তোর_মনের_অরণ্যে,৩৪,৩৫

তোর_মনের_অরণ্যে,৩৪,৪৫
সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৪.
ফ্লোরে রক্তাক্ত শরীরে সোহার নিথর দেহ পড়ে আছে । চারদিকে রক্তে ভরে আছে। আমন স্তব্ধ হয়ে আছে। তার দৃষ্টি যেনো স্থির হয়ে গেছে চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ছে । আমন অবশ পায়ে এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় সোহার দিকে। সোহার সামনে গিয়ে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে। সোহার রক্ত শূন্য ফ্যাকাশে মুখের দিকে দেখে আমনের বুকের মধ্যে হাজার গুন বেশি যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। আমন তার কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে নিয়ে দু হাত দিয়ে সোহার মুখটা তুলে ধরে নিজের হাতের মধ্যে। আমন আচমকা দুই হাত সোহাকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে মিশিয়ে নেয়। আমনের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না সে সোহার অবস্থা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে কথা বলার শক্তি যেনো হারিয়ে ফেলেছে। অ্যাস নীহার আকাশ সানি তারাও গুটি গুটি পায়ে সোহার দিকে এগিয়ে যায়। সোহার অবস্থা দেখেই কারোর চোখ শুষ্ক নেই। আর আমন সেতো যেনো পাথর হয়ে গেছে মনের দিক দিয়ে। তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লেও তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয়নি। সে সোহার দেহ টা নিজের মধ্যে নিয়ে জড়িয়ে রেখেছে । আমনের চোখের সামনে বারবার ভেসে আসছে সোহার রাগী মুখটা আর এখন সেই রাগী মেয়েটা কিনা এই ভাবে নিথর হয়ে পড়ে আছে। সেটা যেনো আমন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

হটাৎ করেই সোহার হাতে আমন এর হাত পড়তেই আমন দ্রুত গতিতে এক হাত দিয়ে তার বুকের থেকে সোহার মুখ তুলে সোজা করে ধরে তার মুখের সোজা করে। মুখের কাছে হাত নিয়ে বোঝার চেষ্টা করে নিঃশ্বাস পড়ছে কিনা। কিন্তু না সোহার নিঃশ্বাস পড়ছে না। আমন তার হাতের সাথে লেগে থাকা সোহার হাতটা এবার চেক করে হ্যাঁ খুব সামান্য পরিমাণে পালস পাওয়া যাচ্ছে। সোহার দেহে এখনও প্রাণ আছে। অ্যাস নীহার আকাশ সানি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে হটাৎ করে আমনের এমন করায়। আমনের পাথর হয়ে যাওয়া চোখ মুখে একটা আশার আলো ফুটে উঠেছে। আমনের মুখের আশার আলো দেখেই তারাও বুঝে যায়। সানি উঠে গিয়ে দ্রুত অফিসারদের কল করে ইমিডিয়েট শর্টে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে ডক্টরকে দ্রুত সব কিছু অ্যারেঞ্জ করতে বলে । আমন সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে কপালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে গভীর এক স্পর্শ দেয়। সোহাকে কোলের উপর শুয়ে দিয়ে দ্রুত হাতে নিজের কোট খুলে শার্ট খুলে ফেলে শার্টের দুই দিকে ধরে ছিড়ে ফেলে। একটা অংশ জড়িয়ে দেয় সোহার হাতে। সোহার হাতের রগ কেটে ফেলা অংশে বেঁধে দেয় যাতে আর রক্ত বের না হয়। আরেকটা অংশ নিয়ে মাথায় ভালো করে জড়িয়ে বেঁধে দেয়। সোহার শরীরে আর কোনো জায়গায় কাটা ছড়ার দাগ নেই শুধু মাথা আর হাতের কাঁটা অংশ ছাড়া। সোহার ক্ষত স্থান বেঁধে দেওয়ার পর আদুল শরীরের উপর শুধু কোট টা পরে নেয়। তার এখন এইসব দেখার সময় নেই। দ্রুত সে সোহাকে কোলে তুলে নিয়ে উঠে রুম থেকে এক প্রকার দৌড়ে বেরিয়ে যায়। পিছনে বাকি চারজনও ছুটে বেরিয়ে যায়।

আমন সোহাকে কোলে নিয়ে দ্রুত কটেজ থেকে বেরিয়ে হেলিকপ্টারের দিকে যেতে থাকে। বাইরে দাঁড়ানো অফিসারদের সাথে এখন তার কথা বলার সময় নেই আমন সবাই কে অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যায় সোহাকে নিয়ে। আমনের গলায় মুখে বুকের অংশে রক্তে মেখে আছে। সানি আকাশ অ্যাস নীহার এসে অফিসারদের সাথে কথা বলে ওদের কাছে থাকা গার্ড গুলোকে তাদের সাথে আসা অফিসারদের হ্যান্ডওভার করে নিয়ে তারাও এগিয়ে যায় হেলিকপ্টারের দিকে।

