#জেদ,পার্ট৪০&শেষ
(A Conditional Love Story)
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
-তোমার সো কল্ড বিয়েতে আমি উপস্থিত ছিলাম না।তুমি ভেবেছিলে আমি মুভ অন করেছি।No babe I was there each and every second. বিয়ের নাটকের টাইমটুকু আরাজ পুরোটাই গেস্ট দের মাঝে ব্যস্ত হয়ে যায়।অন্য কোন দিকে তার খেয়াল ছিল না।সেই সুযোগে আমি ওর ফোন থেকে সব ইনফরমেশন কপি করে নেই।কিন্তু নাম্বার আউট অফ রিচ হওয়ায় কোন কিছুই ট্রাক করতে পারিনি৷
তোমার বিয়ের রিসিপশনে আমি তোমাকে ওপেনলি সবার সামনে কিস করেছিলাম।তোমার অড লাগেনি তখন?যেই ছেলে একান্তেও কখনো অনুমতি ছাড়া তোমাকে স্পর্শ করে নি সে ভরা মজলিশে তোমার মান ছোট করবে?Nahhh….I’m not like that. আমি ইচ্ছে করেই সেদিন তোমাকে কিস করেছিলাম যাতে আরাজ তার লিমিটেশন জানতে পারে।তোমাকে টাচ করতে গেলে সেই মোমেন্ট বার বার তার মুখে চড় দিয়ে যাবে।
তোমার বিয়ের দুই দিন পরেই আমি আমেরিকা চলে যাই। যখন তুমি আমাকে কল দিচ্ছিলা ঠিক তখন আমার ফ্লাইট টেক অফ করছিল।সেইজন্যে তুই আমাকে রিচ করতে পারোনি ।ফোন সুইচ অফ পেয়ে তুমি অভিমানের জাল বুনে বসে গেলা।কিন্তু আমি চাইলেও তখন তোমাকে সামাল দিতে পারছিলাম না ।কারন আমার সবটুকু ফোকাস ছিল আরাজের উপর।and guess what আমেরিকা গিয়ে আমি দেখা পাই আসল আরাজের।
এতটুকু বলে থামল আরদ্ধ ।ওর সব কথা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।কি বলছে কিছু বুঝছি না।শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে আছি ওর দিকে।আমাকে উতসুক চোখে তাকাতে দেখে আরদ্ধ বলে উঠল
-বছর দুই এক আগে একটা প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটা পার্ট টাইম জব নিয়ে পাড়ি জমায় আমেরিকায় ।স্টুডেন্ট ভিসায় আসার কারনে থাকা খাওয়া সহ যবতীয় খরচ চালাতে হিমশিম খায়ে যাচ্ছিল ।ফলাফল মোটা অংকের টাকা লোন হয় তার ।ভেবেছিল পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটা জব নিলেই সব ঝামেলা মিটে যাবে।কিন্তু চাইলেই তো আর সব হয় না।আরাজ যার কাছ থেকে টাকা লোণ করেছিল সে ছিল একজন গ্যাংস্টার।নানা রকম বাহানা দেখিয়ে আরাজ তখন মোটা অংকের ঋন এ হাবুডুবু খাচ্ছে।পাওনাদার তাকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্যে সময় এর বাধ ধরিয়ে দিয়েছে।আরাজ উপায় না পেয়ে বাসায় টাকা চেয়ে পাঠায় ।বাট আরাজের বাবা তখন মাত্র রিটায়ারড করেছেন ।পেনশনের টাকা তো হাতে আসা দূরে থাক বেতনের টাকাটাও ঠিকভাবে পাচ্ছিলেন না।কাহিনিতে টুইস্ট নেওয়া শুরু হয় এই জায়গা থেকেই ।
