গল্প-জ্বীন রহস্য,(পর্ব-০৫)
লেখক- Riaz Raj
রিয়াজ তাজকিয়ার পেটে জোরে একটা লাথি মারে। তাজকিয়ার মুখ থেকে এইবার আর একটা শব্দও বের হয়নি। মুখ চেপে সে ফ্লোরে পড়ে থাকে।রিয়াজ ব্যালকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে। এরপর ব্যালকনি থেকেই রিয়াজ বলল,
– তাজকিয়া,আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো তো?
এদিকে তাজকিয়ার শব্দ না পেয়ে রিয়াজ আবার বলল,” তোরে পানি আনতে বলেছি?”। তবুও তাজকিয়া জবাব দেয়নি। রিয়াজ সিগারেটটা ফেলে রাগে গিজগিজ করে রুমে আসে। তাজকিয়া ফ্লোরে শুয়ে আছে। রিয়াজ তাজকিয়ার চুল ধরে মাথা তুলতেই দেখে,তাজকিয়া জ্ঞান হারা অবস্থায় পড়ে আছে। সাথে সাথে রিয়াজ মরিয়ম বেগমকে ডাক দেয়। রিয়াজের চিৎকার শুনে মরিয়ম বেগম দৌড়ে উপরে আসে। এতক্ষণে রিয়াজ তাজকিয়াকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বাহিরে আসে। মরিয়ম বেগম হটাৎ তাজকিয়াকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। তাজকিয়ার মাথায় রক্ত,মুখ থেকেও রক্ত যাচ্ছে। মরিয়ম বেগম তাজকিয়ার হাল দেখে,নিজেই বেহুশ হবার পথে।রিয়াজ তাজকিয়াকে নিয়ে দৌড়ে নিছে যায়। এরপর গাড়িতে বসিয়ে মরিয়ম বেগমকে ডাক দেয়। মরিয়ম বেগম দৌড়ে এসে তাজকিয়াকে ধরে। রিয়াজ ড্রাইভিং করে ছুটতে লাগলো হসপিটাল। এদিকে তাজকিয়ার বাসা থেকেও সবাই দেখে ফেলে। উনারাও রিয়াজের মায়ের সাথে কলে কথা বলে হসপিটাল রওনা দেয়।
গাড়ি হসপিটাল পৌছাতেই রিয়াজ তাজকিয়াকে কোলে নিয়ে ভিতরে যায়। রিয়াজের চিৎকারে ডক্টর দৌড়ে আসে৷ নার্সরা সহ এসে তাজকিয়াকে বেডে শোয়ায়। ডক্টর এসে রিয়াজকে বলে,” স্যার,আপনি বাহিরে যান,আমরা দেখছি”। কথাটা বলার সাথে সাথে রিয়াজ ডক্টরের কলার ধরে এক হাত উপরে তুলে ফেলে। নার্স সহ সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। রিয়াজ ডক্টরকে শূন্যে রেখে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল,” আমার সামনেই চিকিৎসা হবে।আর এক্ষুনি তাকে সুস্থ করতে হবে”। রিয়াজের স্বরে অনেক ভয়ানক ভাব ছিলো। যেনো ডক্টরকে কাচা খেয়ে ফেলবে। এরপর রিয়াজ ডক্টরকে ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। কান্না করতে লাগলো রিয়াজ। ডক্টর কাশি দিতে দিতে দৌড়ে যায় তাজকিয়ার কাছে। রিয়াজ দুই হাতের মাঝে মুখ লুকিয়ে বিশাল চিন্তায় পড়ে যায়।
৫ মিনিট পর ডক্টর বলল,
– স্যার উঠুন।
রিয়াজ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর বলল,
– কিছু হয়নি তো?
