তোর_মনের_অরণ্যে,৩৬,৩৭

তোর_মনের_অরণ্যে,৩৬,৩৭
সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৬.
সোহা আমনের সাথে আজ আবারো ব্যাঙ্গালোর ফিরে যাচ্ছে। সাথে রয়েছে অ্যাস নীহার আকাশ সানি । সোহা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। মাথার আঘাত ও হাতের ক্ষত ঠিক হয়ে গেছে। সোহার শরীরেও ড্রাগসের কোনো প্রভাব পড়েনি সময়ে মত প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য সোহা একদম সুস্থ স্বাভাবিক আছে। পনেরো দিন মত সময়ে সে রেস্ট নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে। এর মাঝে আমন প্রায় এসে দেখে গেছে সোহার জন্য আমনকে ব্যাঙ্গালোর টু দিল্লী আড়াই ঘণ্টার যাত্রা বহুবার করতে হয়েছে এই পনেরো দিনে। সাথে সে তাদের কাজের প্ল্যান ও সাজিয়ে নিয়েছে। আজ সোহাকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছে ব্যাঙ্গালোর আর আজ থেকেই শুরু হবে তাদের প্রতিশোধের খেলা। আর কয়েকদিনেই সোহা ও আমন নিজেদের মধ্যে দূরত্ব সরিয়ে অনেক কাছাকাছি চলে এসে। তাদের মধ্যে ভালোবাসা টা আরো গাঢ় হয়েছে সাথে একে অপরের উপর বিশ্বাস টাও জন্মেছে পূর্ণ রুপে।

তিন ঘণ্টার সফর করে চৌধুরী বাড়িতে এসে পৌঁছায় সবাই। সবাই মিলে একসাথে বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই আচমকা আমনের উপর দৌড়ে এসে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘটনা টা এত দ্রুত ঘটে যায় যে কেউ বুঝতেই পারেনা যে কি হয়েছে। আমন তার নিজের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে কয়েক পা পিছিয়ে যা পিছনে। সানি আকাশ অ্যাস নীহার সবাই চোখ বড় বড় করে দেখছে। সোহা এক পাশে দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুঁজে দেখছে তার চোখ দুটো জ্বল জ্বল করছে । মনে হচ্ছে এক্ষুনি হয়তো আগুন ধরিয়ে দেবে সব কিছুতেই। মণিকা বাড়ির ভিতরে থেকে দৌড়ে এসে আমনের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। এখনও আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে আছে। আমন একবার করুন চোখে সোহাকে দেখে সোহা তার দিকে অগ্নি শর্মা হয়ে তাকিয়ে আছে। আমন ইশারায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই মণিকা বলে ওঠে।

-“আমন আই মিস বেবি । তুমি কোথায় গেছিলে আমি তোমাকে ফোন করেছিলাম কিন্তু তোমাকে পেলাম না।

-” মণিকা ছাড়ো এখানে সবাই আছে। আমন সোহাকে দেখে নিয়ে বলে ওঠে।

-” আমন তুমি এই কয়েকদিন থেকে আমার সাথে ঠিক করে কথা বলোনি আমি তোমাকে খুব মিস করেছি। মণিকা আমনের গলা জড়িয়ে রেখেই বলে ওঠে।

-“মণিকা আমি কাজে ছিলাম। আমন যথা সম্ভব নিজেকে শান্ত রেখেই দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।

-“মণিকা এটা ভদ্র লোকের বাড়ি আর এটা তোমার বেড রুম নয় বাড়ির লিভিং রুমে দাঁড়িয়ে অন্তত নিজের সীমাতে থাকার চেষ্টা করলে খুশি হব। অ্যাস কটমট করে বলে ওঠে।

মণিকা অ্যাস এর কথা শুনে আমন থেকে একটু সরে দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখে নেয়। সবাই তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে বিশেষ করে অ্যাস। এর মধ্যেই সোহাগ একবার আমনও মণিকাকে দেখে নেয়।

-“আমার এইসব লো ক্লাস সিনেমা দেখার কোনো ইচ্ছা নেই আমি গেলাম। বলেই সোহা ভিতরের দিকে পা বাড়ায়।

