#কৃষ্ণ মেঘের প্রেম,পর্ব:০১
#Writer_Ishanur_Inayat
-“এই মেয়ে’কে বিয়ে করলি কি ভেবে রৌদ্র?একেবারে ঈশ্বৎ কালো।তোর মা’ বুঝি আক্কেল জ্ঞান হারিয়েছে? যে তোর মতো পার্ফেক্ট ছেলের জন্য এমন বউ খুঁজে এনেছে? আমার মেয়ে টা’কি এর থেকে বেশি কালো ছিল? এর থেকে তো আমার মেয়েই বেশি সুন্দরী ছিল। ওকে কেন রিজেক্ট করেছিলি বল দেখি? বেশি বুঝলে যায় হয় বাপু!” এরকম নানা কথা-ই শুনতে হচ্ছে রৌদ্র কে। আজকে তার বিয়ে হয়েছে। যে মেয়েটির সাথে বিয়ে হয়েছে। সে একটু শ্যামলা বর্ণের। তবে এটাকে ঈশ্বৎকালো বর্ণ বলে রটিয়ে দিয়েছেন বিয়ে বাড়ির সমালোচনা পার্টির অধীন আন্টিরা। সেখানে রৌদ্রর ছোট ফুপুও আছেন। এসব কথা রৌদ্র মোটেও ভাললাগছে না। সে তাদের ছাঁদে যায় একান্ত সময় কাটাতে।ছাঁদের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় ভাবছিল বিয়ের আগের মুহুর্ত যখন তার মা মেয়ে দেখতে গিয়েছিল তখন ও বলেছিল তার মা’কে: “মা তোমার পছন্দ করা মেয়েই আমার পছন্দ, আমি জানি তুমি আমার জন্য ভুল কাউকে বাছবে না ” তবে এটাই কি তার ভুল ছিল? এসব ভেবেই পরক্ষণে নিজেই নিজেকে বকে কিসব ভাবছে সে। অন্যদের মত সেও এসব ভাবছে। গায়ের রঙ আর রুপ কখনই ভালো মানুষকে চিহ্নিত করার পন্থা হতে পারে।
মানুষের মনের সৌন্দর্য বেশি প্রাধান্য যোগ্য রৌদ্র’র কাছে।
এসব নেগেটিভ মন্তব্য শুনতে শুনতে নিজেও নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছে ভাবলো রৌদ্র। ছাঁদে গিয়ে মুক্ত শ্বাস ফেলে এসব নেগেটিভিটি -কেও ঝেড়ে ফেলে আসবে বলে মনে মনে ঠিক করলো সে।
ছাঁদে উঠতেই চোখে পরে,
ছাঁদে লাল শাড়ি পরে রেলিং এ হাত রেখে আকাশের দিকে মাথা উঁচিয়ে তাকিয়ে আছে লাবনী।
মুখে মলিন ভাব। চোখে মুখে অজস্র মায়া ভরা। সবকিছু-ই মায়ায় জড়ানো ওর। মুখে এক রাশ বিষন্নতা ছেয়ে আছে। ওর মুখ দেখে কারোর মনে হবার কথা নয় যে ওর বিয়ে হয়েছে কিয়ৎক্ষণ আগেই। এবং ও নতুন কণে।আকাশে কৃষ্ণ মেঘেরা ভীড় করেছে। যেকোনো সময় তারা ভেঙে গুঁড়িয়ে ধরনীর মধ্যিখানে ঝাঁপিয়ে বর্ষণ করতে পারে। আর লাবনীর মনোকাশে আজ নিবিড় অন্ধকার ছেয়ে। কৃষ্ণ মেঘেরা ওর মনেও ভীড় করেছে। চোখ দিয়ে বর্ষণ হতে পারে যেকোনো মুহুর্তে। তবে লাবনী নিজের চোখকে কড়া ভাবে শাসন করে বলেছে, “তারা যেন কিছুতেই ওকে সবার সামনে লাঞ্ছিত না করে, তাদের বর্ষণ এ শহরে মানা।” নিজের মন’কে শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে লাবনী।
