কৃষ্ণকলির গল্প-০১
লেখনীতে -বর্ষা ইসলাম
‘পাঁচ বছর আগে হসপিটালের যে বেড টা নিজ স্ত্রীর জন্য বুকিং করে তাকে প্রায় আধামৃত অবস্থায় রেখে চলে গিয়েছিলাম সেই বেডটা তেই শুয়ে আজ আমি মৃত্যুর প্রহর গুনছি।
আমার থেকে একটু দুরে সাদা এপ্রোন গায়ে জড়িয়ে ডাক্তারি পোষাকে দাড়িয়ে আছে প্রিয়তা, আমার স্ত্রী। ক্ষীন চোখে আমি অবাক হয়ে দেখছি তাকে। দীর্ঘ এই পাঁচ বছরে তার মাঝে শারিরিক কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং আগের তুলনায় আরও অনেকটা পরিপাটি, গোছানো,রুচিশীল নারী মনে হচ্ছে দেখতে। সারাজীবন যে আমি সৌন্দর্যের পেছনে দৌড়িয়েছি, আজ সে আমিই মুগ্ধ হয়ে শ্যামবর্ণের প্রানবন্ত প্রিয়তা কে দেখছি। কালো রঙের মোটা ফ্রেমের চশমা টায় কি দারুন মানিয়েছে তাকে। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে!
প্রিয়তা, মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে সে৷ গায়ের রং অনেকটা চাপা,তামাটে। গ্রামের এক সরকারি কলেজে সবে মাত্র পড়াশোনা শুরু করেছিলো। চাল চলনে ভীষন শান্ত, নিস্তব্ধ। যেনো একা হাতে ঘর সংসার সামলানোর এক অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নিয়েছে সে। এসব পড়াশোনা করে চাকরি বাকরি করা তাকে একদম ই মানায় না। বিয়ে সাদি করে স্বামী সংসার নিয়ে শান্তি তে থাকবে এটাই তো অনেক। আর কি চাই মেয়েদের? হলোও তাই।
‘প্রিয়তার এতোসব গুণাবলির খপ্পরে পড়ে বাবা এক দেখায় প্রিয়তাকে আমার বউ বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। জন্ম সুত্রে আমি গ্রামের ছেলে হলেও শৈশব,কৈশর,যৌবন সব ই শহরে পার করেছি। একাধিক প্রেমের সম্পর্কেও জড়িয়েছি। তবুও ইচ্ছে ছিলো বিয়ের আগে প্রেম টেম যাই করি, বিয়েটা পরিবারের ইচ্ছেতেই করবো। করলাম ও তাই। শহর ছেড়ে গ্রামে আসলাম।পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন হলো প্রাইভেট কম্পানিতে নতুন জব পেয়েছি। তাই অফিস থেকে ছুটি পেতে বেশ বেগ পেতে হলেও তেমন কোনো কঠিন সিচুয়েশনে পড়তে হয় নি। গ্রামে আসার দুদিন পর পর ই সমস্ত রীতি নীতি মেনে মোটামুটি ভালো আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়েই বিয়েটা হয়ে গেলো। বউ নিয়ে চলে আসার সময় প্রিয়তার বাবা আমার দু হাত ধরে বলেছিলেন,
‘বাবা শুভ্র, আমার মা মরা মেয়েটাকে তুমি একটু দেখে রেখো। কয়দিন পর দেখবে ও নিজেই তোমার সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। আমার প্রিয়তা মা যে আমার ঘরে কৃষ্ণকলি ছিলো। ভীষন লক্ষী।
