তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_০৮

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_০৮

.
🍁
ভার্সিটি মাঠে বসে আছে আমি, একা বসে আছি এমনটা নয় আমার সাথে রয়েছে আমার পঞ্চ বান্ধবীরা, সবাই এক ঝুলি ভারপুর চিন্তার নিয়ে গালে হাত রেখে গোল করে মন্ত হয়ে বসে আছে মাঠের এক কোণে,,,
আমাদের সবার এতো এতো চিন্তা ভাবনায় প্রধান কারণ হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে, আমাদের ভার্সিটিতে পহেলা বৈশাখের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত করা করা হবে, আর এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বাঁধতা মূলক কিছু না কিছু করতে হবে এটা ভার্সিটি কমিটি সদস্যরা জানিয়ে দিয়েছেন, সদস্যদের এমন ঘাপাটে ডিসিশনে আমারা ষষ্ঠ বান্ধবীরা ফেঁসে গেলাম ব্যাপক ভাবে, কমিটি সদস্যদের ডিসিশননে ঘূর আপত্তি আমাদের, কারণ সবার মাঝে সব গুণ থাকলেও আমাদের গুণে কৌঠা একদম শূন্যে তালিকায়, তাই সবাই সবার গুণ গুলো প্রকাশ করা চেষ্টায় থাকলেও আমাদের চেষ্টা শূন্যে তালিকা পরে আছে, কারণ গুণ থাকলে প্রকাশ করা যায়। কিন্তু না থাকলে কেমনে কি? আকাশ থেকে তো আর গুণ টপকে পরবে না আমাদের মাঝে, যেটা দিয়ে আমার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত করে বেঁচে যাব হহ।

.

আমি আর আমার পঞ্চ বান্ধবীরা মিলে বিগত দুই দিন ধরেও কোনো গুণ খুঁজে পাচ্ছি না আমাদের মাঝে,
কি গুণ প্রকাশ করা যায় সেটা নিয়েই আমাদের এতো এতো চিন্তা ভাবনায়,, অবশেষে আমরা সবাই মিলে
আজ ভার্সিটি মাঠে বসে বিগত এক ঘন্টা যাবত বসে বসে চিন্তা ভাবনায় করছি কি করা যায়,,,, আমাদের এতো এতো চিন্তা ভাবনায় মাঝেই পাশ থেকে রুপা বলে উঠে,,,

.
—” দোস্ত নাচ করলে কেমন হয় রেহ,,,

.
রুপার এমন কথায় সবাই চোখ তুলে ওর দিকে তাকায়, রুপার কথায় কেউ কোনো রকম হেলদোল হলও না, তাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবাই, তখনই পাশ থেকে শিলা আমাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,,

.
—” দোস্ত এই গুণটা কিন্তুু খারাপ না, নাচটা মনে হয় আমাদের সবার দ্বারা হবে কি বলিস সবাই,,,

.
শিলা রুপার কথায় সায় জানাতেই আমার কপাল কুচকে এলো, ” নাচ ! নাচের বিষয়টা খারাপ লাগছে না আমার কাছে তবে বাকিরা কি বলে জানার জন্য সবার দিকে এক পলক তাকায়, ওদের ফেস দেখে আমি যতটা বুঝতে পারছি ওরা ও আমার সাথে সাথে ব্যাপক ভাবে কনফিউজড নাচের বিষয়টা নিয়ে, সবার এতো এতো কনফিউজডন্সের লেবেলটা দুগুণ বাড়িয়ে দিতে পাশ থেকে সাজি বলে উঠে,,,

.
—” হই আমরা করবো নাচ, নাচের ‘ন’ বুঝি না। আট ‘চ’ তোহ বাদেই দিলাম স্টেজে ওঠে করবোটা কি শুনি।

সাজির এমন কথা শুনে প্রকাশিত করতে চাওয়া গুণটি মূহুর্তেই চাপা পরে যায় এক ঝুলি নিরাশতায়, আমাদের এমন নিরাশ হতে দেখে কনফিডেন্সের সাথে মাহি বলে উঠে,,,,,

.
—” দোস্ত যা হবার হবে। নাচটাই এবার ফিক্সট কর। এখন আর কিছুই করার নেই আমাদের। শূন্য তালিকা থেকে কিছু করে বাঁশ খাওয়াটা অনেক ভালো। দেখ আমাদের মধ্যে বিশেষ কোন গুন নাই তাই আমরা আর না পারি সবাই একসাথে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে নাচতে পারবো আমার মনে হচ্ছে। আর সেটাই হবে নাচটা ফিক্সট সবার জন্য।

.
মাহির এমন এমন কনফিডেন্সে সাথে বলা কথায় মূহুর্তেই আমরা অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠি কারণ কিছু না করে বাঁশ খাওয়ার চেয়ে। কিছু করে বাঁশ খাওয়ায় শ্রেয় তাই আমরা বাকি পঞ্চ বান্ধবী মিলে মাহির কথায় সায় জানায়, আর যায় হোক নিজের গুণ প্রকাশ করতে হবে সবার সামনে তাই মনোযোগ দিয়ে নাচ প্র্যাক্টিস করতে হবে,,,,

.

