কায়নাত_২,পর্বঃ৩
লেখিকাঃ টিউলিপ রহমান
ইবাদত এসে আমার হাত ধরে দাদাজানের পা স্পর্শ করিয়ে দিল। আমি সালাম করলাম। তার পা দু ‘খানি একদম শীতল ছিল। তিনি বললেন
— বেঁচে থাকো।তবে সবসময় মান মর্যাদা রক্ষা করে চলাফেরা করবে। মনে রাখবে, তুমি এখন একজনের স্ত্রী। কারো ঘরের লক্ষী। আর কখনই তুমি নিজের সীমা লঙ্ঘন করার চেষ্টা করবে না। আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তুমি এই রাজ্যর বউ হয়ে এসেছো। কথাগুলো সবসময় মনে রাখবে।
ইবাদত পাশ থেকে ফিসফিস করে বলছে
–বলো জী দাদাজান, আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আর আপনার সব কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো।বলো!
আমি দাদাজানের কথাগুলো শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। এত রাগী চেহারা মানুষ এর আগে কখনো দেখিনি। ইবাদতের বলে দেওয়া কথাগুলো একে একে বললাম। তারপর তিনি বলল
— বেঁচে থাকো, দীর্ঘজীবি হও, অনেক সন্তানের জননী হও। যাও ভিতরে তোমার দাদী শ্বাশুড়ি অপেক্ষা করছে।তার সাথে দেখা করো।
আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এই দাদাজানের থেকে দুরে দুরে থাকতে হবে। উনাকে ভীষণ ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে আমি যদি কোনো ভুল করি তাহলে আমাকে তিনি মারবেন। পরিবেশটা দেখে মনে হচ্ছে আমি কোনো রাজকন্যা আর রাজপুত্রের প্রেম কাহিনী পড়ছি। যেখানে একজন গুরুগম্ভীর দাদা আছে আর না জানি কে কে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। ইবাদত আমাকে বলছে
–কি হয়েছে তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেনো? টায়ার্ড লাগছে, না বাসার কথা মনে পড়ছে?
— আমার ভয় লাগছে। কেমন কেমন যেনো অনুভুতি হচ্ছে। যে রকম ভেবেছিলাম আসলে সে রকম না। সবাই একটু অন্য রকম, তাই না?
–হুম, প্রথম প্রথম এই রকমই লাগবে। তুমি তো এখনো কাওকে চিনো না তাই এমন লাগছে। আস্তে আস্তে সবার সাথে পরিচিত হলেই দেখবে খুব ভালো লাগছে। আচ্ছা চলো ভিতরে যাই।
— হুম, হয়তোবা।
ইবাদত আমার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেল। প্রাসাদের ফটকটা এত বিশাল আর এত সুন্দর কারুকাজে শিল্পিত যে আমি তা দেখে চোখ ফেরাতে পারলাম না। এগুলো আমি শুধু রুপকথার গল্পেই পড়েছি। দেয়ালে সুন্দর সুন্দর ফুলের ছবি টাঙানো। ফার্নিচার গুলোও দেখে মনে হচ্ছে অনেক যাচাই বাছাই করে নির্বাচন করা হয়েছে। সব কিছু এতটাই সুন্দর যে আমার কল্পনাকেও হার মানাচ্ছে। মনে হচ্ছে এ আমি কোথায় এলাম! এত অদ্ভুত সুন্দর!
–কি! কি দেখছো?
— এটা তোমার বাড়ি?
–হুম, কেনো তোমার পছন্দ হয়নি?
— পছন্দ না করার প্রশ্নই উঠে না। মানে এত সুন্দর! অথচ তুমি বলে ছিলে তোমার বাড়িঘর ভালো না। এই তার নমুনা?
ইবাদত ফিক করে হেসে বলল
— ওটা তো তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য করেছি।
–কেনো?
— এমনেই, চলো দাদীজান তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমার দাদাজান যেমন রাগী, দাদীজান পুরোই তার উল্টো! দেখবে তোমাকে দেখে কি খুশি হয়!
