গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ২৭,২৮
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ২৭ :#care
টয়া ভয় পেয়ে গেলো ইয়াদের হাতের দিকে তাকিয়ে, এগিয়ে আসতেই ইয়াদ অন্য হাত দেখিয়ে থামতে দেখিয়ে বললো,” stay there ”
ইয়াদ রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। টয়া কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। নিরব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানে কি? রিতু রুমে ঢুকতে যাবে এমন সময় ইয়াদ বেরিয়ে গেলো। ইয়াদের হাতের এই অবস্থা দেখে রিতু ভয়ে মুখ চেপে ধরলো। রিতু চটজলদি ভিতরে এসে বললো,” ওনার হাতের এ অবস্থা হলো কিভাবে?”
টয়া ভয়ে এতক্ষন চুপ করে দাড়িয়ে ছিলো। টয়ার মনে হচ্ছিল কেউ যেনো তার বুকে ছুরি মেরেছে। কিন্তু ইয়াদ এমন করলো কেনো? সে তার সাথে যাবে না বলেছে তাই? রাগ দেখিয়ে এই কাজ করলো? টয়ার রাগে চোখ লাল হয়ে গেল।
” কোনদিকে গেছে সে?”, রাগ মিশ্রিত গলায় বললো টয়া।
রিতু হাত দিয়ে দেখিয়ে দিতেই টয়া সেদিকে হাটা ধরলো। কি ভেবেছে কি এই লোক যা ইচ্ছে করবে? আমাকে রাগ দেখানো হচ্ছে?
টয়া খুঁজতে খুঁজতে ইয়াদের কেবিন খুজে পেলো। ভিতর থেকে একটা নার্স ট্রে করে তুলা, ব্যান্ডেজ, জীবাণুনাশক নিয়ে বেরিয়ে আসলো। টয়া একটু যেনো শান্তি পেলো যাক ব্যান্ডেজটা তো করেছে। টয়া নার্সকে থামিয়ে বললো,” ডক্টর আফরানের হাতের কি অবস্থা এখন?”
” কি অবস্থা? ব্যান্ডেজই করতেই তো দিচ্ছেন না। ধমক দিয়ে বেরিয়ে যেতে বললেন?”, নিরূপায় হয়ে তাকিয়ে বললো নার্স।
নিজে হাতের এ অবস্থা করে আবার নাকি ব্যান্ডেজ করবে না। খুব রাগ দেখানো হচ্ছে। আজ তো এই হিটলারের কপালে দুঃখ আছে।” তুমি আমার সাথে এসো।”, নার্সকে বললো টয়া।
” না স্যার ভীষণ রেগে আছে বকবে?”
” কি করবে সেটা আমিও দেখবো। তুমি এসো আমার সাথে।”, বলে টয়া নার্সকে নিয়ে রুমে এলো। টয়া ভেবেছিলো ইয়াদকে বুঝিয়ে সুজিয়ে বলবে তবে কেবিনে প্রতিভাকে দেখে টয়ার মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো। ইয়াদ নিজের চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে, রক্তাক্ত হাতটায় রুমাল বেধে এক পাশে রেখে।
” এতো immature behave তো তুমি আগে করোনি ইয়াদ। হাতটার এ অবস্থা তাও নার্সে বের হয়ে যেতে বললে।”, প্রতিভা ইয়াদকে বুঝাছিলো তবে ইয়াদ সে কথায় কান দিচ্ছে না। প্রতিভার কথায় ব্যাঘাত ঘটলো যখন টয়া রুমে এলো। নার্স টয়ার পিছু পিছু এসে দাঁড়িয়ে রইলো।
” তুমি কে?”, অবাক হয়ে বললো প্রতিভা। প্রতিভার প্রশ্নে ইয়াদ চোখ খুলে তাকালো। সামনে টয়াকে দেখে ইয়াদ মাথা তুললো।
প্রতিভার প্রশ্নে টয়া কোনো জবাব দিলো না। টয়া নার্সকে ইয়াদের টেবিলটা দেখিয়ে বললো,” এগুলো ওখানে রেখে তুমি যাও।”
