#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–১০,১১
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
১০
জায়ান দিকপাশ না ভেবে নৌকা থেকে লাফ দেয়!দু-মিনিটের মাথায় পদ্ম ওঠে আসলেও জায়ানের কোন হদিস নেই!
পদ্ম ওঠে জানতে পারলো জায়ানের কথা।এই কয়েক মিনিটের মধ্যে কি হয়ে গেল, বাকিরা সবাই তাজ্জব বনে গেল। পদ্ম হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
–“কাকা উনাকে খুঁজে বের করুন, উনি সাঁতার জানেন না!
–“মাঝি ইব্রাহিম দ্রুত পানিতে নেমে খুঁজতে থাকে। সাথে সুমন ও নামে।
এদিকে পদ্ম ও খুঁজে বেরাচ্ছে। জেসি দপ করে নৌকায় বসে পড়ল। অনিতা জামিয়া অর্পিতা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। পাশেই একটা ছোট বাজার আছে, এরকম চিৎকার চেঁচামেচি শুনে মানুষজন দৌড়ে আসে। তারপর পাঁচ/ছয়জন যুবক ছেলে পানিতে নেমে খুঁজতে থাকে। ইব্রাহিম’কে পানির নিচে থেকে হাত নাড়াতে দেখে সবাই ওখানে গিয়ে ডুব দেয়।ডুব দিয়ে অবশেষে আল্লাহ তা’আলার রহমতে খুঁজে পেতে সক্ষম হয় জায়ান কে।
তারপর সবাই মিলে ধরে নিয়ে তীরে এনে বালিতে শুয়ে দেয়। পাশেই বালুর গদি রয়েছে যার কারণে নদীর তীর থেকে শুরু করে নদীর অনেকটা স্থান জুড়ে বালিতে ভরে আছে।
পদ্ম ওরনা টা শরীরে ভালো করে জরিয়ে নেয়। তারপর পানি থেকে ওঠে এসে জায়ান কে ডাকতে থাকে। পাশে সবাই ডাকছে কিন্তু জায়ানের কোন সাড়া শব্দ নেই।
জামিয়া বললো,
–“পানি থেকে তোলার পর উপুড় করে দেখতে হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস আছে কি না।
রেশমা বললো,
–“নাম ধরে ডাক দিয়েও দেখা যেতে পারে তিনি সাড়া দেন কি না। যদি শ্বাস-প্রশ্বাস না থাকে বা শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়, তাহলে খেয়াল করতে হবে শ্বাসনালীর কোথাও কিছু আটকে আছে কি না। এ জন্য আঙুল দিয়ে মুখের মধ্যে কাদা-মাটি থাকলে তা বের করে দিতে হবে। তার পরও শ্বাস না নিলে মাথা টানটান করে ধরে মুখ হা করাতে হবে। এবার উদ্ধারকারী ব্যক্তিকে বুক ভরে শ্বাস নিতে হবে এবং ডুবন্ত ব্যক্তির মুখের সঙ্গে এমনভাবে মুখ লাগাতে হবে যেন কোনো ফাঁকা না থাকে।
অনিতা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
–“ভাবীমনি তুমি,নাকে হাত দিয়ে চেপে ধরে ভাইয়ার মুখে মুখ লাগাও। এ অবস্থায় জোরে শ্বাস নিয়ে ভাইয়ার মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস দিতে হবে। দেখতে হবে যে, শ্বাস দেওয়ার ফলে ভাইয়ার পেট ফুলে যায় কি না। যদি পেট ফুলে যায়, তাহলে বোঝা যাবে যে কৃত্রিম উপায়ে এভাবে শ্বাস দেওয়া ঠিকমতই হচ্ছে। ভাইয়া নিজে থেকে শ্বাস না নেওয়া পর্যন্ত এভাবে চালাতে হবে।
