তার শহরের মায়া 😍,পার্ট_২৪,২৫

তার শহরের মায়া 😍,পার্ট_২৪,২৫
Writer_Liza_moni
পার্ট_২৪

মাহিররা চলে গেছে প্রায় আধা ঘন্টা আগে। তূর্য অনুর রুমে গিয়ে শুয়ে আছে। শুধু শুধু শুয়ে থাকতে বোরিং লাগছে তূর্যর।
বউটা থাকলে ও কথা বলা যেতো। কিন্তু সে তো নিজের কাজে ব্যস্ত। তূর্য বালিশের নীচ থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে তার মোবাইলের টাচ স্ক্রিনটা ফেটে গেছে।দাগ পড়ে গেছে।
তূর্য ভ্রু কুঁচকে মোবাইল অন করলো। মোবাইল তো ঠিকই আছে। আমার হাত থেকে পড়ে তো আর এমনটা হয় নি। তাহলে ,,,

এমন সময় অনু শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রুমে এসে তূর্য কে মোবাইল নিয়ে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,,

“আরে আপনি আমার মোবাইল কেন নিছেন?”

“তূর্য নড়েচড়ে বসে বললো তোমার মোবাইল আমি নিলে দোষের কি?”

“দোষের কি মানে,,,?”

“আমার বউয়ের মোবাইল আমি দেখতে পারি না?”

“না আমি তা বলিনি।”

তূর্য অনুর দিকে মোবাইলটা বারিয়ে দিয়ে বললো
দেখো এটা আমার মোবাইল। তোমার টা না।

অনু মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে আসলেই এটা তার মোবাইল না।

অনু নাক ধরে দাঁত দিয়ে জিভ কেটে মুখটাকে বাচ্চাদের মত করে বললো সরি। আসলে রাতে আমার হাত থেকে পরে মোবাইল টা পরে গিয়েছিল। আরেকটা সরি। আমি মনে করেছিলাম ওটা আমার ফোন।

অনুর সরি বলার স্টাইল দেখে তূর্য হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।
তূর্যর হাসি দেখে অনু থমকে গেল। তূর্য হাসলে মে তার এক গালে টোল পরে তা আজ দেখলো অনু।কী সুন্দর লাগে।সব সময় মুচকি হাসে বলে বুঝা যায় না।

অনু মুগ্ধ চোখে দেখছে তূর্যর হাসি। খুব কম ছেলেরা হাসলে তাদের গালে টোল পড়ে।
অনু তূর্যর দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠলো ইসসস কী কিউট হাসি।

তূর্য হাসিয়ে থামিয়ে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো
মেঘুপাখি কী দেখো এই ভাবে?

অনু মুখটাকে মলিন করে বললো
কই কিছু না তো।

অনু সেখান থেকে এসে বেলকনিতে গেলো। বেলকনিতে আজ ফুলের মিষ্টি গন্ধে মৌ মৌ করছে।অনু বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলো। তার লাগানো সব পর্তুলিকা ফুল ফুটেছে আজ। হলুদ, গোলাপি, সাদা, কমলা রঙের সহ আরও।

হলুদ,লাল, হালকা গোলাপি রঙের গোলাপ ও ফুটেছে।মাধবি লতা গাছে ও থোকা থোকা ফুল ফুটেছে।

অনুর মন খারাপ হওয়ার আগেই ভালো হয়ে গেছে।

তূর্য ও বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়।তার দিকে এতো এতো ফুল দেখে ভীষণ আনন্দ হলো তার। তূর্য ও ভীষণ গাছ প্রেমি। তবে সেটা ফুল গাছ। কোনো আগাছা না।

যাক আমার মতই একটা ফুল গাছ প্রেমি বউ পেয়েছি।
অনু তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো
আপনি গাছ প্রেমি,,,?

