গল্পের নাম:প্রেম পায়রা,পর্ব ০৮
লেখনীতে:অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
দরজা খুলে সম্পদের কোলে তিথিকে দেখে খুশিতে মন নেচে উঠলো রেশমার।পরমুহূর্তে খেয়াল হলো তিথি সম্পদের কোলে কেন?দুজনের গা কাঁদায় মাখামাখি।তিনি এভাবে দুজনকে দেখে চমকে গেলেন।চিন্তিত কন্ঠে বললেন,
—‘বাবা সম্পদ!তিথির কি হয়েছে?তোমাদের এ অবস্থা কেন?এই তিথি কি হয়েছে রে?’
সম্পদ আশ্যস্তের সুরে বলল,
—‘চিন্তা করবেন না।তিথি কাঁদায় পড়ে গেছে।’
—‘তোমরা গাড়িতে আসোনি?’
—‘হুঁ!গাড়িতেই!এই যে মেইন গেট থেকে এতটুকু আসতে পড়ে গেছে।’
রেশমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।তিথির পড়ে যাওয়ার অভ্যাস আছে।প্রায়ই শুকনো,খটখটে মেঝেতে পড়ে যেত।কতগুলো চায়ের কাপ আর গ্লাস যে ভেঙেছে তার ইয়ত্তা নেই।একবার একটু মারাত্মক ইনজুরি হয়েছিল।পা ফুলে ব্যান্ডেজ করতে হয়েছিল।তিনি হাসিমুখে বললেন,
—‘তিথি, ইনজুরি হয়নি তো?কোথায় ব্যথা পেয়েছিস?’
তিথি রুদ্ধ সুরে বলল,
—‘বাম পায়ে বড় মা!তুমি কেমন আছ?’
রেশমার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেল।পা ভেঙে গেল না তো?নতুন নতুন বিয়ের পর একের পর এক বিপদ আসতে থাকে।তিনি ‘কেমন আছ’ -র উত্তর না দিয়ে সম্পদকে তাড়া দিয়ে বললেন,
—‘ভেতরে এসো শীঘ্রই!’
রেশমার পিছু পিছু সারা ঘরে ছোপ ছোপ কাঁদা মেখে সম্পদ এগিয়ে গেল।মাঝের কয়েক হাত ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে ছিল নিশান!দুজনকে দেখে বিস্ফারিত নয়নে দাঁড়িয়ে পড়লো।
রেশমা হতাশ সুরে বলল,
—‘দেখেছিস নিশান।দুজনের কি অবস্থা।তিথিটার ধপাস ধপাস পড়ে যাওয়ার অভ্যাস এখনো গেল না।’
নিশানের উপস্থিতি টের পেয়ে তিথি চোখ বন্ধ করলো।নিশানের গলা জড়িয়ে রাখা হাত দুটো আরো শক্ত হয়ে এলো।সে চোখ খুলবে না।কিছুতেই নিশান ভাইয়ের চোখে চোখ রাখবে না।দেখবে না ওই মুখ!
নিশানের সাথে সম্পদের কখনো কথা হয়নি।তবে সম্পদ নিশানকে দেখেছে এর আগে।সে নিশানের দিকে চেয়ে প্রসন্ন হাসি হেসে বলল,
—‘হাই!কি খবর?’
নিশান সৌজন্য মূলক হাসিটুকুও হাসলো না।থমথমে মুখে শুধু বলল,
—‘ভালো!বসুন আপনারা!আমি একটু আসছি।’
এটুকু বলে ফোন কানে নিয়ে দক্ষিণ দিকে চলে গেল।ইতোমধ্যে তুলি রান্নাঘর থেকে বের হয়েছে।তিথিকে দেখে চোখে মুখে অথই হাসি উপচে পড়ছে।তিথির কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
—‘আপু কেমন আছ?দেখে তো দূর্দান্ত মনে হচ্ছে!’
তিথি চোখ খুলে তুলির দিকে তাকালো।সম্পদের বাহুডোরে মোচড়ানো শুরু করলো।নামাচ্ছে না কেন?সে তুলির দিকে দিয়ে চেয়ে স্বাভাবিক ভাবে বলল,
—‘তুলি তুমি কেমন আছ?’
—‘আমিও ভালো।ইশ!কিভাবে দুজন কাঁদায় মাখামাখি হয়েছ!’