টয়ার কথা মতো নার্স ট্রেটা ইয়াদের টেবিলের সামনে রেখে বেরিয়ে গেলো।প্রতিভা টয়াকে বললো,” নার্সকে যেতে বললে কেনো? ইয়াদের হাতের ব্যান্ডেজ করবে কে?” ইয়াদ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টয়ার দিকে। টয়া ইয়াদের দিকে রাগী চেহারার তাকিয়ে তারপর প্রতিভাকে উদ্দেশ্য করে বলল,” সেটা আমি বুঝে নেবো। আপনার নিশ্চই অনেক কাজ আছে। আপনি তাহলে আসুন আমি তো আছি।”
প্রতিভা কিছুটা অবাক হয়ে গেলো কিন্তু আর কথা না বাড়িয়ে সে বেরিয়ে গেলো। প্রতিভা বেরিয়ে যেতেই টয়া দরজা আটকে দিলো। তারপর ট্রেটা হাতে নিয়ে ইয়াদের পাশের রাখলো। টয়ার ইচ্ছে করছে এই লোকটাকে কাচা গিলে ফেলে। তাও নিজেকে শান্ত রেখেছে কোনো ভাবে।
টয়া একটা চেয়ার টেনে ইয়াদের পাশে বসে ইয়াদের হাত ধরতেই ইয়াদ হাত সরিয়ে নিতে চাইলো। টয়া শাসিয়ে বললো,” দেখুন আমার সাথে রাগ দেখতে আসবেন না। নইলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। একটু আগে যে কাজটা করলেন না এরপর তো আর কোন কথাই বলবেন না।”
ইয়াদ টয়ার শাসনে আর কিছু বললো না। টয়া ইয়াদের হাতের রুমালটা সরিয়ে কাটা অংশ গুলোর দিকে তাকাতেই চোখ বন্ধ করে ফেললো। ফাস্ট এইড করাটা টয়া শিখেছে এনজিওর কাজে তবে ইয়াদের হাতের অবস্থা দেখে টয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে। টয়া অনেক সময় ধরে মনোযোগ সহকারে ইয়াদের হাতের ড্রেসিং করলো। টয়া নিজেই কয়েকবার কেপে উঠছে, টয়াকে দেখে মনে হচ্ছে হাতটা ইয়াদের না তার কেটেছে।
ইয়াদ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। টয়ার কষ্ট দেখে হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,” তুমি পারবেনা। আমি করে নিবো।”
টয়া আরো জোড়ে চেঁচিয়ে বললো,” আমি পারবোনা আমার ঘাড় পারবে। হাতটা এইদিকে দিন।”
ইয়াদ একটু চমকে উঠে হাতটা এগিয়ে দিলো। মনে হচ্ছে প্রচুর রেগে আছে আর রাগিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।
” আপনাকে আমি ছাড়বো না। আপনার কতো বড় সাহস আপনি আমাকে রাগ দেখান। নিজে দোষ করবে আবার রাগ ও আমাকে দেখাবে।”, ইয়াদকে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে টয়া।
ইয়াদ সব কথাই বাধ্য ছেলের মতোন শুনছে তবে একটা জায়গায় বললো,” কে বলেছে আমি তোমার উপর রাগ দেখিয়ে এমন করেছি? রাগটা আমার নিজের উপরই ছিলো।”
” আচ্ছা তাই নাকি? তাহলে আমি যখন কাছে আসতে নিলাম তখন stay there বললেন কেনো?”, রাগে কটমট করে বললো টয়া।
” তুমি আসবেনা বলায় রাগটা বেড়ে গেছিলো।”
” আপনাকে যে কি করতে ইচ্ছে করছে? মনটা চাইছে আপনাকে একটা কামড় বসিয়ে দেই। নাহ্ কামড় না আপনাকে …..আপনাকে যে আমার কি করতে ইচ্ছে করছে।”, চুপ করে রাগ সামলাচ্ছে টয়া।
” আচ্ছা বাবা যা ইচ্ছে তাই করো। এবার শান্ত হও।”, ইয়াদ নরম গলায় বললো।
