তার শহরের মায়া 😍,পার্ট_৩৪,৩৫

তার শহরের মায়া 😍,পার্ট_৩৪,৩৫
Writer_Liza_moni
পার্ট_৩৪

লক্ষী সোনা রাগ করে না,, একটু হাসো প্লিজ,, ভাল্লাগে না আর হবে না করছি যে প্রমিসড,,,,
.
.
অনু কে রুমে আসতে দেখেই অসহায় মুখ করে গানটা গাইলো তূর্য।অনু সে দিকে পাত্তা দিলো।ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। তূর্য মাথায় হাত দিয়ে অনুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,,
মেয়েরা যে একটু বেকা টাইপের কেন যে ভুলে গেছিলাম,,,? জীবনে ও আর এমন ভুল করতাম না।
.
.
সকাল আটটা বাজে।অনু নাস্তা বানিয়ে সব ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে।আজ নাকি জুঁই এর পরীক্ষা আছে। বাড়িতে ও কিছু সমস্যা থাকার জন্য তূর্যর বাবা মা চলে যাবেন। তূর্য এখন যেহেতু আগে থেকে অনেক টা সুস্থ,, সেহেতু তারা তাদের বাড়ি ঘর ফেলে আর কত দিন এই ঢাকায় থাকবেন,,,

অনু তার শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে বললো,, তোমার ছেলের ঔষধ খাওয়ার সময় হয় গেছে।সুপ টা খাইয়ে ঔষধ টা খাইয়ে দিবা মা,,?

তূর্যর মা মুচকি হেসে অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,
এখন আমি না হয় খাইয়ে দিলাম,, দুপুরে তো তোকে দিতে হবে,,, তখন কী আর এমন অভিমান করে থাকবি?

মা তোমার ছেলে কী এটা ঠিক করেছে বলো? তুমি জানো,,যখন আমি রুমে গিয়ে ঐ দৃশ্য দেখেছিলাম তখন আমার কেমন লেগেছিল? আমার মনে হয়েছিল,,কেউ জেনে এক টানে আমার কলিজা ছিঁড়ে ফেলছে। আমার মুখ দিয়ে কথা বের হতে ভুলে গেছিলো। এমন টা কী সহ্য করার মতো ?বলো,, তুমি পারতা তোমার স্বামী কে অন্য কেউ ভাত খাইয়ে দেওয়ার দৃশ্যটা হজম করতে? একটা বাইরের মেয়ে,, আমার তো এখন ও রাগ লাগতেছে,,,

ওরে আমি যাওয়ার সময় আচ্ছা মত বকে দিবো। জীবনে ও যেন আর কোনো মেয়ের হাতে খাওয়া তো দুরের কথা কোনো মেয়ের মুখের দিকে ও যেনো তাকাতে দশবার চিন্তা করে।
তুই আর রাগ করে থাকিস না।রাগ করে থাকলে তো দূরত্ব বাড়বে সোনা।

অনু তূর্যর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
আল্লাহ যা কেড়ে নেয় তার থেকে ও বেশী ভালো কিছু দেন। আমি অনেক ভাগ্য বান যে তোমাদের মতো শ্বশুড় শ্বাশুড়ি পেয়েছি।

তূর্যর মা অনুর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,,
আমার ও তো একটা মেয়ে আছে।ওর ও তো বিয়ে হবে পরের ঘরে তো আমার মেয়ে ও যাবে।আমি ও তো আমার মা বাবা কে ছেড়ে তোর শ্বশুড়ের বাড়িতে এসেছি। তুই ও আমার মেয়ের মতো। ভুল করলে শাসন করবো,বকবো,, আবার নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসবো,,,,

তুমি অনেক বেশি ভালো মা। কথা দিচ্ছি,, আমি আমার নিজের মায়ের মতই তোমাকে ভালোবাসবো।সম্মান করবো।মাঝে মাঝে রাগ ও ঝাড়বো।বকতে পারবা না কিন্তু,,,

