কায়নাত_২,পর্বঃ_৬ ( শেষ পর্ব)

কায়নাত_২,পর্বঃ_৬ ( শেষ পর্ব)
লেখিকাঃ টিউলিপ রহমান

আমার আকাশ পাতাল যেনো এক হয়ে গেল। ইবাদত পারলো আমাকে একা এভাবে রেখে যেতে! তাহলে ওর সব ভালোবাসা, সব স্বপ্ন সবই কি ছিল লোক দেখানো ! না, না, আমি মানতে পারছি না। আমার ইবাদত এমন করতেই পারে না। নিশ্চয় কিছু সমস্যা আছে,নিশ্চয়ই কিছু ঝামেলা আছে। কিন্তু যদি কোনো ঝামেলা না থাকে, আর এগুলো যদি সত্যি হয়? তাহলে কি, আমাকে বিয়ে করে ও খুশি নয় ! উফ! মনে হচ্ছে মরে যাই, আর ভালো লাগে এই জীবন। এই এক জীবনে কম তো আর দেখলাম না!

ইবাদতের মা এসে বলল
— মা, তুমি আমার সাথে আমার রুমে আসো।
— মা এগুলো কি হলো? ইবাদত এমন করছে কেনো? আমি কি কিছু ভুল করেছি?(কাঁদতে কাঁদত)
— কাঁদেনা মা কাঁদে না। কি জানি মা, আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। তুমি চিন্তা করো না, আমি ওকে জিজ্ঞেস করবো। তবে আমার মন বলছে এখানে অন্য কোনো ঘটনা আছে। চলে এসো কেও দেখার আগেই।
–জী।

অনিশার আনন্দ যেনো আজ বাঁধ ভেঙ্গেছে। যায়েদের সাথে বসে ওর আনন্দ সেলিব্রেট করছে। যায়েদ চেহারা কালো করে বলল
— তুমি তখন আমাকে চলে আসতে বললে কেনো? আমি তো ওকে ছুৃঁয়েই দেখতে পারলাম না!
— আগে আমার বিয়ে হোক পরে তুই ওকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করিস , কিন্তু তার আগে ইবাদতকে ক্ষেপানো যাবে না।
–একটা কথা জিজ্ঞেস করি? ইবাদত প্রেম করলো তো সেদিন আর বিয়ে করলো দুইদিন হলো, তাহলে এতবছর ওকে বিয়ে করোনি কেনো? ব্যাপারটা বুঝলাম না। তোমার সামনেই তো ছিল।এখন কি এমন হলো যে ওকে বিয়ে করতেই হবে।

–গর্দভের মত কথা বলো না। এত বছরে আমি কি জানতাম যে ও অন্য মানুষকে বিয়ে করবে? জানলে আগেই বিয়ে করে ফেলতাম। ওর আর আমার বিয়ে ঠিক করা ছিল সেই ছোটবেলায়ই। আর আমি ওর জন্য পাগল হবো, না অন্য কারোর জন্য পাগল হবো সেটা কি তোর কাছে আমার জবাবদিহি করতে হবে? যা এখান থেকে!

–দেখো, ব্যাপারটা ভালো হচ্ছে না কিন্তু কথায় কথায় তুমি আমাকে এভাবে হেয়ো করতে পারো না। আমি না থাকলে তুমি ওকে কখনোই ফাঁদে ফেলতে পারতে না।

— বুঝেছি যা, তুই নিজেকে কি মনে করিস হ্যাঁ ! তোকে ছাড়া আমি কিছুই করতে পারবো না? যা, চলে যা,এক্ষুনি এখান থেকে চলে যা। তোকে যেনো আমি এখানে আর না দেখি!তোকে আর আমার লাগবে না।

–ব্যাপারটা ভালো হলো না , এই কথাগুলো মনে রাখিস, তোকে আমি অনেক ছাড় দিয়েছি, তবে এর শোধ আমি নিবোই!(যায়েদ)

