জন্য তোর ওই মেয়ের জন্য আমি আমার ছেলেদের কে সব সময়ে অবহেলা করে গেছি তুই আমাকে ভুলিয়ে রেখেছিলি তোকে আমি শেষ করে ফেলবো। সাজিদ মল্লিক রাগে চিৎকার করে বলে ওঠে।

দুইজন গার্ড গিয়ে সাজিদ মল্লিকের হাত থেকে সোনিয়া মল্লিককে ছাড়িয়ে নেয় । সাজিদ মল্লিক মাথায় হাত রেখে গুণ গুণ করে কেঁদে ওঠেন। এর মাঝেই আক্রম হঠাৎ কিছু মনে পড়তে বলে ওঠে।

-“বোনু তাহলে আমাদের মাম কোথায়? তুমি তো বললে মাম সেইদিন কোমায় থেকে বেরিয়ে এসেছিল তাহলে মাম কোথায়?

-” মাম সেইদিন কোমায় থেকে ফিরলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারিনি ম্যাম প্যারালাইজড। সোহা বলে থেমে যায়

সোহা পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে ভিতরে আসতে বলে দেয় সবাই উৎসুক চোখে তাকায় দরজার দিকে একজন গার্ড একটা হুইল চেয়ার ঠেলে ভিতরে আসে। সোহা এগিয়ে গিয়ে গার্ড এর হাত থেকে নিয়ে নেয়।

-“মাম । অস্ফুটে বেরিয়ে আসে আরহানের মুখ দিয়ে কথা গুলো।

গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় আরহান তার মায়ের দিকে সাথে আক্রম ও এই প্রথম তার মাকে সামনে থেকে দেখলো তার ছোটো বেলার কিছু মনে নেই। দুই ভাই এগিয়ে গিয়ে তাদের মাকে জড়িয়ে ধরে। সবাই অবাক হয়ে দেখতে থাকেন সোহা আর আরিনাকে দুইজন কে হুবহু একই রকম দেখতে বলতে গেলে সোহা পুরোই তার মায়ের কার্বন কপি হয়েছে সেই মুখ সেই চোখ সব একই পার্থক্য তেমন কিছু বোঝা যায়না তবে পার্থক্য আছে। সোহা হাসলে তার গালে ডিম্পল পড়ে চোখের মণি ও ব্রাউন কালারে ভ্রু এর মাঝে একটা তিল তাছাড়া বাকিটা একদম একই রকম দেখতে।

সাজিদ মল্লিক দূর থেকে আরিনাকে দেখতে থাকে এখনও সেই আগের মত দেখতে আছে কোথাও বয়সের ছাপ নেই। একদম আগের মত। সোনিয়া ও চোখ বড় বড় করে দেখে যাচ্ছে। আরহান আর আক্রম তাদের মাকে জড়িয়ে রেখে আছে এখনও আর আরিনা মল্লিক সেই পাথর হয়ে বসে আছে চুপচাপ। তিনি সব কিছুই শুনতে পাচ্ছেন দেখতে পাচ্ছেন আরহান আর আক্রম এর এইভাবে তাকে জড়িয়ে রাখতে তাঁর চোখ দিয়েও পানি গড়িয়ে পড়ছে। তবে হঠাৎ করে দূরে সাজিদ মল্লিক আর সোনিয়ার দিকে চোখ পড়তে আরিনা জৈন অস্থির হয়ে ওঠেন তার চোখ মুখ পালটে যায়। সোহা হটাৎ তার মায়ের এমন করতে দেখে চমকে ওঠে সবাই অস্থির হয়ে যায় আরিনা জৈন কে নিয়ে তবে তাঁর দৃষ্টি এখনও সাজিদ মল্লিক আর সোনিয়ার উপরে নিবন্ধ।

চলবে……. ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here