ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_01

ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_01
Ariyana Nur

—এতোক্ষনে নবাবজাদীর বাড়িতে আসার সময় হলো বুঝি।তা কলেজ ছুটির পর কোন রাজ কাজে গিয়েছিলেন শুনি??না কি ছেলেদের সাথে ফস্টি নস্টি করতে গিয়েছিলেন যে ফিরতে এতো দেরি হলে।

বাড়ির সদর দরজায় পা রাখতেই আসফিয়া বেগমের এমন লাগামছাড়া কথায় দাড়িয়ে পরে নুহা।চোখের কোনে জল ছলছল করছে।যে কোন সময় তা গড়িয়ে পরতে পারে।নুহা কোন কথা না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে রইল।

নুহাকে চুপ করে থাকতে দেখে তিনি আবার বললেন….

—কিরে নবাবজাদি কথার উওর দিচ্ছিস না কেনো???আমাকে কি চাকর পেয়েছিস যে এক কথা বার বার বলবো??

নুহা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে কাপা কাপা গলায় বলল….

—মা আজকে একটা এক্সটা ক্লাস ছিলো তাই ফিরতে দেরি হয়েছে।

—ঐ তোর কি প্রতিদিনই ক্লাস বেশি থাকে??তোরে না বলছি যাই কিছু হয়ে যাক সময় মত বাড়িতে আসবি।বাড়িতে যে এতো কাজ পরে আছে তা কে করবে শুনি??আমাকে কি কাজের লোক পেয়েছিস তোর সব কাজ আমি করে দিব।

— সরি মা।আর ভুল হবে না।(মাথা নিচু করে)

—রাখ তোর সরি টরি।আর এখন এখানে আর খাম্বার মত না দাড়িয়ে থেকে যা তাড়াতাড়ি কাজে লেগে পর।

নুহা চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে ব‍্যাগ টা রেখে কোন মত ফ্রেস হয়ে কাজ করতে কিচেনে চলে গেলো।গিয়ে দেখে সেখানে সব কিছু ছড়ানো ছিটানো।এদিকে নুহার পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।সকালে কাজ করতে গিয়ে দেড়ি হয়ে গেছে দেখে না খেয়েই কলেজে চলে গেছে।আর কলেজ থেকে ফিরেই যে কপালে খাবার জুটবে সেই ভাগ‍্যও তার নেই।নুহা একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে কাজ করতে শুরু করলো।

নুহা সব কাজ শেষ করে না খেয়েই নিজের রুমে চলে গেলো।এমনি সারাদিনের ক্লান্তি তার উপরে কলেজ থেকে ফিরেই একগাদা কাজ করে নুহার খাবার খাওয়ার ইচ্ছা আর নেই।তার এখন একটা ঘুম দরকার।নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় গা বিছিয়ে দিতেই ঘুমের দেশে পারি দিলো।

_________________________

ঘুমের মধ‍্যেই নুহার মনে হচ্ছে কেউ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।নুহা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই দেখে ওর মাথার সামনে আশু বসে আছে।নুহা চোখ খুলতেই আশু আপি বলে নুহাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।নুহা আশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল….

—আরে পাগলি কান্না করছিস কেনো???কি হয়েছে???

আশু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বলল….

—তুমি পচা তুমি একটুও ভালো না পুরোই পচে গেছো।

নুহা মুচকি হেসে বলল….

—তাহলে পচা মানুষকে যে জরিয়ে ধরে কান্না কেনো করছিস???

—আমি আমার আপিকে ধরেছি তাতে তোমার কি???

নুহা মুচকি হেসে আশুকে জরিয়ে ধরে ওর মাথায় আদর দিয়ে বলল….

—মিস ইউ।

আশু ফট করে নুহাকে ছেড়ে দিয়ে নাক টেনে বলল….

—মিথ‍্যা কথা একটুও আমাকে মিস করোনি।করলে সকালে আমাকে না বলে চলে যেতে না।দেখো আমি আজ কিভাবে স্কুলে গিয়েছি।(মন খারাপ করে)

কথাটা শুনেই নুহার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কেননা আজ সকালে কাজ করতে গিয়ে দেরি হয়ে যাওয়ার জন‍্য আশুকে রেডি হতে সাহায্য না করেই কলেজে চলে যেতে হয়েছে।নুহা নিজেকে সামলিয়ে বলল….

—হয়েছে এবার যা ফ্রেস হয়ে আয়।আমি তোর জন‍্য খাবার রেডি করছি।মনে হয় না তো স্কুল থেকে ফিরে কিছু খেয়েছিস??

—না খাইনি।আর তোমার কিছু করতে হবে না।আমি ফ্রেস হয়ে খাবার নিয়ে এসেছি তুমি খাইয়ে দাও।

নুহা মুচকি হেসে আশুর চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল….

—পাগলী….

আশু ভাব নিয়ে বলল….
—আই নো….

নুহা ফ্রেস হয়ে এসে ভাত মেখে আশুর মুখের সামনে ধরলে আশু না খেয়ে বলল….