সুমন প্রথমে বুকে চাপ দেয় স্পন্দন আছে কিনা দেখার জন্য, কারণ কৃত্রিমভাবে শ্বাস প্রদানের পাশাপাশি হাত ধরে কিংবা গলার উঁচু অংশ তথা অ্যাডামস অ্যাপেলের একপাশে হাত দিয়ে দেখতে হয় যে, নাড়ির স্পন্দন আছে কি না। যদি না থাকে তাহলে বুকে চাপ দিতে হয়। বুকের বামপাশে হাত রেখে জোরে জোরে চাপ দিতে হয়, যেন বুক বেশ খানিকটা ধেবে যায়।
পদ্ম জায়ানের মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে শ্বাস দিতে থাকে। তারপর দেখা গেল জায়ান শ্বাস নিচ্ছে।যা দেখে পদ্ম জায়ান কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে।
কিন্তু জায়ানের অবস্থা ভালো নয় তেমন!তাই প্রাথমিক চিকিৎসা চলার পাশাপাশি দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে।
______
কিছুক্ষণ আগে জায়ান কে হসপিটাল থেকে আনা হয়েছে। ইলোরা তাড়াতাড়ি করে গাভীর দুধ গরম করে নিয়ে আসে জামাইয়ের জন্য। পদ্ম কে বলে সবটা যেন খাইয়ে দেয় জায়ান কে। পদ্ম বলে ঠিক আছে খাওয়াবো আম্মু। ইলোরা চলে যেতেই নাক মুখ কুঁচকে জায়ান বললো,
–“আমি দুধ খাবো না, আপনি খেয়ে নিন।
পদ্ম রাগি মুখশ্রী করে বললো,
–“অসুস্থ আমি না আপনি? খেয়ে নিন বলছি। কে বলেছিল তখন মাধবুরি করে পানিতে ঝাঁপ দিতে। আপনি তো জানতেন আমি সাঁতার জানি। তাহলে কেন যাপ দিতে গেলেন, যেখানে আপনি সাতার-ই জানেন না!
–“আপনাকে পড়ে যেতে দেখে হিতাহিত জ্ঞান ছিল না। ভালোবাসি আপনাকে কেন বোঝেন না। আপনাকে দ্বিতীয় বার হারাতে পারবো না, হয়তো এবার আর বাঁচবো না আমি।
পদ্ম জায়ানের মুখ চেপে ধরে বললো,
–“একদম অলক্ষুণে কথা বলবেন না, হারাতে দিবো না আপনাকে।
জায়ান বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে, পদ্ম আর কিছু না বলে চুপটি করে জায়ানের প্রশস্ত বুকে মুখ গুজে রাখে।জায়ান তৃপ্তির হাসি হাসে, তারপর আলতো করে চুমু দেয় পদ্ম’র কপালে। এতে আরো শক্ত করে জায়ান কে জড়িয়ে ধরে পদ্ম। তারপর কি মনে করে ওঠে বসে।জায়ান প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়। পদ্ম বললো,
–“আমাকে ভুলিয়ে দুধ না খাওয়ার ধান্দা তাই না? ফাজিল ছেলে কোথাকার।
এতে করে বিস্তর হাসে জায়ান। ইনোসেন্ট ভাব করে বললো,
–“প্লিজ এটা খাবো না,দুধ খেতে ভালো লাগে না। আমার হয়ে আপনি খেয়ে নিন।
–“না আপনাকেই খেতে হবে।
পদ্ম দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে দেখে ঠান্ডা হয়ে গেছে।তাই বললো,
–“আপনি বসুন আমি এক্ষুনি গরম করে আনছি।আর হ্যা আম্মু অনেক দুশ্চিন্তা করছে, আপনি একটু কথা বলে নিন। তাতে আম্মু শান্তি পাবে।
পদ্ম বেড়িয়ে যায় রুম থেকে, জায়ান ফোন হাতে নিয়ে জান্নাত কে কল করে।জান্নাত ছেলের কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে কেঁদে ওঠে।জায়ান মাকে সান্তনা দিয়ে বলল,
–“আমি একদম ঠিক আছি আম্মু তুমি চিন্তা করো না। আল্লাহ তা’আলার রহমতে এবং তোমার দোয়ায় আমার কিছু হয়নি।
–“তুই আর কখনো পানির ধারে কাছেও যাবি না বাবা, আল্লাহ না করুক তোর কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো?