আরদ্ধ একনাগারে কথা বলে যাচ্ছে।আমি নির্বাক শ্রোতার মত শুনে যাচ্ছি সব ।কিছু কথা বুঝতে পারছি কিছুর বা কুল কিনারা খুজে পাচ্ছি না।আরদ্ধ না থেমে বলতে শুরু করল
-আরাজের ফ্যামিলি তখন অনেক বেশি ফাইনান্সিয়্যাল ক্রাইসিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল।তোমার বাবা আর আরাজের বাবা ভালো বন্ধু ছিলেন ।তাই আরাজের বাবা বিনা শংকোচে তোমার বাবার কাছে টাকা ধার চেয়ে বসেন ।তোমার বাবা শুরুতে না করলেও বন্ধুর আবদার ফেরাতে পারেন নি ।টানা দুই তিনবার টাকা ধার দেওয়ার পর তোমার বাবা টাকা ফেরত চান।কিন্তু আরাজের ফ্যামিলি তখনো মাঝ দরিয়ায় ভাসছে।তোমার বাবা এবার যেন বেকে বসলেন।টাকা ফেরত না পেয়ে আরাজের বাবাকে বেশ কিছু কথা শুনালেন +অপমান করলেন।As a result আরাজের বাবা অসুস্থ হয়ে পরেন।ছোট খাটো স্ট্রক ও করে বসেন। তোমার বাবা এসবের কিছুই জানত না কারন তখন তার সাথে আরাজের বাবার যোগাযোগ হতো না বললেই চলে। ।আরাজের বাবা চেয়েছিলেন তোমার বাবার সাথে সম্পর্কটাকে আগের মত স্বভাবিক করতে চেয়েছিলেন ।তাই তিনি তোমার সাথে আরাজের বিয়ের প্রস্তাব দেন তোমার বাবাকে ।আরাজের পক্ষে বিয়ে করে বউ কে সামলানোটা তখন ছিল দুসাধ্য ।কিন্তু তোমার সম্পর্কে জানার পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজী হয়ে যায় সে।তুমি তখন মোটা অংকের স্যালারীর একটা জব করো ।তোমাকে বিয়ে করলে আরাজের মানি ক্রাইসিস মিটে যাবে ইজিলি ।কিন্তু মাঝে বাধ সাধলাম আমি ।তোমার বাবা শুরুতে না করেন ।কিন্তু পরে রাজী হয়ে যান।তোমার বাবা সিদ্ধন্তে অটল হন আমার ব্যাকগ্রাউন্ড জানার পর।ব্যাস আরাজের কাজ ইজি হয়ে গেল ।
-কিন্তু আমি তো জব ছেড়ে দিয়েছিলাম।ইভেন আরাজ আমাকে জবের ব্যাপারে কখনো ফোর্স ও করেনি।
আমি বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ।
-কারন সে আরাজ ছিলই না ।
-মানে?সে আরাজ ছিল না?তখন থেকে একটা কথাই শুনছি। আরাজের সাথে আমার বিয়ের হয় নি ।আমি যার সাথে ছিলাম সে আরাজ না।তাহলে এতদিন যে মানুষটাকে আরাজ বলে জেনেছি সেই তৃতীয় ব্যক্তি কে?আর আসল আরাজই বা কোথায়?
আরদ্ধ কোন তাড়াহুড়া দেখালো না ।হাসল শুধু ।
-ইনা তোমার মনে আছে তুমি আমাকে না জানিয়ে আরাজের সাথে প্রথম দেখা করতে গিয়েছিলে?
-হ্যা মনে আছে।আমি তোমাকে জানাইনি তুমি স্ট্রেসড হয়ে যাবে ভেবে।
-কৈফিয়ত দেওয়ার অভ্যাস্টা তোমার গেল না তাই না?তুমি কি করবা সেটা সম্পূর্ন তোমার উপর ।তুমি যা করেছ বুঝে শুনে করেছ।সো সেটার জন্যে কাউকে কৈফিয়ত দিবে কেন?
আমি আরদ্ধর কথার জবাব দিলাম না কোন।শুধু চেয়ে থাকলাম তার পানে।
.
.
