কে_তুমি,পর্ব:৬
Tahmina_Akther
ভয়ে আমার শরীর থরথর করে কাপতে লাগলো, মা আমার এরুপ অবস্থা দেখে দিশেহারা হয়ে পড়লেন।
আব্বু উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন আমাকে।
আমি আব্বুর হাত থেকে পানিটুকু নিয়ে এক শ্বাসে খেয়ে নিলাম। এখন একটু ভালো লাগছে।
এবার আস্তে করে আব্বুকে বললাম,
-আব্বু, আব্দুল আঙ্কেলের কি কোনো ক্ষতি করেছি আমি? বলেন কি হয়েছে আঙ্কেলের?
– আরে পাগলি কিছুই হয়নি তোর আঙ্কেলের। শুধুমাত্র, তোর আঙ্কেলের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য আজ তুই আপাতত সুস্থ আছিস।
– আপাতত,বলতে আব্বু আমি কি এখনো সেই ভয়াল দৃষ্টি থেকে মুক্তি পাইনি?
– জানি না, তবে সেদিন তোর আঙ্কেল কি করেছিল শুনবি না?
আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম,
– তার কথা শেষ হতেই, তোর আঙ্কেল তোর দিকে এগিয়ে যায় এবং তোর পাশে গিয়ে অনুরোধ করে যাতে তুই ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে হলরুমে গিয়ে বসিস।
অনেক জোড়াজুড়ি করার পরও যখন সে রাজি হচ্ছিল না তখন তোর আঙ্কেলের এককথায় সে রাজি হয়ে যায়।
আমি আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছি, কি এমন কথা বলল একেবারে সে ওয়াসরুম থেকে হলরুম পর্যন্ত যেতে রাজি হলো।
-তোর আঙ্কেল, বলেছে সে যদি তোর দেহ ত্যাগ করে এবং তার নিজস্ব রুপে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয় তবে তোর সাথে তার দেখা সাক্ষাত আরো সহজতর হবে।
কিন্তু, শর্ত গুলো আগে জানতে হলে তারআগে হলরুমে যেতে হবে।
বিশ্বাস করবি না মা, এ কথা শুনতেই তুই অর্থাৎ তোর দেহে থাকা আয়রাব, ওয়াসরুমের শাওয়ারের মাঝে দাড়িয়ে গোসল করল।
এরপর তোর রুমে গিয়ে তোর মা’কে উদ্দেশ্য করে বললো, নিন এবার আপনার মেয়েকে সামলান।
একথা বলেই সে তোর দেহ ছেড়ে দেয়।
তারপর, তোর আব্দুল আঙ্কেলের কানে কি যেন বলে, এতে তোর আঙ্কেলের সাথে থাকা রাক্বী নিয়ে তোর আঙ্কেল আমাদের এক রুমে চলে যায় এবং সেখানে আমাকেও যেতে বারণ করে।
কি বলা হচ্ছে মেয়ের সাথে?
কথাটি কে বলেছে তাকাতেই দেখতে পেলাম আঙ্কেলকে।
– আব্দুল, দোস্ত আমার, আসলে কায়নাত জানতে চাচ্ছে কি এমন কথা বলেছিস? যে সেই জ্বীন তোর কথা মেনে কায়নাতের দেহ ছেড়েছে।
– বলছি আমি, তার আগে ভাবিকে নিয়ে তুই এই রুম থেকে যা,কায়নাতের সাথে আমি বলি সেদিন কি হয়েছিল?
আম্মু আব্বু চলে গেলেন। এবার আঙ্কেল আমাকে এমন এক প্রশ্ন করলেন আমি তাজ্জব বনে গেলাম।
– তোকে, আমি আমার ভাতিজার বৌ বানাতে চাই, এতে তোর কোনো আপত্তি আছে, কায়নাত?
– কিন্তু, আঙ্কেল এই মূহুর্তে কথা গুলো কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ আমার জীবনে, আপনি খুব ভালো ভাবেই জানেন। তারপরও, আপনি যেহেতু বলছেন এখানে নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে?
কিন্তু, বিয়েই কেন?
– কারণ আছে তাই ;সেদিন আমি এবং সেই রাক্বী আয়রাবের সঙ্গে ফাকা ঘরে কথা বলি এবং তাকে নানা ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করি যে,
মানুষের সাথে কখনো জ্বীনের প্রেম, ভালোবাসা বা বিয়ে সম্ভব নয়।
কিন্তু, সে এ কথা মানতে রাজী নয় সে তার কথায় অটল । তার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তাকে আমি দেখতে চাই তার রুপে নিজ অস্তিত্বে। সে রাজি হয় কিন্তু, আমি শুধুমাত্র তাকে দেখতে পাবো আর কেউ নয়।
সে যখন তার নিজের রুপে আসে বিশ্বাস করবি কি না জানি না তাকে দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। এটাও কি আদৌও সম্ভব? কিন্তু, আমার মনকে আমি বুঝিয়েছি আল্লাহ চাইলে এই পৃথিবীতে কি না ঘটে?
তাকে দেখার পর আমি তাকে বলি,
আয়রাব,তোমাকে আমি দেখেছি, তুমি মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর।
তোমাকে আমার কিছু বলার আছে এবং শর্তও আছে। তুমি যদি শর্তে রাজি থাকো তাহলে বলতে পারি,
– হ্যা, বলুন।
– আমাদের কায়নাতের পছন্দের একজন আছে। নিশ্চয়ই তুমি চাইবে না, কায়নাত তোমার জন্য কষ্ট পাক।
আমি চাই কায়নাত তার পছন্দের মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে নিজের করে নেয়।
কিন্তু, তুমি যদি আমার কথা মানো তবে তুমি কায়নাতকে নিজের করে নিতে পারবে ।
– কিভাবে বলুন না? আমি আপনার সব শর্তে রাজী আছি.
– আমার ধারণা তুমি একজন অমুসলিম। তাই তোমাকে আগে মুসলিম হতে হবে। এবং মানুষকে অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
– জি, জি; আমি আপনার শর্তে রাজি।
– আরও, একট শর্ত বাকি আছে।তুমি তোমার বাবার সাথে আমার কথা বলিয়ে দেবে এবং একসপ্তাহ তুমি এই বাড়ির আশেপাশে এমনকি কায়নাতের আশপাশে থাকবে না।
তোমার বাবার সাথে কথা বলার পর আমি তোমার সঙ্গে কায়নাতের বিয়ে দিব।
তুমি এতে রাজী আছো?
– জি, আমি আমার হুমায়রার জন্য সব করতে রাজী আছি।
আশা করি আপনি আমার সাথে কোনোপ্রকার ধোকাবাজি করবেন।
আসছি আমি।
এই বলে সে আমার সামনে থেকে ধোয়ায় মিলিয়ে যায়।
– তার বাবা কি আপনার সাথে যোগাযোগ করেছেন? আর আয়রাব কি সত্যি আর আমার আশেপাশে নেই? আঙ্কেল।
চলবে