গল্পের নাম: হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে,পর্বঃ১৮ You are thensource of my happiness
নবনী নীলা
” হুম বুঝেছি তোমার আমার কোলে উঠার শখ হয়েছে।”,বলে অভি আমার টেনে হাত ধরে কাছে নিয়ে এলো। আমাকে কি সত্যি জোর করে নিয়ে যাবে?
ওই ফ্ল্যাটে আমার যেতেই ইচ্ছে করছে না। আরো কোথায় কোথায় কি লুকানো আছে কে জানে। অভি কি একটা চিন্তা করে আমার হাত ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। এখন কি মত বদলালো নাকি!
অভি কিছুক্ষণ পরেই রুমে এসে বললো,” বেবস্থা করে এসেছি।”
” বেবস্থা করে এসেছেন মানে কি?”, ভ্রু কুঁচকে বললাম।অভি নিজের জামার হাতা ভাজ করা আছে কিনা দেখে বললো,” আমার শাশুরির বেবস্থা করলাম।”
” কি বলেন এইগুলা। আমার মা কোথায়?”,বলে মা মা বলে ডাকতে লাগলাম।
অভি আমার কাছে আসে আমার মুখের সামনে হাত দিয়ে আমার চিৎকার বন্ধ করে বললো,”কিছু করিনি, চুপ করো। রচনা তোমার মাকে ছাদে নিয়ে গেলে তোমাকে নিয়ে যাবো। শাশুড়ির সামনে কোলে নিয়ে যাওয়াটা ভালো দেখাবে না।”
” আপনি কি আমাকে কিডন্যাপ করবেন!আমি তো একবার বলেই দিয়েছি আমি যাবো না। আপনি চলে যান।”, আমার কথা শেষ না হতেই রচনা রুমে ঢুকে পড়ল।
” অভিদা আমি আন্টিকে নিয়ে ছাদে গেলাম।”,বলে রচনা চলে গেলো।
” চলো “,বলে অভি সত্যি সত্যি আমাকে কোলে নিলো। আমি আমার মাকে ডাকলাম কিন্তু মাকে রচনা ছাদে নিয়ে গেছে আমি চিৎকার করতে গেলাম কিন্তু চিৎকার করলে পাড়া প্রতিবেশী এভাবে জামাইয়ের কোলে দেখলে লজ্জা। এনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
এমনেই দারোয়ান আংকেল এভাবে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। এইগুলার কোনো মানে হয়? অভি আমাকে গাড়ীতে বসিয়ে নিজেও বসলো। আমি ঠোঁট উল্টে বসে আছি।আমি সারা রাস্তায় কথা বললাম না।
আমি গাড়ী থেকে নামতে চাইলাম না অভি আমার হাত ধরে টেনে বের করলো। আমাকে বাধ্য হয়ে আসতে হয় নইলে আবার কোলে নিয়ে বসবে। অ্যাপার্টমেন্ট এর লোকেরা দেখলে সেটা মোটেও ভালো হবে না।
ফ্ল্যাটে ঢুকতেই আমার ড্রয়ারে থাকা জিনিসগুলোর কথা মনে পড়লো।আমি থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার থাকতে ইচ্ছে হলো না।
” কি হয়েছে তোমার?”,বলে আমার হাত ধরতে এলে আমি আমার হাত সরিয়ে নিলাম।
অভি আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার হাত শক্ত করে ধরে আমাকে রুম নিয়ে এলো। রুমে এসে ড্রয়ার থেকে সেগুলো বের করে আমার কাছে এলো। এইগুলো নিয়ে আমার কাছে আসছে কেনো? আমার কান্না পাচ্ছে।
অভি আমার সামনে সেগুলো ধরে বললো,” তোমার আমাকে একবার প্রশ্ন করা উচিৎ ছিলো, রাইট? এইগুলার জন্য তুমি আমার সাথে আসতে চাইছিলে না? একটু বিশ্বাস করতে আমাকে।”
আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি কিছু বললাম না। আমার কিছু না বলায় অভি রেগে গেছে,” নওরীন তুমি কথা বলছো না কেনো? আমার দিকে তাকাও।” আমি তাকালাম না।
“I can’t tolerate this ignorance. নওরীন stop this. Don’t make me angry. I need to end this.”, বলে অভি আমার একপাশের দেওয়ালে হাত দিয়ে আমার দিকে ঝুকে এলো। আমি অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার এইগুলো ভালো লাগছে না।
হটাৎ অভি নিজের আরেক হাত দিয়ে দেওয়ালে জোড়ে ঘুষি মারলো।
শব্দে আমি চমকে উঠে অভির হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি হাত ছিলে গেছে। অভি চোখ মুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না আমি রেগে বললাম,” আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কি করলেন এটা।”,বলে অভির হাত ধরতে নেই অভি নিজের হাত সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আমি অভির পিছনে গেলাম অভি কিচেনে গিয়ে ম্যাচের কাঠি দিয়ে ড্রয়ারে থাকা সমস্ত জিনিস পুড়িয়ে দিলো। আমি বাধা দিতে গেলাম কিন্তু লাভ হলো না। মুহূর্তে আগুন লেগে সব কিছু ছাই হয়ে গেলো। আমি আগুন নিভাতে গেলাম অভি আমার হাত ধরে আমাকে আটকালো। চোখের সামনে সব কিছু ছাই হতে লাগলো।
” আপনি কি করছেন ? ঘরে আগুন লাগে যাবে, ছাড়ুন আগুন নিভাতে হবে।”, বলে আমি হাত ছাড়াতে চাইলাম অভি ছাড়লো না। কিছুক্ষণ পর সব পুড়িয়ে দিয়ে আগুন নিজে নিজে নিভে গেলো।
এই কিছুক্ষনের মধ্যে কি হলো আমি কিছুই বুঝতে পরলাম না। আগুন নিভার সাথে সাথে অভি আমার হাত ছেরে দিলো। আমি রেগে বললাম,” আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কি করলেন এইটা।”
“এই কাজটা আমার আরো আগে করা উচিত ছিলো। আমার জীবনে অথৈ আর অথৈ সংক্রান্ত কোনোকিছুর অস্তিত্ব থাকবে না। অথৈ আমার অতীত, আমার জীবনে এখন শুধু তোমার অধিকার আছে। You’re the source of my happiness কিন্তু তুমি সেটা কোনোদিন বুঝতেও চাও নি। আর কিভাবে বললে তুমি বুঝবে?”, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভি কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলো।
আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম। আমি কেনো এমন না বুঝে অভিকে কষ্ট দিলাম। আমার জন্য নিজের হাতের কি অবস্থা করলেন।সব হয়েছে ওই ডাইনিটার জন্য একবার যদি সামনে পাই আমি মেরেই ফেলবো। আমি এখণ অভির মুখোমুখি হবো কি করে? আমার উপর রেগে আছে।
আমি হাতে তুলা আর ব্যান্ডেজ নিয়ে অভিকে খুঁজতে রুমে এলাম সে রুমে নেই। কোথায় গেলো? আমি করিডোরে গেলাম অভি ফ্লোরে ডানপা হাঁটু ভাজ করে তার উপর ডানহাত রেখে বসে আছে। কাছে গিয়ে কি বলবো? আমি এতো ভয় পাচ্ছি কেনো? আমার জামাই আমি কাছে যাবো না তো কে যাবে ?
