তার শহরের মায়া😍,পার্ট_৬+৭

তার শহরের মায়া😍,পার্ট_৬+৭
writer_Liza_moni
পার্ট_৬

বিকেলে অনুদের এলাকাটা ঘুরে দেখার জন্যে তৈরি হলো সবাই।সবাই বলতে তুর্য, মাহির,তনু আর জুঁই।অনু যাবে না বলে অনেক বার বারন করেছে তাকে না জোর করতে।

আরে বেয়াইন আপনার এলাকায় যদি আপনি না যান তাহলে কেমনে হবে বলুন তো?

আজব তো মশাই এতো বার বলতেছি যাবো না তারপর ও এতো জোর করছেন কেন?

অনু মা তুই এতো গুলো দিন পর বাড়িতে আসলি ওদের সাথে গিয়ে একটু ঘুরে আয়।মন ভালো থাকবে।

কী এমন ক্ষতি হবে বল তো অনু?আপু ও তো যাচ্ছি।

এখন যদি না যাই তাহলে এক এক জন এক এক কথা শুনাবে। আজাইরা।অনু বিরক্ত হয়ে সবার সাথে চলে গেল জায়গা টা ঘুরে দেখতে।

খাগড়াছড়ি মানেই পাহাড় পর্বত। এতো সুন্দর জায়গাটা বলে বোঝানো যাবে না। রাতে বৃষ্টি পড়ায় মাটি হালকা ভিজে আছে এখন ও।
বাইরে এসে অনুর মন সতেজ হয়ে গেল।আপন মনেই হাসতে লাগলো সে। বাতাসে অনুর খোলা চুল গুলো উড়ছে। মাহির আর তনু আগে আগে হাঁটছে। জুঁই অনুর পাশে হাঁটছে। তুর্য অনুর একটু পেছনে ছিল।সে ও চুপ করে অনুর পাশে পাশে হাঁটছে।অনু ঘাড় ঘুরিয়ে চুল গুলো কে সামনে আনতে গেলে তুর্যর মুখে বারি খায়। তুর্য সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়। বুকের মাঝে ধক করে উঠে তার।অনু জুঁই এর সাথে কথা বলতে বলতে সামনে এগিয়ে যায়। তুর্য বা হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে মুচকি হেসে আবার অনুর পাশে গিয়ে হাঁটতে থাকে।

সামনে একটা পাহাড় দেখে সেখানে উঠার জন্য অনুর মন টানছে।

আপনি আমার সাথে দৌড়ে এই পাহাড়ের উপর উঠতে পারবেন না বেয়াইন সাহেবা।

তুর্যর কথায় অনু তার দিকে তাকিয়ে বললো আপনি আমার সাথে পারবেন তো এই পাহাড়ে দৌড়ে উঠতে?

ওকে বাজি?

বাজি শব্দ টা শুনে অনুর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।এই ফালতু শব্দ টা আমার সামনে আর কখনো উচ্চারণ করবেন না।

তুর্য মুখটাকে বাংলার পাঁচ করে সামনে এগিয়ে গেল।

অনু আপু বাজি শব্দটায় কী আছে?

কিছু না জুঁই।

মাহির আর তনু হাসতে হাসতে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।অনু তুর্য আর জুঁই ওদের পিছনে ফেলে সামনে চলে গেল।

অনু জুঁই এর মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে বলতে হাঁটছে। সামনে একটা গর্ততে অনুর পা পড়ার আগেই তুর্য অনুর হাত ধরে টান মারে।যার ফলে অনু তুর্যর বুকের উপর গিয়ে পড়ে। তুর্য অনু কে সহ মাটিতেই পড়ে যায়।

মাহিরের চোখ সে দিকে পড়তেই ও সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো। তনু দৌড়ে গিয়ে অনুকে ধরলো।অনু হাত ঝাড়তে ঝাড়তে তুর্যর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো আমার হাত ধরে টান দিলেন কেন আপনি?