— কি করবি তুই? হাসালি আমাকে। ইবাদত কে বিয়ের পর আমার শক্তি দ্বিগুণ হয়ে যাবে আর ইবাদত হবে এখানের ভবিষ্যৎ রাজা। তখন আমাদের কে পাবে! সবকিছুই আমি প্ল্যান করে রেখেছি। তুই ইবাদত কে আটক করতে আমাকে সাহায্য করেছিস তাই তোকে মাফ করলাম। তবে এখানে যেনো তোকে আর না দেখি। চলে যা, তা না হলে এক্ষুনি তোকে ভস্মীভূত করে ফেলবো।

যায়েদ অনেক ক্ষোভ নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে গেল। অনিশা ইবাদতের মত শক্তিশালী জ্বীনকে নিজের আঙ্গুলের আগায় নাচাচ্ছে বলে মনে ওর মনে অনেক অহংকার জমে গিয়েছে। মনে হচ্ছে সে বিশ্বকেই জয় করে ফেলেছে। সব কিছুকে চোখের আড়াল করে দিয়ে সে নিজের বিয়ের পরিকল্পনায় মত্ত।

এদিকে ইবাদত দিন শেষ হবার অপেক্ষেয় বসে আছে। মাগরিবের আযান শুনে নামাযে দাড়ালো। যে নামায গুলো কাযা হলো সেগুলোও আদায় করলো! সবশেষ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলো ওকে যেনো আরো ধৈর্য দেয়। কায়নাতের মনের জোড় যেনো আল্লাহ বাড়িয়ে দেন সেই প্রার্থনাও করলো। তারপর সেই ঘরেরই এক কর্নারে একটি বসার জায়গা আছে সেখানে বসে তজবি পড়ছে। তখনই ওর মা এসে বলল

–এইতো তোকে পেলাম, সারাবাড়ি খুজেছি। এখন আমাকে বল কি এমন হলো যে তুই এখন অনিশাকে বিয়ে করবি! ওকে তোর এতই পছন্দ হলে আগেই বলতি, তোর সাথে ওর বিয়ে পড়িয়ে দিতাম। একটা মানুষের জীবন এভাবে নষ্ট করাটা কি ঠিক?
— মা তুমি আমাদের এমন কোনো শিক্ষাই দাওনি যাতে কারো কোনো ক্ষতি হয়! তাহলে আমি কি কারো ক্ষতি করতে পারি?
–তাহলে? তুই কায়নাত কে ভালোবাসিস না?
— আমার জীবনের থেকেও ওকে বেশী ভালোবাসি।
–তাহলে?
— মা তুমি ছোট মামার কথা ভুলে গেলেও আমি কিন্তু ভুলিনি।তোমার মনে নেই ছোট মামাও আমার মত প্রেম করে বিয়ে করেছিল একজন মানুষকে?তার বাসরের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তার জ্বীনি শক্তি লোপ পেয়েছিল?ভুলে গেছো?
–ও হ্যাঁ তাইতো! দেখেছিস কত বছর আগের কথা আমার একদম মনে নেই।
— আমাদের বংশে তো নিয়মই আছে কোনো জ্বীন যদি কোন মানুষকে বিয়ে করে তবে বাসরের আগে যেনো অমূল্য পানীয় পান করে যেটা কিনা কয়েক মাইল দুরে মিশরে অবস্থিত এক ঔষধালয়ে আছে।সেটা পান করলে জ্বীনি শক্তির ক্ষমতার কোনো তারতম্য হয় না।