তুলি দ্রুত ডাইনিং থেকে কাঠের চেয়ার নিয়ে এলো।সম্পদের সামনে রেখে বলল,
—‘ভাইয়া,আপুকে বসিয়ে দিন।আপনি ফ্রেশ হন!’
সম্পদ তিথিকে সাবধানে চেয়ারে বসিয়ে দিল।তার চোখে মুখে গভীর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।সে তিথির বাম পা টা হাঁটুর উপর নিয়ে জুতা খুলে ফেলল।হালকা একটু নড়াচড়া করতেই তিথি ব্যথায় কুঁকড়ে গেল। তিথির মুখ পানে চেয়ে বুকের ভেতর পুড়ে গেল তার।তিথির কষ্ট টুকু যেন উপলব্ধি করতে পারছে।সে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
—‘বড় মা!ওকে হসপিটালে নিতে হবে।কষ্ট হচ্ছে ওর!’
রেশমা পা টা পরখ করলো।সিরিয়াস ইনজুরি মনে হচ্ছে।মেয়েটা এত্তো বেখেয়ালি কেন!সেই সাথে সম্পদের তিথির প্রতি এতটা কনসার্ন দেখে তার মন ভরে উঠলো।মেয়েটাকে উপযুক্ত ছেলের হাতে তুলে দিতে পেরেছে।তিনি বললেন,
—‘এই ভেজা কাপড়ে কি করে যাবে?কাপড় পাল্টে যাও!’
—‘চেন্জ করছি।তুলি তুমি বরফ নিয়ে আসো তো!’
সম্পদের কথায় তুলি ফ্রিজ থেকে বাটিতে করে বরফ নিয়ে আসলো।সম্পদ পকেট হাতড়ে সাদা রুমালটা বের করল। বরফ ভেতরে পেঁচিয়ে তিথির পায়ে চেপে ধরলো।তুলি এগিয়ে এসে তিথির হিজাবের পিনগুলো ছাড়িয়ে মাথা আলগা করলো।
তিথি এই ফাঁকে চারপাশে নজর বুলাল।সিদ্দিকুর রহমানকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।সে ভেজা চোখে রেশমাকে বলল,
—‘বড় বাবা কোথায়?দেখছি না তো!’
—‘ফার্মাসিতে গেছিল বৃষ্টির আগে।গিয়ে আটকে পড়েছে বোধ হয়।এসে পড়বে।’
রেশমা ড্রয়িং রুমের কাচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল।বৃষ্টির বেগ কমে এসেছে।ঝিরিঝিরি, ইলসে গুঁড়ি বৃষ্টি!তিনি সম্পদের হাত থেকে বরফ নিয়ে বললেন,
—‘বাবা,তুমি ভেজা কাপড় পাল্টে নাও।আমি বরফ দিচ্ছি।’
নিতান্ত অনিচ্ছায় সম্পদ উঠে দাঁড়ালো।দ্বিতীয় বার বাইরে বের হয়ে গাড়ির কাছে গেল।ভেতর থেকে কাপড়ের ব্যাগটা বের করে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে দৌঁড় দিল।দুপুরে সে সিদ্দিকুর রহমানের সাথে কথা বলে কাপড় গুছিয়ে তারপর তিথিকে আনতে গেছিল।
১৫.
নিশান রাত করে বাড়ি ফিরল।ড্রয়িং রুমের দরজা খোলা ছিল।তুলিকে একটু আগে ফোন করে দরজা খোলা রাখতে বলেছিল।ভেতরে ঢুকে নিঃশব্দে সে দরজা বন্ধ করলো।ড্রয়িং রুমে ক্ষীণ আলোর রেখা।আবছা আলোতে সে এগিয়ে গিয়ে সোফায় বসল।
ঠিক এই জায়গাটাতে সন্ধ্যা বেলা তিথি বসেছিল।ডাক্তার তার পা ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।সিরিয়াস ইনজুরি নয়।হাঁড় ভেঙে যায় নি।শুধু মচকে গেছে।এক সপ্তাহের মতো বেড রেস্টে থাকতে বলেছে।এসব কিছু সে আড়ালে থেকে শুনেছে।
তিথির পায়ের ব্যথার কথা শুনে সে স্থির থাকতে পারেনি।ভয়ানক অস্থিরতা নিয়ে তিথির সামনে দাঁড়িয়েছিল।বিনিময়ে তিথি তীক্ষ্ণ চোখে তার দিকে চেয়েছিল।একটু খেয়ালে আসতে বুঝতে পারলো তিথি নিজের একমাত্র ভরসার স্থান ভেবে শক্ত হাতে সম্পদের হাত চেপে ধরে আছে।সে আর দাঁড়ায়নি!হন্তদন্ত হয়ে বাইরে বের হয়ে গেছিল।
আবছা আলো আঁধারিতে একটা রমণীর অস্পষ্ট ছায়া পড়লো নিশানের চোখের সামনে।সে আগ্রহ ভরে তাকাতে ছায়াটির মুখ স্পষ্ট হলো।তুলি এসে দাঁড়িয়েছে।নিশান চোখ নামিয়ে নিতে তুলির ঘুমজড়ানো কন্ঠ কানে এলো।ক্ষীণ স্বরে বলছে,
—‘আপনি রাতের খাবার খাবেন না?খাবারের এত অনিয়ম করেন কেন বলুন তো?’
