তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা পর্ব:48,49

তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
পর্ব:48,49
Suraiya_Aayat
পর্ব:48

“ক্ষমা চাইছো কেন আজ তুমি আমার কাছে? আদতেও কি তুমি অনুতপ্ত নাকি আবার ছলনা করছো কোনটা ঠিক বলতে পারো?”

আরাফাত সাহেব অনুতপ্ত হওয়ার সুরে বললেন
“যা খুশি বলবে বলো কিন্তু আজ আমি কোন অভিযোগ করবো না কারন আমি জানি যে দোষটা আমারই ছিলো?”

নূরের মা বেশ কড়া কন্ঠে বললেন
“সেদিন যদি তুমি এই লোভ না করতে তাহলে আজ এই দুর্দশা কিছুই হতো না, না আমার আপু হারিয়ে যেতো আর না আমি আমার সন্তানের থেকে দূরে সরে যেতাম৷”

“তুমি তো জানো যে তখন আমার টাকার প্রয়োজন ছিলো৷”

নূরের মা ওনাকে থামিয়ে বললেন
“তোমাকে ভালোবেসে তোমার হাত ধরে পালিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন,আমি ছিলাম জমিদারী বংশের মেয়ে আর তুমি ছিলে সাধারন এক মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে তবুও আমি আমাদের সম্পর্কের মাঝে কখনও অর্থ টেনে আনিনি৷ তোমার হাতে হাত রেখে পাড়ি দিয়েছিলাম অজানা এক ভবিষ্যতের দিকে৷ তবুও তুমি খুব ভালো ভাবে আমাদের সংসারটাকে গড়ে তুলেছিলে, তোমার যা ছিলো তা দিয়েই তুমি সুখের সংসার গড়ে তুলেছিলে তারপর কয়েক বছর পর যখন রেদোয়ান বড়ো হলো আর নূর ও বেশ বড়ো, সেই সময় তোমার ব্যাবসায় তীব্র সংকট দেখা যায়,বাবা মায়ের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো ,তারা আমাকে ত্যায্য করেছিলো তাই তাদের কাছে আর ফেরার চৈষ্টা করিনি, প্রিয়ন্তি আপুও বোধহয় অনেক খোঁজার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু খুঁজে পাইনি আর পাবেই বা কি করে যে নিজে থেকে হারিয়ে যায় তাকে কি কখনও ফিরে পাওয়া যায়? যায়না!
তারপর তুমি একদিন বললে যে আমার নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে আর তোমরা নিজের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে,আমি নারাজ ছিলাম কিন্তু সেদিন তুমি আমার কথা শুনতে বাধ্য ছিলে না কারন তোমার তো টাকার প্রয়োজন ছিলো তাইনা?”

রেদোয়ান সাহেব মাথা নীচু করে নিলেন,হয়তো ভীষনভাবে অনুতপ্ত তিনি৷ ওনাকে দমিয়ে দিয়ে নূরের মা পুনরায় বললেন
“আমি বাধ্য হয়ে নিজের বাড়িতে যায় কিন্তু গেট থেকেই আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাই লজ্জায় আর ঘৃনার কখনো সেখান দুবার ফিরে যাওয়ার কথা ভাবিনি৷ তারা বলেছিলো যে তাদের নাকি কোন ছোট মেয়েই নেই৷ বেশ! কিন্তু তুমি তাতেও ক্ষান্ত হলে না তোমার এতোই টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো যে না পেরে আমাকে প্রিয়ন্তি আপুর কাছে যেতে হয়েছিলো যেখানে তুমি আমার আত্মসম্মান উপেক্ষা করে এতো বছর পর কেবলমাত্র টাকার কারনে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করতে বলেছিলে৷
বেশ তাই হলো তোমার কথা মতোই যোগাযোগ করলাম আপুর সাথে,কিন্তু আপুর সাথে তেহেরাত ভাইয়ার সম্পর্কের অবমনানার কথা শুনে টাকা চাওয়ার সাহস হয়নি তাই না পেরে বাধ্য হয়ে বলেছিলাম যে আপু যাতে একটু আমার বাবার বাসায় সবাইকে অনুরোধ করে যেন তারা আমাকে মেনে নেয়৷”

কথাটা বরে নিশ্বাস ছাড়লেন নূরের মা,আরাফাত সাহেব ও নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে,আজ আর বলার মতো মুখ নেই৷

