তুমি_শুধু_আমারই_হও লেখনীতে- অরনিশা সাথী |৩|

#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|৩|

অর্নি এখন পুরোপুরি সুস্থ। তাই সকাল সকাল উঠে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। মিসেস অদিতি এসে মেয়েকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন। অর্নি কোনোমতে খেয়ে আম্মুকে বাই বলে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো। কয়েক সেকেন্ড বাদেই আবার দৌড়ে রুমে এসে বিছানা থেকে ফোনটা তুলে দৌড় লাগালো। মিসেস অদিতি মেয়ের কান্ডে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। সবকিছু ফেলে যেতে পারে কিন্তু ফোন ভুলেও ফেলে যেতে পারবে না। ফোনের মধ্যেই মনে হয় অর্নির প্রান ভোমরা লুকিয়ে আছে। মিসেস অদিতি বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে রান্নার কাজে লেগে পড়লেন।

নূরদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে অর্নি সমানে ওকে ফোন করে যাচ্ছে। কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই ফোন তুলছে না। ফলে রাগ আর বিরক্তি দুটোই এসে ভর করলো অর্নির মাথায়। অর্নি আবার ফোন করার আগেই ওপাশ থেকে নূরের ফোন এলো। মনে মনে নূরকে বেশ কটা গালি শোনানোর জন্য প্রস্তুত করে ফোন রিসিভ করলো। অর্নিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নূর নিজেই বললো,
–“স্যরি সোনা। রাগ করিস না প্লিজ। ফোন সাইলেন্ট মুডে ছিলো তাই টের পাইনি।”

–“তোর স্যরির গুষ্টি কিলাই আমি। কতক্ষণ ধরে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি সেই হিসেব আছে তোর?”

–“তুই এই বুদ্ধি নিয়ে ভার্সিটিতে চান্স পেলি কি করে দোস্ত?”

–“দেখ এমনিতেই মন মেজাজ খারাপ আছে৷ এখন একদম উল্টাপাল্টা বলে আর রাগাবি না বলে দিলাম।”

–“আমি যেহেতু ফোন ধরছি না তুই বাসায় এলেই তো পারিস। আমাদের বাসার নিচেই তো আছিস। তাহলে শুধু শুধু রাস্তায় কেন দাঁড়িয়ে আছিস?”

নূরের কথায় অর্নির টনক নড়লো। আসলেই তো ও নূরদের বাসার নিচেই দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে বাসায় কেন গেলো না? ওর উচিত ছিলো যখন নূর ফোন ধরছিলো না তখন বাসায় গিয়ে ওর কানটা টেনে ছিঁড়ে দিতে। কিন্তু আফসোস এই খেয়ালটুকু ওর মাথায় এলো না। নূর মৃদু হেসে আবারো বললো,
–“শুধু হাতে পায়েই বড় হলি। বুদ্ধিশুদ্ধি কিচ্ছু হলো না আর।”

–“এই একদম ফালতু বকবি না। তোর আসার হলে আয় নয়তো আমি চললাম।”

–“জানু শোন না। বলছি কি একটু বাসায় আয়। আমার এখনো রেডি হওয়া হয়নি। মাত্রই ঘুম থেকে উঠলাম আমি।”

–তোরা না আমাকে বলিস আমি মরার মতো পড়ে পড়ে ঘুমাই? তাহলে এখন তুই কি?”

–“ওই তো তোর সাথে থাকতে থাকতে আমরাও একটু আধটু তোর মতো হয়ে গেছি।”

–“কু’ত্তা ফোন রাখ তুই।”

কথাটা বলে অর্নি নিজেই ফোন রেখে দিলো। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো নূরদের বাসার ভেতর। কলিংবেল চাপতেই নূরের আম্মু শায়লা বেগম এসে দরজা খুলে দিলো। অর্নি হাসিমুখে শায়লা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“কেমন আছো আন্টি?”

–“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোর কি খবর? জ্বর পুরোপুরি কমেছে তো।”

–“ইয়েস, আমি একদম ফিট আছি।”

–“তা তো বোঝাই যাচ্ছে। দুদিনের জ্বরে চোখমুখ একদম শুকিয়ে পানসে হয়ে গেছে। কি দরকার ছিলো বৃষ্টিতে ভেজার?”

