গল্প:রঙহীন জীবনের রঙ,পর্ব ৪,৫
লেখনীতে: স্বর্ণা সাহা (রাত)
পর্ব ৪
ও কিছু বলতে যাবে তার আগেই নির্ঝর বলতে শুরু করলো,,
—খুব শখ না ছেলেদের সাথে আড্ডা দেওয়ার, খুব ভালো লাগে ছেলেদের সাথে আড্ডা দিতে তোমার তাইনা?
নির্ঝর আরো জোরে হাত মুচড়ে ধরলো,দিশানী ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো আর কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
—নির্ঝর আমার লাগছে প্লিজ ছাড়ো,তুমি এমন করছো কেনো?
—তো কি করবো তোর সাথে,, তুই অন্য ছেলেদের সাথে আড্ডা মেরে বেড়াবি আমাদের পরিবারের মান-সম্মান ধুলোয় মেশাবি আর আমরা তোকে ফুল চন্দন দিয়ে পুজো করবো?
দিশানী তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,,
—ফুল চন্দন দিয়ে পুজো তো তোমাদের কাছে আমি চাইনি একটু ভালোবাসা আর সম্মান চেয়েছিলাম কিন্তু আপসোস তোমরা আমাকে সেটুকুও দিতে পারলে না
—-খুব বেশি কথা বলছো দেখছি আজকে তুমি? আজকে মুখে এতো জোর কোথা থেকে পাচ্ছ,, ওই ডাক্তারটার সাথে কথা বলে এসে খুব সাহস বেড়ে গেছে বুঝি, তাই এতো কথা বলছো?
—-তুমি যা ইচ্ছা ভাবতে পারো,আমি শুতে গেলাম
—-আমার কথার উত্তর না দিয়ে শুতে যাচ্ছো যে?
—-নিরা তো সব বলেছেই আমি আর কি উত্তর দেবো, আর আমার হাত টা ছাড়ো প্লিজ
নির্ঝর দিশানীর হাত ছেড়ে দিলো। দিশানী ঘুমোতে গেলো।
——————–
নীলাদ্রি চেম্বার থেকে ফিরে ফ্ল্যাটের তালা খুললো, ফ্ল্যাটে ঢুকেই ফ্রেশ না হয়েই একটা রুমে গেলো। রুমটাতে গিয়ে সামনের দিকের একটা কিছুর দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে নীলাদ্রি, পুরোনো স্মৃতিগুলো আজ যেনো আরো বেশি করে তাজা হয়ে গেলো,, পুরোনো ঘা গুলো যেনো আরো দগদগে হয়ে গেছে আজকে, নীলাদ্রির সামনে দিশানীর একটা বড়ো করে বাঁধানো ছবি আছে, সেটার দিকেই একভাবে তাকিয়ে আছে ও।দিশানীর এই ছবিটা প্রথম দেখায় তুলেছিলো নীলাদ্রি। আজ সেই প্রথম দেখার সেই দিনটার কথা বড্ড বেশিই মনে পড়ছে নীলাদ্রির।
——————
তখন প্রথম প্রথম নীলাদ্রিরা দিশানীদের পাড়াতে থাকতে এসেছে, নীলাদ্রি তখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, আর দিশানী ক্লাস নাইনে পড়ে, নীলাদ্রি দিশানীদের স্কুলের কলেজেই ভর্তি হয়। সেদিন নীলাদ্রিদের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীর নবীন বরণের প্রোগাম হবে,তাই স্কুলের সবাইকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়, নীলাদ্রি ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলছে, এদিক ওদিকের ছবি তুলতে তুলতেই একটা ফুলের ছবি তুলতে নিতেই একটা মেয়ের মেয়ে এসে ওই ফুলের সামনে দাঁড়ায় আর ফুলের বদলে মেয়েটার ছবি তুলে ফেলে নীলাদ্রি। নীলাদ্রি বিরক্ত হয়ে মেয়টাকে ডাক দেয়,,
—-এই মেয়ে শোনো, এইদিকে এসো।
মেয়েটা স্কুল ড্রেস পড়া, চুলগুলো দুপাশে দুটো বেণী করা, মায়াবী মুখটা গোমড়া করে রেখেছে, মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে নীলাদ্রির কাছে এসে বললো,,
—বলুন ডাকলেন কেনো?