তূর্য মুচকি হেসে বললো
হুম।

আপনার বাড়িতে তো কোনো গাছ দেখলাম না।মানে বেলকনিতে।

আমি তো বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকি।এখানে তো খুব কম সময় থাকা হয়।তাই এখানে কোনো গাছ লাগাইনি।যত্ন নেওয়ার মতো কেউ নেই।ঢাকায় আমি যে বাসায় থাকি সেখানে অনেক গাছ পাবে।

আপনার শরীর আগে থেকে ভালো আছে তো?জ্বর কমেছে?

তূর্য কপালটা বারিয়ে দিয়ে বললো
নিজেই দেখে নাও।

অনু একটা ঢোক গিলে তূর্যর কপালে হাত রেখে দেখলো শরীর তেমন একটা গরম না।জ্বর কমেছে ।

কী দেখলা?

ভালো হয়ে গেছেন।

হুম।
.
.
রাতের দিকে তনু কল করে বলে দিয়েছে তারা পৌঁছে গেছে।
অনু বিছানায় বসে বসে হাতের নখ কামড়াচ্ছে। তূর্য একটু বাইরে গিয়েছিল। বাড়িতে এসে অনুর রুমে গিয়ে দেখে অনু আনমনে কিছু ভাবছে আর তার গান হাতের নখ কামড়াচ্ছে।

ছিঃ ছিঃ মেঘুপাখি কী খবিস তুমি? তূর্য নাক ছিটকে বললো।

অনু তূর্যর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললো
আমি আবার কী করলাম?
খবিস বললেন কেন?

এতো বড় হয়ে তুমি হাতের নখ কামড়াচ্ছো?

অনু হাতের দিকে তাকালো। আসলে আমি যখন খুব টেনশনে থাকি তখন ডান হাতের নখ কমড়াই।এটা আমার খুব বাজে অভ্যেস।

তূর্য অনুর পাশে এসে বসলো।অনুর দিকে তাকিয়ে বললো
কী হয়েছে মেঘুপাখি? কীসের টেনশন করছো তুমি?

অনু মুখটাকে মলিন করে বললো আর তিন দিন পর আমার পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। খুব টেনশন হচ্ছে। না জানি কেমন রেজাল্ট করবো। পরীক্ষার কয়েক মাস আগে যা গেছে আমার উপর দিয়ে। না জানি কেমন ফলাফল আসবে।

তূর্য মুচকি হেসে অনুর কাঁধে হাত রেখে তার দিকে ফেরালো। তার পর অনুর ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো

নিজের উপর বিশ্বাস আছে তোমার,,?

হুম।

তুমি তো পরীক্ষাটা খুব ভালো করেই দিয়ে ছিলে। তোমার যেহেতু নিজের উপরে বিশ্বাস আছে সেহেতু ভেবে নাও তুমি খুব ভালো রেজাল্ট করবে। চিন্তা করিও না।

আচ্ছা একটা কথা বলবো?

হুম অবশ্যই। বলো,,

আমি তখন যে বলে ছিলাম তনু আপুদের সাথে এক ফ্লাটে থাকবো বলেছিলাম আপনি কি রাগ করেছেন?

তূর্য মুচকি হেসে বললো
না তো।রাগ করবো কেন? আমি তো মিরপুরেই থাকতে চেয়েছিলাম। সেখান থেকেই আমার অফিস কাছে হয়। কিন্তু কোনো ফ্লাট ভাড়া পাইনি।তাই বনানীতেই থাকছি‌।
.
.
অনু নতুন জামাই কে নিয়ে খেতে আয়। অনেক রাত হয়ে গেছে।

মায়ের ডাকে অনু তূর্যর উদ্দেশ্যে বললো,,
মা খেতে ডাকছে। চলুন,,,

তূর্য আর অনু চলে গেল খাবার খাওয়ার জন্য।
.
.