-নিউ ইয়র্কের নামকরা ড্রাগ ডিলার Jackey Smin.আর দশজন মানুষের মত সেও গ্রাজুয়েশন শেষ করে জব খুজছিল ।কিন্তু সে কোথাও জব না পাওয়ায় দুই মাস পরে তার গার্লফ্রেন্ড ব্রেকাপ করে চলে যায় ।কষ্ট ভুলাতে ছেলে ডুবে যায় নেশার জগতে ।সেখান থেকেই তার কালো জগতে পদাচরন। প্রতি বছর অনেক ছেলেমেয়েই পড়াশুনার জন্যে আমেরিকায় যায় ।শুরুতে সে তাদের ভালো মুনাফায় টাকা ধার দেয় ।যারা টাকা শোধ করে দেয় তাদের সাথে যোগাযোগ সেখানেই শেষ করে দেয় ।কিন্তু আরাজের মত যারা তার টাকা শোধ করতে ব্যর্থ হয় তাদেরকে সে তার ড্রাগ ডিলিং এর পেশায় নিয়ে আসে।ছেলেরা ড্রাগ বিজনেস করেই বেচে যায় ।কিন্তু মেয়েদের বেলায় এডিশনাল হিসেবে হিউম্যান ট্রাফিকিং এন্ড প্রস্টিটিউশন ও আছে।যেসব মেয়ের বাহ্যিক সৌর্ন্দয্য সহজে নজর কাড়ে তাদের উচা দামে বিক্রি করে দেয় ।বাকি দের জায়গা হয় ব্রোথেলে।
এতটুকু বলে থামল আরদ্ধ ।ওর হাত কাপছে ।ব্লাড সার্কুলেশন বেড়ে
গিয়েছে ।ওর অস্থিরতা খুব ভালোভাবেই টের পাচ্ছি আমি ।
-আরদ্ধ !!!এই ছেলেটাই কি আরাজ সেজে আমার সাথে ছিল?
আরদ্ধ চোখ তুলল না।ওর মাথাটা এখনো ঝুলানো ।শুধু হালকা করে নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দিল সে।
-ইনা তোমার সাথে রেস্টুরেন্টে সেদিন আরাজ না জ্যাক দেখা করতে এসেছিল।
-তাহলে আরাজ?আর সে বাংলা কিভাবে বলতে পারে?
-শুধু বাংলা না।চায়নিজ ,জাপানিজ কোরিয়ান সহ বেশ কয়েক ধরনেরই ভাষায় সে দক্ষ তার পেশা সূত্রে।ড্রাগ ডিলিং এর কাজে আরাজ খুব বেশি এক্সপার্ট ছিল না ।টানা দুইবার পুলিশের হাত থেকে ধরা খেতে গিয়ে বেচেছে সে ।তাই সে ঠিক করে তোমাকে বিয়ে করে আমেরিকা আনে তাদের হাতে হস্তান্তর করে সব ঝামেলা মিটীয়ে দিবে।কিন্তু বাধ সাধে জ্যাক।He didn’t believe Araz.একবার দেশে ফিরে গেলে আরাজকে ব্যাক পাওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে এটা খুব ভালো করেই জানতো জ্যাক।তাই সে ঠিক করল আরাজের বেশে সে যাবে ।হলোও তাই ।কিন্তু ঝামেলা হলো তুমি যেদিন তার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে গেলে। ঠিক এই জায়গায় মেইন টুইস্ট টা ঘটে।তোমার আমার লাইফের এই একটা বছরের দূরত্ব ঠিক এই মুহুর্তেই যেন নির্ধারন হয় ।
.
.
আমি মন দিয়ে আরদ্ধর সব কথা শুনছি আর কল্পনার জাল বুনছি।হঠাত করে আরদ্ধর এমন কথা শুনে ঘোর ভাংল আমার ।বেশ অবাক হলাম ওর কথা শুনে ।কিন্তু হুদিশ না পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-কেন?কী হয়েছিল তখন !