– কিছু বলতে কিছুই হয়নি। সামান্য আঘাতে জ্ঞান হারিয়েছে৷ আর এইটা নিয়ে আপনি যে কান্ড করলেন। বাসায় রাখলেও কিছুক্ষণ বাদে জ্ঞান ফিরে আসতো। তবুও আমি ব্যাথার ওষুধ দিয়েছি। সময় মত খাইয়ে দিবেন৷ আর যেকোনো সময় উনাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন।
কথাটা বলে ডক্টর সাহেব মুখ বাকা করে চলে যায়। ডক্টর দরজা খুলে বের হতেই রিয়াজের মা আর তাজকিয়ার ফ্যামিলির অনেকে রুমে প্রবেশ করে৷ সবাই এসে দেখে রিয়াজ গা ভর্তি ঘাম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে এরা তাজকিয়ার কাছে গিয়ে কান্না কাটি লাগিয়ে দেয়। কেও রিয়াজের কাছে এসে জিজ্ঞেস করতে থাকে কি হয়েছিলো। রিয়াজ মুখ তুলে বলে ” আমি বাসায় যাচ্ছি। আম্মুর সাথে তাজকিয়াকে পাঠিয়ে দিবেন”। এইটা বলেই রিয়াজ রুম ত্যাগ করে৷ সবাই কিছুটা বিস্মিত হয়। শায়েলা বেগম তাজকিয়ার পাশে বসার পর পরই তাজকিয়ার জ্ঞান ফিরে৷ আর দেরি না,শায়েলা বেগম বলে উঠলো,
– কি হয়েছে মা। তোমার এই হাল কিভাবে হলো।
তাজকিয়া চোখ মেলে দেখে সে হসপিটাল। সামনে পুরো ফ্যামিলি। এরপর ধীরে ধীরে তাজকিয়া বলল,
– না মা,তেমন কিছু না। বাথরুমে পা পিছলে পড়ে যাই আমি। এরপর আর কিছু মনে নেই।
– তোর গালে আঙ্গুলের চাপ কেন?
কথাটা শুনেই তাজকিয়া ঘাবড়ে যায়। এইবার কি জবাব দিবে।রিয়াজ যে চড় মেরেছে,তা তো লুকাতেই হবে। তাজকিয়া আবার বলল,
– আমি পড়ে যাবার সময় রিয়াজ দৌড়ে এসে আমায় ধরার চেষ্টা করে। আর তখনি গালে ওর হাত লেগে যায়। হয়তো তখন হয়েছে।
– রিয়াজ তোকে ধরলে, তোর কপাল ফাটলো কিভাবে?
– উফফ,এতো প্রশ্ন কেনো করো। উনি কোথায়?
– বাসায় গেছে,বলছে তোকে তোর শাশুড়ীর সাথে পাঠিয়ে দিতে।
– আমাকে হসপিটাল এনেছে কে।
– কে আবার,রিয়াজ নিজেই।
এরপর রিয়াজের পাগলামির কথা শায়েলা বেগম বলে তাজকিয়াকে। নার্স এসেও ডক্টরের সাথে করা আচরণটা সবাইকে বলে দেয়। তাজকিয়া কিছুই বোঝতে পারেনা। রিয়াজ দুই ভাবে আচরণ কেনো করে। নাকি তাকে দিয়ে করানো হচ্ছে। তাজকিয়ার ভাবনা, শেষ প্রান্তে পৌছাতে পারেনা। কারণ যদি রিয়াজের গায়ে সেই জ্বীন প্রবেশ করে এসব করে,তাহলে তো রিয়াজ পরবর্তীতে সব বলতো। ভালো কাজটাও সে সুস্থ মস্তিষ্কে করছে,খারাপ আচরণটাও সুস্থ মস্তিষ্কে করতেছে। তাহলে উত্তর কি হবে। ভাবতে থাকে তাজকিয়া। কিন্তু কোনো উত্তর মিলেনা।
সন্ধ্যা ৭ টা।