–“আম্মু আমার মৃত্যু যদি পানিতে লেখা থাকে তাহলে কেউ আটকাতে পারবে না। তুমি প্লিজ এভাবে কেঁদো না।
জায়ানের কথার মাঝেই জেসি আসে, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।জায়ান তার আম্মু কে বললো,
–“আম্মু তোমার সাথে পরে কথা বলবো। এখন রাখছি নিজের খেয়াল রেখো।
–“তুই ঠিক মত ঔষধ গুলো খাবি কিন্তু।আর গরম দুধ বা চা দিতে বলিস পদ্ম কে।
–“আচ্ছা আম্মু, আল্লাহ হাফেজ।
–“আল্লাহ হাফেজ।
কল কেটে জায়ান জেসি কে বললো,
–“বসো।
জেসি দাঁড়িয়েই রইলো।তাই জায়ান বললো,
–“কি হলো বসো।
জেসি খাটের এক কোনায় বসলো। তখন জায়ান বললো,
–“তুমি এরকম একটা কাজ কেন করলে? তুমি জানো পদ্ম কে আমি কতটা ভালোবাসি। সবকিছু জেনে শুনে আমার ক্ষতিটাই করতে চেয়েছো?
–“বিশ্বাস করো, আমি জানতাম না জায়ান মুস্তাফি তুমি এভাবে জাপ দিবে পানিতে।
–“কিন্তু পদ্ম কে তো ঠিকই ফেলতে চেয়েছো বা ফেলেছো। আমি বা পদ্ম আলাদা নই কিন্তু আমরা একে অপরের পরিপূরক। একজন ছাড়া অন্য জন অপরিপক্ক। সেই পদ্ম কে তুমি,,,
–“আমি খুব দুঃখিত জায়ান মুস্তাফি। আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ?
জায়ান মুখে কাঠিন্য ভাব নিয়ে বললো,
–“যদি মাফ চাইতেই হয় তাহলে পদ্মর কাছে চাও,ওনি যদি মাফ করেন তাহলে আমার কিছু বলার নেই।
তখনই পাদ দাও দুধ গরম করে রুমে আসে, জেসিকে দেখে ও কিছু বলল না,জায়ানের দিকে দুধের গ্লাস এগিয়ে দিল। জায়ান খাবেনা বলে যেই না কিছু বলতে যাবে অমনি পদ্ম কটমট চোখে তাকায় তাই আর কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারে না জায়ান। অতঃপর দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে এক নিঃশ্বাসে,ঢকঢক করে সবটা খেয়ে নেয় জায়ান। পদ্ম কোমরে হাত রেখে বললো,
–“কি করলেন আপনি এটা? আপনি জানেন না প্রথমে বিসমিল্লাহ বলে,তিন নিঃশ্বাসে খেতে হয়।
–“সরি সরি আসলে এটা দ্রুত শেষ করার জন্য এভাবে খেয়ে নিয়েছি।
–“এরকম আর কখনো করবেন না, ছোট ছোট ভুল থেকেই কিন্তু একদিন পাহাড় সমান হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন আমিন।
–“আমিন।
ঠোঁটে লেগে থাকা, কিছুটা দুধ নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মুছে দেয় পদ্ম। এতে জায়ান দুষ্টুমি করে পদ্ম’র আঙ্গুল ধরে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। পদ্ম মিছে রাগ নিয়ে বললো,
–“ফাজিল ছেলে কোথাকার।
–“হা হা হা।
জেসি দুজনের খুনসুটি ঝগড়াগুলো দেখে চলেছে, তার সাথে বেরিয়ে আসছে দীর্ঘশ্বাস। জায়ান কে খুব ভালোবাসে জেসি! কিন্তু আজকের ঘটনার পর থেকে বুঝতে পেরেছে,জায়ানের জন্মই হয়েছে পদ্ম’র জন্য।তাই ওদের দুজনকে ভালো থাকতে দিয়ে দূরে চলে যাওয়াই বেটার, অনেক দূরে যেন জেসির ছায়া ও না পরে ওদের জীবনে। জেসি সেটাই করবে। শুকনো কাশি দিয়ে দুজনের মনোযোগ নিজের দিকে করে জেসি।
তারপর বসা থেকে উঠে গিয়ে পদ্ম’র পায়ে ধরতে উদ্ধত হলে, তৎক্ষণাৎ জেসির হাত ধরে নেয় পদ্ম।আর বলে,
