তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
পর্ব:46,47
Suraiya_Aayat
পর্ব:46
” আপনার এই মন ভোলানো কথা আপনি অন্যকে শোনাবেন আমাকে না, আমি আর আপনাকে বিশ্বাস করি না ৷”
কথাটা বলে বেশ জোরেই আয়াশকে ধাক্কা মারতেই আয়াশ খানিকটা দূরে ছিটকে গেল, তাল সামলে নিয়ে আয়াশ নূরের দিকে তাকিয়ে বলল
” মানুষকে বোকা বানানো অনেক সহজ জানো তো আফু সোনা ?”
কথাটা শোনামাত্রই নূর হুংকার ছাড়লো
” খবরদার আপনার ওই মুখে আর আপনার আফু সোনা ডাক আমি শুনতে চাই না ৷ ঘৃনা এসে গেছে নামটার ওপর আমার ৷ অন্যকে ভালোবেসে দেওয়া নাম আমি দয়া হিসাবে চাই না ৷”
কথাটা বলে নূর চলে যেতে নিলেই আয়াশ পিছন থেকে হাত ধরে নূরকে নিজের কাছে টেনে নিলো তারপর নূরের দুই হাত বন্দী করে নূরকে ধরে বলল
” কোথায় যাচ্ছো আফু সোনা? পুরোটা না শুনেই চলে যাবে?”
নূর দাঁড়িয়ে থেকে থমকে গেল, এক প্রকার রাগে ফোঁসফোঁস করতে লাগলো , শোনার মতো ইচ্ছা বা মন মানসিকতা কোনটাই কি আর আছে?
নূর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো তবুও সফল হলো না ৷
” আপনার সেই প্রেমকাহিনী শোনার কোন ইচ্ছা নেই আমার, ছাড়ুন আমি ঘুমাবো ৷”
আয়াশ নূরকে এবার কোলে তুলে নিয়ে সোফাতে বসলো,নূরকে জাপটে ধরে আছে ছাড়বে না কোনমতেই ৷
নূর ঝাপটাঝাপটি করতে করতে বলল
” ছাড়বেন নাকি আমি চিৎকার করে এবার লোক জড়ো করবো এই মাঝ রাতে , কোনটা করবো বলুন?”
আয়াশ নূরের কথার পরোয়া না করেই বলল
” আমি এতখন ধরে যা বলেছি সব মিথ্যা বলেছি ৷ আসলে আমি একটা এক্সপেরিমেন্ট করছিলাম যে কতো সহজ ভাবে কিছু বললে একটা মানুষকে বোকা বানানো যায় ৷”
নূর পুনরায় ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল
” আর কোন বাড়াবাড়ি না, একটাও মিথ্যা কথা না ৷”
আয়াশ মুচকি হেসেই বলল
” এরিনা নামে কেউ কখনো আমার জীবনে ছিলো না আর না ছিলো আফু সোনা বলে কেউ ,কিন্তু তুমি আছো এখন আমার জীবনে আমার আফু সোনা হয়ে আর না আজ কারোর মৃত্যু বার্ষিকী ৷ আহান ভাইয়াও আমার থেকে ছোট নয় আর না আমি আহান ভাইয়ার থেকে বড়ো ,তবে এটা ঠিক যে আমি বরাবরই খুব শান্ত স্বভাবের কিন্তু তোমার এটা মানতে কষ্ট হবে কারন আতি তোমার সাথে কখনও শান্ত শিষ্ঠ স্বভাব সুলভ আচরন করিনি ,তোমার কাছে আমার পরিচিতি হলো ” ডেভিল ” হিসাবে ৷ কারনটা আমিই এতোদিন ধরে তোমার মনে গেঁথে দিয়েছি আর ভাবতে বাধ্য করেছি যে আমি প্রকৃতই ডেভিল ৷আর তুমিও খুব ভালো ভাবে তোমার বোঝার কর্তব্য টা পালন করেছো ৷ তোমাকে বোকা বানানোর কাজটা নিত্য৷ন্তই খুবই সহজ একটা কাজ কারন তোমাকে কিছু বললে তুমি কখনও তা যাচাই করতে চাও না যে তা আদতেও সত্য কি মিথ্যা ৷ আমি বললাম আর কতো সহজে তুমি বিশ্বাস করে নিলে,চাইলে তুমি কথার মার প্যাঁচে আমাকে ফেলে যাচাই করতে পারতে কিন্তু তুমি তা করোনি বরং উল্টে আমার দেওয়া একটা সুন্দর ভালোবেসে দেওয়া নাম ” আফু সোনা ” ডাকটাও ঘৃনার যোগ্য করে তুললে তাহলে ভাবো !”