—আগে তুমি খাও তার পরে আমি।

নুহা মুচকি হেসে নিজে খেয়ে তার পর আশুকে খাইয়ে দিল।
দুবোন এক সাথে খাওয়া দাওয়া শেষ করার পর নুহা ব‍্যাগ থেকে চকলেট বের করে আশুর হাতে দিতে গিয়ে দেখে হাত কতটুকু কেটে গেছে।তা দেখেই নুহা ব‍্যস্ত হয়ে আশুর হাত ধরে বলল……

—কবে,কখন,কিভাবে কেটেছিস হাত??দেখতো কেমন লাল হয়ে গেছে।তোকে নিয়ে আর পারি না।বড় হলি না আর।ব‍্যাথা করছে অনেক দাড়া আমি মলম দিয়ে দিচ্ছি।তাহলে সেড়ে যাবে।

নুহা আশুর হাত ছেড়ে দিয়ে তারাতারি কাটা ঘায়ের মলম এনে আশুর হাতে লাগিয়ে দিচ্ছে আর হাতের পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুচছে।মনে হচ্ছে ব‍্যথা আশুর হাতে না ওর লেগেছে।

আশু নুহার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে।আশু মাঝে মাঝে নুহার এই ছেলেমানুষী দেখলে অবাক হয় আবার গর্ব হয়।তার এমন একটা বোন আছে যে ওর সমান‍্য ব‍্যথা সহ‍্য করতে পারে না।

নুহা আশুর দিকে তাকিয়ে বলল….
—ব‍্যাথা করছে অনেক???

আশুর নুহার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল….

—না ব‍্যাথা করছে না।আমার আপির হাত লেগে সব ব‍্যাথা জানালা ভেঙ্গে পালিয়ে গিয়েছে।আর বলেছে জীবনেও আশুর কাছে যাবো না।গেলে তার বোন আমাদের ভর্তা করবে।

আশুর ঠোট উল্টিয়ে বেবি ফেস করে কথাগুলো বলল।তা দেখে নুহা হেসে দিল।নুহার মুখে হাসি দেখে আশুর মুখেও বিশ্ব জয় করা হাসি চলে এলে।

খান বাড়ির দুই মেয়ে।নুহা খান আর আশু খান।নুহা বড় আর আশু ছোট।দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ্ দুজনি অনেক সুন্দর। কিন্ত নুহার থেকে আশুর গায়ের রংটা একটু চাপা।
নুহা এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরে আর আশু এবার ক্লাস নাইনে পরে।দুবোন দুবোনের দুনিয়া।একজনের একটু কিছু হলে আপর জন পুরো পাগলের মত হয়ে যায়।নুহা সব সময় আশুকে বোনের মত না নিজের মেয়ের মত আগলে রাখে।
আর আশুর কাছে নুহা ওর মা,বোন,বেষ্ট ফ্রেন্ড সব।

_________________________

নুহা শর্পিং মলের সামনে অনেকক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছে রিকসার জন‍্য।কিন্তু একটা রিকসাও পাচ্ছে না।

আশুর অনেকদিন ধরে বায়না করছে তার নতুন ঘড়ি লাগবে।এবং সেটা নুহাকেই পছন্দ করে কিনে দিতে হবে।নুহা সময়ের জন‍্য এতোদিন আসতে পারেনি।আজ ক্লাস না থাকায় এসে আশুর ঘড়ি আর নিজের দরকারী কেনাকাটা করে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে বাড়িতে ফেরার জন‍্য।

নুহা অনেক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর রিকসা না পেয়ে বিরক্ত হয়ে সামনের দিকে হাটা ধরলো।যদি সামনের থেকে কোন গাড়ি পায় তার আসায়।

কয়েক কদম আগাবার পর দেখে একটা বাচ্চা রোডের মাঝখানে দাড়িয়ে আছে।বাচ্চাটার পাশে কোন মানুষ নেই।নুহা তারাতারি করে বাচ্চাটার সামনে গিয়ে বাচ্চাটাকে নিয়ে সরে আসার আগেই ওদের সামনে একটা গাড়ি চলে আসে।নুহা তা দেখে ভয়ে বাচ্চাটাকে জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে।তখনি নুহাকে কেউ টান দিয়ে সাইয়ে নিয়ে আসে।

ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটার কারনে নুহা বাচ্চাটাকে জরিয়ে ধরে রেখে কাপতে থাকে।

পাশের লোকটি রাগি গলায় বলল….

—ও হ‍্যলো…..
শর্পিং করতে এসে আপনাদের হুস কোথায় থাকে যে নিজের বাচ্চাকে সামলিয়ে রাখতে পারেন না।কেমন মা আপনি???

লোকটির কথায় নুহা হা করে লোকটির দিকে তাকিয়ে রইল।
নুহা কাপা কাপা গলায় বলল….

—দেখুন আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।আমি এই…..

নুহাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে লোকটি ধমক দিয়ে বলল…..

—চুপ….
আর একটাও কথা না।আপনি কেমন মা যে নিজের বাচ্চা রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছে তারপরেও আপনার হুস নেই।ভাবতে পারছেন যদি আমি সময় মত না আসতাম তাহলে আপনাদের কি হত???তা ভাববেন কেন???আপনারা মেয়েরাতো শর্পিং করতে গেলে সব কিছু ভুলেই যান।লোকটি আরো এক গাদা কথা নুহাকে শুনালো।

লোকটির কথা শুনে নুহা এবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।একে তো ভয়ে পেয়ে আছে তার উপরে লোকটার কথায় নুহার আরো ভয় করছে।

নুহাকে কান্না করতে দেখে লোকটি বিরক্ত হয়ে বলল…..
—আপনি….

চলবে….

(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন‍্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here