পাগলী মেয়ে। তূর্যর মা অনুর কপালে চুমু খেয়ে বললো,, তূর্যর সাথে আর রাগ করে থাকিস না সোনা। রুমে গিয়ে দেখ কেমন দেবদাস হয়ে গেছে।

তোমার ছেলের সাথে আমি অতো তাড়াতাড়ি কথা বলবো না ।তোমার ছেলেকে আগে ওর কাজের শাস্তি পেতে হবে। না হলে ওর খবর তো আজকে আছে। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে অন্য একটা অপরিচিত মেয়ের হাতে ও খেয়েছে,,ওর দাঁত যদি আমি না ভাঙছি তাহলে আমার নাম ও অনুমেঘা না।
.
.
তূর্যর মা তূর্য কে সুপ টা খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিল। তূর্য মুখটা কে বাংলার পাঁচ করে বসে আছে বিছানায়।

শুন তূর্য,,
আমার যতটুকু মনে হয় অনু ও তোকে ভালোবাসতে শুরু করে দিয়েছে। তুই মেয়েটা কে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছিস। মেয়েটা কে এই ভাবে জেলাস না করলে ও পারতি।শুন,, ভুলে ও যদি কোনো মেয়ের দিকে তাকাইছোস তোর চোখ তুলে ফেলবে বলছে।সাবধানে থাকিস।চার দিক শান্তশিষ্ট মানে কিন্তু ঝড়ের পূর্বাভাস।
.
.
সকাল ১০ টার দিকে তূর্যর মা বাবা আর জুঁই চলে গেল।বাড়িটায় এখন কেমন জানি সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। তূর্য মাথার উপরে সেলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে।ফ্যানের গট গট আওয়াজ শুনে বিরক্ত হচ্ছে তূর্য।অনুর কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছে না। রান্না ঘর থেকে ও কোনো শব্দ আসছে না। তূর্যর কেমন অসহ্য লাগছে।অনু যে এত পরিমাণ রেগে থাকবে বুঝতে ও পারলাম না।সব আমার দোষ ধেতত,,,

কোথায় ফাঁকা বাড়ি,,বউয়ের সাথে একটু রোমান্স করবো আর সেখানে বউকে রাগিয়ে দিয়ে বসে আছি,,, জীবন বিফল,,,

.
.
অনু ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে সোফায় বসে আছে। ইচ্ছে করছে ওর তূর্যর মাথার চুল গুলো টেনে ছিঁড়তে।

তূর্য হালকা কেশে গলা উঁচু করে অনু কে ডাকতে লাগলো,,,
মেঘু পাখিইইই কোথায় তুমি,,? একটু এই দিকে আসবা?আসার সময় ফ্রিজ থেকে আচার নিয়ে আসি ও তো,,,,

অনু সোফায় বসে তূর্যর কথা শুনতে লাগলো। আচার এর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বিড় বিড় করে বললো,, এই ব্যাটায় আবার আচার খাবে কেন?বাবু হবে নাকি,,?
কথাটা বলে অনু নিজে নিজেই হাসতে হাসতে শেষ।

তূর্য অনুর হাসির আওয়াজ পেয়ে মনে মনে বললো,,কী এমন বলছি যে হাসছে,,? তূর্য একটু ভালো করে ভেবে দেখলো সে আচারের কথা বলেছে।সে যত টুকু শুনেছে কোনো মেয়ের যখন বাবু হবে তখন সে হঠাৎ হঠাৎই আচার খায়।
নিজের মাথায় নিজে গাট্টা মেরে মুচকি হাসলো তূর্য।অনু নিশ্চয় এই কারনে হাসতেছে,,যাক তবু ও হাসছে,,,

অনু সোফা থেকে উঠে রান্না ঘরে গেল।ফ্রিজ খুলে দেখে প্রায় পাঁচ বয়াম আচার।এত আচার নিশ্চয় আম্মু আনছে,,,নাতি নাতনির শখ জাগছে,,,

