#কৃষ্ণ_মেঘের_প্রেম-৩
writer_ishanur_inayat
লাবনীর যখন বয়স ১৬, তখন এসএসসি পরীক্ষা শেষ সবেমাত্র। রেজাল্ট দিবে তার আরে চবিশ পঁচিশ দিন বাকি। ততদিনে লাবনী অনেকটা শক্ত করে নেয় নিজেকে ইতিমধ্যে সে ঠিক করে নেয় সে তার বাবার কাছে চলে যাবে। এখানে দাদি আদর করলেও ফুপুর হিংসাত্মক মনোভবের কারণে তার তৈরি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় লাবনীকে আর সাথে ওর ফুপাতো বোন তো ছিলই উস্কানির জন্য।
রেজাল্টে গোল্ডেন জিপিএ 5 পায় লাবনী। লাবনীর বাবা আসে তার দুদিন পর। তখন আবার লাবনী ফুপু এমন ভাব করত যেন লাবনীকে তিনি নিজের মেয়ের থেকে বেশি ভালোবাসেন। তবে লাবনী তো মনে মনে ঠিক করে রেখেছে- ই যে সে আর থাকবে ওর ফুপুর সাথে। মানসিক শান্তি চাই ওর। একটু খোলামেলা পরিবেশ, শান্তিকর পরিবেশ।যেখানে প্রতিনিয়ত ওকে কারোর চক্ষুশূল হয়ে তার সাথে বসবাস করা যাবে।
ও ওর বাবাকে বলে, যেন সে তাকে সাথে করে নিয়ে যায় যেখানে ওর বাবা থাকে। উনি জিজ্ঞেস করেন লাবনীর কি এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে? লাবনী এ ব্যাপারে কিছু না বলে সাফ সাফ জানিয়ে দেয়, সে তার বাবা’ কে ছাড়া আর থাকতে পারবে না। এবং লাবনীর বাবারও ইচ্ছে ছিল তার মেয়ে তার সাথে নিয়ে যাবেন। এ ব্যাপারে বহুবার বলেছেন নিজের বোনকে আর মা’কে। ওনার মা আপত্তি না করলে ওনার বোন অর্থাৎ লাবনীর ফুপু ভীষণ আপত্তি করে বলতেন, লাবনী নাকি তাদের কে ছাড়া একা একা বিদেশে থাকতে পারবে না। এখানেই সে ভালো আছে, থাকবে। লাবনী যেতে চায় না তার বাবার কাছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই লাবনীর মুখে নিজ থেকে ওনার সাথে যেতে যাওয়ার ইচ্ছে সম্পর্ক জেনে তিনি ভীষণ অবাক ও খুশি হোন। তবে অবাক হওয়ার থেকে বেশি খুশিই হোন। রাজি হয়ে যান।
আর লাবনীর ফুপু তো লাবনী’ কে ওর বাবা’ র সাথে ঠিক মতো কথাও বলতে দিতেন না। যদি কখনও একটু বেশি কথা বলতো মন খারাপের কথা ভুলেও লাবনী তার বাবা ‘কে বলে দিতো তখন লাবনীর ফুপু লাবনীকে একা ঘরে এনে ওর দাদীর থেকে লুকিয়ে অনেক মারধোর করতেন। লাবনী একবার ট্রমায়ও চলে গিয়েছিল এর জন্যে। লাবনীকে কখনও ওর বাবার সাথে একা কথা বলতে দেওয়া হতে না ওর ফুপু সামনে বসে থাকতেন। ভিডিও কলে তেমন একটা কথা বলতে দেওয়া হতো না ইত্যাদি। লাবনীর ফুপু যখন জানতে পারেন তার এতদিনের বন্দি খাঁচার পাখি, চাকরানি চলে যাবে তখন ভড়কে যান। লাবনীর বাবাকে না উপায় মানাতে চেষ্টা করেন যেন লাবনীকে এখানেই রেখ যান্। তবে তা আর হয় না। লাবনীর এক কথা সে যাবেই যাবে। তবে লাবনী মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল অন্য কিছু-ই! (পরের টুকু আগামী পর্বে……)
_____________
রোদ্র ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়। তখন লাবনীর অর্ধেক খাওয়া শেষ।লাবনী বলে সে আর খাবে না। রুপালী বেগম তাও জোর করে আরো দু তিন লোকমা খাইয়ে দেন। সাথে রোদ্রকে ও খাইয়ে দিতে থাকেন। রুপালী বেগম লাবনীর মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন এমন সময় রোদ্র আরচোখে লাবনীকে দেখার চেষ্টা চালায় রোদ্র লাবনী মুখোমুখি বসেছে। মাঝখানে রুপালী বেগম বসেছেন।লাবনীর দিকে আরচোখে তাকাচ্ছে আবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে এমন করেই খাওয়ার সময়টা পার করেছে। আর মাঝখানে শুধু হা করে খাবার গিলেছে এই কাজটুকুই করেছে। রোদ্র ভেবেছে লাবনী বুঝতে পারেনি। তবে লাবনী খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে রোদ্র ওর দিকে তাকাচ্ছে আর চোখ ফেরাচ্ছে।এবং সেইজন্যেই লজ্জার চোটে সে আর খেতে ইচ্ছুক না সেটাও মুখ ফুটে বলতে টুকু পারেনি।
রুপালী বেগম দেখলেন খাবার শেষ হয়ে গিয়েছে।
মুখে হাসির রেখা বিদ্যমান রেখে জিজ্ঞেস করলেন লাবনীকে, ” আরেকটুখানি খাবার নিয়ে আসি? খাবি?”