আয়াশের কথাটা শেষ হতেই নূর খানিকটা ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
” চাইলেও কি আর আমি আতীতে ফিরে গিয়ে দেখে আসতে পারতাম যে আপনি ঠিক কি কি করেছেন! পারতাম না তো ! তাহলে স্বাভাবিক ভাবে আপনার মুখের কথা বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই ৷ মানুষের মুখের কথা শুনে তা যদি বিশ্বাস না করতে পারি তাহলে এ জীবনের স্বার্থকতা কি আপনিই বলুন ৷”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” একবার যাচাই করতে !”
নূর আয়াশের বুকে মাথা রেখে চোখটা বন্ধ করলো ,
” আমি জানি আপনি এখনও আমাকে ঠকিয়ে চলেছেন তবুও যে আমি পাগল , বিশ্বাস তো আমাকে করতেই হবে আর বারবার ঠকতেও হবে ৷ চিন্তা নেই একটা সময় ঠিক আমার মিথ্যা গুলোতে অভ্যস্ত হয়ে যাবো , মিথ্যা ভালোবাসা আর মিথ্যা অনুভূতি গুলোয় হয়তো একদিন সজীব আর তরতাজা হয়ে যাবে ৷”
আয়াশ নূরকে আরও খানিকটা জাপটে ধরিয়ে বলল
” প্রথমত, আমি কোন প্রেমিক পুরুষ নয় আফু সোনা যে কথায় কথায় তার প্রেয়শীকে মন ভোলানো কথা ,বল ভোলাবে বা হাতে লাল গোলাপ ধরে হাটু গেড়ে প্রপোজ করবে ৷ আমি পারি না ৷
দ্বিতীয়ত, আমি আমার অনুভূতি প্রকাশে সর্বদাই ব্যার্থ ৷ আমি ঠিক করে গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা আর না থাকে আমার কথার মাঝে কোন ভালোবাসার প্রকাশ তাই তোমার কাছে আমার একটা অতি পরিচিত রুপ হলো ডেভিল ৷
তৃতীয়ত, ভালোবাসায় আমি কখনও বিশ্বাসী নয় এমনকি তোমাকে আমি ভালোবাসি কি আমি তা ও জানি না আর আমার জানাও নেই ৷ তবে তুমি আমার একটা নেশা, খুবই প্রিয় নেশা যে নেশা না আছে অ্যালকোহলে আর না আছে কোন নেশা জাতীয় দ্রব্যে ৷ আফু সোনা নামক মানুষটা একটা নেশার কুন্ডলীর মতো আমাকে আবিষ্ট করে ঘিরে থাকে সর্বদা ,বারবার নেশাতে জড়াতে ইচ্ছে করে তাই তো দূরে সরে যেতে পারিনা কখনও ৷”
নূর আয়াশের বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে উঠলো ,শার্টটা কে শক্তপোক্ত করে খামচি মেরে বলল
” আপনি আবারও আমাকে ঠকাচ্ছেন ৷”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” যা তুমি ভাববে ৷”
” আমার চিন্থ তুমি বহন করছো তাই তোমার কাছে আমার কৃতঞ্জতার শেষ নেই , আমাদের সম্পর্কটা কোন কৃতঞ্জতার না যদিও তবে নেশাময় ৷ নেশাটাকে ভালোবাসি আর #তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা ৷” এর থেকে বেশি ব্যাক্ত করা হয়তো আমার পক্ষে আর সম্ভব না আফু সোনা, তুমি জোর করলেও বোধ হয় পারবো না ৷”
নূর কাঁদতে কাঁদতে বলল
” কখনো আর এ বিষয়ে আমি কোন প্রশ্ন তুলবো না শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর চাই ,দেবেন?”