অনু এক বয়াম আমের আচার এনে তূর্যর পাশে রেখে আসার সময় তূর্য অনুর হাত ধরে টান মেরে নিজের বুকের উপর ফেলে দেয়।

অনুর মুখের সামনে থেকে চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে বললো,,সরি বউ,, আর এমন ভুল হবে না।

অনু নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। তূর্য এক হাত দিয়ে অনুর পিঠ জড়িয়ে ধরে আছে।

অনু তো মনে মনে ঠিক করেছে কাল সকাল অব্দি তূর্যর সাথে একটা কথা ও বলবে না।

প্লীজ বউটা এই ভাবে কথা বলা বন্ধ করে দিও না।ভাল্লাগে না আমার তোমার সাথে কথা না বললে।প্লীজ বউটা,, সোনা বউ, আদুরি বউ,লক্ষী বউ মেঘু পাখি প্লিজ 🥺🥺

অনু জোর করে তূর্যর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল। দুপুরের খাবার রান্না করার জন্য।

তূর্য অনুর এই কথা বন্ধ করে দেওয়া মেনে নিতে পারছে না। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। কেন যে এমন একটা ভুল করলো সে,,,?
.
.
অনু রান্না ঘরে গিয়ে হাসতে হাসতে শেষ। তূর্যর সরি বলার ভঙ্গিমা দেখে সেই কখন অনুর রাগ কমে গেছে। কিন্তু তবু ও এই পোলারে একটা শিক্ষা দিতে হবে।বলবো না কথা দেখো চান্দু কেমন মজা লাগে,,,,,,
.
.
অনু দুপুরের সব খাবার রান্না করে রুমে এসে দেখে তূর্য প্রায় বয়ামের অর্ধেক আচার শেষ করে দিছে।অনু তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো মুখটাকে মলিন করে শুধু আচার খাচ্ছে।
অনু মনে মনে বললো,,ও আল্লাহ,,একটা মেয়ে ও মনে হয় এত আচার খায় না।

অনু তূর্যর হাত থেকে বয়ামটা কেড়ে নিয়ে রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে আবার ফ্রিজে রেখে দিল।
তূর্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে।

কথা ও বলবে না আবার আমার মায়ের হাতের তৈরি এত মজার আচার গুলো ও খাইতে দিবে না,,,কপাল করে পাইছি একটা ধানি লঙ্কা,,,,

অনু তূর্যর রুমে এসে নিজের কাপড় নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।ঘেমে একাকার হয়ে গেছে সে। গোসল না করলে হবে না।আগে আমি গোসল করে নি,, তার পর তূর্য সাহেবের গোসলে সাহায্য করমু।
.
.
অনু গোসল করে বের হয়ে দেখে তূর্য বিছানার মধ্যে কাবাডি খেলছে,,মানে বিছানায় বসে,আর শুয়ে থাকতে থাকতে তিনি বিরক্ত। বিছানার চাদরের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।

তূর্য সব করছে যেনো অনু বিরক্ত হয়ে ও একবার কথা বলে,,, কিন্তু অনুর কোনো হেল দোল নাই।ও স্বাভাবিক।
উপরে অনু নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করলে ও ওর এখন ইচ্ছে করছে তূর্য কে কঠিন ভাষায় বকা দিতে। কিন্তু না,,সেতো কথা বলবে না,,,

আমি গোসল করবো তো নাকি ,,,?গরম লাগতেছে তো,,
অনু তূর্যর কাপড় কাভার্ড থেকে বের করে ওয়াস রুমে রেখে আসলো। তূর্যর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু মুখে কিছু বললো না।

তূর্য অনুর সাহায্য ওয়াস রুমে গিয়ে গোসল করতে লাগলো। একটা সময় তূর্য ইচ্ছে করে অনুর গায়ে পানি ঢেলে দিল। তখন অনুর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিল। ইচ্ছে করছিল তূর্য কে সারা দিন এই ওয়াস রুমে বন্ধ করে রাখতে। কিন্তু ঐ যে কথা বলবে না।তাই অনু নিজেকে শান্ত করলো,,,

