কাশফুলের_ভালোবাসা,পর্বঃ০৬,০৭
লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
পর্বঃ০৬
চুল খোঁপা করতে করতে নিচে নামছে মেহেক।সে আশেপাশে একবার তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।রান্নাঘরে গিয়ে মেহেক দেখে তার বোন সৃষ্টি রান্না করছে।মেহেক গিয়ে সৃষ্টির পাশে দাঁড়ায়।
” কি রান্না করছিস আপুনি?”
” আরে মৃদু তুই উঠে পড়েছিস।কি খাবি বল?তোর পছন্দের নাস্তা বানাবো?”
” না এতো কিছু করতে হবেনা।তুই প্রতিদিন যা বানাস তাই বানা।আচ্ছা দুলাভাই কোথায় রে?কাল দেখলাম না।”
” আরে তোর দুলাভাইয়ের কাল আসতে একটু লেট হয়েছে।হসপিটালে একটা অপারেশন ছিল।”
” ও আচ্ছা।তো দুলাভাই এখন কোথায়?”
” তোর দুলাভাই এখনো ঘুম।আচ্ছা শোন না মৃদু একটা কাজ করে দেনা বোন।”
” এভাবে বলছিস কেন আপুনি?তুই বল কি করতে হবে আমি এখুনি করে দিচ্ছি।”
” তুই এই কফির কাপ দুটো একটু উপরে দিয়ে আসবি?আসলে আমিই যেতাম কিন্তু তোর দুলাভাই আবার বের হবে কিছুক্ষণ পর,ওর খাবার বানাতে হবে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে আমি দিয়ে আসছি।কিন্তু কার কার ঘরে দেবে?”
” একটা দিবি সৌ এর ঘরে আরেকটা আদুর ঘরে।”
” এরা আবার করা?”
” আরে সৌ মানে সৌন্দর্য আর আদু মানে স্পর্শ।”
” ও আচ্ছা আগে বলবি তো।”
” আচ্ছা যা এবার।ওরা সকালে কফি টাইমলি না পেলে আবার রেগে যায়।”
” হুম যাচ্ছি।দে কফির মগগুলো।”
কফির মগগুলো নিয়ে মেহেক আস্তে আস্তে উপরে উঠতে থাকে।উপরে উঠে সে দ্বিধায় পড়ে যায় প্রথমে সে কার রুমে যাবে।অনেক ভেবেচিন্তে মেহেক ঠিক করে সে প্রথমে স্পর্শের রুমে যাবে তারপর সৌন্দর্যের রুমে।মেহেক ধীর পাশে স্পর্শের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।সে ভাবতে থাকে নক করবে কি করবেনা।অনেক ভেবেচিন্তে মেহেক দরজা নক করার জন্য হাত উঠাতেই সে খেয়াল করে তার দুটো হাতেই কফির মগ।আশেপাশে তাকিয়ে মেহেক একটা ছোট টেবিল দেখতে পাই।মেহেক সৌন্দর্যের মগটা টেবিলটাতে রেখে দরজায় নক করে।দরজা নক করার কিছুক্ষণ পর স্পর্শ দরজা খুলে দেয়।স্পর্শকে একবার উপর থেকে নিচে পড়ক করে নেয় মেহেক।ব্ল্যাক কালারের একটা টিশার্ট পড়েছে আর সাথে হাটুর সমান একটা প্যান্ট।অর্ধেক মুখে তার শেইভিং ক্রিম লাগালো,হয়তো শেইভ করেছিল স্পর্শ।স্পর্শের এই অদ্ভুত লুক দেখে মেহেক অনেক কষ্টে নিজের হাসি আঁটকে রেখেছে।
” কি হলো হাসছো কেন?” গম্ভীর কন্ঠে বলে স্পর্শ।
” কই নাতো।” হাসি আঁটকে বলে মেহেক।
” এখানে তোমার কাজ কি?”
” ওই আসলে কফি দিতে এসেছিলাম।”
স্পর্শ একবার মেহেকের হাতের দিকে দেখে।হঠাৎ করেই স্পর্শের ভ্রু-কুচকে উঠে।
” তোমাকে কফি কে আনতে বলেছে?”
