তোর_মনের_অরণ্যে,১০,১১
সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১০.
-“আর তোমার তীক্ষ্ণ চোখের দৃষ্টি থেকেও কিছু এড়িয়ে যায় না। ইম্প্রেসিভ। আমন হেসে বলে ওঠে।
-” তো মিস্টার চৌধুরী মিস্টার রোঠোর কে আপনার কোন শত্রুতার জন্য মারলেন আজকে? নাকি অন্য কিছু কারণ ছিলো? সোহা বাঁকা হেসে বলে ওঠে।
আমন সোহার কথা শুনে সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মুচকি হাসছে । আমন এর মুখের দিকেও হাসি লেগে আছে। সে প্যাজেল বক্স ঘোরাতে ঘোরাতে সামনের দিকে তাকায়।
-” উম পার্সোনালি কোনো শত্রুতা নেই আমার তার সাথে। তবে সে আমার সাথে তার রেসারেসি করে সেটা বড় ব্যাপার না। তবে আজ সে খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। তাই এটুকু তো ওর প্রাপ্য ছিলো। আমন কথা টা বলতে বলতে গলার আওয়াজ কঠিন হয়ে আসে।
সোহা আমন এর কথা বুঝতে পারে সে কোন বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি কথা বলেছে সেটা ও জানে। আজ আকেশ তার সাথে বারবার মেশার চেষ্টা করছিলো আর শেষের দিকে তো সব কিছুর উপর দিয়ে চলে গেছে। সোহা নিজেও খুব রেগে গেছিলো তবে শুধু ইউনিভার্সিটি গ্রাউন্ড ছিল তার উপরে স্টুডেন্টরা ও ছিল তাই কিছু বলিনি সোহা। তবে সে চুপ থাকলেও আমন চুপ করে ছিল না সে আকেশ কে আঘাত করে দেয়। তবে আমন এমন রিয়্যাকসন দেখে সোহা স্তম্ভিত হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে যে আমন তার প্রতি আসতে আসতে আসক্ত হয়ে পড়ছে সেটার পরিণতি শেষে হ্যাপি নাও হতে পারে।
-” আপনি যে পথে এগিয়ে যাচ্ছেন সেটা কিন্তু খুব রিস্কি সফল নাও হতে পারেন। আমি আগেই সাবধান করেছি এখনও করছি। সোহা বলে ওঠে।
-” এমনিতেই আমি রিস্ক নিতে পছন্দ করি সহজ জিনিষ আমার মোটেও পছন্দের নয়। আর একবার যে জিনিস এর উপর আমার নজর পড়ে সেটা আমি নিজের করে নেই সেটা যায় হোক না কেনো। এত দিন জিনিষ এর উপর ছিল আর এখন পরীর উপর।। আমন সোহার দিকে সরে বলে ওঠে।
আমন এর কথা শুনে সোহা চোখ ফিরিয়ে নেয় এতক্ষণ সে আমন এর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমন যে গভীর ভাবে ডুবে যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে সোহা। এবার সে কথা ঘোরায়।
-“আপনার কাজ কতদূর এগোলো। সোহা বলে ওঠে।
-” হুম চলছে খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে। সব দিক দিয়ে জাল বিছানো হয়ে গেছে এবার শুধু আটকে যাওয়ার পালা। আমন বলে ওঠে।
-“ঠিক আপনি..