— হ্যাঁ, দেখেছিস, এই দরকারী কথাটা আমার মাথায়ই ছিল না! তা তুই খেয়েছিস!
–না মা, আমার ভাগ্য খুব খারাপ। আমি সেখানে গিয়ে পুরো বোতলটাই খালি পেয়েছি যার কারনে আমার এখন জ্বীনি ক্ষমতা নেই। আর অনিশাও চালাকি করে এই সময়টাই কাজে লাগিয়েছে।কিন্তু কথা হচ্ছে এটা তো ওর জানার কথা না, তাহলে ও জানলো কি করে?
— কি জানি! মেয়েটা এমন ছিল না, কেনো যে এত খারাপ ব্যবহার করছে কে জানে।
–ও এমনই ছিল। আমার বব্যবহারে কায়নাত কি খুব কষ্ট পেয়েছে?
— হ্যাঁ, খুব কেঁদেছে। তবে এখন চিন্তার কিছু নেই, আমি ওকে সব খুলে বলবো।
–না মা, এই ভুল মোটেও করো না। তুমি কাওকেই কিছু বুঝতে দিবে না। তুমি এমন ভান করবে যে তুমি কিছু জানোই না, ঠিকাছে! তা না হলে অনিশা কায়নাত কে মেরে ফেলবে। আমি ওকে হারাতে চাই না।এইতো আর অল্প সময়ের ব্যাপার। তারপর ইনশাআল্লাহ আমি সব ঠিক করে ফেলবো।
— হুম, ঠিক বলেছিস। এটাই হবে। কিন্তু তোর বাবার আর দাদার এই বিষয়টা কেনো মনে নেই?
–মা, দাদাজান আমাকে বলেছিল, দুইদিন যেনো আমি কায়নাতের সাথেই থাকি। কিন্তু আমি বিষয়টা এতো গুরুত্ব দেই নি। ভেবেছি নিজের বাড়িতে আবার কে ক্ষতি করবে! আর এই ব্যাপারটা যে অনিশা জানতে পারে আমার ধারনাই ছিল না। এখন আমার এইই ভুলের মাশুল দিচ্ছে কায়নাত! খুব কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য।
–কি আর করার আছে! অপেক্ষা করবো আমরা আর আশা করবো তুই যেনো তোর কায়নাত কে ফিরে পাস।

— হ্যাঁ, মা তুমি একটু পারলে ওকে চোখে চোখে রেখো।আমি অন্য কারো সাহায্য নিচ্ছি না কারন আমি চাইনা ব্যাপারটা ঘোলাটে হোক। আমি এও জানি না অনিশা কাকে কাকে ওর কাজের সহযোগিতার জন্য রেখেছে। তুমি কায়নাতকে দেখে রেখো আর আমার জন্য দোয়া করো মা।
— কায়নাতের কথা চিন্তা করিস না, আমি ওকে দেখে রাখবো।বলে মা চলে গেল।

ইবাদত সেই ঘরেই বসে রইলো আরো কিছুক্ষণ।ও সেখানে বসেই দেখতে পারছে কায়নাতের চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল তারপর বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইল। নতুন দিন শুরু হতে আর কয়েক ঘন্টাই বাকি।নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। ভেবে নিল কি কি করতে হবে।

ফজরের নামাজ পড়ে ও বেরিয়ে পরল। এক তরফা কায়নাত কে দেখে নিল। আজ যদি সব কিছু ঠিকঠাক করতে না পারে তাহলে হয়তো ইবাদত নিজেকে শেষ করে দিবে এবং কায়নাত কে ওর বাবা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু এটা হবে ওর লাস্ট অপশন, যদিও ও জানে অনিশাকে ও ভালোমতই শিক্ষা দিবে।

সারাদিন ইবাদত কে না দেখে অনিশা পাগল প্রায়। কারন আজ যদি ইবাদত কে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করতে না পারে তাহলে ইবাদত কে চিরদিনের জন্য হারাবে, সঙ্গে এই রাজত্ব। দাদাজানের কাছে গিয়ে বলছে
–দাদাজান ইবাদত কোথায়? আজ আমাদের বিয়ে অথচ …..
— ও বাড়িতে নেই?
–না, সব জায়গায় খুজে দেখেছি কিন্তু পাচ্ছি না।
— ঘরেই আছে ভালো করে খুজে দেখো। কোথায় যাবে?
সকালে ওকে আমি নামাজের ঘরে দেখেছি, ওখানে খুজে দেখেছো?
–না দেখছি সেখানে।