সে চোখ বন্ধ করে আবার খুলল।সোফায় হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে বলল,
—‘বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।’
—‘অতি উত্তম!আমি যাই।কাঁচা ঘুম ভেঙে এসেছি।’
তুলি লম্বা একটা হাই তুলে রুমের দিকে এগিয়ে গেল।সে যেতে নিশান আগ্রহ নিয়ে তুলির গমন পথের দিকে চেয়ে রইলো।এই মেয়েটা বড্ড অদ্ভুত।তার প্রতি একদম নিস্পৃহ।চাওয়া নেই,কোনো বায়না নেই!নেই কোনো আবদার।কোনো কিছুতে তার যেন কিচ্ছু আসে যায় না।ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠবে।মায়ের সাথে সাথে নাস্তা তৈরি করবে।সারাদিন মায়ের সাথে গল্প গুজব করবে।খুব সুনিপুণ ভাবে নিশানকে ইগনোর করবে।রাতের বেলা দু একটা প্রয়োজনীয় কথা বলে ফ্লোরে শুয়ে পড়বে।শুয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ কানে আসবে!
মাঝে মাঝে তার ঘুমন্ত মুখের দিকে অনেক রাত অবধি চেয়ে থাকে নিশান।কখনো কখনো অদ্ভুত ইচ্ছে জাগে মনের কোণে।কিন্তু সে ইচ্ছে ডালপালা গজিয়ে বিস্তৃতি লাভের আগে ছেটে ফেলে।তবুও নিশানের মন চায় মেয়েটা একটু নিজের কথা ভাবুক।একটু অধিকার ফলাক।মন খারাপের সন্ধ্যায় তার পাশে বসে একটু গল্প করুক।তার কষ্টটা ভাগাভাগি করে নিক!
ক্লান্ত শরীর ও মন নিয়ে নিশান উঠে দাঁড়ালো।মাথা ঘুরিয়ে উত্তর দিকে তাকাল।তিথির রুমে আলো জ্বলছে।কি করছে ওরা?তিথিকে দেখে তার মনে হলো সে ভালো আছে।সুখে আছে।কত দ্রুত সে ভুলে গেল তাকে।কি অদ্ভুত!
নিশান নিজের রুমের দিকে পা বাড়াল।অনিবার্য নিয়তি বলতে একটা কথা আছে।সেটা কেউ খন্ডাতে পারে না।নইলে তাদের জীবন এমন কেন হবে?সেদিন মিরাজই বা কেন না আসবে!সে আর তুলি ভাই-বোন পরিচয় দেয়ার পরো কেন লোকগুলো বিশ্বাস না করে জোর করে বিয়ে পড়িয়ে দিবে!
নিশান নিজের রুমে ঢুকলো।লাইট অন রেখেই তুলি ফ্লোরে শুয়ে পড়েছে।রুম প্রচন্ড রকম ঠান্ডা।এখন বৃষ্টি নেই।তবে ঝড়ো হাওয়া বইছে বাইরে।সে তুলিকে অভারটেক করে জানালার কাছে দাঁড়াল।ওপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার।সে নিকষ কালো অন্ধকারের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো।অতঃপর জানালা গুলো আটকে বেলকনির পর্দা টেনে দিল।এক পলক তুলির দিকে চেয়ে লাইট অন রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
গায়ে কম্বল জড়ানোর পরো শীত কমলো না নিশানের।উল্টো ঘুরে তুলিকে দেখে তার বড্ড মায়া লাগল।মেয়েটাকে অহেতুক কষ্ট দিচ্ছে সে।এই শীতের মধ্যে বিছানায় শুয়ে তার শীত কমছে না,অথচ মেয়েটা দিব্যি ফ্লোরে শুয়ে আছে।নিশান চট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল।তুলির দিকে চেয়ে স্বাভাবিক ভাবে ডাকল,
—‘তুলি?এই তুলি?ঘুমিয়ে পড়েছ?’