” হবো না শান্ত কি করবেন? হুঁ বলুন কি করবেন।”, টয়া আঙ্গুল দেখিয়ে শাসিয়ে বললো।
ইয়াদ বুঝতে পেরেছে টয়া ভীষণ ক্ষেপে আছে, এই মুহুর্তে চুপ থাকাই শ্রেয়। টয়া পেত্নী থেকে রাক্ষসী হয়ে গেছে।
ইয়াদ কিছু করবেনা বোঝাতে না সূচক মাথা নাড়লো।
” আমার কাজ শেষ হওয়া না পর্যন্ত একটাও কথা বলবেন না। একদম চুপ করে বসে থাকুন।”, রাগে কটমট করে বললো।
ইয়াদ আর কিছু বলার সাহস করলো না। টয়াকে ক্ষেপিয়ে কোন লাভ নেই বুঝাই যাচ্ছে।
টয়া রীতিমত এক ঘন্টা সময় নিয়ে ইয়াদের হাতের বান্ডেজটা করলো। অবশেষে কাজটা ঠিক ঠাকমতো করতে পারায় শান্তি লাগছে।। টয়া এবার উঠে দাড়ালো তাকে যেতে হবে যাওয়ার আগে আবার শাসিয়ে বললো,” এটা যদি হাত থেকে খুলেছেন আপনার একদিন কি আমার একদিন। এই আমি বলে দিয়ে গেলাম।”
বলে টয়া উঠে বেরিয়ে এলো। ইয়াদ নিজের ব্যান্ডেজ করা হতের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। রিতু বেরিয়ে ভার্সিটিতে গেছে টয়ার ফোনে ম্যাসেজ এসেছে। টয়ার আজ আর ভার্সিটিতে যেতে ইচ্ছে করছে না। অফিসে গিয়ে ডিজাইনগুলো জমা দিয়ে সোজা বাসায় আসবে। আজ এইটাই তার প্ল্যান। এই ইয়াদ পুরো দিনটাই অগোছালো করে দিলো।
রাতে বাসায় এসে টয়া ঘুমিয়ে পড়েছিল ঘুম ভেঙেছে রাত সাড়ে বারোটায়। টয়া ঘুম ঘুম চোখে উঠে বেরিয়ে এলো। রিতু জেগে ছিল সে মুভি দেখা নিয়ে ব্যাস্ত। টয়াকে উঠতে দেখে রিতু বললো,” তোর খাবার আমি ফ্রিজে রেখেছি গরম করে খেয়ে নে।”
টয়া ফ্রিজের দিকে এগিয়ে গিয়ে খাবার নামিয়ে ওভেনে দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলো। খাবার নিয়ে টেবিলে বসে টয়া খাচ্ছিল তবে বার বার মনে হচ্ছিলো সে কি জানি ভুলে গেছে। রিতু উঠে এসে টয়ার পাশে বসে বললো,” আচ্ছা ডাক্তারের হাতের কি অবস্থা?”
টয়া না বুঝে রিতুর দিকে তাকালো, তারপর টয়ার হুশ হলো। আসলেই ইয়াদের কথা তো জানাই হলো না। টয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। এতো রাতে কিভাবে জানবে সে? টয়া খাবার রেখে উঠে পড়লো।
” কিরে কি হলো?”, রিতু প্রশ্ন করলো।
” আমি তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম এবার জানবো কি করে? না জানা অব্দি তো আমার ভালো লাগছে না।”
” গিয়ে কলিংবেল বাজা। তারপর জিজ্ঞেস করে নে।”
” যদি ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভেঙে যাবে না!”
টয়া পায়চারী করছে কিভাবে জানবে সে। এমনিতেই ডান হাতটা কেটে বসে আছে খেয়েছে কিনা কে জানে? না খেলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। কি করে এবার সে? আচ্ছা ইয়াদের দরজার পাসওয়ার্ড তো সে জানে তাহলে কি তাই করবে?
[ চলবে ]
গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
[পর্বঃ২৮ :#রাগ_কমেছে?