সোহা কে আর বলতে না দিয়ে আমন হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয় তার পর সে বলে ওঠে।
-” এই আপনি আপনি টা এবার বন্ধ করা যায় না? বড্ড দূরের দূরের মনে হয়। আর যেহেতু এখন আমরা এখন একসাথে কাজ করছি তো এই আপনি আগ্গে টা বাদ দিলে হয়না? আমন বলে ওঠে।
-“কিন্তু আমার আপনি টা বেশি পছন্দের। কয়েকজন কাছের কাউকে ছাড়া আমি সবাই কে আপনি সম্বোধন করি। সোহা বলে ওঠে।
-” ঠিক আমি তো আপনি বলতে পারব অন্তত যাকে একবার নিজের ভাবি তাকে তো কোনো মতেই আপনি বলতে পারি না। তাই আমিতো তুমিই বলব। আর আপনার আপনি বলা টাও একদিন তুমি তে চলে আসবে। আমন বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।
-” এই ছেলে দেখছি তীব্র আসক্ত হয়ে যাচ্ছে উফ কি জ্বালা। আবার কি কনফিডেন্ট আর অ্যাটিটিউড ও কানায় কানায় ভরা। আমি দেখি চাঁদু তুমি কি করতে পারো হু। তুমি কি মনে করেছ তোমার এই প্যাচ লাগানো জিলিপির মত কথা গুলো আমি ধরতে পারবো না। এই সোহা কে পাওয়া অত সহজ নয়। সোহা নিজের মনে বলে ওঠে।
-“রাতের এই পরিবেশ টা কি সুন্দর তাই না। আমার তো খুব ভালো লাগে। সোহা বলে ওঠে।
-” ঘুরে দেখবে রাতের পরিবেশ? সাথে সাথে বলে ওঠে আমন।
-“উম যাওয়ায় যায়। তবে আমি এখানের বেশি কিছু চিনি না এখানে আমার এই প্রথম আসা । দিল্লী হলে এতক্ষণ বলতে হতো না বাইরে থাকতাম। সোহা আলতো হেসে বলে ওঠে।
-“তো চলো যাওয়া যাক। আমি তোমাকে সব চিনিয়ে দেবো। আমন হেসে বলে ওঠে ।
সোহা এক পলক আমন কে দেখে নেয় । আমন হাসি মুখে গভীর ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বড্ড অস্বস্তি হয় ওই চোখে চোখ রাখতে সোহার তাই সে চোখ সরিয়ে নেয়। আমন এক পলক সোহার দিকে তাকিয়ে তাকে সামনে এগোনোর জন্য ইশারা করে। তারপরেই বেরিয়ে পড়ে দুজন। এই প্রথম আমন সোহার বাংলোর সামনে এলো। নাহলে সে পিছনের রাস্তা দিয়ে এসেছে। বাড়ির সামনেই সোহার বাইক সাথে বাকি আরো দুটো বাইক পার্ক করা আছে। সোহার আগেই আমন গিয়ে সোহার বাইক এর পিছন সিটে বসে পড়ে।
-“এটা কি হলো আপনি কি আমার সাথে যাবেন মানে আমার বাইকে? সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।
-” হ্যাঁ, আবার না কেনো। যেহেতু আমরা একসাথে বেরিয়েছি তো যাবো ও একসাথে তাইনা। আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো দেখি। আমন বলে ওঠে।
-“আমি কখনো বাইক রাইড করিনি ।না মানে কোনো মেয়ের সাথে আর কি তাই আজকে সেই কাজ টাও হয়ে যাবে। সোহার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকা দেখে বলে ওঠে আমন।
সোহা আর কিছু না বলে বাইকে উঠে পড়ে। বাইক স্টার্ট দিতে যাবে তখন অনুভব করে তার কোমরের দুটো হাতের । সে এবার মাথা নিচু করে হাত দুটো তার কোমর আকড়ে ধরে আছে পিছন থেকে। সোহা মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতে দেখে আমন তার দিকে একদম বাচ্চাদের মত মুখ করে বসে আছে। সোহার তাকানো দেখে আমন বলে ওঠে।
-“আরে বাবা এই প্রথম কোনও মেয়ের বাইক এর পিছনে চেপেছি ভয় লাগে না নাকি? আর তোমার বাইক চালানো আমি দেখেছি যদি পড়ে যাই তাই তোমাকে ধরে রাখলাম। আমন বেবি ফেস করে বলে ওঠে।
সোহা আর কোনো কথা না বলে বাইক স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে যায়। আর আমন এর মুখে ফুটে ওঠে বাঁকা হাসি। আজ আমন এর মনে হচ্ছে তার বাইক চাপা টা সার্থক হয়েছে। সে এবার আরো একটু চেপে বসে সোহার সাথে আর হাত গুলো কে আরও ভালো ভাবে জড়িয়ে নেয় সোহার কোমরে । তার থুতনিটা ঠিক সোহার কাঁধের উপর রাখে।
-“অ্যাডভান্টেজ টা তো খুব ভালোই নিতে পারেন দেখছি আপনি। সোহা ঘাড় ঘুরিয়ে বলে ওঠে।
-” অ্যাডভান্টেজ কোথায় নিলাম আমি তো পড়ে যাওয়ার ভয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম যাতে পড়ে না যাই। আমন মুচকি হেসে বলে ওঠে।