সোহার কথা শুনেই বোঝে আমন তার ধানী লঙ্কা একেবারে ফায়ার হয়ে আছে যেকোনো মুহূর্তেই তার ব্ল্যাস্ট করতে পারে। আমনের অবস্থা এখন পুরো ভাজা ভাজা না পারছে মণিকাকে সহ্য করতে আর না পারছে কিছু বলতে তাই দাঁতে দাঁত চেপে সবটা সয়ে যাচ্ছে। এতক্ষণ উল্টো দিকে সম্রাট চৌধুরী আভা চৌধুরী আর সাজিদ মল্লিক বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলে যাচ্ছিলেন তাই বাকিদের খেয়াল করেননি। সোহা ভিতরের দিকে পা বাড়াতে আভা চৌধুরী দেখতে পান। যদিও তিনি কিছুই জানেন না সোহার অসুস্থতার ব্যাপারে। সোহা আকাশ সানি নীহার অ্যাস কোনো কাজের জন্য গেছিলো আর এই ফিরছে সেটাই জানে। সোহাকে দেখে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে যান।

-“আরে সোহা বেটা কেমন আছো? তোমাদের কাজ কেমন ছিলো? আর আজকে জে তোমরা আসছো কই আয়ু আমাকে বলেনি তো। আভা চৌধুরী কথা গুলো বলতে বলতে সোহার দিকে এগিয়ে আসে।

-” আরে আন্টি আমি একদম ঠিক আছি অ্যাস হয়তো তোমাকে সারপ্রাইজড করার জন্য কিছু বলেনি। সোহা হেসে আভা চৌধুরী কে জড়িয়ে বলে ওঠে।

-” ঠিক আছে তোমরা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি তোমাদের জন্য কফির ব্যবস্থা করছি। আভা চৌধুরী বলে ওঠে।

-“ওকে আন্টি । সোহা হেসে বলে ওঠে।

সামনের দিকে তাকিয়ে সোহার মুখের পেশী শক্ত হয়ে যায় তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে রাখে সাজিদ চৌধুরী তার দিকে কৌতুহল চোখে তাকিয়ে আছে এটা দেখেই সোহার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।

-” মম এখানে কি হচ্ছে মনে হচ্ছে জরুরি কিছু। অ্যাস ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ আসলেই আমন আর মণিকার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে। আভা চৌধুরী মলিন হেসে বলে ওঠে।

-“ওহ আচ্ছা বুঝলাম । তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে ওঠে।

-” আয়েশা বেটা কেমন আছো? তোমাকেতো দেখতেই পাওয়া যায়না। তোমার ভাইয়ের বিয়ে আর তোমাকে পাওয়া যায়না। সাজিদ মল্লিক হেসে বলে ওঠে।

-“আমার কি দরকার আংকেল আমাকে ছাড়াই সব কিছু হয়ে যাচ্ছে যখন তখন আর আমার কোনো দরকার নেই বরং যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে আর তার বাবা মা থাকলে চলবে বাকি কাউকে দিয়ে আপনার কি কাজ। আয়েশা তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।

অ্যাসের কথা শুনে সম্রাট চৌধুরী আভা চৌধুরী অপরাধী চোখে তাকায়। সত্যি মেয়ে তাদের বাড়ি থাকেনা বলে কোনো কথায় তাকে বলা হয়ে ওঠেনা আর এর জন্যে যে মেয়ের মনে অভিমানের মেঘ জমেছে সেটাও তারা বুঝতে পারে।

-“এ কেমন কথা আয়েশা বেটা তুমি আমনের বোন আর তুমি থাকবে না তোমার ভাইয়ের বিয়েতে। সাজিদ মল্লিক হেসে জিজ্ঞেস করে।

-” না আংকেল আমি এই বাড়ির মেয়ে আপনার আমনের বোন হলেও আমাকে যে বিয়েতে থাকতে হবে তার কোনো দায়বদ্ধতা নেই আর তাছাড়াও আমি না থাকলেও এই নিয়ে আটকে যাবে না আর কোনো অসুবিধা ও হবে না। বিদ্রুপ করে বলে ওঠে।

-” আপনারা কথা বলুন আমি আসছি। বলেই অ্যাস উপরে দিকে পা বাড়ায়।

আভা চৌধুরী আর সম্রাট চৌধুরী একে অপরের দিকে তাকায়। তাদের মেয়ের এই অভিমান ভরা কথা গুলো শুনেই নিজেদের মাঝে অপরাধবোধে ভুগতে থাকে। তাদের মেয়ে কাজের জন্য দূরে থাকে আর সেজন্য সেই ভাবে কোনও কিছুই নিয়ে তার সাথে আলোচনা করেনা আর এটাই যে তাদের মেয়ের অভিমানের কারণ সেটাও বোঝে। এতক্ষণ সোহা আকাশ সানি নীহার দাঁড়িয়ে সবটা দেখে অ্যাসের কথা গুলো শুনে তারাও বোঝে তার মনের কষ্টটা সোহা সানি কে ইশারা করতে উপরের দিকে চলে যায়। আমন সব কিছু পর্যবেক্ষণ করার পর নিজের মম ড্যাডের দিকে তাকায় যারা এই মুহূর্তে মুখ ছোটো করে দাঁড়িয়ে আছে।