বিয়ের দিনই নববধূর এতো এতো প্রশংসা শুনে নিজের মনে তখন লাড্ডু ফুটছিলো। মেয়ের বাবার বর্ণনা অনুযায়ী বলাই যায় তাহলে, ‘অনেক ভাগ্য করে এমন বউ পেয়েছি। যদিও এখনও তাকে আমি দেখিনি।
কথা টা ভেবেই নিজেই নিজের সাথে বার কয়েক হেসেছিলাম সেদিন।
‘রাত বাড়লো। বিয়ের সমস্ত কালচার শেষ করে নিজের রুমে ঢুকলাম। ঘড়ির কাটা তখন ১২ টা ছুঁই ছুঁই। রুমের আলো এখনো নিভেনি। বিছানার মাঝ বরাবর লম্বা ঘোমটা টেনে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে প্রিয়তা। আমি কয়েক মুহুর্ত সময় নিয়ে খুব সতর্ক পায়ে তার কাছে গেলাম। প্রিয়তা নড়েচড়ে উঠলো। মাথার ঘুমটা টা আরও খানিক লম্বা হলো। অস্বস্তি লাগলো খুব। রুমে আসার সময় ভাবীরা বলে দিয়েছিলো নতুন বউ কখনো নিজে থেকে ঘুমটা তুলবে না। স্বামীকেই ঘোমটা তুলে প্রথম মুখ দেখতে হয়। সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেই প্রিয়তার মুখ থেকে ঘুমটা টা সরিয়ে ফেললাম। ঘুমটা সরিয়ে তার মুখের দিকে তাকাতেই যেনো নিজের ভেতর সত্তা টা অদুরে ছিটকে পড়ে গেলো। আমি হতবাক। হতভম্ব। আহত চোখে আরও বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম প্রিয়তার মুখের দিকে। বিয়ের আসরে কানাঘোষায় শুনেছিলাম পেত্নীর মতো মেয়ের জ্বীনের মতো বর। খুব ভাগ্য করে এলে এমন বর কপালে জুটে। তখন কথাটা কানে না নিলেও এখন তা হারে হারে টের পাচ্ছি। প্রিয়তার গায়ের রং অনেক টা কালো। তার মাঝে প্রসাধনীর ছোঁয়ায় যেনো আরও বিশ্রী দেখাচ্ছে ওকে। লাল শাড়ি,লাল চুড়ি,লিপস্টিক, সোনার গহনা যেনো কিছুতেই মানাচ্ছে না প্রিয়তাকে। বাবার উপর রাগ হলো খুব। রাগে,ক্ষোভে শরীর মন বিষিয়ে উঠলো। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাটের হাতলে সর্বজোড়ে ঘুষি বসিয়ে দিলাম। প্রিয়তা ভয়ে কেঁপে উঠলো। টেবিলের সাথে ধাক্কা লেগে কাঁচের গ্লাস টা ফ্লোরে পড়ে ঝনঝন শব্দ করে ইহলোক ত্যাগ করলো। আমার শরীর কাঁপছে। রাগে মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম। নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। অন্তত বাবার কথায় অন্ধ বিশ্বাস না রেখে একবার বিয়ের আগে এই মেয়ে কে আমার দেখা উচিত ছিলো।
প্রিয়তা বেশ বুদ্ধিমতি মেয়ে। এক পলক আমার দিকে তাকিয়েই বুঝে গেলো আমি অস্বাভাবিক আচরণ করছি। শাড়ির আচল ঠিক করে নিয়ে আমতা আমতা গলায় খুব রয়ে সয়ে প্রশ্ন করলো,
‘আপনি ঠিক আছেন?
আমি কোনো কথা বললাম না। কিছু সময় চলে যাওয়ার পর দ্বিতীয় বারের মতো প্রিয়তা আমার ডান হাত টা ধরে ঝাঁকি দিতে দিতে বললো,
‘কি ব্যপার কথা বলছেন না কেনো? আপনি ঠিক আছেন তো?