তাজকিয়াকে বাসায় নিয়ে আসে মরিয়ম বেগম। রিয়াজ তার রুমে। মরিয়ম বেগম তাজকিয়াকে রিয়াজের রুমে নিয়ে যায়। দুজনেই গিয়ে দেখে রিয়াজ শুয়ে আছে। মরিয়ম বেগম তাজকিয়াকে রুমে ছেড়ে দিয়ে নিছে চলে যায়। তাজকিয়া রিয়াজের পাশে গিয়ে বসে৷ কিছু বলতে যাবে,তখনি রিয়াজ হুট করে বসে যায়।
তাজকিয়া ভয় পেয়ে যায় কিছুটা। হুট করে একটা মানুষ এইভাবে আচরণ করলে যে কেও ভয় পাবে। রিয়াজ বিছানা থেকে দৌড়ে যায় দরজার দিকে। এরপর দরজা বন্ধ করে আবার দৌড়ে আসে। এসে তাজকিয়ার পাশে বসে,তাকে টেনে বুকে নেয়। তাজকিয়া কিছুই বোঝতে পারেনা। এইটা কেমন আচরণ সেটাই ভাবছে। ভয়ে সে রিয়াজকে কোনো প্রশ্নও করছে না।কারণ,তার রাগটা প্রশ্নের পরেই উঠে। তাজকিয়াও রিয়াজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অনেক্ষন পর রিয়াজ তাজকিয়াকে ছেড়ে ওর দুই গালে দুইটা হাত রাখে। তাজকিয়ার চোখ রিয়াজের চোখের দিকে। রিয়াজের চোখে প্রচুর পানি। এতক্ষণ সে কান্না করছিলো। রিয়াজের চোখে পানি দেখে তাজকিয়ার চোখেও পানি এসে যায়। এই পানি আসার কোনো কারণ থাকেনা। অনুভূতিটা নিজে থেকেই যেনো কেদে দেয়। রিয়াজ তাজকিয়ার চোখে চোখ রেখে বলে,” আমাকে ক্ষমা করো”। তাজকিয়ার চোখে এখন আরো বেশি পানি চলে এলো। এই পানি আসার কারণ আছে। এই পানি তখনি আসে,যখন একটা মানুষ কল্পনার বাহিরে বেশি খুশি হয়। রিয়াজ তাজকিয়ার চোখের পানি মুছে দেয়। এরপর তাজকিয়ার ঠোঁটটা কাছে আনতে থাকে। তাজকিয়া দুই চোখ বন্ধ করে দেয়। রিয়াজ ধীরে ধীরে তাজকিয়াকে কাছে আনতে লাগলো। এরপর ঠোঁটের সাথে ঠোঁট স্পর্শ করেই,রিয়াজ তাজকিয়াকে জোরে এক ধাক্কা দেয়।
তাজকিয়া আবারো ভয় পেয়ে যায়। হটাৎ যেনো রিয়াজের রুপ বদলে যায়। রিয়াজ এক লাফে পিছনে চলে যায়। এরপর হাপাতে থাকে। অনেক হয়রান দেখাচ্ছে তাকে৷ তাজকিয়া শুধু রিয়াজের কান্ড দেখে যাচ্ছে। কেমন যেনো অদ্ভুত আচরণ করছে সে। রিয়াজ তাজকিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,” তোর সাহস কি করে হয় আমাকে স্পর্শ করার”?। তাজকিয়া হাবলার মতো তাকিয়ে থাকে৷ রিয়াজ হুট করে তাজকিয়ার সামনে এসে গলা টিপে ধরে৷ তাজকিয়া রিয়াজের হাত ধরে,গলা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। চোখ বড় করে ফেলে তাজকিয়া। রিয়াজ তাজকিয়ার গলা ধরে ধপাস করে বিছানায় ফেলে দেয়৷ তাজকিয়ার ঠোঁট বিছানায় লাগতেই,দাতের সাথে ঘষা খেয়ে ঠোঁট ফেটে যায়। রিয়াজ তার উপরে,তাজকিয়ার ঘাড়ে মুট করে ধরে,বিছানার সাথে চেপে রাখে। পুরো মুখে রক্ত জমে