–“কি করছো কি? তুমি আমার থেকে বড়।তাই এভাবে পায়ে ধরতে দিতে পারি না আমি।
জেসি অনুতপ্ত প্রকাশ করে বললো,
–“আমাকে মাফ করো পদ্ম? আমার ভুল হয়ে গেছে। বিশ্বাস করো, এরকম ভুল আমি আর কখনো করবো না।
–“তুমি যে তোমার ভুল বুঝতে পেরছো এটাই অনেক। উনার থেকে জানতে পেরেছি তুমি তোমার রক্ত দিয়ে উনার প্রান বাঁচাতে সাহায্য করেছো।তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ থাকবো। তবে কি জানো আজকে উনার কিছু হয়ে গেলে আমি তোমাকে কখনই মাফ করতাম না। তুমি যখন অনুতপ্ত তাই আমার আর কোন রাগ নেই তোমার উপর।
তারপর জেসি পদ্ম কে জরিয়ে ধরে বোন বলে ডাকে। পদ্ম ও আপু বলে ডাকে, এতে জায়ান খুব খুশি হয়।
________
সকাল বেলা সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে, তখন পদ্ম খেয়াল করলো জেসি কোথাও যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে এসেছে, সাথে টলি ব্যাগ!,,,,
চলবে,,ইনশা আল্লাহ।
#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–১১
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
পদ্ম চেয়ার ছেড়ে উঠে যায়, তারপর চিন্তিত স্বরে বললো,
–“আপু তুমি কোথায় যাচ্ছ?তখন তোমাকে ডাকতে গেলাম নাস্তা করার জন্য, তুমি বললে একটু পরে আসছি। কিন্তু এভাবে তৈরি হয় কোথায় যাচ্ছ?
খাবার টেবিলে বসে থাকা সবার দৃষ্টি এখন জেসির দিকে, সবাই তাকিয়ে আছে জেসির উত্তরের আশায়। জেসি জোর পূর্বক হেসে বললো,
–“পদ্ম আমার খাবারটা তাড়াতাড়ি বেড়ে দাও দেখি,খেয়েই দ্রুত বের হতে হবে!
–“কিন্তু কোথায় যাবে তুমি?
–“আমি ঢাকায় আমার বাসায় ফিরে যাচ্ছি। তোমরা ভালো থেকো কেমন? আমাকে আবার ভুলে যেও না যেন। কি মনে থাকবে তো আমাকে?
পদ্ম’র কপাল খানিক ভাঁজ পড়ে, সাথে সাথে ইলোরা এসে বললো,
–“সেকি মেয়ে আজকেই চলে যাবে কেন, পদ্ম জায়ান ওরা তো আরো কিছুদিন থাকবে এখানে। তুমিও ওদের সাথে যেও?
জেসি হেসেই বললো,
–“না আন্টি, অনেক তো থেকেছি। আপনাদের এখানে এসে খুব ভালো সময় কেটেছে। আমার সব সময় মনে থাকবে।আর হ্যা আপনি আংকেল ইনফেক্ট আপনারা সবাই আমাদের বাসায় যাবেন আমি খুব খুশি হবো গেলে। আমার বাপি ও অনেক খুশি হবে।
পদ্ম মলিন মুখে বললো,
–“আপু আমাদের সাথে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো?আর তো দুটো দিন মাত্র।
–“না পদ্ম আমাকে যেতে হবে,বাপি কল করেছিল। তাছাড়া গাড়ি কাছাকাছি চলে এসেছে।
–“আচ্ছা চলো নাস্তা করে নাও।
–“আচ্ছা চলো।
তারপর সবাই গল্প গুজব করতে করতে নাস্তা করে, আজকের নাস্তা চিতই পিঠা,টাকি মাছের ভর্তা, শুঁটকির ভর্তা, রুটি,মুরগির গোশত,ঝাল পিঠা।
খাওয়ার সময় জায়ান একটা হাড় পেলো,যা পদ্ম’র খুব পছন্দ।তাই বসে বসে ভাবছে কিভাবে হাড় টা পদ্ম কে খাইয়ে দিবে, যেখানে তার শশুর বাবা, শাশুড়ি মা আছে। ভাবতে ভাবতে ঠিক করলো, খাইয়েই দিবে।
তারা আছে তো কি হয়েছে, আমি আমার বউকে না খাইয়ে দিব, তাতে অন্যের কি?