বাড়িতে এসে মাহির বিছানায় শুয়ে শুয়ে অনুর কথা ভাবছে। তিন বছরের মধ্যে মাহির কখনো অনুর দিকে ভালো করে তাকায়নি।এই দুই দিন অনুর এত রুপ দেখে অবাক হয়েছিল। মেয়েটা এতো মায়াবী ভাবতেও পারেনি মাহির।(শালা বারো ভাতার 😤)

তনু ওয়াস রুম থেকে এসে দেখে মাহির কিছু একটা গভীর ভাবে ভাবছে।তনু ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান দৃষ্টিতে মাহিরের দিকে এগিয়ে গেল।তার পাশে বসে চোখ ছোট ছোট করেই তনু জিজ্ঞেস করলো,,,

তোমার কী হয়েছে আমাকে খোলামেলা করে বলো তো।

মাহির এক দৃষ্টি তনুর দিকে তাকিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,,

আমার আবার কি হবে? কিছু হয়নি তো।

সত্যি কিছু হয়নি? আচ্ছা তুমি কি আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছো?

মাহিরের বুকে ধক করে উঠলো।তনু হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছে কেন?অনু ওকে কিছু বলেনি তো?

এমনটা মনে হচ্ছে কেন তোমার? আমি কী তোমার সাথে সব কিছু শেয়ার করি না?

না আমি তা বলিনি।

তাহলে এমন সন্দেহ করছো কেন?

তোমাকে এমন অন্য মনোষ্ক দেখেই জিজ্ঞেস করলাম। ভুল হয়েছে মাপ করো। বলে তনু গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে চলে গেল।

(মাহিরের ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি আমি)

.
.
বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে আছে তূর্য আর অনু। তূর্য সেলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে।আর অনু পাশ ফিরে। মাঝে অনেক খানি ফাঁকা।

হঠাৎ অনু বলে উঠলো,,
আগামীকাল বিকেল বেলায় তো আমরা আপনাদের বাড়িতে চলে যাবো তাই না?

তূর্য অনুর দিকে তাকিয়ে বললো
হুম যেতে তো হবেই।আর কয় দিন এখানে থাকবা?

অনু মলিন কন্ঠে বললো মেয়েদের জীবন অদ্ভুত।জন্মের পর থেকেই আমাদের একটা নিয়মের মধ্যে থাকতে হয়।একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর নিজের মা, বাবাকে ছেড়ে অন্যের বাড়িতে থাকতে। মেয়েদের নিজেস্ব কোনো বাড়ি থাকে না। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি হয় আর বিয়ের আগে বাবার বাড়ি।

তূর্য চুপ করে অনুর কথা শুনছে।

জানেন আমার একটা ইচ্ছে আছে। আমি আমার টাকায় একটা বাড়ি কিনবো।যেটা হবে আমার বাড়ি।

তূর্য মুচকি হেসে বললো
আমি তোমার ইচ্ছে পূরনে কখনো বাঁধা দিবো না। তোমার চিন্তাধারা অনেক উন্নত। তুমি নিজের সকল স্বপ্ন, ইচ্ছে পূরণ করবে।

অনু মুচকি হেসে মনে মনে বললো,,
এমন একটা লাইফ পার্টনার যদি সব মেয়েরা পেতো ইসসস। আমি বোধহয় সত্যি লাকি।
মে তূর্যর মতো কাউকে পেয়েছি। আল্লাহ যা করেন তা সত্যি ভালোর জন্য করে।

চলবে,,,, 🍁

#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_২৫
#Writer_Liza_moni

আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি,,,?
তূর্যদের বাড়ির ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে গোধূলি বেলার আকাশ দেখছিলো তূর্য। প্রায় দেড় ঘন্টা হবে তারা অনুদের বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়িতে এসে পৌঁছেছে।তার পাশ থেকেই অনুর বলা কথাটা শুনে অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,,

“কোনো কথা বলার সময় আর জিজ্ঞেস করবা না। তোমার যখন যা মনে আসে তখন আমাকে তুমি তাই বলবা। অনুমতির প্রয়োজন নেই।”

অনু একটা নিঃশ্বাস নিলো। তার পর কৌতুহলী দৃষ্টিতে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো,,,

“আপনার কী আগে কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল?”