–“উফফস আন্টি। তুমিও এখন আম্মুর মতো শুরু করো না প্লিজ। এই দুদিন বাসায় শুয়ে শুয়ে প্রচুর বকা খেয়েছি।”

–“তা এতদিনে আসার সময় হলো তোর তাই না? রুশান কোথায়? ও আসেনি?”

–“ও ভার্সিটি আছে। তোমার মেয়ের তো এখনো রেডি হওয়া হয়নি তাই বাসায় আসতে হলো আমায়।”

–“আচ্ছা নূর রুমেই আছে। তুই যা আমি নাস্তা পাঠাচ্ছি।”

–“শুধু নূরের জন্য পাঠিও। আমি খেয়ে এসছি।”

কথাটা বলে অর্নি সিড়ি বেয়ে কিছুটা উপরে উঠে গেলো। তারপর কিছু একটা মনে হতেই আবার দৌড়ে কিচেনে চলে গেলেন। শায়লা বেগম অর্নিকে আবার কিচেনে আসতে দেখে বললো,
–“কিরে কিছু বলবি?”

–“হ্যাঁ ওই আর কি।”

কথাটা বলে অর্নি একবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো। তা দেখে শায়লা বেগম বললেন,
–“কাউকে খুঁজছিস?”

–“নাহ। আচ্ছা বলছিলাম উৎসব ভাইয়া কি বাসায় আছে?”

–“হ্যাঁ ঘুমোচ্ছে। ঘন্টা খানেক বাদে উঠে অফিস যাবে।”

–“ওহ! তাহলে বলাই যায়।”

–“আচ্ছা বল।”

–“আচ্ছা আন্টি ভাইয়ার জন্মের পর কি উনার মুখে মধু দেওনি?”

শায়লা বেগম ভ্রু কুঁচকে তাকালো অর্নির দিকে। অর্নির আমতা আমতা করে বললো,
–“না মানে উনি__”

–“কি হইছে বল তো?”

–“জানো সেদিন উনি আমাকে শুধু শুধু তিনটা ধমক দিয়েছে। আমি কিচ্ছু করিনি বিশ্বাস করো। উনি তো আমাকে তেমন ভাবে চিনে না আর আমিও না। তাহলে কেন শুধু শুধু আমাকে বকলো?”

মন খারাপ করে কথাটা বললো অর্নি। শায়লা বেগম মুচকি হেসে অর্নির গালে হাত রেখে বললেন,
–“এ তো ভারী অন্যায়। ওকে আমি খুব করে বকে দিবো। কিন্তু ও তো শুধু শুধু বকার ছেলে না। কি করেছিলি তুই?”

–“কিচ্ছু না বিশ্বাস করো। আমি শুধু বলেছিলাম যে আমি আরো বৃষ্টিতে ভিজবো আর উনার সাথে গাড়িতে করে আমি যাবো না৷”

শায়লা বেগম হেসে ফেললেন। তারপর কাজ করতে করতে বললেন,
–“তাহলে তো বলবো উৎসব ঠিকই করেছে৷ নূর আমাকে বলেছে তো ঘন্টাখানেকের মতো বৃষ্টিতে ভিজেছিস তুই। এরপর আরো ভিজলে তোকে আর খুঁজে পাওয়া যেতো না।”

শায়লা বেগমের কথায় অর্নি গাল ফোলালো। তারপর অভিমানী কন্ঠে বললো,
–“হ্যাঁ তোমার ছেলে না? তার হয়ে তো কথা বলবেই। আচ্ছা আন্টি একটা সত্যি কথা বলো তো?”

–“কি?”

–“উৎসব ভাইয়া হওয়ার পর কি উনাকে করলা বা নিমপাতার রস খাইয়েছিলে? ইশ্ কি তেতো তেতো কথা৷ যেই ধমক দিছিলো আমার কান পঁচে গেছে একবারে। মিষ্টি করেও তো ধমক দেওয়া যায় তাই না?”