আয়াশ নির্বিকার কন্ঠে বলল
“হমম বলো ৷”
” নেশা আর ভালোবাসা দূটোই কি আপনার কাছে এক ?”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” ভালোবাসা হলো নেশাময় ,নেশা কেটে গেলেই ভালোবাসা ফুরিয়ে যায় ,তোমার নেশা ফুরোবেনা সুতরাং ভালোবাসা নামক বস্তুটাও কখনও শেষ হবে না ৷”
.নূর আয়াশকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
” আপনি আবার আমাকে ঠাকাচ্ছেন তাইনা !”
আয়াশ এবার হো হো করে হেসে বলল
” হমম !”
…….
সকাল সকাল আয়াশ রেডি হয়ে নীচে নামল, আহানকে আনতে যাবে আয়াশ এয়ারপোর্টে ৷ নূর ওপরের ঘরেই রয়েছে , আয়াশের কড়াকড়িতে বেড থেকে ফ্লোরে নামার উপায় নেই, কিছু চাওয়ার আগেই সবাই সব কিছু সামনে হাজির করে দিচ্ছে, বিষয়টা নূরের কাছে একটু বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে,ওর এমন জীবন যাপন চাই না,সকলের সাথে একসাথে সময় কাটাতে চাই ও ৷ আয়াশ বাসাতে ফিরলে আয়াশকে বলবে কথাটা নূর ৷
আয়াশ বেরিয়ে গেছে হয়তো, নূর বিছানা থেকে নামতে গেলেই ইফা এসে বলল
” এই এই কি করছো ভাবী নামছো কেন? ”
নূর বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলল
” এভাবে আর কতখন ইফা ! একটা মানুষের কি সারাদিন একভাবে বিছানায় শুয়ে থাকতে ভালো লাগে ? ”
ইফা দাঁত বার করে হেসে বলল
” সহ্য করো ভাবী সহ্য করো !”
নুর গাল ফুলিয়ে বলল
” তোমার ও সময় আসুক বুঝবে ৷”
ইফা হেসে বলল
” সে সময় আসুক দেখা যাবে ৷”
নূর ইফাকে ওর পাশে বসিয়ে বলল
” ইফা একটা সত্যি কথা বলবে আজ?”
ইফা পাশে বসে বলল
” হমম বলো ভাবী ৷”
” তুমি কি কাওকে পছন্দ করো বা ভালোবাসো?”
কথাটা শুনে ইফা হো হো করে হেসে উঠতেই নূর অবাক হয়ে বলল
” কি হলো হাসছো যে !”
” তোমার কি সত্যিই মনে হয় যে আমার কাওকে পছন্দ হয়?”
” তেমনটা ঠিক না তবে এখনকার দিনে এটা খুবই নরমাল একটা বিষয় ৷”
” আরে নাহ ভাবী , আমার অমন কোন কিছু নেই আর আমি ভাবি ও না এমন ৷ আর আহান ভাইয়া কি বলেছে জানো ?”
নূর কৌতুহল নিয়ে বলল
” কি বলেছে উনি?”
ইফা বেশ রাগ ফুটিয়ে বলল
” ভাইয়া বলেছে সে বাসায় ফিরলে নাকি আমার বিয়ে দিয়ে দেবে, তুমিই বলো আমার কি বিয়ের বয়স হয়েছে? আর কদিন পরেই ssc দেবো এখনো পিচ্চি আমি ৷”
নূর মুচকি হেসে বলল
” সত্যিই উনি একথা বলেছেন?”