আমন সোহাকে নিয়ে হেলিকপ্টারে উঠতেই দ্রুত ডক্টর তার চিকিৎসা শুরু করে। আমন এখনও তার ধানী লঙ্কাকে কোলে নিয়েই বসে আছে ডক্টর তার কাজ করছে। তারা যে প্রাইভেট হেলিকপ্টারে এসেছে এটা মূলত ব্ল্যাক ক্যাটদের আন্ডারে থাকে। হেলিকপ্টারে পাইলটের সাথে সাথে সব সময়ের জন্য একজন ডক্টর মজুত থাকে যাতে মিশনে থাকাকালীন কোনো বিপদ হলেই দ্রুত চিকিৎসা করা যায়। সোহার মুখে অক্সিজেন লাগানো হয়েছে হাতে মাথায় আমনের শার্টের অংশ খুলে ফেলে ব্যান্ডেজ করে দেয়। কোনো মতেই প্রাথমিক চিকিৎসা টুকু করা গেছে কোনো ভাবে প্রাণ বায়ূ টাকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। খুব সামান্য পরিমাণ হার্ট চলছে। আমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সোহার মুখের দিকে। অ্যাস নীহার আকাশ সানি পাশে বসে আছে তারাও তাদের প্রাণের বন্ধুর এইরকম অবস্থা দেখে নিজেদের ঠিক রাখতে পারছে না কিছুতেই। তারা যখন থেকে এই লাইনে আছে এই প্রথম সোহার এমন প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছে। এর আগেও বিপদ গেছে তবে সোহা সব কিছুই সামলে নিয়েছে এই প্রথম সেই এমন বিশ্রী ভাব আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। সোহার অবস্থার কোনও উন্নতি নেই সেই একই রকম আছে। সানি হেলিকপ্টারে ওঠার আগেই সোহার মাম্মাকে ফোন করে দিয়েছে সব কিছুই রেডি রাখতে বলেছে খুবই সিক্রেট ভাবে। এতদিনে বাড়িতে কোনও খবর দেওয়া হয়নি সোহার নিখোঁজের তা নাহলে সোহার পরিবার পুরোপুরি ভেঙে পড়তো তাই চেপে রেখেছিল। আমনই প্রথম থেকেই সবাই কে বলে দিয়েছে যাতে সোহার নিখোঁজের খবরটা পুরোপুরি সিক্রেট থাকে যেনো কারোর কানে কোনো কথা না যায়।

———–

প্রায় আধঘণ্টার মধ্যে তারা দিল্লী এসে পৌঁছে যায়। হেলিকপ্টার থেকে নেমে আমন সোহাকে প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে হসপিটাল এর দিকে বেরিয়ে যায় সাথে অ্যাস আর নীহার আছে। সানি আর আকাশ তাদের সাথে তুলে আনা ওই গার্ড গুলোর ব্যবস্থা করার জন্য রয়ে যায়। সানি আকাশ মিলে ওদের নিয়ে সোহার বানানো সিক্রেট জোনে রেখে তারাও বেরিয়ে যায় হসপিটালের উদ্দেশে।

হসপিটালের সামনে গাড়ি থামতে আমন দ্রুত সোহাকে নিয়ে কোলে নিয়েই দৌড়ে হসপিটালের ভিতরে ঢুকে যায়। গেটের কাছেই শ্রেতা জৈন অপেক্ষা করছিলো একটা ছেলের কোলে তার মেয়ে কে দেখে তিনি দ্রুত এগিয়ে আসে। সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। আমন কে দ্রুত আসতে বলে তিনি এগিয়ে যায়। ভিতরে ঢুকেই সোহাকে স্টেচারে শুয়ে দেয়। শ্রেতা জৈন আর তাদের সাথে থাকা বাকি ডক্টর মিলে দ্রুত ও.টি’তে ঢুকে যায়। হেলিকপ্টারে মধ্যে সোহাকে অক্সিজেন দেওয়া হলেও তাকে গাড়ি করে হসপিটাল নিয়ে আসার সময়ে খুলে দেওয়া হয়েছিল তাই সোহার অবস্থা আরও অবনতি ঘটে গেছে। ও.টি’র দরজা বন্ধ হতে আমন হাঁটু গেড়ে ওখানেই বসে পড়ে মুখে হাত দিয়ে। আমনের সব ধৈর্য্য যেনো মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেছে। অ্যাস নীহার দুজনই এগিয়ে এসে আমনের পাশে বসে পড়ে। অ্যাস তার ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে আরো বেশি করে ভেঙে পড়েছে। তার ভাইযে সোহাকে ভালোবাসে তারা সেটা আগেই বুঝতে পেরেছিল। তার হাসি খুশি থাকা ভাই কেমন পাথর হয়ে গেছে ভিতর থেকে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। সেই দিল্লী থেকে লাদাখ যাওয়ার সময়ে আমন শেষ কথা বলেছিলো আর তারপরে তার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হয়নি বরং বধির হয়ে গেছে সোহাকে দেখে। আর এখন এই অবস্থা। না জানি সোহার ভালো মন্দ কিছু একটা হয়ে গেলে আমনের কি হবে। অ্যাস নীহার দুজনই আমন কে তুলে ধরে পাশে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। আমনের শরীরে থাকা কোটের উপরেও রক্তের আস্তারন পড়ে গেছে সোহার রক্তে তার শরীর মেখে আছে। আর আমন তার দৃষ্টি ও.টি’র দিকে করে রেখে গেছে। সবাই চিন্তিত হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যেই হসপিটালে ধীরাজ জৈন আর সৌজন্য জৈন এসেও হাজির হয়ে গেছে সাথে কিছুক্ষণ পরই আকাশ সানি ও এসে যায়। সবাই চিন্তিত হয়ে বাইরে পায়চারি করে যাচ্ছে সাথে উপর ওয়ালার কাছে প্রে করে যাচ্ছে।

