তোমাতে রহিব বিলীন,পর্ব-০৪
লেখনীতে- Ifra Chowdhury
.
.
রেস্টুরেন্টে পরাগ ভাই আমার পাশাপাশি বসলেন। আমি ইতস্ততবোধ করলেও উনি সেটাকে পাত্তা দিচ্ছেন না। আমাদের অপজিট টেবিলে প্রিয়রা বসেছে। ওরা আমায় আড়চোখে দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে। আমি পড়েছি মহা মুশকিলে। না এদিকে যেতে পারছি, না ওদিকে।
কিছুক্ষণ পর পরাগ ভাই বললেন,
‘কী খাবে অর্ডার করো?’
আমি শীতল গলায় বললাম,
‘আমি কিছু খাবো না।’
আমি খাবো না শুনে সোহা চিৎকার করে বললো,
‘ও না খেলেও আমরা কিন্তু খাবো দুলাভাই। তাড়াতাড়ি অর্ডার করুন।’
সোহার কথা শুনে ইচ্ছে করছিলো ঠাস করে ওকে দু’টো থাপ্পড় লাগিয়ে দেই। এমন বেহায়াপনা কেউ করে? এখনো তো আমাদের প্রেমটাও হয়নি। তারই মধ্যে উনাকে দুলাভাই ডাকছে। ছিঃ ছিঃ আবার ছ্যাচড়ামি করে খেতেও চাচ্ছে। আমি চোখ রাঙিয়ে সোহার দিকে তাকাতেই পরাগ ভাই আমার হাত ধরে ফেললেন। উপস্থিত সবাই এমন কান্ডে খিলখিল করে হাসা শুরু করেছে।
আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই উনি বললেন,
‘শ্যালিকা তার দুলাভাইয়ের কাছ থেকে খেতে চেয়েছে, এখানে তুমি রাগ করছো কেন? শোনো শালি কিন্তু আধা ঘরওয়ালী। তাই ওরা যেকোনো আবদার করতেই পারে।’
আমি ধারালো কন্ঠে বললাম,
‘প্রথমত আমাদের এখনো রিলেশন হয়নি। তাই আমার বন্ধুরা কোনোভাবেই আপনার শ্যালক বা শ্যালিকা নয়।
আর দ্বিতীয়ত আপনি কথায় কথায় আমার হাত ধরছেন কেন? আমি পারমিশন দিয়েছি আপনাকে?’
আমার কথা শোনার পরপরই পরাগ ভাই আমার হাত আরো শক্ত করে পাকড়াও করে ফেলেছেন। আমি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম৷ পরাগ ভাই সেদিকে লক্ষ্য না করে খাবার অর্ডার দেওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমি ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এতেও উনার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই৷ ভীষণ চটে গেলাম আমি। একদিকে হাতের ব্যথা, অন্যদিকে সবার পরাগ ভাইকে নিয়ে আদিক্ষ্যেতা! গা জ্বলে যাচ্ছে আমার। এর মাঝে পরাগ ভাই আমার হাত ছেড়ে দিয়েছে। হয়তো বেখেয়ালে এমনটা করেছেন। আমিও সেই সুযোগে রেস্টুরেন্ট থেকে হনহনিয়ে বের হয়ে গেলাম। আচমকা বের হওয়াতে পরাগ ভাইও আমার পিছু পিছু ছুটলেন। আমি উনাকে পাত্তা না দিয়ে সরাসরি রিকশায় চড়ে বাসায় চলে আসলাম।
পরাগ ভাই এর মাঝে হাজারবার ফোন করেছেন আমি রিসিভ না করে উলটো ফোন বন্ধ করে বসে আছি।
___________
সন্ধ্যার পর ছাদে গেলাম। নীল দিগন্তে আনমনে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলাম। হঠাৎ করেই বুকের ভেতরটায় খুব অস্থিরতা অনুভব করলাম। এর কারণ কি চ্যালেঞ্জে হেরে যাওয়া? না আমি কিছুতেই হারতে পারবো না। আমাকে এই মুহুর্তে তুখোড় অভিনেত্রী হতে হবে। অভিনয় করে চ্যালেঞ্জে জিততে হবে। আমি পায়চারি করতে লাগলাম অস্থিরতা কমানোর জন্য। বেশ কিছুক্ষণ পায়চারি করার পরেও যখন অস্থিরতা কমলো না, আমি তখন ফোন অন করে সরাসরি পরাগ ভাইকে কল করলাম। আমি বুঝতে পারছি আমার এই অস্থিরতা শুধু মাত্র পরাগ ভাইই কমাতে পারবেন। ফোন করার সাথে সাথেই উনি রিসিভ করলেন।
