এক_ফালি_রোদ ৮ম_পর্ব

এক_ফালি_রোদ
৮ম_পর্ব

মেয়ের এমন ডাকে হাতটা কেপে উঠে রাইসার। হাতে থাকা ছুরিটায় আঘাতে আংগুলের কিছুটা অংশ কেটে যায়৷ আবরার তো অফিসে গিয়েছে। এতো সকাল সকাল তো তার আসার কথা নয়। শেফালী বেগম এবং রাইসা হাতের কাজ ফেলে ছুটে যায় দরজার কাছে। দরজার কাছে যেতেই দেখে আহত অবস্থায় দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে আবরার। শার্টে রক্তের ছিটা স্পষ্ট, বা হাতে প্লাস্টার লাগানো। কয়েকজন তাকে সাপোর্ট দিয়ে দাঁড় করিয়ে রয়েছে। শার্টের কিছু অংশ ও ছিড়ে গেছে। ছেলের এমন অবস্থা দেখে ছুটে তার কাছে যান শেফালি বেগম। উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলেন,
– আবরার কি করে হলো এমন? ভালো তো বেড়িয়েছিলে তুমি? তাহলে এমন কিভাবে হলো?
– মা, রিল্যাক্স। তেমন কিছুই হয় নি আমার। আসলে বাইকটা
– বারবার বলি এই বাইক চালানো বন্ধ করো, বাসায় একটা গাড়ি আছে। তুমি নিজেও গাড়ি পেয়েছো। অথচ তুমি তো কারো কথা শুনবে না। কি হয়েছে দেখেছো।

এর মাঝেই সেখানে উপস্থিত একজন লোক বলে উঠলেন,
– খালাম্মা ভাগ্য ভালো আপনার ছেলের যে মাথাটা বেঁচে গেছে। শুধু হাত আর পায়ের উপর দিয়েই গেছে। যেভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে আমরা তো ভাবছি ভাইজান বোধ হয় আর নেই। আল্লাহ হায়াত দিছেন, নয়তো ওইখানেই মাথা থেতলায়ে যেতো।
– হ্যা, আল্লাহ এর লাখ লাখ শুকরিয়া। বাবা তুই ভেতরে আয়। আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ, ওকে একটু ভেতরে নিয়ে আসেন। রাইসা মা তুই একটু বিছানাটা করে দে।

শেফালী বেগমের কথা যেনো কানের পাশ থেকে চলে গেলো রাইসার, সে এখনো মূর্তির মতো ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার দৃষ্টি আবরারের দিকে স্থির। লোকেরা যেভাবে বলছে সেভাবে যদি সত্যি সত্যি মাথায় চোট লাগতো তখন কি হতো! লোকটাকে ঘৃণা করে সে, কিন্তু এতোও ঘৃণা সে তাকে করে না যে ঘৃণা তার মৃত্যু কামনা করে। কথাগুলো ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠলো রাইসার। ঘৃণা থাকার পরও সে তার মৃত্যু কামনা করতে পারছে না। হয়তো এটাই শিখানো হয় বাংলার প্রতিটা ঘরের মেয়েকে, স্বামী যেমন ই হোক না কেনো সে স্বামী। স্বামীর মৃত্যু কামনা করাটা পাপ, মহা পাপ। অবশ্য বিয়ে সম্পর্কটাই এমন, এক অদৃশ্য মায়া তৈরি হয়ে যায় যা জালের মতো মনে বিস্তৃত হতে থাকে। শেফালী বেগমের বুঝতে বাকি রইলো না রাইসা বেশ ভয় পেয়েছে। অবশ্য পাবে না কেনো? মাত্র সপ্তাহ খানিক হয়েছে বিয়ের এর মাঝেই স্বামীর এমন কিছু হলে যেকোনো মেয়েই ভয় পাবে। তিনি রাইসাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলেন,
– ভয় পাস না, আবরার ঠিক আছে। আল্লাহর রহমতে ও সুস্থ আছে। হাটতে পারছে।
– হুম, আমি বিছানা করে দিচ্ছি।