তুর্য মাটি থেকে উঠে শার্টের ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে ভ্রু কুঁচকে বললো
সামনে তাকিয়ে দেখেন। আরেকটু হলেই গর্তে পড়ে নাক মুখ ফাটাতেন।

পড়লে পড়তাম তাতে আপনার কী?আর আপনারা ছেলেরা আমার থেকে দূরে থাকবেন। আপনাদের দেখলেই আমার রাগে গা জ্বলে উঠে। ফালতু ছেলে।সুযোগ পাইলেই মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়ার ধান্দা।

এই ভাবে বলছিস কেন তুই অনু? তুর্য তো তোর ভালোর জন্যই হাত ধরলো।

চুপ কর তুই।সব ছেলেই এক। বাটপার।

তুর্য মুচকি হেসে বললো
কথাটা একদম ঠিক বলেননি আপনি। দুনিয়ার সব মেয়েরা যেমন এক না ঠিক তেমনি সব ছেলেরা ও এক না।
সবাই বাটপারি করে না।

মাহির যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো স্তব্দ হয়ে। একটু আগের ঘটনায় কেন জানি তার কলিজায় ছেত করে উঠলো।

অনু রেগে বাড়ির পথেই হাটা ধরলো।
তুই কি করে বুঝবি মন ভাঙ্গার যন্ত্রনা? আমার ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নিয়ে ভালোই তো আছিস। শুধু আমার ভালো থাকাটাই কেড়ে নিছোস। বিশ্বাস ভাঙ্গে একজন।আর সেই বিশ্বাস উঠে যায় সবার উপর থেকে।
অনু মাহির কে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে হেঁটে চলে গেল।

তুর্যর খুব খারাপ লাগছে অনুর ব্যবহারে।তারা আর সামনে না এগিয়ে বাড়ির পথেই হাঁটা ধরলো।
.
অনু বাড়িতে এসে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো।রাগ হচ্ছে তার খুব। মাহির কে ইচ্ছে করছে খুন করে ফেলতে। তনু কে ও কেন জানি সহ্য হচ্ছে না অনুর।

আমার জীবন নষ্ট করে ওরা সুখে ঘর করবে কেন? কেন? কেন? কেন?
রাগের মাথায় অনু টেবিলের উপর রাখা একটা কাঁচের গ্লাস নিয়ে ফ্লোরে ছুরে মারলো।কাঁচ গুলো ভেঙ্গে সারা রুমে ছড়িয়ে পড়ে।তনু অনুর রুমে ঢুকার সময় একটা কাঁচের টুকরো তার পায়ে গেঁথে যায়।
আহ করে তনু চিল্লিয়ে উঠে।

অনু দরজার সামনে তাকিয়ে ফ্লোরে রক্ত দেখে শান্ত হয়। তনুর কাছে এগিয়ে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে টান দিয়ে তনুর পা থেকে কাঁচ টা বের করে নেয়।

তনুর চিৎকার শুনে মাহির ছুটে আসে। তনুর পা থেকে রক্ত ঝরতে দেখে তনু কে কোলে নিয়ে তনুর রুমে চলে গেল।
মা এসে অনুর উদ্দেশ্যে বলল
দিন দিন কী অসভ্য হচ্ছিস তুই? তনুর পা কতো টা কেটে গেছে দেখেছিস?

অনু কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে বসে পড়লো।মা আর কিছু না বলে তনুর রুমে চলে গেল।

উফফ কি করে ফেলছি আমি এটা? তনু আপু তো জানেই না মাহির আর আমার কোনো সম্পর্ক ছিল। রাগের মাথায় কিযে করছি উফফফ।অনু মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইল।

মাহির তনুর পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে তনু কে বিছানায় শুয়ে দিল।
তনু ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথায় তার ঘুরছে অন্য চিন্তা। সামান্য কারণে অনু রাগ করেনি।অনু কখনো এতো অল্প কিছু তে এতো রেগে যায় না। আমার বিয়ের দিন থেকেই অনুকে কেমন জানি গোল মেলে লাগছে।কিছুতো একটা হয়েছে অনুর।
.
অনু বসা থেকে উঠে ফ্লোর থেকে একটা একটা করে কাঁচের টুকরো উঠাতে লাগলো। একটা কাঁচের টুকরোর সাথে তার হাত লেগে বেশ খানিকটা কেটে যায়।
অনু পাত্তা দিলো না।