সৌজন্য আর ধীরাজ জৈন এখানে আমনকে দেখে কিছুটা অবাক হয়েছে আকাশ সানির থেকে সব কিছু শুনে সৌজন্য গিয়ে আমনের পাশে বসে পড়ে সৌজন্যের সাথে আমনের বেশ একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে তাদের বিজনেস সূত্র থেকে। আমনের কাঁধে হাত রাখে সৌজন্য কিন্তু এতেও আমনের কোনো পরিবর্তন হয়না। আমন সেই একইরকম ভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও.টি’র বন্ধ দরজার দিকে। আমনের চোখের সামনে শুধু একের পর এক সোহার সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো ভেসে আসছে সোহার তেজি মুখ রাগে লাল হয়ে যাওয়া চোখ মুখ সাথে মূল্যবান সেই হাসি সব কিছু সাথে সোহার আজকের সেই ফ্যাকাশে রক্ত শূন্য মুখটা ভেসে ওঠে।

ইতি মধ্যেই কয়েকবার ও.টি’র দরজা খুলে নার্স বেরিয়ে এসেছিল রক্তের জন্য তারা যা মজুত রেখেছিলো তার প্রায় সবটাই লেগে গেছে তাই ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের তলব পাঠানোর জন্য নার্স বাইরে এসেছিল আবার ভিতরেও চলে গেছে। নার্স থেকে সোহার কন্ডিশন কিছুই জানা যায়নি। তাই কারোর মন থেকে দুশ্চিন্তা ও যায়নি।

চলবে….. ❣️

#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৫.
অস্থির হয়ে সব ও.টি’র বাইরে পায়চারি করে যাচ্ছে। ভিতরে যে কি হচ্ছে তারা বুঝতে পারছে না। এদিকে আকাশ সানি অ্যাস নীহার শান্ত হয়ে বসতে পারছেনা প্রকৃত তারাই জানে সোহাকে তারা কোন অবস্থা থেকে নিয়ে এসেছে সোহার অবস্থা কতটা সংকটে ছিল। প্রথমেই তারা ভেবেছিল সব কিছু শেষ কিন্তু তারপরেও সোহাকে ফিরে পেয়েছে কিন্তু সেটা যে এক্কেবারের মত সেটা নিয়েই তারা নিশ্চিত নয়। কারণ সোহার অবস্থা এমন ছিল যে যেকোনো মুহূর্তে খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে। দু ঘন্টা হতে চলেছে এখনও কোনও খবর নেই। তাই সবাই আরো বেশি করে দুশ্চিন্তা করছে। তবে এর মধ্যে শুধু আমনই সেই একইভাবে বসে আছে। তার দৃষ্টি এখনও সেই ও.টি’র দিকে নিবন্ধ হয়ে আছে। সেই একইরকম অনুভূতি হীন পাথর হয়ে বসে আছে। আর আমনের এমন প্রতিক্রিয়াতে বাকি সবাই ও বেশ চিন্তিত হয়ে আছে আমনকে নিয়ে। তারা সবাই চেষ্টা করেও আমনকে কোনো কথা বলাতে পারিনি আর ওখান থেকে তুলতে পেরেছে। আমন সেই রক্ত মাখা অবস্থায় এখনও আছে।

পাক্কা দু ঘন্টা পরেই ও.টি’র দরজা খুলে বেরিয়ে আসে শ্রেতা জৈন ও আরেক জন ডক্টর তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে বের হয়। শ্রেতা জৈন কে বের হতে দেখে সবাই এগিয়ে যায়। কিন্তু আমন ওঠে না সে এখনও সেই এক ভাবে একই জায়গায় বসে আছে অনুভূতি শূন্য হয়ে। শ্রেতা তার সামনে সবাই কে দেখে কেমন চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর নজর কিছুটা দূরে চেয়ারে বসে থাকা আমনের দিকে পড়ে যে এখনও ও.টি’র দিকে তাকিয়ে বসে আছে। এই ছেলেটাই সোহাকে কোলে নিয়ে দৌড়ে এসেছিল এখনও তার ড্রেসে লেগে আছে রক্ত শ্রেতা জৈন আমনকে দেখেই চিনতে পারে। তবে এমন শোকাগ্রস্থের মতো অবস্থা দেখে তার ভ্রু কুঁচকে আসে।