তূর্য এত কিছু করলো,,তার পর ও যখন অনুর মুখ থেকে কথা বের করতে পারলো না তখন অনুর শাড়ির আঁচল দিয়ে আঙ্গুলে পেছাতে লাগলো।ও বউ প্লিজ কথা কও,,,,
.
.
দুপুরে অনু তূর্য কে খাবার খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়। কিন্তু মুখে কিছু বলে না।অনুর এই নিরবতা তূর্যর একদম ভালো লাগছে না।

তূর্য অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,,
বউ কথা কও,,,🥺🥺🥺

চলবে,,,,, 🍁

#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_৩৫
#Writer_Liza_moni

প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো।পশ্চিম দিকের আকাশে লাল , নীল হলুদ কমলা রঙের মিশ্রণ। গোধূলি বেলার আকাশ এত সুন্দর হয় কীভাবে ? বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সেই গোধূলির আকাশ মুগ্ধ চোখে দেখছে অনু।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে বোর হচ্ছে তূর্য। পায়ের জন্য ঠিক মত হাঁটা ও যাচ্ছে না।অনু এখন ও তূর্যর সাথে কথা বলেনি। তার নিজের ও ভাল্লাগছে না তূর্যর সাথে কথা না বলে থাকতে।

তূর্য বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো।পড়ে যেতে যেতে বেঁচে গেল। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে অনুর কাছে আসলো।অনু তখন আকাশ দেখতে ব্যস্ত। হঠাৎ তূর্য কে পাশে দাঁড়াতে দেখে অনু মুখ ফুটে বলে ফেললো,,
এই আপনি বিছানা থেকে নামছেন কেন?

কথা টা বলে দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বললো,,এই যা কথা বলে ফেলেছি।

তূর্য হাসলো। আমার বউ এর যে রাগ কমেছে তাতেই অনেক।অনু তূর্যর হাত ধরে রুমে আনতে আনতে বললো,,
কে বলেছে আমার রাগ কমে গেছে হুঁ? আপনার সাথে তো আমি ভুল করে কথা বলে ফেলেছি।

ভুল করে না হয় আরেক বার আমাকে ভালোবাসে ফেলো। ভুল করে কাছে এসে যাও,,,,

অনু থমকালো। তূর্যর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,,,শুনেন,,
আমি আর ভুল করে কাউকে ভালোবাসবো না। সত্যি জেনেই ভালোবাসবো। সত্যি সত্যি একজন সঠিক মানুষ কে ভালোবাসবো। ভুল করে তো মানুষ ভুল মানুষকেই ভালোবাসে।

অনু তূর্যকে আধশোয়া হয়ে বসিয়ে দিল বিছানায়।এখানে বসে থাকুন। এখন আপনার বসে থাকা আর শুয়ে থাকা ছাড়া কোনো কাজ নেই।

আযান দিলে নামাজ পড়ে আমি মালাই চা বানিয়ে দিবো। অপেক্ষা করুন।

তূর্য খুব বেশি খুশি।অনুর সাথে এতক্ষণ কথা বলতে না পেরে যেনো তার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
আমি তাহলে এই মেয়ের মায়ায় পড়ে গেছি। ভালোবেসে ফেলেছি ওরে।অনুকে ছাড়া এখন আমার চলবেই না। একদম না।
.
.
কিছুক্ষণ পর আযান দিলে অনু নামাজ পড়ে নিলো।
নামাজ পড়ে জায়নামাজটা গুছিয়ে রেখে রান্না ঘরে চলে গেল অনু। চুলায় গরম পানি বসিয়ে দিল।
এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে ।তাতে অনু খুবই বিরক্ত হয় ।
এই সময় আবার কে এলো ভাল্লাগেনা ।
অনু গিয়ে দরজা খুলে দেখে তনু হাতে একটা বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।অনুকে দেখে তনু দাঁত কেলিয়ে বলল ধর এটা তোর জন্য।

এটা কি আবার?