” আপুনি পাঠিয়েছে আসলে….”
” এটা আমার মগ না।এটা মেঝো ভাইয়ার মগ।”
এটা শোনার পর মেহেক পাশের টেবিলে রাখা মগটার দিকে তাকাই।স্পর্শও মেহেকের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাই এবং নিজের মগটাকে দেখতে পাই।কফির মগটা তুলে নিয়ে একবার মেহেকের দিকে তাকাই স্পর্শ।অতঃপর তার মুখের উপর ধপ করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে মেহেক চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে চোখ খুলে মেহেক।
” হু…..কি এটিটিউট।অভদ্র ছেলে কোথাকার।” মুখ ভেঙিয়ে আস্তে আস্তে কথাগুলো বলে মেহেক।
স্পর্শের রুমের সামনে থেকে সরে এসে মেহেক সৌন্দর্যের রুমের সামনে দাঁড়ায়।দরজায় টোকা দেওয়া পরেও যখন কেউ দরজা খোলে না তখন মেহেক দরজাটা একটা ফাঁক করে ভেতরে উঁকি দেয়।ভেতরে কাউকে দেখতে না পরে মেহেক আস্তে করে ঢুকে পড়ে।কফির কাপটা টেবিলে রেখে যখনি মেহেক চলে আসতে যাবে তখনি তার চোখ পড়ে বিছানার পাশে থাকা ছোট টেবিলটাতে থাকা ছবির ফ্রেমটায়।মেহেক ফ্রেমটা উঠে নিয়ে।ফ্রেমে সৌন্দর্যের ছবি লাগানো আছে।সৌন্দর্যের পড়নে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি,সাথে সাদা পায়জামা।পায়ে ব্ল্যাক কালারের জুতা,হাতে মেন’স ওয়াস আর সেই সাথে মুখে লেগে আছে একটা মিষ্টি হাসি।ছবিটা দেখে মেহেকের ঠোঁটের কোণের হাসি ফুটে উঠে।
” তুমি আমার রুমে কি করছো মেহুরাণী?”
হঠাৎ কারো কন্ঠস্বর শুনে ভয় পেয়ে যায় মেহেক।তার হাত থেকে ফ্রেমটা পড়ে যেতে নিলেও মেহেক সেটা ধরে ফেলে।যার ফলে ফ্রেমটা মরতে মরতে বেঁচে যায়।মেহেক ফ্রেমটা টেবিলে রেখে জোরপূর্বক মুচকি হেসে পেছন ফিরে তাকাই।কিন্তু পেছন ফিরে সে সৌন্দর্যকে দেখে হা।কারণ সৌন্দর্য অর্ধেক জামা-কাপড় পড়ে আছে।মানে সে প্যান্টের বদলে টাওয়াল পড়ে আছে তাও পিংক কালারের।সেই সাথে গায়ে শার্ট থাকলেও তার বোতাম খোলা,যার কারণে সৌন্দর্যের গায়ের মাঝের অংশ পুরোটাই দেখা যাচ্ছে।সৌন্দর্যকে এভাবে দেখে মেহেক ঢোক গিলে।
” কি হলো?তুমি আমার রুমে কি করছো মেহুপাখি?”