-“মম সু এর কি অবস্থা? কেমন আছে ও? সৌজন্য এগিয়ে গিয়ে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ আন্টি বলুন না সোহা এখন কেমন আছে? ঠিক আছে তো? অ্যাস কান্না ভেজা কন্ঠে বলে ওঠে।

-“শ্রেতা তুমি চুপ করে আছো কেনো আমার মেয়ে এখন কেমন আছে সেটা তো বলো? ধীরাজ জৈন অধৈর্য্য হয়ে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ আন্টি প্লিজ বলুন না সোহা কেমন আছে? সানি বলে ওঠে ।

শ্রেতা জৈন চোখ ঘুরিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে নেয় একবার। তাঁর মুখ ও থম থম করছে। আর এই কারণে সবাই আরো বেশি ভয় পেয়ে আছে সোহার কন্ডিশন নিয়ে।

-” সোহার শরীরে হাই ডোজের মারাত্মক ড্রাগস পাওয়া গেছে। শ্রেতা জৈন থমথমে মুখে বলে ওঠে।

-” হোয়াট ড্রাগস? সানি আতকে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ সোহার শরীরে ড্রাগস পাওয়া গেছে। এই ড্রাগসের এফেক্ট শরীরে ধীরে ধীরে কাজ করে। আর মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। যতো দূর মনে এই ড্রাগস ওকে একটু একটু করে দেওয়া হয়েছে। পাশে দাঁড়ানো ডক্টর বলে ওঠে।

-“কি বলছো এইসব ড্রাগস। ধীরাজ জৈন বলে ওঠে।

-” মাথায় আঘাত টাও গভীর হয়েছে আর হাতের রগ কাটার ফলে রক্ত লস হয়েছে। শ্রেতা জৈন ধরা গলায় বলে ওঠে।

-“শ্রেতা এটা বলো আমার সোহার এখন কি অবস্থা ও বেঁচে আছে তো? ধীরাজ জৈন অসহায় ভাবে বলে ওঠে।

-” আর একটু দেরি হলে হয়তো আর বাঁচানো যেতো না। ড্রাগসের প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে এখন যত ক্ষণ না পর্যন্ত জ্ঞান ফেরে কিছুই বলতে পারছি না। তবে হ্যাঁ ও বেঁচে আছে। তবে ওর শরীর এর পর ঠিক থাকবে কিনা জানিনা কারণ এইরকম একটা মারাত্মক ড্রাগসের সাইড এফেক্ট থাকতেই পারে তাই সেটা জ্ঞান ফেরার পর জানা যাবে। শ্রেতা জৈন বলে ওঠে।

সৌজন্য ধীরাজ জৈন কে পিছন থেকে ধরে নেয়। নাহলে এক্ষুনি হয়তো পড়েই যেতো। শ্রেতা জৈন আবারো আমনের দিকে তাকায়। সেই এখনও একই ভাবে বসে আছে।

-“আন্টি সোহার সাথে দেখা করা যাবে? অ্যাস বলে ওঠে।

-” উম ওকে এখন অবজারবেশনে রাখা হবে। তবে দেখা করতে পারবে তবে বেশি জন নয় একজন একজন করে। শ্রেতা জৈন আমনের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

অ্যাস আমনের কাছে এসে বসে কাঁধে হাত রাখে। এতেও আমনের কোনো হেলদোল নেই সেই একইভাবে বসে আছে।

-” ভা ভা ভাই। সোহা বেঁচে আছে। সোহা এখন ঠিক আছে। অ্যাস কান্না রুদ্ধ গলায় বলে ওঠে।

এই একটা কথা” সোহা বেঁচে আছে সোহা ঠিক আছে ” এই কথাটা বারুদের মত কাজ করে আমনের মাথায়। চকিতে আমন মাথা ঘুরিয়ে তাকায় অ্যাসের দিকে।

-” সোহা ঠিক আছে ভাই। ওকে অবজারবেশনে রাখা হয়েছে দেখা করে এসো তুমি। অ্যাস মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে।

আমন অ্যাসের কথা শুনে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে তাকিয়ে থাকে। তারপরে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে যায়। প্রায় এক রকম দৌড়ে বেরিয়ে যায় কেবিনের দিকে। সবাই আমনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রেতা জৈন তাকিয়ে থেকে সৌজন্যের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-“কে ও?