“তারপর আপু তাদের কাছে আমার হয়ে কথা বললে আপুর ওপর ভাইয়া রেগে যান কারন তিনি কখনোই চাইতেন না যে তার সম্পত্তিতে কেও ভাগ বসাক যদিও পৌতৃক সম্পত্তিতে মেয়েদের একটা অধিকার থাকে তা বোধহয় উনি ভুলেই গিয়েছিলেন৷ ভাইয়া রাগ করে সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপুকে সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার আর তা ওনার একার পক্ষে সম্ভব ছিলো না তাই তিনি হঠাৎই একদিন আমার সাথে যোগাযোগ করেন আর আপুকে তার পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন এবং পরিবর্তিতে সম্পত্তির ভাগ না দিলেও কিছু টাকা দেওয়ার লোভ দেখান যদিও আমি তাতে গলিনি তুমি লোভে পড়ে রাজী হয়ে গিয়েছিলে৷ যে মানুষটা আসলেই তোমার কখনো কোন ক্ষতি চাইনি তুমি তাকেই সরিয়ে দিতে চেয়েছিলে৷ লজ্জার বিষয়! আমি তোমার এই কথা সবার সামনে ফাঁস করে দিতে চাইলে তুমি আমাকে বিচ্ছেদের ভয় পায় যদিও আমি ভয় পাইনি অবশেষে তুমি আমার নূরকে আর রেদোয়ানকে মেরে ফেলার হুমকি দাও,আমি দমে যাই তারপর হার মেনে নিই৷ আপু ডায়েরি লিখতেন সেখানে তিনি তার নিঁখোজ হওয়ার খানিকটা হলেও ভবিষ্যৎ বানী করেছিলেন তা তিনি তার ডায়েরি তে লিখেছিলেন আর সেটা কোনভাবেই আয়াশ হাতে পায় তারপর আমাকেও নিঁখোজ হতে হয় আয়াশের কাছে, আয়াশ আমাকে কখনো কোন অসুবিধা রাখেনি, ওকে আমি নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসি৷”

আরাফাত সাহেব প্রশ্ন করে উঠলেন
” তাতে আয়াশের স্বার্থ কি ছিলো?”

“স্বার্থ খুবই সহজ,তার মা কে খুঁজে বার করা৷এখন যদি প্রশ্ন করো যে এতো বছর অপেক্ষা করেছে কেন তাহলে তার উত্তর ও আমার কাছে আছে৷”

“কি?”

“আয়াশের এক্সপেরিমেন্টের জন্য,আয়াশ এমন একটা জিনিস আবিষ্কার করতে চাইতো যাতে মানুষের যৌবনের সৌন্দর্যটা সবসময় ধরে রাখা যায় আর তাতে মানুষের বয়স বাড়লেও শরীরে যেন বয়স বাড়ার কোন চিন্হ না আসে, আর আয়াশ বানিয়েছেও আর এর জন্য ও পাবে কোটি কোটি টাকা, তোমার টাকা লাগলে তুমি তাকে বলতে পারো সে তোমার মুখে টাকা ছুঁড়ে মারবে৷”

কথাটা বলে নূরের মা উঠে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ালেন, আরাফাত সাহেব বললেন
” আর একটা প্রশ্ন করবো?”

উনি কোন উত্তর দিলেন না,নিরবতা সম্মতির লক্ষন ৷

“আয়াশ নূরকে বিয়ে করলো কেন?আর তোমাকেই বা এতোদিন লুকিয়ে রেখেছিলো তার ফলাফল কি হলো?”

উনি গর্জে উঠে বললেন
” আয়াশ তোমার মতো লোভী নয় যে টাকার জন্য কাওকে বিয়ে করবে বা মানসিক অত্যাচার করবে৷সে নূরকে ভালোবাসে,নূরকে সে চায় তাই বিয়ে করেছে তার ভালোবাসা নিসার্থ৷ আয়াশ আমাকে মারার অভিনয় ও করেছিলো কারন শক্রপক্ষ জানতে পেরেছিলো যে আমি এখনও বেঁচে আছি তাই তারা মারতে চেয়েছিল তাই অয়াশ আমাকে মাঝ রাতে রাস্তার মাঝে গুলি মারার জন্য বন্দুক তাক করে আর আমি যদি আয়াশকে সব সত্যি কথা বলে দিই সেই কারনে পিছন থেকে ভাইয়ার পাঠানো একজন আমাকে গুলি মারে যাতে আয়াশ কখনো তার মায়ের হদিশ না পায় কারন ভাইয়ার ধারনা ছিলো যে আমি এতোদিন নিজেই লুকিয়ে ছিলাম আর আয়াশ আমাকে হাতে নাতে ধরে ফেলেছে৷গুলিটা আমার গায়ে লাগতেই আয়াশ পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখেছিলো একজন পালাচ্ছে আয়াশ ও তখন তাকে যেতে দেয় কারন এতে আমদের সুবিধা হতো,আয়াশ আমাকে হসপিটাল নিয়ে যায় , চিকিৎসা করায়,আপু ফিরে আসে পরিকল্পনা মাফিক৷ এবার বলো তোমার শাস্তি কি হওয়া উচিত?”