অনুর বলা কথায় তূর্য খুব শান্ত চাহনিতে তার দিকে তাকায়। মুচকি হেসে বললো,,,

আমি আবেগে আপ্লুত হয়ইনি কোনো দিন। আমি সব সময় আমার অর্ধাঙ্গিনীর জন্য আমার সব আবেগ,প্রেম, ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছিলাম। কখনো কোনো মেয়ের প্রতি আমার কোনো ফিলিংস আসেনি। আমার সাথেই একজন কাজ করে। সেই মেয়েটা ও সিআইডি।মাধবী তার নাম। মেয়েটা আমার জন্য ভীষণ পাগল। বলতে পারো ভালোবাসে আমাকে। কিন্তু আমি তাকে বোনের চোখেই দেখি।

” ভালোবাসা তৈরি হয়না সবার জন্য।আর যার জন্য হয় সে বুঝে না 💔”

জানো মেঘুপাখি,,
অনেক গুলো কেস পাই বিয়ের পর বউ অন্য কারো সাথে পরকিয়া করে স্বামীকে ধোঁকা দিয়ে পালায়। ছোট ছোট বাচ্চা রেখে।তাই আমি সব সময় চাইতাম একজন মন ভাঙ্গা মানুষ।যাকে প্রচন্ড ভালোবাসতে শিখিয়ে কেউ ছেড়ে চলে গেছে।সে বুঝে ভালোবাসার মানুষটা ঠকালে ঠিক কতটা কষ্ট হয়।

আর দেখো আমি কতোটা লাকি,,,যে তোমাকে পেয়েছি। সত্যিকারের একজন মন ভাঙ্গা মানুষ পেয়েছি।

অনু চুপ করে তূর্যর কথা শুনতে লাগলো। আসলেই সত্যি,,

“যে একবার কোনো ভুল মানুষের কাছ থেকে ঠকে,,সে অন্য কাউকে ঠকাতে পারে না। কলিজা কেঁপে উঠে।প্রিয় মানুষের দেওয়া আঘাত যে কতটা গভীর হতে পারে সেইটা ঐ ঠকে যাওয়া মানুষটা বুঝতে পারে।”

আপনি অনেক বুদ্ধিমান মানুষ। অনেক সুন্দর চিন্তা ধারা আপনার।

তূর্য হাসলো। কিছু বললো না।

চার দিক থেকে মাগরিবের আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে।সাথে কাককের অসুন্দর গলায় ঝাঁঝালো কা কা আওয়াজে চার দিক মুখরিত।অনু শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বললো নিচে চলুন।
মসজিদে যান।আজান দিয়েছে।

অনু নিচে চলে গেল। তূর্য কিছুক্ষণ একা দাঁড়িয়ে থেকে সে ও চলে গেল নিচে।
.
.
তূর্য মসজিদ থেকে এসে দেখলো তার রুম খালি।অনু নেই। তূর্য কয়েক বার অনু কে ডাক দিলো।

রান্না ঘর থেকে অনুর জবাব পেয়ে তূর্য সেদিকে গেলো।অনু শাড়ির আঁচল কোমরে গুজে কিছু একটা রান্না করছে।

তূর্য এগিয়ে গিয়ে বললো,,
কি রান্না করছো মেঘুপাখি,,?

অনু শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বললো,,
আসলে জুঁই তার একমাত্র ভাবির কাছে একটা আবদার করেছে।তাই ওর আবদার পূরণ করছি।

তূর্য ভ্রু কুঁচকে বললো,,
কী আবদার?

তেমন কিছু না। শুধু হালিম খেতে চেয়েছিল।

ওহ। তূর্য ফ্রিজ থেকে একটা আপেল নিয়ে সেটাতে কামড় বসাতে বসাতে ড্রইং রুমের দিকে এগিয়ে গেল।

ড্রইং রুমে জুঁই গালে হাত দিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।

তূর্য জুঁই এর মাথায় একটা গাট্টা মেরে সোফায় বসতে বসতে বললো,,,
আমার একটা মাত্র বউরে দিয়া কাম করাইতে তোর কলিজা কাঁপে না?