-“মিস্টার চৌধুরী ভুলে যাবেন না আপনি কাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন। সোহা বলে ওঠে।
-“আমার ঘাড়ে কটা মাথা শুনি যে আমি লেডি ডন কে বোকা বানাতে যাবো। আমি তো শুধু সঠিক টাই বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমন বলে ওঠে।
সোহা আর কিছু বলে না চুপ করেই থাকে। আমন আলতো হেসে এবার সোহা কে ডিরেকশন দিতে থাকে রাস্তার। আর সোহা ও সেই মতো ঝড়ের গতিতে বাইক ছুটিয়ে চলেছে। প্রায় এক ঘন্টা বাইক ড্রাইভ করে তারা এসে পৌঁছায় সমুদ্র সৈকত এর কাছে। বাইক সাইট করে এগিয়ে যায়। সমুদ্রের পাড়ে পাথর দিয়ে গাডোয়াল দেওয়া আছে। তার পরে রোড। এটা ঠিক মুম্বাই এর মেরিন ড্রাইভ এর মত করে বানানো হয়েছে। তবে এটা পন্ডিচেরির প্রোমেনেড বিচ । ব্যাঙ্গালোর মেইন শহর থেকে গাড়িতে করে আসতে পাঁচ ঘণ্টা মত লাগে। আর সোহার বাংলো শহর ছেড়ে কিছুটা বাইরে। আর সেখান থেকে বাইকে বিচে আসতে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক লাগে আর যদি বাইক নিয়ে উড়ে আসতে চাও তো এক ঘণ্টার মধ্যে হয়ে যেতে পারে। আর সোহার ক্ষেত্রে ও তাই হয়েছে এমনিতেই ফাঁকা রাস্তা আর তার উপরে তার বাইক ড্রাইভ ও করে ভয়ংকর।
সোহা একবার ভালো করে চারিদিকে দেখে নেয় রাস্তার স্ট্রিট লাইট গুলো জ্বলছে । তাতেই সমুদ্রের ঢেউ এর পানি গুলো মুক্তোর মত লাগছে। সোহা লাফিয়ে রাস্তা পার হয়ে পাথর উপরে পড়ে। সমুদ্রের গর্জনে চারদিকে ভরে আছে । বড় বড় ঢেউ গুলো এসে আছড়ে পড়ছে পাথর এর গায়ে। সোহা কে এগিয়ে যেতে দেখে আমন ও এগিয়ে গিয়ে সোহার পাশে দাঁড়িয়ে যায়। সোহা আমন এর দিকে তাকিয়ে আলতো হাসে।
-“থ্যাঙ্কস আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য। সোহা বলে ওঠে।
-” থ্যাঙ্কস কেনো? আর আমিতো তোমাকে নিয়ে আসিনি বরং তুমিই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছ। তার জন্য তোমাকে আমার থ্যাঙ্কস দেওয়া উচিত। আমন হেসে বলে ওঠে ।
সোহা আর কিছু বলেনা আমন এর দিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে সমুদ্র এর এই রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকে। সোহা আরো একটু এগিয়ে যায় একদম পাথর এর কিনারে গিয়ে দাঁড়ায়। যার জন্য ঢেউ এর পানি এসে তার পায়ের সাথে উপর আছড়ে পড়ে হাঁটু পর্যন্ত তার ভিজে যেতে থাকে। এ এক আলাদা অনুভূতি। চাঁদের আলো পানির উপর পড়তে সেগুলো চিকচিক করছে। সমুদ্রের গর্জন সব মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব অনুভূতি হচ্ছে। সোহা কে উপভোগ করতে দেখে আমন ও গিয়ে সোহার সাথে দাঁড়িয়ে যায়। সোহা এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে আর আমন সোহার মুখের দিকে সোহার উজ্জ্বল হয়ে থাকা মুখটা দেখতে থাকে। সোহা বুঝতে পারে আমন তার দিকে তাকিয়ে আছে তাই সে আর সামনের দিকে থেকে চোখ সরায় না।
কতক্ষণ যে তারা এক ভাবে দাঁড়িয়ে সময় টাকে উপভোগ করছিলো জানা নেই তাদের। আমন এর ডাকে সোহার হুস ফিরে আসে।
-“আমাদের এখন যেতে হবে। ভোর হতে চলেছে তিনটে বেজে গেছে।
-” হুম চলো।
আমন সোহা বাইক এর কাছে আসার সময়ে সোহার কানে কিছু আওয়াজ আসতেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে সোহা। কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ ভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর উল্টো দিকে পা বাড়ায়। আমন ও সোহার পিছন পিছন আসে তার কানে ও কিছু আওয়াজ এসেছে। কিছুটা এগিয়ে যেতেই তারা দেখতে পায়। কয়েক জন দাঁড়িয়ে কথা বলছে, ভালো করে শুনতেই বুঝতে পারে তারা ড্রাগস এর কথা বলছে। সোহা একবার আমন এর দিকে তাকায় ।দুজন দুজন কে ইশারা করে কথা বলে নেয়।
চলবে…. ❣️
#তোর_মনের_অরণ্যে
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
১১.