তাই নিজেকে স্থির করে, সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে, পদ্মা যখন নিজের খাবার খাওয়ার জন্য হা করে এই সুযোগে জায়ান নরম হাড় টা পদ্ম কে খাইয়ে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় পদ্ম। সবার প্রথমে বাবার দিকে নজর দেয় পদ্মা, জামাই এর এহেন কান্ডে মুচকি হাসেন তিনি। সাথে বাকিরা তো আছেই, তারপর দ্রুত খাওয়া শেষ করে উঠে চলে যায় ইলোরা আর তৈমুর রহমান। এই সুযোগে অনিতা বললো,
–“আমরা চলে গেলে, তোর মনে হয় আরও সুবিধা হয় তাইনা ভাইয়া?
জায়ান ইনোসেন্ট ভাব করে বললো,
–“কিসের ভালোর কথা বলছিস তুই? আর খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে নেই জানিস না, শুধু কট কট কট কট। এতো কট কট কিভাবে করিস তুই মুরগির মত!
সুমন হেসে বললো,
–“সালাবাবু চালিয়ে যাও, আমিও বিয়ের প্রথম প্রথম তোমার আপুর পা মনে করে আমার বাবার পায়ে নিজের পা ছুঁয়ে দিয়েছিলাম।
নিজের দুলাভাইয়ের মুখে এরকম কথা শুনে বরকে যায় জায়ান! দ্রুত নিজের পা গুটিয়ে নেয়।আর এদিকে পদ্ম সহ জামিয়া,অর্পিতা,জেসি,সুমাইয়া,শিমু,কলি,রেশমা সব গুলোর হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেছে। তখন জেসি বললো,
–“তারমানে জায়ান সেইম কাজ আপনার সাথে করেছে!রাইট ভাইয়া?
সাথে সাথে আবারো তুমুল ব্যাগে হাসির রোল পড়ে গেল।
এই মুহূর্তে পদ্ম’র ইচ্ছে করছে জায়ানের গলা টিপে ধরতে। কি লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হলো তাকে, শুধুমাত্র এই জায়ানের বাচ্চার জন্য। কটমট চোখে তাকায় পদ্ম, তখন কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী করে বসে থাকে জায়ান।
তখন পদ্ম বলে,
–“তারাতাড়ি খাবার শেষ করেন ঔষধ খেতে হবে।
জায়ান অবুঝের মতো মাথা দুলিয়ে সম্মতি দেয়।
_______
নাস্তা সেরে, গাড়ি আসলে জেসি চলে যায় ঢাকায়। আর সকালের নাস্তা সেরে জায়ান আর সুমন মিলে বাজারে যায়, বিয়ের পর শশুর বাড়িতে জামাই অনেক বাজার করতে হয়,গ্রামে একটি নিয়ম আছে তাই,ইয়া বড় একটা রুই মাছ, টেংরা মাছ (পদ্ম’র প্রিয় সে জন্য আনা),সব ধরনের সবজি, পাঁচ কেজি করে, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, পাঁচ কেজি গরুর গোশত, পাঁচটা দেশি মুরগি, পাঁচটা ফার্মের মুরগী,দুটো ক্ষীরের হাঁড়ি, দুটো দইয়ের হাঁড়ি,ছানা মিষ্টি,কালো মিষ্টি (পদ্ম’র খুব পছন্দ যার জন্য আনা)। ইত্যাদি ইত্যাদি।
পাশের বাড়ির কাকি,জেঠিমা, দাদু এসেছেন নতুন জামাই কি কি বাজার করেছে দেখতে।জায়ানের বাজারে পুরো উঠুন জুরে গেছে, পাড়া-প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
তখন ইলোরা বললো,
–“জামাইয়ের আনা মাছ কাটতে আইয়েন (আসেন) ভাবিরা।
দুজন খুশি মনে ইলোরার সাথে মাছ কাটতে বসে। পদ্ম আগে মিষ্টির প্যাকেট খুলে, একটা মিষ্টি নিয়ে মুখে পুরে দেয়। তারপর মিষ্টির ঝোল লেগে থাকা আঙুল গুলো মুখে দিয়ে, ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখে দুই হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে জায়ান। এতে করে খানিক লজ্জা পায় পদ্ম।
জায়ান এগিয়ে এসে বললো,
–“আপনি না এখনো একটা বাচ্চা! অথচ কিছুদিন পর বাচ্চার মা হবেন!কবে বড় হবেন বলেন তো?