দেখলাম পরনে সুন্দর শাড়িতে একজন বয়স্ক মহিলা, পাশে আরো একজন অর্ধ বয়স্ক মহিলা দাড়িয়ে আছে।তাদের মুখে হাসির ছোঁয়া লেগেই আছে। পাশে আরো কয়েকজন অল্পবয়স্ক মেয়ে, হাতে বড় বড় পেয়ালা নিয়ে দাড়িয়ে আছে । পেয়ালাগুলো লাল মখমলের কাপড় দিয়ে ঢাকা।ইবাদত আমাকে তাদের সামনে এনে দাড় করালো। তারপর দাদীকে জড়িয়ে ধরে বলল
–এই যে দেখছো, উনি হচ্ছে আমার কলিজার টুকরা। আমার দাদীজান।
আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন। তারপর বললেন
— বাহ! মা শা আল্লাহ! অপরুপা! হুম মানতেই হবে এ যে আমাদের ইবাদতের ভালোবাসার মানুষ! তুমি খুব সুন্দর । তোমার সৌন্দর্য একজন পরীকেও যেনো হার মানাবে।
তার গলার একটা বিশাল সিতাহার খুলে আমাকে পরিয়ে দিয়ে বললেন
–স্বাগতম বউরানী! আমাদের এই ভুবনে তোমাকে স্বাগতম!
আমি মুচকি হেসেই রইলাম। আসলে এই অবস্থায় আমি কি করবো বা কি বলবো ধারনা নেই। টিভিতে বিভিন্ন রাজারাণীর সিরিয়ালে এই রকম অবস্থায় কি যে বলে বা কি যে করতে হয় আমার মনে নেই। সব কিছু এতটাই রাজকীয় যে আমার কোন অভিজ্ঞতাই নেই, কি করতে হয় বা কি বলতে হয়!সবকিছু দেখে শুধু অবাকই হচ্ছিলাম।
ইবাদত বলল
— কায়নাত, পাশে আরেকজন সুন্দরী মহিলা দেখছো তিনি হচ্ছে আমার মা।
আমি তাকেও সালাম করলাম। তিনিও আমাকে আরদ বরন করে নিল। তিনি বললেন
–বেঁচে থাকো। আল্লাহ যেনো তোমার সকল মনোকামনা পূরন করেন। এই যে দেখছো উপঢৌকন গুলো! এগুলো সব তোমার। তোমার নতুন জীবনের জন্য আমাদের আশির্বাদ।
— জী ধন্যবাদ, এগুলোর দরকার ছিল না। শুধু আমাদের জন্য আপনারা দোয়া করবেন। তাহলেই হবে।
–দোয়া তো করবোই, তুমি অনেকদূর থেকে এসেছো। এখন একটু বিশ্রাম করো। তারপর কিছু খেয়ে শুয়ে পড়ো। আগামীকাল তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।
আর তখনই শুনতে পেলাম দুরে নুপুরের ধ্বনি।কেও হয়তো এদিকেই আসছে। চারিদিকে খুব সুন্দর সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে। একটা মেয়ে পাশে এসে দাঁড়ালো। ইবাদতের মা বলল
— ও কায়নাত, তোমার সাথে অনিশার পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় নি। এই হচ্ছে ইবাদতের ছোট বেলার বন্ধু অনিশা। এদের দুই জনের মধ্যে খুব ভাব ছিল। আমরা তো ধরেই নিয়েছিলাম যে হয়তো ইবাদত আর অনিশা বড় হয়ে বিয়ে করবে! যাই হোক তোমার ননদ অনিশার সাথে কথা বলো।আর হ্যাঁ অনিশা মা, নতুন বউকে তার ঘরে নিয়ে যেও, ঠিকাছে?