ইউনিভার্সিটি আসার পর সোহার সাথে আকেশ এর সাথে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। আকেশ সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি ছুড়ে দিলে আজ বিপরীতে সোহা নিজেও হাসি দিয়েছে। এতেই আকেশ এর আনন্দ এর মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে সে নিজের মনে তার প্ল্যান এর দিকে আরও এক ভাগ এগিয়ে গেছে। তার মনে হচ্ছে তার শিকার তার জালে ধরা দিয়েছে।
সোহা আজ তার ক্লাস এর পুরোটা সময়ে রাজ রনি নিশা রিনি ওদের খেয়াল রেখে গেছে। তার মন পড়ানো তে থাকলেও তীক্ষ্ণ নজরে পুরোটা সময়ে পর্যবেক্ষণ করে গেছে ওদের। এদিকে রনি রাজ নিশা রিনি সোহা কে অপমান করার প্ল্যান করে থাকলেও সেটা কার্যকর করতে পারছে না আকেশ এর জন্য সে সোহার থেকে তাদেরকে দূরে থাকতে বলেছে তাই শুধু হিংস্র চোখে তাকানো ছাড়া আর কিছু করার নেই তবে রিনি শুধু সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
ক্লাস শেষে রুম থেকে বেরোতে সোহাগ দেখে সামনেই আকেশ দাঁড়িয়ে আছে। তাকে বের হতে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সোহা সেটা লক্ষ করে ও না দেখার ভান করে এগিয়ে যায়।
-“হে মিস সোহা। আকেশ সোহা ডেকে ওঠে।
-” আরে মিস্টার রাঠোর কেমন আছেন? এখন আপনি ঠিক আছেন তো। মুখে মেকি হাসি ঝুলিয়ে বলে ওঠে সোহা।
-“হ্যাঁ আমি ঠিক আছি এখন । আকেশ তার মাথার চোট এর উপর হাত রেখে বলে ওঠে।
-” কাল কি যে হলো বলুন তো। আপনি একটু সাবধানে চলাচল করবেন বলা যায় না আবার কখন আঘাত পেয়ে যান। সোহা বলে ওঠে।
সোহার কথা শুনে আকেশ এর তো লটারি জেতার মত অবস্থা। তার জন্য কেয়ার করছে তার আঘাত পাওয়ার ব্যাপার নিয়ে কথা বলছে এটা ভেবেই মনে মনে আকেশ খুশি হয়ে যাচ্ছে। এত সহজে শিকার তার কাছে ধরা দেবে সে ভাবতে পারিনি। সে ভেবে ছিলো হয়তো অনেক কাঠ খড় পড়াতে হবে এই মেয়ে কে বাগে আনতে কিন্তু এত সহজ হবে ভাবেনি আকেশ। প্রথম দিনেই সোহা কে আর তার অ্যাটিটিউড দেখে তার মনে হয়েছিলো। সেদিন যখন মেয়েটি কে থাপ্পড় দিয়েছিলো তার পর ভাবেনি এই মেয়ে এত সহজ ধরা দেবে
-“না না ঠিক আছে। হয়তো ভুল করে কারোর থেকে লেগে গেছে। আকেশ বলে ওঠে।
-“হুম হতেও পারে।সোহা বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।
-“মিস সোহা আপনি কি এখন ফ্রি আছেন তাহলে এক কাপ কফি খাওয়া যেতে পারে আমার সাথে? আকেশ আরো এক ধাপ প্ল্যান এগিয়ে বলে ওঠে।
সোহা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সে আকেশ এর মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে একবার ভালো করে তার মনোভাব বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করে নেয়। তারপরেই হঠাৎ মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠে সোহার মুখে।
-“হ্যাঁ যাওয়া যেতে পারে। সোহা বলে ওঠে।
আকেশ সোহার কথা শুনে এক গাল হেসে সোহা কে ইশারা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আকেশ তার আরো এক ধাপ প্ল্যান এগিয়ে যেতে খুশি হয়ে যায়।