জায়ানের প্রতিটা কথায় হতভম্ব হয় পদ্ম।এর উত্তর দেওয়ার মতো একটি ও পায় না সে।
জায়ান আবার বলে,
–“একা একা খাচ্ছেন আমাকে দিবেন না? আপনি এতো নিষ্ঠুর!
পদ্ম জিবে কামড় দেয়, সত্যি তার ভুল হয়েছে জায়ান কে দেওয়া উচিৎ ছিল।তাই তাড়াতাড়ি একটা সুন্দর দেখে প্রিজ এনে বললো,
–“এক্ষুনি দিচ্ছি।
–“উহু এভাবে নয়।
–“তাহলে?
–“আপনার হাতে খাইয়ে দিতে হবে,যেভাবে করে আপনি খেয়েছেন।
–“পারতাম না।
–“তাহলে আমিও খাবো না।
পদ্ম আর দ্বিরুক্তি না করে, একটা মিষ্টি নিয়ে জায়ানের মুখের সামনে ধরল।জায়ান আরো সামনে এগিয়ে এসে নিজের বাম হাত পদ্ম’র কোমরে রেখে পদ্ম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। পদ্ম মিনমিনে গলায় বললো,
–“ককি করছেন কেউ চলে আসবে।
জায়ান পদ্মর কথা না শুনে,ডান হাত দিয়ে পদ্মর মিষ্টি নেওয়া হাত ধরে খেয়ে নেয় মিষ্টি টা তারপর আঙুল গুলো ও চেটে খেতে লাগলো। এতে করে শিহরণ খেলে যায় পদ্ম’র শরীরে।
জায়ান কে অনুরোধ করে বলে,
–“প্লিজ ছারুন কেউ চলে আসবে।
জায়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
–“আসলে আসুক, আমার বউয়ের সাথে আমি রোমাঞ্চ করছি এতে অন্যের কি?
–“তাই বলে পাবলিক প্লেসে!তোর কি কোনো কান্ড জ্ঞান নেই ভাইয়া?
হঠাৎ অনিতার এহেন কথায়, জায়ান পদ্ম দুজন দুদিকে ছিটকে দারায়। অনিতা আর না দাঁড়িয়ে দৌড়ে পালায়, এখানে থাকলেই বিপদ, জায়ান ধরে ঠিক কান মলে দিবে। অনিতা যেতেই, পদ্ম রেগে মেগে আগুন হয়ে বললো,
–“বলেছিলাম আমি আপনাকে, ফাজিল ছেলে কোথাকার। সবসময় আমাকে এভাবে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলেন আপনি।
এতে করে বিস্তর হাসে জায়ান, নিজের মাথা চুলকায়। তারপর গান গাইতে গাইতে চলে যায়।যা শুনে পদ্মর রাগ দ্বিগুণ হয়।
_____
ইলোরা মাছ কেটে পতিবেশিদের কিছু দেয়,আর বাকি গুলো রান্না করে। তাছাড়া মিষ্টি দই এগুলো ও দিয়ে পাঠায়, সুমাইয়া শিমু আর কলিকে।
দুপুরের ভোজন বেশ জমে, মাছের বড় মাথা জায়ান আর সুমন কে দেওয়া হয়।জায়ান জানে বড় মাছের মাথা পদ্ম’র খুব পছন্দ তাই নিজে না খেয়ে পদ্ম কে দিয়ে দেয়। পদ্ম ফিরিয়ে দিতে গেলে, ধমকে ওঠে জায়ান। এতে করে চুপসে যায় পদ্ম, দ্বিরুক্তি করার অবকাশ থাকে না।
তারপর বিকেলের দিকে পদ্ম আর জায়ান বাদে সবাই চলে যায়। বোরিং সময় কাটাতে রেশমা ক্রামবোর্ড নিয়ে আসে খেলার জন্য, অনেক দিন হয়েছে পদ্ম ক্রাম খেলে না সেই স্কুলে থাকাকালীন খেলা হতো।তাই পদ্ম বললো,
–“আমিও খেলবো।
জায়ান নিজের ক্রেডিট নিয়ে বললো,
–“আমার সাথে খেললে কখনোই জিততে পারবেন না।
–“ইশশ্ বললেই হলো। দেখা যাক কে জিতে।
–“ওকে ডান।
খেলা শুরু হলো, রেশমা আর পদ্ম একদলে। জায়ান আর সুমাইয়া একদলে,আর বাকিরা দর্শক হিসেবে বসেছে।