–“আচ্ছা উৎসবকে বলবো আমি নেক্সট টাইম যাতে তোকে মিষ্টি করে ধমক দেয়।”

–“ধ্যাত! তুমিও না। উনি আমাকে কোন দুঃখে ধমক দিতে যাবে? উনার সামনেই পড়বো না আমি আর। যাই হোক আমি উপরে গেলাম।”

কথাটা বলে অর্নি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। নূরের রুমে ঢোকার আগেই কেউ একজন অর্নির হাত ধরে টেনে অন্যরুমে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো ওকে। ভয় পেয়ে অর্নি চিৎকার করতে গেলেই লোকটা ওর মুখ চেপে ধরে। অর্নি চোখ খুলে দেখে ওর সামনেই ফোলা ফোলা চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উৎসব। পড়নে সাদা থ্রি কোয়াটার আর কফি কালার স্যান্ডো গেঞ্জি। চুলগুলো এলেমেলো হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছে। উৎসব ফোলা ফোলা চোখ নিয়েই অর্নির দিকে রাগী চোখে তাকিয়েছে। ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললো অর্নি। ওকে এখানে টেনে আনার কারন খুঁজে পেলো না ও। অর্নি ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে উৎসবের দিকে৷ উৎসব অর্নির হাত ছেড়ে দিয়ে দেয়ালে এক হাত দিয়ে বললো,
–“সেদিন রাতে যেন কি বলেছিলে আমাকে? আর আজকেও তো একটু আগে আম্মুর কাছে আমার নামে কি কি যেন বলছিলে? তো আমাকেও একটু বলো। শুনি আমি।”

–“ক্ কই কিছু বলিনি তো আমি।”

–“আমাকে জন্মের সময় মধু দেওয়া হয়নি। করলা বা নিমপাতার রস দিয়েছিলো আমার মুখে যার জন্য তেতো তেতো কথা বলি। আরো কি যেন বলছিলে? তোমাকে শুধু শুধু ধমক দিয়েছি মিষ্টি করে কথা বলতে পারি না।”

–“যে্ যেতে দিন আমাকে। প্লিজ।”

–“তো মিস অর্নি__এখন মিষ্টি করে কথা বলবো? নাকি এমন কিছু করবো যাতে তুমি বুঝতে পারো আমিও মিষ্টি__”

–“সরুন না প্লিজ। যাবো আমি এখান থেকে।”

উৎসব সরে দাঁড়ানোর বদলে আরো কাছ ঘেঁষে দাঁড়ালো অর্নির। তারপর অর্নির চোখে চোখ রেখে বললো,
–“আমি না চাইলে তুমি এখান থেকে কিছুতেই যেতে পারবে না।”

ভয় পেয়ে কেঁদে দিলো অর্নি। উৎসব ওর এতটা কাছে আসাতে ওর হার্টবিট প্রচন্ড গতিতে লাফাচ্ছে। বুক দুরুদুরু করছে। ও শুনেছে বিদেশে যেসব ছেলেরা হায়ার এডুকেশনের জন্য যায় তার বেশিরভাগ ছেলেই নাকি কিছুটা লুচু টাইপ হয়। ওখানে বিদেশী অনেক মেয়েদের সাথে তাদের ওঠাবসা হয়। যখন তখন হাগ করে কিস করে। আবার লিভইন করে অনেকে। এখন উৎসবও যদি এরকম কিছু করে বসে? সেই ভয়েই অর্নি কেঁদে ফেলে৷ আচমকা অর্নিকে কাঁদতে দেখে উৎসব ঘাবড়ে গিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। কি এমন করলো ও যে মেয়েটা কাঁদছে? কাঁদার মতো কি আদেও কিছু করেছে ও? উৎসব ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
–“অর্নি? এই অর্নি কাঁদছো কেন তুমি? লেগেছে কোথাও তোমার?”

–“আপনি খুব খারাপ। আপনি আমাকে এখানে কেন এনেছেন? আমার এতটা কাছে কেন এসেছেন আপনি?”

–“এজন্য তুমি কাঁদছো?”