যায় তাজকিয়ার। রিয়াজ এক হাতে তাজকিয়ার মুখ বিছানায় চেপে ধরে,অন্য হাতে কোমর থেকে নিজের বেল্ট খোলা শুরু করে। তাজকিয়া শব্দও করতে পারছেনা। বিছানার চাপে,ওর মুখ আটকে গেছে। রিয়াজ বেল্ট খুলে তাজকিয়ার পিটে জোরে জোরে মারতে লাগলো। তাজকিয়া এক একটা আঘাতে চিৎকার দিতে থাকে। কিন্তু সেই চিৎকারের শব্দ বের হয়না রুম থেকে। বিছানার সাথে মুখ চেপে ধরায়,তাজকিয়ার শব্দ বিছানাতেই কবর হয়ে যায়। রিয়াজ একের পর এক আঘাত করতেই থাকে। শাড়ি আর সেলোয়ারের মধ্যে পিটের সাইট খালি ছিলো। সেই পিটের মধ্যেই বেল্টের আঘাত পড়ছে। বার বার এক জায়গাতেই মারতে থাকে রিয়াজ। আঘাত করতে করতে এক সময় তাজকিয়ার পিট থেকে রক্ত বের হতে থাকে। তাজকিয়া চিৎকার দিয়েও কারো সাহায্য পাচ্ছেনা। কিছুক্ষণ পরে রিয়াজ আঘাত করা বন্ধ করে বলল,” চুপ,একদম চুপ”। রিয়াজের ধমকে তাজকিয়া চুপ হয়ে যায়। রিয়াজ তাজকিয়ার ঘাড় ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসে পড়ে। তাজকিয়া ব্যাথা যন্ত্রণায় উঠতেও পারছেনা। ওভাবেই বিছানায় শুয়ে শুয়ে কান্না করছে। রিয়াজ ঘামিয়ে গেছে। হাপাচ্ছে। হাপাতে হাপাতে তাজকিয়াকে বলল,” গোসল করে নতুন শাড়ি পড়ে নাও। আজকে ডিনার বাহিরে করবো”।
এইটা হচ্ছে এই দম্পত্তির ঘটনা। তাজকিয়া নামক মেয়েটি রিয়াজের অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছে দিন দিন। রিয়াজ এই ভালো,এই খারাপ। যখন মন চাচ্ছে তাজকিয়াকে মারছে, যখন মন চাচ্ছে তাকে আদর করছে। তাজকিয়ার একটাই ভাবনা। রিয়াজের কিছু একটা হয়েছে। সে নিজের ইচ্ছায় এসব করেনা। ওর মধ্যে দুইটা চরিত্র দেখা যায়। তাই তাজকিয়া রিয়াজকে ছেড়েও যায়না। সেদিন রাতে ডিনার করতে গিয়েও একটা ঘটনা ঘটে। তাজকিয়া অনেক কষ্টে লেহেঙ্গা পড়ে।রিয়াজের সাথে ডিনারে যায় একটা রেস্টুরেন্টে৷ চলুন,এরপর জেনে আসি কি হয়েছিলো।
রাস্তার পাশে অনেক বড় একটা রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টের ছাদে মূলত খাবারের আয়োজন করা হয়। ছাদে বিভিন্ন ফুল গাছ আর লাইটিং দিয়ে অনেক সুন্দর করে সাজানো। রিয়াজের গায়ে কালো কোর্ট প্যান্ট। তাজকিয়ার গায়ে লেহেঙ্গা। সব ঠিকঠাক, শুধু তাজকিয়ার চেহারাটা বাদে। ওর চেহারাতে ভয়,হতাশা, আতঙ্ক লেগেই থাকে। দুজনেই একটা টেবিলের সামনে বসে আছে। মুখোমুখি হয়ে।রিয়াজ মুচকি হেসে তাজকিয়াকে বলল,
– কি খাবে বলো।
– আপনার যা মন চায় অর্ডার দিন।
– তোমার ফেভারিট কিছু নেই?