আরাফাত সাহেব ধপ করে বিছানায় বসে পড়লেন,ওনার একটু টাকার প্রয়োজনের খাতিরে এতো কিছু হতে পারে তা উনি ধারনাতেও আনেননি,বুকের ভিতর হালকা চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছেন,ব্যাথাটা বাড়ছে,নূরের মা চোখের জল মুছে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলেন হঠাৎ পিছন থেকে আহ করে শব্দ আসতেই ঘুরে দেখলেন আরাফাত সাহেব বুকের ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন,উনি দৌড়ে ছুটে গেলেন৷

চলবে,,,,

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব49
#Suraiya_Aayat

আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেল আরাফাত সাহেব হসপিটালে রয়েছেন আজকে তিনি রিলিজ পাবেন৷ এই কদিনে অনেকজন হসপিটালে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন৷ নূরের মা তিনি সবসময় ওনার খেয়াল রাখতেন, উনি হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন তাই ডক্টর বলেছেন যেন তার ঠিকমতো খেয়াল রাখা হয় এবং সময়মতো ওষুধ নিতে এবং দুশ্চিন্তা না করতে৷
অতীতে আরাফাত সাহেবের সমস্ত কর্মকাণ্ড তাছাড়া আয়াশের মায়ের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে আসল কারন এই সবকিছুই নূরের কাছে অজানা কারন আয়াশ নূরকে কিছু বলেনি আর কখনো বলতেও চায়না তার কারণ আয়াশ চায়না যে নূরের চোখে তার বাবা নিচে নেমে যায় তাহলে নুর তার বাবাকে কাছে পেয়েও তার থেকে অনেকটা দূরে সরে যাবে৷
মায়া আর রেদোয়ান ও এসেছেন ওদের মাঝে আপতত সব ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়েছে৷
নূর আজকে আর হসপিটালে আসেনি,আয়াশ ওকে আসতে দেইনি কারন এতোটা রাস্তা জার্নি করলে নূর অসুস্থ হয়ে পড়বে৷
আরাফাত সাহেব কথা বলছেন না, ডক্টর ওনাকে বেশি কথা বলতে বারন করেছেন৷
বিছানায় বসে নূর ছটফট করছে,মনের মাঝে অসস্তি কাজ করছে না পেরে আয়াশকে কল করলো৷
“হ্যালো বাবার ছুটি হয়েছে?”

আয়াশ মৃদু কন্ঠে বলল
” হমম ছুটি হয়েছে”

“এখন কেমন আছে?”

“আপাদত সুস্থ আছে কিন্তু কথা বলছেন না ডক্টর বারন করেছে ওনাকে বেশি কথা না বলতে৷”

“সাবধানে ফিরবেন৷”

“হমম৷”

কথাটা বলে নূর কলটা কাটতেই যাবে তখন আয়াশ বলে উঠলো
“আফু সোনা৷”

নূর মুচকি হেসে বলল
“হমম বলুন৷”

আয়াশ বেশ কিছুখন থেমে বলল
“কিছু খাবে?”

নূর ফিক করে হেসে বলল
“আপনি কি করে বুঝলেন৷”

“বুঝতে হয়৷ কি খাবে বলো৷”

“আসার সময় একটু আইসক্রিম আর চকলেট নিয়ে আসবেন৷”

আয়াশ কিছু না বলে মুচকি হেসে কলটা কেটে দিলো৷

নূর বালিশে মাথা দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো, সময় পরিবর্তেনর সাথে সাথে আয়াশের স্বভাব আর ব্যাবহার গুলোও যেন ভীষনভাবে পাল্টে গেছে৷ আয়াশ এখন অর আগের মতো ডেভিলগিরি করে না আর না নূরের ওপর কোন জুলুম করে বরং নূরের প্রতি কেয়ারনেসটা দ্বিগুন হয়েছে এই কদিনে৷
কতো কিছু ভাবতে ভাবতে নূর ঘুমিয়ে পড়লো কখন খেয়াল ই নেই৷

……..

ইফার মা ওরফে আয়াশের খালমনি খানিকটা চাপা স্বরে প্রশ্ন করে উঠলেন
“আয়াশ বাবা নূর কি সব কিছু জানে?”

আয়াশ ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল
” ঠিক কোন কথাটা খালামনি?”