অর্নি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো৷ উৎসব সরে গিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে গালে হাত দিয়ে অর্নির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। উৎসব বুঝতে পারছে না এই মূহুর্তে ও হাসবে নাকি কাঁদবে? সামান্য ওর কাছে গিয়েছিলো কিছুটা ভয় দেখানোর জন্য আর এতেই মেয়েটা উল্টাপাল্টা ভেবে কাঁদতে শুরু করে দিলো? অর্নি মাথা তুলে উৎসবের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আমি যাই প্লিজ?”

–“হ্যাঁ ম্যাম প্লিজ আপনি যান।”

উৎসবের কথাটা বলতে সময় লাগলেও অর্নির দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে সময় লাগলো না। উৎসব একদৃষ্টে অর্নির যাওয়ার দিকে ক্ষানিকটা সময় তাকিয়ে থেকে বললো,
–“এই মেয়ে কি শুধু হাতে পায়েই বেড়েছে? কে বলবে ও ভার্সিটিতে পড়ে? এর বিহেভিয়ার দেখলে তো মনে হবে ক্লাস ওয়ান টু এর বাচ্চা।”

সেকেন্ড ফ্লোরের করিডোর দিয়ে হাঁটছিলো অর্নি আর নূর। উদ্দেশ্য রুশানকে খুঁজে বের করা। সকালে ভার্সিটি আসার পর থেকে একবারের জন্যও ওর দেখা মিলেনি। কোন মেয়ের সাথে ঘাপটি মেরে বসে আছে কে জানে? হঠাৎ করেই ওরা দেখতে পেলো রুশান ইন্টারের একটা মেয়ের সাথে বেশ হাসিখুশি ভাবে কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে। অর্নি আর নূর দুজনেই থেমে গেলো ওখানে। অবাক করা বিষয় হলো রুশান ওদের দেখেও না দেখার ভান করে মেয়েটার সাথে কথা বলতে বলতে চলে গেলো। নূর আর অর্নি দুজনেই আহম্মকের মতো দাঁড়িয়ে দেখলো বিষয়টা।

পরদিন ভার্সিটি গিয়ে অর্নি আর নূর করিডোরে দাঁড়িয়ে রইলো। রুশানকে রেখেই আজ ওরা ভার্সিটি চলে এসেছে। উদ্দেশ্য কালকের সেই মেয়েটার সাথে কথা বলা। কিছুটা সময় বাদেই ওরা দেখতে পেলো মেয়েটা আসছে। মেয়েটা ওদের ক্রস করে যাওয়ার সময় নূর ডেকে উঠলো ওকে। মেয়েটা ওদের সামনে গিয়ে বলে,
–“বলুন আপু৷ ডাকছিলেন আমাকে?”

–“হ্যাঁ। তোমার নামটা যেন কি?”

নূর প্রশ্ন করলো মেয়েটাকে। মেয়েটা একবার অর্নি তো একবার নূরের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। তারপর বললো,
–“তরী।”

–আচ্ছা তরী, রুশানের সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক? আই মিন ফ্রেন্ড অর____”

অর্নি কি বোঝাতে চেয়েছে তরী তা ঠিকই বুঝতে পেরেছে। অর্নি নূর দুজনেই উত্তরের আশায় ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে বললো,
–“নাহ আপু। আমরা শুধুই ফ্রেন্ড।”

–“শুধুই ফ্রেন্ড তো? নাকি এর থেকেও বেশি কিছু?”

নূরের কথায় তরী বড় বড় চোখে তাকালো ওদের দিকে। অর্নি নূরের সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
–“দেখো আমরা তোমার ভালোর জন্যই বলছি। ফ্রেন্ড হলে ভালো। কিন্তু এর থেকে বেশি কিছু যাতে না হয়। শেষে তুমিই কষ্ট পাবা।”

–“কে্ কেন আপু? কি হইছে? ও ছেলেটা কি ভালো না?”