-” আমন রোদ চৌধুরী। সৌজন্য বলে ওঠে।

-“আমন? কিন্তু ওর সাথে আমার লাডোর কি সম্পর্ক? শ্রেতা জৈন ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

সৌজন্য একটু চুপ করে থেকে একটু আগে আকাশের কাছে থেকে সোহা আর আমনের মধ্যের সম্পর্ক নিয়ে সব বলে। শ্রেতা জৈন সব কিছু শুনে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তার মেয়ের জীবনে ভালোবাসাও এসেছে কিন্তু সেই মেয়ের অবস্থা এখন করুন।

————

আমন ধীর পায়ে কেবিনের ভিতরে ঢোকে। এক দৃষ্টিতে তাকায় দূরে শুয়ে থাকা সোহার দিকে। কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় সোহার কাছে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো আছে একহাতে স্যালাইন ও অন্য হাতে রক্তের কানেকশন দেওয়া আছে। মাথায় আর হাতে ব্যান্ডেজ করা। মুখটা এখনও সেই ফ্যাকাশে হয়ে আছে । আমন এগিয়ে গিয়ে সোহার পাশে বসে। সোহার দিকে ঝুঁকে গিয়ে কপালে গভীর স্পর্শ বুলিয়ে দেয়। আলতো হাতে সোহার হাত নিজের হাতে নিয়ে নেয়। হাতের কাটা জায়গায় আমন নিজের ঠোঁটের স্পর্শ বুলিয়ে দেয়। সোহার এই অবস্থা দেখে আমনের চোখের কোল থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।

-“আমার ধানী লঙ্কা। অস্পষ্ট ভাবে বলে ওঠে আমন ।

এতক্ষণ পরেই তার মুখ দিয়ে কথা ফোটে। আমন অন্য হাত দিয়ে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

-” তুমি তোমার কথা রাখোনি ধানী লঙ্কা তুমি কথা দিয়েছিলে আমাকে তুমি নিজের খেয়াল রাখবে কিন্তু সেটা তুমি রাখতে পারনি। এর জন্য তোমাকে আমার থেকে শাস্তি পেতেই হবে তুমি দেখ। প্লিজ আমার ধানী লঙ্কা তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো। আমন ভাঙা কন্ঠে বলে ওঠে।

আমন এক দৃষ্টিতে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে আর কিছুক্ষণ পর পর সোহার হাতে আর মাথায় তার ঠোঁটের স্পর্শ বুলিয়ে যাচ্ছে ।

-“তোমার এই অবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদের মৃত্যু সমান শাস্তি পেতে হবে কাউকে আমি রেহাই দেবো না কাউকে না। আমন কঠিন গলায় বলে ওঠে।

কিছুক্ষণ একভাবে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে আর কপালে ও হাতে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। এক পলক সোহাকে দেখে নিয়ে বাইরের দিকে পা বাড়ায়। এতক্ষণ দরজার বাইরে থেকে সবাই উঁকি দিয়ে দেখ ছিল আমনের পাগলামি শ্রেতা জৈন নিজের মেয়ের ভালোবাসার সঙ্গীকে দেখে খুশি হন। তার মেয়ের ওই লাগাম ছাড়া জীবনে অন্তত কেউ এসেছে যে তার মেয়ের খেয়াল রাখবে সামলে রাখবে। আমন রুম থেকে বের হতে দেখে সবাই এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

-” আকাশ ওদের কোথায় রেখেছিস? আমন তীক্ষ্ণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” আমন দা বলছিলাম আমিও যাই তোমার সাথে না মানে…

-“ওদের কোথায় রেখেছিস সেটা বল মৃদু ধমক দিয়ে বলে ওঠে আকাশ কে থামিয়ে দিয়ে।

-” সোহার সিক্রেট জোনে ।বলেই আকাশ তার অ্যাড্রেস দিয়ে দেয়।

আমন আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে যায় ওখান থেকে। সবাই আমনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। অ্যাস নীহার সানি আকাশ এর আগেও আমনের হিংস্র রূপ দেখেছে আর আজকে তো সোহার অবস্থা আরও খারাপ ছিল সেদিন শুধু একটু আঘাতের জন্য আমন ওদের পিটিয়ে ধুলো করে দিয়েছে আর আজকে তো আর একটু হলেও সোহাকে বাঁচানো যেতো না তারমানে আজকে ওদের অবস্থা মৃত্যুর যন্ত্রণার হবে। তাই আকাশ আমনকে একা না ছেড়ে নিজেও যেতে চেয়েছিলো কিন্তু আমনের ধমক খেয়ে চুপ করে গেছে।

————-

অন্ধকার রুমের মধ্যে পড়ে আছে পাঁচ জন লোক। তাদের হাত পা কিছুই বাঁধা নেই তারপরেও তারা একই ভাবে পড়ে আছে। আমন রুমের ভিতরে যেয়ে লাইট এর সুইচ অন করে সব গুলোর দিকে একবার দেখে নেয়। তারপরে সঙ্গে করে আনা পাত্রের গরম পানি তাদের উপরে ফেলে দেয়। সাথে সাথে সব গুলো হুড়মুড় করে উঠে বসে। আসলেই তাদের ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করা হয়েছিলো হেলিকপ্টারে তুলে নেওয়ার পর।