বলে মা চলে গেল।তারপর মা ঐ মেয়েগুলোকে উপঢৌকনগুলো রুমে রেখে আসতে বলল। মেয়েগুলো সেগুলো নিয়ে এক দিকে চলে গেল। অনিশা আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছিল তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে। মেয়েরা ঠিকই বুঝতে পারে কার দৃষ্টি কেমন! তেমনি আমি বুঝে নিলাম কিছু একটা গন্ডগোল আছে! তার দৃষ্টিই বলে দিচ্ছে কিছু অঘটন ঘটে গিয়েছে। আবার নাও হতে পারে! মেয়েটি বলল
–আমি অনিশা, ইবাদতের চাচাতো বোন। তবে সমবয়সী। ছোট বেলা থেকেই আমরা ভালো বন্ধু এখন অব্দি।
মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দরী। এত সুন্দর মেয়ে আমি আমার জীবনে দেখিনি। ছেলে হলে আমি নির্ঘাত তার প্রেমে পড়ে যেতাম। তার চুলগুলো তার পা পর্যন্ত বিস্তৃত। একটা মেয়ে এত সুন্দর হয় কি করে! আমি শুধু তাকে দেখছিলাম। বার বারই বলছে ভালো বন্ধু, ভালো বন্ধু, তারমানে এটা বন্ধুত্বর থেকে আরো বেশী কিছু ছিল। ব্যাপারটা আমাকে জানতেই হবে। আমি বললাম
— আপনার সাথে পরিচিত হতে পেরে ভালো লাগল, আমি কায়নাত।
— আমাকে তুমি করেই বলো সমস্যা নেই। ইবাদত যে এভাবে হুট করে বিয়ে করবে আমার ধারনাই ছিল না। অনেক প্ল্যান করে রেখেছিলাম, কিন্তু তার কিছুই ফলাতে পারলাম না।(ইবাদতের দিকে তাকিয়ে বলল)যাই হোক কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে অবশ্যই বলবে। চলো এখন তোমার ঘরটা দেখিয়ে দেই।
তখন ইবাদত বলল
–দুঃখিত আমি নিজেও জানি না যে এভাবে বিয়ে করবো। হঠাৎ করেই সব কিছু হয়ে গেল। কোনো কিছু তাই জানাতে পারিনি।
— হুম আমি বুঝেছি। তোমার তো আবার সবকিছুই হুট করে হয়ে যায়। কায়নাত তোমার ভাগ্য কিন্তু অনেক ভালো। দেখে দেখে একটা ডাক্তার জ্বীনকে বিয়ে করেছো। তা না হলে কয়জনের কপালে এই রকমটা ঘটে বলো? আমরা এখানে আছি,অথচ আমাদের কপালে কোনো ডাক্তার জ্বীন নেই। আর তুমি কোথায় থাকো,তুমি পেয়ে গেলে।
মেয়েটার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে ডালমে কুছ কালা হ্যা। ইবাদতকে একদম স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। শুধু মেয়েটাই অস্বাভাবিক আচরণ করছে। আমাকেই খুঁজে বের করতে হবে তাদের বন্ধুত্ব কতদুর এগিয়েছিল। মেয়েটি অভিমানের দৃষ্টিতে ইবাদত কে দেখছিল। তারপর বলল
–চলো, কায়নাত তোমার ঘরটা ঐদিকে!
বলে হাত দিয়ে পিছনের দিকে ইশারা করলো। আমরা হেঁটে একটা রুমের সামনে আসলাম। তারপর মেয়েটা বলল
— ভিতরে গিয়ে রেস্ট করো আমি এখন আসি। বলে সে চলে গেল।
ইবাদত ওর যাওয়ার পর বলল
–চলুন বিবিসাহেব, ভিতরে চলুন।আপনার কক্ষে স্বাগতম!
আমরা ভিতরে ঢুকলাম। সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো ঘরটি। কারুকার্যিত সোনার পালংক দেখে আমার চোখ কপালে উঠল। জানালায় ভারী পর্দা দেওয়া। ঘরের প্রতিটা জিনিসেই রাজকীয় একটা ছাপ আছে। আচ্ছা ওরা কি রাজবংশীয়! (মনে মনে )
–এত সুন্দর সুন্দর ফার্নিচার আমি আগে কখনো দেখিনি। তুমি কি কোনো রাজপুত্র?
