ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_13
Ariyana Nur
ড্রয়িং রুমের মধ্যে পিনপনতা নিরবতা।কারো মুখেই কোন কথা নেই।সবাই যেন কথা বলতেই ভুলে গেছে।সবাই স্টেচুর মত চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।আর একজন ফুল এটিটিউড নিয়ে চুপচাপ বসে আছে।মনে হচ্ছে এখানে কিছুই হয়নি।
ফ্লাসব্যাকঃ……
আশু অবাক হয়ে কিছুক্ষন ওর মার দিকে তাকিয়ে থেকে নুহার দিকে তাকাতেই ওর কলিজায় লাগলো।কেননা নুহা পাথরের মত দাড়িয়ে থেকে ওর মার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে।আশু নুহাকে পাশের সোফায় বসিয়ে নিজের চোখের জল মুছে ছেলেটার সামনে গিয়ে বলল…..
—আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।আপনি বিয়ের ব্যবস্থা করুন।কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।আপিকে কিছু করবেন না।
আশুর কথা শুনে নুহা বসা থেকে দাড়িয়ে বলল….
—কি বলছিস এসব তুই??? পাগল হয়েছিস???
আশু নুহার কথার উওর না দিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।নুহা আশুর হাত ধরে ওর দিকে ফিরিয়ে বলল…..
—এটা কেমন পাগলামো করছিস তুই??তুই এখনো ছোট???প্লিজ বোন এমন পাগলামো করিস না।দেখ আমার জন্য নিজের জীবনটা নষ্ট করিস না।
আশুঃকেন একে বিয়ে করলে জীবন নষ্ট হবে কেন?
নুহাঃ এদের দেখেছিস দেখতেই কেমন দেখাচ্ছে।এরা যে ভালো লোক না এদের চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।দেখ তুই এখন অনেক ছোট।রাগের মাথায় একটা ভুল সিদ্ধান্ত যেন তোর জীবনের কাল না হয়ে আছে।
আশু ঝাড়া দিয়ে নুহার হাত সরিয়ে বলল….
—তুমি এখন আমাকে এই কথা বলছ???তুমি???কথাগুলো যখন আমি তোমাকে বলেছিলাম তখন তো তুমি চুপ করে ছিলে???
নুহাঃ আমার আর তোর মাঝে আকাশ পাথাল তফাৎ।এই নিয়ে তুই বেশি বাড়াবাড়ি করবি না।তুই ছোট…
নুহাকে থামিয়ে আশু রাগি গলায় বলল….
—বার বার এই ছোট ছোট কেন করছো।আমি কি ক্লাস টুতে পরি।আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি।তাই আমার চিন্তা তোমার না করলেও চলবে।
নুহা অসহায় চোখে আশুর দিকে তাকিয়ে বলল…..
—তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস পিচ্ছি???যাকে এখনো স্কুলে যাওয়ার আগে আমাকে রেডি করিয়ে দিতে হয় সে আজ বলছে সে বড় হয়ে গেছে?আমার কথার কোন মূল্য নেই তোর কাছে।কথাগুলো বলে সে অঝোড়ে কান্না করতে লাগল।
আশু চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে কান্না করছে আর মনে মনে বলছে…..
—আমাকে মাফ করে দিও।এই ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই।তোমার জন্য বিয়ে কেন মরতেও আমি রাজি।
আসফিয়া রেগে নুহার সামনে গিয়ে ওকে চড় মেরে বলল….
—একদম ন্যকামী করবিনা তুই।তোর জন্যই তো এসব হচ্ছে।অপায়া,অলুক্ষনী,কালনাগীনী তোর মত মেয়ে থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল।তোকে আমার ছোট বেলাই মেরে ফেলা উচিৎ ছিল।তাহলে আর এই দিন দেখতে হত না।তোকে তো আমি…..
২য় বার চড় দেবার আগে হাত উঠানোর আগে বিকট একটা শব্দ হল।আসফিয়া হাত নামিয়ে পিছন দিকে তাকাতেই তার চোখ বড় বড় গেল।কেননা সামনে তার সখের দামি সোপিসটি ভেঙ্গে পরে আছে।আসফিয়া রেগে বলল….
আরে এটা কি হল???আমার…..
তিনি আর কিছু বলার আগেই সামনের মানুষটির আরেকটা সোপিস উঠিয়ে দেয়ালের দিকে সজোরে ছুড়ে মাড়ল।তারপর রক্ত চক্ষু করে তার দিকে তাকালো।লোকটার চেহারা দেখে তার গলা শুকিয়ে গেল।তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে ভীষন রেগে আছে।তার চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে সবকিছু ধংস করে দিবে।
লোকটাকে এভাবে রাগতে দেখে ছেলেটি আমতা আমতা করে কিছু বলতে চাইলে তিনি চেচিয়ে বলল…..