– আপনি যা খাবেন,সেটাই আমার ফেভারিট৷
– তা কিভাবে।
একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে তাজকিয়া রিয়াজের চোখে তাকায়। এরপর নরম গলায় বলল,
– আপনাকে যেদিন থেকে দেখেছি,ছাদে বসে বসে চা খান। সেদিন থেকে আমি সকালে চা খাওয়ার অভ্যাস করেছি। যেদিন দেখেছি পাড়ার ছেলেদের সাথে মিলে আপনি বিরিয়ানির পার্টি দিয়েছেন। সেদিন থেকেই আমি বিরিয়ানি পছন্দ করতাম।যেদিন দেখেছি দোকানদার আপনাকে চকলেট দিয়েছে,মানে দুই টাকা ভাংতি ছিলনা বলে উনি আপনাকে চকলেট দেয়। আপনি সেই চকলেট ফেলে দিয়ে বললেন,চকলেট আপনি খাননা৷ সেদিন থেকে আমিও চকলেট খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। সব ধরনের চকলেট। আপনার পছন্দ আমার পছন্দ। আপনি যা ইচ্ছে অর্ডার করুন। ওটাই আমার পছন্দ।
কথাগুলো শুনে রিয়াজের মুখ কালো হয়ে যায়৷ এরপর কর্মচারীদের ডাক দিয়ে কিছু খাবারের অর্ডার করে। খাবার আসতে ৫ মিনিট লেট হবে। এই ৫ মিনিটই রিয়াজ মুখ কালো করে বসে ছিলো। এদিকে টেবিলে খাবার আসতেই রিয়াজ তাজকিয়ার প্লেট ওর দিকে এগিয়ে দেয়৷ আর নিজেরটা নিজে টেনে নেয়।তাজকিয়া রিয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়াজ চামচটা হাতে নিয়ে,বিরিয়ানিতে দেয়। এক চামচ বিরিয়ানি মুখ নিয়ে রিয়াজ দাতের নিছে ঘষতে থাকে। তাজকিয়াও হাত দিয়ে চামচ নিয়ে খেতে যাচ্ছিলো। তখনি রিয়াজ বসা থেকে উঠে তাজকিয়ার প্লেটটা নিয়ে নেয়৷ তাজকিয়া চামচ হাতে নিয়ে রিয়াজের দিকে তাকাতেই, রিয়াজ পুরো বিরিয়ানির প্লেট তাজকিয়ার মাথায় ঢেলে দেয়।
কর্মচারী সহ সবাই রিয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে। রেস্টুরেন্টের আরো মানুষজনও অবাক হয়ে তাদের দেখে যাচ্ছে। তাজকিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলে। রিয়াজ এক লাথি দিয়ে টেবিলটা ভেঙ্গে ফেলে। সবাই আরো অবাক হয়ে যায়। তাজকিয়া ভয়ে চিৎকার দিয়ে দুই হাত পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। রিয়াজ তাজকিয়ার চুল ধরে টানতে টানতে রেস্টুরেন্টের দরজার দিকে নিয়ে আসে। একটা কর্মচারীকে ডাক দিয়ে,পুরো মানিব্যাগ দিয়ে দেয়। এরপর তাজকিয়ার চুল ধরেই রিয়াজ রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতে লাগলো। তাজকিয়া রিয়াজের হাত ধরে কান্না করা শুরু করে। রিয়াজ এইবার তাজকিয়ার চুল ছেড়ে মাথায় থাপ্পড় মারতে থাকে।আর বলতে লাগলো, ” বাসার দিকে যা? “। মাথায় থাপ্পড় মারতে মারতে রেস্টুরেন্ট থেকে বের করে তাজকিয়াকে। রেস্টুরেন্টের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে শুধু।