—তুমি ফুলটা তুললে কেনো?
—মন চেয়েছে তাই তুলেছি কোনো সমস্যা, আপনি এমন ভাব করছেন যেনো আপনি স্কুলের কর্তৃপক্ষ, বেশ করেছি ফুল তুলেছি, আরো তুলবো
—-ফুল তুলবে তোলো না কে মানা করেছে কিন্তু আমি যে ফুলটার ছবি তুলতে নিয়েছিলাম সেই ফুলটাই কি তুলতে হবে তোমার অন্য কোনো ফুল তোলা যেতো না?
—তাহলে আপনি অন্য কোনো ফুলের ছবি তুলতে পারতেন না?
—আরে ভারী ফাজিল মেয়ে তো তুমি,নিজে ছবিটা নষ্ট করে দিয়ে এখন উল্টো আমার সাথে তর্ক করছো?
দিশানী এই কথা শুনে নীলাদ্রি কে জিজ্ঞেস করলো,,
—এইখানে নতুন নাকি? কলজের স্টুডেন্ট??
—হ্যাঁ, তো কি হয়েছে ?
দিশানী নীলাদ্রির কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষন নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,,
—ফালতু লোক একটা
তারপর নীলাদ্রিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। আর নীলাদ্রি মেয়েটার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো,, কত্ত বড়ো সাহস নীলাদ্রি কে ফালতু লোক বলে গেলো,,ভাবা যায়?
নীলাদ্রি ওর বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বললো,,
—দেখলি তোরা কি পাজি মেয়ে, আমি ওর বড়ো হই আমার সাথে কোথায় সম্মান দিয়ে কথা বলবে তা না কিভাবে কথা বলে গেলো,বড্ড পাজি মেয়ে।
নীলাদ্রির এক ফ্রেন্ড ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,,
—চুপ কর ভাই,, যা বলেছিস বলেছিস এখন এখানেই থেমে যা, নাহলে ও যদি একবার শোনে যে তুই ওকে পাজি বলেছিস তাহলেই সর্বনাশ
নীলাদ্রি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
—সর্বনাশ মানে,কে ওই মেয়ে যে আমার কথা শুনে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে, মন্ত্রী মিনিস্টারের মেয়ে নাকি?
—না মন্ত্রী মিনিস্টারের মেয়ের থেকেও ভয়ঙ্কর,, ওকে মেয়ে বললে ভুল হবে,, ও একটা তুফান।সারা স্কুল কলেজ ওকে ভয় পায়,, খুব ডেঞ্জারাস মেয়ে, কাউকে ছেড়ে কথা বলেনা,, ওকে আমরা সবাই খুব ভয় পাই।
নীলাদ্রি অবাক হয়ে বললো,
—ওইটুকুনি তো একটা মেয়ে,তার এতো জোর যে সবাই ওকে ভয় পায়, ভাবা যায়, নাম কি রে ওর?
—দিশানী!
নীলাদ্রি মাথা নেড়ে বললো,,
—হুমম নামের সাথে কাজকর্মের মিল আছে।
ব্যাস এই ছিলো দুজনের প্রথম দেখা,হঠাৎ করে তোলা সেই ছবিটাই নীলাদ্রি বর্তমানে দেখছে, নীলাদ্রি ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতেই চিৎকার করে উঠলো,,
—কেনো আবার ফিরে এলে,, কেনো দেখা দিলে আমায়,, তুমি তো এখন অন্য কারো তবুও কেনো আবার তোমার দেখা পেলাম আমি? কেনো???তোমার স্মৃতি নিয়েই তো সারাজীবন আঁকড়ে থাকতে পারতাম কিন্তু আজ তোমায় দেখে যে ভিতরের সব জীবন্ত অনুভূতিগুলো আরো বেশি করে তাজা হয়ে উঠলো। নীলাদ্রির ওই রুমটা দিশানীর ছবি দিয়ে ভর্তি,নিজের ক্যামেরা থাকার সুবাদে প্রায়ই দিশানী কে লুকিয়ে লুকিয়ে ক্যামেরাবন্দি করতো নীলাদ্রি,, আর সেই ছবিগুলোই এখন এই ঘরের দেয়ালে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। নীলাদ্রি রোজই এই ছবিগুলো দেখে আর কষ্ট পায় কিন্তু আজ আবার সেই চেনা প্রিয় মুখটাকে কাছ থেকে দেখে আরো বেশি করে কষ্ট পাচ্ছে নীলাদ্রি,,ওর কষ্টগুলো আজ আরো গভীর হয়ে উঠেছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই নীলাদ্রির ফোনে কল একটা কল আসলো,,নীলাদ্রির এক বন্ধু ফোন করেছে,নীলাদ্রি ফোন ধরে বললো,,
—হ্যালো, হ্যাঁ বল
—কালকে তোকে আমাদের সাথে লাঞ্চ করতেই হবে কোনো কথা শুনবো না
—এইরে লাঞ্চ টা তো পারবোনা
—ডিনারে আসতে পারবি?