আমন ওই পাঁচ জনের দিকে তীক্ষ্ণ হিংস্র নজরে তাকিয়ে হাতে গান নিয়ে ওদের চারপাশে ঘুরতে থাকে। আমনকে এই ভাবে ঘুরতে দেখে ওখানে থাকা পাঁচজন ভয়ে গুটিয়ে যায়। সানি আকাশ আর বাকিদের হাতে মার খেয়ে এমনিতেও আঘাত প্রাপ্ত হয়ে আছে আর এখন আমনের হিংস্র রূপ যেনো তাদের ভিতরে আরো বেশি করে কাঁপিয়ে দিচ্ছে।

-“কারা তোরা কার হয়ে কাজ করিস ঠিক ঠিক উত্তর দিলে প্রাণে বেঁচে যাবি। আমন হুঙ্কার ছেড়ে বলে ওঠে।

পাঁচজন একে অপরের মুখের দিকে তাকায় তারপরে আবারো আমনের মুখের দিকে তাকায়।

-” কাদের হয়ে কাজ করিস? আমন আবারো একই ভাবে বলে ওঠে।

-“আমরা আমরা। আমতা আমতা করে বলে ওঠে ওদের মধ্যে একজন লোক।

-“সত্যি কথাটা কি পেটে থেকে বের হবে নাকি? বলেই হাতের ছুরি টা একজনের দিকে তাক করে।

-” আমাদের কোনো দোষ নেই বিশ্বাস করুন আমরা কিছু করিনি আমরাতো শুধু অর্ডার পালন করেছি আর ওই মেয়ে কেও আমরা কিছু করিনি । একজন ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে।

-” সোহাকে কেনো তুলে নিয়ে গেছিলি? আর ওর ওই অবস্থা কে করেছে বল? আমন ওদের দিকে ঝুঁকে বলে ওঠে।

-“ওই মেয়ে কে আমরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম শুধু এরপর আর আমরা কিছু করিনি যা কিছু হয়েছে সব বস করেছে আমরা কিছু করিনি বিশ্বাস করুন।

-“কে তোদের বস?

-” জানিনা নাম জানিনা আমরা টাকা নিয়ে কাজ করেছি এর বেশি কিছুই জানি না শুধু বস নামেই চিনি এর বেশি কিছু না । তবে ওই মেয়ের সাথে কথা বলছিল কি সব পুরোনো হিসেব নিয়ে। ওদের মধ্যে একজন বলে ওঠে।

আমন মন দিয়ে সবার কথা শোনে তারপরই কিছু একটা ভাবতে তাড়াতাড়ি করে নিজের ফোন বের করে কিছু খুঁজতে থাকে। ফোনটা এগিয়ে নিয়ে ওদের সামনে ধরে।

-“দেখত এই ছিল কিনা? আমন বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ হ্যাঁ এই ছিল আমাদের বস। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে।

ওদের কথা শুনেই আমনের মাথার রগ ফুলে ওঠে। চোখ গুলো লাল হয়ে ওঠে মুহূর্তের মধ্যে পুরো চোখ মুখ হিংস্রতায় ফুটে ওঠে।

-“তোমার সব খেলা শেষ হয়ে এসেছে এবার থেকে আমার খেলা শুরু হবে। তোমার শেষ দিন তুমি গুনতে শুরু করো। তোমার করা প্রত্যেকটা অন্যায়ের শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। অপেক্ষা করো সবকিছু সুদে আসলে হিসেব করে ফিরিয়ে দেবো তোমাকে তোমার কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। আমন তীক্ষ্ণ হিংস্র গলায় বলে ওঠে।

————-

সারারাত পার করে সকালের দিকেই সোহার জ্ঞান ফিরেছে। সবাই একসাথে সোহার কেবিনেই আছে। শ্রেতা জৈন সোহার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে চোখের কোণে এখনও অশ্রুকনা ভিড় করে আছে। আগের দিনের সোহার অবস্থার কথা ভাবলেই তার বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে। কেবিনে থাকা বাকিরাও সোহার দিকে তাকিয়ে থাকে। অ্যাস নীহার সানি আকাশ সোহার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে ।

-“আমি এখন একদম ঠিক আছি তোমরা কেনো এমন করছো। সোহা মৃদু আওয়াজে বলে ওঠে।

-” তোকে সব সময়ে পাকামি করতে হবে তাইনা। তুই তো আমাদের সাথেই ছিলি তাহলে তুই কি করে হারিয়ে গেলি আর কেনো? অ্যাস বলে ওঠে।