খুলে দেখ।

আচ্ছা তা না হয় পরে দেখবো ।আয় ভেতরে আয়।

না না,, আমার কাজ আছে অনেক। আমি যাচ্ছি।পরে আসবো ।

আচ্ছা।তনু চলে গেলে অনু দরজা বন্ধ করে বক্সটা খুলে দেখে তো অবাক।পাটি শাপটা পিঠা।অনুর খুব পছন্দের।

অনু মনে মনে তনু কে অনেক গুলো ধন্যবাদ দিল। কিছুদিন ধরেই মন চাইছিল পিঠা জাতীয় কিছু খাওয়ার জন্য।তনু সেই চাওয়াটা পূরন করে দিল।
তূর্য রুম থেকে চিল্লিয়ে বললো,,

কে এসেছে মেঘুপাখি?

তনু আপু।পাটি শাপটা পিঠা দিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছিল। চলে গেছে।

অনু দুই জনের জন্য দুই কাপ মালাই চা বানিয়ে রুমে নিয়ে গেল।

বাহ্ গরম গরম মালাই চা আর পাটি শাপটা পিঠা। একদম জমে ক্ষীর।

এত কথা বলেন কেন? চুপ করে খান।

এত ধমকাউ কেন?সহজ সরল পেয়ে এই ভাবে ধমকাবে ?

আপনি সহজ সরল? সিরিয়াসলি,,

তূর্য ভাব নিয়ে নিজের চুল গুলো কে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে দিয়ে বললো অবশ্যই। আমি এত প্যাঁচ গোছ বুঝি না।

এক জন সি আই ডি অফিসার হয়ে বলেন আপনি প্যাঁচ গোছ বুঝেন না। আপনার পেটে জিলাপির প্যাঁচ আছে।

তুর্য পিঠার মধ্যে এক কামড় বসিয়ে দিয়ে বললো,, অন্য সব প্যাঁচ বুঝলে ও তোমার এই মুড সুইং এর প্যাঁচ আমি বুঝি না।

এই শুনুন,,

হুম গো বলুন,,,

আপনি যদি আবার ও কাজে জয়েন করেন তাহলে সব মেয়েদের থেকে দূরে থাকবেন।যদি দেখছি কোনো মেয়ের হাতে আর খাইতে আপনার পেট ফাটিয়ে দিমু। চোখ গুলো খুলে কাক রে দিমু খাইতে। অনেক বড় অপরাধ করছেন আপনি। তার শাস্তি হিসেবে আমার একটা জিনিস চাই।

কী জিনিস?

অনু হাসলো।সময় হলে আমি নিজেই চেয়ে নিবো।

তাহলে তো তুমি আমার কাছ থেকে দুটো জিনিস পাও।

হুম।আর আমি যখন চাইবো আপনি তখন সেই দুটো জিনিস আমাকে দিবেন।

.
.
.
বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে আছে তূর্য আর অনু।ভেপসা গরম পড়ছে। কারেন্ট ও নাই
রাত প্রায় ১১টা।
কারেন্ট নাই।অনু বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো।
এই কয়েক দিন ভীষণ গরম পরেছে ঢাকায়।
এই সময় কারেন্ট যেতে হলো?

অনু মোবাইল টা হাতে নিয়ে তূর্যর দিকে আলো দিয়ে দেখলো,, ঘুমিয়ে আছে।ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। ঔষধ এর রিয়েকশনে এই গরমে ও কী শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে দেখো,,

অনুর খুব অসস্থি বোধ হচ্ছে।দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গরমে।অনু বিছানা থেকে নেমে জানালা গুলো মেলে দিলো। একটু বাতাসের আশায়।

অনু গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ালো।আহ একটু সস্থি। এতক্ষণ যেনো দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
.
.
অনু বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকার এক পর্যায়ে চার দিক থেকে শো শো করে বাতাস বইতে লাগলো।আকাশে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।