—হ্যাঁ পারবো, তাহলে আমি কালকে তোদের সাথে একসাথে ডিনার করবো ঠিকাছে?
—হুমম, তাহলে সময়মতো চলে আসিস কিন্তু
—আচ্ছা, চলে আসবো।
নীলাদ্রি এই ফোন রাখতে না রাখতেই আবার আরেকটা কল এলো,, এবারের কল একটা আননৌন নাম্বার থেকে এসেছে,, নীলাদ্রি ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে আসলো। নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করলো,,
—কে বলছেন?
—-সেকি এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন, এতো জলদি ভুললে তো চলবে না ডক্টর নীলাদ্রি,, আমি তো জানি ডাক্তারদের স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর হয় তাহলে আপনার স্মৃতিশক্তির এই অবস্থা কেনো? কণ্ঠ শুনেও বুঝতে পারছেন না আমি কে?
—না পারছি না, এখন স্পষ্ট করে বলুন আপনি কে?
—আমি…………
চলবে
গল্প: রঙহীন জীবনের রঙ
পর্ব ৫
লেখনীতে: স্বর্ণা সাহা (রাত)
—না পারছি না, এখন স্পষ্ট করে বলুন আপনি কে?
—আমি…….গেস করুন দেখি
নীলাদ্রি রেগে গিয়ে বললো,
—আপনি আপনার ফালতু প্যাচাল বাদ দিয়ে কি বলবেন আপনি কে?
—-আরে আরে আপনি তো রেগে যাচ্ছেন,, আচ্ছা বলছি আমি কে
—হ্যাঁ আপনি কে সেটা বলে আমাকে কৃতার্থ করুন
—আমি নিরা
—কোন নিরা?
—সেকি এরই মধ্যে ভুলে গেলেন, আমি দিশানী বৌদির ননদ
—ওহ আচ্ছা, চিনতে পেরেছি
—যাক চিনতে পারলেন তাহলে, আমি তো ভাবলাম আপনি এবারেও চিনতে পারবেন না
—কিন্তু আপনি ফোন করেছেন কেনো আমাকে?
—কেনো ফোন করতে পারিনা নাকি, আমি যেহেতু আপনার পেসেন্ট তাই ফোন করতেই পারি
—আমিও আপনার ডক্টর আপনার তেমন গুরুতর কিছু হয়নি যে আপনার আমাকে ফোন করতে হবে।
—আমি তো পেসেন্ট জন্য আপনাকে ফোন করিনি, আমি তো অন্য কারণে আপনাকে ফোন করেছিলাম
—কি কারণ?
—বলছি যে আপনি তো আনম্যারেড তাইনা?
নীলাদ্রি বিরক্ত হয়ে বললো,,
—হ্যাঁ, এটা আপনার আমাকে এতো রাতে আমাকে ফোন দেওয়ার কারণ লাইক সিরিয়াসলি?
—না না, এটাও আসল কারণ না
—এই আপনার সমস্যা কি বলুন তো, যা বলতে চান বলে দেন নাহলে আমি ফোন রাখছি
—না না ফোন রাখবেন বলছিলাম যে আপনি আমার বৌদি মানে দিশানীর সাথে মিশবেন না বা কথা বলবেন না বুঝেছেন, ও মানুষের জীবনের খুব বড় একটা সমস্যা, মানুষের জীবনে শুধু জটিলতা তৈরি করে, তাই আপনার ভালোর জন্যই বলছি ওর সাথে মিশবেন না তাতে কিন্তু আপনারই ভালো
নীলাদ্রি রেগে গিয়ে বললো,,
—আপনি কি বলছেন,আপনার মাথা ঠিক আছে তো?