বাহির থেকে এসে রুমে যাওয়ার সময় তুর্যর চোখ পড়লো অনুর রুমের দিকে।অনুর হাত যে কেটে গেছে তা স্পষ্ট দেখতে পেল। কিন্তু কিছুই বললো না।কারন কিছু বলার বা করার অধিকার তার নেই।

অনু কাঁচ গুলো তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দিল। হাতের রক্ত গুলো মুছে নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল।ভাল্লাগছে না তার। নিজেকে যত শক্ত করতে চাচ্ছে তত মাহিরের সামনে পড়লে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
নিজেকে শক্ত করতে হলে মাহিরের থেকে অনেক অনেক দূরে থাকতে হবে।

রাত ১০ টার দিকে মাহির তনু আর মাহিরের আব্বু আম্মু ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তুর্য আর জুঁই আজ রাতে অনুদের বাসায় থাকবে। সকালে বাবা মায়ের সাথে এসে ছিল জুঁই।অনুর মা আর যেতে দেয়নি।

তনু চলে যাবার সময় অনু তার সাথে এক শব্দ ও কথা বলেনি। চুপ করে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
.
রাত তখন প্রায় ২টা। সবাই ঘুমিয়ে গেছে।হাত থেকে অনেক রক্ত ঝরায় শরীর হালকা দূর্বল লাগে অনুর। এতো দিন রাত জাগায় চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। বাবার রুম থেকে একটা ঘুমের ঔষধ চুরি করে সেটা খেয়ে নেয় সে। না হলে আজ রাত ও তার নির্ঘুম কাটবে‌। বিছানায় শুতেই ঘুম চলে আসে অনুর। দরজা বন্ধ করতে ভুলে যায় সে।

তুর্য সন্ধ্যার দিকে ফার্মেসি থেকে ব্যান্ডেজ আর মলম কিনে নিয়ে এসেছিল।হাত কেটে যাওয়ার পর ও যে মেয়েটা সে দিকে পাত্তা দিবে না তা খুব ভালো করেই জানা হয়ে গেছে এই কয় দিনে।

তুর্য চোরের মত চার দিকে উঁকি দিয়ে অনুর রুমের দরজা খোলা আছে কিনা দেখতে থাকে। দরজা খোলা দেখতে পেয়ে তুর্য যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।

ধীর পায়ে অনুর রুমে ঢুকে দরজাটা হালকা টেনে দেয়। গোলাপি রঙের ড্রিম লাইটের আলোয় আবছা অনুর ঘুমন্ত মুখটা দেখে খুব মায়া হয় তার।

অনুর কেটে যাওয়া হাতটা আলতো করে ধরে মলম লাগিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করতে গিয়ে মনে পড়লো অনু যদি সকালে উঠে হাতে ব্যান্ডেজ দেখতে পায় তাহলে বাড়ি মাথায় তুলবে। তার থেকে ভালো শুধু ঔষধ টা লাগানো থাক।
তুর্য উঠে আসার সময় অনু নড়েচড়ে উঠলো তা দেখে তুর্য এক ঢোক গিলে আস্তে আস্তে অনুর রুম ত্যাগ করলো।

চলবে
#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_৭
#Writer_Liza_moni

জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তুর্য। মনটা তার হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেছে। ঘড়ির কাঁটা ৩ টা ছুঁই ছুঁই। ঘুম আসছে না।
কিছুক্ষণ আকাশের দিকে চুপ করে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। কাল সকালে এখান থেকে চলে যাবে।তাই মনটা হালকা খারাপ হয়ে গেছে।

.
সকালে
আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় অনুর। কাল রাতে খুব ভালো ঘুম হয়েছে তার। আড়মোরা ভেঙ্গে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।বা হাত টা একটু নাড়তেই হাতের তালুতে একটু টান টান অনুভব করলো।

হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো কাটা জায়গা টা অনেক টা শুকিয়ে গেছে।মলম লাগানোর জন্য বুঝতে পারলো না অনু যে কেউ তার হাতে ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছে।মলমটা শুকিয়ে হাতের সাথে মিশে গেছে।

অনু ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
অযু করে বের হয়ে নামাজ পড়ে নিলো।

ঘুমের ঔষধ খাওয়ার অভ্যাস নেই তার। কাল রাতে খাওয়ার ফলে মাথা টা কেমন ঝিমঝিম করছে। বিছানায় আবার ও শুয়ে পড়ল সে।

নয় টার দিকে তুর্য আর জুঁই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য তৈরি হয়।অনু রুমেই ছিল। সকালের নাস্তা টা ও করেনি সে।
জুঁই অনুর রুমে এসে বললো
অনু আপু আমরা চলে যাচ্ছি।(লেখনিতে লিজা মনি)

অনু শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো। জুঁই কে জড়িয়ে ধরে বললো
আবার আসি ও।

তোমাদের খুব মিস করবো।

আমি ও ।

তুর্য জুঁই কে ডাকার জন্য অনুর রুমের দরজার সামনে দাঁড়ায়।
কীরে জুঁই আয়।১০ টার দিকে আমার কাজ আছে।

আচ্ছা অনু আপু আসি। ভালো থেকো।

আচ্ছা।
জুঁই রুম থেকে বের হয়ে গেলে তুর্য অনুর উদ্দেশ্যে বললো

শুনেন মিস সব সময় হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করবেন। এই ভাবে মন খারাপ করে থাকার কি আছে?সবার বোনেরি এক দিন বিয়ে হয়ে যাবে। আপনার ও হবে। এতে এতো মন খারাপ করার কিছু নেই।বাইরে একটু বের হয়ে হাওয়া খাইয়েন। তাহলে ভালো লাগবে। বাইরের এতো সুন্দর প্রকৃতি কে উপভোগ না করে সারাক্ষণ রুমের মধ্যে বন্ধি হয়ে থাকলে মানুষের মন এমনিতেই খারাপ হয়ে যায়।(লিজা মনি)
আর সরি। আপনাকে এতো দিন অনেক বেশি বিরক্ত করেছি।এর জন্য দুঃখিত।
আসি। ভালো থাকুন।
তুর্য আর অনুর উত্তরের অপেক্ষা করলো না।চলে গেল।

অনু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুম থেকে বের হওয়ার সময় কি যেনো ভেবে আর বের হলো না।

তুর্য আর জুঁই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
.
১১টার দিকে অনু রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে একটা চেয়ারে টেনে বসে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো
আম্মু ক্ষুদা লাগছে খাইতে দাও।

মা রান্না ঘর থেকে চিল্লিয়ে বললো
তোর ও আবার ক্ষুদা লাগে?সারা দিন রুমে দরজা বন্ধ করে রাখলেই তো পারিস।

তুমি এমন করে বললা যেনো আমি মানুষ না। কোনো রোবট। আমার যেনো ক্ষুদা লাগতেই পারে না।

মা এক প্লেট গরম ভাত এনে অনুর সামনে রাখলেন।
নে খা।

অনু হাত ধুয়ে খাওয়া শুরু করে দিল।মা পাশে দাঁড়িয়ে অনু কে পর্যবেক্ষণ করছেন। এই কয়েক দিনে মেয়েটার চেহারার অবস্থা নাজেহাল।

মা অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিগ্যেস করলেন
তোর কী হয়েছে মা? তুই তো আগে এমন ছিলি না। তোর সব কিছু টাইম টু টাইম লাগতো।আর সেই তুই এমন অগোছালো হয়ে গেছিস কেন?