অনিশা তিনতলায় পৌঁছে দেখে কায়নাত হেঁটে যাচ্ছে।
— তুই এখানে কি করছিস? তোর না এখানে আসা নিষেধ?
–আমার রুমে গিয়েছিলাম, একটা দরকারী কাজে।
— হ্যাঁ, যত দরকার সব পূরন করে নে, কারন আর কয়েক ঘন্টার পর তোর স্হান যে কোথায় হবে, তুই চিন্তাও করতে পারবি না।
–আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে আল্লাহর উপর আর ইবাদতের উপর।
— আজ তোর মুখে দেখি অনেক কথা ফুটেছে?শুনেছি মাছ মরার আগে নাকি একটু বেশীই ফাল পারে।তা ফাল পার সমস্যা নেই।

অনিশা নামাজ ঘরে ইবাদত কে খুজে না পেয়ে দৌড়ে কায়নাতের কাছে গিয়ে বলল
–কোথায় ও?
— আমি কি জানি?
–তুই জানিস না তো কে জানে?
— আমি সত্যিই জানি না, আর যদি জানতামও তাও বলতাম না।
–তোর ভয় হচ্ছে না? তোকে যদি এখন এই মুহুর্তে মেরে ফেলি?
— ইবাদতের জন্য আমি মরতেও পারি।

তখন অনিশা এসে কায়নাত কে জোড়ে একটা চড় দিল। এতে কায়নাত বেহুঁশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
ওদিকে ইবাদতকে সব জায়গায় তন্য তন্য করে খুজে বেড়াচ্ছে অনিশা। অবশেষে খবর পেলো ইবাদত ওর রুমেই আছে। পেট ব্যাথায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অনিশা ওর রুমে পৌঁছে দেখে ইবাদত বিছানায় শুয়ে আছে। তারপর বলল
— কি হয়েছে, তোমার?
–ভীষণ পেটে ব্যাথা। উঠতেই পারছি না। আজ না হয় বিয়েটা ক্যানসেল করো, আমরা আগামীকাল বিয়ে করবো।
— না, আজই আমাদের বিয়ে হবে এবং এক্ষুনি হবে। একদম ঢং করবে না। এসব ঢং আমার একদম পছন্দ না। আর তুমি কোথায় গিয়েছিলে? সারাদিন দেখলাম না কেনো?
–কই আমি তো এখানেই ছিলাম। তুমিই বোধহয় খেয়াল করো নি।
— অসম্ভব! আমার চোখে ফাকি দেওয়া এত সহজ নয়।আজই আমাদের বিয়ে হবে।
–দেখো -না, আমি কত অসুস্থ!
— তাও হবে।
তখনই মা এসে বলছে
–কায়নাত কোথায়? পুরো বাড়িতে ওকে পেলাম না! চলে গিয়েছে নাকি? না ওর কোনো বিপদ হলো?
— কোথায় আমার কায়নাত? তুমি বলেছিলে ওর গায়ে একটা টোকাও লাগবে না তাহলে ও কোথায়?( ইবাদত)
–হয়তো ভয় পেয়ে পালিয়েছে।ভালোই হয়েছে আপদ বিদেয় হয়েছে।( অনিশা)
ইবাদত বাহিরে তাকিয়ে দেখলো প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।তখনই ও অনিশার গায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পরে বলছে
— অনেক সহ্য করছি। আর না। আমি চুপ আছি তার মানে এই না যে আমি কিছু করতে পারি না। ভালোর কোনো দাম নেই। তাড়াতাড়ি বল কায়নাতকে কি করেছিস।
ইবাদত অনিশার গলা এমন ভাবে চেপে ধরল যেন ওর শরীর ইবাদতের হাতের ফাক দিয়ে গলে বের হয়ে যেতে চাচ্ছে। অনিশার দম যায় যায় অবস্থা। তখন অনিশা বলল
— থামো থামো বলছি, আমি ওকে আমার বাড়ির পেছনে জঙ্গলে আটকে রেখেছি। ভেবেছি তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো তাহলে ওকে দিয়ে আবার ব্ল্যাক মেইল করিয়ে তোমাকে বিয়ে করবো।
–বজ্জাত মেয়ে জ্বীন। আর ভালো হলি না। আমাকে এক্ষুনি নিয়ে চল। আর মা তুমি বাবা আর দাদাকে খবর দাও। আমি কায়নাত কে নিয়ে আসছি।
বলে ওরা অনিশার পরিত্যক্ত বাড়িতে গিয়ে দেখে যে কায়নাত নেই। তারপর ইবাদত বলল
— কি? কোথায় আমার কায়নাত?
–সত্যি বলছি আমি ওকে এখানেই বেঁধে রেখে ছিলাম। কিন্তু ও গেলো কোথায়?
ইবাদত অনিশাকে জোরে একটা চড় দিল। এতে অনিশার গাল ভস্কে গেল। তারপর কেঁদে কেঁদে বলল
— আমাকে এভাবে মেরো না আমি সত্যি বলছি। ওকে আমি এখানেই বেঁধেছি।