ইফা গাল ফুলিয়ে বলল
” হমম হমম হমম , এই কারনে ওনার ওপর রেগে আছি ৷”
নূর এবার ফিক করে হেসে ফেলল
” ননদিনী থেকে,,,,,,হম হম হম ৷”
ইফা অবাক হয়ে বলল
” কি !”
নূর মুচকি হেসে বলল
” এটা না হয় সাসপেন্স ই থাক ৷”
ইফা আভিমান করে রইলো, আর নূর ইফার আভিমানটা বেশ এনজয় করতে লাগলো ৷
চলবে,,,
#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:47
#Suraiya_Aayat
আহান ফিরেছে আজ দুই দিন, সাথে করে ছোট বাচ্চা ছেলে আর মেয়ের অনেক জামকাপড় নিয়ে এসেছে, নূর সহ পরিবারের সবাই অবাক ভীষনরকম ৷ নূর এখন আর আহানের সাথে আগের মতো রুক্ষ ব্যাবহার করে না,,নিজের ভাশুর হিসাবে অনেক শ্রদ্ধা নিয়ে কথা বলে আর ব্যাবহার ও করে ৷ কিছুখন আগেই সবাইকে আহান জানিয়েছে যে ইফাকে বিয়ে করতে চায়,,ইফা তো শুনে সেখান থেকে ছুটেছে আর ইফার কান্ডে সবাই হো হো করে হেসেছে ৷ খুব শীঘ্রই ওদের এনগেজমেন্ট হবে ৷
ড্রাইভ করছে আয়াশ পাশে বসে আছে নূর, গন্তব্যস্থলটা অতি পরিচিত, মায়ার বাসা ,,নূর আর আয়াশ সেখানেই যাচ্ছে ৷ আজ নূর আর আয়াশ নূরের মা কে নূরের বাবার বাসায় দিয়ে আসতে গিয়েছিলো তার পর সেখান থেকে জানতে পারে যে মায়ার সাথে রেদোয়ানের গুরুতর ঝামেলা হওয়ার দরুন তাদের মাঝে যোগাযোগ বন্ধ তাই নূর আর আয়াশ ওনাকে ড্রপ করে দিয়ে মায়ার বাসাতে যাচ্ছে যদিও রেদোয়ান অনেকবার না করেছে যে তারা যেন না যায় কিন্তু নূর রেদোয়ানকে কথা দিয়ে এসেছে যে তাদের মধ্যেকার সমস্ত মনোমালিন্য দূর করেই ছাড়বে ৷
আয়াশ আর নুরের টুকটাক আলাপচারিতার মাঝে শেষ হলো স্বল্প রাস্তা, অর্থাৎ মায়ার বাসা ৷ কোন রকম কোন দ্বিধা বোধ না করে আয়াশ আর নূর বাসাতে ঢুকলো, কলিংবেল বাজাতেই প্রায় 1 মিনিট পর মায়া দরজা খুললো, দরজায় আয়াশ আর নূরকে দেখে অবাক হলো বড্ড , খানিকটা ইতস্তত কন্ঠে প্রশ্ন করে উঠলো
” তোমরা !”
নূর মায়ার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল
” তোমার হাত ঠিক হয়ে গেছে ভাবী ?”
মায়া মাথা নাড়িয়ে বলল
” হমম , আসো , ভিতরে এসে বসো ৷”
নূর আর আয়াশ ভিতরে ঢুকলো ৷
সোফাতে বসে আয়াশ প্রশ্ন করে উঠলো
” আন্টিকে কোথাও দেখছিনা যে , উনি কি বাসাতে নেই ?”