প্রিয়তা প্রথম বারের মতো আমাকে ছুলেও সে ছোঁয়া আমার বিষের মতো লাগলো। ভেতরের আগুন টা যেনো আরও দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। প্রিয়তাকে টেনে বিছানা থেকে নামালাম। ওর এক হাত আমার হাতের সাথে লম্বা লম্বি ভাবে রেখে শক্ত গলায় বললাম,
‘ডোন্ট টাচ মি। তোর গায়ের রং আর আমার রং টা মিলিয়ে দেখ একবার। এ কালিমাখা রং নিয়ে শুভ্র কে ছুঁতে আসিস না। খুব খারাপ হবে তাহলে।
‘আমার কথা শুনে প্রিয়তা প্রানহীন মুর্তির মতো দাড়িয়ে রইলো। চোখ দুটো তে পানি টলমল করছে। কিন্তু কাঁদতে পারছে না। আমি শরীর থেকে পান্জাবিটা খুলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে গিয়েও আবার প্রিয়তার কাছে ফিরে আসলাম। এক প্রকার শাসিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বললাম,
‘ভোর হলেই এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবি। তোর এই সুন্দর মুখ যেনো সকাল সকাল আর না দেখতে হয় আমাকে। বলে দিলাম।
কথা গুলো বলে আর এক সেকেন্ড সময় নিলাম না। চলে গেলাম ওয়াশরুমে।
রাত তখন মাঝরাত পেরিয়ে শেষের দিকে গড়িয়েছে। রুমের ঝলমলে আলো নিভে গিয়ে ডিম লাইটের আবছা আলো ঘোরপাক খাচ্ছে। পুরো রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা। চোখে ঘুম নেই। মনে শান্তি নেই। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কি হতে কি হয়ে গেলো! এতো বছরের লালিত সপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে গেলো। আফসোসের শত খানিক প্রশ্নে প্রশ্ন বিদ্ধ হচ্ছে মস্তিষ্ক। হঠাৎ ই বুকের উপর কারও স্পর্শ অনুভুত হলো। চোখে মেলে পাশ ফিরে এক ঝটকায় হাত টা সরিয়ে দিতে গিয়েও কেনো জানি থেমে গেলাম। প্রিয়তা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঘুমের মাঝেই যে সে আমাকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরেছে তা বুঝার বাকি রইলো না। হঠাৎ করে কি হলো কে জানে! ঘন্টা খানিক আগের দগদগে রাগ টা ভোঁতা হয়ে গেলো। শরীর বেয়ে নেমে গেলো হিমহিমে অনুভূতিময় স্পর্শ। অন্ধকার তো আর রুপ খুঁজে না। অন্ধকার খুঁজে শরীর। অনিচ্ছাকৃত কিছু যন্ত্রণাময় উষ্ণ স্পর্শ। নির্মম, নিস্তব্ধতার কাছে নিজের পুরুষত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে ডুবে গেলাম প্রিয়তার অপ্রিয় শরীরের ভাঁজে ভাঁজে । আবিষ্কার করলাম সুখ আস্বাদনের কিছু কঠিন মুহূর্ত! অন্ধকারেও আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম এক কালো মেয়ের অসম্ভব সুন্দর লাজুক একটি মুখ!
এভাবে চলে গেলো মাস। বিয়ের কিছু দিন পরই ঢাকায় চলে এসেছি। প্রিয়তাও এসেছে আমার সাথে। বিয়ের পর দিন বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রিয়তা কে আর ও বাড়ি ফেরত পাঠানো হয় নি। অসুস্থ বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে প্রিয়তা আর আমার ডিভোর্সের কথাটা বলারও সাহস হয় নি। বাধ্য হয়েই সাথে নিয়ে আসতে হয়েছে ওকে।
অফিস থেকে ফিরেছি বেশ কিছু ক্ষন হলো। সন্ধ্যার আকাশে সূর্য ডুবুডুবু। ড্রয়িংরুমে বসে চ্যাট করছি রাফিয়াতের সাথে। রাফিয়াত আমার কলিগ। দেখতে শুনতে বেশ সুন্দরী। বলা যায় সে পুরোপুরি বশ করে নিয়েছে আমাকে। প্রেমে পড়ে হাবুডুবু অবস্থা। মাগরিবের আযানের আগে আগে প্রিয়তা ড্রয়িংরুমে আসলো। সামনে চায়ের কাপ টা রেখে আমার পাশে বসতেই ফোন টা পকেটে রেখে দিলাম আমি। প্রিয়তা হয়তো কিছু বুঝলো নয়তো না। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললাম,
‘কিছু বলবে?
