তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা পর্ব:44,45

তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
পর্ব:44,45
Suraiya_Aayat
পর্ব:44

জ্ঞান হারালো নূর আর বেশি কিছু দেখার আর ভাবার সুযোগ পেলো না,তারপর কখন ওর জ্ঞান ফিরলো মনে নেই তবে যখন চোখ খুললো তখন পাশে বসে থাকা মানুষটাকে দেখে অনেক বেশি অবাক হলো ও , ওর মা বসে আছে ওর পাশে, ওর হাতে হাত রেখে ৷ কিছুখনের জন্য নূর স্তব্ধ হয়ে গেল বুঝতে পারছে না এটা কি কোন মিরাক্কেল নাকি মরীচিকা ৷ আশেপাশের কাওকে দেখছে না ও , কারোর উপস্থিতিও ওর জানান দিচ্ছে না ওর মা ছাড়া ৷ মা মেয়ে কিছুখন নিজেদের দিকে চাওয়া চাইয়ি করতে লাগলো, একটা সময়ে নূরের মায়ের চোখ থেকে জল গড়াতে দেখেই নূরের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো তাহলে এটা কি সত্যি ?
নূর ওর মাকে হঠাৎই জাপটে জড়িয়ে ধরলো , হাপাচ্ছে নূর, বিশ্বাস ই হচ্ছে না যে ওর মা এর কাছে ৷ আশেপাশে সবাই ওদেরকে ঘিরে রয়েছে ৷ নূর ওর মাকে জড়িয়ে ধরে এবার কেঁদে ফেলল , নূরের মা ও নূরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন , মা মেয়ের এই হৃদয় ভাঙা কান্না সকলের মনকে মোমের মতো গলিয়ে দিলো ,প্রিয়ন্তি মোস্তাফাও কেঁদে ফেললেন, শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখটা মুছলেন ৷ নূর ওর মায়ের দিকে তাকালে ওর মা নূরের চোখটা মুছিয়ে দিয়ে নূরের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলেন ,নূর এখনো কেঁদেই চলেছে ওনার দিকে তাকিয়ে দূর থেকে সবটা দেখছে আয়াশ ৷ নূরের মা ওনার ভাঙা কন্ঠে বললেন
” আমার মেয়েটা এতো বড়ো হয়ে গেল আমি তো জানতেই পারলাম না হ্যাঁ ! ”

নূর এবার দ্বিগুন স্বরে কান্না করে উঠলো
” আম্মু ৷”

উনি নূরকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন,সকলেই চুপচাপ ৷ দূরে দাঁড়িয়ে আছেন আরাফাত সাহেব ওনার চোখ থেকেও আজ জল ঝরছে, ভীষন রকম খুশি তিনি তবে ভয় পাচ্ছে অপমানিত হওয়ার আর তীব্র ঘৃনা পাওয়ার জন্য,যদি সবাই ওনাকে দূরে সরিয়ে দেয় তাহলে উনি কিসের ভিত্তিতে বাকিটা জীবন পার করবে ? রেদোয়ান থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে, ছেলেরা এতো সহজে ভেঙে পড়ে না, কঠিন সময়েও নিজেদেরকে পাথরের মতো শক্ত করে রাখে তাই রেদোয়ান ও হয়তো এখনো ঠিক তাই করছে ৷
নূরের মা নূরকে ছাড়িয়ে বললেন
” কি হয়েছে নূর এতো কাঁদে কেউ? তুমি কাঁদলে তোমার বাচ্চাটাও যে কষ্ট পাবে ৷”

নূর কান্নার বেগ কমিয়ে বলল
” তোমাকে আমি কতোদিন দেখিনা আম্মু তার হিসাব নেই ৷ তুমি কি আমাকে একটুও ভালোবাসতেনা বলোতো? এমন কেন তুমি , আমাকে ছেড়ে কেন চলে গিয়েছিলে?”

কথাটা শোনার সাথে সাথে আয়াশ রূম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ নূরের মা আয়াশের যাওয়ার দিকে তাকালেন তারপর নূরের দিকে মনোযোগ দিয়ে বললেন
” সময় ও ধৈর্যের পরীক্ষা নেই নূর , আমিও যে সেই পরীক্ষা দিচ্ছিলাম আর দেখো পরুক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমি ফিরে এসেছি তুমি কি খুশি না বলো?”