লাবনী আঁতকে উঠে বললো,
“না না! আর না মা..”
লাবনীকে এমন ভয়ে উঠতে দেখে শব্দ করে হেঁসে ফেললেন রুপালী বেগম। আর রোদ্রও মুচকি হাসলো।রোদ্রের কাছে মনে হলে এই ভয় পাওয়া মুখটাও যেন মায়ায় টানে…..
টানে এক অজানা মোহে…
রুপালী বেগম হেসে বললেন,
“ঠিকাছে আর খেতে হবে না।রোদ্র তোর জন্য আরেকটু নিয়ে আসছি বোস ”
……..
খাওয়া দাওয়া শেষে রোদ্রের কাজিনরা মিলে লাবনীকে নিয়ে গেল রোদ্রের রুমে। সেখানে বসিয়ে রুমের বাইরে গার্ড দিতে রুমের দরজার সামনে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তারা।লাবনী বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। চারপাশ টা পর্যবেক্ষণ করে। নীল রঙের পর্দা লাগানো জানালায়। একপাশে একটা কাঠের দরজা। লাবনী উঠে গিয়ে পর্দা সরিয়ে জানালা সামান্য ফাঁক করে দিতেই, ঠান্ডা হিমশীতল হাওয়া ওকে ছুঁইয়ে দিয়ে চলে যায়। জানালা দিয়ে একটু উঁকি দিতেই বুঝতে পারে কাঠের দরজা টা বারান্দার দরজা। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ানোর প্রখর ইচ্ছে প্রকট হয় লাবনীর। তবে রোদ্র এসে পরলে ওকে ওর-ই বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে কি মনে করবে ভেবে লাবনী আর গেল না। জানালা টা আবারও লাগিয়ে দিয়ে পর্দা টা আগের মতন করে দিয়ে বিছানায় এসে বসে।
রোদ্র ওর রুমে ঢুকতে চাইলেই পর কাজিনরা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আর্জি পেশ করে যে, তাদের দশ হাজার টাকা না দিলে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
রোদ্রও কি সেও চ্যালেঞ্জ নিতে ভীষণ পছন্দ করে তাই সে বললো, সে টাকা না দিয়েই ঢুকবে এবং তারা তাকে আটকাতেও পারবে না।
রোদ্র কিভাবে ঢুকবে সেটা ওর কাজিনরা জিজ্ঞেস করলেই রোদ্র বললো,” সেটা তোদের কেন বলবো আমি? হু! তোরা কি আমাকে ঢুকতে দিবি? তা তো না উল্টো বেয়াদবের মতন দাঁড়িয়ে বাঁধা দিচ্ছিস আমার রুমেই আমাকে ঢোকা থেকে। তাই তোদের মতন বেয়াদবকে আমি বলবো না আমার সিক্রেট। যা ফুট!..”
বলে পাশ কাটিয়ে রোদ্র রুশমীর রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল তারপর রুশমীর বারান্দা দিয়ে ওর বারান্দার দরজায় কড়া নাড়লো।নিকষকৃষ্ণ আঁধারে আড়াল হয়ে যায় লাবনীর ফর্সা উজ্জ্বল মুখখানা।
ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দু’হাতে নিজেকেই জরিয়ে ধরে।
বিছানা থেকে পা নামিয়ে ঠান্ডা ফ্লোরে রাখে। দ্বিতীয় বারের মতন ঠান্ডায় চমকিত হয়। ধির পায়ে এগিয়ে যায় বারান্দার দরজার দিকে। মিহিয়ে যাওয়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কে..?”
কোনো উত্তর পেল না প্রথম বার। ভাবলো ওর কি ভুল হয়েছে শুনতে? মনে ভুল ভেবে বারান্দার দরজার সামন থেকে চলেই আসছিল ওমনি দ্বিতীয় বার ” ঠকঠক” করে শব্দ এলো। বুক ধড়ফড়িয়ে উঠলো লাবনীর। এমন কৃষ্ণ আঁধার রাতে জোছনার আলোয় ঢাকা শহরে ভুতের আগমন হলো নাকি? ভাবনা উদয় হলো লাবনীর।
শান্ত স্বরে রোদ্র বলে, “আমি রোদ্র, দরজা খুলুন লাবনী।”
লাবনী মনে ভয় নিয়েই দরজা খুললো। রোদ্রকে আবছা চাঁদের আলোয় দেখতে কি স্নিগ্ধ কি মায়াবী লাগছিল সেটা হয়ত লাবনীর ভাষায় প্রকাশ করতে গেলে শব্দভান্ডারে শব্দের অভাব বোধ হবে।
রোদ্র ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলো।বারান্দার দরজা আটকিয়ে দিতেই।
বাইরে থেকে আওয়াজ এলো রোদ্রের একজন কাজিন বলছে,
“ভাবি? ভাইয়া কি ভেতরে এসেছে?”
লাবনী কি উত্তর দিবে খুঁজে পেল না। তাই রোদ্রের পানে তাকালো। রোদ্র এটা দেখে বললো, “যাও দরজা খুলো..” কথা বলো রোদ্র নিজেই অবাক হয়ে গেল। ও লাবনীকে তুমি করে বলেছে সে নিজেই খেয়াল করেনি।
লাবনী ব্যাপার সামান্য অবাক হলেও তা প্রকাশ না করে দরজা খুলে দেয়।
______________
-“চলবে”
লেখিকা:-” ইশানূর ইনায়াত”