জুঁই মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ভ্রু কুঁচকে মাকে ডাকা শুরু করলো।

মাআআআআ

তূর্যর মা রুম থেকে বের হয়ে এসে বললো,,
কি হয়েছে এমন ষাঁড়ের মত চিৎকার দিস কেন?

তোমার গুনধর ছেলে আমার মাথায় বারি মারছে।

তাই,,তা কী দিয়ে বারি মারছি,,?ইট,রড, না অন্য কিছু,,,?

তোর যেই হাত। আল্লাহ কী বলবো!যে একবার তোর হাতের চড় খাইছে সে জানে।লোহা থেকে কম না।

এ দিকে আয়,,তোরে দুই টা চড় মারি।

মা দেখছো তোমার ছেলে কী বলছে?

আমি তো জানতাম কথা শুনা যায়,,দেখা ও যায় নাকি,,? গভীর চিন্তার ভান করে বললো তূর্য।

জুঁই দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
তোর জীবনে বিয়ে হবে না দেখিস,,, হুঁ 😏

তূর্য দাঁত কেলিয়ে বললো,, বিয়ে আর হবে কী? আমি তো বিয়ে করেই ফেলছি,,,,

মা রান্না ঘরে যেতে যেতে বললো আমি যদি তোদের ঝগড়া রান্না ঘর থেকে শুনতে পাই তাহলে তোদের দুই ভাই বোনের একটা মাইর ও মাটিতে পড়বে না।সব তোদের পিঠে পড়বে।

জুঁই দাঁত কেলিয়ে বললো,,
ভাইয়াআআ তোকে যদি এখন নতুন ভাবির সামনে মাইর খাওয়াই কেমন হবে,,?
তোর মুখটা তখন দেখার মত হবে। ভাবতেই ভাল্লাগে।

চুপ মেয়ে। বেশি বকবক করবি তো এখন তোর কপালে শনি আছে।

কারো কপালে শনি থাকতে হবে না। এখন গরম গরম হালিম খাও।অনু দুইজনের দিকে দুই বাটি হালিম এগিয়ে দিলো। এমন সময় তূর্যর বাবা বাহির থেকে এসে সোফায় বসে বললো,,

অনু মা আমাকে এক গ্লাস পানি দাও তো।

অনু মুচকি হেসে চলে গেল পানি আনতে। কিছুক্ষণ পর এক গ্লাস পানি আর এক বাটি হালিম এনে তূর্যর বাবার হাতে দিলো।

হালিম খেয়ে সবাই অনুর হাতের রান্নার প্রশংসা করছে। শুধু তূর্য ছাড়া।সে খাচ্ছে তো খাচ্ছে। কিছু বলছে না।
.
.
রাতের খাবার খেয়ে অনু রুমে এসে দেখে তূর্য বিছানায় শুয়ে আছে।অনু কিছু না বলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়ে নিলো। তার পর বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। আকাশে থালার মত চাঁদ দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর রাত জাগা পাখির ডাক শুনে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে অনুর।রাত জাগা পাখির ডাক একদম পছন্দ না তার। কেমন যেন একটা ভয়ংকর লাগে তার কাছে।

অনু বেলকনির গ্রিলে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তার হাতের উপরে আলতো ছোঁয়া অনুভব করে চমকে উঠলো।

রিলেক্স মেঘুপাখি ,,,
আমিই তো। এই ভাবে চমকে উঠলে কেন?