-“আংকেল আমরা যদি কালকে আপনাদের বাড়িতে গিয়ে একসাথে এই ব্যাপার নিয়ে কথা বলি না মানে আন্টি ও এখানে আসার সময় পাননা উনিওতো মণিকার মা হোন তো ওনারতো থাকা উচিত তাইনা। তাই আমরা সবাই একসাথে বসে এই নিয়ে কথা বললে বোধহয় ভালো হবে। আমন একবার সোহার দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলে ওঠে।

-“ঠিক আছে আমন তুমি যেমন বলবে। মণিকা হেসে বলে ওঠে।

-” আচ্ছা ঠিক আছে আপনারা কথা বলুন আমি খুব টায়ার্ড উপরে যাচ্ছি। মণিকা তোমার সাথে পরে কথা বলবো কেমন। বলেই আমন আর কোনো কিছু বলতে না দিয়েই সোহাকে ইশারা করে উপরে উঠে যায়।

সোহাও একবার সাজিদ মল্লিক কে দেখে নিয়েই উপরের দিকে চলে যায়। সোহা নিজের রুমের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় তবে আমনের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে ভিতর থেকে তাকে হ্যাচকা টানে ভিতরে ঢুকিয়ে নেয়। দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড় করিয়ে সোহার একদম সামনে এসে দাঁড়ায় আমন। সাথে সাথে সোহার চোখ মুখ রাগী হয়ে ওঠে চোখ পাকিয়ে আমনের দিকে তাকায়। সাথে সাথে আমন টুপ করে সোহার রাগী চোখের উপরে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দেয় আর সোহা চোখ বন্ধ করে ফেলে। আমন সোহার কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে যায়। আমনের উষ্ণ নিশ্বাস সোহার মুখে ঘাড়ে আছড়ে পড়ে এতে সোহা কিছুটা কেঁপে ওঠে।

-“তুমি তো জানো এইসব কিছু আমাদের একটা প্ল্যানের একটা অংশ ছিল। প্লিজ রাগ করোনা ।তুমি তো সব কিছুই জানো বলেছি না তোমাকে। আর আমি তখন বুঝতে পারিনি যে মণিকা ওই ভাবে এসে আমার উপরে ঝাঁপিয়ে যাবে। আমন একদম মোহিত কন্ঠে বলে ওঠে।

আমনের শেষের কথা শুনে আবারো মনে পড়ে তখনকার দৃশ্যটা মনে পড়ে যায় মণিকার আমনের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়া। এটা মনে পড়তে রাগে জ্বলে ওঠে সোহা সাথে সাথে সোহা কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আমনের ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দেয়। আমন সোহার দিকে ঝুঁকে তার সাথে কথা বলছিলো তাই সোহাও সুযোগ বুঝে কামড় দিয়ে দেয়। আমনের ব্যাথা লাগলেও চুপ করে সহ্য করে শেষে আমন নিজের ঠোঁট সোহার কানে ছুয়ে দেয় সাথে সাথে সোহা আমনের ঘাড়ে থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। সোহা কিছুটা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে তার নিঃশ্বাস যেনো আটকে গেছে এই প্রথম আমন তার এত কাছে এসেছে কোমরে আমনের রাখা হাতটা শক্ত করে চেপে বসে আছে আর আমন সোহার কানে ঘাড়ে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ বুলিয়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষন পরেই আমন সোহার থেকে সরে এসে দাঁড়ায়। সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে সোহা এটা দেখেই তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সোহার কপালে নিজের ঠোঁট গভীর ভাবে স্পর্শ করিয়ে দেয়। কপালে আমনের স্পর্শ পেয়ে সোহা আসতে আসতে নিজেকে স্বাভাবিক করতে থাকে। সোহার স্বাভাবিক হতে দেখে আমন ফিসফিস করে বলেন ওঠে।