.

🍂
ড্রয়িংরুমে ঘুরঘুর করছি আমি, অকারণেই এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি। আসলে কোনো রকম কাজ খুঁজে পাচ্ছি না তাই গম্ভীর ভাব নিয়ে চোখ টান করে সবাইকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বারবার দেখছি, গিলে খাওয়া টাইপ এমন একটা ভাব যেন কেউ ভুল করলে আমি তাঁকে মূহুর্তেই গিলে খাব ইউথ আউট সস , আমাকে এমন করে তাকাতে দেখে পাশ থেকে আম্মু ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,,,,

.
–” এই তোর কি কোনো কাজ নাই এভাবে ঘুরাঘুরি করছিস কেন হ্যাঁ?

.

আমি আম্মুর এমন কথায় আমি ঘাড় ঘুরিয়ে আম্মু দিকে তাকায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে, পরে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর মুখে ভাব নিয়ে বলে উঠি,,,

.
—-” তোমাদেরকে দেখছি ঠিক ঠাক ভাবে কাজ করছো কিনা?

.
আমার এমন কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে আম্মু আমার, আর সেই তেলেবেগুনে ভাবটা নিয়েই আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,

.
—” আচ্ছা! আমাদের কাজ দেখতে এসেছিস তুই। সারা দিন তোকে দিয়ে আমি একটা পাতাও ছেঁড়াতে পারি না। আর তুই এসেছিস আমাদের কাজের হিসাব নিতে।

.

আম্মুর এমন কথায় কপাল কুঁচকে গেল আমার, আজব পাবলিক কাজকাম না করে বসে বসে পাতা ছিঁড়তে হবে আমাকে। পাতা ছিঁড়বো? এতো ব্যস্ত মানুষ আমি আর আমাকে বলছে পাতা ছিঁড়তে কেমন পাবলিক। আর যদি আমার পাতা না ছেঁড়া নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা হয়। তাহলে আমাকে আগে বললেই হতো আমার ব্যস্ত সময় থেকে কিছু সময় বের করে নাহয় উনার জন্য পাতা ছিঁড়তাম বসে বসে। আমি এমন সব চিন্তা ভাবনায় করেই আম্মু দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠি……

.

—” কাজ না করে বসে বসে পাতা ছিঁড়তে হবে, বলেই তো আমি কাজ করি না এতোদিন ধরে। বুঝি না আমি তারপরও কেন তুমি বারবার বলো আমাকে। আচ্ছা যখন তুমি এতো করে বলছো, তাহলে তোমার গাছের সবকটার পাতা ছিঁড়ে নিয়ে আসবো আমি তোমার জন্য। তুমি টেনশন করো না কেমন,,

.
আমার এমন কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে আম্মু আমার। সাথে আমাকে রাগ দেখিয়ে উচ্চ স্বরে বলে উঠে,,

.
—” এই একদম আমার গাছের দিকে নজর দিবি না তুই , তোর জন্য আমি একটা গাছও ঠিক করে রাখতে পারি না,, তুই কি ঠিক করে রেখেছিস কখনো মানুষ হবি না হ্যাঁ,,

.
আম্মু কথা শুনে আহত হলাম আমি, আমাকে মানুষ মনে হচ্ছে না আম্মু, আল্লাহ তাহলে আমি কে,, আচ্ছা আমি এলিয়েন নয়তো, হ্যাঁ আমি এলিয়েন হয়ে গেছি, এই জন্য তো আম্মুর আমাকে মানুষ মনে হচ্ছে না,,, ইশশশ আমি এলিয়েন আহা কি সুখ আমার, আচ্ছা আমার মাঝে কি এলিয়েন বিষয়ে কোনো জাদু টাদু চলে আসলো নাতো,,, কথাটা ভাবতেই আমি চমকে উঠি, হাই! হাই! আমি তো তাহলে সত্যি সত্যিই মহা এলিয়েন হয়ে গেলাম। আমি এলিয়েন হয়ে গেলাম কথাটা ভাবতেই খুশিতে মন নেচে উঠে মূহুর্তেই আর আমি সেই নেচে উঠা মনটা নিয়ে বুক ফুলিয়ে ভাব নিয়ে এক পলক ভাবি আর আব্বু আম্মুকে দেখে ভাব নিয়ে বলে উঠি,,,

.
—” এলিয়েনরা কখনো মানুষ হতে পারে না,,

.
আমার এমন কথায় আম্মু ও ভাবি মূহুর্তেই কপাল কুঁচকে এলো আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আম্মু আমার বলে উঠে…….

