তুমিই আমার প্রিয় নেশা
প্রথম_পর্ব
সুরাইয়া আয়াত
” কাছে আসছেন কেন?সরে যান প্লিজ ৷ কালকে আমার বিয়ে ,আপনি সম্পর্কে আমার হবু দেওর ,দয়া করে আর কাছে এগোবেন না , নাহলে আমি কিন্তু এবার জোরে চিৎকার দেবো ৷”
নূর ক্রমশ বিছানার ওপর এপাশ ওপাশ করছে, ও যতটা পিছোচ্ছে আয়াশ ততটা ওর দিকে এগোচ্ছে ৷ কোন উপায় না পেয়ে বিছানা থেকে নেমে যেতেই আয়াশ ওর হাতটা খপ করে ধরে ওকে কোলে তুলে বিছানায় ফেলে দিয়ে হাতদুটো শক্ত করে চেপে ধরলো ৷হলুদ উপলক্ষে পরা হাতের ফুলগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ৷
” আমি তোমার দেওর এই ভাবনা তুমি কোথা থেকে পেয়েছো আফু সোনা, তুমি তো আমার বউ, আর আমাকে ছেড়ে আমার ভাইয়ের নামে নিজের গায়ে হলুদ ছোয়াচ্ছো এটা কি করে হয় বলো ৷”
নূর কাঁপা গলায় বলল ” আমি নূর , তাই প্লিজ ওই বিশ্রি ভঙ্গিতে নামটা উচ্চারন করবেন না, আর ছাড়ুন আমাকে, আমার হাতে লাগছে, সরে যান ৷”( হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে )
আয়াশ এবার একটা টেডি স্মাইল দিয়ে নূরের কাছে গিয়ে ওর নীচের ঠোঁট জোড়াতে কামড় বসাতেই হঠাৎ প্রবল শব্দে দরজা খোলার আওয়াজের সাথে একটা মেয়ে এসে রুমে ঢুকে গেল ৷ নূরের প্রানপাখি যেন উড়ে গেল, যেই ভয়টা পেয়েছিলো তাই হলো ৷ আয়াশ নূরের কাছ থেকে সরে আসার আগে বলল
” তোমার শরীরে আমার দেওয়া প্রথম চিন্হ, এখন একটা দিলাম পরে আরো দিবো আফু সোনা, তবে এখন যা হতে চলেছে পারলে আটকে দেখাও ৷” কথাটা বলে ঠোঁটের কামড়ে দেওয়া অংশটাতে বেশ শব্দ করে একটা চুমু খেলো যাতে আওয়াজটা রুমে উপস্থিত মেয়েটার কাছে যাই ৷
হঠাৎ মেয়েটা চিৎকার করে বলে উঠলো
” ছিহ, তুমি এতো নোংরা একটা মেয়ে জানতাম না, বিয়ের আগের দিন রাতে অন্য একটা পরপুরুষের সাথে ৷”
নূর তড়াঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে মেয়েটার কাছে গেল যে ওর ভাইয়ের হবু বউ যে কি না নূরকে দুচোখে সহ্য করতে পারে না ৷ নূর মায়ার কাছে গিয়ে কাঁদোকাদো গলায় বলল
” বিশ্বাস করো ভাবী আমি কিছু করিনি, উনিই তো !”
কথাটা পুরোটা বলতে না বলতেই মায়া বলে উঠলো
” তুমি ভাঙবে তবুও মচকাবে না বুঝেছি, তোমার এই কুকির্তি আমি সবাইকে জানাবো ওয়েট ৷” বলে মায়া রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ নূরের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে,ও বোঝেনা যে মায়ার ওর প্রতি কিসের এতো রাগ যে সবসময় কোন না কোন ভাবেই হ্যারাস করার চেষ্টা করে ওকে ৷ মায়া রুম ছেড়ে যেতেই আয়াশ নূরের কাছে গিয়ে বলল
” এই আফু সোনা এখন কাঁদছো কেন? এখনই সব কেঁদে নিলে বিদায়ের সময় কাঁদবে কি ৷ তুমি কাঁদলে যে আমার বুকে এসে লাগে ৷”
কথাটা শুনতেই নূর আয়াশকে একটা থাপ্পড় মারলো
” না জানি কোন জীবনের দুশমানি ছিলো আপনার আমার সাথে যে আপনি এমন করলেন ৷ তবে এটুকু জানবেন যে আহানকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করবো না কাউকে না ৷” আয়াশ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো, আজ অবধি কেউ কখনো ওকে চড় মারেনি কিন্তু আজ নূর ওকে চড় মারলো ৷ আয়াশ নূরকে দেওয়াল সাথে চেপে ধরলো , নূরের দিকে এগোতে গেলেই ঘরের মধ্যে হুড়হুড় করে লোকজন ঢুকতে শুরু করলো ৷ সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে যেন বিনোদন দিচ্ছে ওরা দুজন ৷ হঠাৎ মায়ার গলার আওয়াজে আয়াশের হোস ফিরে এলো ৷ রাগে নূরের কোমড়ে শক্ত করে ওর নখের আচড় বসাতেই নূর ওর হাতটা পেটে শক্ত করে চেপে ধরলো , সেখান থেকে ছিটছিট করে রক্ত বার হচ্ছে ৷
মায়ার গলার আওয়াজ ভেসে আসলো কানে
” দেখেছো নূর আর এই ছেলের মধ্যে ঠিক কোন ধরনের সম্পর্ক ৷ এই ছেলে তো এক্কেবারে বেহায়া আর তার সাথে তোমাদের নূর ও, নাহলে হলুদের রাতে কেউ কি করে তার ঘরে কোন পরপুরুষকে ঢুকতে দেয় ৷”
মায়ার এমন কথা শুনে আহান বলে উঠলো
” এগুলো কি হচ্ছে আয়াশ , আর তুমিই বা কি করে পারলে নূর ৷ তোমার প্রতি আমার বিশ্বাসটা এভাবে নষ্ট করতে পারলে ?”
