গল্পের নাম:প্রেম পায়রা,পর্ব ০৩
লেখনীতে:অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
—‘হাউ স্ট্রেন্জ!তুমি আমার সামনে বিয়ের প্রথম সকালে সব খুলে টুলে রুমে হাঁটাহাঁটি কেন করছো?’
সম্পদের নির্বিকার কন্ঠে তিথি চোখ বন্ধ করলো।তার হাত পা কাঁপছে রাগে।এ কোন বদমাশের পাল্লায় পড়লো সে?মুখ হাঁ করে ফুসফুস ভরে বার কয়েক শ্বাস নিল সে।ভয় পেলে চলবে না।ভয় পেলেই লোকটা বাঁদরের মতো তরতর করে ঘাড়ে উঠে যাবে।তারপর মাথায় উঠে চুল ছিঁড়বে।এসব হতে দেয়া যাবে না।নিজেকে দূর্বল প্রকাশ করা যাবে না।সে মুখটা বাঁকিয়ে বললো,
—‘ইচ্ছে হয়েছে তাই খালি গায়ে হাঁটছি।আপনার গায়ের উপর দিয়ে তো আর হাঁটছি না।আপনার জ্বলে কেন?’
—‘আমি কখন বললাম আমার জ্বলছে?খালি গায়ে হাঁটতে ইচ্ছে করছে হাঁটো!রুমের বাইরে বের হবে না কিন্তু।তুমি দেখছি ভারী ডেঞ্জারাস মেয়ে।মুখ দেখে বোঝা যায় না।’
—‘হ্যাঁ,আমি ডেঞ্জারাস।আপনার কল্পনার চেয়ে বেশি ডেঞ্জারাস।দূরে থাকবেন আমার থেকে।’
—‘দূরেই তো রয়েছি।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি আমায় দূরে থাকতে দিতে চাইছো না।কাছে চাইছো,রাইট?’
তিথির মুখ বিস্ময়ে হা হয়ে গেল।ঘাড় বেঁকিয়ে মুখটা সম্পদের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
—‘কি!’
সম্পদ বিছানায় হাঁটু ভাঁজ করে বসে আছে।চোখ মুখ স্নিগ্ধতায় ভরা।যেন ঘুম থেকে নয়,সদ্য গোসল করে বের হয়েছে।তিথির দৃষ্টি শকুনের মতো ধারালো হতে সম্পদ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—‘আমাকে দেখানোর জন্য সব খুলে টুলে হাঁটাহাঁটি করছো তো?তা ওভাবে বাঁকা ত্যাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?দেখাতে চাইলে সোজা হয়ে দাঁড়াও!ভালো মতো দেখতে পাচ্ছি না তো!মুখটা!মানে মুখটা দেখতে পাচ্ছি না।’
তিথি গায়ে কোনো রকম কাপড় পেঁচিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে সম্পদের দিকে তাকাল।হনহন করে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলে রাখা জিনিসগুলো ঝুপ করে নিচে ফেলে দিল।সম্পদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সাপের মতো ফুঁসতে লাগলো!
সম্পদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তিথির দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।তারপর চোখ সরিয়ে কঠিন গলায় বললো,
—‘জিনিসপত্র ফেলা শেষ?এবার ফ্রেশ হয়ে এসে নিজে সব গুছিয়ে রাখবে আবার।যাও!ও হ্যাঁ!তাড়াতাড়ি বের হবে।তোমার পর আামি ঢুকবো।’
তিথি এক চুল নড়লো না।যেভাবে ছিল সেভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।সম্পদ এবার কপালের খাদ গভীর করে বললো,
—‘আমাকে অতিশয় সহজ, সরল মনে করে থাকলে তুমি চরম ভুল করেছ তিথি।আমি এত ভালো মানুষ না।আর চার সেকেন্ড!চার সেকেন্ড এভাবে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে তোমায় পানি ছাড়া কামড়ে টুপ করে গিলে ফেলবো।’
সম্পদের কন্ঠে কিছু একটা ছিল যেটার বদৌলতে তিথির বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো।বড় বড় চোখে সম্পদের মুখপানে তাকালো।কিন্তু নড়লো না।
—‘চার সেকেন্ড শেষ!’