লেখিকা :#নবনী_নীলা
যেই ভাবা সেই কাজ টয়া ইয়াদের বাসায় হানা দিয়েছে। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করা ছিলো না ভাগ্যিস। টয়া অন্ধকারে হাত বুলিয়ে হাঁটছে। এভাবে আসাটা কি ঠিক হলো? নিজেকে সেই সাত বছর আগের টয়া লাগছে। নিজের ফোনটাও আনেনি সে, ফোন থাকলে ফোনের টর্চ জ্বেলে তাও কিছু করা যেত।
ইয়াদ চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো। ঘুম আসছে না তার বার বার শুধু আফসোস হচ্ছে সেদিনের জন্য নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে। টয়ার সেই ঘড়িটা হাতে নিয়ে বিছানায় গা হেলিয়ে শুয়ে আছে ইয়াদ। সবটা আগের মতো যদি হয়ে যেতো।
হটাৎ ইয়াদ কেমন একটা আওয়াজ পেলো কিছু হয়তো পরে গেছে। হটাৎ এমন জোড়ে কি পড়লো ভাবতেই ইয়াদ উঠে বসলো পুরো ঘর অন্ধকার কিছু বুঝাও যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে আওয়াজটা study রুম থেকে এসেছে ইয়াদ একে একে বাতি জ্বালিয়ে স্টাডি রুমে এসে বাতি জ্বালালো।
বাতি জ্বালিয়ে ইয়াদ হতভম্ব হয়ে গেলো। টয়া ইয়াদের স্টাডি রুমে কি করছে। টয়া কিছু একটার সাথে বাড়ি খেয়ে পরে যায়। সে নীচে বসে মাথা ডলছিল এমন সময়ে আলো জ্বলে উঠায় টয়া সামনে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো। ভয়ে যেনো তার আত্মাটা বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। টয়ার সামনে একটা কঙ্কাল। টয়া দৌড়ে পিছিয়ে যেতেই ইয়াদের বুকে ধাক্কা খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
ধাক্কা খেয়ে টয়া পিছে তাকিয়ে ইয়াদকে দেখে আরো চমকে উঠলো। পুরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো সে। বাসার মধ্যে কিনা এসব রেখেছে সে। ভয় ডর বলে কিছু নেই নাকি!
” ঠিক আছো?”, টয়ার গালে আলতো করে হাত দিয়ে বললো ইয়াদ।
টয়া হা সূচক মাথা নাড়ল। টয়া ভয় ভয় চোখে পিছে কঙ্কাল টার দিকে তাকালো। ইয়াদ জিনিসটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিল মনে হয় টয়ার সাথে ধাক্কা লাগার কারণে সেটা নীচে পড়ে আছে। টয়া বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।
ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে প্রশ্ন করলো,” তুমি এই রুমে? কি করছিলে? এই ফ্ল্যাটেই বা এলে কি করে?”
টয়া এবার কি বলবে? কি অজুহাত দেওয়া যায় এমন পরিস্থতিতে? ভালই ফাসা ফেঁসে গেছে।
কিছুক্ষণ ভেবে টয়া বলল,” ঘুমের মধ্যে কখন যে চলে এসেছি বুঝতেই পারিনি। ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটির অভ্যাস আছে আমার।”
টয়া যে কথা বলল সেটা যে মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয় সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছে। খালি এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। ইয়াদ বিশ্বাসযোগ্য মুখভঙ্গি করে বললো,” ও আচ্ছা। তা তুমি এতো ট্যালেন্টেড সেটা জানা ছিলো না ঘুমের মাঝে দরজার লক পর্যন্ত খুলতে পেরেছো। That’s rare!”
পুরোটাই যে উপহাস ছিলো সেটা টয়া ঠিকই বুঝতে পেরেছে। যার জন্যে চুরি করি সেই বলে কিনা চোর। এই জন্যে মানুষের ভালো করতে নেই। মনে মনে বিড়বিরালো টয়া।
ইয়াদ একটু হেসে বলল,” মাঝে মাঝে এমন হাটাহাটি করা ভালো। নেক্সট টাইম থেকে হেঁটে হেঁটে আমার রুমে এসো কেমন?”