আবরারকে ধরে নিয়ে তার রুমে নিয়ে গেলো লোকেরা। তাকে সাবধানে বিছানায় বসাতো হলো। পায়ের খানিকটা অংশও পুড়ে গেছে। তাই হাটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। আবরারকে বিছানায় বসিয়ে সবাই চলে যায়। শেফালী বেগম যাবার আগে রাইসাকে বলেন,
– আবরারের দিকে খেয়াল রাখিস।
– হুম, চিন্তা কইরেন না মা।

সবাই চলে গেলে ঘরে যেনো পিনপতন নিরবতা বিস্তার কররে। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। রাইসা চুপচাপ তার কাজ করতে থাকে। আর আবরার মাথা নিচু করে বসে থাকে। কোথা থেকে কথা শুরু করবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না সে। রাইসা নিজ থেকে তাকে সাথে কোনো কথাই বলে না। এমনেই তাকে ঘৃণা করে, এখন তো তার সেবাও করতে হবে। না চাইতেও রাইসার বিরক্তির কারণ হতে হচ্ছে তাকে। রাইসা আপন মনে কাজ করছে। এখন তাকে ঘর আরোও বেশি পরিস্কার রাখতে হবে। নয়তো আবরারের ইনফেকশন হতে পারে। আবরার এক নজরে রাইসাকে দেখে যাচ্ছে। লাল একটা শাড়ি পড়ে রয়েছে। চুলগুলো খোপা করে ঘাড়ের উপর তুলের রেখেছে। তাতে ঘাড়ের কালো তিলটা আরোও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে মনকে কেনো সে রাইসাকে এতোও বেশি ভালোবাসে সে। কিন্তু উত্তরটা তার অজানা। আজ যখন এক্সিডেন্টটা হচ্ছিলো তখন বারবার মনে হচ্ছিলো সে কি আজ আর কখনো রাইসাকে দেখতে পারবে না। সে মৃত্যুর আগ মূহুর্তেও রাইসাকে দেখতে চায়। আচ্ছা রাইসা কি কষ্ট পাবে তার মৃত্যুতে? না পাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারন মানুষ যাকে ঘৃণা করে তার মৃত্যুতে কখনোই তাদের শোক হয় না। হয়তও রাইসার ক্ষেত্রেও সেটাই হতো, এটাই হয়তো তার প্রাপ্য।
– কিছু লাগবে আপনার?

রাইসার কথায় ধ্যান ভাঙ্গে আবরারের। ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। কি বলবে সে? তার তো রাইসাকেই চাই, যতদিন বেঁচে থাকবে তার রাইসাকেই চাই। কিন্তু এটা বলে কি আদৌ লাভ আছে? লাভ নেই। সে হয়তো পারতো সেদিন রাইসাকে জোর না করতে, সে হয়তো পারতো সেদিন রাইসা এবং অয়নের মাঝ থেকে সরে যেতে। কিন্তু তাতে রাইসা কখনোই সুখী হতো না। হয়তো এই সত্যিটা একদিন রাইসার সামনে ঠিকই আসবে, হয়তো সেদিন আবরার তার কাছে থাকবে না। এটাই হয়তো তাদের নিয়তি। আবরার ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। কথাগুলো গলায় আটকে আছে কিন্তু মুখ ফুটে সে বলবে না। থাকুক না খারাপ হয়ে তাতে কি খুব ক্ষতি হবে, হয়তো না____________________________