তারপর উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘তুমি ঠিক আছো স্মিহা? তখন এভাবে হুট করে চলে গেলে, আবার ফোনটাও বন্ধ করে দিলে; খুব চিন্তা হচ্ছিলো।’
আমি মৃদু কন্ঠে জবাব দিলাম,
‘ঠিক আছি আমি।’
‘তখন এভাবে চলে গেলে কেন? আমার অনেক প্ল্যান ছিলো আজকের দিনটা নিয়ে। কিন্তু কিছুই হলো না।’
‘না বলে চলে আসার জন্য দুঃখিত । আসলে তখন মাথাটা প্রচন্ড ধরেছিলো, তার জন্য হঠাৎ করেই চলে এসেছিলাম।
কিন্তু কিসের প্ল্যান ছিলো আপনার?’
আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম পরাগ ভাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তারপর বললেন,
‘থাক সেসব কথা। তুমি এখন পুরোপুরি ঠিক আছো তো?’
আমি উনার কথার জবাব না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করলাম,
‘আপনি এখন আমাদের বাসার সামনে আসতে পারবেন?’
উনি ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললেন,
‘কোথায় আসবো?’
‘কানে শুনতে পান না? আমাদের বাসার সামনে আসুন, দরকার আছে।’
‘এই রাতের বেলায় তোমাদের বাসার সামনে যাবো কেন? কী দরকার ফোনেই বলো। আর এমনিতেও আমি তোমাদের বাসার ঠিকানা জানি না৷’
আমি ধমক দিয়ে বললাম,
‘ঠিকানা জানেন না, জেনে নিবেন। আমি টেক্সট করে ঠিকানা পাঠাচ্ছি। আর দরকারটা সামনাসামনি। তাই আসবেনই। জলদি চলে আসুন। আল্লাহ হাফেজ।’
পরাগ ভাইকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমি কল কেটে দিলাম। এহ ঢঙ! রাতের বেলায় আসতে পারবেন না। অথচ, প্রেম করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
আমি ছাদ থেকে নেমে গিয়ে চটজলদি তৈরি হয়ে নিলাম। নীল আর সাদার কম্বিনেশনে একটা কুর্তি পড়ে নিলাম। চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়ে নিলাম। কপালে নীল টিপ।
হঠাৎ এভাবে আমায় সাজতে দেখে আপা জিজ্ঞেস করলো,
‘কীরে এই রাতের বেলায় তুই এতো সাজছিস কেন? কোথাও বের হবি না কি?’
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
‘আসলে আমিও নিজেও জানি না আমি এতো সাজছি কেন! তবে খুব করে ইচ্ছে করলো আজ একটু সাজগোজ করি।
আসলে… আমার না হঠাৎ প্রেম প্রেম পাচ্ছে আপা।’
আপা অবাক কন্ঠে বললো,
‘এ্যাঁ! ভূতের মুখে রামনাম। তোর পাচ্ছে প্রেম প্রেম?’
‘হ্যাঁ আপা। এখন একমাত্র তুমিই আমাকে সাহায্য করতে পারো।’
আপাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কথাখানা বললাম।
‘আচ্ছা হয়েছে হয়েছে। এতো ঢঙ করতে হবে না। বল্ কী সাহায্য করতে হবে?’
‘আপা আমি পরাগ ভাইকে বাসার সামনে আসতে বলেছি। কিছুক্ষণ উনার সাথেই সময় কাটাবো। এখন বাসায় তুমি ম্যানেজ করো প্লিজ।’
‘স্মিহা এই রাতের বেলা তুই একটা অচেনা ছেলের সাথে সময় কাটাবি? এটা কি আদৌ ঠিক হচ্ছে? যদি তোর কোনো বিপদ আপদ হয়ে যায়?’