মায়া ওর মায়ের রুমের দিকে একবার তাকিয়ে বলল
” আসলে আম্মু এটু অসুস্থ তো তাই ঘরেই ঘুমিয়ে আছে ৷”
নূর বেশ ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে বলল
” কি হয়েছে আন্টির ৷”
মায়া মাথা নীচু করে রইলো বেশ কিছুখন তারপর থেমে ভলল
” তোমরা হঠাৎ এলে, কোন দরকার !”
নূর মায়ার পাশে দাঁড়িয়ে ওর কাধে হাত রেখে বলল
” হমম দরকার তো বটেই, তোমাদের দুজনের ভিতরকার মনোমালিন্য দূর করতেই আজ ছুটে আসা , অনেক তো করলে অভিমান এবার না হয় দুজনের এক হওয়ার পালা ৷”
মায়া এবার নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে হেসে বলল
” নাহ ,তার আর দরকার নেই, যেমন আছি বেশ আছি , বাকি জীবনটা আম্মুকে নিয়েই কাটিয়ে দেবো ৷”
” উহু তা হচ্ছে না, ভাইয়ার সাথে আল্লাহ তোমার ভাগ্য জুড়ে রেখেছেন তা এতো সহজে ছেড়ে দিলে হবে নাকি !”
মায়া কথা ঘোরানোর জন্য বলল
” তোমরা বসো আমি তোমাদের জন্য চা করে আনি ৷”
আয়াশ বলে উঠলো
” আন্টির সাথে আগে দেখা করি তারপর বাকি কাজ ৷”
কথাটা বলে নূর কে নিয়ে মায়ার মায়ের ঘরের দিকে গেল ৷ মায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিচেনে গেল ৷ সেদিনের পর থেকে মায়া নিস্তব্ধ হয়ে গেছে, ওর আম্মু ও এতো কিছু মানতে না পেরে অসুস্থ তার পর থেকে ,একা সংসারে মেয়েটার বিয়ে দেখে যেতে চান উনি ৷”
নূর আর আয়াশ কথা বলছে , তখন ঘরে ট্রে নিয়ে ঢুকলো মায়া ৷ মায়া আসতেই দেখলো ওর মা হাসছে, আজ বহুদিন পর ও ওর মায়ের মুখে হাসি,দেখেছে , অনেকদিন মন খুলে হাসেননি উনি তবে এখন ওনার হাসিটা প্রানবন্ত , মায়ার ও মনটা ভরে গেল তবে তাদের কথোপকথনের বেশিরভাগগে কেন্দ্রবিন্দু ও তা ওর বুঝতে বাকি হয়নি আগেও ৷
মায়া আসতেই মায়ার মা মুচকি হেসে বলল
” শেষমেশ আমার ইচ্ছাটা পূরন হলো ,তোর আর রেদোয়ানের বিয়েটা হলো আমার সবচেয়ে বড়ো ইচ্ছা ৷”
মায়া বিরস কন্ঠে বলল
” সেটা সম্ভব না, আমার পক্ষে আর এই সম্পর্কে ফিরে যাওয়া সম্ভব,না তাছাড়া দোষটা আমারই ছিলো ৷”
কথাটা বলে মায়ার চোখে জল চোলে এলো , চোখটা মুছে নিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল
” এই নাও তোমাদের চা ৷”
নূর মায়ার গালে হাত রেখে বলল
” ভুল তো মানুষ মাত্রই হয় আর আমাদের ভুলটাকে মানিয়ে নিয়েই চলতে হবে নাহলে জীবনে শিখলাম কি !”