নূর ওনাকে আবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন ৷ রেদোয়ান বলে উঠলো
” আম্মু তোমার মেয়েই কি সব ? আমি কি তোমার চোখে পড়িনা বলো?”

কথাটা শুনতেই সবাই হেসে ফেলল ৷ নূরের মা রেদোয়ানকে হাত দিয়ে ইশারা করতেই রেদোয়ান ছুটে গেল,উনি আর এক হাত দিয়ে রেদোয়ানকে জড়িয়ে ধরলেন ৷ উনি ওনার দুই ছেলে মেয়েকে সমান ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নিলেন ৷
মায়ের ভালোবাসা হলো সবচেয়ে খাঁটি যার মাঝে নেই কোন খাদ……৷

____

রাত 3টে,,,,
হঠাৎ করে নূরের ঘুম ভেঙে যেতেই নূর দেখলো ঘরটা অন্ধকার ৷ অন্য দিন ঘরের মাঝে ডিমটাইট টাও জ্বলে আর আজ তাও জ্বলছে না ,ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘর,কিছু বোঝার উপায় নেই…..বিছানা থেকে নামলো নূর , ফ্লোরে পা রাখতেই মনে পড়লো ওর আম্মু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো তারপর কখন যে ওর দু চোখ ভরে ঘুম চলে এলো তা মনে নেই ৷ একপা বাড়ালো নূর, আয়াশ এই রূমে আছে কি তার ও কোন খেয়াল নেই ৷ ঘরের লাইট টা জ্বালাবে, অন্ধকারে হাটতে গিয়ে হালকা হোচট খেয়ে পড়ে গিয়েও সামলে নিলো ৷ অন্ধকারে খানিকটা হলেও ভয় লাগছে,লাইটটা জ্বালাতে যাওয়ার জন্য সুইচ বোর্ডের দিকে যেতে গেলেই ব্যালকনির দিকে নজর গেলো ওর,,,,আগুনের ফুলকি জ্বলছে অল্প পরিমানে, দূর থেকে তা জোনাকি পোকার মতো লাগলেও তা নয় এটুকু নূর বুঝলো ৷ নূর সেই আগুনের ফুলকিকে লক্ষ করে এগোতে গেলেই হঠাৎ আগুনের ফুলকিটা অদৃশ্য হয় গেল , থেমে গেল নূর ৷ হঠাৎ পিছন থেকে ওকে কাছে টেনে নিতেই ক্ষনিকের জন্য চমকে গেল,পেটে হাতের আলতো স্পর্শে নূরের শরীরে শিহরন বয়ে গেল…..বুঝে গেল যে সেটা আয়াশ ৷ খানিকটা কম্পমান কন্ঠে বলল
” আপনি…..”

নূরের কথাটা শেষ হতেই পাশ থেকে বিদঘুটে এক ধোঁয়া বয়ে গেল,ধোঁয়াটা নাকে যেতেই নূর কেশে উঠলো, এটা হলো সিগারেটর বিদঘুটে গন্ধ যা নূর একদম পছন্দ করে না ৷ নূর একটু ভয় পেয়ে বলল
“ছাড়ুন ৷”

হুঠ করেই নূরের অনুভূতি জাগলো যে নূর হাওয়াই ভাসছে ,বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আয়াশ ওকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে ৷ নূর চুপটি করে আয়াশের গলাটা জড়িয়ে ধরলো,নূর আগে কখনও আয়াশকে সিগারেট খেতে দেখেনি তবে আজকে সিগারেট খেতে দেখেও খুব একটা,অবাক হলো না বা চমকালো না কারন পুরুষ মানুষরা একটু আধটু খেয়ে থাকে কখনও তা নিত্য৷ন্তই শখের বশে বা কখনো কষ্ট লাঘব করতে৷ হঠাৎ নূরকে একটা চেয়ার বসালো তারপর ই অন্ধকারের মাঝে লাইটারের আগুনটা দিয়ে সিগারেটটা জ্বলে উঠলো,নূর একটু চমকে গেল ,সিগারেটের আগুনটা কালো রঙের মোমবাতিটাতে ধরতেই মোমবাতিটা জ্বলে উঠলো ৷