-“কালকের জন্য রেডি থেকো।

আমন বেরিয়ে চলে যায় আর এইদিকে সোহার চোখ মুখ ও দৃঢ় হয়ে যায়। তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যায় সে কালকের জন্য প্রস্তুত আছে।

চলবে….. ❣️

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৭.
মল্লিক ম্যানসনে চাঁদের হাট বসেছে। চৌধুরী পরিবারের সবাই আজ মল্লিক বাড়িতে একত্রে উপস্থিত হয়েছে। সাথে রয়েছে মল্লিক পরিবারের সমস্ত সদস্য। আমন আর মণিকার বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কথা হবে সেই ক্ষেত্রে বাড়িটা পুরোই খুশির আমেজে ভরা । সোনিয়া মল্লিক আভা চৌধুরী সম্রাট চৌধুরী সাজিদ মল্লিক ও ইমরান মেহতা একসাথে নিজেদের মধ্যে কথা বলে যাচ্ছে। এখানে সবাই উপস্থিত থাকলেও শুধু মাত্র আমন নেই তাই মণিকা বারবার বাড়ির গেটের দিকে তাকিয়ে আমনের অপেক্ষা করে যাচ্ছে। ওদের থেকে একটু দূরেই বসে আছে আরহান সে এই বাড়ির ছেলে হলেও সে এইসব কিছুর থেকে দূরেই থাকে সব সময়ে। আক্রম ও তার ভাইয়ের পাশে বসে আছে। সে শুধু চুপচাপ পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে সব কিছুই।

-“আংকেল আমন কখন আসবে? মণিকা অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে সম্রাট চৌধুরীকে।

-” এতক্ষণেতো চলে আসার কথা হয়তো রাস্তায় আছে চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে। সম্রাট চৌধুরী হেসে বলে ওঠে।

-“অনেকক্ষণ হয়ে গেছে আপনারাও চলে এসেছেন কিন্তু আমন এখনও কি করছে। মণিকা নিজের মনেই বলে ওঠে।

-“মণিকা এত চিন্তার কারণ নেই তুমি তো জানো আমার ছেলে টা কেমন কাজ পাগল তাই হয়তো একটু দেরি হচ্ছে। তবে বিয়ের পর তোমার জন্য পাল্টে যেতে পারে। আভা চৌধুরী হেসে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ আন্টি আপনি একদম চিন্তা করবেন না আমন কে আমি ঠিক পাল্টে দেবো। মণিকা গর্বের হাসি দিয়ে বলে ওঠে।

-” আমার মনার উপর পুরো বিশ্বাস আছে মনা কখনই হারতে শেখেনি আর আমনকেও একদম নিজের মত বানিয়ে নেবে। সোনিয়া মল্লিক অহংকার করে বলে ওঠে।

-“ইয়েস মম। আমনতো আমার তাই আমার পছন্দ মতোই ওকে হতে হবে। মণিকা হাসি দিয়ে বলে ওঠে।

“গাছে কাঁঠাল আর গোঁফে তেল বলে” একটা প্রবাদ আছে। তো মণিকার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। আমনকে নিজের হাতের মুঠোতে রাখার চিন্তা করছে আরে ভাই আগেতো আমনকে পেয়ে নে তারপর নাহয় ভাববি আমনকে কি করে হাতের মুঠোতে করে রাখবি। এদিকে আমনের কোনো পাত্তা নেই আর সেখানে মণিকা তাকে একবারে পাল্টে দিয়ে নিজের করে হাতের মুঠোতে নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে লাইক সিরিয়াসলি। কোথায় তার সাথে একটু ভালো করে কথা কি বলেছে এতেই একেবারে আকাশ কুসুম স্বপ্নের জগতে বিচরণ করতে শুরু করেছে।

আভা চৌধুরী এতক্ষণ বসে বসে তাদের মা আর মেয়ের কথাগুলো শুনে যাচ্ছিলো। তাঁর এমনিতেও এই বিয়ে নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ নেই তিনি তেমন একটা পছন্দ করেনা মণিকাকে এমনি কোনো কারণ নেই কিন্তু বড্ড বেশি অহংকার এই মেয়ের কারোর সাথে ঠিক করে কথা বলতে জানেনা বড় ছোটো জ্ঞান করেনা। তাই একটু অপছন্দ আভা চৌধুরীর। কিন্তু সম্রাট চৌধুরী নিজেদের বন্ধুর সম্পর্ক আরও মজবুত করার জন্য সাজিদ মল্লিকের সাথে প্রথমেই এই বিয়ে ঠিক করেছিলো। আর এখনতো আমনও এই মেয়ের সাথে সম্পর্কে যেতে রাজি তাই তিনিও নিমরাজী হয়েই আছে। আমন নিজেই প্রথমে এই বিয়ের কথা শুনে একমাস বাড়িতে কথা বলত না আর এখন সেই ছেলে নিজেই এই মেয়ের sathe সম্পর্কে যেতে রাজি যে কি করে হলো সেটাই বুঝতে পারেনা আভা চৌধুরী।