–“দেখো তরী আমাদের যা বলার ছিলো বলেছি। এরথেকে বেশি কিছু আর জানতে চেও না। অর্নি চল আমাদের ক্লাসে লেট হচ্ছে।”

কথাগুলো বলে নূর অর্নির হাত ধরে চলে যেতে নিলেই তরী বলে,
–“আপু আপনারা দুজন তো রুশানের বেস্ট ফ্রেন্ড। সারা কলেজ ভার্সিটি জানে আপনাদের বন্ধুত্বের বন্ডিং কতটা ভালো। আপনাদের ফ্রেন্ডশিপ কতটা স্ট্রং। আপনারা তিনজন একে অপরকে চিনেনও ভালো করে। রুশানের মধ্যে খারাপ কি আছে বলুন না?”

–“দেখো আমি বুঝতে পারছি তুমি রুশানকে নিয়ে কিছু ফিল করো। আর আমরা তোমার ভালো চাই। তাই তুমি যেহেতু এত করে জিজ্ঞেস করছো তাহলে বলি।”

কথাটা বলে নূর অর্নির দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো ওকে বলার জন্য। তরী কেমন কেমন চোখে যেন ওদের দুজনকে দেখছে। ওরা দুজনেই মুখ টিপে হাসছে। অর্নি বললো,
–“আসলে রুশান এর আগেও অনেক গুলো রিলেশনে জড়িয়েছে। দু/এক মাস বাদেই সেসব মেয়েদের আবার ছুঁড়ে ফেলে দেয় তার থেকে বেটার কাউকে পেলে। এই অব্দি রুশান কত মেয়েকে কাঁদিয়েছে তার হিসেব নেই। এই তো এর আগে যে মেয়েটার সাথে রিলেশন ছিলো সেই মেয়েটা ওকে অনেকটা ভালোবাসতো। কি কি না করেছে ওর জন্য? অথচ এখন তোমাকে ভালো লাগাতে সেই মেয়েটার সাথে সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। মেয়েটা মাঝে মধ্যেই আমাদের ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে। আমরা কি করবো বলো? ফ্রেন্ড তো। তাই তোমার অবস্থাও যেন ওই মেয়েটার মতো না হয় সেজন্যই তোমাকে আগে থেকেই সাবধান করে দিলাম।”

কথাগুলো বলে অর্নি তরীর দিকে তাকালো। মেয়েটা চোখমুখের অবস্থা একেবারে করুন। অর্নি আর নূর একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে। তরী বললো,
–“আচ্ছা। থ্যাংকস আপু।”

কথাটা বলেই তরী চলে গেলো। তরী চলে যেতেই নূর আর অর্নি হাই ফাইভ করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। নূর বললো,
–“দোস্ত কি বললি এইসব? এইটা প্ল্যানে ছিলো না। এখন না জানি বেচারি তরী আর রুশাইন্না দুজনেই কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে যায়।”

–“শা’লা রুশাইন্না এইবার বুঝবো ঠ্যালা। তরীরে পাইয়া আমগো লগে ভাব দেহাইছে না? আমগো ইগনোর করে ও? এইবার দেখবি ঠিকই সুরসুর কইরা আমগো কাছে আইসা হাজির হইবো ওই।”

কথাগুলো বলে অর্নি আর নূর আবারো একদফা হেসে নিলো। ক্লাসে চলে গেলো দুজনেই।

অর্নি আর নূর দুটো ক্লাস করে সিড়িতে বসে আছে। মিনিট দুয়েক বাদে রুশান এসে অর্নি আর নূর দুজনের মাথাতেই চাটি মেরে বসলো ওদের পাশে। অর্নি আর নূর দুজনেই নিজেদের মতো করে বসে চকলেটস খাচ্ছে। রুশান কিছু সেকেন্ড ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
–“তরীর কাছে আমার নামে কি বলেছিস তোরা দুজনে?”

নূর অবাক হয়ে তাকালো রুশানের দিকে। যেন ওরা তরীকে চিনেই না। আর অর্নি এখনো আপন মনে চকলেট খেয়েই যাচ্ছে। নূর বললো,
–“কই আমরা তো তোর ব্যাপারে কাউকে কিছু বলিনি।”

রুশান নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
–“আমি অনেক রিলেশন করি তাই না? তারপর আবার নতুন কাউকে ভালো লাগলে পুরোনো জনকে ছুঁড়ে ফেলে দেই। এরকম আরো অনেক কিছু। এইসব উল্টাপাল্টা ওকে কেন বলেছিস তোরা? তোদের জন্য এই অব্দি একটাও রিলেশন কি করতে পেরেছি আমি?”