আরদ্ধ এতক্ষন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।আমার প্রশ্ন শুনে আমার সামনে এসে বলল।আমার ডান হাতটা টেনে নিয়ে দুই হাতে মুঠো করে ধরল ।
-জ্যাক প্রথম দেখেই পছন্দ করেছিল তোমাকে।ইভেন আমাকে সে অফার করেছিল আমি যেন তোমাকে ছেড়ে দি ।আমাকে মোটা অংকের টাকার লোভ দেখায় ।ঠিক তখনো আমার ব্যাকগ্রাউনশ সম্পর্কে জানত না সে।তাই ইচ্ছা করেই আমার সম্পর্কে হালকা পাতলা আইডিয়া দেই আমি ওকে।উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পেরে সে ফ্যামিলি প্রেসারাইজড শুরু করে।সবাই ভেবেছিল যে আরাজ আমেরিকা ব্যাক করেছিল।কিন্তু ঠিক সে সময় নিউ ইয়র্কে ওদের আড্ডায় পুলিশ এর রেইড পরে আর তার সব সংগীরা ধরা পরে।তাই সে ইচ্ছা সত্ত্বেও আমেরিকা ফিরতে পারছিল না।এই সময়টাকেই সে কাজে লাগিয়ে দুই ফ্যামিলিকে রাজী করিয়ে বিয়ের নাটকটা সাজায় ।কিন্তু এত কিছু করতে গিয়ে সে ফতুর প্রায় ।টাকা পয়সা সব শেষ তার ।ঠিক এই সময়ে আমি তাকে আমার কোম্পানিতে জব অফার করি ।জ্যাক বাংলাদেশের নিয়ক কানুন সম্পর্ক এ জানলেও ঠিক ভাবে অভিহিত ছিল না সে।জাল সার্টিফিকেট আর রিজিউম বের করলেও পেপার ওয়ার্কে গ্যাপ থেকেই যায় তার ।আর ঠিক এই জিনিসগুলোকেই আমার সন্দেহকে গাঢ় করে ।
আরাজের সব কথা কেমন মিলেও অমিল থেকে যাচ্ছে আমার কাছে।কেমন জানি গুলিয়ে যাচ্ছে সব।
-তুমি জানতে জ্যাকের কথা?
-না জ্যাক সম্পর্কে আর তার ব্যাকগ্রাউন্ডের ফুল ডিটেইলস পাই আমি আমেরিকা গিয়ে ।যখন আমি আসল আরাজকে সামনা সামনি দেখি।তুমি তখনো দেশে ছিলে ।আরাজের সংসারের দায়িত্ব নিতে ব্যস্ত ।কিন্তু আরাজের মধ্যে কিছু না কিছু ঝামেলা ছিল এইটা আমি শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলাম ।
-তুমি সব জেনে বুঝেও একটা অজানা অচেনা ছেলের সাথে আমাকে রেখে গিয়েছিলে?ইভেন সব কিছু জানার পরেও আমাকে কিচ্ছু জানাও নি।একা ফেলে চলে গিয়েছিলে?
কান্না রাগ আর অভিমানে গলা জড়িয়ে আসছে আমার ।কান্নার দলা গলায় এসে বাধ পাকিয়ে যাচ্ছে।বড্ড বেশি অভিমান হচ্ছে ভালোবাসার মানুষ্টার উপরে।
আরদ্ধ বেশ বুঝতে পারছে আমি ওর উপর রাগ করেছি।ওর বিরুদ্ধে দানা দানা অভিমান জমছে আমার মনে।ঠোটে হাসি ঝুলিয়ে তাকিয়ে আছে সে আমার দিকে।হঠাত করে আমার হাত আচমকা টান দিল সে ।তাল সামলাতে না পেরে আমি গিয়ে পরলাম তার উপরে ।আরদ্ধ আলতো হাতে আমার কপালের উপর নেমে আসা অবাধ্য চুলগুলোকে সরিয়ে দিল।ঠোটের পাশে ঠোট ছুইয়ে বলল
-তোমার মনে হয় তোমাকে না দেখে আমি থাকতে পারব?যার হাসিতে আমার হৃদস্পন্দন চলে তাকে আমি ভুলে যাব?
আরদ্ধ বাম হাতে আমার গলা থেকে ওড়না টা সরিয়ে ফেলল ।ওর ঠোট আমার গলা বেয়ে ঘাড়ে গিয়ে নামল ।বুকের ঠিক মাঝামাঝি ঝুলে থাকা পেন্ডেন্টটাকে কিস করে বলল
-তোমার এই লকেটে জিপিএস আর সাউন্ড রিসিভার সেট করা ছিল ।তুমি যাই করতে যাই বলতে কোন কিছুই আমার জানার বাইরে ছিল না।অই বাস্টার্ড প্রথম যখন তোমার গায়ে হাত তুলেছিল আমি সেদিন ফ্লোরিডায় ছিলাম ।তোমার আর্তনাদ শুনে সেদিনই ছুটে এসেছিলাম ।কিন্তু আমি চাইলেও সেদিন তোমার সামনে আসতে পারিনি ।কারন তখনো আমার হাতে কোন প্রুভ ছিল না।
আরদ্ধ হয়তো আরও কিছু বলতে চাচ্ছিল ।কিন্তু ঠিক তখনই তার ফোনটা বেজে উঠল।
-Yes?