অ্যাসের কথা শুনেই সোহা মৃদু হাসে। সে জানে তার কিছু হলেই এই চারজন এমনি করে।

-” আরে আমিতো তোদের সাথেই ছিলাম হঠাৎ করেই পিছন থেকে কিছু আওয়াজ পেয়েই আমি থেমে গিয়েছিলাম আর কেউ পিছন থেকে মুখ চেপে ধরে রুমাল দিয়ে ব্যাপারটা এত দ্রুত ঘটে গেছিলো যে আমি ঠিক খেয়াল করে উঠতে পারিনি। আর তারপরে যখন জ্ঞান ফেরে তখন আমি ওই এক রুমে পাই নিজেকে। সোহা সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ।

-“জানিস তোকে আমরা কোথাও খুঁজে পাইনি কত খুঁজেছি হন্যে হয়ে। সানি বলে ওঠে।

সোহা মৃদু হেসে বারবার দরজার দিকে তাকাতে থাকে। তার চোখ কাউকে খুঁজে যাচ্ছে। সোহার এমন করতে দেখে অ্যাস কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে সোহার এই চোখের ভাষা। কিছুক্ষণ পরে কিছু একটা ভেবে অ্যাস নিজের মনে হেসে ফেলে।

-“কাউকে খুঁজছিস? অ্যাস ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ আমনকে । সোহা আনমনে বলে ওঠে।

সোহার কথা শুনে সবাই ভ্রু কুঁচকে এখন সোহার দিকে তাকায়। তাদের মাথায় শুধু এখন একটাই কথা ঘুরে বেড়াচ্ছে যে সোহা কি করে জানলো যে আমন এখানেই আছে আর তাকে লাদাখ থেকে উদ্ধার করেছে।

-” আমনকে কেনো? শ্রেতা জৈন বলে ওঠে।

-“আমন যে এখানেই আছে সেটা তুই কি করে জানলি? সানি ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-” এটা আমারই জানার কথা কারণ আমি এইযে তোদের সামনে আছি এখানে বেঁচে আছি সেটা শুধুমাত্র আমনের জন্য। ওই আমাকে খুঁজে বের করেছে। সোহা সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ।

-” তুই কি করে জানলি? আর তুই এতটা শিউর কি করে হলি? নীহার বলে ওঠে।

-” মাম্মা আমার হাতে একটা ব্রেসলেট ছিলো সেটা কোথায়? সোহা শ্রেতা জৈন কে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” ওটা আমার কাছেই আছে। কিন্তু আমিতো বুঝতে পারছি না যে তুই কবে থেকে এমন ব্রেসলেট পরতে শুরু করলি তুই তো এইসব পছন্দ করিস না? শ্রেতা জৈন ভ্রু কুঁচকে ব্রেসলেট টা সোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে।

সোহা ব্রেসলেট টা হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। সবাই এক ভাবে সোহার দিকে দেখতে থাকে।

-“কারণ একমাত্র আমি কোথায় আছি সেটা আমন জানতে পারতো তাই। বাকি কথা এড়িয়ে সোহা বলে ওঠে।

অ্যাস আর কিছু করতে বলতে যাবে তার আগেই রুমের দরজা খুলে যায়। সবাই সেদিকেই তাকিয়ে দেখে আমন কেবিনে ঢুকছে। আমন এক দৃষ্টিতে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে সাথে সোহাও। রুমের মধ্যে থাকা সবাই ওদের পর্যবেক্ষণ করে নিঃশব্দে বেরিয়ে যায়।

আমন একভাবে তাকিয়ে থেকে আলতো পায়ে এগিয়ে যায় সোহার দিকে। সোহার পাশে গিয়ে বসে এক হাত বাড়িয়ে সোহার হাত নিজের হাতের মুঠো তে নিয়ে নেয়। সোহা মুখে আলতো হাসির রেখা টেনে এক ভাবে তাকিয়ে থাকে আমনের দিকে। কেমন একটা উদ্ভ্রান্তের মতো লাগছে আমনকে সোহার বুঝতে বাকি থাকেনা তার কারণেই আমনের এই অবস্থা। আমন সোহার হাত এগিয়ে এনে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ বুলিয়ে দিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

-“কথা বলবেন না আমার সাথে? সোহা মৃদু আওয়াজে বলে ওঠে।

আমন কোনো কথা না বলে সেই একই ভাবে চুপ করে নিজের ঠোঁট সোহার ছুয়ে রেখে বসে থাকে।

-” কি হলো কথা বলবেন না আমার সাথে? সোহা আবারো জিজ্ঞেস করে ওঠে।

আমন তার মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে বুঝিয়ে দেয় যে সে কথা বলবে না।

-” কেনো আমার কি দোষ? সোহা জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“তুমি তোমার দেওয়া কথা রাখোনি। নিজের খেয়াল রাখবে বলেছিলে কিন্তু তুমি তোমার কথা রাখোনি । আমন মুখ ফুলিয়ে বলে ওঠে।