না এমনিতেই।

তূর্য অনুর কানে ফিসফিস করে বললো তোমার হাতের রান্না সত্যি খুব টেস্টি।

তূর্যর ফিসফিস করে বলা কথাটা শুনে এক শীতল স্রোত বয়ে গেল শরীরের প্রতিটি শিরায়।

তূর্য অনু কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে অনুর হাতে একটা আংটি পরিয়ে দিলো।
তার পর এক নিঃশ্বাসে বললো,,

বিয়ের পর তোমাকে কিছু দেওয়া হয়নি। এই টা তোমার জন্য। ভবিষ্যতে আরো অনেক কিছু পাবে। নিজের ইচ্ছে মতো, পছন্দ মতো বানিয়ে নিও।

অনু অবাক হয়ে তূর্যর দিকে তাকালো। তার পর নিজের আঙুলে পড়া আংটির দিকে তাকালো। আংটির ডিজাইন একটা কাঠ গোলাপ ফুলের।

তূর্য মুচকি হেসে বললো,,
পছন্দ হয়েছে,,?

অনু ধীর কন্ঠে জবাব দিলো হুম।

তূর্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার পর অনুর উদ্দেশ্যে বললো,,
আগামীকাল আমাদের ঢাকা ফিরতে হবে।

অনু অবাক চোখে তুর্যর দিকে তাকালো। অবাক কন্ঠেই বললো,,এত তাড়াতাড়ি,,?

অফিস থেকে ফোন আসছে।একটা কেস স্লভ করতে হবে।স্যার আর কাউকে পায় না। শুধু আমাকেই দেখে।

কাজ যখন পড়ে গেছে। তখন তো যেতেই হবে। কিন্তু একটা শর্ত আছে আমার।

তূর্য মুচকি হাসলো। অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো আমি জানি তোমার কি শর্ত।

অনু অবাক হলো। বলার আগেই কী করে বুঝলেন কী শর্ত আমার?

তূর্য মুচকি হেসে বললো,,
মাহিরের ফ্লাটে থাকবে তুমি সেটাই তো?

হুম।ঐ লোকটাকে দেখাবো যে আমি কত খানি শান্তিতে আছি।ঐ লোককে ছাড়া।

তূর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,,,
আমার সাথে কী তুমি সত্যি শান্তিতে আছো অনুমেঘা?

অনু মুখে কিছু বললো না। কিন্তু মনে মনে বললো,,
“আপনার সাথে আমি সত্যিই ভালো থাকবো তূর্য। আপনি হলেন তেমন মানুষ যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। আমি না হয় আরেক বার কাউকে বিশ্বাস করি। মানুষটাতো সঠিক। একদম সঠিক।”
.
.
পরের দিন সকালে ঢাকার পথে রওনা দিলো তূর্য আর অনু। দুপুরে দিকে ঢাকায় এসে পৌঁছায় তারা।অনুর ইচ্ছায় মাহিররা যে ফ্লাটে থাকে সেই ফ্লাটেই রুম ভাড়া করে তূর্য। মাহির কে দিয়েই তাদের রুম গুলো কে সাজিয়ে ফেলে তূর্য।

অনু মাহির কে ফ্লাটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লম্বা একটা সালাম দিল।
মাহির মলিন কন্ঠে সালামের উত্তর দেয়।অনু কে দেখে তনু তো অনেক খুশি।অনু আর তূর্য তাদের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করে নিলো।

তনু ওদের দুজনের জন্য খাবার দিয়ে গেলে অনু গিয়ে খাবার বেড়ে তূর্য আর সে খেয়ে নিল।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় তুর্য কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে অনু বোরিং হচ্ছিল।একা একা থাকতে ইচ্ছে করছে না দেখে তনুর কাছে গেলো। কলিং বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনু।

তনু রান্না ঘরে থাকায় মাহির এসে দরজা খুলে দিল।অনু দাঁত কেলিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। তনুর কাছে গিয়ে দেখলো সে রান্না করছে। মাহির ফ্রিজ থেকে এক বোতল ঠান্ডা পানি আনার জন্য রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।

মাহির কে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে অনুর মনে একটা শয়তানি বুদ্ধি উদয় হলো।অনু একটু জোরেই বলে উঠলো,,,

আপুনি তুই খালা মনি হবি,,,🙈

চলবে,,,, 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here