পিছন থেকে যায়েদের হাসির শব্দ পেয়ে ওরা দুজনই পিছনে তাকিয়ে দেখে কায়নাতকে ধরে নিয়ে আসছে যায়েদ। অনিশা দেখে বলল

–সাবাশ, যায়েদ। খুব ভালো। ভেবেছিলাম ধরাই খেয়েছি। তবে ঠিক সময়ে তুই যে কাজটা করলি তাতে আমার মন জয় করে ফেললি তুই। যা চাইবি তাই পাবি। আর এই যে ইবাদত আমাকে যে এভাবে তুমি মারলে তার জন্য এখন তোমার শাস্তি পেতে হবে সোনা। এখন আমি তোমাকে মেরে তক্তা বানাবো। যায়েদ কায়নাত কে আমার হাতে দিয়ে ওকে মেরে তক্তা বানা!

যায়েদ তখন কায়নাত পাশে বেঁধে রেখে অনিশাকে আচ্ছা মত কতক্ষন মারলো। ইবাদত আর কায়নাত হা করে দেখলো। অনিশা প্রায় আধমরা হয়ে মাটিতে পড়ে রইলো। যায়েদ বড় একটা ছোড়া নিয়ে অনিশার উপর আছড়ে পরতে যাবে আর তখন ইবাদত উড়ে এসে যায়েদকে পাশে ছুড়ে ফেলল। তারপর বলল
— সেদিন বেঁচে গিয়েছিলি কিন্তু আজ আর এই ভুল করবো না।আমার শক্তি আমি ফিরে পেয়েছি। যার জন্য চুপ ছিলাম তাকেই তুই আঘাত করলি। আমার কায়নাতের দিকে তুই চোখ দিয়েছিস, আজ আমি তোর সেই চোখই উপড়ে ফেলবো।

তখন অনিশা ইবাদতের দিকে অনুশোচনার চোখে তাকালো। আর ইবাদত যায়েদকে কাগজের মত দুমড়ে মুছড়ে মারছে যেনো কোনো গাছের শুকনো ডাল ভাঙ্গছে। ইবাদত আগুনের কুন্ডলীর মত হয়ে যায়েদকে সেই আগুনের ভিতর নিয়ে মারছে। অনিশা কায়নাতের কাছে গিয়ে ওর হাতের বাধনটা খুলে দিল। তারপর ওরা দেখল ইবাদত যায়েদকে মেরে মেরে আধমরা করে ফেলল। পাশেই একটা ছোড়া ছিল, ইবাদত সেই ছোড়া যায়েদের দিকে ছুড়ে মারল।সেই মুহুর্তেই যায়েদ সেখানে শেষ। তারপর অনিশার দিকে ইবাদত চোখ কটমট করে চাইলো,তখন অনিশা বলল
–আমাকে ক্ষমা করে দাও। লোভে পরে আমি এমন করেছি। কায়নাত আমাকে মাফ করে দাও। আমি তোমাদের এত ক্ষতি করলাম আর তুমি আমাকে প্রানে বাঁচিয়েছো! সত্যিই আমি চিরজীবনের জন্য ঋনী হয়ে গেলাম তোমাদের কাছে । তবে আমি আজ একটা সত্য কথা বলবো। এই সব কিছুর পেছনে আমি ছিলাম না।
— তাহলে কে ছিল?
–তার নাম শুনলে তুমি অবাক হয়ে যাবে। সে হলো