— না আমি নিতান্তই একজন সাধারণত জ্বীন। তবে আমার বাবা দাদারা রাজবংশীয়। বলে আমার দিকে হাসি দিয়ে তাকিয়ে রইল আমার পরের প্রশ্নের জন্য।
–তারা রাজা হলে তুমিও তো রাজা!
— তাই নাকি? আমি তো জানতামই না।
–জানতে না মানে! বলে ওর হাতে একটা চিমটি কাটলাম। ও — মা গো বলে চিৎকার করল। তারপর বলল
— দেখো এখানে মেরো না প্লিজ, তোমার মারপিট আমি খুব ভয় পাই।
আরেকটা চিমটি কেটে বললাম
–আমি মারি, না? আর ঐ মেয়েটা! ঐ মেয়েটা কি করে?
— কোন মেয়েটা?
–এখন বোঝোও না কোন মেয়েটা! অনিশা! অনিশার কথা বলছি।
— ও, অনিশা! ও তো আমার চাচাতো বোন। ও আবার কি করবে?
–দেখে তো অন্য রকম লাগল।
–আরে না। আমরা ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছে। একসাথে খেলতাম। খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। তাই অনেকেই ধারনা করতো যে আমরা হয়তো বড় হয়ে বিয়ে করবো, এই আর কি!
–তাইই, এতো দুর! এগুলো আগে বলো নি কেনো?
— এগুলো কি বলার মত কোনো কথা হলো? সেই রকম কিছু হলে আমিই তোমাকে সব খুলে বলতাম।আচ্ছা এই যে আলমারি দেখছো, এখানে তোমার প্রয়োজনীয় সব কাপড় আছে। তোমার জন্য আমি আগেই কিনে রেখেছিলাম। যা ভালো লাগে ব্যবহার করো। আর অন্য কিছু যদি লাগে তাহলে বলবে।
হঠাৎ আমার কি হলো জানি না আমার ভীষণ ঘুম পেল। আমি ওকে বললাম
— আমার ভীষণ ঘুম পেয়েছে, আমি একটু ঘুমোবো।
— হ্যাঁ, অবশ্যই, তুমি টায়ার্ড, ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমাও। আমি একটু আব্বাজানের সাথে কথা বলে আসি।
বলে ইবাদত আমাকে ওয়াশরুমে দেখিয়ে চলে গেল। আমি কোনো মতে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। উঠে দেখি ইবাদত এখনো আসেনি। বিছানার পাশে দেখি একটা বেগুনী রংয়ের শাড়ি আর ম্যাচিং গহনা রাখা। বুঝলাম ইবাদত রেখেছে। চটপট তৈরী হয়ে নিলাম। কিন্তু ইবাদত কোথায় আছে জানি না। আমি এখন ওকে কোথায় খুজবো? আচ্ছা একটা কাজ করি, আমি বের হয়ে হাঁটতে থাকি ওকে ইইনশাআল্লাহ পেয়ে যাবো। বের হয়ে করিডোর ধরে হাঁটা শুরু করলাম। বাড়িটা যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। কিন্তু এত বড় প্রাসাদের কোথায় শুরু বা শেষ এখনও বুঝতে পারছি না। দেখলাম ঘোমটা দেওয়া চাকররা তাদের কাজ মনোযোগ দিয়ে করছে। আমার দিকে কেও ফিরেও তাকাচ্ছে না। এরা তো সবাই জ্বীন! কি ভয়ংকর একটা ব্যপার। আমি এতগুলো জ্বীনের সাথে বসবাস করছি।
বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর ইবাদত কে দেখলাম। ও হেঁটে যাচ্ছে। আমাকে ও হয়তো খেয়াল করেনি। করলে অবশ্যই দাড়াতো। দেখলাম ও হেঁটে ছাদের মত একটা জায়গায় গেল। ছাদের কাছে পৌঁছাতেই শুনলাম ইবাদত আর একটা মেয়েলি কন্ঠ কথা বলছে। আমি ধীর পায়ে দরজার পাশে দাড়িয়ে কথাগুলো শোনার চেষ্টা করলাম। ওরা বলছে
— কি ব্যাপার! আমাকে এভাবে এখানে ডেকেছো কেনো?( ইবাদত)
–তুমি কিভাবে পারলে এই কাজটা করতে? কিভাবে আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললে?(মেয়ে )
— কেনো? আমি কি কখনো বলেছিলাম নাকি যে তোমার কাছে পারমিশন নিয়ে বিয়ে করবো?