‘আপা, আমার কিচ্ছু হবে না। পরাগ ভাইকে আমি সহ্য করতে পারি না ঠিকই, তবে উনি মানুষটা খারাপ নয়। এটুকু বিশ্বাস আছে উনার উপর। তুমি জাস্ট বাসায় বলো, আমি সোহার বাসায় যাচ্ছি নোট আনতে। আর এখন রাত কোথায়? সবে তো সন্ধ্যা হলো। আমি তাড়াতাড়িই ফিরে আসবো আপা। চিন্তা করো না।’
‘আচ্ছা আমি ম্যানেজ করছি বাসায়। কিন্তু তুই ফোন অন রাখবি। আমি তোকে ফোন করবো। আর অবশ্যই সাবধানে থাকবি।’
আমি হেসে বললাম,
‘আচ্ছা ঠিক আছে মাই ডিয়ার আপা।’
উফ! আপাকে রাজী করানোর পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। পুরোপুরি তৈরি হয়ে বাসার সামনে এসে দাঁড়ালাম। চোখ জোড়া আমার চাতক পাখির ন্যায় উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পরাগ ভাইয়ের অপেক্ষায়।
_____________
দিনের বেলা আজ প্রখর রোদ ছিলো। বেশ গরম লাগছিলো। কিন্তু এখন সন্ধ্যা নামার পর আবহাওয়া যেন একেবারেই উলটো হয়ে গেলো। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। যে আকাশটা আজ দিনের বেলা রৌদ্রের আলোয় ঝলমল করছিলো, সেই আকাশেরই একেক পাশে টুকরো টুকরো মেঘ জমা শুরু করেছে। কী জানি বৃষ্টি হবে কিনা!
আমি কি ছাতা নিয়ে যাবো? যদি বৃষ্টি আসে! তখন তো ফ্যাসাদে পড়ে যাবো। কী করবো? বাসায় গিয়ে আবার ছাতাটা আনবো?
এসব ভাবতে ভাবতেই দক্ষিণ-পূর্ব দিকের রাস্তাটা দিয়ে একটা হুড খোলা রিকশা এগিয়ে আসতে দেখলাম। রিকশার গদিতে লম্বা মতো একটা অবয়ব বসা দেখতে পাচ্ছি৷ আমি একদৃষ্টে ওদিকে তাকিয়ে রইলাম। রিকশাটা রোড লাইটের কাছাকাছি আসতেই মানুষটার চেহারা স্পষ্ট হয়ে উঠলো। উনি আর কেউ না, পরাগ ভাই।
উনাকে দেখেই আমার মাথা থেকে বৃষ্টি, ছাতা সবকিছুর চিন্তা বেরিয়ে গেলো। আর বাসায় গিয়ে কাজ নেই। পরাগ এসে পড়েছেন। উনাকেও দাঁড়িয়ে রাখাটা ভালো দেখাবে না। এর চেয়ে বরং এখনি চলে যাই। যত তাড়াতাড়ি যাবো, তত তাড়াতাড়িই ফিরে আসতে পারবো।
পরাগ ভাই রিকশাওয়ালাকে আমার ঠিক পাশেই রিকশাটা থামাতে বললেন। উনি আমাকে দেখেই হাসলেন,
‘বাহ! তুমি তো দেখি তৈরি হয়েই আছো। দারুণ দেখাচ্ছে কিন্তু!’
উনার মন্তব্যটা শুনে একটু লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। যদিও সেটা বুঝতে দিলাম না।
প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললাম,
‘রিকশা কেন? আমরা দু’জন কি একসাথে রিকশায় বসে যাবো নাকি?’
পরাগ ভাই ঠোঁট উলটে বললেন,
‘অগত্যা। অন্যকিছু তো পেলাম না। রিকশা করেই আসতে হলো। কিন্তু একসাথে রিকশায় বসে যাবো নাকি মানে? কোথায় যাবো আমরা?’
‘তখন যে জায়গায় গিয়েছিলাম, সেখানেই। ঐ রেস্টুরেন্টে।’
কথাটা শুনেই পরাগ ভাই মারাত্মক আশ্চর্য হয়ে গেলো। হতবাক চেহারায় বললেন,
‘তুমি সত্যিই এখন রেস্টুরেন্টে যাবে? লাইক রিয়েলি? আর ইউ সিরিয়াস?’