” ওই আসলে কফি দিতে এসেছিলাম।” জোরপূর্বক হেসে মেহেক বলে।
” আচ্ছা আমি আসি।আমার কাজ আছে।”
মেহেক তাড়াহুড়ো করে যেতে নিলে পায়ের সাথে পা লেগে সে পড়ে যায় তবে নিচে নয়,সে গিয়ে পড়ে সৌন্দর্যের বুকে।আচমকা এরকম কিছু হওয়ায় মেহেক ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।কিছুক্ষণ পর মেহেক পিটপিট করে চোখ খোলে।চোখ খোলার সাথে সাথে মেহেক দেখতে পাই সৌন্দর্যের উন্মুক্ত বুক।সৌন্দর্যকে এতোটা কাছে থেকে দেখে মেহেকের তো জান যায় যায় অবস্থা।মেহেক বারবার ঢোক গিলছে।মেহেক সৌন্দর্য বুক থেকে চোখ সরিয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকাই।সৌন্দর্য তখন মেহেক দিকেই তাকিয়ে ছিল,হঠাৎ সৌন্দর্যের চোখে চোখ পড়তেই মেহেক আরো লজ্জা পেয়ে যায়।হঠাৎ মেহেকের খেয়াল হয় তার ডান হাতটা সৌন্দর্যের বুকের উন্মুক্ত জায়গায়।এটা মনে পড়তেই মেহেক তাড়াতাড়ি হাতটা সরিয়ে দূরে আসতে চাইলে ব্যথায় সে চেঁচিয়ে উঠে।
” আহ্…… ” চুলে হাত দিয়ে।
” কি হয়েছে মেহেক?”
” আমার চুল।”
সৌন্দর্য খেয়াল করে মেহেকের চুল তার শার্টের বোতামের সাথে আটকে আছে।সৌন্দর্য তাড়াতাড়ি চুলটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।এটা দেখে মেহেক চেষ্টা করে।আর অনেক টানাটানির পর মেহেক চুলটা ছাড়াতে সফল হয়।চুলটা খুলে যাওয়া পর আর একমিনিটও মেহেক সৌন্দর্যের রুমে থাকেনা।
এদিকে সৌন্দর্য এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।হঠাৎ তার চোখ যায় নিচে মেঝের দিকে।কিছুটা একটা দেখে প্রথমে তার ভ্রু-কুচকে উঠলেও পরক্ষণে তার মুখে হাসি ফুটে উঠে।
অন্যদিকে,
নিজের রুমে এসে হাঁপাচ্ছে মেহেক।তার চোখের সামনে এখনো সৌন্দর্যের অর্ধেক পরিহিত শার্টের দেহটা ভেসে উঠছে।মেহেক ফ্যান ছেড়ে দিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।তারপর জগ থেকে পানি ঢেলে তা ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।মেহেক মুখে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে কিন্তু পরমুহূর্তেই ফট করে চোখ খুলে ফেলে আর বড় বড় নিশ্বাস নিতে থাকে।
” হায়….কেন যেন আমি ওনার রুমে গেলাম।এখন চোখ বন্ধ করলেই ওনার কথায় মনে পড়ছে।আর শয়তান বেটাও শার্ট পড়েছে ঠিক আছে বোতাম গুলো লাগাবেনা।দূর ছাতার মাথা।”
মনে মনে সৌন্দর্যকে বকা দিতে দিতে হঠাৎ মেহেকের কিছু মনে পড়েছে আর সে হোহো করে হেসে উঠে।অনেক চেষ্টা করার পরও মেহেক নিজের হাসি কনট্রোল করতে পারছিলনা।
” স্পর্শ বুইড়া দাদু,হাহাহা……”
আসলে মেহেক স্পর্শের হাফ শেভিং ক্রিম লাগানো চেহারাটার কথা মনে পড়েছে।আর তা মনে পড়তেই মেহেকের হাসি পাই।
” কিন্তু যাই বলো এটার ভিতরে কোন রসকস নাই।কেমন যেন চুপচাপ আর গম্ভীর।আমার সাথে এসেছি পর্যন্ত ভালো করে একটা কথাও বলেনি।আরে ওনার কথা কি বলছি আমিও তো এরকমি।অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা।আচ্ছা একবার কি ওনার সাথে কথা বলে দেখবো?না না বাবা দরকার নেই এই বুইড়া দাদুর সাথে যেছে কথা বলতে যাওয়ার।আমার কি ঠেকা পড়েছে নাকি?হু…..।তার থেকে সৌন্দর্য অনেক ভালো।কি সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলে।”
মেহেক এসবই ভাবছে তখন তার ফোনে টুং করে একটা শব্দ হয়।মেহেক বিছানার অপর পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে দেখে মেসেঞ্জারে কেউ মেসেজ দিয়েছে।মেসেজ হাসিমুখে মেসেজটা ওপেন করে কিন্তু মেসেজটা দেখেই তার মুখের হাসি উবে যায়।
চলবে…..