এটুকু বলে সম্পদ এক লাফে বিছানা থেকে নেমে তিথির কাছাকাছি আসতে সে দু হাত সামনে বাড়িয়ে চিৎকার করে বললো,
—‘নাহ!’
তারপর এক দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
সে চলে যেতে সম্পদের ঠোঁটের কোণে ক্ষীণ হাসির রেখা ফুটে উঠলো।কিছুক্ষণ ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার বিছানার দিকে তাকালো।তিথির শাড়িটা এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।সে এগিয়ে গিয়ে সামান্য ঝুঁকে শাড়িটা মুঠো ভরে নাকে মুখে চেপে ধরলো।চোখ বন্ধ করে গন্ধ শুঁকলো।তার বিশ্বাসই হচ্ছে না এতদ্রুত সব ঘটে যাবে।রোজ স্বপ্নে দেখা মেয়েটা তার বউ!সম্পদের বউ!তার এতকাছে।
শাড়িটা বুকের উপর নিয়ে আধ শোয়া হয়ে খাটে হেলান দিল সম্পদ।বালিশের পাশ থেকে নিজের ফোনটা বের করে গ্যালারীতে ঢুকলো।গতকাল রাতে সে তিথির ঘুমন্ত অবস্থার বেশকিছু ছবি তুলেছে।সেগুলো একটার পর একটা দেখা শুরু করলো।
জুম করে তিথির হাতের ছবিটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো।তিথির ডান হাতের তালুতে কুচকুচে কালো একটা তিল।একই হাতে শাহাদাত আঙুলের ডগায় আরো একটা তিল।সর্বপ্রথম মানুষ না দেখে এই তিলদুটোর প্রেমে পড়েছিল সে।তিথিকে সে গতকাল থেকে চিনে না।তিথি নামক মায়াজালে সে আটকেছে বহু দিন আগে।
গতকাল সে গাড়ি থেকে নেমে মায়ের কবরস্থান দেখতে গিয়েছিল।মায়ের কাছে দোয়া নিতে গিয়েছিল তার নতুন জীবনের জন্য।সেখান থেকে ফিরতে ফিরতে রাত দেড়টা প্রায়।চিন্তিত মনে দ্রুত রুমে ঢুকতে তার চোখ তিথি নামক মায়াপরীতে আটকে যায়।তিথি এলোমেলো ভাবে শুয়ে আছে।সে দরজার কাছে থেকেই দীর্ঘক্ষণ সে ঘুমন্ত পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে যেন কাছে গেলেই ঘুম ভেঙে যাবে।
পরে ঘোর কাটতে দরজা বন্ধ করে এগিয়ে যায়।সাবধানে বিছানায় বসে কাছে থেকে তিথির দিকে চেয়ে থাকে।তার যেন চেয়ে থাকার রোগ হয়েছে।একটা সময় সে ক্ষীণ স্বরে তিথিকে কয়েকবার ডাকে। তিথির রেসপন্স না পেয়ে আস্তে করে উঠে ফ্রেশ হতে যায়।ড্রেস চেঞ্জ করে চোখে মুখে পানি দিয়ে সম্পদ ওয়াশরুম থেকে বের হয়।এগিয়ে গিয়ে শীতল হাতটা ভয়ার্ত মনে তিথির কপাল স্পর্শ করে।ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে তিথি হালকা নড়ে উঠে।কিন্তু জেগে যায় না।তার হাতটা হালকা ভাবে তিথির সারা মুখে স্পর্শ করিয়ে সরিয়ে নেয়।
তিথির কাদার মতো ঘুম দেখে তার মনে চিন্তা ঢুকে যায়।এদিক ওদিক তাকাতে হঠাৎ সেন্টার টেবিলে রাখা আধ গ্লাস পানি আর মেডিসিনের উপর চোখ আটকে যায়।দ্রুত এগিয়ে গিয়ে মেডিসিনের পাতা হাতে নেয়।কর্ণার থেকে একটা ট্যাবলেট মিসিং।একটা ট্যাবলেট মিসিং বলে সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তিথির দিকে তাকায়।