‘জি হ্যাঁ।’
‘কিন্তু ঐ রেস্টুরেন্টটা তো তোমার বাসা থেকে অনেক দূরে হয়ে যায়। এসময় অতো দূর যাওয়া ঠিক হবে না।’
পরাগ ভাইয়ের কথা শুনে প্রসন্ন হাসলাম আমি। ভালোই চিন্তা করেন দেখি আমায় নিয়ে। যাক। আমি একটু ভেবে বললাম,
‘আচ্ছা তাহলে কাছেপিঠেই কোথাও চলুন।’
পরাগ ভাই মাথা নেড়ে বললো,
‘আচ্ছা। কিন্তু কোথাও যাবো জানলে আমি যেভাবেই হউক রিকশার বদলে একটা টমটম নিয়ে আসতাম। অন্তত দূরত্ব রেখে বসা যেতো। কেউ যদি দেখে ফেলে? তবে… তুমি চাইলে আমরা হেঁটে যেতে পারি।’
মনে মনে বেশ অবাক হলাম আমি। বাব্বাহ! উনি এত চিন্তাভাবনাও করেন? এমনিতে হাবভাবে তো কিছু বোঝা যায় না৷
আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি ডাকলেন,
‘স্মিহা, কী হলো?’
আমি হুশে ফিরে জবাব দিলাম,
‘না, কিছু না। চলুন রিকশা করেই যাবো। সমস্যা নেই।’
বলেই উঠে পড়লাম রিকশায়।
পরাগ ভাই একটু সরে বসে জায়গা দিলেন আমায়।
একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে বললাম,
‘আমি কখনো রাত্রিবেলা রিকশার হুড ফেলে ঘুরতে বের হইনি। কত্ত ভালো লাগছে!’
পরাগ ভাই হেসে বললেন,
‘তাই?’
‘হ্যাঁ। কেন? আপনার কি হুড খোলা অবস্থায় ভালো লাগে না?’
পরাগ ভাই দেদার হাসলেন,
‘রিকশায় চড়লে আমাকে প্রতিবারই হুড ফেলেই রাখতে হয়। হুড টাঙালে সোজা হয়ে বসতে পারি না যে। কুঁজো হয়ে বসা লাগে। শান্তি পাই না। পিঠ ব্যাথা করে।’
উনার জবাব শুনেই আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
‘ওহ হ্যাঁ, আপনি তো আবার তালগাছ! ভাই আপনি এখানে কেন? যান মরুভূমিতে গিয়ে হাজারো খেজুর গাছের মেলায় একাকী তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।’
বলে আমি খিকখিক করে হেসে ফেললাম।
পরাগ ভাই ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,
‘অন্যকে তো ভালোই ক্ষ্যাপাও দেখি। নিজে যত ইচ্ছা ক্ষ্যাপাতে পারো, সমস্যা নেই। আর অন্য কেউ বা আমি ক্ষ্যাপালেই তখন রেগে যাও, হ্যাঁ?’
‘বেশ করি, রাগ করি। আপনার কী?’
পরাগ ভাই মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
‘লঙ্কাবতী একটা!’
‘হ্যাঁ আর আপনি তো খুব মিষ্টিবতী। দুঃখিত! মিষ্টিবান। মিষ্টিবান হবে ওটা।’
পরাগ ভাই আমার কথা শুনে হেসে ফেললেন,
‘মিষ্টিবান? হা হা হা। জোস শব্দ তো।’
আমি মুখ ভেংচি দিলাম।
‘হয়েছে, আর দাঁত দেখাতে হবে না। চুপ থাকুন।’
টুকটাক গল্প আর কথা কাটাকাটি করতে করতে একটা ক্যাফেতে পৌঁছালাম আমরা। পরাগ ভাই রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে আমায় নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পা বাড়ালেন।
____________
পরাগ ভাই আর আমি মোটামুটি সামনেই একটা রাউন্ড টেবিলে বসলাম। দুইটা কফির অর্ডার দিয়ে উনি আমার উদ্দেশ্যে বললেন,
‘আজ যে তোমার কাজল টানা চোখ জোড়া দেখারও সৌভাগ্য হবে ভাবতেই পারিনি। তোমার চোখ দুইটা এমনিতে যত বেশি সুন্দর, এখন ঠিক ততগুণ বেশি সৌন্দর্যই আরও ছিটকে পড়ছে বোধয়।’
উনার কথা শুনে ভারী লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলাম যেন। পরাগ ভাই হেসে বললেন,
‘আরে লঙ্কাবতী, তুমি লজ্জাও পাও? ঠোঁটে-মুখে লাজুকতা, চোখে বিব্রতির ছাপ, অস্থিরতা… বাহ। একেবারে লাল টুকটুক লাজুকলতা!’