বলতে বলতেই পিছনে অজস্র কালো ছায়া জড়ো হয়ে গেলো। কালো ছায়াগুলো ওদের ঘিরে ফেলল।তখন পিছনে দেখলো কেও একজন আসছে। যখন সামনে এসে দাড়ালো ইবাদত অবাক হয়ে গেলো । তারপর ইবাদত বলল
— মা, তুমি এখানে?
–কিসের মা! আমি তোর মা না। তোর মা তো বহুত আগেই মরে গিয়েছে। আমি তোর সৎ মা। তোর বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। সেই ছোট থেকেই তুই আমাদের জ্বালিয়ে যাচ্ছিস। আর পারছি না। ভাবলাম অনিশার সাথে বিয়ে দিয়ে সব সোধ করবো। তাও হলো না আগেই বিয়ে করে ফেলেছে। তাও একটা মানুষকে। আমাদের কিছু জানানোর প্রয়োজন মনেই করল না। আমার ছেলেটাকে ছোট ছোট করে সব দিক থেকেই বন্চিত করছে। তবে আর না। আজই সব খেল খতম করবো। কত প্ল্যান করলাম তাতেও ছাই ঢেলে দিল।তবে আজ তোদের শেষ দিন।
— চাচি, ওদের মাফ করে দিন, ওরা একজন অন্যজনকে খুব ভালোবাসে।
–ও তাহলে তুইও দল বদল করেছিস! নে তুইও মর। পরে সেই কালো ছায়া গুলোকে উদ্দেশ্য করে বলছে
–ওরা একজনও যেনো না বাঁচে। মেরে এখানেই সব ধামাচাপা দিবো। শুরু হয়ে যাও।
সাথে সাথেই কালো ছায়গুলো আর ইবাদত লড়তে শুরু করলো। তারা সংখ্যায় অধিক হলেও ইবাদতের কাছে যেনো কিছুই না। ওদিকে ইবাদতের মা অনিশাকে এক হাতে আর কায়নাতে এক হাতে গলা চেপে ধরেছে। এভাবে বেশ কিছুক্ষন চলার পর হঠাৎ পিছন একটা একটা তলোয়ার ইবাদতের মায়ের শরীর ভেদ করে গেল। এতে তিনি মাটিতি লুটিয়ে পড়লো। ইবাদতও ছায়াগুলোকে ধবংস করে ওদের কাছে ফিরে এসে দেখে যে দাদাজান দাড়িয়ে আছে। তিনি বললেন
— দুধ দিয়ে সাপ পুষেছি এতদিন। মনে আছে, একদিন তোমার ভাই ইব্রাহিমের উপর হামলা হয়েছিল? সেটা আসলে তোমার জন্য ছিল। কায়নাতের বাবা ইব্রাহীমকে বাঁচিয়েছিল মনে আছে?
–জী দাদাজান।
— তোমাকে শেষ করে সবকিছুর মালিক ইব্রাহিম কে বানাতে চেয়েছিল। তাই সে এত নাটক সাজিয়েছে।
–কিন্তু দাদাজান আমি মাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি।
— তোমার সৎ মা সে ভালোবাসার যোগ্য না।তাকে অনেক সুযোগ দিয়েছিলাম। এর চেয়ে বেশী সুযোগ দিলে আমাদের ধবংস হবে। চলো আমরা ফিরে চলি।

সব কিছুর পরে ইবাদত আর কায়নাত এক হলো। আজ ওরা কায়নাতের বাড়ি যাচ্ছে বেড়াতে। কয়টাদিন ওদের উপর খুব ধকল গেল।ওদের ভালোবাসায় কোনো কমতি নেই। এরপর থেকে ওরা সুখেই দিন কাটাচ্ছে।আর কোনো রকম সমস্যে হলো না। এখন ওরা দুই মেয়ের বাবা মা। সুখে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছে।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here