—ঠিকই বলছি আমরা খুব ভালো করে চিনি বৌদিকে
—আচ্ছা সে ভালো কথা, কিন্তু আপনার কথা শুনে আমার আপনাকে একজন মানসিক রোগী বলে মনে হচ্ছে, তাই আমি আপনাকে একটা এডভাইস দিচ্ছি, আমি যেহেতু মেন্টাল রোগীদের ডাক্তার নই তাই আমি আপনার চিকিৎসা করতে পারবো না এজন্য আপনি একটা সাইক্রিয়াটিস্ট দেখান, ওনার পরামর্শ নিন তাহলে আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন।
এই কথা বলেই নীলাদ্রি চুপচাপ ফোন রেখে দিলো, এতে নিরা কিছুটা অপমানিত বোধ করলো।
নীলাদ্রি ফোন কেটে দিয়ে একটা জিনিস ভাবতে বসলো,, খুব মন দিয়ে ভাবছে ও এই কথাটা। নিরা এটা কেনো বললো যে দিশানী শুধু সমস্যা তৈরি করে? আচ্ছা নিরা কি দিশানী কে সহ্য করতে পারেনা? আর আমাকেই বা কেনো মেয়েটা ফোন দিয়ে এসব জানালো?
————–
নিরা রাগে গজগজ করছে আর বলছে,
“এইভাবে অপমান? ছেলেরা আমার সাথে কথা বলার জন্য সুযোগ খোঁজে আর উনি আমাকে পাগল বললো?চেম্বারে সারাটা সময় বৌদির দিকে তাকিয়ে থাকলো, আমার দিকে ফিরেও তাকালো না,, বৌদির ওই তো চেহারার ছিঁড়ি,তবুও আমার দিকে না তাকিয়ে বৌদির দিকে তাকালো কেনো সেটা কি আমি বুঝিনি,, বৌদির সাথে তোমার কি সম্পর্ক আমি তা জেনে ছাড়বো আর যদি আমি যা ভাবছি সেইরকম সম্পর্ক হয় তাহলে তা আমি ভাঙবো,,, কারণ তোমাকে যে আমার খুব ভালো লেগেছে নীলাদ্রি।এর আগেও আমি তোমার কাছে চেক-আপের জন্য গেছিলাম আমার তো সেদিনই তোমাকে ভালো লেগে গেছিলো। আর আজ যখন বৌদির সাথে এতো ভালো করে কথা বললে আমার তখন জাস্ট গা জ্বলে যাচ্ছিলো।
—————–
পরেরদিন,
দিশানী ভোর ৫.৩০ টায় ঘুম থেকে উঠলো, তারপর সবগুলো ঘর পরিষ্কার করে স্নান ছেড়ে রান্নাঘরে আসতে আসতে ৬.৩০ বেজে গেলো ।সুজাতা দিশানীর কাছে এসে একের পর এক একেকজনের খাবারের ফরমায়েশ দিয়ে চলে গেলেন। সুজাতা দিশানী কে শুধু ফরমায়েশই দিতে পারে আর চ্যাটাং চ্যাটাং কথাই বলতে পারে, দিশানী কে কোনো সাহায্য করেনা। শুধু মহারানীর মতো বসে থাকে।দিশানী সবাইকে মানে যারা যারা ঘুম থেকে উঠেছে তাদের চা দিয়ে এসে সকালের রান্না আরম্ভ করলো।
দিশানী রান্না করছে তখনি নিরা ডাক দিয়ে বললো,,
—বৌদি আমার গ্রিন টি দিয়ে যাও তো।
নিরা এখনই ঘুম থেকে উঠলো। দিশানী গ্রিন টি বানিয়ে নিরার কাছে নিয়ে গেলো।নিরা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,,
—আজকের গ্রিন টি টার টেস্ট একদমই বাজে হয়েছে,ঠিক করে বানাবে তো
দিশানী মুচকি হেসে জবাব দিয়ে বললো,,
—গ্রিন টি-র টেস্ট টা আগের মতোই আছে,, তোমার মুখের টেস্ট দিন দিন বাজে হয়ে যাচ্ছে তাই খেতে খারাপ লাগছে।
—কি বললে তুমি?? তোমার সাহস অত্যধিক বেড়ে যাচ্ছে দাঁড়াও মা আর দাদা কে বলছি।
—কি শান্তি পাও বলোতো আমার পেছনে লেগে? আর সবসময় মা কে আর দাদা কে বলবো এই কথাটাই বা কেনো বলো, কালকে তুমি তোমার দাদা কে কি বলেছো, আমার সাথে এরকম ব্যবহার করে কি লাভ তোমার, কি মজা পাও তুমি?