আবহাওয়ার এত পরিবর্তন?যাক ভালোই হলো।এই বার শান্তি তে ঘুমানো যাবে।

অনু রুমে আসবে এমন সময় রিম ঝিম ধারায় বৃষ্টি পড়া শুরু করলো। রহমতের বৃষ্টি।বাহ্,,,, এই সময় দোয়া করলে নাকি দোয়া কবুল হয়,,,

অনু চোখ বন্ধ করে মনে মনে দোয়া করলো।
আল্লাহ দোয়া টা কবুল কইরো। আমার হাসব্যান্ড কে তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দাও।ওর এই অসুস্থতা একদম ভালো লাগছে না।
.
.
অনু গিয়ে তুর্যর পাশে শুয়ে পড়লো। ঘুমের ঘোরে তূর্য অনু কে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। শাড়ির নিচে অনুর পেটের উপর তূর্যর হাত পড়তেই অনু কেঁপে উঠলো। তূর্য কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

মনে মনে বলে,,
আপনি সুস্থ হয়ে গেলে যদি কাছে আসতে চান আমি আপনাকে একদম বাঁধা দিবো না তূর্য।
.
.
সকালে অনু কে নিজের বুকে আশটে পিশটে জড়িয়ে থেকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো তূর্য।অনু এখন ও ঘুমিয়ে আছে। শাড়ি এলোমেলো। একদম তূর্যর বুকের মাঝে মুখ গুজে ঘুমিয়ে আছে।অনুর গরম নিঃশ্বাস তূর্যর বুকে আছড়ে পড়ছে।

তূর্য অনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললো,,,
বউ,, সোনা বউ,,উঠো,, নামাজ পড়বা না?

অনু নড়েচড়ে উঠলো। আবার ও তূর্যর বুকের মাঝে মুখ গুজে ঘুমিয়ে পড়লো।

তূর্য আবারো ডাকলো,,
মেঘুপাখি,,,
উঠো,, ফজরের নামাজ পড়তে হবে তো। নামাজ পড়ে আবার ঘুমি ও।উঠো।

অনু চোখ পিটপিট করে তাকালো। তূর্য কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনু নিজের দিকে তাকালো। তড়িগড়ি করে উঠে শাড়ি ঠিক করে নিলো।

তূর্য হাসলো।
যা দেখার দেখা হয়ে গেছে।

অসভ্য লোক।

অনু চুলে খোঁপা করতে করতে ওয়াস রুমে চলে গেল। তূর্য বিছানায় শুয়ে শুয়ে হাসছে।অনু কে লজ্জা দিতে তার ভালোই লাগে,,,,
.
.
অনু নামাজ পড়ে তূর্যর আর তার জন্য নাস্তা বানিয়ে এনে খেয়ে নিল।সব কিছু গুছিয়ে অনু তূর্যর কাছে এসে হাত বাড়িয়ে দিলো তূর্যর দিকে।

কী,,?

হাত ধরে উঠে হাঁটার চেষ্টা করুন। পায়ের ব্যাথা এত দিন নেই। তূর্য অনুর হাত ধরে হাঁটতে লাগলো।

সারা ঘরে তূর্য কে ঘুরিয়েছে অনু। তূর্য এখন ভালোই হাঁটতে পারছে।

একা একা হাঁটুন,,,

তূর্য একা একা হাঁটতে থাকে।

বাহ্,, আপনি তো অনেক ভালো করেই হাঁটতে পারছেন।আগে থেকে অনেক সুস্থ।

তোমার সেবায়,,,

অনু হাসলো,, আপনি যেহেতু আমার হাসব্যান্ড সেহেতু সেবা করাই যায়। আপনি এক কাজ করিয়েন,,

কী কাজ?

অনু দাঁত কেলিয়ে বললো,,
আমার যখন বাবু হবে তখন আপনি আমার সেবা করিয়েন।তাহলে সব শোধ বোধ,,,,

তূর্য মাথায় হাত দিয়ে বললো,,
বাবুর মাকেই এখন ও কাছে পেলাম না,,আর বাবু তো দূরের কথা,,,,,,

চলবে,,,,, 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here