সারাদিনের ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় মেলে দেয় সম্পদ।ডান কাত হয়ে একদৃষ্টিতে তিথির মুখ পানে তাকিয়ে থাকে।এক সময় সাহস করে নিজের হাতটা এগিয়ে তিথির তিলময় ডান হাতটা টেনে আনে।তার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা তিথির হাতের এই মায়াকাড়া তিলগুলো।সে তো কল্পনায় তাকে তিলবতী বলে ডাকে।
সম্পদের মুখে প্রশান্তির হাসি।সে তিথির জুম করা হাতের ছবিটাতে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়।গতকাল রাতে সে তিথির এই হাতের তিল দুটোতে হাজার খানেক চুমু খেয়েছে।দীর্ঘদিনের ঘুম কেড়ে নেয়া তিল দুটোকে সে শাস্তি দিয়েছে!
৬.
মিনিট বিশেক কোনো মতে কাটাল সম্পদ।তিথি এখনো ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে না।ভেতরে ভেতরে সে ছটফট করা শুরু করলো।চোখ দুটো ঘুরেফিরে ওয়াশরুমের দরজায় গিয়ে বাড়ি খাচ্ছে।এতক্ষণ লাগে শাওয়ার করতে?বিশ মিনিট যেন তার কাছে অনন্ত কাল মনে হলো!
আর অপেক্ষা করলো না।উঠে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজায় টোকা দেয়া শুরু করলো।কাঠ কাঠ গলায় বললো,
—‘তিথি,রোদ উঠে গেছে।আটটা-ন’টা বাজে প্রায়।তাড়াতাড়ি বের হও!আমি ফ্রেশ হবো।’
ভেতর থেকে কোনো উত্তর এলো না।সম্পদ আবার রুমের মধ্যে কিছুক্ষণ পায়চারি করলো।দ্বিতীয় বারের মতো দরজায় প্রচন্ড বেগে কড়াঘাত করতে তিথি দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো।ভুলেও সম্পদের দিকে তাকালো না।
আড়চোখে সম্পদ তিথিকে দেখে যাচ্ছে।এই ভোরবেলা তিথিকে ভেজা চুল আর শাড়িতে দেখে বুকের ভেতর হার্ট লাফানো শুরু করলো।শাওয়ারের চিন্তা ভুলে সে এলোমেলো ভাবে পা ফেলে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো।
তিথি রুমের সাথে লাগোয়া বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে।তার শাড়ির আঁচল ভোরের বাতাসে উড়ছে।কাচের এপাশ থেকে তাকে কেমন পুতুল পরীর মতো লাগছে।যে পুতুল শুধু দেখা যায়, ছোঁয়া যায় না!সম্পদ বড় করে ঢোক গিলল।এই মেয়ে শাড়ি পড়লেই তার মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।সে চোখ সরাতে পারবে না।নাহ!শাড়ি পরতে দেয়া যাবে না।সম্পদ ঘ্যোৎ করে নিঃশ্বাস ফেলল। উঠে বেলকনির দিকে এগিয়ে গিয়ে কন্ঠে কাঠিন্যতা ঢেলে বললো,
—‘তিথি, শাড়িটা চেঞ্জ করে আসো।আজকের পর থেকে শাড়ি পরবে না আর।’
তিথি চুল মোছা বাদ রেখে অদ্ভুত দৃষ্টিতে সম্পদের দিকে তাকালো।রাগী গলায় বললো,
—‘কেন জানতে পারি?’