#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
ফোনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেক,থমথমে তার মুখ।ফোনের মধ্যে শোভা পাচ্ছে মুগ্ধ আর রিয়ার বিয়ের,বৌভাত আর তাদের হানিমুনে যাওয়ার ফটো।ছবিগুলো দেখে মেহেকের পুরোনো ক্ষতগুলো আবারো তাজা হয়ে উঠে।মেহেক যখন ছবিগুলো দেখছিল তখন আবারো ওই আইডি থেকে আরো কিছু ফটো আসে।ছবিগুলো সব সেলফি আর তা তুলেছে রিয়া।ছবিগুলোতে মুগ্ধ ঘুমাচ্ছে আর রিয়া ছবি তুলছে।মেহেকের বুঝতে দেরি হলোনা যে এটা আর কেউ না বরং রিয়া।মেহেক চিন্তায় করতে পারছেনা যে কোন বন্ধু এমনো হতে পারে।মেহেক বিশ্বাসই করতে পারছেনা যে এই মেয়েটা একসময় তার কাছের বন্ধু ছিল।কথাটা সত্য আসলেই মানুষ পরিবর্তনশীল,সময়ের সাথে সাথে মানুষের চরিত্রও পালটে যায়।একটা ছবিতে মেহেকের চোখ আটকে যায়।ছবিটাতে মুগ্ধ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর মেহেকের মনে পড়ে এই মানুষটা তার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে,তার সাথে সংসার করার স্বপ্ন দেখিয়ে অন্য কারোর সাথে সংসার করছে সে।হঠাৎই মেহেকের মুখ কঠিন হয়ে উঠে।সে দাঁতে কিড়মিড় করতে করতে আইডিটা প্রথমে ব্লক করে তারপর একাউন্টটাই ডিলিট করে দেয়।একাউন্ট ডিলিট করার পর মেহেক অনেক শান্তি শান্তি লাগছে কারণ এই একটা মাত্রই পথ ছিল যার মাধ্যমে রিয়া আর মুগ্ধ তার সাথে যোগাযোগ করতে পারতো।কারণ ইতিমধ্যেই মেহেক তার আগের সিম বদলে নতুন সিম নিয়েছে।ফোনটা একপাশে রেখে কার্বাড থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে শাওয়ার নেওয়ার জন্য চলে যায় মেহেক।
প্রায় ১ ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে মেহেক।তার চোখমুখ ফোলা ফোলা যার অর্থ মেহেক কান্না করেছে।আসলে মেহেক অনেক চেষ্টা করেছে কান্না না করার জন্য কিন্তু বেহায়া মন তো আর তা বোঝেনা।
” কেন আমি মুগ্ধের কথা ভুলতে পারছিনা?কেন?সে আমাকে ধোঁকা দিয়েছে,আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।সে মিথ্যুক,ছলনাময়ী মানব,সে বিশ্বাঘাতক।না আমাকে ওর কথা ভুলতে হবে যেভাবেই হোক ভুলতেই হবে।ও যদি আমাকে ভুলে মুভ অন করতে পারে,তাহলে আমিও পারবো।পারতে হবে আমাকে।” আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজেকে কথাগুলো বলে মেহেক।
বারান্দায় বসে একমনে কিছু ভাবছে মেহেক।হঠাৎ সে শুনতে পাই কেউ তার দরজায় কড়া নাড়ছে।
” মৃদু এই মৃদু?”
” আসছি আপুনি।”
মেহেক দরজা খুলে দেখে তার বোন দাঁড়িয়ে আছে।
” কিরে কফি দিয়ে আর নিচে নামলিনা কেন?খাবার খাবি না নাকি?”
” হুম আসছি,তুই যা।”
” হুম তাড়াতাড়ি আয়,তোর দুলাভাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”
সৃষ্টি চলে যায়।মেহেক কিছুক্ষণ বসে থেকে তারপর উঠে নিচে চলে যায়।নিচে এসে মেহেক দেখে অলরেডি সবাই চলে এসেছে।
” আরে শালিকা যে,এসো এসো।কতদিন পর তোমার সাথে দেখা।”
” কেমন আছেন দুলাভাই?”