এদিকে রাজ রনি নিশা আর রিনি ক্লাস থেকে বেরিয়ে এই দৃশ্য দেখে। আকেশ এর সাথে কথা বলতে দেখে রাজ রনি নিশা শয়তানি হাসি দেয় আর রিনি রাগে ফেটে পড়ে। তার রিক কে সোহার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে তার মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। মনে মনে শুধু সে প্ল্যান করেই যাচ্ছে শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষা।
————–
সোহা আর আকেশ ক্যান্টিন এসে বসতেই কয়েকজন তাদের দিকে দেখে তবে আকেশ কে তাকাতে দেখে সব যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সোহা তার ফোন ঘাটলে ও আকেশ এর দিকে তার পুরো নজর আছে। আকেশ দুটো কফির অর্ডার দিয়ে তার ফোন নিয়ে কিছু একটা করেই টেবিল এর উপর রাখে। সোহা তাকাতেই তার দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।
-“তো সোহা এমনি ডাকছি বরাবর মিস বলতে কেমন একটা লাগছে? আকেশ নিজের মত করে বলে ওঠে।
সোহা কোনো কথা না বলে মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে । সোহার হাসি দেখে সম্মতির লক্ষণ ভেবে নেয় আকেশ।
-” সোহা আপনি এই প্রফেসর লাইনে এলেন এটা কি আপনার লক্ষ ছিল না মানে আপনার মতো এমন একজন পার্সোনালিটির মেয়ে শিক্ষিকতা প্রফেশনে তাই আর কি জিজ্ঞেস করছি। আকেশ বলে ওঠে।
সোহা আকেশের কথা শুনেই তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সে বুঝতে পারে তাকে জানার কৌতুহল জেগেছে এই ছেলের মনে। সোহা এবার ফোন টেবিলে রেখে বলে ওঠে।
-“আসলে আমি একটু অন্য রকম। কখন কোন প্রফেসনে থাকি সেটা বলা মুস্কিল।
-” মানে? আকেশ অবাক হয়ে বলে ওঠে।
-“আমার প্রফেশনে এর কোনো ঠিক নেই সেটাই বললাম আজ প্রফেসর আছি কাল হয়তো দেখবেন স্টুডেন্ট হয়ে গেলাম তারপরে আবার দেখবেন কোথাও চাকরি করছি। আমি কখন কোন প্রফেশনে থাকি সেটা তার ঠিক থাকে না। আমার কোনো ঠিক নেই যখন যেমন আমি তেমন। সোহা একবার আকেশ এর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
-“বাহ ইন্টারেস্টিং তো আপনি। আকেশ বলে ওঠে।
-” হ্যাঁ সেটা তো আমি। সোহা বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।
সোহা এতক্ষণ নিজের সম্পর্কে সত্যি কথা গুলো বললে ও আকেশ তা ধরতে পারেনি। সোহার কেস এর জন্য তাকে বিভিন্ন রকম প্রফেশনে কাজ করতে হয়। আর সেটাই এখন সে আকেশ কে বললো তবে সেটা একটু ঘুরিয়ে। সোহা লক্ষ করে তাদের টেবিলের দিকে কফি নিয়ে এগিয়ে আসছে। সে এবার আকেশ কে দেখে নিয়েই আবার ও লক্ষ করে প্রায় তাদের টেবিলের কাছাকাছি চলে এসেছে। সোহা এবার সামনের দিকে পা টা বাড়িয়ে দেয়। সাথে সাথে তার পায়ের সাথে পা বেঁধে ওয়েটার এর হাত থেকে কফির ট্রে টা উল্টে আকেশ এর গায়ের উপর পড়ে যায়। সোহা এবার ঠিক হয়ে বসে যায়। এদিকে আকেশ গায়ের উপর কফির কাপ উল্টে পড়ে তার শার্ট অনেকটাই ভিজিয়ে দিয়েছে। সে কটমট করে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে সোহা বলে ওঠে।
-“আরে মিস্টার রাঠোর ঠিক আছেন আপনি?