বিকেল ৫টা,
সূর্য পশ্চিমে ঢেলে পড়েছে। রোদের তেজ কমে এসেছে। মৃদু বাতাস ছেড়েছে। এখন প্রায় বিকেলে এমন ঠান্ডা বাতাস ছাড়ে। চৈত্রের মধ্যম এখন। কিছুদিন পর বৈশাখ আসবে। নতুন বছর নতুন সবকিছু। প্রকৃতির মতো মানুষের জীবনের নতুনের আবির্ভাব ঘটে। শীতের বর্বরতা কেটে বসন্ত আসে, বসন্তের পর গ্রীষ্ম। রঙের মেলায় মানুষের মন ও রেঙ্গে উঠে। হয়তো অয়নের জীবনের সেই নতুত্বের সূচনা নতুন একটি মানুষের সাথে হয়েছে। প্রাপ্তি নামক মেয়েটি তার জীবনে হুট করেই আবির্ভাব হয়েছে। সে কখনোই ভাবে নি প্রাপ্তির সাথে তার এভাবে কোনো সম্পর্ক তৈরি হবে। এই যে এখন, সে প্রাপ্তির সাথে তার এক বন্ধুর কাছে এসেছে। প্রাপ্তি একটি ক্যামেরা কিনবে। তার কাছে এতো টাকা নেই যে সে নতুন কোনো ক্যামেরা কিনবে। ক্যামেরা বডির দাম ই পচিশ হাজারের কমে পাওয়া যায় না, এর পর লেন্সের ব্যাপার আছে। তাই এক পরিচিত বন্ধু, রবিনের কাছে নিয়ে এসেছে। ওর ক্যামেরাটা চার বছর পুরোনো। সে এই ক্যামেরা অর্ধেকের কমে বিক্রি করছে। আর সে কিস্তি কিস্তি করে টাকা নিতেও রাজী। প্রাপ্তি সেদিন সকালে তার কাছে এই ক্যামেরা নিয়েই কথা বলেছিলো। দুদিন ধরে খোঁজ নেবার পর জানতে পারে, রবিন ক্যামেরা বেঁচতে চাচ্ছে। এতে দুজনের ই লাভ হয়েছে। রবিনের স্টুডিও বেশ বড়, সে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করে। প্রাপ্তি ঘুরে ঘুরে তার স্টুডিও দেখতে লাগলো। সেই ফাঁকে রবিন অয়নকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
– শুনলাম, আবরার ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তা তুই কবে বিয়ে করবি রাইসাকে?

রবিনের প্রশ্নে থমকে যায় অয়ন। আজকাল কাজের বাহানা দিয়ে প্রায়ই বাসায় যায় না সে। গেলেই রাইসার সাথে দেখা হয়। তাই বাসায় গেলেও প্রচুর রাত করে যায়। আর খুব ভোরে বেরিয়ে পরে। রবিনের কথায় চুপ করে থাকে অয়ন। বুকের ভেতরে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। অবশ্য দোষটা তো তার ই ছিলো। সে তো সব জেনেও ভালোবাসা নামক বিষ পান করেছে। অয়নকে চুপ করে থাকতে দেখে রবিন আবারো একই প্রশ্নই করলো। মুখে মলিন হাসি টেনে অয়ন বললো,
– যে আমার নয় তাকে বিয়ের প্রশ্নই উঠে না।
– মানে?

অয়ন কিছু বলতে যাবে তার আগেই…………………….

চলবে

[ পেজের রিচ অনেক কমে গেছে, রেসপন্স আরোও বেশি কমে গেছে। অনেকেই আছেন যারা গল্প তো পড়েন কিন্তু রিয়েকশন দেন না। আপনাদের কাছে রিকুয়েষ্ট প্লিজ পেজের রিচ বাড়াতে একটু হেল্প করুন। আমি কোনো গ্রুপেও গল্প দিচ্ছি না, সুতরাং আপনারা হেল্প না করলে সবার কাছে গল্প পৌছাবে আমি শত ব্যস্ততার মাঝে লিখেও লাভ হবে না। লাস্ট তিন পর্বের রিয়েকশন, এনগ্যাজমেন্ট এতো কম যে লেখার ইচ্ছাও হচ্ছে না। বাকি টুকু আপনাদের হাতে। পরবর্তী পর্ব ইনশাআল্লাহ আগামীকাল রাতে পোস্ট করবো। দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না ]

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here