নূর শুকনো একটা ঢোক গিললো, ক্যানডেল লাইট ডিনারে মানুষ এমন একটা রোমাঞ্চকর পরিবেশ সৃষ্টি করে কিন্তু এটা তো তেমনটা নয়,এই নিশি রাতের কি নাম হওয়া উচিত তা নূর কেন আয়াশের ও হয়তো জানা নেই ৷ হঠাৎই সিগারেটের ধোঁয়া বাতাসে ছুটে চলার সাথে সাথে বিপরীত দিক থেকে প্রশ্ন ছুঁড়ে এলো
” কেমন আছো নূর ?”
কথাটা শোনার সাথে সাথে নূরের কলিজা কেঁপে উঠলো…..শাড়ির আঁচলটা খামচি মেরে ধরলো নূর, মানুষটা ওকে নূর বলে ডাকলো কিন্তু তার বলার ভঙ্গি তো এমন নয় ,সে তো ডাকে আফু সোনা ! নূর নিজেকে সামলে নিয়ে খানিকটা ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলল
” ভালো ৷”

কথাটা বলে নূর থেমে গেল ৷ আয়াশ খানিকটা নিস্তব্ধতা বজায় রেখে বলল
” জিজ্ঞাসা করবে না আমি কেমন আছি ?”

নূর খানিকটা অবাক হলো , তবুও এখনই হতাশ হলো না, সাহস নিয়ে বলল
” কেমন আছেন আপনি?”

হঠাৎই হো হো করে খানিকটা উন্মাদনার সুরে আয়াশ হেসে বলল
” ভালো নেই আমি !”

নূর অবাক হলো এমন কথা শুনে, তার তো ভালো থাকার কথা, সে তো তার মাকে ফিরে পেয়েছে, এতোদিন পর নিশ্চয়ই তার ভালো থাকা উচিত ৷

” কেন?”

আয়াশ মুখের মুচকি হসিটা মেলে দিয়ে বলল
” আজ আমার আফু সোনার মৃত্যু বার্ষিকী তাই !”

কথা শোনা মাত্রই নূর কেঁপে উঠলো, হাত পা কেমন যেন হয়ে গেল ৷ মুখ দিয়ে কথা বার হচ্ছেনা,ও একটা জলজ্যান্ত মানুষ বসে অছে আর লোকটা বলে কি না তার আফু সোনা মরে গেছে ৷ নূর কথা বলার সাহস পাচ্ছে না, খানিকটা রাগ ও হচ্ছে ৷

” জানো তো আমি একটা পাগল…..বদ্ধ পাগল ৷ বলতে পারো মেন্টাল ৷”

নূর চোয়াল শক্ত করে আছে, সত্যিই পাগলের প্রলাপ পড়ছে৷ রেগে গিয়ে বলল
” কি বলছেন কি এসব !”

আয়াশ সিগারেটটা আর এক বার টেনে বলল
” এই দেখো নূর তুমি বিশ্বাস করছো না, আমি তো বলছি আমি পাগল ৷ সায়ন্টিস্ট হয়ে আরও পাগল হয়ে গেছি ৷ সারাদিন মাথার ভিতর কতো সূত্র , কতো থিওরি কিলবিল করে ,রাতে আমি কখনও ঘুমাতেই পারি না, ওরা আমাকে ঘুমাতেই দেই না,শুধু বারবার বলে আয়াশ কিছু তো আবিষ্কার কর, ইউ আর সাচ আ লুজার ৷”কিন্তু আমি লুজার না, আই এম নট আ লুজার ,আই এম নট ৷ আমি জিনিয়াস , জিনিয়াস আমি ৷”

নূর চুপ করে রইলো,আয়াশের এমন কথা শুনে ওর আর কিছু বলতে ইচ্ছা করছিলো না ৷
আয়াশ আবার বলতে শুরু করলো….

