ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_17
Ariyana Nur
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলো।মিসেস চৌধুরী রান্না করছে সাথে রুনা আর নুহা টুকটাক কাজ করছে।মিসেস চৌধুরী অনেক বার বারন করা সত্যেও নুহা তার সাথে কাজ করছে।
এদিকে আশু গাল ফুলিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছে।একে তো নুহা তার সাথে কথা বলছে না।তার উপরে ঐ নীলের ডিব্বা তাকে ময়দার বস্তা বলেছে।যতক্ষন পর্যন্ত নীলের তেরোটা না বাজাতে পারছে ততোক্ষন পযর্ন্ত তার শান্তি নেই।
🌨🌨🌨🌨🌨
নীল আর সাজিব রেস্টুরেন্টে বসে আছে।নীলের মুখে সব শুনে সাজিবের মাথায় হাত।সাজিব কিছুক্ষন চুপ করে থেকে নীলের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল….
—শালা….বিয়ের আগে যানাওনি এখন এসে বলছ বিয়ে করে ফেলেছি।হারামী দেখিস আমার বিয়েতেও তোরে দাওয়াত দিম না।আমার কত দিনের ইচ্ছে ছিল তোর বিয়ের ৭দিন আগের থেকে শুরু করে পাতিল কাচা সহ খেয়ে আসবো।আর এখন ইনি এসে বলছে সে নাকি বিয়ে করে ফেলেছে।
নীলঃখাইতে খাইতে তো ফুটবল হইয়া গেছোস।তার পরেও তোর মুখ থেকে খাওনের কথা সরে না।সিরিয়াস একটা বিষয়ে কথা বললাম তার মধ্যেও ও খাওনের কথা।তোরে আজকে আমি বিরিয়ানির ডেকচির মধ্যে বসামু দেখুম তুই কত খাইতে পারিস।আর তোর বিয়া করার শখ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।দিন দিন যেই ড্রাম হইতাছোস মাইয়ারা তোরে দেখলেই পালাইবো।
—আরে বদদোয়া দেস ক্যান।আমি তো মজা করছিলাম।থাক বাদ দে ঐ সব কথা আগে বল আমার ভাবি দেখতে কেমন???ভাবিরে দেইখা কি দিলমে লাড্ডু ফুটা(চোখ মেরে)
নীল সাজিবের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল….
—ঐ সব চুরেল রে দেখলে কারো দিলে লাড্ডু ফুটে না।ঐটা আস্ত একটা চুরেল,ময়দার বস্তা।
সাজিব মুখে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বলল…..
—তওবা তওবা তুই বিয়ার পরের দিনই ভাবিরে চুরেল কইতাছোস???কি করছে ভাবি তোরে যে,এতো সুন্দর একটা উপাধি দিলি?
—কি করছে???বল কি না করছে???
নীল তারপর রাতের কথা সাজিবকে সব বলল।
সব সুনে সাজিব হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম।
সাজিবকে এভাবে হাসতে দেখে নীল রেগে বলল….
—এই তুই আমার বন্ধু।আমার এমন অবস্থার কথা শুনে তুই হাসছিস।
সাজিব কোন মত হাসি থামিয়ে বলল….
—কি করব বল।বিয়ের প্রথম দিনই ভাবি তোর তেরোটা বাজিয়ে দিয়েছে।কিছুদিন পর তো ভাবি তোর জীবন তেজপাতা বানিয়ে ছাড়বে।
কথাটা বলে আবার সাজিব হাসতে লাগলো।আর নীল রেগে গিয়ে ওকে উওম মধ্যম দিতে লাগল।
🌨🌨🌨🌨🌨
সাইফ নিজের রুমে বসে এতোক্ষন কাজ করছিলো।কাজ শেষ করে নিচে এসে আশুকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ওর পাশে বসে বলল….
—কি রে এভাবে এখানে বসে আছিস কেন???
আশু গাল ফুলিয়ে বলল….
—তো কি করবো???আমার কোন কাজ নেই।
—ঠিক আছে তাহলে আমি কাজ দিচ্ছি।কিচেনে গিয়ে মাকে বল আমাদের জন্য কফি দিতে।কফি খেতে খেতে তোর সাথে গল্প করা যাবে।
আশু খুশি হয়ে কিচেনে গিয়ে বলে আসলো কফির কথা।
মিসেস চৌধুরী কফি বানিয়ে নুহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল…
—যাও মা সাইফকে কফি দিয়ে আসো।
নুহা আমতা আমতা করে বলল….