রৌদ্র এগিয়ে যায়। লাবনীর পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। লাবনী তখনও বিষন্ন মনে চাঁদের আলোয় নিজের মন খারাপকে হারাতে ব্যস্ত।রৌদ্র লাবনীর কাঁধে ওর হাত রাখতেই লাবনী চমকে ওঠে। পেছনে ফিরে তাকিয়ে রৌদ্র কে দেখে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়।
রৌদ্রের মনে হলো,
“কই মেয়েটাকে যে সবাই অসুন্দর বলছে আমার কাছে তো একটুও তা লাগছে না্। কি অমায়িক মুখখানা। মায়ায় ভরা। চাঁদের আলোয় যেন দ্বিগুণ সৌন্দর্য ও নিষ্পাপভাব বেড়ে গিয়েছে। ” কিছু না ভেবেই রৌদ্র লাবনীর গালে হাত রাখলো। রৌদ্রর হাতের ছোঁয়া পেয়ে সামান্য কেঁপে উঠলো লাবনী। এর আগে কোনো পুরুষ ওকে ছোঁয়নি। রৌদ্রের ছোঁয়ায় কেমন ভালো লাগলো লাবনীর এতক্ষণের মন খারাপ ভাবটা কোন ফাঁক দিয়ে পালিয়ে গেল বুঝতেই পারলো না ও। রৌদ্র নিপলক তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। কিছুক্ষণ এভাবেই তাকিয়ে থাকবার পর ফোনের কর্কশ রিংটোন টা বেজে বুঝিয়ে দিল এভাবে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না্। ঘরে ফিরতে হবে। সবাই অপেক্ষা করছে।রৌদ্র নিজের হাত লাবনীর গাল থেকে সরিয়ে নিল লাবনীৃ। লাবনীর দৃষ্টি রৌদ্রের পায়ের জুতোর দিকে। একবারও রৌদ্রের দিকে তাকালো না।তাকানোর ইচ্ছে জাগলেও সেটাকে প্রত্যাখান করলো। না তাকানো’য় ভালোই হয়েছে অবশ্য নাহলে ওর দিকে রৌদ্রকে এভাবে নিষ্পলক তাকিয়ে দেখতে দেখে লজ্জায় মাটির ভেতরেই ঢুকে যেত গাল ছোঁয়াতে-ই যা লজ্জা পেয়েছে।
রৌদ্রের মেঝো খালা ফোন করেছেন। রৌদ্র রিসিভ করলো। ওপর পাশ থেকে মেঝো খালার কন্ঠস্বরে ভেসে এলো এক ঝুড়ি বকুনি। কেন এই সময় সে বাসা থেকে হারিয়ে গেল? কই গেল? কখন ফিরবে এই সেই।
রৌদ্র নির্মল কন্ঠে বললো,
“আমি আসছি। ” ছাঁদে থাকবার কথা আর উল্লেখ করলো না।যেহেতু মেঝো খালা তেমন করে জানতে চান’ নি। রৌদ্র এক খোলা আকাশের দিকে তাকালো। তা দেখে লাবনী ও আকাশের দিকে তাকালো। এতক্ষণ যে রৌদ্র ফোনে কথা বলছিল সেই সময় লাবনীর সুক্ষ্ম দৃষ্টিপাত ওর দিকেই ছিল। মুগ্ধ হয়ে একটু তাকিয়েছিল। ফোন রেখে দেওয়ায় অন্য দিকে তাকানোর প্রস্তুতি নিবে তখন রৌদ্র কে আকাশের দিকে তাকাতে দেখে সেও তাকালো।
___________________
এত ভীরে কি করে সবার সামনে দিয়ে দুজন একসাথে ঘরে প্রবেশ করবে এটা নিয়ে চিন্তা করছিল লাবনী। তাই রৌদ্র বললো আগে লাবনী কে যেতে তার কিছুক্ষণ পর নাহয় সে বাসার ভেতরে প্রবেশ করবে।
তাই করলো। লাবনী ভেতরে প্রবেশ করবার আগে রৌদ্র খুবই সযত্নে লাবনীর শাড়ির আঁচল টা ওর মাথায় দিয়ে দেয়্। বড় আঁচলের ঘোমটায় লাবনী ঢেকে যায়। গোলগাল মুখখানা একটুখানি উঁকি দিয়ে বের হয়ে রয়। একদম নতুন বউ লাগছে। অবশ্য লাবনী তো নতুন বউ-ই তাকে তো নতুন বউ লাগার-ই কথা।