” সালটা 2012 তখন আমি সবে 22 বছরের একটা ছেলে ৷”

কথাটা শুনতেই নূরের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম ,কি বলছে এসব উনি ? এটা 2021…আর উনি 2012 র কথা বলছেন , তখন ওনার বয়স যদি 22হয় তবে এখন ওনার বয়স 31 কিন্তু উনি তো এখন 28….
কথাটা নিজের মনে মনে ভেবে নূর থেমে গেল ৷

আয়াশ বললো
” 22 বছরের একটা ছেলে যার মাথায় ছিলো ঝাকড়া ঝাকড়া কোঁকড়া চুল,মুখে কোন দাঁড়িই ছিলো না, চোখে পরতো মোটা ফ্রেমের চশমা ৷ ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ পেয়ে পাড়ি দেই উঃ আমেরিকার সবচেয়ে বড়ো দেশ নিউ ইয়র্কে , সেখানকার টপ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় ৷ প্রথমে তো একটা বাংলাদেশি ছেলে সেখানে গিয়ে একা থাকতাম, ragging হতো অনেক, কখনো বা বলতো 45 তলা উঁচুর বিল্ডিং এর ছাদের ধার দিয়ে হাটতে, কখনও বা বলতো ব্লেড দিয়ে হাত কাটতে , স্বভাবে বড্ড শান্ত শিষ্ঠ ছিলাম তাই কখনও কিছু বলতে পারতাম না…..মনে মনে ভীষন কষ্ট হতো,ইচ্ছা হতো বেরিয়ে চলে আসি, মা ছিলোনা আমার বাবা ঠিক করে কথা বলতো না , ঘরবন্দী থাকতেন, ছোট ভাই আহান সে তার নিজের মতো ব্যাস্ত থাকতো ,সবাই তাকে বড়ো ভাবতো আর আমাকে ছোট, হাহাহাহাহ ‌৷ রাগ করে আর দেশে ফিরতে ইচ্ছা হয়নি , সব সহ্য করতাম ৷ ক্লাস টেস্টে টপ করতে লাগলাম তাই হিংসার জন্য রুম মেটরা পড়তে দিতো না ৷ ঠিক করলাম আলাদা বাসা ভাড়া নেবো তাতে রুমমেটরা তীব্র আপত্তি জানালা তবুও অনেক চেষ্টায় বাসা ভাড়া নিলাম , প্রতি মাসের ভাড়া হতো কয়েকশো ডলার ,খানদানি পরিবার আমার টাকা পয়সা অঢেল, ছোট বেলায় দাদানের কাছে শুনেছিলাম যে এই টাকা নাকি সাতটা পুরুষ খেয়েও শেষ হবে না, এটা তারপর মনে হলো যে সত্যিই ৷

এটুকু শুনতেই নূরের চোখ মুখ ছোট হয়ে গেল, অনেক কিছু বলছে আয়াশ,এগুলোর সত্যতা নূর জানে না তবুও জানতে ইচ্ছা করছে ভীষন ৷

যেই বাসা ভাড়া নিয়েছিলাম সেই বাড়িতে একটা মেয়ে থাকতো নাম ছিলো এনিরা আফসানা…..মেয়েটাকে আমি চিনতাম না ৷ সে ছিলো আমার সিনিয়ার 3 বছরের ৷ একদিন কলেজ থেকে ফিরছিলাম হঠাৎই মেয়েটাকে দেখে চোখ আটকে যাই আমার তার ওপর….ওতো লাভ টাভ বুঝতাম না তাই লাভ এট ফাস্ট সাইডে বিশ্বাস করিনি আমি সেদিন…বাট ইট ওয়াজ ৷ যাই হোক , কলেজে কোন ফ্রেন্ড ও ছিলোনা আমার , একাই এর ওর কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম তার নাম এরিনা আফসানা , একদিন কলেজ শেষে তার পিছু ও নিলাম দেখলাম সেও সেই বাড়িতে থাকে যেখানে আমি থাকি, ভেবে খুশি হয়েছিলাম যে আমরা একই বাড়িতে থাকি, সে থাকে নীচের তলায় আর আমি ওপর তলায় ৷ তার বাবা ছিলো বাড়ির ওনার…বিশ্বাস করো ওকে দেখে আমার চোখ ধাঁধিয়ে যেতো ৷ তার প্রতি attraction বাড়তে লাগলো, আমি যে ছেলে নিজের ঘর থেকে বার হতাম না সে তার পাল্লায় পড়ে না খেয়ে না ঘুমায়ে সারাদিন তাকে ফলো করতাম ৷ strange না ?”
নূরের দিকে ইশারা করলো ৷ নূরের চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে ৷নূর মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানালো ৷

আয়াশ আবার হো হো করে হেসে বললো
” অভিয়েসলি strange…..”