-….
-Yeah .It’s Arodhho Reowat.
-…
-Ok I’m coming.
-তুমি রেস্ট নেও আমি আসছি ।হু?
আরদ্ধ আমার কপালে চুমু একে বের হয়ে গেল।
.
.
পুরো শরীর জুড়ে এখনো হালকা ব্যাথা ।হাত পা নাড়াতে গেলেই যেন ব্যাথার তীব্রতা বাড়ছে।আরদ্ধর সব কথা কেমন জানি সিনেমার গল্পর মত মনে হচ্ছে আমার কাছে।সেই সিনেমার ক্রাইম থিমের ভিক্টিম আমি ।আরদ্ধকে ছাড়া এই এক বছর যেন নিশ্বাস নিতে পারিনি আমি ।ছেলেটা হিমোগ্লোবিনের মত মিশে আছে আমার ব্লাডে।তাকে ছাড়া বাচার কথা ভাবাটাও যেন অবান্তর আমার ।নিজের কল্পনার ঘোরে বিভোর আমি ।হঠাত করে কিছু একটা আওয়াজ ভেসে এল ।পাশ ফিরিয়ে দেখি সাইড টেবিলে আমার ফোন পড়ে আছে।ফোনটা ওপেন করতেই একটা নিউজ ভেসে উঠল
-A gangstar named Jackey Shan who has been in prison for last two weeks for drug dealing and human trafficking got bail today.
ওয়েট।এই সেই ছেলেটা না যে আমার সাথে এতদিন আরাজ সেজে ছিল?কিন্তু সে জামিন পেল কিভাবে?
আমার ভাবনায় ছেদ ঘটীয়ে আবার একটা ম্যাসেজ এল ফোনে।ভিডিও কল ইনিভাইটেশন।ওপেন করতেই থমকে গেলাম আমি ।
একটা গোডাউন ঘরে কেউ একজনকে বেধে রেখেছে।আর কিছু ক্ষন পর পর দুইজন লোক তাকে বেধরক পিটাচ্ছে।লোক দুজন কাউকে দেখ সরে গেল ।তৃতীয় এক জন এগিয়ে গেল হাতপা বাধা ছেলেটার দিকে।তার সাথে সাথে ক্যামেরা এঞ্জগেলও ওয়াইড হচ্ছে।ছেলেটা এগিয়ে গিয়ে তাকে ইচ্ছামত বেধরক মারতে লাগল ।
ওয়েট ।এটা আরদ্ধ না?আর অই ছেলেটা!!সে কি জ্যাক?আরদ্ধ পাষানের মত তাকে মারছে ।ওর চোখের মুখে রাগ উপচে পরছে ।যেন কাচা চিবিয়ে ফেলবে তাকে ।বেধেরাখা ছেলেটার নাক মুখ গড়িয়ে রক্ত পড়ছে ।জ্ঞান হারিয়েছে সে ।কিন্তু সে দিকে কোন খেয়াল নাই তার ।আরদ্ধ এখনো তাকে অনবরত মারছে।আর সহ্য করতে পারলাম না আমি ।জ্ঞান হারলাম নিমিষেই ।
.
.
চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করলাম আরদ্ধর বুকে।ছেলেটা পরম উষনতায় জড়িয়ে আছে আমাকে ।আমি তাড়াহুড়ো করে মাথাতুলে বললাম
-আরদ্ধ জ্যাক…
-He is dead Love.He dared to raise his hand on my love.তোমার গায়ে হাত তুলা তো দূরে থাক কেউ চোখ তুলে তাকালেও আমি তার চোখ তুলে নিব ।আমার লোকেরা ওর লাশের ব্যবস্থা করে ফেলেছে।তুমি চিন্তা করো না ।ওকে?
-আরদ্ধ!!!
-উম?
-বাবা মা?ওরা জানে?