“এই যে কি কারনে এত সব কিছু হয়েছে আর তাতে ওর বাবার ভূমিকা ঠিক কতোটা এই সব বিষয় ৷”

আয়াশ ফোনটা পকেটে রেখে বলল
“নাহ আমি ওকে এসব কিছুই জানায়নি কারন এসব ওকে জানালে ও কষ্ট পাবে তাছাড়া আমি মনে করি মানুষকে শোধরানোর একটা সুযোগ দেওয়া উচিত তাই আরাফাত আঙ্কেলের ও একটা সুযোগ পাওয়া উচিত আর আমার যতদূর মনে হয় যে উনি শিক্ষা পেয়েছেন আর শুধরেও গেছেন৷”

উনি একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
“হ্যাঁ রে নূরকে তোর ল্যাবের কথা বলেছিস এখনো?”

আয়াশ হো হো করে হাসতে হাসতে বলল
” আমকে কিছু বলতে হয়নি সে নিজেই ঠিক খুঁজে নিয়েছে৷”

উনিও বেশ কৌতুহল নিয়ে বললেন
“কিভাবে?”

আয়াশ বলতে শুরু করলো
” সেদিন কোনভাবে আয়াশ ওয়াশরুমের ট্যাপ কলটা ও টানতেই খুলে পড়ে গিয়েছিলো আর ওখানেই তো আমি চাবি রাখার জায়গা করেছিলাম তা তুমি জানো৷ আফুসোনা ঠিক কোনভাবে সেটা দিয়ে লক খুলে আমার ল্যাব অবধি চলে আসে‌৷ আমি তখন ল্যাবেই ছিলাম আর নূরের মা মানে আমার খালামনি তিনিও সেখানেই ছিলেন কারন আমি একটা এক্সপেরিমেন্ট করছিলাম আর তাতে তিনি আমাকে সহায্য করছিলেন৷”

উনি আগ্রহ নিয়ে বললেন
” আপু তোকে আবার কি সাহায্য করছিলো?”

“তুমি তো জানো যে একবার ইফা আর নূর পার্কে গিয়েছিলো আমার সাথে তখন কেও ওকে দোলনা থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে মেরে ফেলার চেষ্টা করে তাকেই চেনার চেষ্টা করছিলাম৷”

উনি অবাক হয়ে বললেন
“কে সে? কে এতো বড়ো ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলো?”

আয়াশ বেশ গম্ভীর স্বরে বলল
“মামা,মামা ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলো আর তার জন্য উনি একজনকে পাঠিয়েছিলেন যিনি জমিদার বাড়ির ই একজন তবে বেশ দূর সম্পর্কের৷ওনাকে আমি ধরতে পেরেছিলাম আর উনি অমাকে মারতে চেষ্টা করেছিলেন তাও আমার ল্যাবেই তাই আমিই তার আগে ওনাকে মারি তারপর ওনার বডি থেকে কিছু নমুনা কালেক্ট করি আর সেটা পরে খালামনির বডির ডি এন এর সাথে মেলানোর চেষ্টা করি,আর সৌভাগ্য বশত মিলেও যাও যার থেকে প্রমানিত হয় তারা একই বংশের৷”

“কে সে? আর তার ই বা স্বার্থ কি?”

“আমি এই কথাটা এখনো খালামনিকে বলিনি,কথাটা নিজের মাঝেই রেখেছি, মামার প্রতিবেশি জেলার এই সুন্দরী মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো আর তার দরুন সেই সন্তান তবে যে সন্তানের মর্জাদা পাইনি কারন মামা তাকে সেই মর্জাদা দেইনি আর ব্যাপারটাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তিনি তাদের মা আর ছেলেকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন৷”

“তুই এসব কি করে জানলি আয়াশ?”

আয়াশ এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল
“যেদিন আমি নাটোর যাই সেদিন সন্ধ্যায় মামা আমাকে ডাকেন সবকিছুর ভাগিদারী নেওয়ার জন্য ,আমি তাকে খুব স্পষ্ট জানিয়েছিলাম যে আমার কিছুর প্রয়োজন নেই৷ কথাটা বলে আমি সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম তারপর জমিদার বাড়ির বাইরে এসেছিলাম কারন মামা ওপর রাগ হচ্ছিলো ভীষন,অন্ধকারের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখনই এক মহিলা কন্ঠের কান্নার আওয়াজ পেতেই প্রথমে চমকে গিয়েছিলাম,তারপর একটু ভড়কে গেলেই কান্ঠটার উৎস খোঁজার চেষ্টা করতেই ফিসফিসিয়ে গলার আওয়াজ পেলাম৷”