নূর কৌতুহল নিয়ে বলল
” তারপর !”

আয়াশ দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
” তারপর ! শুনবে ?”
নূরের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ৷

চলবে,,

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:45
#Suraiya_Aayat

“তারপর !”

নির্বিকার অন্ঠে আয়াশ বলে উঠলো
” লাভ এট ফাস্ট সাইড নামের একটা নেশায় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম, পড়াশোনা নামক নেশাটা ছুটে গেল আর ভালোবাসা নামক নেশাটা বেড়ে গেল ৷ নিজের মনে মনে তার নামটা ধরে ডাকতেও ভালো লাগতো , একদিন তার নামের বুলি আওড়াতে আওড়াতে বলে উঠলাম
” আফু সোনা !”
নামটা এক নিমেষেই মাথায় গেথে গেল, বেশ কয়েকবার নামটা উচ্চারন করলাম দেখলাম জোশ একটা ব্যাপার আছে নামটাতে কি সুন্দর
” আ ফু সো না ৷”

কথাটা শোনা মাত্রই নূর শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে চেপে ধরলো , এতদিন ধরে যেটাকে নিজের নাম ভাবতো আজ সেটা অন্য একজনের নাম হিসাবে শুনছে ভাবলেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে ওর ৷ নূর চুপচাপ শুনছে , আপাতত আফু সোনা নামটার ওপর ঘৃনা চলে এসেছে ৷

” নামটা নিতে নিতে বিছানা থেকে লাফ দিলাম, ঘড়ির দিকে তাকালাম তখন বাজে বিকাল 4.30, এই সময়টা ছিলো ওর ইভিনিং ওয়াকের টাইম ,তাকে ফলো করতে করতে এটা আমার ও একটা ডেইলি রুটিং এ পরিনত হয়েছিলো ৷ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেতেই দেখি সে আমার অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে তবে তার যাওয়ার জায়গাটা অনেকটাই নির্দিষ্ট তাই আমার যেতে খুব একটা অসুবিধা হলো না, আমি সেদিন সেই জায়গাটাতে গেলাম, জায়গাটা ভীষন রকম সুন্দর ছিলো,বিরাট একটা লেকের পাশে , কতো মানুষ সেখানে বসে থাকতো গল্প করতো ৷ আমি সেখানে গেলাম বেশ কিছুখন টলহদারি করেও খুজে পেলাম না,অস্থির লাগছিলো ভীষন এমনিতেই উইকেন্ড বলে কলেজে যাওয়ার ও সুযোগ পাইনি আর রুম থেকেও খুব একটা বার হতে পারিনি ৷ রাগ আর বিরক্তি দুটোই সমানভাবে কাজ করছিলো, পুরো জায়গাটা খুজেও না পেয়ে বাসাতে ফিরছিলাম, পথে ফেরার সময় দেখি রাস্তায় একটা ছোট বাচ্চা গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে,,লাল তাজা গোলাপ , ভীষন রকম সুন্দর ৷ অনেক উপন্যাস পড়ার অভ্যাস ছিলো আমার তাছাড়া অনেক সিনেমাতেও দেখেছি যে কি সুন্দর প্রমিক প্রেমিকাকে গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে, আমার ও ভীষন রকম ইচ্ছা ছিলো যে এরকম কখনও গোলাপ হাতে কাওকে নিজের মনের কথা জানাবো ৷ ইচ্ছা ছিলো এনিরা কে কখনো এমন ভাবে বলবো , কথাগুলো ভাবতে ভাবতে অনেকখন ধরে গোলাপ গুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম ৷ বাচ্চাটাও ভেবেছিলো যে আমি বোধহয় গোলাপ গুলো কিনবো তাই সে আমার দিকে এগিয়ে আসতে গেলেই আচমকা আমি সেখান থেকে চলে যাই সেদিন বোধহয় বাচ্চাটাকে অজান্তেই হার্ট রে ফেলেছিলাম খুব ৷”