রাস্তা অব্দি এনে,তাজকিয়াকে গাড়িতে উঠতে বলে রিয়াজ। তাজকিয়া গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করতে লাগলো। রিয়াজ নিজের হাতে দরজা খুলে তাজকিয়ার চুল ধরে আবার। এরপর ধাক্কা দিয়ে গাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়।দরজা বন্ধ করে,এপাশে এসে নিজেও গাড়িতে উঠে। এরপর গাড়ি স্টার্ট করে সোজা বাসার দিকে রওনা করে রিয়াজ।
কিছুক্ষণ বাদেই গাড়ি নিয়ে রিয়াজ বাসার নিছে আসে। এরপর তাজকিয়াকে গাড়ি থেকে বের করে রুমে নিয়ে যায়। তাজকিয়ার চুলে এখনো বিরিয়ানির ঝোল আর চাউল লেগে আছে। বাসার কলিং বাজাতেই মরিয়ম বেগম দৌড়ে এসে দরজা খোলে।
দরজা মেলতেই রিয়াজ তাজকিয়ার হাত ধরে টেনে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। মরিয়ম বেগম হা করে তাকিয়ে আছে। সেজেগুজে হাসিমুখে বের হয়েছিলো ওরা। কিন্তু এইভাবে ফিরলো কেন,কিছুই বুঝতে পারেনা মরিয়ম বেগম। উনি রিয়াজের পিছু পিছু যেতে চাইলে, আবার থেমে যায়।কারণ রুমে ঢুকে রিয়াজ দরজা বন্ধ করে দেয়।
এদিকে তাজকিয়াকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে রিয়াজ ব্যালকনিতে চলে যায়। তাজকিয়া বিছানায় শুয়ে কান্না করতে থাকে। রিয়াজ ব্যালকনিতে গিয়ে সিগারেট ধরায়৷
কিছুক্ষণ পর সিগারেট হাতে করে নিয়েই রিয়াজ রুমে আসে। এসে তাজকিয়াকে আবার তোলে। কান্না করতে করতে মেয়েটির মুখ লাল হয়ে যায়। রিয়াজ সিগারেট ফ্লোরে ফেলে দিয়ে তাজকিয়াকে বলল,
– তোমার এই হাল যে করেছে,তাকে আমি ছাড়বো না। ওয়াদা করলাম।
রিয়াজের কথা শুনে তাজকিয়া মুখ তুলে তাকায়৷ দেখে রিয়াজের চোখ আগুনের মতো জ্বলছে। তাজকিয়া অবাক হয়ে যায়, কারণ সেই জ্বীনের চোখও এইভাবে আগুনের মতো জ্বলতো৷ রিয়াজ তাজকিয়াকে বলল, ” ঠিকই শুনেছো,আমি তাকে ছাড়বো না। একটু অপেক্ষা করো”। বলেই রিয়াজ এক দৌড় দেয়। তাজকিয়া তাকিয়ে থাকে। রিয়াজ দৌড়ে ব্যালকনিতে এসে এক লাফ দেয়৷ তাজকিয়া জানালা দিয়ে স্পষ্ট দেখে,রিয়াজ ব্যালকনি থেকে লাফ মেরে নিছে নয়,উপরের দিকে উড়ে উঠে গেছে।
চলবে……?
চলা গল্পের মোড় থেমে যায় আরো একটা রহস্যের মাঝে। তবে কি এই গল্পে আরো কোনো চরিত্র আছে? তাজকিয়াকে বার বার যেহেতু রিয়াজই অত্যাচার করে,তবে রিয়াজ কাকে উদ্দেশ্য করলো। তাজকিয়ার জীবন কি এইভাবেই চলবে। রিয়াজ কে? কি তার পরিচয়৷ তার ভিতরে জ্বীন প্রবেশ করলে, নিজ জ্ঞানে সে কেনো করেছে অত্যাচার? রহস্য কোথায়?]