টয়ার মেজাজ বিগড়ে গেলো। ধুরো থাকবোই না এখানে, মান ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে ফেললো। টয়া ইয়াদের বুকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে লাগলো। ইয়াদের রুম পার হবার আগেই ইয়াদ এক হাতে টয়ার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে এলো।
” ছাড়ুন ছাড়ুন। থাকবো না এখানে, নেহাত ভুল করে চলে এসেছি নইলে কে আসে এইখানে।”, রাগ দেখিয়ে বললো টয়া।
” দিন দিন দেখছি angry bird হয়ে যাচ্ছো। রাগ করলে তোমার চোখ লাল হয়ে যায় সেটা জানো?।”, আদুরে গলায় বললো ইয়াদ।
টয়া আড় চোখে ইয়াদের দিকে তাকালো তারপর তার চোখ গেলো ইয়াদের হাতের ব্যান্ডেজের দিকে। ব্যান্ডেজটা বদলানো দরকার একটু একটু রক্ত বের হয়ে আছে।
” আপনি ব্যান্ডেজটা বদলান নি কেনো?”, থমথমে গলায় প্রশ্ন করলো টয়া।
” পাগল নাকি একজন আমাকে থ্রেট দিয়ে গেছে। এই ব্যান্ডেজ খুলে ফেললে সে আমায় ছাড়বে না।”, ইয়াদের কথায় টয়া চোঁখ পিট পিট করে তাকালো। এই একজনটা আবার কে? ঢং দেখলে গা জ্বলে ওঠে।
টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” কে সেই বেয়া.. বাকীটা বলতে যাবে ইয়াদ টয়ার ঠোটে তর্জনী দিয়ে বললো,” হুস, চুপ। নিজেকে নিজে এসব বলতে হয় না।”
টয়ার কুচকানো ভ্রু সোজা হয়ে গেলো। টয়া নিজে এমনটা বলেছে। কি আশ্চর্য ব্যাপার তার নিজেরই মনে ছিলো না। কিন্তু ইয়াদের সামনে সেটা স্বীকার করা যাবে না। তাই টয়া ভুলে যাবার ভান করে ইয়াদের হাত সরিয়ে বললো,” আমি.. আমি কখন বললাম? আমি মোটেও এসব বলিনি।”
ইয়াদ অবাক হয়ে বললো,” তুমি বলোনি?”
” হ্যা আমি কেনো এইসব বলতে যাবো?”, বলে টয়া ইয়াদের রুমের ভিতরে গিয়ে ব্যান্ডেজ আর তুলা খুঁজতে লাগলো। ইয়াদ টয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ” কি পল্টিবাজ!”, ইয়াদ আড় চোঁখে তাকিয়ে বললো।
টয়া রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,” কি বললেন আপনি? আমি পলটিবাজ হলে আপনি রংবাজ।”
” What রংবাজ? সেটা আবার কি?”, ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো ইয়াদ।
টয়া ড্রয়ারে ব্যান্ডেজ খুজে পেয়ে বললো,” এহ! পল্টিবাজ বুঝে কিন্তু রংবাজ বুঝে না।” ইয়াদ নিজের দৌড় জানে টয়ার সাথে সে পারবে না সেটা সে খুব ভালো করেই জানে। তাই সে চুপ করে আড় চোখে তাকিয়ে রইল। কখনো কখনো চুপ থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।
টয়া খাটের উপর সব কিছু ইয়াদের পাশে রাখলো। ইয়াদের হাতটা এগিয়ে আনতেই ইয়াদ প্রশ্ন করে বসলো,” তুমি আমার জন্য এতো করছো কেনো?” ইয়াদের প্রশ্নে টয়া চুপ করে গেলো। সত্যিই তো সে কেনো এতো অস্থির হচ্ছে। টয়া চুপ করে থেকে বলল,”একবার আমি অসুস্থ হয়েছিলাম তখন আপনি আমার খেয়াল রেখেছেন তাই।”
ইয়াদ হেসে ফেললো, সত্যিটা টয়া বলবেনা সে সেটা জানতো। টয়া মনোযোগ দিয়ে ইয়াদের হাতের ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। ইয়াদ অপলকে তাকিয়ে আছে। সব শেষে টয়া উঠতে যাবে টয়ার চোখ পড়লো বিছানায় পরে থাকা ঘড়িটার দিকে। কেনো জানি খুব চেনা চেনা লাগছে তার। টয়া ঘড়িটা হাতে নিয়ে বলল,” এটা কি?”
