কে_তুমি?,পর্ব:৭

কে_তুমি?,পর্ব:৭
Tahmina_Akther

– সে এখন আর তোর আশেপাশে নেই। তার বাবা আমার সঙ্গে দেখা করে গতকাল রাতেই। তাকে আমি বুঝিয়ে বলি, তার ছেলে যেরকম চাচ্ছে সেরকম কখনোই সম্ভব নয়।
আয়রাবের বাবা আমাকে বলেছে তার ছেলেকে সে বুঝাবে সে যেন তোকে ছেড়ে দেয়।

আমি পরে তাকে সব কথা খুলে বলি, তার ছেলে কি কি করেছে তোর সঙ্গে?
তখন আয়রাবের বাবা বলে তাহলে,

– বলুন আপনারা কি চান?

তার বাবাকে বললাম;

-আগামী সাতদিন আপনার ছেলেকে আপনি যেকোনো উপায়ে বন্দী করে রাখবেন। আর আপনার ছেলে যাতে এইসব কিছু ঘুণাক্ষরেও টের না পায়।

– কিন্তু, সাতদিন নাহয় আমি তাকে বন্দি করে রাখলাম, কিন্তু এরপরে আমার তো তাকে ছাড়তেই হবে।
তখন আপনারা কি করবেন?

– আমি এরইমাঝে কায়নাতকে তার পছন্দের মানুষের সঙ্গে বিয়ে দিব। আর আপনার ছেলের সঙ্গে এই বিষয়ে আমার কথা হয়েছে। অতএব, চিন্তা বাদ দিন আপনাকে যা করতে বলেছি দয়া করে তা সম্পন্ন করুন, আল্লাহর দোহায় লাগে। নয়তো আমাদের কন্যা নিঃশেষ হয়ে যাবে।

– জি,আমি আমার ছেলেকে আটকে রাখব, তবে এই সাতদিন পরে কি হবে আমি তার গ্যারান্টি দিতে পারছি না?
আসি তাহলে, খোদা হাফেজ।

-আয়রাবের বাবা আয়রাব কে আজ সকালে থেকেই আটকে রেখেছে, আমাকে আয়রাবের বাবা দেখিয়েছে।

– কিন্তু, আঙ্কেল আমার তো কোনো পছন্দের মানুষ নেই, আপনি মিথ্যে কেন বললেন?

– তুই নিজেই ভেবে দেখ তোর পছন্দের কেউ আছে কি না?

আমি যার কথা ভাবতে চাই না তার কথাই বারবার কেন আমার সামনেই আসে? আমার অনিশ্চিত জীবনে তাকে জড়ানোর কোনো মানে নেই।
আচ্ছা, সেদিন তো তার সঙ্গে কথা বলেই ছাদ থেকে নেমে যাচ্ছিলাম আমি।
সে কি আমার চিৎকার শুনতে পায়নি?যদি শুনে থাকে তবে কেন সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে নি?

– দেখ, মা তোকে আয়রাবের থেকে বাচানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে তোর বিয়ে। তুই রাজি হয়ে যা এতেই সবার জন্যই মঙ্গল। তাছাড়া আমার ভাইয়ের ছেলে অনেক ভদ্র, শিক্ষিত এবং বাবা-মা’র একমাত্র ছেলে সে।
খুব ছোট থাকতেই বাবা মাকে হারিয়ে আমার কাছে সে বড় হয়েছে। বড় হবার পর লেখাপড়ার জন্য বিদেশে গেল। সেখানে পড়াশোনা শেষ করেই চাকরি করছে। আল্লাহর অশেষ কৃপায় তোর কোনো কিছুর অভাব হবে না মা, তুই রাজি হয়ে যা।

– আমার সব কিছু জানার পর উনি যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়, তবে আমি রাজি।

– আলহামদুলিল্লাহ, সে তোর সবকিছুই জানে। তাহলে আজ রাতেই তোদের বিয়ের ব্যবস্থা করি।
আমি আসি।
তুই নিজের খেয়াল রাখ আপাতত বিয়ে হবার আগ পর্যন্ত পরে আমাদের বাড়ির বৌ’য়ের খেয়াল আমরাই রাখব।

আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কথাগুলো বলে রুম ত্যাগ করলেন আব্দুল আঙ্কেল।

বিয়ে নিয়ে আমার মনে কোনো প্রকার অনূভুতি পাচ্ছি না। ভয় পাচ্ছি এক সপ্তাহ পর কি হবে ভেবে?

কায়নাতের রুম থেকে বেরিয়ে আব্দুল সাহেব গেলেন হলরুমে যেখানে বসে আছে কায়নাতের বাবা-মা।
আব্দুল সাহেবকে আসতে দেখে কায়নাতের বাবা প্রশ্ন করলেন,

-কি রে এতক্ষণ কি নিয়ে কথা বললি কায়নাতের সাথে? যা আমাদের সামনে বললি না?

– তোদের কায়নাতের বিয়ের ব্যবস্থা করেছি আমি। তাও আবার আমাদের ওয়াসিফের সঙ্গে, এতে তোদের কোনো আপত্তি আছে?

– এইসব তুই কি বলছিস? আমার মেয়েটার সাথে এই কয়েকদিন ধরে যা হচ্ছে সবই তো তোর দেখা। তাহলে, তুই কোন হিসেবে এখন বিয়ের কথা বলছিস তাও আবার ওয়াসিফের সঙ্গে?

– কেন,আমার ওয়াসিফের কি কোনো অংশে কমতি আছে?

– না ভাইজান, সে রকম কিছু বলতে চায় নি কায়নাতের বাবা। আসলে এই অবস্থায় বিয়ে!আপনি বুঝতে পারছেন ভাইজান আমি কি বলতে চাচ্ছি?

– আমি তোদের দুজনের মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু, মেয়ের যদি ভালো চাস তবে আজ রাতের মাঝে তোর মেয়ের বিয়ে হতে হবে।
আয়রাবকে তার বাবা বন্দী করেছে ঠিক কতক্ষণ আটকে রাখতে পারবে আমি জানি না? আর আয়রাবের চোখে আমি দেখেছি অসীম ভালোবাসা কায়নাতের জন্য ।
কিন্তু, সে যদি কায়নাতকে না পায় এতে সে যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারে তাও আমি বুঝতে পেরেছি।
যা করতে হয় আজ রাতের মাঝেই করতে হবে।
যদি একবার কায়নাতের বিয়ে হয়ে যায় তাহলে হয়ত বিবাহিত নারী কায়নাতের প্রতি আয়রাবের বদ দৃষ্টি কিছুটা কমতে পারে।

– তুই যেহেতু বলছিস তবে ভালোই হবে। তবে ওয়াসিফ সে তো দেশের বাইরে তাই না?

– আজ সকালের ফ্লাইটে সে এসেছে এবং তার সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে আলাপ হয়েছে। সে সবকিছু শুনেই রাজি হয়েছে। চিন্তা করসি না ওয়াসিফ খুবই ভালো ছেলে।

– আচ্ছা, ভাইজান কায়নাতকে বলেছেন বিয়ের কথা, ও কি রাজি হয়েছে?

– হ্যা, রাজি হয়েছে। তোমরা সবকিছুর বন্দবস্ত করো। আমরা সন্ধ্যার পর এসে বিয়ে করিয়ে কায়নাতকে নিয়ে যাবো আমাদের সঙ্গেই ।

তাহলে আমি আসি। শাহীন ভাই আমার চিন্তা করিস না। আল্লাহ ভালো কিছু ভেবে রেখেছেন আমাদের সবার জন্য।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here