—আন্টি আমি কেন???
মিসেস চৌধুরী ঠাস করে কফির ট্রেটা পাশে রেখে রাগি গলায় বলল…..
—রুনা ওকে বলে দে যদি মা বলে ডাকতে পারে তাহলে যেন ডাকে। তা না হলে ঐ সব আন্টি ফান্টি বলে যেন না ডাকে।আমি মেয়ে মনে করলে কি হবে কেউ তো আর আমাকে মা মনে করে না।
নুহা নিচু গলায় বলল….
—সরি মা….আর হবে না।
নুহার কথা শুনেও না শোনাব ভান করে মিসেস চৌধুরী কিছু না বলে চুপ করে মুখ ঘুড়িয়ে দাড়ায়ে রইল।রুনা নুহাকে ইশারা দিয়ে মিসেস চৌধুরীকে জরিয়ে ধরে মান ভাঙানোর কথা বলল।
নুহা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মুচকি হেসে মিসেস চৌধুরীরে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বলল….
—আমার এই মা যে ছোট বাচ্চাদের মত রাগ করতে পারে তা তো আমার যানা ছিলো না।এবার মা ডাকতে ডাকতে একেবারে তোমার কানের পদ্দা ফাটিয়ে ফেলল।তখন আবার বিরক্ত হয়ে যেও না।
মিসেস চৌধুরী মুচকি হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল….
—পাগলি মেয়ের কথা শোন।মা ডাক শুনলে কেউ কখন বিরক্ত হয় না।
নুহা আনমনেই বলে ফেলল….
—হয় মা।মা ডাক শোনলেও অনেকে বিরক্ত হয়।
🌨🌨🌨🌨🌨
দেখতে দেখতে চোখের পলকে কেটে গেলো ১০দিন।
এই ১০দিনে আশু অনেক কাটখড় পুড়িয়ে নুহাকে কথা বলাতে সক্ষম হয়েছে।মিঃ খান মিঃচৌধুরীর কাছে আশু আর নুহার কথা শুনে ওদের এসে দেখে গেছে।তিনি আশুকে তার কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু সাইফ সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে।তিনিও সাইফ এর কথার উপরে আর কোন কথা বলে নি।মাঝে একদিন আশু তার মা এর বাসায় গিয়ে নুহা আর আশুর যা কিছু ছিল রাগ করে সব নিয়ে এসেছে।
এদিকে সাইফ এর কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাড়ি আর অফিস করতে করতেই তার সময় শেষ হয়েছে।নুহার সাথে ভালো মত কথা বলারও সুযোগ পায়নি।সাইফ যতক্ষন বাড়িতে থাকত ততক্ষন নুহা হয় কিচেনে না হয় ঘুমিয়েই বেশি থাকতো।
নীল আর আশুর মধ্যে একটা মিষ্টি সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে সেটা সাপ আর বেজির সম্পর্কের মত।তারা একজন আরেক জনের ছায়াটাকেও দেখতে পারে না।ঝগড়া ছাড়া তারা একটা কথাও বলতে পারে না।
🌨🌨🌨🌨🌨
সকাল বেলা সাইফ অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে আর নুহাকে চেচিয়ে ডাকছে।নীল দরজার সামনে এসে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বলল….
—বাহ্ ভাইয়া…..
আজকে দেখি বউমনিকে একেবারে চোখে হারাচ্ছো।
সাইফ নিজের চুল সেট করতে করতে বলল…..
—বেশি কথা না বলে নুহাকে ডেকে দে।ওকে কলেজে ড্রপ করে আমি অফিসে যাব।আর তুই ভার্সিটিতে যাবার আগে আশুকে ওর স্কুলে ড্রপ করে দিস।
নীল চেচিয়ে বলল….
—অসম্ভব।আমি ঐ চুরেল এনাকন্ডা কে কখন ড্রপ করতে যাব না।
সাইফ রাগি লুকে নীল এর দিকে তাকিয়ে বলল….
—কি বললি আরেক বার বলতো।আমি শুনতে পাইনি তোর কথা।
নীল সাইফ এর দিকে তাকাতেই একটা শুকনো ডোক গিলে মিনমিন করে বলল….
—ঠিক আছে আমি ড্রপ করে দিব।
🌨🌨🌨🌨🌨
নুহা রুমে এসে কোন কথা না বলে এক কোনে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।সাইফ আয়নায় নুহাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলল…..