কথাটা বলে খানিকখন থামলো আয়াশ ৷ মাথাটা চেয়ারে এলিয়ে দিয়ে একটা গা ছাড়া ভাব নিতেই নূর বেশ লম্বা সুরে বলল
” তারপর কি হলো বলুন ৷”
আয়াশ চুপ করে আছে , কিছু বলছে না, নূর ও আয়াশের উত্তরের অপেক্ষায় রইলো কিন্তু আয়াশের চোখটা যেন ক্রমেই বুজে আসছে হয়তো চোখে ঘুম ভর করছে ভীষন রকম ৷ আয়াশের চোখজোড়া বুজে আসবে তার আগেই নূর একটু রাগী কন্ঠে বেশ উচ্চস্বরে বলল
” কি হলো বলছেন না কেন ! অন্যর চোখের ঘুম হারাম করে নিজে কিভাবে ঘুমাচ্ছেন আপনি ?”

কথাটা শোনামাত্রই আয়াশ একটু হতচকিত হয়ে বলল
” ওয়েট ওয়েট একটা সিগারেট ধরায়,নেশায় পারে নেশাকে কাটাতে ৷”
নূরের চোখ দিয়ে টুপিয়ে পড়া জলটা নূর হাত দিয়ে মুছে নিলো,শুনবে ও কষ্ট হলেও শুনবে ৷

আয়াশ সিগারেটের ধোঁয়াটা বাতাসে উড়িয়ে বলল
” তারপর কি যেন বলছিলাম আমি !”

নূর দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে রইলো একটা মানুষ কিভাবে এতো উদাসীন হতে পারে ! আয়াশ নুরের মুখের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম
” কতটুকু বললাম আফু সোনা ‌,ওপস নূর ৷”

নূরের শরীরটা তিরতির করে জ্বলে উঠলো ৷

আয়াশ সরে এসে আবার ধীম ধরা কন্ঠে বলল
” তারপর ফিরলাম সেই বাসায় , গালে হাত দিয়ে গম্ভীর হয়ে বসে আছি আমি ,ভাবছি মেয়েটা কোথায় যেতে পারে , তাকে অনুসরন করছি এক সপ্তাহ হলো মাত্র তাকে এই কদিন সেই লেকের ধার ছাড়া কোথাও যেতে দেখিনি, তার পরিবারের লোকজন ও যথেষ্ট স্বাধীনতা দিতো তাকে ৷”
মনের মধ্যকার চঞ্চল ভাবটা কাটছিলো না তখনও তাই খানিকটা ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে নীচে গেলাম কারন আসার সময় কাওকে দেখিনি তাছাড়া আমি ছাড়া এই বাড়িতে আর একজন ভাড়াটিয়া থাকেন তারা তিনতলাতে তারা খুব কম নামতেন নীচে ৷ ফেরার সময় এনিরার বাবা মা কে কোথাও দেখিনি তাই একটু উঁকি ঝুকি দিয়ে নীচে নামলাম , সার্ভেন্টগুলোও আজ আসেনি ৷ এই বাড়িতে থাকতাম ঠিকই কিন্তু কে কোথায় থাকে বা কারোর সাথে সেভাবে ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতা হয়ে ওঠেনি শুধু থার্ড ফ্লোরের দম্পতির একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে আছে তাকে হাত নাড়িয়ে ইশারা করে কথা বলি মাঝে মাঝে নাহলে তেমন একটা মিশতে পারতাম না ৷ সিঁড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকালাম , ঠিক যেমন চোর এসে যেমন করে দেখে ঠিক তেমনভাবেই ৷ এরিনার ঘরটা দেখতে মন চাইছালো ভীষন , তার কোন ছবি আমার কাছে ছিলো না তাই ভাবলাম তার রুমে গিয়ে যদি কোন ফটো ফ্রেম থেকে কোন ছবি মোবাইলে ক্যাপচার করতে পারি তো মন্দ হবে না ৷ আমার মতো ভীতু ছেলেটা যে হুঠ করে এতোটা সাহস পেয়ে গিয়েছিলো সেদিন আমি তা বুঝতে পারিনি ৷ প্রথম ঘরে ঢুকে বুঝলাম সেটা তার বাব মায়ের ঘর তাই দ্রুত বেরিয়ে এসে পাশের ঘরে গেলাম তারপর ঢুকতেই দেখলাম ফটোফ্রেমে তার একটা সুন্দর হাসি হাসি মুখের ছবি , ফটোটা দ্রুত তুলে নিলাম মোবাইলে ৷ তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরোতে যাবো তখনই পায়ে একটা ডায়েরি জাতীয় কিছু পড়তেই হাতে তুলে নিলাম…..অন্যর ডায়েরি কখনও তার পারমিশান ছাড়া খোলা উচিত না তাই আমার মাঝেও খানিকটা দ্বিধা আর সংকোচ কাজ করছিলো কিন্তু ইচ্ছাও জাগছিলো প্রবল যে পছন্দের একটা মানুষের গোপন কিছু তথ্য জেনে তাকে আরও ভালো ভাবে জানার ৷ ডায়েরিটা চম্পট খুলতেই দেখলাম প্রথম পাতায় লেখা..

