ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_09
Ariyana Nur
মিঃ খান নিজের কেবিনে বসে এক মনে একটা ফাইল এর দিকে তাকিয়ে গভীর ভাবে তা পর্যবেক্ষণ করছে।হঠাৎ তার দরজায় নক পরতেই সে মাথা না উঠিয়ে বলল….
—কামিং…..
দরজার বাহিরের মানুষটা ভিতরে এসে মিঃখান কে এক মনে কাজ করতে দেখে হাতে তালি দিতে লাগল।মিঃ খান মাথা উঠিয়ে সামনের মানুটাকে দেখে তার চেহারার রং পাল্টে গেল।তিনি রাগি গলায় বলল….
—এখানে কি চাই???কেন এসেছো এখানে???
সামনের মানুষটা করুন গলায় বলল….
—তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছ???তুমি তোমার শালক এর সাথে এভাবে কথা বলছ???
(সবার জন্য আজকেও এক জগ ঠান্ডা পানির সমবেদনা।না না আজকে এক জগ গরম পানির সমবেদনা।বেশি ঠান্ডা পানির সমবেদনা জানালে যদি ঠান্ডা লেগে যায় তখন আমার দোষ হবে।সামনের মানুষটা আশু ও নুহার মা নায়।তাদের মামা আসলাম😁)
—দেখ তোমার ফালতু কথা রাখ।কেন এসেছ সেটা বল???
আসলাম সামনের একটা চেয়ার টেনে বসে বলল….
—তুমি যান আমি কেন এখানে এসেছি।
—ওহ আমি তো ভুলেই গেছিলাম তুমি কেনই বা এখানে আসতে পার।টাকা লাগবে ফোন করে বললেই পাঠিয়ে দিতাম।তোমার মত মানুষের পদধুলি আমার অফিসে না পরলেই খুশি হতাম।
—কুল দুলাভাই কুল।এতো হাইপার হবেন না।আপনার না হাই পেশার।বেশি হাইপার হলে যদি টপকে যান।তাহলে তো আমার টাকা কামানোর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।কেননা আপনিই তো আমার টাকা কামানোর মেশিন।
—ছিহ…আর কত নিচে নামবে তুমি।তোমার লজ্জা করেনা এসব বলতে???
—আরে সেটা তো আমার কোন কালেই ছিল না।এখানে ছিহ বলার কিছু নেই।
—কত লাগবে বল।আমি পাঠিয়ে দিব।
—আপাকে যা দেন সব সময় তাই দিবেন।আর এবার আমাকে কিছু দিবেন।আপা না বড্ড কনজুস হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।আমাকে বেশি টাকা দেয় না।
(আসলামকে এখানে আসফিয়া পাঠিয়েছে।মিঃখান তাদেকে মাসে মাসে যে খরচ দেয় সেই টাকার জন্য)
—তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে টাকা দিব???তুমি আমার সোনার সংসার ভেঙ্গে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছো।তোমার মত অমানুষকে তো আমি কিছুতেই টাকা দিব না।আসফিয়াকে বলে দিও ওদের যা খরচ দেই তা ওর একাউন্টে আমি পাঠিয়ে দিব।
আসলাম শান্ত কন্ঠে বলল….
—তার মানে আপনি আমাকে টাকা দিবেন না।
—না….
আসলাম এবার রেগে টেবিলে বাড়ি মেরে বলল….
—আরে তুই যদি টাকা নাই দিবি তাহলে এতোক্ষন তোর এতোগুলো কথা হজম করলাম কে???কি যেন বলছিলি আমি অমানুষ??হ্যা হ্যা আমি অমানুষ।তাই তো আমি আমার বোনকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ভুল বুঝিয়ে তোদের সংসার টাকে ভেঙ্গেছি।তোর বড় মেয়ের জন্য একটু একটু করে ওর মনে বিষ জমিয়েছি।তুই তো তোর মেয়েদের কে নিজের পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারবি না।দেখ তোর মেয়েদের আমি কেমন জায়গায় বিয়ে দেই।আমাকে অমানুষ বললি না।আমার থেকে বড় অমানুষ আমি তোর মেয়েদের জন্য খুজে বের করব।তুই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবি।তখন তোর আফসোস করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।কথাগুলো বলে আসলাম হন হন করে চলে গেল।
আসলাম চলে যেতেই মিঃখান ধপ করে চেয়ারে বসে চোখের জল ফেলতে লাগল।আর আল্লাহ এর কাছে দোয়া করতে লাগল।যাতে আল্লাহ্ তার মেয়েদেরকে সহি সালামতে রাখে।তিনি কান্না করতে করতে বললেন….