—‘আমার পছন্দ নয় বলে আজ থেকে শাড়ি পরবে না।’
—‘এখন আপনার পছন্দ অনুযায়ী আমার চলতে হবে?আমার নিজের পছন্দ অপছন্দ বলতে কিছু নেই?’
—‘অফকোর্স তোমার পছন্দ অপছন্দ আছে।শাড়িতে তোমায় ফাঁটা বাঁশের মতো লাগে সেজন্য বারণ করলাম।কি বিচ্ছিরি লাগছে দেখতে!তাই শাড়ি বাদে যেকোনো জিনিস পড়বে।প্রয়োজনে খালি গায়ে থাকবে।’
তিথি উত্তর দিল না।মুখ ঘুরিয়ে বাইরে তাকাল।সম্পদ সরে আসলো।আলমারি থেকে ড্রেস বের করে ওয়াশরুমে ঢুকলো।আবার বের হয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে তিথিকে কয়েক বার দেখলো।তিথিকে রুমে ঢুকতে দেখে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে ছিটকিনি আটকে দিল।
৭.
তিথি রান্নাঘরে ঢুকে অপরিচিত একজন মহিলাকে আবিষ্কার করলো।মহিলাটি হাত নেড়ে নেড়ে, কোমড়ে কাপড় গুঁজে রান্না করছে।তিথিকে দেখেই তার চওড়া মুখে হাসি ফুটে উঠলো।হাসিমুখে বলল,
—‘আমি বাতাসী!এই বাড়িতে কাম করি।বহুত বছর হইলো।’
বিনিময়ে তিথি মাথা নেড়ে হাসলো।আস্তে করে বললো,
—‘খালা,স্নেহা কি ঘুম থেকে উঠেছে?’
—‘না!উইঠা পড়বো।আইজকা কেলাস নাই তো সেজন্যি এতক্ষণ ঘুমায়!’
—‘খালা।তোমার গ্রামের বাড়ি কোথায়?’
—‘খুলনা শহর ছাইড়া একটু যাইতে হয়।টেরেন ইস্টেশনের কাছাকাছি।’
—‘অহ।খুবই ভালো।’
তিথি আর কথা বাড়ায় না।বাতাসীকে কাজে টুকটাক সাহায্য করে।নিজ হাতে চা বানায়।সেই ফাঁকে কে কখন কি খায় সব জেনে নেয়।মিনিট দশেক পরে সে প্লেটে নাস্তা আর এক কাপ চা হাতে শ্বশুর মশাইয়ের ঘরের দিকে রওনা দেয়।
দরজা ভেড়ানো ছিল।তিথি বাইরে থেকে ‘বাবা’ বলে ডাক দেয়।তারপর হাঁটু দিয়ে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।তার শ্বশুর সোবাহান বিছানা ছেড়ে উঠেননি এখনো।শুয়ে শুয়ে বই পড়ছে।তিথিকে দেখে লজ্জা পেলেন বোধ হয়।জড়তা নিয়ে বললেন,
—‘অক্ষম মানুষ।দিন রাত শুয়ে বসেই কাটাই!’
তিথি খাবারের প্লেট পাশের টেবিলে নামিয়ে রেখে সোবাহানের পাশে বসলো।শাড়ির আঁচল টেনে ভালো করে মাথা ঢেকে বললো,
—‘বাবা!আপনি হাত মুখ ধুয়েছেন?পানি দিব ধোয়ার জন্য?’
—‘তা ধুয়েছি মা।তোমার নাম কি গো মা?’