আমার কথায় আরদ্ধ হালকা দম ফেলল ।
-তোমার বাবা মা সেদিন এয়ারপোর্টে গিয়েছিল ঠিকই ।কিন্তু ফ্লাইট এ চড়েন নি ।ইমিগ্রেশন এর আগেই আমার লোক গিয়ে তাদেরকে নিয়ে আসে এই বলে যে তোমাদের দুইজনের এপার্টমেন্ট এ আগুন লেগেছে।ব্যাস তারা দিক জ্ঞান ভুলে চলে আসে । আরাজ মাতাল অবস্থায় তোমাকে এক বিদেশী ক্লাইন্টের কাছে বিক্রি করতে ব্যস্ত ছিল তখন ।আমাকে দেখার পরেই আরাজ ভেবেছিল আমি তোমাকে নিতে এসেছি ।আর তুমি একবার হাত ছাড়া হয়ে গেলে আরাজ পথের ফকির হয়ে যাবে ।তাই সে তাড়াতাড়ি তোমাকে সেখান থেকে সরানোর ব্যবস্থা করে ।ঠিক এটাই চেয়েছিলাম আমি ।তখনি তাদের নিয়ে সেখানে হাজির হই আমি ।তোমার আর আরাজের বাবা মা নিজে চোখে সব কিছু দেখে ।আমি ভেবেছিলাম হয়তো সব সেখানেই শেষ হয়ে যাবে।but I was late.আরাজ ততক্ষনে হাই ডোজের ড্রাগ পুশ করে দিয়েছে তোমার শরীরে।আমি জাস্ট এসব কথা আর মনে করতে চাইনা ইনা প্লিজ ।আমি অনেক কিছুর পরে তোমাকে পেয়েছি ।কোন কিছুর বিনিময়ে আমি আর তোমাকে হারাতে চাই না।
আরদ্ধ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিল ।
.
.
সপ্তাহ খানেক কেটে গিয়েছে।এখন অনেকটা সুস্থ আমি ।আজকে আমার আর আরদ্ধর বিয়ে।আরদ্ধ টকটকে লাল একটা লেহেংগা দিয়েছে আমাকে বিয়ের জোড়া হিসেবে।চারজন মেকাপ আর্টিস্ট ঘন্টা খানেক ধরে সাজিয়েছে আমাকে।সাজগোজ প্রায় শেষের দিকে শুধ ওড়না টানা বাকি মাথায় ।এমন সময় কেউ দরজায় টোকা পড়ল।আমি ফিরে তাকাতে দেখি বাবা মা দাড়ীয়ে আছে ।তাদেরকে দেখা মাত্রই আমার চোখ ভরে আসল।চোখে পানি টলটল করছে।নিজেকে কোণ রকমে সামলে নিলাম আমি ।ঠোটে হাসি টেনে বললাম
-আরে তোমরা ।আসো প্লিজ।
বাবা মা এসে আমার সামনে বসলেন ।আমি হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলাম
-কেমন আছ তোমরা?এত দিন কোথায় ছিলে?আমি মিস করেছি তোমাদের ।
আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বাবা বলা শুরু করলেন
-ইনা তুই যখন ছোট ছিলি প্রায়ই অসুস্থ হতি ।আমি আর তোর মা পালা করে তোর পাশে থাকতাম ।তোর জ্বর হলে আমাদের অস্থিরতা বাড়ত।তুই ঘুমিয়ে গেলে আমরা অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে যেতাম ।আমরা চেয়েছিলাম এমন একটা ছেলের সাথে তোকে বিয়ে দিতে যে তোকে আমাদের মত ভালোবাসবে ।যত্ন নিবে।আফসোস আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম ।কিন্তু তুই করিস নি ।তুই তোর জন্যে বেস্ট টা খুজে নিয়েছিস ।তুই যখন হাসতাপালে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলি নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে আরদ্ধ তোর পাশে ছিল ।দিন রাত কোন কিছুই যেন তার হিসাবে ছিল না।তোর স্যালাইন মেডিসিনের টাইম টু টাইম খবর থাকে তার কাছে কিন্তু সারাদিনে সে এক দানা খেয়েছে কিনা তার খোজ নেই তার।আমার মাথা নষ্ট ছিল যে আমি এই ছেলেটাকে চিনতে পারিনি।আমার জেদের জন্যে তোকে এতকিছু দেখতে হলো ।পারলে আমাকে মাফ করে দিস প্লিজ ।
বাবার কথা জড়িয়ে আসছে ।মাথানিচু করে তিনি চোখের জল আড়াল দিচ্ছেন ।মা অলরেডি আচলে মুখ লুকিয়েছেন।আমি বাবার হাতদুটো টেনে নিয়ে বললাম
-বাবা জানো বিয়ের আগে আমি চেয়েছিলাম আরদ্ধর সাথে পালিয়ে যেতে।কিন্তু আরদ্ধ আমাকে রাজী করিয়েছিল যাতে আমি তোমার কথা শুনি ।তোমার মনে কষ্ট না দেই ।ও খারাপ না বাবা ।ও অনেক ভালো ।আমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে ছেলেটা।যা হয়েছে তাতে আমার কোন কষ্ট নেই ।আমি খুশি যে তুমি আরদ্ধকে মেনে নিয়েছ।তুমি শুধু দোয়া করো যেন আরদ্ধ সারাজীবন আমার পাশে ছায়া হয়ে থাকে ।
বাবা মাথা তুলে হাসিমুখে আমার মাথায় হাত বুলালেন ।
.