আমি গিয়ে অভির পাশে বসলাম। অভি আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আমাকে ইগনোর করছে কতো বড় সাহস! আমিও দেখি কিভাবে ইগনোর করে। আমি তুলাতে ওষুধ নিয়ে অভির হাত ধরতেই সে বললো,” এসবের প্রয়োজন নেই।” হাত সড়িয়ে নিলো।
উনি আমাকে দূরে সরাতে চায়? এখন অধিকার বোধ বেড়ে দশগুণ হয়েছে আমার।
আমি অভির কোলে উঠে বসে পড়লাম। গন্ডগোল আমি করেছি ঠিক আমাকেই করতে হবে। আমি এমন কাণ্ড করবো অভি বুঝেনি, সে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অভির চোখে ক্লান্তির ছাপ আজকে আমার জন্য বেচারার উপর দিয়ে কতো কিছু না গেলো।
আমি অভির গলার পিছনে দুই হাত রেখে নিচু স্বরে বললাম,” সরি আমি আর কোনোদিন এমন করবো না।”
অভি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে, মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। এটা কি হলো ? এতো সুন্দর করে রোমান্টিক ভাবে সরি বললাম উনি উল্টে ভাব নিচ্ছেন। কোথায় আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে it’s ok। এমন বেরসিক আমি আমার জীবনেও দেখি নি।
আমি রেগে বললাম,”আমি এতো সুন্দর করে রোমান্টিক ভাবে সরি বললাম আপনি মুখ ঘুরিয়ে নিলেন কেনো?” অভি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।
এভাবে মান ইজ্জত ডুবিয়ে কারো কোলে বসে থাকার কোনো মানে আছে?কোনো মানে নেই। ধুরো উঠে গিয়ে ফ্লোরে বসি আর জীবনেও এনার কোলে উঠবো না।
উঠে যেতেই অভি আমার আমার কোমড় আর এক হাত ধরে কাছে টেনে নেয়। কোমড়ের পাশের কাপড় সরে যাওয়ায় আমার শরীর কেপে উঠলো। অভি বললো,”ওটা বুঝি রোমান্টিক ভাবে সরি বলা ছিলো?”
” আমি জানি না।আপনার হাত দিন, ওষুধ লাগবো”, গাল ফুলিয়ে বললাম।
” হাত দিবো না তুমি আমাকে অনেক suffar করিয়েছো। আমি এতো সহজে ভুলবো না। আমি এতটুকুতে মানছি না।”, বলে অভি অন্য দিকে তাকালো।
” মানে! কি করতে হবে?”, না বুঝে বললাম।
অভি ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। এনার মতলব ভালো না। কি করতে চাচ্ছে? কোলে বসে মস্ত বড় ভুল করেছি। আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,” কি করতে চাচ্ছেন আপনি!”
” করলেই বুঝতে পারবে।”,বলেই আমার ঠোটে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো। আমি নড়াচড়া করতে পারলাম না আমার শরীর বরফ হয়ে গেছে।আমি আর পারছি না অভিকে সরিয়ে দিয়ে আমি সামনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম।
“আর কতক্ষন চোখ বন্ধ করে থাকবে?অভি ওর হাতটা আমার সামনে রেখে বললো,” আমার হাতে কি করবে,শেষ করো।”
আমি চোখ খুলে অভির হাতে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলাম। হাতের দিকে তাকিয়েও লজ্জা লাগছে কি অদ্ভুত ব্যাপার!
আমার সাথে কোনো কাপড় নেই এই লোকটা আমাকে এভাবে নিয়ে আসছে কোনো কাপড় অনে নাই এবার আমি কি পড়বো? রাগ করে সব কিছু নিয়ে গেছিলাম এখানে কিছুই নেই আমার। এদিকে আমি গোসল করে বসে আছি কাপড় আনার প্রয়োজনবোধ করিনি। কাপড় না নিয়ে আমি এলাম কেনো লজ্জায় মাথা হ্যাং হয়ে গেছে।
আমি এমন কেনো? এবার আমি করবো কি? অভিকে ডাকবো ধুরো ওনাকে ডেকে কি হবে? উল্টে আরো বিপদ হয়। কিন্তু ভেজা জামা কাপড় নিয়ে কি করবো?
আমি দরজা খুলে দেখার চেষ্টা করলাম অভি রুমে আছে কিনা? উনি ফোনে কথা বলছেন।আমি কথা শেষ হবার অপেক্ষা করলাম। এইতো শেষ হয়েছে।
আমি অভিকে ডাকলাম,” নওরীনের জামাই, ও নওরীনের জামাই।”
[ চলবে ]