—এনাফ…..
অনেক হয়েছে ড্রামা।আর কারো একটাও কথা আমি শুনতে চাই না।গার্ডস….(চিৎকার করে)
গার্ডস দের ডাক দেয়ার সাথে সাথে কতগুলো কালো পোশাক পড়া লোক ভিতরে ঢুকল।লোকটি তাদের উদ্দেশে বলল….
—সবার মাথায় রিভলভার তাক করে দাড়াও।যে একটা কথা বলবে তাকে সাথে সাথেই উপরে পাঠিয়ে দিবে।
লোকটি এই হুংকারে ছেলেটিও কিছুটা কেপে উঠল।লোকটি পাশের লোকদের উদ্দেশ্য করে বলল….
—উকিল সাহেব আপনি বিয়ের ব্যবস্থা করুন।মিস নুহার সাথে আমার আর আশুর সাথে নীলের।আশুর বয়স নিয়ে যেন কোন সম্যসা না হয়।সেই দিকে খেয়াল রাখবেন।তার পর তিনি উকিলদের কিছু একটা লিখে বুঝিয়ে দিলেন।
লোকটার কথা শুনে আশু আর নুহা চমকে একে অপরের দিকে তাকালো।নুহা কিছু বলার আগেই লোকটি ওর দিকে এমন ভাবে তাকালো বেচারি পুরো ভয়ে চুপসে গেল।
বর্তমানেঃ
অবশেষে আশু আর নুহার বিয়ে সম্পন্ন হল।দুজন দুদিকে মুখ করে কান্না করছে।কারো মুখেই কোন কথা নেই।লোকটির ঐ রাগি লুক দেখে কেউ কোন বাধা দিতেও পারেনি।তারপরেও সব ভয় কাটিয়ে নুহা কিছুক্ষন আশুর বিয়ে নিয়ে প্রতিবাদ করলেও লোকটা যখন আশুর মাথায় রিভলভার ধরে তখন সে চুপসে যায়।আসফিয়া কিছু বলতে নিয়েও চুপ করে ছিল।কেননা তার কাছে নিজের জীবন বড়।আর মামা তো মনে মনে পৌচাশিক হাসছে।কেননা তার উদ্দেশ্যে যে পূরন হয়েছে।
নুহা তব্দা খেয়ে বসে আছে।নিজেকে ওর শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।নিজেকে নিজে গালাগাল করছে।কেমন বড় বোন ও নিজের চোখের সামনে ওর ছোট বোনের জীবন ধংস হয়ে গেল ও কিছুই করতে পারলো না।নিজেকে এখন দুনিয়ার আসহায় মানুষ মনে হচ্ছে।যাকে ছোট থেকে ছায়ার মত আগলে রেখেছে তার জীবনটা আজকে একটা দমকা হাওয়া এসে এলোমেলো করে দিল।ওর তার জন্য কিছুই করতে পারলো না। কিছুক্ষন এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় নুহা জ্ঞান হারালো।নুহা হেলে আশুর উপর পরতে আশু চিৎকার করে বলল…..
—আপি……
আপি কথা বল।কি হয়েছে তোমার???
লোকটি দ্রুত নুহার সামনে হাটুগেড়ে বসে ওর পার্লস চেক করে বলল…..
—বেশি স্টেস এর কারনে জ্ঞান হারিয়েছে।কথাটা বলে এক মূহুর্ত দেড়ি না করে নুহাকে কোলে নিয়ে হাটা ধরল।যেতে যেতে বলে গেলো নীল আশুকে নিয়ে আয়।
🌨🌨🌨🌨🌨
গাড়ির মধ্যে আশুর কাধে হেলান দিয়ে বসিয়ে রেখেছে নুহাকে।অনেকক্ষন ধরে চোখে মুখে পানি দিয়ে ওর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছে তাতে কোন কাজ হয়নি।আশু নুহাকে ডাকছে আর কান্না করছে।লোকটি আশুকে সান্তনা দিয়ে বলল…..
—কিছু হয়নি ওর।অতিরিক্ত স্টেস এর কারনে জ্ঞান হারিয়েছে।তুমি এভাবে কান্না করে ভেঙ্গে পরো না।
আশু লোকটির কথা শুনে রেগে লোকটাকে কিছু কথা বলার আগেই লোকটা নিজের মুখ থেকে দাড়ি খুলতে লাগলো।চুল,দাড়ি খুলে টিসু দিয়ে নিজের মুখটা মুছে পানির বোতল থেকে ধকধক করে পানি খেয়ে বোতলটা আশুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল…..
—কান্না করে তো গলা শুকিয়ে ফেলেছিস।এবার একটু গলাটা ভিজিয়ে নে।
আশু এখন অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে।ও ওর চোখকে বিস্বাস করতে পারছেনা।আশু অবাক হয়ে কাপাকাপা গলায় বলল….