—” এখানে এলিয়েন আসলো কথায় থেকে?

.
আম্মু এমন কথায় আমি ভাব নিয়ে বলি……

—” কেন সামনেই তো দাঁড়িয়ে আছি আমি?

.
আমার এমন কথায় পাশ থেকে ভাবি আবাক হওয়া সুরে বললো……

.
—” তুই এলিয়েন হলি কবে থেকে,,,

.
ভাবিকে আবাক হতে দেখে আমি আরও দিগুণ ভাব নিয়ে বুক ফুলিয়ে বলে উঠি…….

—” যবে থেকে তোমাদের আমাকে মানুষ বলে মনে হচ্ছে না। ঠিক তখন থেকেই আমি সিওর হলাম আসলে আমি মানুষ হতেই পারি না। আমি একটা এলিয়েন। আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল এতো গুণ সম্পূর্ণ মেয়ে মানুষ হতেই পারে না। সবাই আমাকে বলে আমি নাকি ইউনিক পিস। একদম আলাদা টাইপের। আমি তখন বুঝতে পারিনি কিন্তু আজ আমার কাছে সবটা পরিস্কার। তুমি বলো আমাকে কি করতে হবে? আমি যেহেতু এখন এলিয়েন হয়ে গেছি তাই আমার আরও বেশি শক্তি নিশ্চয়ই সঞ্চয় হয়েছে। তাই এখন আমি সেই শুলো সবার সামনে প্রকাশ করতে চাই,,,

.
আমার কথায় আম্মু মূহুর্তেই বোকা বনে যায় আর সে বোকা ফেস নিয়ে আমাকে বলে উঠে,,,,,

.
—” আমি বলাতেই তুই ওমনি এলিয়েন হয়ে গেলি?

.
—” হ্যাঁ,, তুমি তো আমার এলিয়েন হওয়া রুপটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে আজ। আমার এতো গুণ আমি কোথায় রাখবো বলতো, দাড়াও আমি তোমাকে আমার নতুন এলিয়েন রুপের শক্তিটা প্রদশন করছি,,,

.
কথা গুলো বলেই আশেপাশে চঞ্চল দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজে চলছি যেটার মাধ্যমে আমি আমার এলিয়েন হয়ে বিষয়টা তুলে ধরতে পারবো, সাথে আমি আমার নতুন শক্তি গুলো প্রকাশ করতে পারবো,, এমন সব চিন্তা ভাবনায় মাঝেই চোখ পড়লো ডয়িংরুমের কর্ণারে রাখা ফুলের টপের ওপর, আমি দ্রুততার সঙ্গে গিয়ে ফুলের টপটা হাতে নিয়ে ওপরে তুলতেই পিছন থেকে আম্মু চিৎকার করতে করতে বলতে থাকে…

.
—” মায়া এটা ভাঙ্গিস না, তোর শক্তি দেখা হয়ে গেছে আমার, মায়াহহহহ মায়াআআআআ,

.
ঠাস আম্মু বলতে বলতে আমি ঠাস করে ফুলের টপটা ফ্লোরে আচার মেরে ভেঙে দিলাম, নিজের শক্তি প্রমাণ দিতে পেরে খুশিতে চকচক করে উঠি আমি, আর সেই খুশি হওয়ার ভাব নিয়ে হাসি মুখে পিছনে ফিরতেই চোখ পরলো আমার আম্মু রাগী হওয়া ফেসটা দিকে, আম্মু রাগে ফোঁস ফোঁস করছে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমি আম্মুকে এমন করে থাকাতে দেখে মূহুর্তেই চুপসে যায়, আমি আরও কিছু বলতে যাব তার আগেই আম্মু পাশ থেকে ঝাড়ু হাতে দৌড়ে আসছে আমার দিকে, আমি আম্মুকে ঝাড়ু হাতে নিতে দেখে ভৌ দৌড় লাগায় বাহিরের দিকে আমাকে আর পাইকে,,,,,

.

.

(ফোনে চার্জ নেই, তাই দ্বিতীয় পার্টটা দিতে লেট হবে, আপিরা গল্পের জন্যে কেউ অপেক্ষা করো না সবাই ঘুমিয়ে পড়ো সকালে উঠে দ্বিতীয় পার্টা পড়ে নিও। ধন্যবাদ সবাইকে,,,,,,)

.

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here