রৌদ্রের এই কাজটায় লাবনীর মনে কতটা ভালো-লাগা কাজ করেছে সেটা হয়তো বা রৌদ্র কল্পনা করেনি আর ওর কল্পনায় আসেও নি।
লাবনী খুবই সাবধানে বাসায় প্রবেশ করে। ওইখানে পরিচিত তেমন কেউ-ই না থাকায় আরামসে ও ভেতরে চলে গিয়ে দো তলায় ওর শাশুড়ীর দেখিয়ে দেওয়া রুমটায় চলে যায়। তবে ওকে দোতলায় ওঠবার সময় সিড়িতে একটা ছেলে দেখে ফেলে। লাবনী সেই দিকে খেয়াল করেনি বলা চলে। ও মাথা নিচু করে উপরে উঠে গিয়েছে। তবে ছেলেটা ওকে দেখেছে। ওর মুখশ্রী দেখে সে থমকে গিয়েছে। এবং সেইখানেই থেমে গিয়েছে। পা একটু নড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই চিরচেনা মুখশ্রী আবারও চোখুচর হতেই যেন হৃদ নামক বস্তুটি ক্ষনিকের জন্য ধক করে উঠলো। আবারও দেখা সেই সমীকরণের অতীতের সাথে?
_____________
লাবনী ভেতর যাওয়ার গুনে গুনে ১০ মিনিট পর বাসায় প্রবেশ করে রৌদ্র। ডাইনিং গিয়ে মেহমান দের সাথে হালকা পাতলা আলাপ হলো। সাধারণত সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছে। তবে সেখানে বসে থাকা তার ছোটো ফুপু মুখ কালো করে আছেন । ওনার আফসোসের,শেষ নেই রৌদ্রের বিয়ে নিয়ে। সেটাকে পাত্তা না দিয়ে রৌদ্র অন্যকে চলে যায়। এসব নেগেটিভ মানুষদের আশেপাশে থাকলেও নেগেটিভিটি এসে পরে। নেগেটিভিটি ছোঁয়াচে রোগের-ই মতন।
_______________
বাসা ভর্তি প্রায় মানুষ। ছেলের বিয়েতে অনুষ্ঠান অত বড় করে করেননি। তবে বাসায় ভালোই মানুষ এসেছে।
বাসার বাইরে আউটডোর একটিভিটি রৌদ্রের পছন্দ বলে বেশ বাড়তি জায়গা আছে্ বাগান আছে। সেখানে স্টেজ হয়েছিল। ছোট অল্প আয়োজনে সব অনুষ্ঠান-ই হয়েছে। পরবর্তী তে মেয়ে ও বর দেশে ফিরলে আবারও
সবাইকে ডেকে বড় সড় অনুষ্ঠান করবার ইচ্ছে আছে রুপালী বেগমের।
রুপালী বেগম সব মেহমানদের খাওয়া দাওয়ার ব্যাপার টা নিজ চোখে দেখে তারপর নিশ্চিত হয়ে লাবনী কে খুঁজতে লাগলেন। ভাবতে লাগলেন। মেয়েটাকে কতক্ষণ ধরে দেখছেন না। মেয়েটা কে তো খাওয়ানো ও হয়নি। আর মেয়েটা যা নিশ্চয়ই মুখ ফুটে কাউকে বলেনি ক্ষিদে পেয়ে থাকলেও। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে লাবনীকে খুঁজতে থাকে।
লাবনীকে তো রুশমীর রুমে বসতে বলেছিল। এত ভীরে মেয়েটার অস্বস্তি হবে বলে। তবে এটা ভাবেন-ই নি যে একা একা মেয়েটা বিরক্ত ও বোধ করতে পারে। রুশমী থাকলে মেয়েটার ভালো লাগতো দুজন ননদ ভাবী মিলে গল্প করতে পারতো বেশ। একবার ভাবলেন
রুমের দরজা খোলাই ছিল। ভেতরে ঢুকে যা দেখলেন তাতে ভীষণ অবাক হলেন তিনি।
-চলবে