‘হুম।
আমি চোখ তুলে তাকালাম। প্রিয়তা কে বেশ ক্লান্ত আর রোগা রোগা লাগছে। সেদিকে ততোটা পাত্তা না দিয়ে চায়ের কাপে পুনরায় মনোনিবেশ করে স্বভাব সুলভ কন্ঠে বললাম,
‘বলো,কি বলবে।
প্রিয়তা খানিক সময় নিয়ে বেশ রয়ে সয়ে বলে উঠলো,
‘আসলে কয়েকদিন যাবত আমার শরীর টা ভালো যাচ্ছে না। কাজ কর্মে তেমন শক্তি পাচ্ছি না। ভীষন দুর্বল লাগে। আপনি তো নিয়ে যাবেন না ডাক্তারের কাছে। তাই বলছিলাম কিছু টাকা যদি দিতেন তাহলে আমি নিজেই ডক্টর দেখিয়ে আসতাম।
প্রিয়তার কথায় তেমন আগ্রহ দেখালাম না। শেষ চুমুকে পুরো চা শেষ করে কাপ টা টেবিলে রাখতে রাখতে বললাম,
‘কত টাকা লাগবে? এক লাখ, দুই লাখ নাকি পাঁচ লাখ? কাবিন এর থেকে বেশি হবে না। তবুও পুরো টা দিয়ে দিচ্ছি। এখনি সারাজীবনের মতো চলে যা আমার জীবন থেকে।
আমার কথা শেষ না হতেই প্রিয়তা উঠে দাড়ালো। আলুথালু শরীরটা নিয়ে রুমে চলে গেলো। হয়তো যেতে যেতে কয়েক ফোঁটা চোখের জলও মাটিতে গড়িয়ে পড়েছে।
সে রাতে আর রাতের খাবার খাওয়া হলো না প্রিয়তার। খাবার টেবিলে সব খাবার সুন্দর করে সাজানো গুছানো। সব দেখছি আমার পছন্দের খাবার। চিংড়ি ভুনা, কচু শাক দিয়ে ইলিশ মাছ সাথে মুগের ডাল। তার ঘর গুছানো আর রান্নার হাত সত্যি অসাধারণ। মাঝে মাঝে মনে হয় বিয়ের দিন প্রিয়তার বাবা কথা গুলো ভুল বলেন নি। কিন্তু উনার এমন রুপহীন মেয়েকে আমার ঘরে পাঠিয়ে আমার জীবনটা উনি ভুলে ভরিয়ে দিয়েছেন ভেবেইন আবারও নিজের প্রতি নিজের ক্ষোভের জন্ম নিলো। মন ভর্তি রাগ পুষে রেখেই রাতের খাবার টা খেয়ে রুমে গেলাম।
লাইট অফ করে শুয়ে পড়তেই প্রিয়তা পাশ ফিরে আমার বুকের উপর শুয়ে পড়লো। আমি খুব বিরক্ত নিয়েই বললাম,
‘রোজ রোজ এমন বস্তার মতো শরীর টা বুকের উপর না রাখলেই নয়?
‘প্রিয়তা প্রতিদিনের মতোই নাজুক গলায় উত্তর দিলো
‘আপনি আমার অভ্যাস হয়ে গেছেন। রাত টুকু আপনাকে ছাড়া কাটে না যে!