-“ভাই সত্যি কি আজ এখানে আমন দা আর মণিকাদির বিয়ের কথা হবে? মানে আমন নিজেই এই বিয়ে করতে রাজি হয়েছে সিরিয়াসলি? আক্রম এতক্ষণ সব কিছুর দেখার পর আরহান কে মৃদু স্বরে বলে ওঠে।

-” তুই যেখানে আমিও সেখানে তুই যেটাই শুনছিস আমিও সেটাই শুনছি তাই আলাদা করে কিছু বলতে পারছি না। আরহান বলে ওঠে।

-” তোর আমনদার সাথে কথা হয়নি এই ব্যাপারে? আক্রম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“না আমনের সাথে আমার কয়েকদিন কোনো কথা হয়নি। আরহান নির্লিপ্ত ভাবে বলে ওঠে।

-“ওহ আচ্ছা । তবে আমার মনে হয়না যে আমনদা এই মেয়েকে বিয়ে করবে বলে এখন দেখা যাক এত দৌড় ঝাঁপ কাজে দেয় কিনা। আক্রম মাছি তাড়ানোর মতো করেই বলে ওঠে।

————

মল্লিক ম্যানসনের গেটের ভিতরে এসে থামে তিনটে বাইক সাথে পিছনে আছে আরো কিছু গাড়ি। বাইক থেকে আমন নেমে দাঁড়িয়ে মাথার হেলমেট খুলে দাঁড়িয়ে গিয়ে হাত দিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে থাকে। সোহাও বাইক থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আমনের দিকে একবার দেখে নেয়।

-“আপনি ভিতরে চলুন আমরা আসছি। সোহা বলে ওঠে।

সোহার কথা শুনেই আমন ভ্রু কুঁচকে ফেলে। সোহা আমনের তাকানো দেখে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।

-” আপনি আগেই এন্ট্রি নিন। আপনার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য হয়তো কেউ অপেক্ষায় আছে। সোহা টিজ করে বলে ওঠে।

সোহার কথা শুনে সানি আকাশ নীহার মুখ চেপে হেসে দেয়। আর আমন বুঝতে পারে আগের দিনের ঘটনা নিয়েই সোহা খোটা দিচ্ছে তাকে। আমন চুপচাপ চোখে নিজের গ্লাস পরে নিয়ে সোহার হাত টেনে নিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়। সাথে বাকিরা পিছন পিছন বাড়ির ভিতরে চলে যায়।

মণিকা বাড়ির ভিতরে আমনকে আসতে দেখে লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে আসে মণিকা। বাড়ির সবাইও আমনকে আসতে দেখে খুশি হয়ে যায়।

-“আরে আমনযে এসো এসো আমরা সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সাজিদ মল্লিক বলে ওঠে।

-” আরে আমন এতদেরি হলো যে? তোর তো আরো আগে আসার কথা ছিলো? সম্রাট চৌধুরী বলে ওঠে।

-“আরে বাবা ওকে আগে বসতে দাও তারপরে তো কথা বলবে। তা না আসতে না আসতে শুরু হয়ে গেছে। আমন বেটা তুমি এসোতো এসো বসো। সোনিয়া মল্লিক বলে ওঠে।

-“আমন তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে বলোতো আমিতো তোমার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। মণিকা আমনের দিকে যেতে যেতে বলে ওঠে।

-“আরে ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো আমন ভিতরে এসো না। ইমরান মেহতা বলে ওঠে।

-” তোমার সাথে আমার সেই ভাবে দেখা হয়ে ওঠেনি। তবে তোমার নাম কেনা জানে। আর আজতো পারিবারিক ভাবে সম্পর্ক গড়তে ও যাচ্ছে আর এবার থেকে তো আমাদের দেখা সাক্ষাত লেগেই থাকবে। ইমরান মেহতা হেসে বলে ওঠে।