” আমি ভালো আছি।তুমি কেমন আছো সেটা বলো।”
” আমিও ভালো আছি।”
” গুড।আচ্ছা বসো বসো খেয়ে নাও।সৃষ্টি মেহেকে খাবার দাও।”
” হ্যাঁ দিচ্ছি।মৃদু তুই বস।”
মেহেক পুরো টেবিলে চোখ ঘুড়িয়ে দেখে শুধু দুটো চেয়ার খালি আছে।একটা তার দুলাভাইয়ের পাশে অপরটা স্পর্শের সামনে বা বলা যায় সৌন্দর্যের পাশে।কোন উপায় না পেয়ে মেহেক সৌন্দর্য পাশে বসে পড়ে।মেহেককে দেখে সৌন্দর্য একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয়,তার বিনিময়ে মেহেকও একটা কিউট স্মাইল দেয়।চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই মেহেকের চোখ আটকে যায় স্পর্শের উপর।মেহেক স্পর্শের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দেয় কিন্তু স্পর্শ সৌন্দর্যের মতো না হেসে উল্টো চোখ নামিয়ে খাবার খেতে থাকে।স্পর্শের এই বিহেভে মেহেক অনেকটা অপমান বোধ করে।
” হু….ঢং।কি হতো একটু হাসলে?হাসলে কি ওনার দাঁত খুলে পড়ে যাবে?নাকি ওনার হলুদ দাঁত দেখা যাবে?আরে হ্যাঁ এটাও তো হতে পারে উনি হলুদ দাতঁ দেখানোর ভয়ে হাসছেন না।এরকম হলে তো…..হাহাহা….” মনে মনে এসব কথাগুলো ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে মেহেক।
” কিরে মেহু এভাবে নিজে নিজে হাসছিস কেন?ভুতে ধরেছে নাকি?” পাশ থেকে ফিসফিস করে কথাটা বলে রিফা।
রিফার কথায় হাসি বন্ধ করে চুপচাপ খাবার খেতে থাকে মেহেক।খাবার শেষ হলে সবাই যে যার কাজে চলে যায়।সৌন্দর্য আর স্পর্শ চলে যায় ভার্সিটি আর রিফা তার রুমে চলে আসে।মেহেক রুমে না গিয়ে বরং তার বোনকে সাহায্য করছে।থালাবাসন ধোঁয়া হলে মেহেক তার বোনকে বলে—
” আপুনি শোন,তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
” হ্যাঁ বল।”
” আপুনি আমি এখানে বেড়াতে আসিনি।আমি একেবারে ঢাকা চলে এসেছি।”
” হুম।”
” মানে আমি এখর ঢাকা শহরে থাকবো আর এখানেই পড়াশোনা করবো।”
” হুম।তারপর?”
” তারপর মানে?তুই এমনভাব বলছিস যেন তুই আগে থেকে জানতিস।”
” জানতাম না তবে আন্দাজ করেছিলাম।তুই চিন্তা করিস না আমি তোর দুলাভাই আর আমার শশুড়-শাশুড়ীর সাথে কথা বলে নিয়েছি।তুই এখানে থেকেই পড়াশোনা করতে পারিস।তোর দুলাভাই এতে আরো খুশি হয়েছে।”
” আমি তোদের এখানে বেশিদিন থাকবোনা আপুনি।আমি খুব তাড়াতাড়ি একটা বাসা খুঁজে সেখানে শিফট হয়ে যাবো।”
” বেশি কথা বলিস না।এখানে তুই কিছুই চিনিস না।তাই বলছি কয়েকমাস আমাদের এখানে থাক তারপর বাকিসব চিন্তা করিস।”
মেহেক আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসে।
বিকেলবেলা,
বারান্দায় বসে উপন্যাসের বই পড়ছে মেহেক।সে বই পড়তে এতোটায় মগ্ন ছিল যে খেয়ালই করেনি তার পেছনে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
” ভাউ…….”