“উনি আমাকে সেই প্রথম থেকেই ধোকা দিয়ে আসছেন আমি বুঝতে পারিনি,প্রথমে তো আমার সন্তান আর আমার কোন পরিচয় দেইনি তার ওপর এই কয়েকমাস হলো সব যোগাযোগ একেবারের জন্য বাচ্ছিন্ন করেছেন৷ কাকে যেন খুন করার জন্য আমার ছেলেটাকে পাঠিয়েছিলো এখন আমার ছেলেও ফেরেনি,ছেলেটা বেঁচে আছে কি মরে গেছে তাও জানিনা৷ আমার ছেলের কিছু হলে আমি ওনাকে ছাড়বো না এটা ওনাকে বলে দেবেন৷”

“আঁচলে মুখ টিপে উনি কাঁদছিলেন,কাকে কথা গুলো বলছিলেন প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝলাম যে বাড়ির দারোয়ানের সাথে কথা বলছেন,দারোয়ান ও তাকে বেশ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তাড়িয়ে দিতেই আমি ওনার পিছু নিলাম আর ওনার থেকে সব কথা জানলাম৷”

ইফার মা অবাক হয়ে বললেন
“উনি এতো সহজে রাজি হয়ে গেলেন বলতে?”

“নাহ,এতো সহজে বলেননি,সব জানার জন্য যে বললাম যে ওনার ছেলেকে মামু মেরে ফেলেছে সে নাকি মামুর পথের কাটা,যদিও ছেলেটাকে আমিই মেরেছিলাম কারন ও আমার আফুসোনার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলাম,আর মামু ওদেরকে পথের কাটায় মনে রতো,সব কুকির্তি ফাস হওয়ার ভয়ে এতোদিন যোগাযোগ রেখেছিলেন৷”

কথাটা শেষ হতেই ইফার মা বলে উঠলেন
“ছিহ! একটা মানুষ এতোটা যঘন্য কীভাবে হয়! উনি আসলেই কি মানুষ ?”

আয়াশ মুচকি হাসলো আর কিছু বললো না৷ কিছুখন পর আয়াশ আবার বলতে শুরু করলো
“এই ভাবেই জানলাম৷ আর কি হয়েছিলো শোনো তারপর৷”

“হমম বল৷”

“আফুসোনা লিফট থেকে নামলো,আমি আর খালমনি দেখতে বুঝতে পেরেছিলাম যে কেউ আসছে আর তা আফুসোনা ছাড়া আর কেও হবে না তাও জানতাম,আমি তো ঠিক রেখেছিলাম সেদিনই নূরকে সব সত্যি বলে দেবো কিন্তু খালামনি সামান্য নূরের নাম ধরে ডাকতেই ও অঞ্জান হয়ে পড়ে গেল,এত অল্পতেই যে ভয়ে ঞ্জান হারায় আমার মনে হয়না সে সবটুকু শোনার অবস্থায় থাকবে৷”

“তাও ঠিক, বলার দরকার নেই ওকে ৷ এমনিতেই মেয়েটার শরীর ভালো যাই না তার ওপর এসব বললে‌৷”

আয়াশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বলল
” আচ্ছা খালা মনি আমি আসি,আফু সোনা একা আছে‌৷ আর তোমরা কালকে শপিং এ যাচ্ছো তো?”

” আমি তো যাবো না,ইফা-আহান,রেদোয়ান আর মায়া যাবে বোধহয়৷ তুই আর নূর যাবি?”

“নাহ,আফুসোনার এই সময় কোথাও যাওয়াটা ঠিক হবে না, ওরা যাক৷”

আয়াশ বেরিয়ে গেল, রুমে গিয়ে দেখলো নূর গাল ফুলিয়ে রাগ করে বসে আছে আর তা দেখে আয়াশ নূরের কাছে গিয়ে বসে নূরের গালটা টেনে দিয়ে বলল
” কি হয়েছে আফু সোনা, মন খারাপ?”
নূর অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো৷ আয়াশ নূরকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে বলল
” রগ করে আফু সোনা, খালমনির সাথে কথা বলছিলাম তাই দেরি হয়ে গেল৷”

নূর আয়াশের দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে বলল
” আপনার বেবিও যে আপনার জন্য অপেক্ষা করে তার খেয়াল কি আপনার থাকে?”

আয়াশ হো হো করে হেসে বলল
” শুধু কি বাবু নাকি বাবুর আম্মুও অপেক্ষা করে কোনটা?”

” সবকিছু কি মুখে বলতে হয়?কিছু কথা বুঝে নিতে হয়৷”

আয়াশ নূরকে জড়িয়ে হেসে ফেলল৷

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here