—খরগোশ এর মত এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন???
—কেন ডেকেছেন???
—রেডি হয়ে নিচে আসো।আজ থেকে তুমি কলেজে যাচ্ছ।
—আমি কলেজে গিয়ে কি করবো???
সাইফ ভ্রু কুচকে বলল…..
—কেন আগে কলেজে গিয়ে কি করতে???
—তখন আর এখন এর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।তাছাড়া আমার পড়ালেখা করতে ভালো লাগে না।
—আর কিছু???
নুহা মাথা নাড়িয়ে না বলল।
—সাইফ হাতে ব্যাগ কোট নিয়ে বলল….
—১০মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে আসো।আমি তোমাকে ড্রপ করে দিব। যদি এক মিনিট এদিক সেদিক হয় তাহলে আমি কি করতে পারি সে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।
সাইফ চলে যেতেই নুহা সাইফ এর চৌদ্দ গুষ্ঠি বোকে উদ্ধার করে তারপর রেডি হতে চলে গেলো।কেননা এই কয়দিনে সাইফ এর গুনগান শুনে বুঝেই গেছে সাইফ কেমন ঘাড়ত্যেড়া।
🌨🌨🌨🌨🌨
নীল আশুর স্কুলের সামনে গাড়ি থামালো।আশু ব্যাগ কাধে নিয়ে নীলের দিকে ৩২টা দাত বের করে একটা হাসি দিয়ে বলল…..
—আপনি আমার জন্য এতো কষ্ট করলেন আপনাকে না আমার গিফ্ট দিতে মন চাচ্ছে।
নীল এটিটিউড নিয়ে বলল….
—তোমার গিফ্ট তোমার কাছেই রাখো।আমি আবার যার তার কাছ থেকে গিফ্ট নেই না।
—কিন্তু আমি তো আপনার জন্য নিয়ে এসেছি।এটাকে তো বিফলে যেতে দিতে পারি না।
নীল ভ্রু কুচকে বলল….
—তুমি কি গিফ্ট এনেছো আমার জন্য???
আশু আবার ৩২দাত বের করে হাসি দিয়ে বলল….
—আপনার ফ্রেন্ডকে।
কথাটা বলেই তার হাতে রাখা প্লাষ্টিকের টিকটিকিটা নীলের দিকে ছুড়ে মেরে গাড়ির দরজা খুলে ভৌ দৌড়।
নীল নিজের উপর টিকটিকি দেখে চিৎকার দিয়ে গাড়ির থেকে নেমে গেলো।কেননা নীল টিকটিকিকে অনেক ভয় পায়।এর জন্য সবাই ওকে কমও খেপায় না।
নীলের এমন কান্ড দেখে আশু হাসতে হাসতে স্কুলের ভিতরে চলে গেল।
🌨🌨🌨🌨🌨
সাইফ নুহার কলেজ এর সামনে এসে গাড়ি থামালো।নুহা চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে যেতে নিলেই সাইফ বলল…..
—শোন….
নুহা সাইফ এর দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই সাইফ বলল…..
—মন দিয়ে পড়াশুনা করবে।নিজের স্বপ্নকে কখনো বিফলে যেতে দিও না।আর আমার ফেমিলির লোক কেমন সেটা মনে হয় এই কয়দিনে বুঝে গেছো।তাড়া কখন তোমার পড়াশুনা নিয়ে কিছু বলবে না।তোমার ব্যাগের সাইড পকেটে টাকা আছে।যাবার সময় সাবধানে যেও।আর দরকার পড়লে কল করো।ব্যাগে ফোন রাখা আছে আর আমার নাম্মারও তাতে সেভ করা আছে।
নুহা কথা বলতে ভুলে গিয়ে হা করে সাইফ এর দিকে তাকিয়ে আছে।
🌨🌨🌨🌨🌨
নুহা ক্লাস শেষ করে বের হতেই দেখে সামনে আসফিয়া দাড়িয়ে আছে।নুহা কথা না বলে পাস কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই আসফিয়া ওকে বাধা দিল। নুহাকে তার দিকে ফিরিয়ে কোন কথা না বলেই ঠাস করে গালে চড় বসিয়ে দিল।তার এমন কাজে আশেপাশের সবাই তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
আর নুহা কোন কথা না বলে ছলছল চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।
চলবে
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)