আমি আর কথা বাড়ালাম না। বাড়িয়েও লাভ হবে না। এখন মারলেও মুখ কামড়ে সে আমার বুকের উপর ই পড়ে রবে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম।
পরদিন শুক্রবার। অফিস বন্ধ থাকায় একটু দেরিতে ঘুম ভাঙলো। ঘুম চোখে বিছানায় উঠে বসতেই চোখ আটকে গেলো পায়ের কাছে পড়ে থাকা মোড়ানো রঙিন কাগজের দিকে। তার পাশেই খুব ছোটো এক জোড়া জুতা, সাথে একটা ছোট্ট জামা। সকাল সকাল চোখের সামনে এমন কিছু দেখে বিস্ময় জেঁকে বসলো। কৌতুহল নিয়ে হাত বাড়িয়ে মোড়ানো কাগজ টি হাতে নিলাম। কাগজটি মেলে ধরতেই একটা প্রেগ্ন্যাসি কিট আর ছোটো চিরকুট পেলাম। চিরকুটে ছোট্ট সুন্দর করে লেখা,
‘কংগ্রাচুলেশনস শুভ্র। ইউ আর বিকামিং অ্যা নিউ পাপা’
এমন একটা নিউজ শুনে প্রত্যেকটা ছেলেরই পৃথিবী সমান খুশী হওয়ার কথা। কিন্তু আমি পারছিনা। যেদিন অফিসে আমার কলিগরা আমার বউ কালো বলে বিদ্রুপ করেছিলো সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এমন কাউকে নিয়ে আর যাই হোক সংসার করা যাবে না। অফিসের সকলের বউ সুন্দরী। তারা অফিসিয়াল বিভিন্ন পার্টিতে জয়েন করে। তখন থেকেই মনে প্রানে শক্ত পোক্ত সিদ্ধান্তও নিয়ে নিয়েছি,
খুব শীঘ্রই প্রিয়তা কে ডিভোর্স দিয়ে রাফিয়াত কে বিয়ে করবো। আমার পাশে এক মাত্র রাফিয়াত কেই মানায়। কিন্তু এ বাচ্চা? বাচ্চার কথা জানতে পারলে রাফিয়াত কিছুতেই বিয়ের জন্য রাজি হবে না। সে জানার আগেই বাচ্চা টাকে এবরশন করাতে হবে। কুইক।
আর কিছু না ভেবে হাক ছেড়ে প্রিয়তা কে ডাকতে লাগলাম। প্রিয়তা রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এলো। হাপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলো
‘কি হয়েছে?
‘আমি চিরকুট,জমা, জুতো সব তার চোখের সামনে ধরে জিজ্ঞেস করলাম
‘এসব কি?
প্রিয়তা এক নজর আমার দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিলো। মুহুর্তেই লজ্জায় লাল হয়ে মিইয়ে গেলো। এদিকে রাগে আমার শরীর ফেটে যাচ্ছে। প্রিয়তাকে চুপ থাকতে দেখে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালাম। পকেট থেকে হাজার পাঁচেক টাকা ওর দিকে ছুড়ে মেরে বললাম
‘রাতের মধ্যেই যেনো এ বাচ্চা এবরশন করানো হয়ে যায়। বলে দিলাম।
‘প্রিয়তা অবাক হয়ে চোখ তুললো। অসহায় দুটি চোখ নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো কিছু ক্ষন। কন্ঠ খাদে নামিয়ে আহত গলায় বললো,
‘আমি মরে যেতে পারি। কিন্তু আমার বাচ্চার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না।
কথাটা বলেই ডান হাতের তালুতে চোখের পানি মুছতে মুছতে রান্না ঘরে চলে গেলো। এ কয়েক মাসে প্রিয়তা কে যতটা বুঝেছি তা হলো উপরে ঠান্ডা মেজাজী হলেও ভেতরে খুব শক্ত পোক্ত জেদি একটা মেয়ে। নয়তো প্রতিনিয়ত এমন অবহেলা, মানসিক অত্যাচার সহ্য করে কত সহজ ভাবে সংসার সামলে যাচ্ছে।
‘বিকেল বেলা। ঘরকন্নার সমস্ত কাজ শেষ করে বেঘুরে ঘুমাচ্ছে প্রিয়তা। একটু পর পর তার পানি খাওয়ার অভ্যাস। পাশেই টেবিলের উপর জগ ভর্তি পানি। সে পানিতে এবরশন পিল গুলিয়ে আবার জগটা টেবিলে রেখে দিলাম। মনে হচ্ছে ভেতর থেকে একটা পাথর নেমে গেলো। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
চলবে,,,