মায়া ইতস্তত কন্ঠে বলল
“তবুও আমি পারবো না নূর, ভুলটা ভুল ই ৷”
নূর এবার মায়ার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
” আন্টি আপনিই ভাবীকে বোঝান,আর এটাও বলে দিন তাকে যে আর কিছুদিনের মধ্যেই তার আর আমার ভাইয়ার এনগেজমেন্ট আর খুব,তাড়াতাড়ি বিয়ে ৷”
মায়া এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলল
” আমি পারবো না নূর , আমায় জোর করোনা ৷”
নূর মায়াকে জড়িয়ে বলল
” ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় , তোমার বেলা তা হবে না কেন ! আলবাত হবে , ভাইয়ার ও সাহস কি করে হয় তোমাকে বকার , আমি ওকে বকে দেবো, খুব,তাড়াতাড়ি ও তোমার কাছে আসবে দেখা করতে ৷ তোমরা দুজন দুজনকে যে ভীষণ
রকম ভালোবাসো ৷”
মায়া নূরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো, আয়াশ আর মায়ার মা দুজনে আনন্দের সাথে,তাকিয়ে আছেন ,,সত্যিই সম্পর্কের পরানতি হলো শ্রেষ্ঠ একটা পাওয়া ৷
….
মায়াকে অনেকরকম ভাবে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাসায় ফিরছে নূর আর আয়াশ , নূর একটু ক্লান্ত , এখন আর শরীর বেশি ধকল নিতে পারে না ৷ হঠাৎ আয়াশ ড্রাইভ করার ফাকে বলে উঠলো
” একটা গল্প শুনবে আফুসোনা ?”
নূর ক্লান্তি ভরা কন্ঠে বলে উঠলো
” হমম বলুন ,জানি আপনি কেবল আমাকে মিথ্যা বলে বোকা বানান যদিও আমি অভ্যস্ত তাতে ৷”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” রাজকুমারী র ছোট বোনের কথা মনে আছে তোমার ?”
নূর কথাটা শুনে যেন জেগে উঠলো ,,অনেক উৎসাহ নিয়ে বলল
” হমম মনে আছে তো ৷ আর সে তো আমার আম্মু তাইনা ?”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” হ্যাঁ !”
” আমার আম্মুর পরের কাহিনি টুকু বলুন না প্লিজ , আমি জানতে চাই ৷”
আয়াশ গাড়ির স্পিডটা খানিকটা কমিয়ে বলল
” তেমন কিছুই না, তারপর রাজকুমারী পালিয়ে সংসার করতে লাগলো, অনেক বছর লুকিয়ে ছিলো যদিও তার বাবা তাকে ত্যাজ্য কন্যা করে দিয়েছিলো ৷ তারপর সেই রাজকুমারীর ছোট বোন একদিন আবার রাত প্রাসাদ এ ফিরে যায় ৷”
নূর উৎসাহ নিয়ে বলল
” কেন?”
” নিজের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ৷”
” তারপর ও পাইনি নিশ্চয়ই !”
” নাহ ৷”
” তারপর কি হলো?”
“,তারপর আর কিছুই হলো না ৷”
নূর মন খারাপ করে বলল
” আমি ভাবলাম ইন্টারেস্টিং কিছু হবে ৷”
আয়াশ হো হো করে হেসে বলল
” প্রয়োজন কি যে সব জিনিস ই ইন্টারেস্টিং হবে !”
নূর মাথা নীচু করে বলল
” না তা ঠিক না ,তবুও এতো ধামাকাদার একটা কাহিনতীতে টুইস্ট তো থাকতে পারতো ৷”
আয়াশ মুচকি হাসলো কিছু বলল না ৷ মনে মনে বলতে লাগলো
” তোমাকে সবকিছুর সত্যতা আমি জানাতে চাই না আফুসোনা, আমি কখনোই চাইনা তোমার ভালোবাসার মানুষগুলো তোমার থেকে দূরে সরে যাক, আমি বুঝি কাছের মানুষ ছেড়ে যাওয়ার কষ্টটা যদিও তুমিও খানিকটা অনুভব করতে পরো, থাক না তোমার কাছে তোমার মা এবং তোমার বাবার অতীতটা লুকিয়ে , সবকিছু না হয় না ই বা জানলে ৷”
কথাটা বলে আয়াশ ড্রাইভে মনোযোগ দিলো ৷
চলবে,,,,