নিমেষেই ইয়াদের চোখ গেলো টয়ার হাতের দিকে ইয়াদ হরবরিয়ে উঠে ঘড়িটা নিয়ে নিতে চাইলো। টয়া ঘড়িটা বুকের কাছে শক্ত করে ধরে বললো,” কোথায় পেয়েছেন আপনি এই ঘড়িটা? আমি তো সেই কবে এটা হারিয়ে ফেলেছি। এটা আপনার কাছে এলো কি করে? আর এটা আপনার কাছে কেনো?”
টয়ার চোখে মূখে বিস্ময় আর হাজার প্রশ্ন। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো তারপর বললো,”এতো কিছুর পরেও তোমায় বলে জানতে হবে এই ঘড়িটা আমার কাছে কেনো?”
টয়া কয়েকপা পিছিয়ে গেলো। এই ঘড়িটা সে কোনদিন হারাতে চায় নি। টয়ার চোখ ছল ছল করে উঠলো। সেই মেঘাচ্ছন্ন চোখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো,” এতো বছর এটা আপনার কাছে ছিলো!”
” হুম, এবার এটা আমাকে ফেরত দেও।”, ইয়াদ হাত বাড়িয়ে ঘড়িটা চাইলো। টয়া ঘড়িটা মুঠোয় শক্ত করে ধরে বললো,” না, এটা আমার আপনাকে কেনো দিবো। আপনি এটা রেখে দিয়েছেন কেনো?”
” একটা মেয়েকে ভালোবেসে।”, টয়ার চোখে চোখ রেখে বললো ইয়াদ। তাহলে কি টয়া ভুল বুঝেছে? টয়া অভিমানী গলায় বলল,” তাহলে যে আমাকে এতো কিছু বললেন? কেনো বললেন তাহলে?”
ইয়াদ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,” তোমায় অন্য কারোর সাথে দেখে হিংসে হয়েছিলো। Immature ছিলাম যে তাই ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু দেখো সেই ভুলের মাশুল এখনও দিতে হচ্ছে। ”
টয়া ইয়াদের বুকে হাত দিয়ে আঘাত করতে লাগলো। চোখ দিয়ে তার অভিমানী জল পড়ছে।” আপনি খুব খারাপ।”
ইয়াদ দুই হাত দিয়ে টয়ার হাত ধরে বললো,” হুম,”
ইয়াদ টয়াকে কাছে এনে জড়িয়ে ধরলো। টয়া নিঃশব্দে কাদঁছে। ইয়াদের শার্ট ভিজিয়ে ফেলেছে। ইয়াদ টয়ার চোঁখের জল মুছে দিয়ে হাত ধরে বিছনায় এনে বসালো। তারপর পাশে বসে বললো,” তুমি কান্না করছো কেনো? থামো আর কাদবে না।” টয়ার চুপ করে কিছুক্ষন বসে ছিলো। ইয়াদকে না বুঝে কতো কিছু বলেছে সে তার জন্যে আফসোস হচ্ছে।এই ঘড়িটা আগে দিয়ে দিলে কি হতো তার? এতো সমস্যা মিটে যেতো। টয়াও ভুল বুঝতো না।
টয়ার খুব রাগ হচ্ছে ইয়াদের উপর টয়া মুখ ভার করে বললো,” আপনি ঘড়িটা আমাকে আগে দেন নি কেনো?”
” দিয়ে কি বলতাম? টয়া তোমার ঘড়ি ফেরত দিতে এসেছি?”, ইয়াদ উপহাস করলো টয়ার মন ভালো করতে কিন্তু এই মেয়ে উল্টে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।
ইয়াদ একটু কাছে এসে বললো,” রাগ হচ্ছে বুঝি?”
” হ্যা অনেক।”, বড় বড় চোখ করে বললো টয়া।
” এক্ষুনি রাগ কমিয়ে দিচ্ছি”, বলে ইয়াদ টয়ার ঘাড়ে হাত ডুবিয়ে ঠোটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। হটাৎ ইয়াদের এমন কাজে টয়ার শরীর শিউরে উঠলো। বুকে ধুকপুকানি বেড়ে গেলো। টয়া চোখ বন্ধ করে ইয়াদের শার্ট খামচে ধরলো।
অনেক্ষন পর টয়া ছাড়া পেলো। টয়া জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো। ইয়াদ টয়ার কানে কানে এসে বললো,” রাগ কমেছে?” টয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
[ চলবে ]