.
কিছুক্ষন আগে আরদ্ধ আর আমার বিয়ে শেষ হয়েছে।আরদ্ধ বেশ বড় সড় আয়োজন করেছে বিয়ের জন্যে ।মনে হচ্ছে দীর্ঘ সময় পর আমি যেন প্রান ফিরে পেয়েছি ।মনের মধ্যে অন্য রকম একটা শান্তি কাজ করছে।আমাদের রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।আরদ্ধ ভালো করেই জানে আমার রেড রোজ আর বেলি ফুল পছন্দ ।তাই পুরো ঘর জুড়ে বেলি ফুল আর গোলাপ ছড়ানো ।আর মাঝে মধ্যে স্ট্রব্রেরি ক্যান্ডেল জ্বালানো ।আমি সব কিছু ছাপিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালাম ।কিছুক্ষন পর পেছন থেকে দুটো হাত এসে আমাকে জড়িয়ে নিল।আরদ্ধ আমার খোপা খুলে চুলে নাক ডুবালো ।
-জানো আরদ্ধ তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই আমি আজকের এই রাতটার জন্যে অপেক্ষা করেছি ।ঠিক কবে তুমি আমাকে নিজের করে নিবে ।আমি সম্পূর্ন ভাবে তোমার হব ।
-কিন্তু সেটা তো অনেক আগেই হয়ে গেছে।আজকে শুধু লোক দেখানোর অনুষ্ঠানিকতা ছিল ।
-মানে?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম আমি ।
-তোমার আর আমার বিয়ে হয়েছে আজকে এক বছর চার মাস ।
-আরদ্ধ তুমি কি মজা করছ আমার সাথে?
-নোপ ।মোটেও না ।তোমার বাবা যেদিন আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন আমি সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম যে ঝামেলা ছাড়া তোমার আর আমার বিয়ের জন্যে তার মুখ থেকে কবুল বলাতে বেশ বেগ পেতে হবে।তাই আমি ম্যারিজ সার্টিফিকেট এ আগে থেকেই সাইন নিয়ে রেখেছিলাম ।
-বাট শুধু সাইন নিলেই বিয়ে হয় না আরদ্ধ ।আর ল কেন শুধু সাইন দেখেই আমাদের বিয়ে লিগ্যাল সার্টিফাইড করবে?
-ফাওয়াজ এরবিয়ে মনে আছে?আমরা সাক্ষি হিসেবে গিয়েছিলাম ওর বিয়ের।বাট ফাওয়াজের গার্লফ্রেন্ড আসতে দেরী করায় আমি তোমাকে বলেছিলাম চলো আমরা বিয়ের ট্রায়াল দেই ।ওদের জায়গায় আমরা থাকলে কি করতাম।তুমি ভেবেছিলে আমি মজা করছি ।তাই তুমি রাজী হয়ে যাও ।সেদিন সজ্ঞানে সবার সামনে তুমি পেপার সাইন করো এন্ড কবুল বলো ।So legally since that day you are my wife.