—‘তিথি!তিথি বলে ডাকবেন বাবা।’
তিথি উঠে টেবিল থেকে চায়ের কাপ নিয়ে সোবাহানের হাতে ধরিয়ে দিল।সোবাহানের হাতে মোটা একটা বই।তিথি বাম হাত থেকে বইটা টেনে নিয়ে বললো,
—‘বাবা,আপনি পড়া বাদ দিয়ে দ্রুত চা টা শেষ করুন।তারপর নাস্তা শেষ করবেন।আমি ততক্ষণে আপনাকে বই রিডিং পড়ে শোনাই।’
সোবাহানের মন ভালো হয়ে গেল।বহু বছর পরে তিনি সুখ সুখ অনুভব করলেন।মমতামিশ্রিত চোখে তিথির দিকে তাকালেন এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন এই অল্প বয়সী মেয়েটার চেহারার সাথে তার প্রিয় কোনো চেহারার মিল আছে।সেই প্রিয় মানুষটি কে সেটা মনে পড়ছে না।তিনি চিন্তিত মুখে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন।প্রথম চুমুকে মনে হলো তিনি পৃথিবী নামক গ্রহে তার উত্তরার ছয় নম্বর সেক্টরের দোতলার বাসায় বসে অমৃত পান করছেন।
গভীর তৃপ্তিতে তিনি চোখ বন্ধ করলেন।সঙ্গে সঙ্গে কানে কিশোরীদের মতো ঝনঝনে গলায় কেউ বলে যাচ্ছে,
—‘বিহাইন্ড দ্য সাইকোলজি অফ এভ্রি ওয়ার্ক!সব কাজের পেছনে কমবেশি বৈজ্ঞানিক যুক্তি বা বিশ্লেষণ বিদ্যমান।সাইকোলজি মানেই বিজ্ঞান!এর………. ‘
স্নেহার সাথে তিথি ডাইনিং এ খেতে বসে।সম্পদ নিচে নামেনি।সেই সকাল বেলা তিথি নিচে নেমেছে।আর রুমে যায় নি।মাঝখানে স্নেহা গিয়ে চা দিয়ে এসেছে।স্নেহাকে দ্রুততার সহিত খেতে দেখে তিথি বাঁধা দিয়ে বললো,
—‘স্নেহা,আস্তে খাও। আটকে যাবে।এত তাড়াহুড়ো কেন করছো?’
স্নেহা আরেক লোকমা মুখে পুড়ে বললো,
—‘ভাবী,আজ আমাদের ডিপার্টমেন্টের অফ ডে। সবাই মিলে ঠিক করেছে কাছাকাছি কোথাও ঘুরতে যাবে।আমি যেতে চাইছিলাম না।কিন্তু সবাই ফোনের পর ফোন করছে।বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে।’
বলতে বলতে স্নেহা প্লেটে পানি ঢেলে উঠে পড়লো।তিথিকে হালকা করে জড়িয়ে বললো,
—‘ভাইয়ার খাবার রুমে নিয়ে যেতে বলেছে ভাবী।আমি আসছি।’
তারপর এক দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।তিথি আস্তে ধীরে, চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া শুরু করলো।কোথাকার এমপি,মন্ত্রীর সাথে তার বিয়ে হয়েছে যে খাবার উপরে নিয়ে যেতে হবে?নিচে নেমে খাওয়া যায় না?বদের হাড্ডি!খালি তাকে দিয়ে হুকুম তামিল করানো।বেশ বুঝতে পারছে সে।
বাতাসী খালাকে দিয়ে সম্পদের খাবার রুমে পাঠিয়ে দিল তিথি।তারপর ডাইনিং গুছিয়ে সোফায় বসলো।সকাল বেলা নিচে নেমে সে গতকালের মানুষ গুলোর একজনকেও দেখেনি।হঠাৎ করে তার নিশান ভাইয়ের কথা মনে পড়লো।সে নিয়মের ব্যতিক্রম করেছে।বৌভাত হবে না তার।কিছুদিন ও বাড়িতে যাবে না।নিশান ভাইয়ের মুখোমুখি হবে না।ভেজা চোখ দুটো সে দ্রুত শাড়ির আঁচলে মুছে ফেলল।
অনেকক্ষণ পর তিথি সম্পদের রুমে ঢুকলো।রুমটা এখন তারও।বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে কয়েক পা এগুতে সম্পদ চোখের পলকে এগিয়ে এসে তার দু কাঁধ খামচে ধরলো।
(চলবে)