-” হ্যাঁ আমি ঠিক আছি । দাঁতে দাঁত চেপে রেখে মুচকি হেসে বলে ওঠে আকেশ।
-“সরি স্যার বুঝতে পারিনি কিভাবে যে পড়ে গেলো। ভয়ে ওয়েটার টা বলে ওঠে।
সোহা সামনে থাকায় সে আর ওয়েটার টা কে কিছু বলতে পারে না। রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে সে। সোহার সামনে নিজের খারাপ চেহারা টা না দেখিয়ে ভালো সাজার ভান করে বলে ওঠে।
-” আরে ভাই একটু দেখা কাজ কর। আর যা গিয়ে আবার নিয়ে আয়।
ওয়েটার টা ভয়ে ভয়ে ওখান থেকে কেটে পড়ে। তারা সবাই আকেশ কে চেনে। সোহা একবার ভালো ভাবে দেখে নেয় তার মুখে ফুটে আছে বাঁকা হাসি।
-” সোহা আপনি একটু বসুন আমি আসছি। আকেশ বলে ওঠে।
সোহা কোনো কথা না বলে শুধু মাথা নাড়া দেয়। আকেশ চলে যেতে সোহা ঝটপট তার কাজে লেগে পড়ে। টেবিলে থাকা আকেশ এর ফোন টা তার হাতে তুলে নেয়। কিছুক্ষণ পরই তার কাজ শেষ করেই ফোন টা আবার তার জায়গায় রেখে দেয়। সোহার কাজ হয়ে গেছে। আজ যার জন্য সে এসে থেকে এই আকেশ কে সহ্য করে যাচ্ছে সেই কাজ সে হাসিল করে নিয়েছে। এখন থেকে আকেশ এর ফোন এর সমস্ত ডিটেইলস তারা পেয়ে যাবে। সোহা এবার তার হাত তুলে ডান এর মত করে ইশারা করে। সাথে পাশের টেবিল থেকে আমন উঠে দাঁড়িয়ে একবার সোহার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে তাড়াতাড়ি কেটে পড়তে বলে সে বেরিয়ে যায়। আমন প্রথম থেকে এখানে তাদের সাথে বসে ছিল। আকেশ এর কথা গুলো শুনছিল আর রেগে ফায়ার হয়ে যাচ্ছিলো তবে শেষে তাকে আর কিছু করতে হলো না যা করার সোহা করে দিলো গরম কফি গায়ে ফেলে আকেশ কে ছ্যাকা খাইয়ে দিলো। আর আমন এর এমন মুখ ভঙ্গি দেখে সোহার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
কিছুক্ষণ পরেই আকেশ এসে বসে সে ওয়াশরুমে গেছিলো গরম কফি গায়ে পড়তে পুড়ে গেছে। সেটা নিয়ে কিছু মিনিট বসে থাকলেও সে উঠে গেছিলো ফ্রেশ হতে। সোহা আকেশ কে একবার দেখে নিয়ে বলে ওঠে।
-“মিস্টার রাঠোর আমাকে এখন যেতে হবে। অনেকটাই লেট হয়ে গেছে। আর দেরি করা যাবেনা।
-” কিন্তু কফি টা..
-“অন্য একদিন খাওয়া যাবে জমিয়ে। আপনি ও আছেন আমি ও আছি খাওয়া টা তোলা রইলো। আর এবার এর খাওয়া টা আমি দেবো ।সোহা আকেশ কে আর বলতে না দিয়েই রহস্যময় হেসে বলে ওঠে।
সোহা বেরিয়ে যেতেই আকেশ এর মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তার কাজে সে সফল হয়েছে। তার কাছে খাওয়া তো শুধু বাহানা সে তো এই ভাবে আসতে আসতে সোহার কাছে আসতে চায়। তবে আজকের পর তার মনে হয় সে তার প্ল্যানে এগিয়ে গেছে। তার শিকার প্রায় রেডি হয়ে এসেছে এবার শুধু ঠিক সময়ে শিকার করার অপেক্ষা। কিন্তু সত্যি কি তাই? সে তার প্ল্যান মত এগিয়ে গেছে নাকি সেই উল্টে জালে জড়িয়ে পড়ছে? সেই কারোর শিকার হতে চলেছে? সেটা সময়ে বোঝা যাবে কে কার শিকার আর কে কাকে শিকার করে।
চলবে…. ❣️