” আ…..” চিৎকার করে উঠে দাঁড়ায় মেহেক।
মেহেক পেছন ফিরে দেখে রিফা তার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।
” রিফুনি……এভাবে কেউ ভয় দেখায়?আ….কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম।”
” হাহাহাহা…..ভীতু মেহু।এতে কেউ ভয় পাই নাকি?”
” কেউর টা জানিনা তবে আমি ভীষণ ভয় পেয়েছি।আরেকটু হলে তো মনে হয় আমার হার্টবিট বন্ধ হয়ে যেতো।”
” হাহাহা…..ভীতু মেয়ে।তা এতো মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছিলিস?”
” বই পড়ছিলাম আর কিছুনা।”
” আচ্ছা চল।”
” কোথায়?”
” শপিংয়ে যাবো।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”
” আমি যাবোনা।তুই যা।”
” চুপ।কোন কথা না।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”
মেহেককে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রিফা চলে যায়।মেহেকও একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রেডি হতে থাকে।
অন্যদিকে,
রিফা এসে সৌন্দর্যের দরজার সাথে পায়চারি করছে।রিফা যখনি ঘুরে সৌন্দর্যের দরজায় টোকা দিবে তার আগেই দরজা খুলে সৌন্দর্য বেরিয়ে আসে।সৌন্দর্যকে দেখে রিফা সেখান থেকে চুপিচুপি কেটে পড়তে নিয়ে সৌন্দর্য তাকে থামিয়ে নেয়।
” কিরে বোনু কি হয়েছে?” কিছুটা গম্ভীর ভাবে কথাটা বলে সৌন্দর্য।
” না কিছুনা।” জোরপূর্বক হেসে রিফা বলে।
” বোনু সত্যি করে বলতো কি চাই তোর?”
” ওই আসলে দাভাই মানে……”
” এতো মানে মানে না করে সোজা সোজা বল কি চাই তোর?” মোবাইলের দিকে তাকিয়ে।
” আসলে আমি একটু শপিংয়ে যাবো।তুমি যাবে আমার সাথে।”
” না আমার সময় নেই।কাজ আছে আমার।”
” প্লিজ দাভাই চলোনা প্লিজ প্লিজ।দেখো আমরা দুটা একা মেয়ে।ফিরতে যদি রাত হয়ে যায় তখন?”
” দুটা একা মেয়ে মানে?দুজন কোথা থেকে এলো?তোর সাথে আর কেউ যাচ্ছে নাকি?”
” হুম মেহু যাচ্ছে তো।ও বেচারি একা বাসায় কি করবে?তাই ওকেও নিয়ে যাবো।”
সৌন্দর্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা চিন্তা করে।
” আচ্ছা যা তৈরি হয়ে নে।বের হওয়ার আগে আমাকে ডেকে দিস।”
” ও থ্যাঙ্ক ইউ দাভাই।ইউ আর সো সুইট।”
” হয়েছে হয়েছে আর এতো মাখন লাগাতে হবেনা।”
” তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে দাভাই।তুমি তো আমার মিষ্টি দাভাই তোমাকে কি আমি মাখন লাগে পারি?তুমিই বলো?”
” হয়েছে হয়েছে এবার যা।দেরি হলে কিন্তু আমি যাবোনা।”
” এই না না আমি যাচ্ছি।” বলে দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে রিফা।
রেডি হয়ে ড্রয়ংরুমে বসে সৌন্দর্যের জন্য অপেক্ষা করছে মেহেক আর রিফা।বিগত ১৫ মিনিট যাবৎ তারা অপেক্ষা করে যাচ্ছে তবে সৌন্দর্যের কোন খবর নেই।অবশেষে আরো ৫ মিনিট পর সৌন্দর্য এলো।
” এতোক্ষণে তোমার আসার সময় হলো।হা…..চলো চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
” হুম চল।”
তারা তিন বের হবে সেই সময় কেউ তাদের উদ্দেশ্য বলে—
” কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”
চলবে…….