কথাটা বলেই আরদ্ধ কোমড় জড়িয়ে আমাকে কাছে টেনে নিল।ঘাড় ঝুকিয়ে বলল
-কি ভেবেছিলে?এত ইজিলি আমি তোমাকে ছেড়ে দিব ?যে মেয়েটাকে আমি প্রতিটা নিশ্বাসে ফিল করি তাকে আমি নিজে অন্যের বউ হওয়ার জন্যে রাজী করাব?Nahhh babe.তোমার বেলায় আমি প্রচন্ড স্বার্থপর ।আমি তোমার ভাগ কাউকে দিতে রাজী না ।Not even you babe.
কথা শেষ করে আরদ্ধ আমার গলায় মুখ গুজল । আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি আরদ্ধর দিকে।এই ছেলে আর কত সারপ্রাইজ দিবে আমাকে।এতদিন আমি ভাবতাম হয়তো আমি একাই তাকে এতোটা ভালোবাসি ।কিন্তু না এই ছেলে আমার চেয়েও অনেক গুন বেশি ভালোবাসে আমাকে।আরদ্ধর স্পর্শ পাগল করে তুলছে আমাকে।ওর ঠোট লাগামহীণ ভাবে আমার গলায় বিচরন করছে ।আমার শরীর মিশে আছে তার সাথে।আমি নিজেকে সামলে কোন রকমে বলে উঠলাম
-কিন্তু আমি তো জানতাম না বিয়ের কথা।যদি আমি বিয়েটাকে সিরিয়াস্লি নিয়ে……
আমার কথা শেষ করার আগেই আরদ্ধ আমার গলা চেপে ধরল ।ওর বাম হাত আমার কোমড় খামচে ধরেছে আমার ।ওর চোখ থেকে রাগের ফুলকি ঝরে পরছে।
-আর দুনিয়ার কোন কিছুর উপর আমার বিশ্বাস না থাকলেও I have full trust in my love.আমি জানতাম তুমি আমার জায়গা কখনো কাউকে দিবে না।আর যদি কিছু হতো still I don’t care.আমি তোমাকে ভালোবাসি।তোমার শরীর কে না।তুমি যেভাবে আছ যেমন আছ you’re mine .Just mine.No one can take you away from me.
এখন এটাকে জেদ ভাবো বা ভালোবাসা তুমি আমার ।ইনার সবকিছুতে শুধু আরদ্ধর অধিকার ।আল্লাহ ইনাকে বানিয়েছেন আরদ্ধকে পূর্ন করার জন্যে ।
আমি মাদকাসক্তের মত আরদ্ধর দিকে তাকিয়ে আছি ।বাইরের পূর্নিমার আলো এসে পরেছে তার চোখে মুখে।ছেলেটাকে যেন আরও মায়াবী লাগছে।আরদ্ধ কি বলছে সেদিকে খেয়াল নাই আমার ।আমার চোখ পড়ে আছে ওর ঠোট দুটোর দিকে।আমি আরদ্ধর সব কথাকে উপেক্ষা করে ওর ঠোটে ঠোট ডুবালাম ।আরদ্ধ সাথে সাথে আমাকে বাহুডোরে জড়িয়ে নিল ।
সব জেদ আর শর্তের উর্ধ্বে ছেলেটাকে ভালোবেসেছে আমাকে।আমার সবকিছুকে নিজের করে নিয়েছে।খুব করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে তাকে।আজ থেকে আমাদের ভালোবাসা কোন জেদের মুখাপেক্ষী না।কোন শর্তের জালে আবদ্ধ না ।আমার আর আরদ্ধর ভালোবাসার উপর আর কেউ কোন প্রশ্ন তুলবে না।
আরদ্ধ আচমকা আমাকে কোন তুলে নিল ।আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর সবটুকু ভার ছেড়ে দিল আমার উপর।ওর ঠোট এখন আমাকে স্পর্শ করতে ব্যস্ত ।কোন কিছুর খেয়াল নেই তার ।যেন হারিয়ে গেছে আমার মধ্যে।আমিও আর দেরী করলাম না ।আরদ্ধর ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে ডুবে যেতে লাগলাম এক অন্য গভীরতায় ।
সমাপ্ত।