–তোমার তো আমাকে বিয়ে করার কথা! অন্য মেয়েকে কেনো করলে?
— তোমাকে আমি কখনো বলেছিলাম নাকি যে বিয়ে করবো?কখনো কি কোন কমিটমেন্ট করেছিলাম?
— আমাদের বিয়ে তো সেই ছোট বেলায়ই ঠিক হয়ে গিয়েছিল আর কোনো কিছুর কি দরকার আছে?
–কিসের বিয়ে ঠিক করা ছিল? কখনও কি বলেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি?
— কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি! এটাই কি যথেষ্ট নয়! সবাই জানতো প্রাপ্ত বয়স্ক হলেই আমাদের বিবাহ হবে! এগুলো কি যথেষ্ট নয়?
— না যথেষ্ট না। ছোট বেলায় তো মানুষ কত কি ই পাগলামী করে, সে জন্য কি পাগল হতে হবে নাকি! আর শোন, আমাকে এভাবে আর ডেকে কখনো বিরক্ত করবে না।
চুপিচুপি আমি দেখলাম হঠাৎ মেয়েটি দৌড়ে ইবাদত কে জড়িয়ে ধরলো। আল্লাহ! এ আমি কি দেখলাম।আমার ইবাদত, এখানে ঐ মেয়েটার সাথে কি করছে !
খুব মন খারাপ হলো। সবাই বলছিল ওদের নাকি বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তারমানে ওরা দুজন দুজনকে পছন্দ করে! তাহলে ও আমাকে বিয়ে করলো কেনো?
আড়াল থেকে ওদের দেখে আমি চলে যাচ্ছিলাম তার তখন পেছন থেকে বলল
— কে ওখানে? ওখানে কে?
আমি মাথায় ঘোমটা দিয়ে তাকিয়ে দেখি দাদাজান দাড়িয়ে আছেন। আমি বললাম
–দাদাজান, আমি কায়নাত।
— এখানে এভাবে চোরের মত দাড়িয়ে কি করছো?
–না মানে ইবাদত কে খুঁজতে এসেছি।
শব্দ শুনে ইবাদত দৌড়ে এলো। আমি ওর দিকে রাগী রাগী চেহারা করে তাকালাম। দাদা বলল
— তোমাদের দুইজনের সাথেই আমার কথা আছে। খাবার টেবিলে গিয়ে বসো। একসাথে খেতে খেতে কথা বলবো।
–জী দাদাজান। ( ইবাদত)
দাদা চলে যাবার পর ইবাদত আমার হাত ধরে বলছে
— কখন উঠলে ? আমাকে ডাক দিলেই তো পারতে!
–তোমাকে ডাক দিলে তো আর এসব দেখতে পারতাম না!
— কোন সব? কি বলছো?
–না, তুমি কিছু বোঝো না! ওখানে কি করছিলে?
— আমি আব্বাজানের সাথে কথা শেষ করে আসছিলাম। এই তো!
–আর অনিশাকে জড়িয়ে ধরে কি করছিলে?
— ব্যাপারটা সেটা না তুমি যেটা ভাবছো!
–আমি সবই ঠিক ঠিক বুঝতে পারছি। আমি ছোট বাচ্চা না।
ইবাদত আমার হাত ধরে টেনে জড়িয়ে ধরতে চাইলো কিন্তু আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললাম
— আমাকে স্পর্শ করবে না। দুরে থাকো।
বলে আমি সোজা ডাইনিং রুমে চলে গেলাম যেখানে দাদাজান আমাদের ডেকেছেন।
( চলবে)