” Hey ! I am Anira….Anira Karsan……it is too personal don’t open it…..”

লেখাটা দেখে ডায়েরিটা খুলে দেখার ইচ্ছাটা 200 গুন বেড়ে গেল, স্বাভাবিক ডায়েরির প্রথম পাতায় কেউ এমন লিখলে তা যে কেউ দেখতে চাইবে ৷ ঝটপট প্রথম পাতা খুলতেই কোন লেখা পেলো না, তারপর বেশ কয়েকটা পাতা ওলটালেও তাতে বিশেষ কিছু পেলাম না, রোজকারের কথাগুলো লিখে রাখতো সে ,তার পাতার কোথাও আমার নামটা একবার ও উল্লেখ ছিলো না যার দ্বারা বোঝা যায় যে সে আমাকে চেনেই না অথচ আমি তাকে বোকার মতো ফলো করেই চলেছি ভেবে একটু স্টুপিড মনে হলো নিজেকে ৷ বোরিং লাগছিলো বেশ, তার সম্পর্কে জানার মতো কিছুই ছিলো না তবে লাস্ট পাতায় এসে জানলাম অনেক কিছুই ৷”

কথাটা সেই হতেই নুর প্রশ্ন করে উঠলো
” এনিরা আফসানা থেকে সে এনিরা কারসন হলো কিভাবে?”

নূরের তীক্ষ্ণ কন্ঠের এই প্রশ্নে আয়াশ হেসে উঠে বলল
” তারপর শোনো ৷”
নূর রেগে গেল ওর প্রশ্নকে উপেক্ষা করায় ৷

” ডায়েরিতে লাস্ট যে কথাটা লেখা ছিলো তা হলো ক্যারেন বলে একজন তাকে বেশ কয়েকদিন ধরেই উত্তক্ত করছে আর তা নিয়ে সে ভীষনভাবে বিরক্ত , তাই সে আজ ছেলেটার সাথে এর একটা সামঝোতা করার জন্য দেখা করতে যাবে ৷”

লেখাটাতেই শেষ, আয়াশ ডায়েরি বন্ধ করে নিজের ঘরের দিকে ছুটলাম ,ক্যারেন ছেলেটার ওপর রাগ হচ্ছে ভীষন ,তাকে সামনে পেলে ও বেধড়ক পেটাতাম হয়তো ৷ কথাটা ভেবে শুয়ে পড়লো আয়াশ,রাগ বাড়লে শুয়ে পড়লে নাকি তা কমে যাই তার ই প্রচেষ্টা , আর রাগ ও কমলো……”

কথাটা বলে আয়াশ থেমে চোখ বন্ধ করলেই নূর আবার বলে উঠলো
” কি হলো থেমে গেলেন কেন? বলুন তারপর কি হলো?”

আয়াশ একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল
” It was all about love at 1st side and I killed her…….!”

কথাটা বলে হো হো করে হাসতেই নূর শিউরে উঠলো ৷ দাঁড়িয়ে পড়লো নূর ৷
“কি বলছেন কি এসব ! Are u mad……”

আয়াশ ও উঠে দাঁড়িয়ে নূরের কাছে গিয়ে নূরের কোমর জড়িয়ে ধরে বলল
” yeah…..i am mad just because of u cause i love u…..you are my addiction…my favourite addiction….তুমিই আমার প্রিয় নেশা….”

কথাটা শেষ হতে দেরি হলো না নুর সপাটে একটা চড় বসিয়ে দিলো আয়াশের গালে ৷

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here