তুলি কোনো উত্তর দিল না।তার চোখ বন্ধ।নিশান আরো দু বার ডাকলো।তুলি তবুও প্রতিত্তর করলো না।উত্তেজনায় নিশান বিছানায় উঠে বসলো।প্রথমবার,জীবনে প্রথমবার কাউকে তার পাশে ঘুমানোর অধিকার দিতে চাইছে আর সে কি না এভাবে অবহেলা করছে?সিরিয়াসলি?
নিশান ধমকে বলল,
—‘এই তুলি?আমি জানি তুমি জেগে আছ!’
তুলি চোখ খুলল।নিশানের দিকে এক পলক চেয়ে চোখ সরিয়ে নিল।ফের চোখ বন্ধ করে বলল,
—‘কি হয়েছে নিশান ভাই? খামোখা চিল্লাচিল্লি করেন কেন?’
—‘বিছানায় এসো।’
নিশানের নির্লিপ্ত কন্ঠে তুলি এক লাফে উঠে বসল।বিস্ফারিত নয়নে কিছুক্ষণ নিশানের দিকে চেয়ে রইলো।বিড়বিড় করে বলল,
—‘আমি নির্ঘাত স্বপ্ন দেখছি!’
নিশান বিরক্তি নিয়ে বলল,
—‘কি হলো শুনছে পাচ্ছো না?বিছানায় এসে ঘুমাও!আজ বেশি শীত পড়েছে।ঠান্ডা লেগে যাবে।’
তুলি কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইলো।হঠাৎ একটানে গায়ে কাঁথা পেঁচিয়ে চোখ মুখ ঢেকে শুয়ে পড়লো।ভেতর থেকে বলল,
—-‘আমি একদম ঠিক আছি।আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।’
—‘বললাম তো এখানে এসে শুয়ে পড়ো।’
—‘বললাম তো আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।আমি ঠিক আছি।’
নিশানের মাথায় রক্ত উঠে গেল।মেয়েটা তো ভারী ত্যাঁদড়!সে চিনতে ভুল করেনি তো?কি পাজি!সে বার বার বলছে তারপরো কিভাবে ইগনোর করছে।নিশান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—‘শেষ বারের মতো বলছি।বিছানায় আসবে নাকি আসবে না?হ্যাঁ,অথবা না!’
তুলি মুখ ঢাকা অবস্থাতে দৃঢ় কন্ঠে বলল,
—‘না!’
নিশান আর এক সেকেন্ড অপেক্ষা করলো না।একটানে গায়ের কম্বল সরিয়ে তুলির দিকে এগিয়ে গেল।কাঁথাসুদ্ধ তুলিকে কোলে তুলে নিল।তুলি হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে আরো শক্ত হাতে চেপে ধরলো।
বিছানার দিকে এগিয়ে এসে এক প্রকার ছুঁড়ে মারলো তুলিকে।তুলি চমকে কাঁথা থেকে মুখ বের করলো।চমকিত কন্ঠে বলল,
—‘এটা কি হলো?’
নিশান ঘুরে এসে লাইট বন্ধ করলো। নিজের জায়গায় শুয়ে কম্বল গায়ে দিল।উল্টো পাশ ঘুরে বলল,
—‘ঘুমের ঘোরে যেন ছুঁয়ে দেয়া না হয়।একফোঁটা স্পর্শ করলে কিন্তু লাথি দিয়ে ফেলে দিব।’
১৬.