এসব শুনে তো আরও বেশি লজ্জা পেয়ে গেলাম। কেন যে কাজল টাজল লাগাতে গেলাম! আমায় কী ভূতে যে ধরেছিলো, কে জানে! পরাগ ভাইয়ের দিকে আর তাকানোরই সাহস হলো না আমার। যতক্ষণ ক্যাফেতে ছিলাম, দৃষ্টি নামিয়ে রেখে কোনোমতে কাটিয়ে নিয়েছি। যদিও পরাগ ভাই ব্যাপারটা বেশ বুঝতে পারছিলেন, আমি যে লজ্জা পাচ্ছি। মাঝেমধ্যে এটা নিয়ে কৌশলে খোঁচাও মারছিলেন আর মজা নিচ্ছিলেন।
ইশ! কী লজ্জাজনক অবস্থা!
না পারছিলাম সইতে, না পারছিলাম কিছু বলতে।
ক্যাফে থেকে বের হওয়ার পর হাফ ছেড়ে বাঁচলাম যেন। এখন তো আর পরাগ ভাই আমার মুখোমুখি তাকিয়ে থেকে কিছু বলতে পারবেন না। লজ্জা বা বিব্রত লাগলেও লুকিয়ে নিতে পারবো সেটা।
ক্যাফে থেকে বেরোতেই পরাগ ভাই আমাকে এক সাইডে দুই মিনিটের জন্য দাঁড়িয়ে থাকার কথা বলে দৌড়ে কোথায় যেন গেলেন। আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম, কিন্তু জায়গা থেকে সরলাম না। ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে পরাগ ভাইয়ের অপেক্ষা করতে থাকলাম।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। আর উনার কথা ভাবছি। কখন আসবে… কখন আসবে। হুট করে পেছনে ওদিকে তাকাতেই দেখি পরাগ ভাই আগের মতোই দৌড়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। হাঁপাচ্ছেন উনি। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘কী হয়েছে?’
উনি কিছু বললেন না। আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে আস্তে আস্তে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়লেন। পিছন লুকিয়ে রাখা হাতটা ধীরে ধীরে সামনে বাড়িয়ে বললেন,
‘এখানের জড়ো করা একশোটা গোলাপকে আমার শতভাগ ভালোবাসার নিদর্শনই ধরে নাও। এই একশোটা গোলাপ যতটা যতন করে ফুটিয়েছিলাম, ঠিক ততটা যতন করেই তোমার জন্য আমার হৃদয়ে ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি। আমার এই হৃদয়ভর্তি ভালোবাসা ও এই একশো গোলাপ আজ থেকে তোমায় সমপর্ণ করলাম। আমায় ভালোবেসো স্মিহা!’
উনার এই প্রস্তাবে আমি একেবারে নির্বাক হয়ে গেলাম। চোখমুখ ঝলমল করছে আমার। মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোচ্ছে না। উনার এই কান্ডে আমি কী করবো বুঝে উঠতে পারলাম না। কিন্তু উনার ভালোবাসাকেও অস্বীকার করতে পারলাম না। উনার দৃষ্টি দেখেই যেন আমি সবকিছু বুঝতে পারছি। আমার হাত দু’টো নিজেদের মতোই এগিয়ে গিয়ে পরাগ ভাইয়ের ভালোবাসা মাখানো সেই একশো গোলাপ নিজের দখলে নিয়ে নিলো। ঠোঁটের কোণে এক অকৃত্রিম হাসি ফুটে উঠলো আমার।
.
.
চলবে…