–“নাহ।”

নির্লিপ্ত কন্ঠে জবাব দিলো নূর। অর্নি তখনো চুপ। রুশান আবারো বললো,
–“বহু কষ্টে ওর এটেনশন পাইছিলাম। সেই ওর কাছেও আমার নামে তোরা ভুলভাল বলে আসলি? ভাবছিলাম প্রেমটা বুঝি এবারে হয়েই যাবে। কিন্তু না আমি তো ভুলে গেছিলাম তোরা আমার ফ্রেন্ড। তোদের মতো ফ্রেন্ড যাদের কপালে আছে তাদের কোনদিনও গার্লফ্রেন্ড জুটবো না। মাঝে মাঝে আফসোস হয় আমার কেন যে তোদের মতো দুইটা চিজরে আমার লাইফে জুটাইছি। এহন মনে হয় আমার প্রেম তো দূরে থাক তোদের জন্য আমি বিয়াও করতে পারমু না। তোদের জ্বালায় আজীবন আমার সিঙ্গেল থাকতে হইবো।”

একদমে কথাগুলো বলে বড় একটা শ্বাস নিলো রুশান। নূর গালে হাত দিয়ে বসে রুশানের কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো। ওর মনে হচ্ছে আসলেই রুশানের এই জীবনে প্রেম হবে না ওদের জন্য। বেচারা যেই কয়বার মেয়ে জুটাইছে ওরা দুজন সেই কয়বারই প্রপোজ করার আগেই ব্যাঘাত ঘটাইছে তাতে। অর্নি চকলেট পুরোটা খাওয়া শেষ করে রুশানের দিকে ঘুরে বসলো। তারপর রাগী চোখে রুশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“হ তুই সিঙ্গেলই থাকবি। আর শোন আমরা এরকম কিছু করতাম না যদি তুই কাল তরীর সাথে যাওয়ার সময় আমাদের দেখেও না দেখার ভান না করতি। কাল প্রেম একেবারে উতলায় পরছিলো না? যা এখন গিয়া তোর তরীর সাথে জমিয়ে প্রেম কর। আমরা আর কিচ্ছু কমু না।”

কথাগুলো বলেই অর্নি দাঁত বের করে হাসলো। অর্নির হাসিটা যেন ঠিক আগুনে ঘী ঢালার মতো। রুশান রেগে গিয়ে বললো,
–“তরীরে উল্টাপাল্টা বুঝাইয়া এহন কস প্রেম করবার তাই না? ও এহন আমার সাথে কথাই বলে না। এহন আর কি বলবি তোরা? যা করার তা তো করেই ফেলছিস। তোরা দুইডা আজকে আমার হাতে মার্ডার হইয়া যাবি কইয়া দিলাম আমি।”

কথাগুলো বলে রুশান জুতো খুলতে লাগলো। তা দেখে অর্নি আর নূর নিজেদের ব্যাগ নিয়ে ওখান থেকে দৌড় লাগিয়েছে। রুশান একটা জুতো ছুঁড়ে মারে ওদের দিকে। কিন্তু আফসোসের বিষয় ওর নিশানা ভুল হয়। দুজনের একজনেরও লাগেনি। রুশান উঠে গিয়ে জুতা পড়ে দৌড় লাগায় ওদের পিছনে। আশেপাশের সকলে অবাক চোখে দেখছে ওদের। ভার্সিটির স্টুডেন্ট ওরা আর এখনো কিনা প্রাইমারির বাচ্চাদের মতো ঝগড়া মারামারি করছে? মারার জন্য জুতো নিয়ে ছুটছে পেছন? আর দূর থেকে একজন বারবার ঘায়েল হচ্ছে নূরের উপর। নূরের হাসি ওর কথা বলার স্টাইল রেগে গেলে রাগী ফেস সবকিছু যেন খুব করে নূরের কাছে টানছে ওকে।

চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here