নূর এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো, যেখানে ওর কোহ দোষ নেই সেখানে সবাই ওর দিকে আঙুল তুলছে , এখন ও কীভাবে বিশ্বাস ফেরাবে ?
” আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে , বিশ্বাস করুন আমি কিছু করিনি ,আপনার ভাই ই তো জোর করে ৷”
আহান নূরকে থামিয়ে বলল ” আর কোন কথা শুনতে চাইনা,যেটুকু বলেছো এনাফ ৷ এখানে সবাই আছেন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছি যে আমি এমন কোন মেয়েকে বিয়ে করবো না যার আমার প্রতি কোন অনুভূতি নেই ৷ তাই আমি নূরকে বিয়ে করতে পারবো না, আর তুই আয়াশ আমার ভাই হয়ে এটা ঠিক করিসনি ৷”
কথাটা বলে আহান সেখান থেকে বেরিয়ে গেল ৷ আয়াশের কাজিনরাও শকড, হলুদ সন্ধ্যাতে এমন কিছু হবে কেউ ভাবেনি ৷ মেয়ের এমন অপমান দেখে নূরের বাবা আরাফাত সাহেব বললেন
” এই ছেলে তুমি এতো নিলজ্জ কেন? তুমি আমার মেয়ের সাথে এমন অশ্লীল আচরন করেছো এটা জানা সত্তেও যে সে তোমার ভাইয়ের হবু বউ ৷ এখন ওকে কে বিয়ে করবে শুনি ? তোমার ভাই তো বিয়ে করবেনা বলে চলে গেল ৷ আর তুমি যা লম্পট আর বেয়াদপ তোমার সাথে তো কখনোই আমি আমার মেয়ের বিয়ে দেবো না ৷”
আরাফাত সাহেবের একথা শুনে মায়ার মুখে অলো ছায়া নেমে এলো ,ও কোনভাবেই চায়না যে নূর আর এক মুহূর্তও আর এই বাসায় থাকুক,তাই ও বলে উঠলো
” কেন হবে না, আলবাদ বিয়ে হবে,এই ছেলের জন্যই নূরের বিয়ে ভেঙেছে, এই ছেলের সাথেই নূরের বিয়ে হবে ৷ এই ছেলের করবে ওকে বিয়ে ৷”
নূর অনবরত কান্না করেই চলেছে , ওর চোখে জল বাঁধ মানছে না, বিয়ের আসর থেকে ওর হবু বর চলে গেছে বিয়ে ভেঙে , এটা যে একটা মেয়ের জন্য কতোটা অপমানের তা একটা মেয়েই বোঝে ৷ মায়া আয়াশ এর দিকে তাকিয়ে বলল
” আজই তোমাদের বিয়ে হবে ,এক্ষুনি ৷”
কথাটা বলে পার্লারের মেয়ে গুলোকে বলল নূরকে বউয়ের সাজ সাজাতে ৷ আয়াঝ একটা টেডি স্মাইল দিয়ে চলে গেল ৷ রূম থেকে সবাই বার হতে লাগলো আর নিজেরা নিজেদের মধ্যে কানাঘুষো করতে লাগলো যে তাদের মধ্যে আগে থেকে কোন সম্পর্ক ছিলো কি না ৷
নূরকে সাজাচ্ছে আর অনবরত কেঁদেই চলেছে , পার্লারের মেয়েটা বিরক্ত হয়ে বলল
” এই মেয়ে এত কাঁদছো কেন , মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে ৷”
তবুও কি চোখের জলের বাঁধ মানে?