—আল্লাহ এই তুমি আমাকে কোন পরিস্থিতিতে ফালালে যেখানে আমার নিজের মেয়েদের উপর নিজেরি কোন অধিকার নেই।আমার মেয়েদের যদি কিছু হয় তাহলে আমি কি নিয়ে বাচব।
টেবিলের উপর মা মেয়েদের ছবিটার দিকে মিঃ খান এর চোখে পরতেই তার দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন,কেমন মা তুমি???অন্যের কথায় নিজের গুছানো সংসার এই ভাবে ভেঙ্গে ফেললে।অন্যের কথায় নিজের পেটের মেয়ের উপর অবিচার করতেও কি তোমার বুক কাপে না???কবে বুঝবে তুমি কোনটা সঠিক কোনটা ভুল???না কি বুঝবেই না।যদি মানুষ খুন করা পাপ না হত তাহলে সবার আগে আমি তোমার ঐ অমানুষ ভাইকে খুন করতাম।আমার সোনার সংসার নষ্ট করার জন্য।তবে তাকে একা দোষ দিয়েও লাভ নেই তার সাথে তুমিও সমান অপরাধি।তোমাদেরকে আমি কখন ক্ষমা করবো না।কখন না।আল্লাহ যেন আমার মেয়েদের জন্য এমন কাউকে পাঠায় যারা তোমার কবল থেকে আমার মেয়েদেরকে রক্ষা করবে।তার কাছে দোয়া করা ছাড়াও তো আমি কিছুই করতে পারব না।কেননা আমি যে নিরুপায়।
মিঃ খান কথাগুলো বলে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পরল।আর তখনি তার দরজার সামনের থেকে একটা ছায়া সরে গেল।
(কে ছিল ওখানে🤔)
🌨🌨🌨🌨🌨
রাতের বেলা নীলাভ নিজের রুমে লেপটব কোলে নিয়ে কিছু একটা করছে।তখন সাইফ এসে ওর দরজা নক করল।নীলাভ দরজার দিকে তাকিয়ে সাইফকে দেখে আবার নিজের কাজ করতে করতে বলল….
—ভাই আমি বিবাহিত না।আমি পুরো সিঙ্গেল।তাই আমার রুমে আসার আগে নক করার কোন দরকার নেই।
সাইফ নীলাভের সামনে বসে ওর দিকে ভ্রু কুচকে বলল….
—কারো রুমে আসার আগে নক করতে হয় এটা ভদ্রতা।এখানে বিবাহিত,সিঙ্গেল এর কথা আসছে কেন???
নীলাভ লেপটব বন্ধ করে সাইফের দিকে তাকিয়ে বলল….
—আরে ধুর….আমি বলি কি আর সে বলে কি।এসব মানুষের সাথে কথা বলাও বেকার।
—কথা বলতে হবে না।হাতটা দে।
নীলাভ খুশি হয়ে হাত বাড়িয়ে দিতেই সাইফ পকেট থেকে একটা ঘড়ি বের করে নীলাভের হাতে পড়িয়ে দিল।নীলাভ ঘড়িটা দেখে খুশি হয়ে বলল….
—ওয়াও….
ঘড়িটা তো অনেক সুন্দর হয়েছে।Tnx ভাইয়া।
—তোর পছন্দ হয়েছে???
—আনেক….
নীলাভ সাইফ এর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল….
—কাহিনী কি বলতো???হঠাৎ ঘড়ি গিফ্ট করলে যে???
—কাহিনীর কি আছে। আমি কি তোকে ঘড়ি গিফ্ট করতে পারি না।
—পার বাট তুমি তো শপিং মলেই যেতে চাও না।তোমার জিনিসই তো আমাকে দিয়ে বেশি কিনাও।
—আরে আর বলিস না আজ পিচ্ছির জন্য ঘড়ি কিনতে গিয়েছিলাম।ঘড়িটা পছন্দ হল তোর জন্য নিয়ে আসলাম।
নীলাভ সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বলল….
—কোন পিচ্ছি????
সাইফ নীলাভকে আশুর কথা সব বলল।তারপর হাসতে হাসতে বলল…
—কেউ যে এতো ঘড়ি পাগলি হয় তা ওকে না দেখলে আগে জানতাম না।নিজে ব্যাথা পেয়ে হাত কেটে ফেলেছে সেদিকে তার খবর নেই কিন্তু ঘড়ি নষ্ট হয়ে গেছে দেখে কান্না করছে।বোঝ এবার কতটা ঘড়ি পাগলি।
নীলাভ গাল ফুলিয়ে বলল….
—ও তুমি ওই পাজি মেয়েটার জন্য ঘড়ি কিনতে গিয়ে আমার জন্য ঘড়ি এনেছ।লাগবেনা তোমার ঘড়ি আমার।
নীলাভ সাইফ এর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আবার ফিরিয়ে নিয়ে বলল….
—না এটা দেওয়া যাবে না।এটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।
—এই খবর দার আমার বোনকে পাজি বলবি না।ও মোটেও পাজি না।আর তুই এমন মেয়ে মানুষের মত গাল কেন ফুলাচ্ছিস???এসব ড্রামা বাদ দিয়ে নিজের কাজ কর।দিন দিন একটা বাদর হচ্ছে।
চলবে
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আজ নুহার বাবা,মার কাহিনী কিছুটা ক্লিয়ার করা হয়েছে বাকিটা পরে করা হবে।আজকে নুহা আর আশু বেড়াতে গেছে।তাই তাদের এখানে টেনে আনলাম না। ধন্যবাদ)