সম্পদ জেগে আছে।তিথি একটুও ঘুমাচ্ছে না।ঘুমের মধ্যে ছটফট করছে।বাম পা ফুলে গেছে।পা টা বালিশের উপর রাখা।সেটার দিকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে তাকে।ডক্টর একদম নড়াচড়া করতে বারণ করেছে।কিন্তু তিথি ঘুমের ঘোরে,বেঘোরে বাম পা বেশি নাড়াচ্ছে।
তাদের মাঝে আজ কিছুই নেই।দুজন অনেকটা কাছাকাছি।সম্পদ আরো একটু এগিয়ে গিয়ে তিথির মাথায় হাত রাখল।আস্তে আস্তে চুলে হাত বুলাল।তিথি ক্ষণে ক্ষণে কপাল কুঁচকাচ্ছে।সে বার বার কুঁচকানো কপাল শিথিল করে দিচ্ছে।
বালিশের পাশ থেকে সম্পদ ফোন বের করলো।রাত একটা ছুঁই ছুঁই!তার চোখ দুটো হালকা জ্বালা করছে।ভাঁজ করা পা দুটো টান টান করে সে শুয়ে পড়লো।ডান হাতটা তিথির মাথায় রেখেই চোখ বন্ধ করলো।
দীর্ঘক্ষণ পর তিথির গোঙানির আওয়াজ আসলো সম্পদের কানে।লেগে যাওয়া চোখ দুটো খুলে সে এক লাফে উঠে বসে পড়লো।তিথি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে।ব্যথায় ফর্সা মুখ নীল হয়ে গেছে।সম্পদের মাথা হ্যাং হয়ে গেল।সে দ্রুত তিথির মাথাটা নিজের কোলে রাখল।ছটফট করতে করতে বলল,
—‘কি হয়েছে তিথি?কান্না করছ কেন?কোথায় ব্যথা করছে?’
তিথি লাল চোখ মেলে সম্পদের দিকে তাকালো একবার।পরক্ষণে দু হাতে সম্পদের পেট জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
—‘আ-আমার পা!পায়ের ভেতর পোকা কামড়াচ্ছে।ব্যথা করছে অনেক।ক-কেমন যেন করছে।’
সম্পদ পড়ে গেল অথই সাগরে।ডাক্তার বলেছিল, পা ব্যথা করবে।কিন্তু তিথির অবস্থা এতটা খারাপ হবে ভাবেনি।ব্যান্ডেজ করার পুরোটা সময় তিথি অনেক স্বাভাবিক ছিল।তার হাতটা শক্ত হাতে চেপে চুপচাপ ছিল।
সে দুহাতে তিথির চোখের অশ্রু মুছে দিল।মাথায় হাত বুলিয়ে চিন্তিত গলায় বলল,
—‘তিথি একটু সহ্য করো।মেডিসিন খাওয়ানো হয়েছে।ঠিক হয়ে যাবে।’
—‘আমি ম-মরে যাচ্ছি সম্পদ।’
তিথির কান্না দেখে সম্পদের নিজের হাত পা কাঁপছে।তার চোখ বার বার ভিজে উঠছে।প্রথম বার কারো ব্যথায় নিজের বুকটা ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে।তার নিজেরই কেমন পাগল পাগল লাগছে।সে রুদ্ধ কন্ঠে বলল,
—‘তিথি আমায় ছাড়ো।বড় মা আর বড় বাবাকে ডেকে নিয়ে আসি।আমার ভয় করছে।’
তিথি ছাড়লো না।সম্পদকে আরো কঠোরভাবে আঁকড়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজলো।অস্পষ্ট কন্ঠে টেনে টেনে বলল,
—‘এ-ত রাতে ক-কাউকে ডা-ডাকতে হবে না।আ-আমি সহ্য করে নিব।’
সম্পদ মাথায় হাত বুলিয়ে তিথিকে শান্ত করতে পারলো না।একটু পর পর তিথির চোখ মুখ নীল হয়ে যাচ্ছে।চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে।চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু ধারা ঝরছে যা ইতোমধ্যে সম্পদের টিশার্ট ভিজিয়ে ফেলেছে।সম্পদ হঠাৎ তিথিকে সাবধানে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বালিশে মাথা রাখল।তারপর তিথির মচকে যাওয়া পায়ের গোড়ালির উপরের অংশ হালকা করে টিপে দিল।এতে যদি ব্যথা একটু কমে।কিন্তু তাতে কাজ হলো না।তিথি আগের মতোই দাঁত কামড়ে নিজেকে সামলাচ্ছে।
অগত্যা সম্পদ ফের পা রেখে এগিয়ে এসে তিথির মাথাটা কোলে তুলে নিল।তিথি ভেজা পাপড়ি মেলে সম্পদের চোখের দিকে চেয়ে রইলো।সে চোখের দিকে সম্পদ বেশিক্ষণ চেয়ে থাকতে পারলো না।মুখটা নিচু করে তিথির ভেজা মুখের সর্বত্র চুমুতে ভরিয়ে দিল!
(চলবে)