জায়ানদের সাদা গুটি আর পদ্ম’দের কালো গুটি।প্রথম দিকে রেশমা পদ্ম ভালো খেললেও পরে আর পারছে না তেমন, জায়ান সব গুটি এক এক করে পকেটে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এদিকে পদ্ম’র আঙুলের নখের কাছে রক্ত জমে গেছে!যা সব সময় এমন হয়,স্ট্রিকে টুকা দিলে এরকম টা হয়। এদিকে হাত ব্যাথা করছে অন্য দিকে পদ্ম বুঝে গেছে জায়ানের সাথে জয়ি হওয়া সম্ভব নয়, তাদের কালো গুটি এখনো পাঁচটা বিদ্যমান আর এদিকে জায়ানদের গুটি মাত্র দুটো আছে। আর সুমাইয়াও টা এখন যেন তার খেলার শক্তি বেড়ে গেছে, জায়ান যেভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে সেভাবেই একের পর এক গুটি পকেটে পুরে যাচ্ছে। পদ্ম মনে মনে ভাবছে,এ আমি হতে দিতে পারি না কিছুতেই না। তারপর বোর্ডে থাকা সবকটা গুটি আউলা ঝাউলা করে দেয়। সুমাইয়া রেগে গিয়ে বললো,
–“আপু তুমি কি করলে,আর একটু হলেই আমরা জিতে যেতাম।
জায়ান ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বললো,
–“আমি কোথাও পুড়া পুড়া গন্ধ পাচ্ছি,বুঝলে সুমাইয়া। আমার যে জয়ি হতাম এটা সবাই জানে তাই ভিতরে ভিতরে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য আমরা এখনো জিতেছি,ওরা হেরেছে।তাই ওদের কে বলবো।হেরো হেরো হেরো।
পদ্ম’র গা পিত্তি ঝলে যায় রাগে।তাই ওখান থেকে চলে আসে নিজের রুমে। পিছন পিছন জায়ান ও আসে। পদ্ম কে রাগাতে না পারলে যেন পেটের ভাত হজম হয় না জায়ানের। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে পদ্ম, জায়ান পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
–“হেরো পিচ্ছি বউ আমার, আজকে আপনার আর খাবার খেতে হবে না বুঝলেন! এমনিতেই তো ঠকে গিয়ে পেট ভরে গেছে হা হা হা,,,,
পদ্ম নিজেকে সামলাতে পারলো না,জায়ানের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে দুই হাতে গলা জড়িয়ে ধরে তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। জায়ান বুঝতে পারছে না পদ্ম ঠিক কি করতে চলেছে।এর মধ্যে পদ্ম এগিয়ে গিয়ে জায়ানের থুতনিতে কামড় দিয়ে দেয়!জায়ানের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়ে যায়, সাথে খানিক আউচ শব্দ করে। এতে প্রসন্ন হাসে পদ্ম, জায়ান কে ছেড়ে দিয়ে আগের ন্যায় দারায়।জায়ানের মাথায় দুষ্টুমি খেলে যায়, নতুন ভাবে পদ্ম কে রাগাতে বলে,
–“আমার আগেই আপনি আমাকে লাভ বাইট দিয়ে দিলেন?হাউ সুইট!
পদ্ম কোমরে হাত রেখে বললো,
–“লাভ বাইট মানে কি?
–“এই যে আপনি আমাকে যেটা দিলেন।
ছোট ছোট চোখ দুটো আরো ছোট করে তাকায় পদ্ম। মনে মনে আওড়ায় কি বলে এই লোক এতো জোরে কামড়ে দিলাম অথচ কি বাইট টাইট বলছে,,,,
#চলবে,, ইনশা আল্লাহ।