____
আজ আহান আর নূরের হলুদ সন্ধ্যা ছিলো, গেটের সামনে বড়ো বড়ো করে লেখা ছিলো
” আফসান নূর ❤ শাফিয়াত আহান ”
বিয়ে বাড়ির গেটের সামনে আয়াশ দাঁড়িয়ে আছে, পূর্নিমা রাতে চাঁদের হলুদ আফা ওর সাদা মুখ জুড়ে ছেয়ে যাচ্ছে, শেভ করা চোয়ালে কালো তিলটা বড্ড মায়াবী রে তুলেছে মুখটাকে, হালকা ঢেউ খেলানো চুলটা জেল দিয়ে পরিপাটি কথা , চোখের হালকা বাদামী চোখজোড়া জ্বলজ্বল করছে তা যেন এই রাতকে কিছু বলতে চাই ৷ গায়ের লাল সাদা শেরওয়ানিটা সাদা ফুটফুটে শরীরের সাথে মিশে যাচ্ছে ৷ আয়াশ হাত দিয়ে নূরের নামটা আলতো করে স্পর্শ করলো, তারপর আহানের নামটা একটানে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে উন্মাদের মতো হাসলো ৷
তারপর গাঢ় কন্ঠে বলল
” তুমি যাহাতে রবে আমিও আহাতে রবো
তোমার পথে থাকবো ছায়ার মতো, তোমার চলার পথে হবো কাঁটার মতো , আর আমার বাগানের রানী হবে তুমি আর আমি ভ্রমরের মতো পিছু পিছু চলবো ৷”
কথাটা বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফোনটা ধরালো ৷
” থ্যাঙ্ক ইউ ভাইয়া , আমার কথাটা রাখার জন্য, তুমি তো জানোই সব ভালোমতো ৷ খারাপ লাগছে এটা ভেবেই যে আমার বিয়েতে তুমি থাকতে পারছো না ৷”
_____
” কিছুখন পরই বিয়ে , বাসর ঘরটা রেডি রেখো, তোমার ছোট ভাইয়ের বউ আসছে বলে কথা ৷”
কথাটা বলে হেসে উঠলো ৷
❤
বিয়ের কাজ শেষ , সারাটা সময় নূর কেঁদেছে , বিয়েটা ও ঠিক মেনে নিতে পারেনি ৷ ওর বাড়ির সবার ব্যাবহার খুবই স্বাভাবিক, সবাই যেন মানিয়ে নিচ্ছে ব্যাপারটাতে ৷ নূরকে গাড়িতে তুলে দিয়ে মায়া যেন একটা সস্তির নিশ্বাস নিলো ৷ গাড়ি চালাচ্ছে আয়াশ আর নূর ক্রমাগত কাঁদছে সেদিকে ওর কোন ভাবনা নেই, গাড়িটা মাঝ রাস্তায় এসে থামিয়ে দিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে তার ধোঁয়া ছাড়তেই গাড়ির মধ্যে ধোঁয়া ছেঁয়ে গেল, নূর কাশতে কাশতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো, সিগারেটের ধোঁয়া ও কখনো সহ্য করতে পারে না ৷ আয়াশ গাড়ি থেকে নেমে হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দিলো ৷
হঠাৎ একটা সুনসান রাস্তার মাঝে ওদের গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে পূর্নিমার চাঁদের আলোতে আয়াশের মায়াবী মুখটা যে নূরের সহ্য হচ্ছে না , আয়াশ ওর দিকে এগোতেই ও গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, আয়াশ ওর মুখের মধ্যে থাকা অবশিষ্টাংশ ধোঁয়া নূরের মুখের ওপর ছড়িয়ে দিলো ৷ আয়াশ ওর হাত দিয়ে নূরের ঠৌঁটে স্লাইড করতে করতে বলল
” তুমি কি জানো আফু সোনা যে আমি তোমাকে কেন বিয়ে করেছি ?”
নূর ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ালো ৷ যার অর্থ ও জানে না ৷ আয়াশ মুচকি হেসে বলল
” কারন তুমিই আমার প্রিয় নেশা যে নেশা কখনো যাবে না ৷ কখনো পালানোর চেষ্টা করোনা আমি ঠিক ধরে ফেলবো ৷ ”
আয়াশের এমন নেশাভরা কন্ঠস্বর শুনে নূর কেঁপে উঠলো ৷
নূর কিছু বলছে না, কি বলবেই বা , সব কতো তাড়াতাড়ি অদ্ভুত ভাবে হয়ে গেল ৷ আয়াশকে মানতে পারছে না, খানিকটা রেগেই বললো
” উদ্দেশ্য কি আপনকরফ কি জন্য এমনটা করলেন , তিনি তো আপনার বড়ো ভাই ৷ আর তাছাড়া আমি আপনার কিসের এমন নেশা যে আপনি সেই নেশাতে আক্ষ্ট হতে সেই নেশাকেই ভেঙে চূরমার করে দিলেন ৷”
আয়াশ নূরের হাতের তালুতে একটা চুপু দিয়ে বলল
” আমিই তোমার জীবনের একমাত্র ভিলেন যে তোমাকে কষ্ট দেবে আবার তার থেকেও বেশি পরিমাধ ভালোবাসা ফিরিয়ে দেবো, শুধু তোমাকে সেগুলো কষ্ট করে সহ্য করে যেতে হবে বুঝলে আফু সোনা ৷”
নূর আয়াশের চোখের দিকে তাকালো , মানুষটা এমন অদ্ভুত কেন? অদ্ভুত তার চাহনি , অদ্ভুত তার কথা, অদ্ভুত এক ব্যাক্তিত্বের অধিকারী ৷ ও কি করে মানিয়ে নেবে ?
চলবে