-” উম হু আমি সিউরিটি দিয়ে বলতে পারছি না যে এরপরেও আমাদের দেখা হবে বলে। আমন চোখের গ্লাস খুলে বলে ওঠে।

-” মানে কি বলতে চাইছো আমন? ইমরান মেহতা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-“মানে! আরে এতো তাড়া কিসের সবেতো এলাম এখনও কথা শুরু করিনি এর মধ্যে মানে মানে করলে তো আমাকে ডিকশনারি নিয়ে ঘুরতে হবে নাহয় আমাকেই ডিকশনারি হয়ে যেতে হবে। একটু সবুর করুন সব মানের মানে বুঝতে পেরে যাবেনা মিস্টার ইমরান মেহতা। আমন বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

আমনের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আমনের কথা গুলো তাদের কেমন একটা রহস্যময় লাগছে সাথে আজকের আমনকেও কেমন রহস্যময় মনে হচ্ছে সবার কাছে। তারা বুঝতে পারছে না আমন কিসের কথা বলছে। মণিকা আমনের দিকে আসতে আসতে থেমে যায় আমনের কথা গুলো শুনে। আভা চৌধুরী আর সম্রাট চৌধুরী ও অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারাও বুঝতে পারছেনা আমন কি করতে চাইছে। আমন সবার মুখ গুলো একবার দেখে নিয়ে বাঁকা হেসে এগিয়ে গিয়ে সামনের থাকা সিঙ্গেল সোফায় বসে পড়ে পায়ের উপর পা তুলে।

-“আরে আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেনো বসে পড়ুন। এত তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে গেলে হবে নাকি? বসুন বসুন। আমন সবাই কে বসতে ইশারা করে বলে ওঠে।

সবাই বসে গিয়ে এক দৃষ্টিতে আমনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমনের মুখে হাসি লেগেই আছে। মণিকা এবার আমনের দিকে এগিয়ে যায়। মণিকা আমনকে কিছু যাবে তার আগেই বাড়িতে একের পর এক কালো পোশাকের একদল গার্ড ঢুকে গিয়ে চারিদিকে দাঁড়িয়ে পড়ে। বাড়ির মধ্যে হঠাৎ করে এমন কালো পোশাকের একদল গার্ড দেখে সবাই হকচকিয়ে গেছে। সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আসলেই এরা কারা আর এখানে কি হচ্ছে।

-“এই তোমরা কারা আর এই ভাবে বাড়িতে ঢুকে এলে কিভাবে? সোনিয়া মল্লিক রেগে বলে ওঠে।

-” কি হলো তোমরা চুপ করে আছো কেনো কথা বলো? কারা তোমরা? তোমাদের এত সাহস কি করে হলো বাড়ির ভিতরে ঢুকে আসার? ইমরান মেহতা বলে ওঠে।

-“আরে মিস্টার ইম এত কিসের? আর সাহস ঠিক কতটা আছে সেটা কি আর এক দেখায় বলা যায়।

পিছন থেকে কারোর আওয়াজ শুনেই সবাই এবার পিছনে ঘুরে তাকায়। দেখে বাড়ির ঢুকে আসছে সোহা ফুল ব্ল্যাক ড্রেসআপে। সোহার পিছন পিছন অ্যাস নীহার আকাশ সানি ও একসাথে ঢোকে বাড়ির ভিতরে।

এদিকে সোহাকে বাড়ির ভিতরে স্ব-শরীরে আসতে দেখে ইমরান চৌধুরী উঠে দাঁড়িয়ে যায়। তার চোখ দুটো মনে হচ্ছে অক্ষিকটোর থেকে বেরিয়ে আসবে এখুনি। সাথে সোনিয়া মল্লিক ও ভূত দেখার মত চমকে গেছে সোহাকে দেখে তার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেছে তার যেনো নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে তার সামনেই ওই একই মুখ দাঁড়িয়ে আছে। সোনিয়া মল্লিক ঘাবড়ে গিয়ে দরদর করে ঘেমে যাচ্ছে। সাজিদ মল্লিক ও কিছুটা চমক খেয়ে গেছে সোহাকে এখানে দেখে। সোহা বাড়ির ভিতরে ঢুকে ইমরান মেহতা সোনিয়া মল্লিক আর সাজিদ মল্লিক এর অবস্থা দেখে বিশেষ করে ইমরান মল্লিক আর সোনিয়া মল্লিকের অবস্থা দেখে সোহার ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে বাঁকা হাসি।

চলবে….. ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here