আমনের কথা শুনে সোহা মৃদু হাসে । বুঝতে পারে আমনের বলা কথা। সোহা মৃদু হেসে বলে ওঠে।

-“স্যরি ।

-” তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে কি হতো বলো? আমি কি করতাম বলো তুমি? আমন তার দুই হাতে সোহার মুখে আজলা করে তুলে ধরে বলে ওঠে।

-“আমি জানতাম আপনি আমাকে ঠিক খুঁজে নিতেন আমাকে কিছু হতে দিতেন না। সোহা আলতো হেসে বলে ওঠে।

সোহা ব্রেসলেট টা আমনের দিকে এগিয়ে দেয়। মুখে ফুটে আছে মিষ্টি হাসি। আমন ভ্রু কুঁচকে একবার দেখে নিয়েই বুঝতে পারে যে সোহা জানতো যে এই ব্রেসলেটের মধ্যে ক্যামেরা ও ট্র্যাকার লাগানো ছিলো। এটা বুঝতেই আমনের মুখে ও হাসি ফুটে ওঠে।

-“তুমি কখন বুঝতে পারলে? আমন জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” আপনি যখন পরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন যে এটা কখনই নিজের থেকে আলাদা করবে না তখনই ধারণা করেছিলাম আর তারপরেই শিউর হই পরের দিন ব্রেসলেট টা খেয়াল করে। সোহা বলে ওঠে।

আমন মুখে হাসি ফুটিয়ে আবারো ব্রেসলেটটা হাতে পরিয়ে দেয়। সোহা হেসে একভাবে আমনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

-“আমি এটা তোমাকে দিয়েছিলাম ঠিক কিন্তু এটা অ্যাক্টিভ করা ছিলোনা। আর তাছাড়া লাস্ট কয়েকদিন কাজের এতটাই প্রেশার ছিল যে এটা অ্যাক্টিভ করেনি। সেদিন বিকালে অ্যাসের ফোন পেয়েই তখনই আমি এটা অ্যাক্টিভ করি আর জানতে পারি। স্যরি আমার জন্য তোমাকে তিনদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমন অসহায় ভাবে বলে ওঠে।

-“স্যরি কেনো মন তুমিই বা কি করে জানবে বলো। সোহা হেসে বলে ওঠে।

-” আচ্ছা তুমি ওদের হাতে গেলে কিভাবে? আমন ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে ওঠে।

-“ওরা পিছন থেকে আমার উপর অ্যাটাক করেছিলো আর হঠাৎ করে এমন হওয়ায় আমি কিছু করে উঠতে পারিনি পরে যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখি একটা রুমে বন্দি হয়ে আছে হাত পা বাঁধা। আমার সামনে একজন লোক বসে ছিল। তারা আমার উপর কেউ টর্চার করেনি কি অদ্ভূত তাইনা তবে কোনও কথা না বলে প্রতিদিন একটা ইনজেকশন দিত আর তারপরই আমি কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে যেতাম ওটা বোধহয় ড্রাগস ছিল। তবে তিন দিনের দিন সকালে অন্য একটা লোক আসে। আর তখনই বুঝতে পারি আসল ব্যাপারটা। তারা কোনো ভাবে জানতে পেরেছিল যে আমিই রাঠোরদের কে মেরেছি। আর সেই সাথে কোনো এক পুরোনো শত্রুতার কথা বলে যদিও সেটা আমার মাথায় নেই কারণ ততক্ষণে তারা আমার শরীরে আরো একটা ইনজেকশন পুষ করে তাই ঘোরের মধ্যে ছিলাম তাই তার শেষের কথা গুলো বুঝতে পারিনি। তারপরেও চেষ্টা করে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠতে গেলেই মাথায় আঘাত পাই সাথে হাতেও তারপর আর কিছু মনে নেই আমার। সোহা একভাবে বলে ওঠে।

আমন সোহার কথা শুনে তার ফোন বের করে এগিয়ে দেয় সোহার সামনে। সোহা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় ।

-“হ্যাঁ এই লোকটাইতো ছিল। মন আপনি কি চেনেন একে? সোহা উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে।

-” হুম । তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো। এখনও তোমার জানার অনেক কিছুই বাকি আছে। তুমি সুস্থ হলেই সব হিসেব মেটানোর আছে। আমন দৃঢ় ভাবে বলে ওঠে।

আমন সোহার দিকে ঝুঁকে গিয়ে সোহার কপালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দেয় গভীর ভাবে। সাথে সোহা কেঁপে উঠে নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়। এই মুহূর্তে সোহাকে কোনো ভাবেই আমন উত্তেজিত করতে চায়না এইসব কথা বলে তাই এই পথ অবলম্বন করে নেয় সোহার মাইন্ড ডাইভার্ট করতে। সোহা সুস্থ হলেই তবেই শুরু হবে খেলা। আমন শুধু সোহার সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় আছে।

চলবে….. ❣️

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here