মায়ের কথায় অনুর গলায় খাবার আটকে যায়। পৃথিবীতে সবার চোখে নিজের কষ্ট আড়াল করতে পারলে ও মায়ের চোখে কোনো দিন ও আড়াল করা যায় না।

অনু এক গ্লাস পানি খেয়ে মুচকি হেসে বললো
এমনিতেই আম্মু। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা তো তাই একটু টেনশনে আছি।

মা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন
আমার সাথে ও তুই মিথ্যা বলতে আসিস। আমি জানি তোর অন্য কিছু একটা হয়েছে। আমার অনু কখনো পরিক্ষা কে ভয় পেতো না।আর এই অনু কে এখন আমি চিনতেই পারি না।

তুমি যা ভাবছো তা নয় আম্মু।

আমাকে শিখাতে আসিস না। তোর বয়স টা আমি ও পার করে আসছি।শুন সব মানুষ কিন্তু জীবনে থাকার জন্য আসে না। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের জীবনটাকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য ও আসে। মানুষ পরিবর্তনশীল।সবাই একটা সময় না একটা সময় ঠিকই পরিবর্তন হয়। তুই ও তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখ। নিজেকে পরিবর্তন করতে শিখ। নিজেকে এমন করে প্রতিষ্ঠিত কর আজ যারা তোকে আঘাত দিয়ে চলে গেছে তারা একদিন তোকে দেখে আফসোস করে।

অনু মন দিয়ে মায়ের সব কথা শুনছে।হাত দিয়ে প্লেটের ভাত গুলো নাড়ছে শুধু খাচ্ছে না। এই একটা মানুষ যাকে কিছু বলতে হয় না।(লিজা মনি)নিজে থেকেই সব কিছু বুঝে যায়।আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়।তাই বুঝি এই মা নামক মানুষটার এতো সম্মান দিয়েছেন মহান আল্লাহ তায়ালা নিজে।

ভুল কারো জন্য নিজের জীবন নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। ভুল সবাই করে। মানুষ মানেই ভুল। কাল তো ঢাকায় চলে যাবি?

হুম।

ঢাকায় গিয়ে মন দিয়ে পড়ালেখা করবি।পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হবে। নিজেকে গড়তে হবে। তোর জীবনের এখন ও অনেক কিছু বাকি। খেয়ে নে। এই ভাবে নিজের ক্ষতি করে কোনো লাভ নেই। একটা কথা সব সময় মনে রাখবি
জীবনের আঘাত গুলোই জীবন কে সুন্দর করে গড়ে তোলার রাস্তা দেখিয়ে দেয়। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়। মানিয়ে নিতে শিখ বুঝলি মেয়ে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করতে হবে।

মা আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলেন।অনু খাবার টা খেয়ে প্লেট ধুয়ে রেখে রুমে আসলো। (লিজা মনি)কাল সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে সে।তনু অনেক করে বলে ছিল তাদের সাথে যাওয়ার জন্য। কিন্তু অনু রাজি হয়নি।

রুমে এসে নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিতে লাগলো। দরকারি সব কিছু খুঁজে বের করে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।
তার পর বিছানায় বসে মোবাইল এর দিকে চোখ পড়তেই অনু মোবাইল হাতে নিয়ে ভাবলো

অনেক দিন তো ফেসবুকে যাওয়া হয় না।দেখি একটু ঘুরে আসি।ডাটা অন করতেই মেসেঞ্জারে টুং টুং শব্দে মেসেজ আসতে থাকে। একটা মেসেজ চোখে পড়তেই অনু তাচ্ছিল্যা হাসলো।

মাহির তাকে মেসেজ পাঠিয়েছে।
“অনু আমি সত্যিই দুঃখিত। তোমার সাথে এমন অন্যায় টা আমি না করলেই পারতাম। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি এটা যে এতো ভয়াবহ হয়ে যাবে। আমি হয়তো তোমাকে বুঝতে পারিনি। তুমি তো আমাকে বুঝতে। আমি তনু কে সত্যি ভালোবাসি। এই কয় দিনে আমি তা বুঝেছি তনু কে ছাড়া আমার এক মুহূর্তও চলবে না। আমাদের মাঝে যা হয়েছে তা ভুলে যাও। তনু কে কখনো এই সব জানতে দি ও না প্লিজ।(লিজা মনি)যদি আমাকে ভালোবাসো তাহলে কখনো আমার সুখ নষ্ট করার চেষ্টা করো না প্লিজ। পারলে আমাকে মাফ করে দিও।”