—-এখান থেকে এখন যাও তো তুমি, আমার অনেক কাজ আছে।
দিশানী কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
——————-
ব্রেকফাস্টের সময়,,
সবাই ব্রেকফাস্ট করছে, নিরা কিছুক্ষন পর বললো,,
—মা তোমার বৌমা বলেছে আমার মুখ নাকি তেতো, দাদা তোর বউয়ের মুখ সামলে রাখতে বলবি, আমাকে যেনো এসব কথা না বলে
সুজাতা দিশানী কে বললো,,
—আমার মেয়েকে নিয়ে তোমার সমস্যা কি বলোতো? এমন ব্যবহার করো কেনো আমার মেয়ের সাথে, কি করেছে ও তোমার সাথে?
নিরা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,,
—মা জানো আমি বৌদিকে তেমন কিছুই বলিনি, শুধু বলেছি গ্রিন টি-র টেস্ট টা আজ ভালো হয়নি তাতেই এতো কথা শুনিয়ে দিলো
নির্ঝর রাগী চোখে দিশানীর দিকে তাকিয়ে বললো,,
—আমার বাড়িতে থাকতে হলে আমার বোনের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে নাহলে আমার বাড়ি থেকে তুমি বের হয়ে যাবে।
দিশানী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,,
—বাহ্, কি সুন্দর বিবেচনা,নিরাকে আমি কি বলেছি তা নিয়ে সবার এতো মাতামাতি, আমি নিরার সাথে কেমন ব্যবহার করি সেটা নিয়ে সকলের মাতামাতি কিন্তু আমি কেনো নিরা কে এসব বলেছি তা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই তাইনা? শুধু একপাক্ষিক কথা শুনে বিচার-বিবেচনা করা দেখছি তোমাদের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই স্বভাব পাল্টাও,, আর মানুষকে কখনো বেশি ঘাঁটিয়ো না, লেবু চিপতে চিপতে যেমন তেতো হয়ে যায় তেমনি মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে মানুষও প্রতিবাদী হয়ে ওঠে,, আর সেই প্রতিবাদকে দমন করা কিন্তু কঠিন হয়ে ওঠে, এটা ভুলে যেও না। আর নিরা তোমাকে একটা বলছি শোনো,, মন দিয়ে শুনবে কিন্তু,,
“সারাজীবন তো আর বাপের বাড়িতেই পড়ে থাকবেনা একদিন তোমারও বিয়ে হবে,, তখন দেখো শশুরবাড়িতে গিয়ে যেনো তোমার আবার আমার মতো অবস্থা না হয়,, আর ননদ হিসেবে যেনো আবার নিজের কোনো প্রতিচ্ছবি না পাও ”
দিশানী কথাগুলো বলে নিজের রুমে গেলো,, আজকে কিভাবে দিশানী এতো জোর পেলো সেটা ও নিজেও জানেনা,, কিন্তু এটা শুধমাত্রই ক্ষনিকের প্রতিবাদ,, ক্ষনিকের প্রতিবাদই সই নিজের ভেতরে চেপে রাখা কথাগুলো তো বলতে পেরেছে এটাই আনন্দের।
—————
খাবার টেবিলে,,,
নিরা সবার উদ্দেশ্যে বললো,,
—দেখলে তোমরা কিভাবে আমার ক্ষতি চেয়ে গেলো,কি ধরণের মানুষ দিশানী বৌদি সেটা শুধু একবার চিন্তা করে দেখো তোমরা, এরকম করলে তো আমার এই বাড়িতে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে দেখছি।
সুজাতা নিরাকে শান্তনা দিয়ে বললো,,
—চিন্তা করিস না নিরা,, শকুনের দোয়ায় কখনো গরু মরে না।আর নির্ঝর তুই এখন একটা ব্যবস্থা কর, এভাবে আর কতদিন?
নির্ঝর উত্তর দিলো,,
—আমি আজকেই উকিলের সাথে কথা বলবো তুমি টেনশন কোরোনা।
চলবে