—ভা…ভাইয়া তুমি???
(লোকটাকে তো সবাই চিনতেই পেরেছেন লোকটা কে?লোকটা আর কেউ নয় সাইফ চৌধুরী )
সাইফ ভ্রু নাচিয়ে বলল….
—এতো অবাক হচ্ছিস কেন? আমাকে কি তোর জিজু হিসেবে পছন্দ হয় নি?
আশু যেন এখন এক ঘোরের মধ্যেই আছে।কিছুক্ষন সাইফ এর দিকে তাকিয়ে সেও জ্ঞান হারালো।
কিভাবে কি হল কিছুই বুঝতে পারছেন না তাই তো।ঠিক আছে আমিই সব ক্লিয়ার করে দিচ্ছি।সে জন্য আমাদের ৭দিন আগে যেতে হবে।
ফ্লাসব্যাকঃ
৭দিন আগে সাইফ যখন অফিসে কাজ করছিল তখন ওর এক লোক ফোন করে জানায় যে,নুহার মামা নুহাকে বিক্রি করে দিতে চাচ্ছে।এটা শুনেই সাইফ এর মাথা গরম হয়ে যায়।আর ওমন ভাঙ্গচুর করে অফিস থেকে বের হয়ে যায়।
ও আপনাদের তো বলিই নি যেদিন মিঃখান আর আসলাম যখন মিঃ খান এর অফিসে কথা বলছিল সেদিন সাইফ একটা ফাইল আনতে মিঃখান এর অফিসে গিয়েছিল।কিন্তু ভিতরে যাওয়ার আগেই আসলাম এর কথা শুনে দাড়িয়ে যায়।নুহার ব্যপারে কথা বলতে শুনে না চাওয়া শর্তেও তাদের বাকি কথা শুনে।
তারপর থেকে সাইফ আসলাম এর পিছনে লোক লাগায়।তারা আসলামের সকল খবরা খবর সাইফকে দিতে থাকে।
নুহাকে বিক্রি করে দিবে শুনে সাইফের মাথা হ্যাৎ হয়ে যায়।কোন কিছুই মাথায় ঢুকছিল না।তার উপরে এটাও জানতে পেরেছে সাইফ যদি নুহার জন্য প্রপোজান ওর বাড়িতে পাঠায় তাহলে সরাসরি তারা না করে দিবে।সাইফ এই নিয়ে নীলাভে সাথে কথা বললে নীলাভ সাইফ কে এই সব বুদ্ধি দেয়।প্লান করে তারা তাদের লোক দিয়ে আসলাম কে তাদের কাছে নেয়।তারপরে আসলাম নুহাকে বিক্রি করার কথা বললে তারাও রাজি হয়ে যায়।কিন্তু আসলামের শর্ত হল তারা নুহার বাসায় গিয়ে যেন নুহাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে।ওরা কতক্ষন অমত করলেও আসলাম এর জোরাজুরিতে রাজি হয়ে যায়।আর আসলামকে মোটা অংকের একটা চেক ধরিয়ে দেয়।আসলাম যাতে কোন চালাকি করতে না পারে তাই তাকেও সব সময় ওদের লোক চোখে চোখে রাখতো।
সাইফ এর এমনিতে রাগ বেশি।হুটহাট রেগে যাওয়ার অভ্যাস আছে।আর ওর কথামত কোন কিছু না হলে তো কোন কথাই নেই।তাই নীলাভ পাএ সেজে সব কিছু সামলায়।উকিল যেহেতু নিজের লোক তাই বিয়ে নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।নাম চেন্জ করতে কতক্ষন।
আর আশু সাথে নীলাভ এর বিয়ে এটা ওদের প্লানে ছিল না।তখন আসলাম এর কথা শুনেই হুট করেই সাইফ সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।নীলাভকে বললে নীলাভও ভাইয়ের কথায় রাজী হয়ে যায়।তার পর বাকিটা তো সবাই জানেন।
🌨🌨🌨🌨🌨
বর্তমানঃ
সাইফ এর নীলাভ দুজন দুজনের নতুই বউকে কোলে নিয়ে চৌধুরী বাড়ির দরজায় দাড়িয়ে আছে।একে অপরের মুখের দিকে চেয়ে আছে।কিন্তু কেউ কলিং বেল বাজানোর সাহষ পাচ্ছে না।সাইফ নীলাভের দিকে রাগি চোখে তাকাতেই নীলাভ কাপা কাপা হাতে কলিং বেল চাপ দিল।
চলবে
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আমার মনে হয় আমি পুরোটা ক্লিয়ার করতে পেরেছি।তার পরেও যদি কিছু বাকি থাকে তাহলে জানাবেন।আমি ক্লিয়ার করার চেষ্টা করব।ধন্যবাদ)