অনু মাহিরের মেসেজের রিপ্লাই না দিয়ে ওরে ব্লক করে দিল।

চাইলেই বলতে পারি অনেক কিছু। ভুলে যাওয়া এতো সহজ নয়।মায়া কাটানো এতো সহজ বিষয় না।মে কারো মায়ায় একবার আটকে গেছে সেই বুঝবে এই মায়া জিনিস টা কতো খারাপ।

তনুরা ঢাকায় পৌঁছে মায়ের কাছে কল দিল।মা কল রিসিভ করে তনুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলেন।

তনু অনুর সাথে কথা বলতে চেয়ে ছিল কিন্তু অনু কাজের বাহানা দিয়ে কথা বলে নি। তনুর সাথে কথা বলতে গেলেই তনু মাহিরের প্রশংসা শুরু করে দিবে।মা অনুর একদম সহ্য হয় না।তাই তনু কে এভয়েড করার চেষ্টায় আছে অনু।

রিফা অনুকে অনেক গুলো কল টেক্সট দেওয়ার পর ও অনু রিপ্লাই করেনি।বরং রিফা কে ব্লক করে রেখেছে।অনু সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন ঠকবাজ ফ্রেন্ডদের সাথে কোনো সম্পর্কই আর রাখবে না সে।
যাদের সে এতো কাছের মানুষ মনে করতো আসলে তারাই মে এতো বড় ধোঁকা দিবে ভুলে ও ভাবেনি সে।

পরেরদিন সকাল ৬ টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় অনু। বাসের মধ্যে জানালার পাশে না বসলে হয় না তার।তাই জানালার পাশের সিট টিকেট কেটে নিলো সে।

বাসে উঠে নিজের সিটে অন্য একটা ছেলেকে দেখে মেজাজ বিগড়ে গেলো তার। ছেলেটা জানালার ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে কিছু একটা করছে।তাই তার মুখ দেখা যাচ্ছে না।

এই যে ভাইয়া এই সিটটা আমার।কাইন্ডলি আপনি যদি আপনার সিটে গিয়ে বসতেন আর আমার সিট আমাকে দিতেন তাহলে খুব উপকার হতো।

ছেলেটা জানালা থেকে মাথা বের করে অনুর দিকে তাকাতেই অনুর চোখ গুলো বেশ বড় হয়ে গেল।
সে অবাক হয়ে বললো
আপনি এখানে কি করেন?

ছেলেটা ও অবাক হয়ে বললো আমি তো ঢাকায় যাচ্ছি একটা কাজে। আপনি ও কি ঢাকায় যাচ্ছেন নাকি?

হুম আমার ভার্সিটি তে পরিক্ষা আছে তাই যাচ্ছি।

ওহ তাহলে তো ভালোই হলো দুজনে একসাথে যেতে পারবো।

এখন আমার সিট থেকে সরুন।

তুর্য উঠে এসে অনু কে অনুর সিটে বসতে দিল।অনুর পাশের সিট টাই তুর্যর।অনু সিটে বসে যাওয়ার পর তুর্য অনুর পাশে বসতে গেলে অনু চিল্লিয়ে বলে

এই এই ভাই আপনি আমার পাশে বসছেন কেন?

ভাই ডেকে দিলো তো সব শেষ করে হায় কপাল।বিড়বিড় করে বললো তুর্য।
পকেট থেকে টিকেট বের করে অনুর দিকে বারিয়ে দিয়ে বললো এই যে চোখ খুলে হাতে নিয়ে ভালো করে দেখেন। আপনার পাশের সিট টাই আমার।

অনু বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বললো আবার এক ঝামেলা।সারা রাস্তায় কানের কাছে বক বক করে যাবে।উফ ভাল্লাগে না।

চলবে,,, 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here